#এক_পশলা_বৃষ্টি
#লেখনীতে: ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৯
পরদিন শোভাকে নিয়ে মিলি হসপিটালে যায়। ডাক্তার সাইফের সাথেও দেখা হয়। ড্রেসিং সেরে ওরা খানিকক্ষণ বসে। বাচ্চাদেরকে বাসায় রেখে আসা হয়েছে। সালমা বেগম আর কাজের মহিলা দেখে রাখবেন। এমনিতে বেশি কান্নাকাটি করে না, এটাই ভালো দিক। ক্যান্টিন থেকে হালকা খাবারও খেয়ে নেয়। আসার পথে আবারও সাইফের সাথে দেখা। সাইফ মিলিকে জিজ্ঞেস করে, ‘ভালো আছেন?’
‘ আজব। একটু আগেই না দেখা করলাম। তখন জিজ্ঞেস করলেন না কেন?’
‘ মনে ছিলো না।’
‘ ভালো। আপনি?’
‘ ইয়ে.. আমিও ভালো।’
‘ আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন?’
‘ না মানে বাচ্চাদের দেখেশুনে রাখবেন। কোনো হেল্প লাগলে লজ্জ্বা না পেয়ে আমাকে জানাবেন!’
মিলি বিস্ময় নিয়ে বললো, ‘সাহায্য লাগলে অবশ্যই চাইবো, এখানে লজ্জ্বা পাবার মতো কী আছে?’
‘ না মানে, মেয়েরা একটু লজ্জ্বাবতী হয় তো তাই।’
‘ আমি অন্যসব মেয়েদের মতো নই, ওকে?’
সাইফ থতমত খেয়ে বলে, ‘ওহ আচ্ছা।’
শোভা দুজনের খুনসুটি দেখে হেসে ফেললো। মিলি রেগে বললো, ‘দাঁত কেলাচ্ছিস কেন?’
‘ এমনি।’
তারপর সাইফকে বলে, ‘আসলে ভাইয়া, আমাদের মিলির মাথাটা না একটু খারাপ আছে। সে সবকিছু সহজভাবে নিতে পারেনা।’
সাইফ তাল মিলিয়ে বললো, ‘বুঝতে পেরেছি।’
মিলি চোখ পাকিয়ে তাকালো। বললো, ‘কী বুঝতে পেরেছেন?’
‘ এই যে, আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না!’
‘ কে বললো?’
‘ আপনার আচরণ দেখেই বোঝা যায়।’
মিলি গলা নরম করে বললো, ‘মোটেও না।’
শোভা সাইফকে বললো, ‘ভাইয়া, আমি লক্ষ্য করেছি আপনি মিলিকে ভয় পান। কারণটা জানতে পারি?’
সাইফ হাসে। তারপর নিজের মায়ের ঘটনাটা বেশ সাহস নিয়ে বলে। সাইফের মায়ের সাথে নিজের আচরণের মিল খুঁজে পেয়ে মিলি প্রচন্ড লজ্জ্বা পেয়ে যায়। সাইফ চকিতে লক্ষ্য করে মিলিকে। শোভা দুজনের চাহনি লক্ষ্য করে আড়ালে হাসলো। সাইফ নিজের মনেই ভাবে, আজ এতো সহজে এতো কথা বলে ফেলেছে, কী হয়েছে ওর? প্রেমে একেবারে হাবুডুবু অবস্থা। বাতাসেও যেন প্রেম প্রেম গন্ধ। আহা! বিকেলটা আজ এতো সুন্দর কেন? মিলির চোখে চোখ রেখে কথা বলতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু মিলির ভয়ঙ্কর দৃষ্টির দিকে তাকানোর সাহস পেলোনা! “বাতাসে বহিছে প্রেম/নয়নে লাগিলো দোলা!” আহা।
এভাবেই কথা বলতে বলতে বাইরে চলে এলো। এমন সময় সামনে তাকিয়ে শোভা দেখলো সাদ! হঠাৎ সামনে পড়ে যাওয়ায় সাদও দাঁড়িয়ে পড়লো। ওদেরই তো খুঁজছিলো সাদ। এদিকে শোভা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আটমাস পর মানুষটার সাথে দেখা। ওই অমানুষ, বিশ্বাসঘাতকটার সাথে কেন দেখা হলো! শোভা ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে নিলো যার অর্থ সাদ তার কাছে এখন পরপুরুষ, সে সাদের মুখ দেখতে চায়না এবং সাদকেও নিজের চেহারা দেখাবেনা।সাদও বুঝে গেলো। এতোদিন পর দেখা, ভালো করে শোভাকে লক্ষ্যও করতে পারলোনা। কিন্তু একঝলকের দেখায় বুঝতে পারলো শোভা আগের চেয়ে এখন আরও বেশি সুন্দরী হয়েছে। মিলি, সাইফ দুজনই চুপ। পরিস্থিতি কেমন ঘোলাটে। মিলি দাঁতে দাঁত চেপে শোভার হাত ধরে সাইফকে বললো, ‘আমাদের একটা রিকশা ঠিক করে দিন।’
সাইফ বিনয়ের সঙ্গে বললো, ‘চলুন।’
ওরা পা বাড়াতেই সাদ পথ আটলায়। এবার মিলির আগেই শোভা বলে উঠলো, ‘কী চাই?’
সাদ অকপটে বলে উঠলো, ‘ বাচ্চাদেরকে।’
শোভা হেসে ফেললো। ভ্রু নাঁচিয়ে বললো, ‘আমাকে চান না?’
সাদ কি বলবে ভেবে পেলোনা। শোভা বললো, ‘কিন্তু বাচ্চাদের তো আমি দিতে পারিনা।’
‘ কেন?’
‘ সেই প্রশ্নের কৈফিয়ত আমি কোনো অমানুষকে দেবোনা।’
সাদ রেগে বললো, ‘দিতে হবে, আমি ওদের বাবা।’
‘ নো মিস্টার! আপনি হয়তো বাবা নামের অর্থ বা ব্যাখা কিছুই জানেন না। প্লিজ আগে এসব জেনে আসুন।’
‘ তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো শোভা।’
‘ আরে। আমি কোথায় বাড়াবাড়ি করলাম?’
‘ বাদ দাও। এখন বলো আমার বাচ্চাদের দিবে কিনা?’
‘ প্রশ্নই আসেনা। ওদের জন্ম দিয়েছি আমি, আমি ওদের মা। নয়মাস পেটে ধরেছি, নিজে মরতে মরতেও ওদেরকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছি কী আপনার কাছে তুলে দিবো বলে? এতোই সোজা? যেন ওরা আপনার কেনা পণ্য?’
সাদ রেগে বললো, ‘হুম পণ্যই!’
শোভা সাদের গালে থাপ্পড় মারলো। বললো, ‘ভবিষ্যতে আপনার এই মুখ কোনোদিন আমাকে দেখাবেন না। ফল ভালো হবেনা।’
সাদ শোভার গলা চেপে ধরে। আচমকা এরকম কান্ডে মিলি এবং সাইফ দুজনেই হতভম্ব হয়ে যায়। মিলি টেনেও সাদকে সরাতে পারছেনা। সাইফ এক ধাক্কায় সাদকে সরিয়ে দেয়। রেগে বললো, ‘আপনার সাহস তো কম না, আপনি শোভার গায়ে হাত তুলেন! আপনার তো জানা উচিৎ আপনাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে এবং বাচ্চাদের অধিকার একমাত্র শোভার আছে। তাহলে আপনার এসব ঝামেলার মানে কী? হোয়াট দ্যা হেল..!’
‘ ওই কু* বাচ্চা। তোকে বলতে হবে? কে তুই?’
সাদের মুখের ভাষা খারাপ করায় শোভা আরও রাগলো। বললো, ‘নিজের পরিচয় তো দিয়ে দিলেন। আর ওনি কে জানতে চান? ওনি আমার ভাই, বুঝছেন?’
‘ এখন তো কত লোককেই ভাই বানাবি। তোর মতো মেয়েরা এমনই হয়।’
মিলি এবার ফুঁসে ওঠে। বললো, ‘তাই বুঝি দুই বিয়ে করেছেন? বাচ্চাদের জারজ বলেছিলেন? আহা! কী ভালো পুরুষ মানুষ আপনি!’
সাদ বললো, ‘তুই চুপ থাক।’
শোভা সাদকে চিৎকার করে বললো, ‘বাজে ভাষা বন্ধ করুন। নইলে দেখবেন আমি কী করতে পারি। এখন কেন আসছেন বাপের অধিকার দেখাতে? যখন আমি, আব্বু, ভাইয়া, মিলি আপনার কাছে অনুরোধ করেছিলাম তখন কোথায় ছিলো এই অধিকারবোধ? এখন মনে পড়লে হাসি পায়, আপনার মতো কীটের জন্য আমি হাত কেটে মরতে গিয়েছিলাম। এতগুলো মাস আত্মীয়স্বজনরা আমাকে কী পরিমাণ মানসিক টর্চার করেছেন আপনি জানেন? সবাই বলতো এবং এখনো আমাকে কলঙ্কিনী বলে। আশেপাশের মানুষজন্ এখন আর আমাদের সাথে মিশেনা, বিপদে এগিয়ে আসেনা। সমাজে আমার বাবা মুখ দেখাতে পারেনা আমার জন্য। আমি ভুল করেছিলাম, তাই শাস্তি পাচ্ছি। এতোসব সহ্য করে ওদের দুনিয়ার আলো দেখালাম আর আপনি ফ্রিতে বাচ্চা দাবি করতে আসেন? কেন? কোন দায়িত্ব পালন করেছিলেন আপনি যার বিনিময়ে ওদেরকে আপনার হাতে তুলে দেবো?’
সাদ সব শুনলো। কিন্তু নিজের ভুল স্বীকার করতে রাজি নয়। একপ্রকার হাতাহাতির পর্যায়ে পরিস্থিতি চলে গেলো। সাইফ সাদকে কিল-ঘুষি দিয়েও দমিয়ে রাখতে পারলো না। একসময় হুমকি দিলো বাচ্চাদের চুরি করে হলেও নিয়ে আসবে। আর শোভা যদি বাড়াবাড়ি করে তাহলে মেরে ফেলবে। হুমকি শুনে শোভা সাদকে পায়ের স্যান্ডেল খুলে থাপ্পড় মারলো। তারপর কাঁদতে কাঁদতে মিলিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো।
বাড়ি এসেই সবাইকে এই ঘটনা খুলে বললো। রমজান সাহেব রিস্ক নিতে চাইলেন না। জিনিসপত্র সব গুছিয়ে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে এলেন। এই শহরেই আর থাকবেনা ওরা। মিলিও সাথে চললো। ডাক্তার সাইফ ওদেরকে সাহায্য করলেন খুব। শাফিন, মিলি সবকিছু ঠিকঠাক করে রাতে রাতেই বাচ্চাদের নিয়ে শহর ছাড়লো। সাইফও সাথে গেলো, ও এখন ওদের পরিবারের একটা অংশের মতো হয়ে গিয়েছে। কারণ ছোট বাচ্চাদের এতোদূর নিয়ে যাবে, সাথে একজন ডাক্তার থাকলে ভালো।
_____
চট্টগ্রামের এক নতুন পরিবেশে নতুন করে জীবন সাজালো ওরা। সাইফ পরদিন ঢাকায় ফিরে এলো। তবে ওদের সাথে যোগাযোগ আছে ওর। কারণ ওর বাড়িও চট্টগ্রাম । দুই বছর কেটে গেলো, শোভার একটা চাকরিও হয়েছে। বাচ্চারাও একটু একটু করে বড় হচ্ছে। কথা বলা শিখছে। শোভা মনে প্রাণে চায় ওর কালো অতীত ভুলতে, কিন্তু পারেনা। তবে নতুন করে জীবন সাজিয়ে নিয়েছে। ঠিক করেছে আর কোনোদিন বিবাহ নামক বন্ধনে আবদ্ধ হবেনা। একাই মানুষ করবে সন্তানদের, দেখিয়ে দেবে ওই সাদটাকে। বাবা হয়েও কীভাবে পারলো সন্তানদের মেরে ফেলার কথা বলতে? অমানুষ একটা।
________
সাদ অফিস শেষে পার্কে এসেছে। বেঞ্চে শুয়ে আছে। আজকাল নিজেকে পাগল পাগল লাগে। কিচ্ছু ভালো লাগেনা। রাত-বিরেতে কিলবিল করে উঠে পুরো শরীর। তখন মনে হয় দুনিয়া উলটপালট করে দিতে। এভাবেই ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো শোভা ওর বাচ্চাদের নিয়ে? একবারের জন্যও দেখতে পারলো না। দুই-দুইটা সন্তান ওর। একজনকে পাবার অধিকারও তো ওর আছে!
সাদের মাথাব্যথা করছে। কোথায় খুঁজবে শোভাকে? এই এতোবড় দেশের কোন কোণায় গিয়ে লুকিয়ে আছে শোভা! সাদের ফোন বেজে উঠলো। বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করলো ও।
‘ হ্যালো বেবি।’
‘ বলো।’
‘ কোথায় তুমি?’
‘ জানিনা।’
‘ জানিনা মানে?’
‘ আমি জাহান্নামে আছি!’
‘ এভাবে কথা বলছো কেন? তুমি কী আমাকে বাসার কাজের লোক ভেবেছো? ডিসগাস্টিং!’
‘ ফোন রাখো তো।’
‘ আসার সময় আমার জন্য পিৎজা নিয়ে এসো। আজ যা রান্না হয়েছে, গলা দিয়েই নামছে না।’
‘ কেন? কী হয়েছে?’
‘ তোমার আম্মু কিসব রান্না করেছে, মুড়িঘণ্ট, শাকপাতা, এসব কী কেউ খায়?’
‘ আমি খাই, আমার প্রিয় খাবার।’
‘ ইয়াক।’
সাদ বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত আটটা। ঠিক সময় টিনার জন্য পিৎজা না নিয়ে গেলে হৈচৈ শুরু করবে। মেয়েটার বড্ড চাহিদা। এদিন এটা, ওদিন সেটা এই করে করে দিন কাটাচ্ছে। সংসারের দিকে কোনো খেয়াল নেই। এরকম মানুষও যে ওর কপালে জুটেছে সাদ ভাবতেও পারেনা। দুই বছরের সংসার জীবনে অশান্তি ছাড়া আর কিছুই পায়নি।
সাথে সাথেই উঠে গেলো। দোকানপাটে খুব বেশি মানুষজন নেই। একটা প্রেস্টিশপ থেকে পিৎজা নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলো সাদ।
বাড়ি ফিরে দেখে ড্রইংরুমে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে টিভি দেখছে টিনা। সাদকে দেখেই দৌড়ে এলো। বললো, ‘এনেছো?’
‘ হুম।’
‘ দাও।’
সাদ পিৎজার বক্সটা ওর হাতে দিলো। টিনা সোফায় বসে আয়েশ করে খাচ্ছে। সাদ ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো। খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু মা-বাবাকে কোথাও দেখতে পেলোনা। সাদ টিনাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আম্মুরা কই?’
‘ ঘরে!’
‘ ঠিক আছে। তুমি আমার খাবারটা বেড়ে দাও।’
টিনা বললো, ‘খাবার তো আমি ফেলে দিয়েছি।’
‘ ফেলে দিয়েছো মানে?’
‘ মানে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি। এসব কেউ খায় নাকি?’
সাদ অবাক হয়ে গেলো।
‘ এসব শাকপাতা, ডালভাত কোনো খাবার? তোমার মা যে কী! এসব রান্না করে আমাকে বলে খাও। রাগ উঠে গেলো, সব ফেলে দিলাম।’
‘ আম্মুরাও খায়নি?’
‘ জানিনা।’
‘ তাহলে আমি এখন কী খাবো?’
‘ কেন? এই যে পিৎজা! আমাদের জন্যই তো এনেছি।’
‘ আমি এসব খাইনা!’
‘ আরে বেবি। রাগ করো কেন, একদিন খেলে কিছু হবে না।’
‘ বাড়ির সবাই না খেয়ে আছে, আর তুমি আমাকে পিৎজা খেতে বলছো? মাথায় কী সেন্স নাই? বুড়ো মানুষগুলোকে খালি পেটে রেখে এখানে বসে বসে খাচ্ছো।’
টিনা ন্যাকামি করে বললো, ‘কীহ! আমি বসে বসে খাই শুধু। তুমি আমাকে এমন বলতে পারলে?’
‘ হুম পারলাম।’
‘ জানিতো। এখন আরও কতকিছুই বলবে।’
টিনার ভিত্তিহীন কথাবার্তা আর কাজকর্ম রাগ তুলে দেয় সাদকে। না খেয়েই গিয়ে শুয়ে পড়ে ঘরে। টিনা বড্ড বেশিই বেয়াদব। মা-বাবার বয়স হয়েছে এরপরেও টিনা ওদের একটু শান্তিতে থাকতে দেয়নি। কিছু বললেই ন্যাকা কান্না। ওই দুজন মানুষ নাতিনাতনির আশায় পথ চেয়ে বসে আছেন। কোথায় কী!
টিনা রাতে ঘুমুতে এলে সাদ ঠান্ডা মেজাজে জিজ্ঞেস করে, ‘বেবি! একটা কথা বলি?’
‘ বলো।’
‘ চলোনা, আমারা একটা বাচ্চার ট্রাই করি।’
টিনা রেগে বললো, ‘সাদ! তোমার এই ফালতু টপিক প্লিজ বন্ধ করো। এসব ন্যাকামু কথাবার্তা আমার একদম ভালো লাগেনা। লাইফটাকে এঞ্জয়ই করা হয়নি৷ আর তুমি বাচ্চা বাচ্চা করছো।’
সাদ বলে, ‘দেখো আমাদের সাথেই যাদের বিয়ে হয়েছিলো তাদের কত সুন্দর বাচ্চা হয়েছে। আমাদের অফিসেরই নাহিলের ছোট্ট একটা মেয়ে আছে। কি সুন্দর ফুটফুটে, কোলে নিয়ে ঘুরে। আমারও তো ইচ্ছা হয় বাবা ডাক শোনার।’
টিনা পাত্তা দিলোনা। কিছুক্ষণ বকবক করে ঘুমিয়ে পড়লো। সাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আজ একটা বাচ্চার জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে, কিন্তু ওর ইচ্ছে পূরণ হচ্ছেনা। বাবা ডাক শোনার জন্য বুকটা খাঁ খাঁ করে, কিন্তু কোথাও এই মধুরতম শব্দটা ওর কানে বাজেনা। ওর কোলে একটা বাচ্চা শোভা পায়না। শোভা! হ্যাঁ, ওর তো দুটো সন্তান আছে, কোথায় ওরা এখন? কোথায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে! না জানি দেখতে কেমন, কত বড় হয়েছে। আচ্ছা, ওদের কী দাঁত উঠেছে? কামড় দেয়? ছোট্ট হাত-পা নাড়িয়ে হাঁটতে পারে? চোখগুলো কার মতো হয়েছে? নাম কী ওদের? কিচ্ছু জানেনা সাদ, কিচ্ছুনা। চোখের দেখাটা দেখতেও পারেনি। একবার খুঁজে পেলে আর দূরে যেতে দিবেনা ওদের। কিছুতেই না। শোভার কাছ থেকে কেড়ে নিবে ওদের। প্রাণপণে খুঁজে চলেছে ওদের লোক লাগিয়ে।
চলবে।