#এক_পশলা_বৃষ্টি
#লেখনীতে: ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১০
সেদিন ছিলো টিনা আর সাদের চতুর্থ বিবাহবার্ষিকী। তবে এসবে সাদের হেলদোল নেই। অফিস থেকে ফিরে এসে বাড়িতে কোথাও টিনাকে খুঁজে পেলোনা। সাদ মায়ের ঘরে যায়। রোমেলা বসে নামাজ পড়ছিলেন। সাদ জিজ্ঞেস করে, ‘টিনা কোথায়?’
রোমেলা চুপ করে থাকে।
‘ তুমি জানো? কোথাও তো ওকে পেলাম না?’
‘ বললে কী বিশ্বাস করবি?’
‘ কী?’
‘ ওই যে, টিনা কোথায়!’
‘ করবোনা কেন?’
‘ কারণ তোরা ভাবতেও পারবিনা ও এমন কাজ করতে পারে।’
‘ ভনিতা না করে বলে ফেলো!’
‘ টিনার যে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে, তুই জানিস?’
সাদ বড্ড অবাক হলো।
‘ মানে?’
‘ টিনা অন্য একটা ছেলেকে পছন্দ করে, তুই ভাবতেও পারবিনা ওই ছেলের সাথে ওর ফিজিক্যাল রিলেশন পর্যন্ত চলে।’
সাদ বড় একটা ধাক্কা খায়। টিনার সাথে অন্য লোকের সম্পর্ক আছে, তাও আবার ফিজিক্যাকি এটাচড? হোয়াট দ্যা? মা এসব কী বলছে? সাদ বিশ্বাস করতেই পারছেনা। কিন্তু মা যখন বলছে তখন বিশ্বাস করাটাই শ্রেয়।
‘ তুমি কী করে জানলে?’
‘ আমিতো আরও অনেক আগেই জেনেছি। তোদের বিয়ের পাঁচমাসের মাথায়ই।’
সাদ অবাক হয়ে বললো, ‘তাহলে এতোদিন বলোনি কেন?’
‘ তোর বাবার সামনে টিনাকে নিয়ে কিছু বলা যায়? তাছাড়া আমি নিজের কানে শুনেছি। ওরা কলেজে পড়াকালীন একপ্রকার কলগার্ল ছিলো, খুবই লুকিয়ে চুরিয়ে এই কান্ড ঘটাতো।’
‘ মা!’
‘ সত্যি বলছি। আমি এতোদিন বলিনি কারণ প্রমাণ ছিলোনা। কিন্তু আজ আছে। নিজের কানে শুনেছি ওরা “স্কাই হোটেলে” উঠবে আজ রাতে। টিনা হয়তো সেখানেই গিয়েছে।’
সাদিদ সাহেব দরজায় দাঁড়িয়ে শুনে ফেললেন। ঘরে ঢুকেই প্রচন্ড জোরে থাপ্পড় মারলেন স্ত্রীর গালে। পঁয়ত্রিশ বছরের সংসার জীবনে কখনো রোমেলার গায়ে হাত তুলেননি ওনি। রোমেলার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। সাদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বাবার দিকে চেয়ে আছে।
সাদিদ সাহেব হুংকার ছেড়ে বললেন, ‘হচ্ছেটা কী এসব? তুমি টিনার নামে কীসব আজেবাজে কথা বলছো?’
‘ সত্যি বলছি।’
‘ তোমার এসব আজগুবি কথা বন্ধ করো। টিনা হতে পারে একটু অন্যটাইপ মেয়ে কিন্তু শরীর বিকিয়ে দেওয়ার মতো না।’
‘ হাসালে! যে বিয়ের আগেই তার ভার্জিনিটি খুইয়ে বসে আছে তাকে তুমি সাপোর্ট করছো?’
‘ আমি কাউকে সাপোর্ট করছিনা। তুমি জানো ওর বাবা কতটা ডেঞ্জেরাস মানুষ? যদি শুনে তার মেয়ের নামে কুৎসা রটিয়েছো তাহলে আমাদের জেলের ভাত খাওয়াবে।’
‘ ওনার ও তো জানা দরকার মেয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটা দূষিত, নোংরা মেয়েকে আমার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। অবশ্য আমার ছেলেই তো এসবের যোগ্য, সে তো কবেই ক্যারেক্টারলেস হয়ে গিয়েছে।’
সাদ মায়ের তুচ্ছতাচ্ছিল্য মেনে নিতে পারলোনা। খুব কষ্ট পেলো। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু টিনার বিষয়টাও দেখতে হচ্ছে ভেবে বাবার সাথে হোটেলে এলো। তখন রাত দশটা। কাউন্টার থেকে রুম নাম্বার খুঁজে খুঁজে পেয়েও গেলো। এবং দেখা গেলো রোমেলার কথাই ঠিক। দরজা খুলতেই দেখা গেলো টিনা আপত্তিকর অবস্থায় ইফতির সাথে। সাদিদ সাহেব বাক্যহারা হয়ে গেলেন। সাদ প্রচন্ড রেগে গেলো৷ এই ক্যারেক্টরলেস মেয়ের জন্য ওর মা বাবার হাতের থাপ্পড় খেলো? সে টেনে হিঁচড়ে হোটেল থেকে নিয়ে এলো টিনাকে।
বাড়ি এসে সাদ প্রচন্ড জোরে থাপ্পড় মারলো টিনাকে। চিৎকার করে বললো, ‘কী এসব? এতো নিচ তুমি? ছিহ!’
টিনা চুপ করে আছে৷ কান্না করছে। ভাবেনি ধরা পড়ে যাবে। কিন্তু ধরা যখন পড়েই গেছে তখন আর লাভ কি মিথ্যা বলে!
‘ কয়দিন ধরে চলছে এসব?’
টিনা এবার মুখ খুললো।
‘ বিয়ের আগে থেকেই।’
সাদ ঠাস করে থাপ্পড় মারলো।
টিনার কোনো ভাবান্তর হলোনা। সে বললো, ‘তুমি যা করতে পারো, আমিও তাই পারি!’
‘ মানে?’
‘ বিয়ের আগে তুমিও তো এসব করেছো।’
‘ না। শোভা আমার লিগ্যাল ওয়াইফ ছিলো।’
‘ ওই একই হলো।’
‘ এক হয়নি।’
‘ কেন হয়নি? তুমি ওর সৌন্দর্য উপভোগ করবে বলেই তো বিয়ে করেছিলে, তাইনা? ভালোবেসে তো করোনি। শুধু বৈধতার দোহাই দিয়েছিলে। আর কিছু না। কিন্ত ইফতির সাথে আমার লিগ্যাল সম্পর্ক না থাকলেও আমি ওকে ভালোবাসি।’
সাদ রেগে চিৎকার করলো।
‘ টিনা! তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।’
‘ মোটেই না। এবার যখন সব জেনেই গেছো তবে আমাকে মুক্তি দিয়ে দাও।’
সাদ চমকে উঠলো। আবার! আবার সেই মুক্তির কথা? মানতে পারলোনা সাদ। টিনাকে থাপ্পড় মেরে বললো, ‘পতিতা একটা।’
সাদিদ সাহেবের মুখভঙ্গি দেখার মতো হলো। টিনার বাবা অনেক কড়া। তাঁর মেয়ে হয়ে টিনা এরকম হলো আর সেটা সাদের কপালেই জুটলো? কেন এমন হলো ওনার ছেলের সাথে? এর চেয়ে তো শোভাই ভালো ছিলো। না পূরণ হলো ছেলের বউয়ের শখ, না দেখাতে পারলো নাতি-নাতনিদের মুখ। মাঝখান থেকে সম্মান নিয়ে টানাটানি। এর উপর টিনাকে কিছু বলার অধিকার তাদের স্বামী-স্ত্রীর নেই। কারণ ঘরের সব কাজ রোমেলাকে দিয়ে করায় টিনা, পা পর্যন্ত টিপিয়েছে। কাপড়চোপড় ধোয়া, রান্না করা, ঘর গুছানো, এমনকি গ্লাসে পানিটা পর্যন্ত ঢেলে দেয় রোমেলা। সাদিদ সাহেবের রিটায়ার্ডের পর বাজার করা, ইলেকট্রিক বিল দেওয়াটাও নিজের করতে হয়। যেটা আগে দারোয়ান করতো। অপমান করতেও ছাড়েনি। কয়েকদিন আগে তো ওদেরকে বৃদ্ধাশ্রমেই পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলো, ভাগ্যিস হয়নি। এককথায় বৌমা’র সুখ ওদের কপালে জুটেনি। এটা যে শোভার সাথে করা অন্যায়ের ফল, সেটাও এতদিনে বুঝে গিয়েছে। তাও সাদিদ সাহেব কিছু বলেননি টিনাকে। যেমন ইচ্ছা, তেমন চলতে দিয়েছেন। সাদ তো কবেই দেবদাসের রুপ ধারণ করেছে। কোনোমতে অফিসটা করে খালি। আর সারাদিন ভাবনায় মত্ত্ব। এই সুযোগেই টিনা বাড়াবাড়ি শুরু করেছে, যার মুখোশ আজ উন্মোচিত হলো।
শোভার অভিশাপটাই কাল হলো ওদের। চোখের পানিতে মুখ ধুয়েও কুল হচ্ছেনা। আচ্ছা, মেয়েটা কোথায়? একটিবার দেখা হলে ওর পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবে। ক্ষমা কী করবেনা শোভা? নউকে যে মরেও শান্তি পাবেনা। এসব ভাবাভাবির মাঝেই সাদ আর টিনার ঝগড়া শুরু হলো। সাদিদ সাহেব ভাবনার প্রহর কাটিয়ে ওদেরকে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু টিনা বেয়াদবের মতো সাদিদ সাহেবের গালে চড় মারলো। পুরো ঘর স্তব্ধ হয়ে গেলো। কত বড় স্পর্ধা টিনার!
থাপ্পড় মেরেই টিনা ক্ষান্ত হয়নি। রাস্তার কুকুরের সাথে সাদিদ সাহেবের তুলনা করেছেন এবং রেগে ওনার মুখে থু থু ছিটিয়েছেন। সাদ টিনার টুটি চেপে ধরলো। হাতাহাতির এক পর্যায়ে রোমেলার চিৎকারে ওরা থেমে গেলো। সাদিদ সাহেব রোমেলার উপর ঢলে পড়লেন।
অজ্ঞান অবস্থায় হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো। ভর্তি করাও হলো কারণ অবস্থা ভালো নয় ওনার।করিডোরে সবাই অপেক্ষা করছে, টিনা আসেনি। ডাক্তার কিছুক্ষণ পর এসে সাদিদ সাহেবকে মৃত ঘোষণা করলেন! রোমেলার চিৎকারে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলো। কে দায়ী ওনার মৃত্যুর জন্য? সাদ? নাকি সাদিদ সাহেব নিজেই? শোভার প্রতি করা অন্যায়ের শাস্তিটা কী কম হয়ে গেলো সাদিদ সাহেবের! সৃষ্টিকর্তা একবেলা ছাড় দিয়েছেন কিন্তু ছেড়ে তো দেননি!
হার্ট-অ্যাটাকে মৃত্যু হয় ওনার। অবশ্য এমনি এমনি তো আর হয়নি। টিনার অত্যাচারে, ওর আসল চরিত্র বেরিয়ে পড়ায় সাদিদ সাহেব আর সইতে পারলেন না। পাপের শাস্তি এমনই হয় হয়তো।
সাদ’দের দোতলা বাড়িটা আজকাল বড়ই নির্জীব হয়ে গিয়েছে। রাতেরবেলা ভুতুড়ে পরিবেশ। নেই কোনো হৈ-হুল্লোড়, চেঁচামেচি। অথচ চারবছর আগেও বাড়িটা কী অন্যরকম ছিলো। সারক্ষণ হাসি-আনন্দে মেতে থাকতো। সাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। তবুও মাটি কামড়ে মাকে ধরে পড়ে আছে এই বাড়িটাতে। এইতো ক’দিন আগে সাদিদ সাহেব পরপাড়ে পাড়ি জমালেন। একা করে রেখে গেলেন স্ত্রী আর একমাত্র পুত্রসন্তানকে। টিনা ক’দিন এ বাড়িতেই ছিলো। মেয়ের কুকীর্তি জেনে ওর বাবা এসে নিয়ে গিয়েছেন। ইফতি মানসম্মানের ভয়ে টিনাকে ছেড়ে দেয়। কারণ এই খবর রীতিমতো সবাই জেনে গিয়েছে। এখন টিনাকে যদি ইফতি বিয়ে করে তাহলে ওর বাবা ওজে ত্যাজ্যপুত্র করবে। সামান্য একটা মেয়ের জন্য ইফতি এরকম করতে পারবেনা,তাও আবার বিবাহিত। বেঁচে থাকলে অনেক সুন্দরীর দেখা পাবে। এসব ভেবেই টিনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং বিদেশে পাড়ি জমায়। অহংকারে জর্জরিত টিনা পরবর্তীতে সাদের সাথেই সংসার করতে চাইলো। সাদ মেনেও নিলোনা, আবার কিছু বললোও না। ক্ষমা করতে পারেনি টিনাকে। একসময় জানা গেলো টিনা কোনোদিন মা হতে পারবেনা। এরপরই টিনার বাবা এসে মেয়ের কান্ড শুনে রেগে যান, মেয়েকেও নিয়ে যান। এভাবেই পথের ধূলিকণার সাথে মিশে গেলো তিন তিনটি মানুষের অস্তিত্ব। বিত্ত-বৈভব, অবহেলা, অহংকার, চাহিদা, চরিত্রহীনতা, পরকীয়া একা করে দিলো মানুষগুলোকে। প্রকৃতির শোধ!
__________
শোভা সকাল সকাল বাচ্চাদের নিয়ে বেরুলো। এই বছরই স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। কীভাবে যে এতগুলো বছর পার হয়ে গিয়েছে তা বুঝতেই পারেনি। তবে দিনদিন শোভা আরও সুন্দর হয়ে উঠছে। এখন সবসময় শাড়ি পড়ে, লম্বা চুলগুলো বিনুনি করে রাখে। দেখতে খুবই স্নিগ্ধ লাগে।
শোভার মা বাচ্চাদের টিফিন রেডি করে দিয়েছে। মিলির হাতে টিফিনের ব্যাগ। বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে দুজন অফিস যাবে। একটা স্কুলে দুজনেরই চাকরি হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনে একটা বুকশপও চালায় মিলি আর শোভা। রাস্তা পার হতে গিয়েই ঘটলো বিপত্তি। তুতুলের সামনে এসে পড়ে একটা রিকশা, মিলি দ্রুত কোলে নিয়ে সরে পড়ে। রাফু বোনকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘তুই একনো ঠিকমতো চলতে পারিস না বোন। তো ছোটআম্মুর কোলে থাকলেই পারিস!’
তুতুল পিটপিট করে ভাইয়ের দিকে তাকালো। ‘স্যরি দাদাভাই। তুমি আমাকে কোলে নিয়ে পার করে দেবে এরপর থেকে, ওখে?’
‘ না। আমিও তোর মতোই ছোট বাচ্চা।’
তুতুল মিলিকে বললো, ‘ছোটআম্মু! দাদাভাই কী এতোই ছোট যে আমাকে কোলে নিতে পারবেনা?’
মিলি মুখটা গম্ভীর করার চেষ্টা করে বললো, ‘হুম। ভাই তো খুব ছোট। তুমি আমার কোলে উঠেই রাস্তা পার হবে, ঠিক আছে?’
‘ আচ্ছা।’
শোভা ছেলেমেয়েদের কান্ডকারখানা দেখে হেসে ফেললো। মিলি চোখ পাকিয়ে বললো, ‘হাসছিস কেন?’
‘ আমার মনে হচ্ছে তুইই ওদের আসল মা। দেখিস না, ওরা আমার দিকে ফিরেও তাকালো না।’
মিলি হেসে বললো, ‘বাচ্চা তো।’
‘ যা-ই বলিস, তুই ওদের জন্য যা করিস, আমি তা কখনোই করতে পারতাম না।’
কথা বলতে বলতে ওরা স্কুলে এসে গেলো। দুজনকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে মিলি একগাদা নোটিস দিতে লাগলো। কি খাবে, কিভাবে লিখবে, ব্যাগের কোন পকেটে কি আছে, কার সাথে খেলবে, বাথরুম পেলে কোথায় যাবে, সবার ভদ্রভাবে কথা বলতে, দুজন যাতে দুষ্টুমি না করে সব বুঝিয়ে দিলো। শোভা সেদিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। মিলিটা এতো ভালো কেন? এতো বছর হয়ে গেলো অথচ নিজের জীবন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। জীবনটা তো গোছাতে হবে। এভাবে শোভার জন্য সেক্রিফাইস করতে থাকলে শোভা যে অনেক বেশি ঋণী হয়ে পড়বে।
স্কুলে যাবার পথে শোভা মিলিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘সাইফের সাথে কথা হয়েছে?’
‘ হুম। ওনি পরশু আসবেন চট্টগ্রামে।’
‘ কোনো দরকারে?’
‘ জানিনা। ওই হাঁদাটা বলেছে বিশেষ দরকার আছে।’
‘ এখনো হাঁদা ডাকাটা গেলোনা তোর।’
‘ তাহলে কী বলবো? জানু? প্রাণু?’
‘ জামাই ডাকবি।’
মিলি অবাক হয়ে বললো,’মানে?’
‘ আমার মনে হয় সাইফ ভাই তোকে পছন্দ করে!’
‘ তোকে বলছে?’
‘ না। কিন্তু আচরণেই বোঝা যায়। সবসময় কেমন খোঁজখবর নেয় দেখিস না!’
মিলি মুখ বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, ‘খোঁজখবর নিলেই কী বোঝা যায় একজন আমাকে পছন্দ করে? তাছাড়া আমি এসবে বিশ্বাসই করিনা। আমার এসবে ইন্টারেস্ট নাই। যেমন আছি তেমনি ভালো আছি!’
‘ তার মানে তুই চিরকুমারী থাকবি? বিয়ে করবিনা?’
‘ হুম।’
‘ মিলি!’
‘ বল!’
‘ সাইফ ভাই যদি তোর সামনে এসে দাঁড়ায়, তাহলে তুই তাঁকে ফিরিয়ে দিবি?’
‘ ফিরিয়ে দেবো কেন? বাসায় নিয়ে নাস্তা খাওয়াবো। আফটার অল আমাদের পারিবারিক ডাক্তার বলে কথা!’
‘ আমি সেটার কথা বলছিনা। যদি ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসে, তখন?’
মিলি কিছু বললোনা। গভীর চিন্তায় মগ্ন! আচ্ছা, পুরুষ মানুষ এমন হয় কেন? মিলির খুব ইচ্ছে করে ওদের বিশ্বাস করতে, কিন্তু কই? যতবার কাউকে বিশ্বাস বা ভরসা করেছে সবাই তাঁকে ঠকিয়েছে। সাদের মতো মানুষটাও৷ কি রহস্যের বেড়াজালে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলো, চিন্তা করে কুল পাওয়া যায়না। সাদ হয়তো সুখেই আছে। যদি সে ভালোই হতো, তাহলে এতোদিনে নিশ্চয়ই শুধরে যেতো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিলি শোভাকে নিয়ে স্কুলে পা রাখে। বিশাল বড় গার্লস স্কুল। সরকারি চাকরি। দিন তো ভালোই কাটছে, সবচেয়ে বড় কথা রাফু আর তুতুলকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মিলি ভাবতেও পারেনা। ছোট্ট পুচ্চুগুলো মিলির জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে। যখন ছোটআম্মু বলে ডেকে ওঠে তখন নিজেকে মাতৃরুপে সম্পূর্ণ আবিষ্কার করে। এমন বাচ্চাদের ছেড়ে মিলি কী ঘর বাঁধতে পারবে নাকি! কখনোই না।
চলবে…..ইনশাআল্লাহ! ভুল-ত্রুটি মাফ করবেন।