এক শহর ভালোবাসা পর্ব-৪০+৪১

0
3242

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪০
#সুরাইয়া_নাজিফা

“দেখি তোমার হাতে মেহেদির রং কেমন হয়েছে।”
“দেখে কি করবেন?”
“মানুষ বলে মেয়েদের হাতে মেহেদির রং গাড় হলে নাকি স্বামী বেশী ভালোবাসে তাই দেখতে চাইছি। ”
আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“কেন নিজেই নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না নাকি?”
শান ভ্রু কুচকে বললো,
“আমি সেটা কখন বললাম? ”
“তাহলে দেখে কি করবেন? ”
শান হালকা হেসে বললো,
“শুধু নিজে জানলে তো হবে না পৃথিবীর সব মানুষেরও তো জানা প্রয়োজন আমি আমার বউকে কতটা ভালোবাসি তাই না। ”

উনার কথা শুনে আমি একপলক আমার হাতের দিকে তাকালাম তারপর মুচকি হেসে বললাম,
“তাই নাকি তাহলে দেখেন আপনার ভালোবাসার রং।”

কথাটা বলেই আমি আমার হাত দুটো উঁচু করলাম। আমার হাতে মেহেদির রং অনেক সুন্দর হয়েছে। এই নিয়েও এতক্ষন বড়রা প্রচুর মজা করেছে আমার সাথে।বর নাকি আমাকে চোখে হারায় তাই মেহেদির রং এতটা গাড় হয়েছে।

“বাহ দেখেছো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি এখন তো প্রমাণও আছে। ”
আমি উনাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম,
“ইশ আমার হাতে মেহেদি এমনিতেই লাল হয় বুঝলেন তাই এতো ক্রেডিট নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ”
শান আমাকে টোন কেঁটে বললো,
“আচ্ছা জ্বলছে না আমি বেশী ভালোবাসি দেখে তুমি তো মোটেও আমাকে ভালোবাসো না এজন্যই আমার হাতে মেহেদির রং হয়নি। ”
শানের কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“কি মিথ্যা কথা আপনি গান গাইবেন বলে গিটার বাজানোর জন্য নিজের মেহেদি ধুয়ে ফেলেছেন। মেহেদিটা হাতে সম্ভবত দশমিনিট ছিলো এই দশমিনিটে কি রং আশা করেন আপনি? ”
“তাতে কি মানুষ তো এটাই বলবে তাই না যেটা আমি বলেছি। ”

শানের কথা শুনে আমি মুখ ফুলালাম মনে মনে ইচ্ছা মতো গালাগালি করতে থাকলাম কি খারাপ লোক নিজেই তো গান গাওয়ার জন্য হাত ধুয়েছে এখন আমার দোষ দিচ্ছে।

“আমার হাতে রং কেমন হয়েছে দেখতে চাইবে না।”
আমি অভিমান নিয়ে বললাম,
“দেখার কি প্রয়োজন আপনি তো বলেই দিয়েছেন। ”
শান নিজের নিচের ঠোঁট কামড়ে বললো,
“ইশ মুখটা এমন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে কেন বৃষ্টি নামবে বুঝি। ”

আমি কথা না বলে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলাম।শান নিজের হাত সামনে এনে বললো,
“আচ্ছা দেখো তো কেমন হয়েছে। ”
আমি তাকালাম না শান বললো,
“আহা এসব মান অভিমান বিয়ের পর করো যাতে আদর ভালোবাসা দিয়ে ভাঙাতে পারি এখন আমার দিকে তাকাও। ”
আমি তারপরও তাকালাম না। কেন তাকাবো সামান্য একটা মেহেদি দিয়ে উনি আমার ভালোবাসার পরিমাপ করছে কিভাবে।
শান আবারও বললো,
“সুইটহার্ট তাকাও। ”

এতবার বলার পরেও যখন সোহা তাকালো না শানের রাগ উঠে গেলো। শান ধমক দিয়েই বললো,
“সোহা লুক অ্যাট মি। ”

হঠাৎ মিষ্টি কন্ঠের পরিবর্তে কর্কশ কন্ঠে তাজা ধমক শুনে আমি দ্রুত ফোনের দিকে তাকালাম আর তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম উনার হাতে গাড় লাল রং হয়েছে মেহেদির। আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলাম,

“এই আপনার হাতে এতো রং হলো কি করে আপনি তো….।”
পুরো কথা বলার আগে শান বললো,
“আমার বউয়ের উপর কেউ আঙ্গুল তুলবে সেটা কি আমি হতে দিতে পারি নাকি। সবাই জানুক আমি তাকে যতটা ভালোবাসি সেও আমাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসে কি তাই তো?”

উনার কথা শুনে আমার রাগ গলে জল হয়ে গেল। প্রত্যেকবার উনি এমন এমন কান্ড করে যে আমি বাধ্য হই উনার ভালোবাসার কাছে হারতে।

আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে বললাম,
“এটা কিভাবে সম্ভব? ”
শান হেসে বললো,
“সম্ভব কারণ আমি পরিবর্তীতে আবার সেই ডিজাইনের উপর মেহেদি দিয়েছিলাম কিছুক্ষন আগেই সেই মেহেদি শুকিয়েছে এজন্যই তো ফোন দিতে লেইট হলো। ”

আমি একদৃষ্টিতে শানের দিকে তাকিয়ে রইলাম শান বললো,
“এখন অভিমান ভেঙেছে কি?”
আমি নাকের পাটা ফুলিয়ে বললাম,
“কেন ভাঙবে আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না রং তো এমনিতেই হয় মানুষের হাতে তাতে কি আসে যায়। ”
শান চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো,
“ওহ তাহলে ভালোবাসো বুঝি। ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে গলা উঁচিয়ে বললাম,
“আপনার থেকেও বেশী। ”
“নো সুইটহার্ট তুমি ভালোবাসতে পারো বাট আমার থেকে বেশী না। ”
আমি রেগে বললাম,
“বলেছি তো আপনার থেকে আমি বেশী ভালোবাসি। ”
“আমি বেশী ভালোবাসি। ”
“আমি বেশী।”
“আমি। ”
“বললাম না আমি বেশী এখন কিন্তু কান্না করব না মানলে। ”
শান হেসে বললো,
“ব্লাকমেইল করে কিছু আদায় করতে হয় কি করে কেউ তোমার থেকে শিখুক। ”
আমি উনাকে চোখ টিপে বললাম,
“বেশ করেছি। যেমন বর তেমন তো বউকে হতোই হতো তাই না। ”
শান হালকা বললো,
“হুম বুঝতে পারছি আমার বোকা বউটা দিনদিন চালাক হয়ে যাচ্ছে। ”


সারারাত বসে বসে গল্প করা আর দিন হলে পড়ে ঘুমানোটাই এই কয়দিনের রুটিন হয়ে গেছে আমার। কারণ সারাদিন পুরো বাড়ি ভর্তি এতো মানুষ থাকে যে কথার বলার সুযোগই হয় না।বলা তো যায় না কে আবার কখন বলে উঠে মেয়েটা কি বেহায়া বিয়ের আগেই স্বামীর সাথে প্রেম আলাপ করছে বিশেষ করে বেশী বয়স্ক যারা তাদের একটু সামলে চলতেই হয়।

সন্ধ্যাবেলা হলুদের অনুষ্ঠান। পুরো বাড়ি বিভিন্ন রঙের ফুলের সাথে মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। একদম ঝলমল করছে বাড়িটা। আম্মু আমাকে আর স্মৃতি আপুকে শাড়ী আর জুয়েলারি দিয়ে গেছে। জুয়েলারি বলতে ফুলের গয়না। অন্যদিনের মতো আমার কাজিন আর ফুফি মামিরা মিলে আমাদের সাজিয়ে দিয়েছে। সাজানো হয়ে গেলে বড়রা বাকি আয়োজন দেখার জন্য বেরিয়ে যায়। তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে একদম স্পষ্ট উঠে আছে “শান ইজ কলিং” বাট এখন চাইলেও আমি এই বিচ্ছু গুলার সামনে ফোন রিসিভড করতে পারবো না তাহলে শুরু হয়ে যাবে এদের পঁচানো। আমি হাতটা বাড়িয়ে ফোনটা কাঁটতে যাবো তখনই আমার কাজিন ঝুম আমার হাত ধরে বসল।

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“কি হয়েছে? ”
ঝুম একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
“দাঁড়া শুধু তুই কথা বললে হবে জিজুর সাথে আমাদেরও একটু সুযোগ দে। ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“মানে? ”
“মানে হলো তিয়াশা এখন তুই হয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলবে আমরাও দেখি ভাইয়া তোকে কতটা ভালোবাসে তুই আর তিয়াশার কন্ঠের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে কিনা। ”
আমি আঁতকে উঠে বললাম,
” ঝুম আপু এটা ঠিক না তিয়াশা তো আমার কন্ঠ নকল করতে পারে তাহলে উনি বুঝবে কিভাবে? ”
“কন্ঠ নকল করলেই তো হলো না কথা বলার ভঙ্গি তো অবশ্যই আলাদা হবে তাই না দেখাই যাক তোদের ভালোবাসা কতটা স্ট্রং। ”

ঝুম আপুর কথা শুনে আমিও ভাবলাম দেখি খানিকটা বাজিয়ে দেখি কি হয়। আমি সম্মতি দিলাম। প্রথমবার এসব তর্ক করতে করতে ফোনটা কেঁটে গেল দ্বিতীয়বার ফোন দিতেই তিয়াশা রিসভড করল। আমার বুকের ভিতর ডিপ ডিপ করতে লাগলো বুঝতে পারবে তো শান?ফোন স্পিকারে দেওয়া হলো।

ওপাশ থেকে শান বললো,
” হ্যাঁলো। ”
তিয়াশা চুপ করে রইল শান আবার বললো,
“কথা বলো। কি করছো এখন?”
তিয়াশা আমার মতো মিনমিনে গলায় বললো,
“এই তো সবাই সাজিয়ে দিয়ে গেলো বসে আছি চুপচাপ। ”
“খেয়েছো তো?”
“হুম। ”
“ওহ বাসার সবাই ভালো? ”
তিয়াশা একবার সবার দিকে তাকিয়ে বললো,
“হুম ভালো। ”

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। সচারাচর তো শান আমার সাথে এভাবে কথা বলে না। সবাই গোল গোল চোখে তাকিয়ে আমাদের চারপাশে ঘিরে আছে। এদিকে ঝুম আপু মিনমিনিয়ে বলছে,
“কিরে সোহা তুই বুঝি ঘন্টার পর ঘন্টা এমন নিরামিষ আলাপ করিস। ”

আমি ভ্রু কুচকে আপুর দিকে তাকালাম।ব্যাপারটা বুঝার জন্য তিয়াশা কে ইশারায় জিজ্ঞেস করতে বললাম যে আজ হঠাৎ আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? তিয়াশা আমার ঠোঁটের নাড়ানো চাড়ানো দেখে সেভাবেই শানকে বললো,

“আচ্ছা আপনি আজকে এভাবে কথা বলছেন কেন?”
“কিভাবে?”
“এই যে কেমন নিরামিষ নিরামিষ সচারাচর এভাবে তো বলেন না। ”
শান একটু হেসে বললো,
“কারণ আমি জানি বউয়ের সাথে কি করে কথা বলতে হয় আর শালীদের সাথে কিভাবে।”

শানের কথা শুনে আমি বিষম খেয়ে কাঁশতে লাগলাম আর তিয়াশা কন্ঠে বিষ্ময় নিয়ে বললো,
“মানে? ”
“মানে পরে বুঝাচ্ছি আগে কেউ আমার বউটাকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দেও। ”

কথাটা শুনে আমার কাশি বন্ধ হয়ে গেল।সবাই থম মেরে বসে রইল। স্মৃতি আপু আমাকে পানি এগিয়ে দিতেই আমি এক ঢোকে পানিটা খেয়ে নিলাম। আমার মুখে বিশ্ব জয়ের একটা হাসি ফুঁটে উঠলো।

শান আবারও বললো,
“আমি জানি ফোনটা স্পিকারে দেওয়া তুমি আমায় শুনতে পাচ্ছো সুইটহার্ট তোমার নিঃশ্বাসের শব্দটাও আমি খুব ভালো করে চিনি সেখানে তুমি ভাবলে কি করে যে আমি অন্যকেউকে তুমি ভেবে ভুল করব। এতোটা অবিশ্বাস আমার প্রতি। ”

আমি তিয়াশার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললাম,
” ছি ছি এটা কি বললেন আসলে এটা ঝুম আপু আর তিয়াশা মিলে আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য করেছে আমি এসবের কিছু জানি না। ”

ঝুম আপু লজ্জা পেয়ে বললো,
“স্যরি জিজু আমরা একটু মজা করার জন্যই এটা করেছি প্লিজ কিছু মনে করো না। ”

“না আমি কিছু মনে করছি না শালী হিসেবে এতটুকু মজা তোমরা করতেই পারো।”

তখনই তিয়াসা বলে উঠলো,
“ওয়াও জিজু সো সুইট অফ ইউ। আর কি কি গুন আছে তোমার কালকে গান শুনে ফিদা হয়ে গেছিলাম আর আজকে তো তোমার উপর ক্রাশই খেয়ে গেলাম। ”

শান হেসে বললো,
“সো স্যাড শালীসাহেবা এখন তো ক্রাস খেয়েও কোনো লাভ নেই কজ আমি অলরেডি একজনের হয়ে গেছি সো আমি তাকে ছাড়তে পারবো না। ”

তিয়াশা আফসোস করে বললো,
“ইশ কেন যে সোহার আগে আমার সাথে তোমার দেখা হলো না। ”

শান সোহাকে জ্বালানোর জন্য মজা করে বললো,
“রিয়েলি তাহলে তোমার বোনকে বলো আমাকে ছেড়ে দিতে তাহলে কিছু একটা হলেও হতে পারে।”

শানের কথা শুনে আমার চোখ গুলো স্বাভাববিকের তুলনায় বড় হয়ে গেল।রাগান্বিত কন্ঠে তিয়াশার মাথায় গাট্টা মেরে বললাম,
“আর কত ক্রাশ খাবিরে তুই। পৃথিবীতে এমন কোনো ছেলে বাকি আছে যে ক্রাশ খাশ নাই। ”

তিয়াশা ঠোঁট ফুঁলিয়ে বললো,
“এখন পৃথিবীর সব ছেলেকে যদি ভালো লাগে আমার কি করার আছে। ”

তিয়াশার কথা শুনে সবাই একযোগে হাসতে লাগলো শান ওপাশ থেকে বললো,
“আহা বেচারী বাচ্চা একটা মেয়ে এতো সিনক্রিয়েট করছো কেন?”

শানের কথা শুনে রাগ আরো সপ্তমে উঠে গেল,
“এই বের হো সবগুলো এখনি রুম থেকে বের হো বলছি। ”

সবগুলোকে কান ধরে বের করে দিয়ে ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিলাম,
“আমাকে ছেড়ে দেওয়ার এতো তাড়া দেখছি ভালোবাসা সব পালিয়েছে নাকি? ”

“তোমার কিছু যায় আসে নাকি তাতে তুমিই তো এইমাত্র অন্যকে ধরিয়ে দিয়েছো কথা বলতে আমার থেকে পিছু ছাড়াতেই। ”

“আমি কতবার বলবো আমি কিছু করিনি এগুলো সব ওদের কারসাজি। ”

“হুম কিন্তু যদি বুঝতে না পারতাম কেসটা তো আমিই খেতাম তখন তো তুমিও উল্টাই বুঝতে তাই না। ”

“আমি জানতাম আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন। ”
“এতো বিশ্বাস?”
“হুম। ”
“ওকে এইবার ঝটপট হলুদের সাজে আমাকে কয়েকটা পিক দেও তো আর ভিডিও কল দিচ্ছি। ”
“না।”
“না মানে?”
“না মানে না। না পিক পাবেন আর না ভিডিও কলে কথা বলবো এটা আপনার শাস্তি আমাকে কষ্ট দেওয়ার। ”
“এখন দোষটা তুমি করলে আর শাস্তিটা আমি পেলাম এটা কেমন নীতি আমি কিন্তু চাইলেই রাগ করতে পারতাম। ”
“করেন রাগ তাতে আমার কি আমি তো দিবো না পিক। ”
“ওকে দিতে হবে না আমার জিনিস আমিই জোগার করে নিবো। ”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“কি করবেন আপনি? ”
“সময় হলেই দেখতে পাবে।”

আমি কিছু বলার আগেই উনি ফোনটা কেঁটে দিলো। কি করতে চাইছে উনি?আচ্ছা সত্যি সত্যি রাগ করেনি তো। আমি কয়েকবার ফোন করলাম বাট রিসিভড করল না।

কিছুক্ষন পর এসে আমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হলো।হলুদ লাগানোর আগে ভূমিকা আপু আমার অনেক গুলো ছবি তুলে নিলো।পরে বড়রা মিলে শানের গায়ের হলুদ আমার গায়ে ছোঁয়ালো। সবাই একটু একটু করে আমার আর আপুর গায়ে হলুদ মাখালো অনেক রাত পর্যন্ত হলুদ প্রোগ্রাম হলো। তারপর আমাকে আর আপুকে গোসল করার জন্য রুমে পাঠিয়ে দিলো।আজকে আমাদের রুমে কেউ থাকবে না ওদের জন্য অন্যরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে এটা শুনে ভালো লাগলো।আমি রুমে এসেই ফ্রেস হতে চলে গেলাম আর আপু অন্য ওয়াসরুমে। ফ্রেস হয়ে এসে চুল মুছতে মুছতে আমি এসে বেডের উপরে বসলাম। আপুও ফ্রেশ হয়ে আসলো।আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,

“উফ এই মিষ্টি খেতে খেতে একদিনে মোটা হয়ে যাবো আমি। ”
আপু হাসলো,
“আচ্ছা ভাইয়া তখনের কাজে রাগ করেনি?”
“করেনি আবার তোদের জন্য সব ঝড় আমার উপর দিয়েই গেলো। ”
আপু বেডের অন্যপাশে এসে বসে বললো,
“এজন্যই বিয়ের এই কয়দিন আরশকে বলেছি তেমন একটা কথা না বলতে জানি তো সুযোগ পেলেই এরা এভাবে মজা নেবে। ”

আপু হাসল। আমি মুখ ফোলালাম। তখনই আমার ফোনের ম্যাসেজ টিউনটা বেজে উঠলো। ওপেন করতেই দেখলাম আমার হলুদ ফাংশনের কিছু ছবি শান পাঠিয়েছে মানে কেমনে সম্ভব। উনি কোথায় পেলো ছবি গুলো।
ছবি গুলোর নিচে লেখা ছিল,
“আমার পরীকে হলুদ শাড়ীতে একদম হলুদপরী লাগছে। ”

ছবি গুলো দেখে আমি শানকে কল করলাম,
“এই ছবি আপনি কই পেলেন। ”
শান কিছু না বলে শুধু হাসল।
“আমি আপনাকে হাসতে বলিনি। ”
“শুধু ছবি? আমি তো তোমার পুরো হলুদ অনুষ্ঠান লাইভ দেখেছি। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কেমনে?”
“তোমাকে বলবো কেন তুমি তো আর দেওনি আমি কালেক্ট করে নিয়েছি। ”
“কে দিয়েছে আজকে তো সবাই কম বেশী বিজি ছিল বাড়ির আর আপনার গুপ্তচরেরও তো সেই টাইমে গায়ে হলুদ ছিল তাহলে? ”
শান আবারও হাসলো,
“তুমি অনেক বোকা সুইটহার্ট আমার জন্য এটা কোনো ব্যাপারই না।তোমার যেখানে হলুদ প্রোগ্রাম হয়েছিল সেখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। আজকের মতো টাটা কালকে দেখা হবে প্রিয়া ফুলের বাসরে। ”

কথাটা বলেই উনি একটা ভাব নিয়ে ফোনটা কেঁটে দিলো অদ্ভুত।আমি হা করে রইলাম। কি ফাজিল লোক। তারপরই উনার পরের কথাটা মনে পড়তেই লজ্জা পেয়ে গেলাম।

হঠাৎ দরজায় টোকা পড়তেই আমি আর আপু ঘাবড়ে গেলাম এতো রাতে কে? আপু গিয়ে দরজা খুলে দিলো আব্বু, আম্মু দাঁড়িয়ে আছে হাতে খাবার নিয়ে।
আপু বললো,
“বাবা,মা তোমরা এত রাতে?”

বাবা একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“তোরা তো খাসনি কিছু তাই ভাবলাম খাইয়ে দি কে জানে আজকের পর আর কখনো সুযোগ হয় কিনা। ”

বাবার কথা শুনে আমাদের দুই বোনের চোখে পানি চলে আসল। তারপর আমাদের খাইয়ে দিল বাবা আর মা পাশেই বসে ছিল।

খাওয়ানো শেষে বললো,
“জানিস পৃথিবীতে সব থেকে কঠিন কাজ হচ্ছে মেয়েকে বিদায় দেওয়া। এতগুলো বছর লালন-পালন করে তারপর হুট করেই একজনের হাতে তু্লে দেওয়াটা কতটা কষ্টের সেটা একজন বাবা মাই জানে। ভাবতেই পারছি না আমার ছোট মেয়ে দুটো কবে এতো বড় হয়ে গেল যে কালকে আমার পুরো বাড়িটা ফাঁকা করে চলে যাবে।”

বাবা মায়ের চোখে পানি আমরা দুই বোন গিয়ে বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।চারজনই চারজনকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকলাম। ভাবতেই পারছিনা মেয়েদেরকেই সবসময় কেন এতো ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তারপর মা বাবা আমাদের দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল।


আজকে খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল।সত্যি বলতে কাল রাতে ঘুমই হয়নি এতো কান্নাকাটির মাঝে।তারউপর বিয়ে নিয়ে এতো টেনশন হচ্ছে। কি একটা টান টান উত্তেজনা। মনের মধ্যে একদিকে আনন্দ লাগছিলো অন্যদিকে ভয় সব মিলিয়ে একটা অসাধারণ অনুভুতি। আজকে আমাদের সবার এতোদিনের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে মিলিত হওয়ার। হুম আজ আমাদের বিয়ে। বিয়ে কথাটা মনে পড়লেই লজ্জা, ভয়, খুশি সবকিছু একসাথে এসে মিলিত হয় মনের কোনে।

আজকে কেউ তেমন একটা বের হতে দেয়নি আমাদের রুম থেকে। পার্লার থেকে মেয়ে নিয়ে এসে সাজানো হয়েছে। কারণ বাবা এর আগের বারের মতো রিস্ক নিতে চায়নি। আপু তো পার্লার থেকেই পালিয়ে ছিল। আবার না কোনো অঘটন ঘটে তাই পার্লারই ঘরে বসিয়ে দিয়েছে। আমার আর আপুর দুজনেরই একসাথে সাজ কমপ্লিট হয়ে গেল।আমি একটা লাল বেনারসি পড়েছি তার সাথে গোল্ডের জুয়েলারি। নিজের দিকে নিজেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি। প্রথমবারের বিয়ের থেকে এই বিয়ের কত পার্থক্য প্রথমবার তো এই ফিলিং গুলোই কাজ করছিলো না আর এখন কত সুন্দর করে প্রতিটা মুহূর্ত অনুভব করতে পারছি।

আপু আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমার ছোট্ট বোনটা কবে এতো বড় হয়ে গেল বলতো যে সে আজকে আমার সামনে লাল বেনারসি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে শুধু তাই নয় সম্পর্কে তো আমার থেকে বড় হয়ে গেল।”

আমি আপুকে জড়িয়ে ধরলাম,
“প্লিজ এতো ইমোশনাল কথা বলিস না নাহলে আমার মেকাপটা নষ্ট হয়ে যাবে। ”

আমার কথা শুনে আপু হেসে দিল। কিছুক্ষন পর শুনতে পেলাম বর এসেছে বর এসেছে বলে সবাই ছুটে যাচ্ছে। বুকের মধ্যে ধুকপুক শব্দটা যেন আরো বেড়ে গেল। আমাদের স্বপ্ন থেকে আর কিছুটা দূরত্ব আমাদের।

শান স্টেজে বসে আছে আর অপেক্ষা করছে সোহার জন্য। তখনই স্মৃতি সোহা দুজনকেই নিয়ে আসা হলো। শান মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল। এই রূপে হয়তো পৃথিবীর সব মেয়েকেই সবচেয়ে বেশী সুন্দর লাগে। সোহাকে শানের পাশে আর স্মৃতিকে আরশের পাশে বসানো হলো। তারপর বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু হলো। তিনবার কবুল পড়ে দ্বিতীয়বারের মতো শানের হয়ে গেলাম সারাজীবনের জন্য। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললো। শান কানে কানে বললো,
“কনগ্রাচুলেশন সুইটহার্ট অবশেষে দ্বিতীয়বারের মতো তুৃমি আমারই হলে। ”

আমি শানের দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট হাসি উপহার দিলাম। তারপর একে একে সবাই আসলো ছবি তোলার জন্য।

কিছুক্ষন পর একজন দম্পত্তি এসে বললো,
“কনগ্রাচুলেশন তোমাদের দুজনকেই। ”

এতো মানুষের মধ্যেও তাদের চিনতে আমাদের অসুবিধা হলো না। আমার আর শানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো শান আর আমি হেসে বললাম,
“তোমাদেরকেও অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ। ”

তিমির আর ঐশী হাসল। আমি একটু অভিমান করে বললাম,
“এতগুলো প্রোগ্রামে এলে না কেন?কত অপেক্ষা করেছি তোমাদের জন্য। ”

ঐশী বললো,
“আসলে বাবার শরীরটা অনেক অসুস্থ ছিল তাই বাবাকে দেখতে গিয়েছিলাম বাবার টেক কেয়ারের প্রয়োজন ছিল তাই বাবার পাশেই ছিলাম তবে আজকে বিয়ে দেখে ছুটে চলে এলাম আমার দুটো প্রিয় মানুষের কাছে। ”

ঐশীর চোখে জল চলে এলো। আজও ঐশী শানকে দেখলে নিজের চোখের পানি আটকাতে পারেনা। তবে আগের মতো ফিলিংস গুলো আর কাজ করে না। এখন মনে যত অনুভুতি, প্রেম, ভালোবাসা আছে সব তিমিরের নামে।

তিমির শানকে উদ্দশ্যে করে বললো,
“শুনেছি ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায় কিন্তু তোর এতোবার যাওয়ার ইচ্ছা হলো কেন বলতো আমার জীবনতো একবারই তেজপাতা হওয়ার উপক্রম।”

কথাটা বলতেই ঐশী অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তিমিরের দিকে। তিমির ঐশীর দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বললো,
“না ঐ শানকে বলছিলাম যে একটু সাবধানে থাকতে। ‘
“আমি তোমার জীবন তেজপাতা করেছি তাই না আজকে বাসায় চলো হচ্ছে তোমার। ”
তিমির কান্না কান্না মুখ করে রইল শান মজা নিয়ে তিমিরের পিঠ চাপড়ে বললো,
“ইশ ভাই আমাকে সাবধান করতে গিয়ে নিজেই ফেসে গেলি বেষ্ট অব লাক ওকে। ”

“ভাইরে ভাই এটাকেই বউ বলে।তবে সোহা ভাবী আপনার কিন্তু আমার তরফ থেকে একটা স্পেশাল গিফট পাওনা আছে। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কেন?”
“কেন আবার আপনার মনে আছে যেদিন আপনার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় সেদিন কি বলেছিলেন আপনাদের বাসায় দাওয়াত দিয়ে যাতে যখনই আপনাদের বাড়িতে আসি যেন বউকেও নিয়ে আসি আপনার ভবিষ্যৎ বাণীটা তো সত্যি হয়ে গেল। ”

তিমিরের কথা শুনে আমি, শান, ঐশী তিনজনই হেসে দিলাম। আসলেই জীবনটা কতো অদ্ভুত তিন-চারমাসে জীবনের মানেটাই বদলে গেছে সবার। ভালোবাসার মানুষ, নিজের ঠিকানা সব সবটা বদলে গেছে। ঐশীর দিকে তাকিয়ে মনে একটু প্রশান্তি পেলাম। মেয়েটা জীবনে নিজের জন্য একজন সত্যিকারে ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে। সবাই সবার মতো সবার জীবনে ভালো আছে এরচেয়ে আর বেশী কি চাই জীবনে।
.
.
চলবে

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪১
#সুরাইয়া_নাজিফা

এইমাত্রই গাড়িটা এসে পৌঁছেছে শানদের বাড়ির সামনে। আমি একবার বাহিরের দিকে তাকালাম কিছুদিনের ব্যবধানে বাড়িটা যেন নতুন নতুন লাগছে। চারপাশে আলোর রোশনাই চোখ ধাঁধিয়ে যাবার উপক্রম। একটা বাড়ি অন্ধকার করে দিয়ে অন্যবাড়িকে আলোয় আলোকিত করে সাজানোকেই হয়তো মেয়ে বলে। আমি চোখটা নামিয়ে নিলাম। বাড়ির ভিতর থেকে সবাই দৌঁড়ে এলো আমাদের নিয়ে যাবার জন্য। যদিও সবাই আমার পরিচিত তাও সবকিছু নতুন নতুন লাগছিল। আমি বের হওয়ার আগে শান বের হয়ে আমার সামনে হাত বারিয়ে দিল,

“ওয়েলকাম টু মাই হাউস ফর দ্যা সেকেন্ড টাইম সুইটহার্ট। ”

আমি শানের দিকে এক নজর তাকিয়ে মুচকি হেসে শানের হাতে হাত রেখে বেরিয়ে এলাম। আমাকে দেখেই শানের ফুফাতো বোন সানিয়া দৌঁড়ে এলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ওয়েলকাম মেজ বৌমনি। ”
আমি মিষ্টি হেসে বললাম,
“ধন্যবাদ কিউটি। ”

তারপর ও আপুর কাছে গিয়ে একই রকমভাবে ওয়েলকাম জানালো। আমাদের সবাই ফুলের পাঁপড়ি ছড়াতে ছাড়াতে বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত নিয়ে এলো। দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম শ্বাশুড়ী মা দাঁড়িয়ে আছে। মাকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি খেলে গেল। পাশেই ফুফু শ্বাশুড়ী দাঁড়িয়ে। এই মহিলার মুখে আজও হাসি নেই মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আজও পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না যে এই মহিলার আমাকে নিয়ে এতো কি সমস্যা। যাইহোক ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। প্রথমে আমি আর শান গিয়ে বাড়ির প্রত্যেক গুরুজনকে সালাম করলাম। সবাই আমাদের মাথায় হাত দিয়ে মন ভরে দোয়া করলেন। এরপর স্মৃতি আপু আর আরশ ভাইয়া সবাইকে সালাম করার জন্য এগিয়ে এলো। শান সহ সবাইকে সালাম করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আমি আঁতকে উঠে বললাম,

“আরে এসব কি করছো তোমরা আমি কেন?”

ফুফু শ্বাশুড়ী মুখ গোমড়া করেই বললেন,
“সম্পর্কে তুমি ওদের বড়ই হও তাই তোমাকে সালাম করবে এটাই স্বাভাবিক এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?কি হলো আরশ তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন দ্রুত এই পর্ব শেষ কর আরো কাজ আছে। ”
আরশ ভাইয়া আর আপু আবারও এগিয়ে আসতে আমি পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
“সম্পর্ক তো আমাদের শুধু একটা না তাই না আরো একটা সম্পর্ক আছে আমার যেখানে আমি সবার ছোটই হই তাই আমি চাই না আমি এমন একটা অস্বস্থি কর পরিস্থিতিতে পড়ি।”

ফুফু শ্বাশুড়ী আমার দিকে কটমট চোখে তাকালো শ্বাশুড়ী মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আচ্ছা ও যখন চাইছে না তখন থাকুক না।করতেই হবে এমন তো কোনো কথা নেই। ”

আমার মুখে হাসি ফুঁটে উঠল।আমি জানতাম কেউ না বুঝলেও মা ঠিক আমাকে বুঝবে।
আমি হেসে আরশ ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
“তবে আজকে তোমার কাছে আমার কিছু চাওয়ার আছে ভাইয়া।”
আরশ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“যা খুশি চাইতে পারো তোমার অধিকার আছে। আমার সামর্থ্য থাকলে সেটা অবশ্যই দিবো। ”
“কথা দিচ্ছো তো?”
“দিলাম। ”

আমি আপুর হাত আরশ ভাইয়ার হাতে দিয়ে দিলাম।শান সহ সবাই বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

আমি বললাম,
“বড়ভাবী বা ছোট বোন হিসেবে আজকে তোমার কাছে ছোট্ট একটা জিনিস চাইবো সেটা তুমি আদেশ বা অনুরোধ যেটাই ভাবো আজকে থেকে আমার বোনের যে হাতটা ধরেছো সেই হাত যত ঝড়, বাঁধা,বিপত্তি যাই আসুক না কেন কখনো ছাড়বে না। কখনো যেন আমার বোনের চোখ থেকে একফোঁটা পানি না পড়ে সব সময় এভাবেই সব পরিস্থিতিতে ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে কি থাকবে তো?”

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে আরশ সহ সবাই পুরো স্পিচলেস হয়ে গেছে। আমি এমন একটা কথা বলবো সেটা হয়তো উপস্থিত কেউই ভাবতে পারেনি।

আরশ একটা লম্বাশ্বাস ফেলে বললো,
“তুমি যখন কিছু চাইবে বলেছিলে আমি ভেবেছিলাম তোমার জন্য কিছু চাইবে কিন্তু তুৃমি তো প্রথম থেকেই আমাকে ঋণী করে রেখেছো আজ আরো বেশী করে ফেললে।তোমার মনটা অনেক বড় ভাবীজান। তুমি তোমার জন্য কিছু চাইলে সেটা হয়তো আমার দেওয়ার সামর্থ্য ছিল কিন্তু যা চাইলে সেটা জানিনা আমি ঠিকভাবে পালন করতে পারবো কিনা তবে কথা দিচ্ছি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো। ”

স্মৃতি চোখে পানি নিয়ে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে। যেই মেয়েটাকে ও এখন পর্যন্ত ছোটই ভেবে এসেছে সে কেমন জানি চোখের সামনে হঠাৎ একজন দায়িত্ববান মানুষ হয়ে গেল। যে বড় বোনের মতো ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর মাথার উপর।

আমি আপুর চোখের পানি মুছে দিয়ে হেসে বললাম,
“ধন্যবাদ ভাইয়া। ”
“উহুম ধন্যবাদ নয় এত বড় মনের পরিচয় দিয়েছো তাই বড়ভাবী হিসেবে একটা সালাম তো তোমার প্রাপ্য কি বলো?”
“না না লাগবে না। ”
“লাগবে এটা আমার ইচ্ছা স্মৃতি না করুক আমি তো করতেই পারি। ”

আমি লজ্জা পেয়ে নিজের মুখ ডেকে নিলাম। শান কানে কানে বললো,
“হায় মেরী জান এমন এমন কাজ করো মাঝে মাঝে আমি কনফিউশনেই পড়ে যাই যে এটা আমার সেই পিচ্ছি বউটা তো সবাইকে ইমোশনাল করে দিলে। ”

আমি শানের দিকে তাকালাম। শান ঠোঁটে একটু দুষ্টমির হাসি ফুঁটিয়ে তুলে বললো,
“কথাবার্তা শুনে তো মনে হচ্ছে বড় হয়ে গেছ তাহলে আজকে আর ছাড়াছাড়ি হবে না কোন কি বলো?”

উনার কথা শুনে আমার হিচকি উঠে গেল আর চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম। কি সর্বনাশা কথা! শান হেসে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।


আমি আমাদের রুমে বসে আছি লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে। শানের জন্য অপেক্ষা করছি। চারপাশে মোমের হালকা আলো আর ফুলের ঘ্রাণে ঘরটা মোহনীয় লাগছে। জানালার সাদা পাতলা পর্দা গুলো ফুরফুর করে উড়ছে। বাহিরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। আমার কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। বুকের ভিতরে হৃদপিন্ডের লাফালাফিটা যেন দ্বিগুন হয়ে গেছে।বসে থাকতেই অস্বস্থি হচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না।তারউপর শান তখন যেই কথা বললো এতে তো ভয় আরো বেশী লাগছে। নিজের ভাবনায় নিজেই নিজের মাথায় একটা গাট্টা মারলাম এতগুলো দিন হয়ে গেছে এটলিষ্ট সম্পর্কটা এখন তো স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। ভাবতেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। একটা লম্বাশ্বাস ফেলে নিজেকে তৈরী করতে থাকলাম শানের জন্য।

অনেকক্ষন ধরে বসে আছি কিন্তু শানের আসার কোনো খবর নেই। আমি বিরক্ত হয়ে ঘোমটাটা খুলে ফেললাম। বিছানা থেকে নামার জন্য এক পা নিচে দিতে যাবো তখনই দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করল শান। শানকে দেখেই আবার দ্রুত বিছানার উপর ঘুটিশুটি মেরে ঘোমটাটা টেনে দিলাম। শান এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে আর আমার হৃৎপিন্ডের ধুকপুক শব্দটা যেন আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমি নিজের শাড়ী খাঁমছে চোখ মুখ খিঁচে বসে রইলাম। শান এসে আমার সামনে বসলো। তারপর আমার ঘোমটাটা ফেলে দিলেন আমি কেঁপে উঠলাম।

শান আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উপরে তুলে বললো,
“বি নরমাল সুইটহার্ট এমন রোবটের মতো হয়ে আছো কেন? ”
আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম,
“কি ব্যাপার কথা বলবে তো? এমন বিহেভ করছ যেন এটা আমাদের প্রথম দেখা। ”

শান হাসলো। আমার গলা যেন বসে গেছে কথা না বলতে বলতে আমি গলাটা পরিষ্কার করে বললাম,
“আসতে এতটা সময় লাগলো? ”
শান আমার একটু কাছে এগিয়ে এসে বললো,
“অপেক্ষা করছিলে বুঝি? ”
আমি একটু পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
“আজকে রাতে তো এমনটাই কথা ছিল। ”
শান আমাকে টেনে উনার কাছে নিয়ে আসলো চোখে মুখে দুষ্টমির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললো,
“আজকে রাতে তো আরো অনেক কিছুরই কথা আছে তাহলে সেসবও হবে বলছো। ”
আমি চোখ নিচু করে বললাম,
“জানি না। ”

শান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সোহার মুখের দিকে। তারপর বললো,
“আচ্ছা গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও। ”

কথাটা বলে শান সরে গেল। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমি আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে এগোতে নেবো তখনই শান বললো,
“দাঁড়াও তোমার চেন্জ করতে সময় লাগবে আগে আমি চেন্জ করেনি তারপর তুৃমি। ”

কথাটা বলেই শান নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আমি ভাবলাম যতক্ষন শান আসবে ততক্ষনে গয়না গুলো খুলে রাখি। আমি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম আস্তে আস্তে সব গয়না গুলো খুলতে শুরু করলাম প্রায় খোলা শেষ সব কিন্তু নেকলেসে গিয়ে আটকে গেছি। শান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বেডে এসে বসল। আমি শুধু নেকলেসটা নিয়ে টানাটানি করছিলাম। কিন্তু অনেকক্ষন ধরে টানাটানি করেও কোনো লাভ হলো না।

“কি হয়েছে?”
আমি শানের দিকে ঘুরে বললাম,
“জানি না এটা খুলছেনা। ”
“দেখি আমি খুলে দিচ্ছি। ”
“না থাক আমি ট্রাই করে দেখি। ”
“এতক্ষন তো ট্রাই করলে হয়েছে কিছু তাহলে সারারাত করলেও হবে না দেখি ঘুরো পিছনে। ”

কোনো উপায় না পেয়ে আমি আয়নার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। শান এসে আমার পিছনে দাঁড়ালো। শানের হাত আমার ঘাড়ে লাগতেই আমি শিউরে উঠলাম শান খোলার ট্রাই করতে লাগল। কিছুক্ষন পর আমি ধীর কন্ঠে বললাম,
“হয়েছে? ”
“কিভাবে প্যাঁচিয়ে ফেলেছো god knows ওয়েট। ”

কথাটা বলেই উনি আমার ঘাড়ের দিকে ঝুকলেন হঠাৎ উনার ঠোঁটের স্পর্শ লাগতেই আমি পুরো জমে গেলাম নিজের শাড়ী শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে রইলাম। বুকের মধ্যে সব ইনস্ট্রুমেন্টস যেন একসাথে বাজছে। খুব দ্রুত নিঃশ্বাস পড়ছিলো। নড়াচড়া বাদ দিয়ে পুরো স্থির হয়ে রইলাম

“ওকে হয়ে গেছে। ”

শান আমার গলা থেকে নেকলেসটা খুলে দিলো আমি নেকলেসটা হাতে নিয়ে রেখে দিলাম আর শানের সামনে থেকে দৌঁড়ে সরে চলে গেলাম একটা থ্রীপিস নিয়ে ওয়াশরুমে। শাড়ী চেন্জ করে থ্রীপিসটা পড়ে নিলাম। তারপর হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। উফ এতক্ষন কি ভার ভার লাগছিলো শরীর এখন হালকা লাগছে।কিছুক্ষন ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। কেন যেন ভয় লাগছে প্রচুর। যতই ফ্রী হওয়ার ট্রাই করছি তত বেশী ভয় লাগছে। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে নিজের বুকের মাঝে হাত রেখে একটা লম্বাশ্বাস নিলাম। তারপর দরজা খুলে বের হয়ে আস্তে আস্তে রুমের ভিতরে এগিয়ে আসলাম কিন্তু কিছুটা এগোতেই পা যেন আর সামনে যেতেই চাচ্ছে না। শানের সাথে চোখাচোখি হতেই লজ্জা লাগছে প্রচুর।

“দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

হঠাৎ শানের কন্ঠ শুনতেই ঘাবড়ে গেলাম তুতলিয়ে বললাম,
“ন না ম মানে ঐ আমার একটা জিনিস পড়েছে এখানে সেটাই খুঁজছিলাম।”

কথাটা বলেই আমি এদিক ওদিক খোঁজার অভিনয় করতে লাগলাম শান আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আর কিছু না বলেই আমায় কোলে তুলে নিলো আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“ক কি করছেন? ”
“তোমার না মানে ঐ নামে যাই হারিয়েছে সেটা কাল খুঁজো এখন এই মৃদু আলোতে খুঁজে পাবে না। ”

শান এনে আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। শান আমার পাশে বসে আমার একগালে হাত রেখে আমার অনেকটা কাছে চলে এলো।শানের শীতল হাতের স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম। ভয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘামতে লাগলাম আমি।

“কি ব্যাপার সুইটহার্ট গরম লাগছে কি তোমার? ”
উনার কথা শুনে চমকে উঠে বললাম,
“মানে? ”
“মানে যেই হারে ঘামছো আই থিংক তোমার অনেক গরম লাগছে। ”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“না ঠিক আছি। ”
শান উনার একহাত দিয়ে আমার একপাশে হাত রাখতেই আমি বিছানার চাদরটা শক্ত কর চেপে ধরলাম শান ফিসফিস করে বললো,
“আমার তো মনে হচ্ছে না। ”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম।
“এসিটা আরেকটু বাড়িয়ে দেবো। ”

আমি “হ্যাঁ সূচক ” মাথা নাড়ালাম শান হেসে পাশ থেকে রিমোট নিয়ে এসিটা বাড়িয়ে দিলো।
“এখন ঠান্ডা লাগছে। ”
“হুম। ”
“তো এখন কি করবে?”

উনার কথা শুনে আমার হিচকি উঠে গেল কি অদ্ভুত প্রশ্ন করছে বুঝলাম না? আমি বললাম,
“পানি খাবো। ”

শান কিছুক্ষন ড্যাবড্যাব চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল তারপর মুচকি হেসে উঠে গিয়ে আমার জন্য পানি নিয়ে আসলো উনি পানি আনতেই আমি এক নিঃশ্বাসে পানিটা খেয়ে নিলাম। তারপর গ্লাসটা উনাকে দিয়ে দিলাম উনি গ্লাসটা পাশে রেখে আবারও আমার পাশে আধশোয়া হয়ে বসল। আমি এখনো ওভাবেই মূর্তির মতো বসে। উনি আমার চুলে হাত বুলিয়ে চুল নিয়ে খেলা করছিলো।

হঠাৎ বলে উঠলো,
“তোমার কি এখনো গরম লাগছে। ”
“কেন? ”
“এখনও ঘামছো তুমি অনেক তাই বললাম।”

আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম অদ্ভুত উনি কি বুঝতে পারছে না কিছু শুধু শুধু এভাবে খোঁচা মেরে আমাকে লজ্জায় ফেলার কারণ কি হনুমান একটা।

“বেশী গরম লাগলে ওড়নাটা খুলে রাখো। ”

উনার কথা শুনে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম কি বলেন উনি এসব? আমি দ্রুত বলে উঠলাম,
“না লাগবে না ঠিক আছি আমি। ”
“আচ্ছা তাহলে বসে আছো কেন শুয়ে পড়ো। ”
“হুম। ”

আমি আস্তে আস্তে ওনার থেকে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে শুয়ে পড়লাম শান রাগান্বিত হয়ে বললো,
“এতো দূরে গিয়ে শুয়েছো কেন? মাঝে যাদের জন্য জায়গা রেখেছো তারা এখনো পৃথিবীতে আসেনি তাই আমার কাছে এসো। ”

উনার কথা শুনে লজ্জায় আমার কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে আরে মুখে তো কোনো লাগামই নেই উনার। আমি এখনও ওখানেই শুয়ে ছিলাম।উনি আমাকে টেনে উনার কাছে নিয়ে আসলেন। তারপর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ঘুমাও। ”

বলেই উনি আমার চুলের মধ্যে মুখ গুজে শুয়ে পড়লেন। কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। উনার গরম নিঃশ্বাস আমার গলা ঘাড় জুড়ে পড়ছে যার ফলে চাইলেও চোখ বন্ধ করতে পারছি না।

শান মুখ তুলে বললো,
“কি হলো ঘুমাচ্ছো না কেন?”
“ঘুম আসছে না। ”
উনি ভ্রু কুচকে বললে,
“কেন?”
“আরে এতদিন আপনার সাথে রাত জেগে কথা বলতে বলতে তো রাত জাগার অভ্যাস হয়ে গেছে তাই হয়তো। ”

শান উঠে বসল আমি বললাম,
“কি হলো উঠে গেলেন যে? ”
“তুমিই তো বললে ঘুম আসছে না। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“সেটা তো আমার আসছে না আপনার কি?”
“আমারই তো সব আমার সুইটহার্ট একা রাত জাগবে আর আমি ঘুমাবো সেটা হতে পারে নাকি।”

তারপর কিছুক্ষনই দুজনে চুপচাপ বসে রইলাম। রাত বাড়ছে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুজনেরই হার্টবিট। কারো মুখে কোনো কথা নেই। শুধু চোখে চোখে মনের কথা গুলো আদান – প্রদান করা হচ্ছে।

শান বুঝতে পারছে সোহা আনইজি ফিল করছে তাই সোহাকে ফ্রী করার জন্য বললো,
“এভাবে চুপচাপ বসে থেকে তো কোনো লাভ নেই আই থিংক আমরা কিছু করতে পারি। ”
আমি তুতলিয়ে বললাম,
“ক কি ক করতে পারি?”
শান হেসে বললো,
“এইতো গল্প করতে পারি বা যেকোনো খেলাও খেলতে পারি। ”
শানের কথা শুনে আমার চোখ চকচক করে উঠলো আমি একটু উত্তেজিত হয়ে বললাম,
“গুড আইডিয়া বাট গল্প করব না খেলবো। ”
“ফাইন কি খেলবে?”
“লুডু। ”

শান নিজের কপালে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকালো আর মনে মনে বিরবির করে বললো,
“হায়রে কি ভাগ্য আজকের রাতেও বসে বসে লুডু খেলতে হচ্ছে। ”
আমি কপাল কুচকে বললাম,
“কিছু বললেন?”
শান হেসে বললো,
“না। ”

তারপর শান নিজের ফোন থেকে লুডু বের করলো। আমরা দুজনেই বসে বসে লুডু খেলতে লাগলাম। আমার আগে ছয় পড়লো। পরপর আমি ভালো খেলছিলাম। আমার একটা ঘুটি ছিলো শানের তিনটা।আমি কিছুটা ভাব নিয়ে বললাম,
“এইবার হারবেন আপনি।”
শান একদৃষ্টিতে কোটের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“আচ্ছা সেটা তো পরেই বুঝা যাবে কে হারে আর কে জিতে।”
” বুঝাই তো যাচ্ছে। ”
“রিলাক্স সুইটহার্ট এতো উতলা হওয়ার কিছু নেই খেলা এখনো বাকি আছে। ”

আমি মুখ ভেঙিয়ে আবার খেলায় মনোযোগ দিলাম। বাট হঠাৎ করেই কি হলো শান পরপর পর তিনটা ঘুটি দিয়ে আমার একটা ঘুটি ঘিরে ধরল। আমি ঘুটি তুলছিলাম আর উনি ঘুটিটা শুধু খেয়েই যাচ্ছিলো। শেষবার যখন খেলো আর উঠলোই না ফলস্বরূপ উনি জিতে গেল। উনার মুখে বিশ্বজয়ী একটা হাসি ফুটে উঠলো। আমি মুখ গোমড়া করে রইলাম।

“বলেছিলাম না খেলা এখনো বাকি আছে দেখেছো তো আমি জিতে গেছি। ”
আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“আচ্ছা ভালো হয়েছে তবে। ”

শান হেসে ঘড়ির দিকে তাকালো রাত আড়াইটা বাজে।
“আচ্ছা অনেক রাত হয়ে গেছে এবার ঘুমিয়ে পড়ো। ”
আমি চোখ পিটপিট করে বললাম,
“ঘুমাবো?”
“নাহলে আর কি করতে চাও তুমি?”

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললাম,
“অদ্ভুত লোক সারাদিন কত কথা বললো আর এখন ঘুমাচ্ছে? ”

হঠাৎ শান আমার কাছে এসে আমার চুল একপাশে সরিয়ে আমার ঘাড়ে একটা ডিপ কিস করলো আমি নিজের চোখ বন্ধ করে রইলাম। শান আমার গালে হাত দিয়ে আমার মুখটা উনার দিকে ফেরালো,
“তুমি চাইলে ঘুমাবো না অন্য কিছু করতে পারি তবে তুমি কি চাও আমি কিছু করি?”

কথাটা বলে উনার মুখটা আমার দিকে এগিয়ে আনতে লাগলেন আমি লজ্জা পেয়ে দুই হাত দিয়ে আমার মুখটা ডেকে নিলাম। শান আমার কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে উনার কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
“হায়রে এতো লজ্জা পেলে তো আমার বংশ আর আগেই যাবে না। ”

উনার কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম।উনি আর কখনো শুদ্রাবেন না। উনার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম আর আমিও উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।
.
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে