এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_০৫
লেখনিতে: চৈত্র রায়
০৯
,
,
,
সাদাফ ভায়ের মা আসার তিন দিন পর সাদাফ ভাই পড়াতে এলেন……..ওনিও সাথে করে মিষ্টি আনলেন…… তার নতুন চাকরির কথা আবার নতুন করে আমাদের জানালেন….. তার এই কাজ থেকে আমরা বেশ বুঝতে পারলাম সাদাফ ভাই তার মায়ের করা কোন কাজ সম্পর্কেই জানেন না……..বাবা সেদিন আলাপ চারিতার ফাকে বুদ্ধি করে তাদের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে নিলেন…….আমার পরিক্ষা চলার কারণে সাদাফ ভাই বলে গেলেন এখন থেকে রোজ আসবে….. মা নতুন চাকরির কথা জানতে চাইলে জানালেন যে ওটার জয়েনিং আরো দুইমাস পর….. শান্তি নাই….. শান্তি কোন কিছুতেই নাই….. আগে পরাতেন সপ্তাহে পাঁচদিন যাও এই কয়দিনের ছুটিতে বেশ আরামে ছিলাম এখন তো মনে হচ্ছে ছাই চাপা দিয়ে ধরবে….. জয়েনিং টা দুই মাস পর কেন দিলা আল্লাহ….. কেন কেন কেন!!!! এতো দু:সংবাদের মধ্যে যখন হঠাৎ করে মনে পড়লো সাদাফ ভায়ের সাথে বিয়ে কথাটা তখন যেনো বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো……. তাও আশার কথা হচ্ছে বাবা খোজ খবর নিবেন…… আল্লাহ ভরসা….. কিছু একটা হয়ে ব্যাপার টা বাদ হয়ে যাক…… সেদিন রাতে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে ঠিক করলেন সকালেই তিনি সাদাফ ভাইদের গ্রামে যাবেন পরিচয় গোপন করে……
,
,
,
বাবা যথারীতি তার কথা অনুসারে খুব সকালে বেরিয়ে গেলেন…… কি হচ্ছে এসব!!!! দিব্যি তো ছিলো সবকিছু…… আমি তো আমার কষ্ট নিয়ে বেশ ছিলাম…… না আর ভালো লাগছে না কোন কিছু….. এদিকে সাদাফ ভাই ও রোজ আসছেন পড়াতে….. পড়ার অমনোযোগীতার জন্য রোজ ধমক খাচ্ছি…… কি করবো….!!! আমার সব কিছুতেই অশান্তি লাগছে….. ইচ্ছে করছে সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে কোন একদিকে চলে যাই…..৷ এখনি বিয়ে দেবার কি হলো আমাকে সেটাই ভেবে পাই না…… এই নিয়ে মায়ের সাথে খুব কথা কাটাকাটি হলো…… মাকে দেখলাম ডায়নিং টেবিলে বসে ফ্যাচফ্যাচ করে কাদছে….. কাদুক….. দুনিয়ায় আর ছেলে পেলো না….. সাদাফ ভাই ই জুটলো তাদের কাছে!!! আর আমারও যা কপাল!! সুখ আছে নাকি কপাল ফাটিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে…… বাবা ফিরে এলেন তিনদিনের মাথায়….. হাত- পা ব্যাথা আর জ্বর নিয়ে….. তিনি খোঁজ নেবার কোন কমতি রাখেন নি….. এমন খোঁজ ই নিয়েছেন যে একেবারে জ্বর বাধিয়ে এসেছেন……. মা বাবাকে জিজ্ঞেস করাতে বললেন আবহাওয়ার জন্য নাকি এমন হয়েছে তারউপর পুকুরে গোছল করেছেন……
,
,
,
রাতে ড্রয়িং রুমে বসেই মা- বাবা কথা বলা শুরু করলো….. রূপসী শীতলক্ষ্যা নদীর থেকে এক কিলোমিটার দূরে সাদাফ ভাইদের বাড়ি…… বাড়ি থেকে বাজার দশ মিনিটের রাস্থা…… সাদাফ ভায়ের বাবা ছিলেন সেখানকার হাই স্কুলের হেডমাস্টার আর তার সাথে সাথে বাজারে তাদের নিজস্ব ভিটায় ছিলো মুদির দোকান……. এখন সেখানে মার্কেট করে দেওয়া হয়েছে।।।।।। এক সারিতেই নাকি ২০ টা দোকান….. সবই সাদাফ ভাইদের……. সাদাফ ভাইদের বাড়ির কথা বলার সময় বাবার চেহারার ঝলক টাই অন্যরকম ছিলো…… আটানব্বই ডিসিমের পুরো রাড়িটা একেবারে দেখলে মনে হয় যেনো পুরানো দিনের রাজপ্রাসাদ…… অই বাড়ির ছাদে দারিয়ে নাকি শীতলক্ষ্যা নদী স্পষ্ট দেখা যায়….. বাড়ির পেছনের দিকে বাধানো পুকুর…… দুপাশে ফসলি জমি…. যা ইজারা দেওয়া আছে…….. বাড়ির মূল ফটকে বাগান…… দুজন ভাড়াটিয়া দেওয়া হয়েছে বাড়ি দেখাশোনা করার জন্য….. তবে সাদাফ ভায়ের মা হচ্ছে ওনার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী…… ওনার প্রথম স্ত্রী মারা যান ছোট ছেলেকে জন্ম দিতে গিয়ে…. তারপর থেকেই সাদাফ ভায়ের মা সেই পরিবার সামলে আসছেন……. সাদাফ ভায়ের দশমাস বয়সেই সাদাফ ভায়ের বাবা মারা যান….. তখন থেকেই একা হাতে তিনি চার ছেলে মেয়ে মানুষ করে সংসার সামলে আসছেন…… বড় ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে ডেনমার্ক আছেন……. মেয়ে দ্বিতীয়…… তাকে বিয়ে দিয়েছেন যশোর…… জামাই নামি দামি শিল্পপতি…… সাদাফ ভায়ের বড় যিনি তিনি আছে রাজশাহী…… সেখানেই বিয়ে করে সেটেল হয়েছেন…… কারণ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর…….. ছুটি কাটাতে বাড়ি আসেন প্রায় সবাই….. আর সাদাফ ভাই ভাই বোনদের মধ্যে ছোট……. ওই এলাকায় সাদাফ ভায়ের মায়ের বেশ সুনাম রয়েছে……….. কারণ প্রথম সংসারের ছেলেমেয়েদের কখনো পর ভাবেন নি….. আর ছেলেমেয়েরা ও তাকে সবসময় মূল্যায়ন করে গেছেন…… ,
,
,
,
এতো সব শুনে আমি বেশ হতাশ হলাম….. শেষ রক্ষা তাহলে আর হলো না…… আমি মনে হয় আল্লার প্রিয় হয়ে গেলাম খুব জলদি…… তখনি আশার আলো জ্বালিয়ে মা বললেন সবই তো ঠিক আছে সাদাফ ছেলে মানুষ তার ও তো একটা মতামত আছে….. আমি আপার সাথে কথা বলি এই ব্যাপারে কি বলো!! বাবাও মায়ের কথায় সায় দিলেন…….
আমি তো পারি না লাফিয়ে ফ্লোর ফাটিয়ে ফেলি…. কারণ আর যাই হোক সাদাফ ভায়ের মতন একজন ব্রিলিয়ান্ট ছেলে আমার মতন গাধিকে বিয়ে করবেন না…… কত ভালো চাকরি তার কতো ভালো দেখতে…… ওনার কি মেয়ের আকাল পড়বে নাকি…… ইশশশ শুধু শুধুই এতোদিন টেনিশন করে গেলাম……
,
,
,
১০
,
,
,
দেখতে দেখতে আমার পরীক্ষা ও শেষ হলো আর এতো দিনের মধ্যে বিয়ে নিয়ে কোন কথাই বাড়িতে শুনি নি…..এর মধ্যেই মা শিমুল ভাই আর নতুন বউকে দাওয়াত দিলেন সাথে তাদের পরিবার কে…… এই উপলক্ষে সাদাফ ভাইদের ও দাওয়াত দিলেন সাথে চাচাদের ও….. মোট কথা নিকটতম আত্নীয় স্বজন যারা আছেন তাদের সবাইকেই দাওয়াত দেওয়া হয়েছে…… শুক্রবার হওয়ার সবাই উপস্থিত হলো…… শিমুল ভাই আর তার বউকে দেখে মনে হলো আমার চেয়ে মনে হয় এই মেয়েকেই তার পাশে বেশি মানিয়েছে……তাদের এতো হাসি খুশি দেখে নিজের ও ভালো লাগছিলো….. যাক ভালোলাগার মানুষ টা ভালো আছে এতেই আমি খুশি…… সাদাফ ভাইরা আসলেন তার কিছুক্ষণ পর…….. সেদিন সাদাফ ভায়ের বোন ও এসেছিলেন…… আন্টি আর আপু আগে ঢুকলেন….. সাদাফ ভাই ঢুকলেন একটা বাচ্চা মেয়েকে কোলে নিয়ে……. পিচ্ছিটা দেখতে ছিলো পুরাই আপুর মতোন…..খুব ফর্সা না তবে বেশ মায়াবী চেহারা….. চুল গুলো মাঝারি।।।।। ঝুটি করা…… একটা সাদা ফ্রক….. আমিতো পারি না খেয়ে ফেলি….. না পেরে সুফিয়া খালাকে দিয়ে সাদাফ ভায়ের কাছ থেকে আনিয়ে কোলে নিলাম…….. সাদাফ ভায়ের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক ই হলাম একদম ফরমাল লুকে…….. কালারফুল একটা স্টাইপের শার্ট আর কালো প্যান্ট…… অফিস থেকে সোজা চলে এসেছেন মনে হয়…. পরে মনে পড়লো আজ তো শুক্রবার…. আর মাথা ঘামালাম না…… একে একে সবার খাওয়া হলো….. আমরা মেয়েরা বসলাম একসাথে পরে…… বেশ হাসি ঠাট্টা করতে করতে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম…… কিন্তু এরপর যে এতো বড় চমক আমার জন্য৷ অপেক্ষা করছিলো আমি ঘুনাক্ষরে ও টের পেলাম না…….
,
,
,
অনেকটা ঘোষণা করার মতোন করেই সাদাফ ভায়ের মা আমায় আন্টি পরিয়ে দিলেন…….. সাদাফ ভায়ের বড় বোন বেশ কয়েকটা গিফট আর শপিং দিলেন…….. মা বাবা ও সাদাফ ভাইকে চেইন পরিয়ে দিলেন……. সাথে শার্ট-প্যান্ট এর কাপড় দিলেন………. আমি একদম স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম……. একবার সাদাফ ভায়ের দিকে তাকালাম……. ওনাকে দেখে আমার খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে…… তাহলে ওনি কি রাজি হয়ে গেছেন!!! কেমন যেনো স্বপ্ন স্বপনই লাগছে সব কিছু……. সুফিয়া খালা আর শিমুল ভাইয়ের বউ মিলে আমাকে ঘরে নিয়ে এলেন…… একটু পড়েই শাম্মি খুশিতে গদ গদ হয়ে ভেতরে ঢুকলেন…… দোস্ত সামনের শুক্রুবারেই তোমার কেল্লাফতে…….. ভাইয়াকে আমার খুব পছন্দ হয়েছেরে….. ইশ আমি আগে দেখলে তো আমিই বিয়ে করে নিতাম…….
,
,
,
চলবে……