এবং স্ত্রী পর্ব-১৫+১৬

0
1531

#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_১৫
#Jannatul_Ferdos

শুভ্র প্রকৃতির ন্যায় চারিদিকে খুব সুন্দর ঝড় হাওয়া বইছে।হৃদয় দুলানো এক রকম প্রকৃতি। নিরুপমা বারান্দায় বসে সেই প্রকৃৃতি অনুভব করছে।তার হৃদয়ে ভালোবাসার রঙ বইছে।যেখানে রংতুলিতে সে নিজের অস্তিত্বকে দেখার জানান দিচ্ছে।হুট করেই উৎস নিরুপমার পাশে এসে বসে।নিরুপমা চকতি ফিরে তাকিয়ে আবার বাইরে দৃষ্টি স্থির রাখে।
“নিরুপমা
” হু
“একটা গান শোনাবে?
নিরুপমা এবার অবাক চোখে উৎসের দিকে তাকিয়ে আছে।উৎসের চোখে মুখে আছে শুভ্র বিশুদ্ধ হাসি।নিরুপমার খুব মন চাচ্ছে উৎসের ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে।কিন্তু সে তা পারবে না কারন তার যে সেই অধিকার নেই।
” কি হলো শোনাবে না?
“হ্যা অবশ্যই শোনাবো
” দাঁড়াও গিটার নিয়ে আসি।উৎস এক দৌড়ে গিটার নিয়ে এসে নিরুপমার হাতে ধোরিয়ে দেয়….নিরুপমা তখন গিটারে টুংটাং আওয়াজ করতে করতে শুরু করে….

Baarishein yun achaanak hui
To laga tum shehar mein ho
Raat bhar phir wo jab na ruki
To laga tum sehar mein ho

Kahi ek saaz hai gunji
Teri aawaaz hai gunji
Meri khamoshiyon ko
Ab kar de bayan

Tere bin bewajah sab hai
Tu agar hai to matlab hai
Nahi to tuta sa adhoora kaarwan
Ek tera rasta
Ek mera rasta
Nahio rehna ve juda
Nahio rehna ve juda

Shaam phir khubsurat hui
To laga tum shehar mein ho
Door hoke bhi nazron se tum
Har lamha har pehar mein ho

Sirf teri yaad saathi hai
Meri fariyaad baaqi hai
Jism aur jaan ka mita de fasla
Mere khaabon mein jo rang hain
Wo khilte bass tere sang hain
Judke tujhse mukammal hogi daastaan

Ek tera rasta
Ek mera rasta
Nahio rehna ve juda
Nahio rehna ve juda

Baarishein yun achaanak hui
To laga tum shehar mein ho
Raat bhar phir wo jab na ruki
To laga tum sehar mein ho

উৎস এক দৃষ্টিতে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে ছিল এতোক্ষণ। মেয়েটার ভিতরে এক অদ্ভুত মায়া আছে যা উৎসকে এতোদিন ধোরা দেয় নাই।অবশ্য দিবে কিভাবে?সে কখনো নিরুপমার দিকে তাকিয়ে ও দেখে নি।
“তুমি সত্যিই অসম্ভব সুন্দর গান করো নিরুপমা।
” শুকরিয়া।
“চলো আজ দুজনের গল্প করি
” হু
“তোমার মন খারাপ নিরুপমা?
” না
“তাহলে যে আজ চুপ করে আছো?অন্যদিন তো কত কথা বলো
” আমার ভালো লাগছে না কিছু
“কিন্তু কেন?
” এমনি
“কিছুতো হয়েছে নিরুপমা দেখি আমার দিকে ঘুরো কি হয়েছে?
নিরুপমা এবার উৎসকে জড়িয়ে ধোরে হু হু করে কেঁদে উঠে
” নিরুপমা কাঁদছো কেন?
“কাল মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী।আমার মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে
” ধুর পাগলি মেয়ে তার জন্য কাঁদতে হয়?কান্না করো না তো।যে যাওয়ার সে যাবেই এটা ভেবে লাভ নেই।অতীতকে নিয়ে মন খারাপ করলে হবে?ভবিষ্যতের কথা ভাবো।
“তাহল আপনি কেন অতীত ভুলে আমাকে ভালোবাসতে পারেন না উৎস….উৎসের বুক থেকে মাথা তুলে নিরুপমা উৎসের দিকে কথাটি বলে…
উৎস কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এর উত্তর তার কাছে নেই।সে নিরুপমাকে নিজের থেকে সরিয়ে উঠে চল যায় রুমে।মুসকানের পাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়ে।
নিরুপমা একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে।সে জানে এগুলা বলে লাভ নাই তবু ও বার বার এগুলা উৎসকে বলে।কেন বলে সে নিজে ও জানে না।সে আর রুমে যায় না বারান্দায় গুটি শুটি হয়ে বাইরের পরিবেশ অবলোকন করে।এক সময় সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।
আজ একটু বেলা করেই নিরুপমার ঘুম ভাঙ্গে।সে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিছানায় আবিস্কার করে। আশ্চর্য সে বিছানায় আসলো কিভাবে?সে না বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়েছিল।তবে কি উৎস এনেছে তাকে?কিন্তু উৎস তাকে স্পর্শ করেছে?এ কথাটা তো তার হজম হচ্ছে না।তার মধ্যেই উৎস ওয়াশরুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়।সে দেখতে পায় নিরুপমা এক ধ্যানে কিছু ভাবছে…
‘এতো ভাবার৷ কি আছে?আমিই এনেছি তাও কোলে করে।ইশ কি ভারি গো তুমি। তোমাকে উঠাতে গিয়ে তো আমার কোমড়ই নড়ে গেছে।
নিরুপমা প্রথমে একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলে ও পরে রাগি লুকে উৎসের দিক তাকায়…
” কি ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?যা সত্যি তাই বলেছি। দেখলে ক্যাঙারু মনে হলে তুমি আসলে একটা আটার বস্তা।
“তা নয়তো কি?এই তোমার ওজন কতো বলো তো?নিশ্চয়ই ৬০/৭০ কেজি হবে
” কিহহহহহ
“হ্যা।এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলবে
“হ্যা খেয়েই ফেলব।
এই বলে নিরুপমা বালিশ ছুঁড়ে মারে উৎসের দিকে।উৎস বালিশ ক্যাচ ধোরে বলে…
” কই গো খাবে না?আসো
“খাবো মানে আস্ত গিলে খাবো চিবিয়ে খাবো,ভর্তা বানিয়ে খাবো
নিরুপমা এবার উৎসকে তাড়া করতে থাকে রুম ভরে।একসময় সে উৎসের সাথে জবরদস্তি করতে করতে দুজনে ধপাস করে খাটের উপরে পড়ে যায়।নিরুপমার উপরে উৎস পড়ে।উৎসের চুলের পানি গুলো টপ টপ করে নিরুপমার মুখের উপরে পড়ছে।নিরুপমা এক দৃষ্টিতে উৎসের দিকে তাকিয়ে আছে।পানির প্রতিটি বিন্দু কোনায় নিরুপমাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।উৎস ঘোর লাগানো চোখে নিরুপমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।একদম কাছাকাছি যেতেই নিরুপমা চোখ বন্ধ করে নেয় আর উৎস নিরুপমার ঠোঁটের নিচে থাকা তিলে একটা চুমু খায়।নিরুপমা একটু কেঁপে উঠে। এই প্রথম সে উৎসের ভালোবাসার ছোয়া পেয়েছে।উৎস বললে ভুল এই প্রথম সে কোনো পুরুষের ছোয়া পেয়েছে এভাবে।উৎস উঠে গিয়ে অফিসের যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়।নিরুপমা বেশ লজ্জা পেয়েছে আবার তার ভিতর ভালো লাগা কাজ করছে অন্যরকম। তার স্বামীর প্রথম ভালোবাসার স্পর্শ কিছুতেই ভুলতে পারছে না।মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসতে হাসতে সে রুম থেকে বের হতে লাগলে উৎস হঠাৎ বলে উঠে..
” ঠোঁটের নিচের তিলটা আমাকে মুগ্ধ করেছে যদি কেউ পারমিশন দেয় তো আমি প্রতিদিন একটি করে ওই তিলে চুমু খেতে চাই….
নিরুপমা এবার কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে কি ঠিক শুনছে?উৎস তাকে এই কথা বলছে?নিজের কানকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না।তবে কি উৎস তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে?????

চলবে!
#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_১৬
#Jannatul_Ferdos

অফিস থেকে ফিরেই উৎস নিরুপমার খোঁজ শুরু করেছে।আজ সে বিকালের মধ্যেই চলে এসেছে।নিরুপমা গত দুই আড়াই মাস ধোরে উৎসকে ঘুরিয়ে যাচ্ছে।যখনই উৎস জিজ্ঞাসা করে সে কি বন্ধুত্ব করবে কিনা একটার পর বাহানা দিয়েই চলেছে কখনো কখনো উৎসকে ধোরাই দেয় না।তবে এইবার উৎস একদম চেপে ধোরেছে৷ মুসকানের দোহায় দিয়ে অবশেষে নিরুপমা তাকে কথা দিয়েছে আজ তাকে উত্তর দেবে।কিন্তু এই মেয়ে এতো বড় বজ্জাত যে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না উৎস।সে খুঁজতে খুঁজতে তার মায়ের রুমে যায়।রুমের ভিতরের দৃষ্ট দেখে উৎসের চোখ ছল ছল করে উঠে।মুসকান বসতে শিখে গেছে।সে বসে বসে লাফাচ্ছে। নিরুপমা আর তনিমা বেগম তার সাথে খেলছে।মুসকান আদো আদো করে মা মা করতেছে।উৎস এবার কেঁদে দেয় তার মেয়ে বসা শিখে গেছে।আদো আদো করে বুলি ফুটছে।উৎস মুসকানকে ডাক দেয়।মুসকান তার বাবার কণ্ঠ শুনে ফিরে তাকিয়ে খিল খিল করে হেসে দিয়ে আরো লাফানো শুরু করে।সত্যিই এই যুগের বাচ্চার অনকে এডভান্স। ৭ মাসের একটা বাচ্চা কিভাবে তার বাবাকে চিনে ফেলেছে।তবে মুসকান এখনো বেশিক্ষণ বসতে পারে না।পরে যায়।এখন ও ঠিক তাই হলো লাফাতে লাফাতে দুম করে পড়ে যায় যদি ও ব্যথা পায় নি কিন্তু ছোট মানুষ একটু ভয় পেয়েছে।এমন জোরে চিৎকার করে কান্না করে দিয়েছে উৎস দৌড়ে গিয়ে তাকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু কে শুনে কার কথা। কান্না করেই যাচ্ছে।নিরুপমা উৎসের কোল থেকে তাকে নিয়ে থামানোর চেষ্টা করে।নিরুপমার কোলে গিয়ে কাধে মাথা রেখে মুসকান মুখে আঙ্গুল পুরে উম উম করতে থাকে। উৎস অবাক হয়ে যায় এতোক্ষণ ধোরে সে মুসকানের কান্না বন্ধ করতে পারল না আর নিরুপমার কোলে যেতেই সে থেমে গেল।তবে কি সত্যিই সে মুসকানের বেস্ট মা হয়েছে?
“নিরুপমা মুসকানকে আমার কাছে শুয়ে দিয়ে যাও। উৎস সবে এসেছে দেখো ওর কি কি লাগে….তনিমা বেগম বললেন
নিরুপমা মুসকানকে দিয়ে উৎসের সাথে রুমে যায়।নিরুপমা রুমে প্রবেশ করতেই উৎস দরজা আটকিয়ে নিরুপমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধোরে।ঘটনার আকস্মিকতায় নিরুপমা ভয় পেয়ে যায়।উৎস আর নিরুপমা এখন খুব কাছাকাছি।দুজনেরই হার্টবিট ধুক ধুক করছে।নিরুপমা যেন হিম হয়ে যাচ্ছে। নিরুপমা নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বলে…
” কি করছেন উৎস ছাড়েন
“উহু আগে উত্তর দাও
” বলেছি তো দেব
“না আগে উত্তর দিতে হবে নাইলে আমি ছাড়বো না।
” প্রশ্নটা যেন কি ছিল?
উৎসের রাগ হচ্ছে তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে…
“আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে?
” হুম
“শুধু হুম?
“আমি আপনার বন্ধুত্বের রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করলাম।
” আরো একটা প্রশ্ন ছিল
“কি?নিরুপমা এবার ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে
” ঠোঁটের নিচে যে তিল আছে সেখানে প্রতিদিন একটা করে চুমু খেতে চেয়েছিলাম আজ অব্দি উত্তর দাও নি
“উম ঠোঁটের নিচের এই তিলে প্রতিদিন একটা করে চুমু খাওয়ার ও পারমিশন দিলাম।সেদিন ইচ্ছা করেই দেই নাই দেখতে চেয়েছিলাম কি করেন। আপনি আসলেই ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ একজন মানুষ যার জন্য সেদিন আমি কোনো উত্তর না দেওয়ায় সেদিন থেকে আজ অব্দি আপনি একবার ও আমার পারমিশন ছাড়া চুমু দেন নাই।তবে হ্যা যেদিন আমাকে বউয়ের স্বীকৃতি দেবেন সেদিন থেকে আর পারমিশন চাইবেন না ওকে?
নিরুপমা কথাটি বলে উৎসকে পাশ কাটিয়ে আসতে গেলে উৎস হাত ধোরে টেনে নিয়ে আবার দেওয়ালে চেপে ধোরে।নিরুপমা কিছু বলার আগে তিলে একটা গভীর কিস করে উৎস ওয়াশরুমে প্রবেশ করে।নিরুপমা হাসবে না কাঁদবে বুঝতেছে না।
” বজ্জাত,ইতর, ছোটলোক,শয়তানের লিডার যখনই পারমিশন দিলাম ওমনি লুচুগিরি শুরু করে দিছে।ব্যাটা উৎস তুমি তো আমার প্রেমে পড়েছোই এখন শুধু তোমার মুখ থেকে শোনার অপেক্ষা হেহেহে।
কেটে যায় আরো ২ মাস।নিরুপমা আর উৎসের খুনশুটি চলতে থাকে।মুসকান এখন পুরোপুরি বসা শিখে গেছে।কিছু ধোরে দাঁড়িয়ে ও থাকতে পারে।দাঁত উঠেছে একটা। আরেকটার একটু খানি উঠেছে।এখন মুসকান নিরুপমাকে দেখলেই মা মা করে।যখন উৎসের কথা মনে পড়ে বাবা বাবা করে চিল্লায় আর কাঁদে।তখন উৎসকে ভিডিও কলে দেখানো লাগে।মুসকান ও তার বাবাকে ফোনের ওপারে দেখে খুশি।কিন্তু যখন ফোন এর মধ্যে উৎসকে ধোরতে যায় কিন্তু পারে না তখন হায়রে চিৎকার।নিরুপমাকে ফট করে কামড় দিয়ে বসে কখনো ফোন ধরতে পারলে বা হাতের কিছু থাকলে ছুড়ে মারে।৯ মাসের বাচ্চা মেয়ে এতো রাগি হতে পারে কেউ না দেখলে বিশ্বাস করবে না।তবে উৎস অনেক চেঞ্জ হয়ে গিয়েছ।নিরুপমাকে সবদিক থেকে সাপোর্ট করে।নিরুপমা একটা সনামধন্য ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পেরেছে।ওদের এই খুনশুটি পূর্ন বন্ধুত্বের উপরে যে কালো ছায়া আসতে চলেছে তা তারা বুঝতে ও পারছে না।অরিত্রা মারা যাওয়া পর এই ৯ মাসে একটা বারের জন্য ও তার মা মিসেস ডালিয়া এ বাড়িতে আসেন নি এমনকি মুসকানকে দেখতে ও না।তবে উৎসের সাথে তার কথা হতো।হঠাৎ করেই এই ৯ মাস পর মিসেস ডালিয়ার আগমন ঘটে।তবে এই আগমন কি নিরুপমার জন্য মঙ্গলের না ক্ষতির তা একমাত্র আল্লাহ জানেন।মিসেস ডালিয়ার আগমনে কি হতে চলেছে নিরুপমার জীবনে?

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে