এক মুঠো প্রণয় পর্ব-০৬

0
779

#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_০৬
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ

খাওয়া শেষ হতেই মেহেরাজ ভাই উঠে পা বাড়ালেন নিজের ঘরের দিকে।আমি আর মেহু আপু তখনও টেবিলে খাবার নিয়ে বসা৷ কিয়ৎক্ষন পর খাওয়া শেষ হলো।মেহু আপু থালাবাসন গুলো রান্নাঘরে নেওয়ার জন্য হাতে তুলতেই উঠে দাঁড়ালাম আমি।বললাম,

” আমি ও নিয়ে যাই কিছু?দুইজনে মিলে করলে তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে আপু।”

আপু হাসলেন। বললেন,

” তুই ছোটমানুষ।পারবি?”

আপুর কথা শুনে হাসি পেল।কিন্তু হাসলাম না।উত্তরে বললাম,

“বাড়িতে এত কাজ করতাম।কখনো দেখোনি আপু ?রান্নাবান্না থেকে সবই তো করতাম।তোমার কি মনে হয় পারব না?”

আপু মাথা নাড়িয়ে বললেন,

” না, না।তেমন নয়।এতদূর জার্নি হলো।ক্লান্ত না তুই?তাই বললাম।”

আমি কিছু বললাম না বিনিময়ে। আপুর সাথে সাথে হাতে কিছু প্লেটবাটি তুলে নিয়ে রান্নাঘরে গেলাম।কিয়ৎক্ষন পর দুইজনে সব ধুঁয়ে গোঁছগাছ করে বেরিয়ে আসলাম।মেহু আপু এক নজর আমার দিকে চাইলেন। মৃদু গলায় বললেন,

” সে এক জামাটাই পরে আছিস এখনো।পাল্টাবি না?আগে জামা পাল্টে নে।তারপর ঘুমাবি।”

আমি নিজের দিকে চাইলাম।হ্যাঁ, জামা পাল্টানো হয়নি।ব্যাগের কথা মনে পড়তেই ধীর পায়ে পা বাড়ালাম মেহেরাজ ভাইয়ের ঘরের দিকে।দরজার সামনে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম উনি আছেন কিনা।পরক্ষনেই উনাকে রুমের কোথাও না দেখে স্বস্তি মিলল।কিন্তু সে স্বস্তি বেশিক্ষন টিকল না।দরজার ওপাশে পা এগিয়ে ব্যাগটা হাতে নিতেই মেহেরাজ ভাইয়ের গমগমে স্বর কানে আসল,

” জ্যোতি, শোন।”

আমার পা জোড়া থেমে গেল তৎক্ষনাৎ।পেছন ফিরে না তাকিয়েই বলে ফেললাম,

” জ্বী, বলুন।”

মেহেরাজ ভাই হালকা কাঁশলেন।কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলেন,

” এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে তোর?তুই যদি চাস তো আবারও ফিরে যেতে পারিস বাড়িতে।তখনও এই কথাটাই জিজ্ঞেস করেছিলাম।উত্তর দিসনি।উত্তরটা জানা দরকার।”

আমি এবার ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলাম মেহেরাজ ভাইয়ের দিকে।মুখচোখ থমথমে।কেমন যেন গম্ভীর ভাব।শুধু যে এখনই তেমন না, উনার চোখমুখ প্রায় সবসময়ই গম্ভীর থাকে।কথাবার্তাও বলে খুব কম।আর এই স্বল্পভাষী গম্ভীর মানুষটাকেই প্রেমের প্রথম জোয়ারের উপস্থিতিতে ভালো লেগে গেল আমার।কিশোরী বয়সে প্রেমের মানে বুঝতেই আমি বুঝে উঠলাম উনাকে,এই মেহেরাজ ভাইকেই।উনার এই গম্ভীর ব্যাক্তিত্বকেই।এই ব্যাক্তিত্বের সামনে আমি নড়বড়ে অনুভব করতাম পূর্বে।সামনের মানুষটার সামনে নুঁইয়ে গিয়ে দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে সবসময়ই এড়িয়ে চলার চেষ্টা চালাতাম।কিন্তু আজ আর সেই অনুভূতি কাজ করল না।অদ্ভুতভাবে টের পেলাম, আজ এইক্ষনে মেহেরাজ ভাইয়ের সামনে আমি আর নড়বড়ে অনুভব করছি না। বরং ভেতরটা প্রখরভাবে কঠোর অনুভব করলাম। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে উত্তর দিলাম,

” আপনার যদি অসুবিধা হয় বলে দিবেন,দাদীকে বললে দাদীই এসে নিয়ে যাবে আমায়।”

মেহেরাজ ভাই ভ্রু কুঁচকালেন।বললেন,

” তুই কি ঘুরেফিরে দোষটা আমাকেই দিতে চাইলি?”

” আপনাকে দোষ দিব?সে যোগ্যতা আছে আমার? ”

” তাহলে আমার অসুবিধার কথা আসল কেন?”

আমি তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসলাম।বললাম,

” ভেবে দেখুন,অসুবিধাটা আমার থেকে আপনারই বেশি হবে কিন্তু।তাই বললাম।”

মেহেরাজ ভাই বিরক্ত নিয়েই বললেন,

” অপ্রয়োজনীয় কথা!আমি তোর কাছে যা জানতে চেয়েছি তার উত্তর দিয়েছিস?”

আমি চুপ থাকলাম কিছুক্ষন।তারপর একনজর তাকিয়ে বললাম,

“এখানে আসার পর আবারও গ্রামের বাড়িতে ফেরত যাওয়াটা হাস্যকর ঠেকায় না মেহেরাজ ভাই? আপনি নামক পুরুষটার সাথে জড়িয়ে ছোট থেকে বড় সবার মুখেই আমার নামে অপমানজনিত কথাবার্তা সয়ে এসেছি।এখন ফেরত গিয় ঠাট্টা কিংবা উপহাসও সয়ে নিতে পারব।আমার পক্ষে কঠিন কিছুই নয়।এবার বাকিটা আপনার উপর। ”

” আমার খেয়াল হয় নি যে এখান থেকে ফেরত গেলে মানুষ উপহাস করবে।কথাটা তাহলে বলতাম না।ভেবেছি তোর পড়ালেখা কিংবক মানিয়ে নেওয়াতে ক্ষতি হবে তাই বলেছি।”

বিনিময়ে আমি উত্তর দিলাম না।মাথা নাড়িয়ে চলে আসতে নিতেই মেহেরাজ ভাই আবারো প্রশ্ন ছুড়লেন,

” তুই কিসে পড়িস?”

আমি চমকে পেছন ফিরে চাইলাম।আমি কিসে পড়ি এইটুকুও উনার জানা নেই?মেহেরাজ ভাইরা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে এসেছে প্রায় দশ বছর।দশ বছর পর কি শুধু আমার নামটাই উনি মনে রেখেছেন?বয়স,কোন ক্লাসে পড়ি কিছুই জানেন না?অবশ্য জানারও কথা নয়।উনার কাছে কি আমি অতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলাম যে উনি খোঁজ নিয়ে নিয়ে আমার সবকিছু জানবেন?তবুও গ্রামে যখন যেতেন দাদীর মুখে তো প্রায়সই আমার কথা শুনতেন।তাও জানেন না?হয়তো এক কানে শুনে অন্য কানে ঝেড়ে ফেলেছেন।কি দরকার অতো মনে রাখার?অথচ এই মানুষটার সবকিছুই আমি সুদূর দূরে থেকেও জেনে নিতাম।আড়ালে কিংবা সামনে যখনই উনার সম্বন্ধে যা জেনেছি সব মনে রেখেছি।আমার অবশ্য কষ্ট হলো না এইসব ভেবে।গলা ঝেড়ে উত্তর দিলাম,

” দ্বাদশ শ্রেণি।সামনেই টেস্ট পরীক্ষা।এরপর বোর্ড পরীক্ষা।তাই বোধহয় দাদী বারবার আপনাকে বলেছে পড়ালেখার বিষয়টা।”

মেহেরাজ ভাই চাইলেন মুখ তুলে।মাথা নেড়ে বললেন,

“হয়তো, ভালো করে মন দিয়ে পড়বি।নাবিলার সাথেই তো তাই না?”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।উনি ফের প্রশ্ন ছুড়লেন,

” সাইন্স না?”

আমি আবারো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।উনি ছোটশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন,

” টেবিলের কোণায় বড়োসড়ো ব্যাগটা তোর বইয়ের।বই, টেবিল, চেয়ার সব আছে।কাল থেকে পড়া শুরু করে দিস। ”

আমি মিনমিনে চোখে চাইলাম।ইতস্থত বোধ করে বলেই ফেললাম,

” এইখানে?মানে এই ঘরে?”

উনি অস্পষ্ট কন্ঠে বললেন,

” হ্ হু?”

” আপনার ঘরে?”

উনি চুপ থাকলেন ।কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে আমার অস্বস্তি বুঝেই বোধ হয় বলে উঠলেন,

” এই বাসায় আরো একটা রুম আছে।কেউ থাকে না ও রুমে, তাই ময়লা হয়ে আছে।কাল শিমা আপাকে বলব ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে।বইপত্র নিয়ে ওখানেই শিফট করিস।আপাতত মেহুর সাথে মানিয়ে নিস।”

আমি মাথা নাড়ালাম।তারপরই দ্রুত কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।মাথার ভেতর ভবনারা ডানা মেলল। মেহেরাজ ভাইয়ের আমার বিষয়ের জানার এত দরকার কিসের?আমার বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্নই বা করলেন কেন?কোন ক্লাসে পড়ি, কিসে পড়ি এত কিছু জানার কি প্রয়োজন আছে?পরমুহুর্তেই মস্তিষ্ক জানান দিল, এটা কেবল এবং কেবলই তার দায়িত্ব।এইছাড়া কিচ্ছু নয়।আমার মন অবশ্য এর থেকে বেশি কিছু প্রত্যাশা করল ও না।কেনই বা করবে?

.

সকাল হলো। মেহু আপুর ঘরের জানালা দিয়ে স্বচ্ছ আলো ঘরে প্রবেশ করে তারই জানান দিল। আমি তৎক্ষনাৎ ঘুম ছেড়ে উঠলাম।পরনের ওড়নাটা দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনেই জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।সঙ্গো সঙ্গে চোখে পড়ল অপর প্রান্তের ব্যস্ত নগরী।এই ভোরবেলায়ও শহুরে রাস্তা ফাঁকা নেই।গাড়ির পর গাড়ি জমে আছে ছাঁইরাঙ্গা রাস্তায়।অদূরে মানুষের চলাচলও চোখে পড়ল।আমি স্থির চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে সেসবই দেখতে লাগলাম।মুহুর্তেই এই ভীষণ ব্যস্ত শহরে নিজেকে খুব একা বোধ করলাম। বাড়িতে থাকলে দাদী নির্ঘাত ভোরে ভোরেই ঘুম থেকে ঠেলেঠুলে উঠিয়ে নামাজ পড়তে ডাকত। কিংবা উনুনে আগুন জ্বালিয়ে চা বানানোর জন্য কথা শোনাত।কিংবা ঘর ঝাড়ু দেওয়ার জন্য কঠিন গলায় কয়েকবার বকা দিয়ে বসত। ইশশ!সেই কঠোর দাদীকেই আজ খুব করে মনে পড়ছে আমার। সেই কঠোর দাদীকে ছাড়াই আমি একাকীত্বের সাগরে ডুবে যাচ্ছি আজ।আচ্ছা, দাদী এখন কি করছে? আমাকে কি মনে পরছে দাদীর?কে জানে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম ছেড়ে বের হলাম আমি।সব নিশ্চুপ!মেহেরাজ ভাই কিংবা মেহু আপু কেউই ঘুম ছেড়ে উঠেনি।হয়তো এত সকালে ঘুম থেকে উঠেও না উনারা।আমি কিয়ৎক্ষন পায়চারি করে সদর দরজা মেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। মিনিট পাঁচের মধ্যেই প্রসস্থ ছাদ চোখে পড়ল।খসখসে মেঝেতে পা ফেলেই ছাদের কার্নিশে গিয়ে দাঁড়ালাম।চোখ বুলিয়ে দেখতেই চোখে পড়ল ছাদের এককোণে ফুলের অনেকগুলো গাছ।হরেক রকম ফুল।গোলাপ,গাঁধা সহ কাঠগোলাপও।কে লাগিয়েছে?নাবিলা, সামান্তা আপু নাকি মেহু আপু?নাকি নাবিলার বড়বোন নাফিসা আপু?উত্তর না পেয়ে পাশ ফিরে চাইতেই দেখতে পেলাম পঞ্চাষোর্ধ ফাতেমা আন্টিকে।কাল রাতেই মেহু আপু বলেছিল উনার নাম।আমি উনাকে দেখে কি বলব বুঝে না উঠলেও উনি ঝটফট বলে উঠলেন,

” এই কি।এত তাড়াতাড়ি ঘুম ছেড়ে উঠে গেলে?তোমার অভ্যাস আছে বুঝি এত ভোরে উঠার?”

আমি মাথা নাড়িয়েই উত্তর দিলাম,

” হ্যাঁ।”

উনি হাসলেন।বিনিময়ে আবারও প্রশ্ন ছুড়ে জিজ্ঞেস করলেন,

” তা তোমাদের বিয়েটা কোথায় হলো?কিভাবে হলো?আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল?”

ভদ্রমহিলার অতি আগ্রহ আর কৌতুহল দেখে অবাক হয়ে চাইলাম আমি।বললাম,

” না, আগে থেকে সম্পর্ক ছিল না।”

” তবে এভাবে হুট করে বিয়ে হলো যে?পারিবারিক ভাবে বিয়ে হলে তো আমরাও জানতে পারতাম।এদিকে বলছো প্রেমের বিয়েও নয়।”

ভদ্রমহিলাকে উত্তরে বলার জন্য কিছুই খুঁজে পেলাম না আমি।মস্তিষ্ক ফাঁকা বোধ করলাম।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতেই ভদ্রমহিলা আবারও বলে উঠল,

” নিরবতার উত্তর কি ইতিবাচকই ধরে নিব? আমি আগে কি ভাবতাম জানো? ভাবতাম মেহেরাজ আর সামান্তার মাঝে প্রেম আছে।দুইজনকে দেখতাম ছাদে আড্ডা দিত।সামান্তা ওর ফুলের বাগানে যত্ন করার সময় মেহেরাজও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখত।কখনো ফুল ছিড়ে হাতে দিত। এখন দেখি মেহেরাজ প্রেম করে বিয়ে করে বউও নিয়ে চলে এসেছে।সত্যিই তখন কি না কি ভেবেছি আমি।এখন হাসি পাচ্ছে এসব ভেবে।”

ভদ্রমহিলাকে বলা হলো না, উনার তখনকার ভাবনাই সঠিক ছিল।আর এখনকার ভাবনা মিথ্যে।শুধু হালকা হাসার চেষ্টা করলাম আমি।পরপর সেই স্থান ছেড়ে পা বাড়ালাম।এমন মানুষদের সামনে থাকলে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।কি না কি জিজ্ঞেস করে বসে।আমি স্বল্পভাষার মানুষ।পরে ভদ্রমহিলার বিশাল বিশাল প্রশ্নের উত্তর হিসেবে বিশাল বিশাল কথা কোথায় খুঁজে পাব?তার থেকে সরে আসা ভালো।

.

বেলা এগারোটার সময়ই শিমা আপা নামক মানুষটার আগমণ ঘটল।মেহেরাজ ভাই তখন বাইরে। আর মেহু আপু আমাকে উনার পরিচয় দিয়েই তড়িঘড়ি করে ঘরে গেল মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজ পেয়ে।আমি চোখ মেলে চাইলাম শিমা আপার দিকে।মাথার চুলে পাঁক ধরেছে।গায়ের রং আমারই মতো চাপা।পান খাওয়া ঠোঁট জোড়া লাল টকটকে দেখাল। এমনকি দাঁতগুলোও পানের লালচে রংয়ের কারণেই বিচ্ছিরি দেখাল।তবুও কেন জানি না উনার ছটফটে স্বভাব আমার ভালো লাগল।উনি উচ্ছ্বল কন্ঠে আমার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন,

” তুমি দেহি নতুন মানুষ।কেডা তুমি?আগে তো কহনও দেহি নাই।”

সরাসরি এমন প্রশ্নে আমি হাসলাম হালকা।উত্তরে বললাম,

” আমি?আমি জ্যোতি।মেহু আপুদের গ্রামের বাড়ির মানুষ।”

” তোমার লাইগাই কল কইরা ঘর ঝারতে কইল বড় ভাইয়ে?তুমি তো আইয়া আমার কাম বারাই দিলা মাইয়া।”

” আপনি চাইলে আমি সাহায্য করতে পারি খালা।তাহলে কাজ কমই লাগবে।”

শিমা আপা মুহুর্তেই রেগে গেলেন।রাগে ফোঁসফাঁস করে শ্বাস ছাড়লেন।ঝটফট করে বলে উঠলেন,

” এইই মাইয়া!তুমি আমারে কি কইলা?কি কইলা তুমি?”

আমি বোকা বোকা চোখে চাইলাম।কি বললাম আমি?আশ্চর্য!কি এমন বলে ফেললাম যে উনি এমন রেগে গেলেন?আমি ভাবলাম। কিন্তু কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না।হতাশ হয়েই বললাম,

” কি বলেছি আমি?”

“তুমি আমারে খালা কইলা ক্যান?খালার মতো লাগে আমারে?আমারে আপা কইবা।শিমা আপা।বয়স আর কদ্দূর আমার!”

আমি ছোট্ট শ্বাস ফেললাম।আপা-খালা খেলায় ক্লান্ত হয়ে আবারও বলে ফেললাম,

” আচ্ছা খালা,আপাই ডাকব।”

শিমা আপা আবারও রাগলেন।বললেন,

” আবারও কয় খালা।কও শিমা আপা।”

আমি চোখ ছোট ছোট করলাম।হতাশ হয়ে কিছু বলব ঠিক সেই মুহুর্তেই মেহু আপু খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।ঠোঁট নেড়ে বলে উঠল,

” ও নতুন তো।অভ্যাস হয়ে যাবে শিমা আপা।তুমি রাগ করো না।”

শিমা আপা দাপট নিয়ে বললেন,

” রাগ করুম না?তোমারে মেহু আপা না কইয়া মেহু খালা কইয়া ডাকলে কেমন লাগব?”

” আচ্ছা, আর বলবে না।”

” মনে থাহে যেন।কিন্তু মাইয়াডা তোমাগো হয় কেডা?”

মেহু মৃদু গলায় উত্তর দিল,

“ও আমার ভাবী হয় সম্পর্কে।তবে এমনিতেই বোনই হয়।”

শিমা আপা বুঝলেন না।ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললেন,

“কি কও?”

মেহু আপু ক্লান্ত চোখে তাকালেন।বললেন,

“তুমি অতোসব বুঝে কি করবে?”

” জানুম না তাই বইলা?”

” ভাবি কাকে বলে?”

” ভাইয়ের বউরে। ”

” জ্যোতিও আমার ভাইয়ার বউ।হয়েছে?”

শিমা আপা অবাক হলো। চোখ বড়বড় করেই বলে উঠল,

” কি কও?বড় ভাইয়ের বউ? বড় ভাইয়ে বিয়া কইরা লইছে?বিয়া করছে ভালা কথা, দুইজন দুইঘরে থাকব ক্যান?ওগো সত্যি সত্যিই বিয়া হইছে?নাকি তুমি মিছা কথা কও?”

শিমা আপার প্রশ্নের জবাবে মেহু আপু কি বলবে তারই অপেক্ষায় ছিলাম আমি।কিন্তু অপেক্ষার প্রহর না কাঁটতেই বাসায় ডুকল মেহেরাজ ভাই।পায়ের মোজা খুলতে খুলতেই ভরাট গলায় উত্তর দিলেন,

” না, সত্যিই বলেছে আপা।বিয়েটা সত্যি সত্যিই হয়েছে।”

আমি চমকে গেলাম মেহেরাজ ভাইয়ের সহজ ভাষার স্বীকারোক্তিতে।উনি কি সত্যিই বিয়েটাকে সত্যি হিসেবে মেনেছেন?আধো এই বিয়ের অস্তিত্বকে নিজ থেকে স্বীকৃতি দিতে পেরেছেন?জানা নেই আমার।চোখ ফিরিয়ে মেহেরাজ ভাইয়ের দিকে নির্বিকারভাবে চেয়ে থাকলাম।উনি আবারও বললেন,

” পশ্চিমের রুমটায় ময়লা হয়েছে।অনেকদিন ও ঘরে যায় ও না কেউ।ধুলোময়লায় বোধহয় ও ঘরের অবস্থা বিচ্ছিরি রকম হয়ছে।তাই একটু পরিষ্কার করে দিতে বলেছি আপা।এবার সে ঘরে কে থাকবে না থাকবে এসব ভাবা কি আপনার জন্য অতি জরুরী বিষয় আপা?”

মেহেরাজ ভাইয়ের কন্ঠে কি ছিল কে জানে শিমা আপা একদম দমে গেলেন।সেকেন্ডেই তার দাপট দেখানো মুখ চুপসে গেল।পাজোড়া চালিয়ে দ্রুত সরে গেলেন সেই জায়গা থেকে।আমি অবাক হলাম।মেহেরাজ ভাইকে এতটাই ভয় পায়? অবশ্য ভয় পাওয়ারই কথা।ওরকম গোমড়া মুখ আর গম্ভীর কন্ঠ শুনে ভয় তটস্থ থাকা ছাড়া কি আর কোন উপায় থাকে?

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে