#এক_বৃষ্টির_দিনে
#রাবেয়া_সুলতানা
#৩
দেখতে দেখতে দিন গুলো কখন ফেরিয়ে গেলো আয়ান টেরি পেলোনা।আজ আয়ানের বিয়ে।সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত। আয়ান আর অভ্র বসে কথা বলছে।একটু পর সবাই মেয়েদের বাড়িতে বের হবে।
অভ্র -আয়ান! তুই কি তানিশা কে দেখিসনি?
আয়ান -নারে! আমি যখনি ভাবি তানিসার সাথে দেখা করবো বা কথা বলবো তখনি আমার সেই মেয়েটার কথা মনে পড়ে যায়।
অভ্র -আয়ান তুই আসলেই একটা পাগল।বৃষ্টির মধ্য কি না কি দেখেছি আজও সেটা নিয়ে বসে আছিস।এর মধ্য ৩ বছর কেটে গেলো।যদি তোর কপালে লিখা থাকতো তাহলে এই ৩ বছরে একবার হলেও দেখা হতো।দেখ আমি তানিশাকে দেখেছি সত্যি অনেক ভালো মেয়ে।হয়তো তোর সেই মেয়েটার থেকেও ভালো এবং সুন্দরী হবে।
এমন সময় আয়ানের বাবা এসে বললো কিরে তোরা এইখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিস? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে সবাই একটু পরেই বের হবো।
__এইদিকে তানিশাকে নিয়ে তার দুই কাজিন রিতা আর মিলি পার্লারে গেলো তানিশাকে বউ সাজাতে।তানিশার মনের আনন্দের সীমা নেই।আয়ানের মতো একজনকে স্বামী হিসেবে জীবনে পাবে।
__আয়ানরা তানিশাদের বাড়িতে চলে এসেছে।একটূ পর বিয়ে পড়ানো শুরু করেছে।আয়ানের কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।তানিশাকে সে কখনোই ভালোবাসতে পারবো না।
অভ্র – এই আয়ান! তুই কি ভাবছিস বলতো? বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে,এখন ভেবে কোনো লাভ নাই,তুই শুধু এখন তানিশাকে নিয়ে ভাব।মেয়েটা সত্যি অনেক ভালো। তুই তানিশার দিকে একবার তাকিয়ে দেখ। মেয়েটাকে দেখলে হয়তো তুই সব ভুলে যাবি।
আয়ান -প্লিজ অভ্র একটু চুপ কর।তানিশাকে দেখার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।শুধু বাবা মায়ের কথা রাখতে চেয়েছি।এইছাড়া আর কিছু না।
সব কিছু শেষ করে আয়ানদের এখন বাড়ি ফেরার ফালা। তানিশা আর তানিশাদের সবাই কান্নাকাটি করছে এতে আয়ানের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।সবার কাছে থেকে বিধায় নিয়ে আয়ান আগে গিয়ে গাড়ীতে বসে আছে।তানিশা গাড়ীতে উঠার পরে গাড়ী চলতে শুরু করেছে।কিন্তু তানিশার এখনো কান্না থামে নাই।কিছু দূর যাওয়ার পরেই আয়ান বললো
আয়ান – আচ্ছা এইভার তো কান্নাটা থামান।আমারা কিন্তু আমাদের বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি।এতো কান্নার কি আছে বলেন তো? বাড়ির জন্য এতো বেশি মায়া হলে আর বিয়েটা করলেন কেন?
তানিশা অবাক হয়ে গেলো আয়ানে মুখে এমন কথা শুনে।কান্না থামিয়ে চুপকরে বসে আছে।
বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে গেলো আয়ান। সে এমন ভাব দেখাচ্ছে মনে হচ্ছে তার দায়িত্ব এইখানেই শেষ।বিয়ে তার বাবা মা করিয়েছে এখন দায়িত্ব তাদেরি। আয়ানে মা তানিশাকে বরণ করে ঘরে নিয়ে ড্রইং রুমে বসিয়েছে।সবাই তানিশার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে একটু পরে আয়ানের মা এসে আয়ানের কাজিনদের বললো
আয়ানের মা -রাত অনেক হয়েছে,তানিশাকে আয়ানের রুমে নিয়ে যা।আর আয়ান কোথায় গেলো ওই বাড়ি থেকে আসার পর থেকে একবার ও দেখলামনা।
অভ্র সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে আয়ানের মাকে বললো
অভ্র -আন্টি আয়ান ছাদে আছে।এতোক্ষন আমিও ছিলাম।আন্টি আজ তাহলে আসি।
আয়ানের মা-ঠিক আছে অভ্র কাল আবার চলে এসো।
আয়ানের মা আস্তে আস্তে ছাদে গেলো। গিয়ে দেখে আয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হয় তাঁরা গুনছে।
আয়ানের মা -কিরে বাবা তাঁরা গুনছিস?আকাশের তাঁরা দেখে লাভ কি?তাঁরা এখন তোর ঘরেই আছে।
আয়ান তার মায়ের কথা শুনে চমকে উঠলো
আয়ান -মা! তুমি কখন এলে?
আয়ানের মা -তুই কি আমাদের উপর রাগ করে আছিস? আমি জানি তুই এই বিয়েতে রাজি না।কিন্তু তুই জানিস তানিশা অনেক ভালো মেয়ে, অনেক লক্ষ্মী একটা মেয়ে।তুই এক বার মেয়েটা কে ভালোবেসে দেখ দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি জানি তুই তানিশাকে এখনো দেখিস নি।ওই মেয়েটার দিকে একবার তাকালে তুই দেখবি পুরোনো সব ভুলে যাবি।
আয়ান – মা! এই সব বাধ দাও।আমার কিছু ভালো লাগছে না।আর তুমি এখনো জেগে আছো কেন? যাও ঘুমিয়ে পড়ো। রাত জাগলে তোমার শরীর খারাপ করবে।
আয়ানের মা -আয়ান মেয়েটা হয়তো তোর জন্য বসে আছে।সবাই হয়তো ঘুমিয়ে আছে।মেয়েটা একা একা ভয় পাবে।তুই রুমে যা।
আয়ান -মা তুমি যাও আমি আসছি।
আয়ানে মা আর কিছু না বলে ছাদ থেকে নিছে নেমে এলো।
__তানিশা আয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে।আর ভাবছে এই কেমন ছেলেরে বাবা কেউ বউ কে ঘরে রেখে এইভাবে বাহিরে থাকে।আচ্ছা আয়ানের কি কারো সাথে রিলেশন আছে? না হলে আমাকে এইভাবে এড়িয়ে যায় কেন?
আয়ান রুমে এসে দেখে তানিশা এখনো বসে আছে।
আয়ান -(অন্য দিকে তাকিয়ে)আপনি এখনো ঘুমাননি?আমার জন্য অপেক্ষা করে আছেন কেন? আর শুনুন আপনাকে একটা কথা জানিয়ে দিই। আমার জন্য কোনো কিছুতেই অপেক্ষা করবেননা।
তানিশা -আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাস করবো সত্যি সত্যি বলবেন?
আয়ান -বলেন! আপনাকে একটা কথা জানিয়ে দিই আজ আমি মিথ্যা বলিনা আর কেউ বললেও পছন্দ করিনা।
তানিশা -(মনে মনে ওম্মম্মম,,,, , আমি মিথ্যা বলি না।লাট সাহেব অনি।)আসলে আপনি কি কোনো মেয়ের সাথে রিলেশন আছে?
আয়ান -না! আমার সাথে কোনো মেয়ের রিলেশন নাই।
তানিশা -তাহলে আপনি আমার সাথে এই রকম করছেন কেন?
আয়ান -আমি তোমার সাথে এই রকম করতে চাইনি।তোমাকে বিয়ে করতেও চাইনি।আসলে আমি একজন কে ভালোবাসি
তানিশা -নেকা,,,,তাহলে আগে মিথ্যা কথা বললেন কেন? মুখ ভেঙিয়ে অম্মম্মম্মম,,,আমি মিথ্যা বলি না।।
আয়ান -তানিশার কথা শুনে একটু হেসে,, ভালোবাসলেই কি রিলেশন হয়।আসলে ওই মেয়ে সাথে আমার এক বার দেখা হয়েছিলো #এক_বৃষ্টির_দিনে।তাও আবার ৩ বছর আগে। এরপর আমি আর ওই মেয়েকে এখনো দেখিনি। জানেন সেই দিন থেকে আমি আজও ওই মেয়েকে ভালোবাসি।
তানিশা – ওওওওওও তোহ ওই মেয়ের নাম কি?
আয়ান -জানি না! বললাম না একবার তাকে দেখেছি কিন্তু কথা হয়নি।
তানিশা -হা হা হা হা,, ,,,,,, পাগল দেখেছি আপনার মতো দেখিনি।যাক ভালোই হয়েছে।
আয়ান – আপনি হাঁসছেন?আর ভালো হয়েছে মানে?
তানিশা -(মনে মনে ওই মেয়ের ভূত কিভাবে নামাতে হবে আমার জানা আছে)না কিছুনা।তোহ ঘুমাবেন না? আর আপনি তো আমার সাথেও ঘুমাবেন না। কারণ যদি আমার মুখ দেখতে হয়।আর চিন্তা করবেন না,আপনি যতো দিন না চাইবেন আমি আমার র্মযদা কখনোই চাইবোনা।
আয়ান -সমস্যা নেই আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।ভয় পাবেন না আমি এখানেই আছি।
কথাটা বলেই আয়ান বারান্দায় এসে একটা সোপায় বসেছে।মেয়েটা সত্যি অনেক ভালো মেয়েটা কথায় একটা মায়া আছে। ধুর আমি এইসব ভাবছি কেন?
ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো আয়ান।
চলবে,,,,,,,,