#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৬
সময়টা প্রায় বিকাল চারটা পাঁচের কাছাকাছি। আদ্রিতা লজ্জায় মাথা নুইয়ে বসে আছে। আচমকা ফারিশকে জড়িয়ে ধরায় সে বেশ লজ্জিত। এই উদগাট কাজ এর আগে কখনো করে নি আদ্রিতা। ইস! ফারিশ কি ভাবলো। আদ্রিতা আড়চোখে ফারিশকে দেখলো। ছেলেটাকে বেশ স্বাভাবিক আর শান্ত দেখাচ্ছে। কি সুন্দর নীরবে গাড়ি চালাচ্ছে। যেন কিছু হয় নি এমন। আদ্রিতার মুখ দিয়ে আর কথা বের হতে চাইলো না। ফারিশ অনেকক্ষণ পর বললো,
“এভাবে হুটহাট জড়িয়ে ধরলে আমি কিন্তু মারা পড়বো ডাক্তার ম্যাডাম।”
আদ্রিতার লজ্জিত মুখ আরো লজ্জিত হলো। তার ইচ্ছে করছে চলন্ত গাড়ি থেকে ছুট্টে পালিয়ে যেতে। কিন্তু তা আর হলো না। নিজেকে পুরোপুরি ধাতস্থ করে লজ্জিত স্বরে বললো,
“আমি তো ডাক্তার মানুষ পুরোপুরি মারা পরার আগে ঠিক বাঁচিয়ে নিবো।”
ফারিশ হাসলো। বললো,
“আপনি কিন্তু দারুণ কথা জানেন।”
“আপনার চেয়ে কম।”
“আমার তো মনে হয় না।”
“কিন্তু আমার মনে হয়।”
“এর আগে কোনো পুরুষকে জড়িয়ে ধরেছেন ডাক্তার ম্যাডাম?”
আদ্রিতা আবার লজ্জায় পড়লো। এই ছেলে জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর কিছু নিয়ে কথা কি বলতে পারছে না। আদ্রিতা নীরব রইলো। ফারিশ বললো,
“উত্তর কিন্তু পেলাম না।”
“যদি না দেই।”
“আমি কি জোর করতে পারি!”
“আপনি কি চান আমি আর কখনো আপনায় জড়িয়ে না ধরি?”
ফারিশ জবাব দেয় না। আদ্রিতাও আর কিছু বলে না। গাড়ি চলে আপন মনে। গাড়ি তখন প্রায় হসপিটালের কাছাকাছি চলে এসেছে। হঠাৎ ফারিশ প্রশ্ন করে,
“আপনি কি কাঁচের চুড়ি পছন্দ করেন?”
আদ্রিতা বেশ অবাক হয় প্রশ্নে। বলে,“কেন?”
ফারিশ বিরক্তবোধ করে উত্তরে। চোখ মুখ কুঁচকে বলে,“কেনোর উত্তর দিবো না। পছন্দ করেন কি না বলুন?”
আদ্রিতা শান্ত স্বরে শুধায়,“করি।”
ফারিশ কতদূর গিয়েই হঠাৎ গাড়ি থামায়। হসপিটাল দেখা যায় দূর থেকে। আদ্রিতা বিচলিত কণ্ঠে বললো,“আর একটু সামনে যেতে হতো তো।”
ফারিশ সামনে যায় না। উল্টো পিছনে যায়। আদ্রিতার চোখে মুখে বিস্ময়। ফারিশ তখন আসার পথে একটা ছেলেকে দেখে মাথায় হাজি চেপে কাঁচের চুরি নিয়ে যাচ্ছে। ফারিশ সোজা ছেলেটার সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো। জানালার কাঁচ নামিয়ে ডাকলো,“এই পিচ্চি।”
ছেলেটি দাঁড়ালো। পিছন ফিরেই বললো,“আমারে ডাহেন।”
ফারিশ তার পানে তাকিয়ে বলে,“হুম তোমারেই ডাকি। এদিকে আসো।”
ছেলেটি খুশি হলো মাথার হাজিটা শক্ত করে চেপে ধরে এগিয়ে গেল ফারিশের দিকে। ফারিশ গাড়ির দরজা খুললো। বললো,“চুড়ি কত করে?”
ছেলেটি মাথার হাজি মাটিতে রাখলো। ক্লান্ত শরীরে বললো,
“কয়ডজন নিবেন এক এক ডজন চল্লিশ টাহা কইরা।”
“সব কি কাঁচের চুড়ি?”
“হ।”
“সব মিলিয়ে কত ডজন হবে?”
“পনচাস ডজন।”
“ভালো হবে তো।”
“হা। এককালে খাসা মাল আইজগোই বাজার তোন কিন্না আনছি। সাহেব হয়ালে করেন বাড়ি যাওন লাগবে নইলে আম্মায় রাগ হইবো। আম্মার আবার জ্বর আইছে। ঔষধও কেনা লাগবো।”
ফারিশের বুক ভাড়ি হয়ে উঠলো। ফারিশ আর সময় না দিয়ে মানিব্যাগ থেকে দুটো এক হাজার টাকার নোট বের করে ছেলেটার কাছে দিলো। বললো,“সব চুড়ি দিয়ে দেও।”
ছেলেটির চোখ ছানাবড়া। সে বললো,
“এতগুলান চুড়ি আমনে একলা নিবেন?”
“হুম।”
ছেলেটি খুশি হলো। এক হাজি চুড়ি এগিয়ে দিলো ফারিশের দিকে। ফারিশ নিলো। আদ্রিতার কাছে দিয়ে বললো,“এগুলো আপনার জন্য।”
আদ্রিতার চোখ আরো দিগুণ বড় বড় হয়ে গেল। হতভম্ব স্বরে বললো,
“এতগুলো চুড়ি।”
“হুম।”
ফারিশ ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,“ভালো থেকো। আর তোমার আম্মার যত্ন নিবা কেমন।”
ছেলেটির মুখে জড়ানো হাসিটা আরো বাড়লো। হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো,“আমনেও ভালো থাকবেন। আমি যাই।”
ছেলেটি দৌড়ে টাকা দুটো দেখতে দেখতে চলে গেল। ফারিশ বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ছেলেটির যাওয়ার পানে। অতঃপর জোরে নিশ্বাস ফেলে গাড়ির দরজা আঁটকে বললো,“তাহলে যাওয়া যাক।”
আদ্রিতা নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,
“এতগুলো চুুড়ি নিয়ে আমি কিভাবে হসপিটাল যাবো?”
“এটা আপনার সমস্যা আমার না।”
“আপনি তো ভাড়ি অদ্ভুত মানুষ।”
“এটা কি আজ নতুন নাকি।”
আদ্রিতার অসহায় মুখ। এখন কি করবে ভাবছে। তার বন্ধুমহল এগুলো দেখলে নির্ঘাত সন্দেহের চূড়ান্ত সীমানায় পৌঁছে যাবে। ফারিশ এসে হসপিটালের সামনে গাড়িটা থামালো। নীরবে বললো,“নামুন।”
আদ্রিতা নামলো না। ঠায় বসে রইলো। ফারিশ আবার বললো,“কি হলো?”
আদ্রিতার অসহায় মুখ। ছলছল চোখে
বললো,
“এগুলো পরে নিলে হতো না।”
ফারিশ শ্বাস ফেলে বললো,
“কত পরে?”
“ওই রাতে ফেরার পথে।”
ফারিশ বেশি ভাবলো না। আদ্রিতার হাত থেকে চুড়ির হাজিটা নিয়ে বললো,“ঠিক আছে।”
আদ্রিতা নেমে পড়লো। বললো,“আমি কিন্তু ওগুলো নিবো।”
ফারিশ মৃদু হেসে বললো,“আচ্ছা।”
আদ্রিতা চলে গেল। ফারিশও আর না দাঁড়িয়ে গাড়ি স্ট্যার্ট দিলো।’
—-
আদ্রিতা হসপিটালে ঢুকতেই তার আদিবকে নজরে পড়লো। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে বাহিরে বের হয়েছে। আদ্রিতা কৌতুহলী এগিয়ে গেল আদিবের দিকে। বললো,“ভাইয়া আপনি এখানে?”
আদিব খানিকটা চমকে উঠলো। মৃদু হেসে জবাব দিলো,
“তুমি এসে পড়েছো?”
“জি। তা আপনি এখানে কি করছেন?”
“তেমন কিছু না।”
“আপনার কি গালে ব্যাথা?”
সঙ্গে সঙ্গে গাল থেকে হাত সরালো আদিব। বললো,“না। এক বন্ধু এই হসপিটালে ভর্তি তাকেই দেখতে এসেছিলাম।”
“ওহ আচ্ছা।”
আদিব হন হন করে চলে গেল। ঘাবড়ে ছিল একটু। আদ্রিতাও বেশি না ভেবে ছুটে গেল ভিতরে।”
—-
রাত প্রায় বারোটা ছাড়িয়ে। আদ্রিতা তার কাজ সেরে হসপিটাল থেকে বের হলো। সোহেলকে বললো,“গাড়ি নিয়ে আসতে।”
সোহেল সঙ্গে সঙ্গেই এলো। তবে মাথা নিচু করে। আদ্রিতা বিস্মিত নজরে তাকালো সোহেলের দিকে। তার হাবভাব দেখে বললো,“কি হয়েছে?”
সোহেলের কাঁদো কাঁদো মুখ। বিস্ময়কর চেহারা নিয়ে বললো,“ম্যাডাম কে যেন গাড়ির হাওয়া বের করে দিছে।”
আদ্রিতা হতভম্ব স্বরে বললো,“কি বলো এসব?”
সোহেল মাথা নিচু করেই বললো,“মিথ্যা বলছি না ম্যাডাম আপনি গিয়া দেখেন।”
আদ্রিতা গেল। সত্যি সত্যি তার গাড়িটার সামনের এক চাকার পাম নেই। আদ্রিতা বিরক্ত হলো খুব। ক্লান্ত লাগছে প্রচুর। আদ্রিতা নিরাশ সরে বললো,
“গাড়িটা ঠিক করে নিও।”
“আচ্ছা ম্যাডাম। আমি কি একটা গাড়ি নিয়ে আসবো আপনার জন্য?”
“দরকার নেই আমি পারবো।”
আদ্রিতা বেরিয়ে গেল। আদ্রিতা হসপিটাল থেকে বের হতেই দূর থেকে একটা গাড়িও বের হলো। পিছু নিলো আদ্রিতার কতদূর এগিয়েই সোজা আদ্রিতার সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো। বললো,“আপনার চুড়িগুলো কি নিবেন না ডাক্তার ম্যাডাম?”
আদ্রিতা তড়িৎ চমকে উঠলো। এতরাতে ফারিশকে আশা করে নি। ফারিশ গাড়ির দরজা খুললো। বললো,“ভিতরে আসা হোক।”
আদ্রিতা নিরদ্বিধায় গাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। দরজা আঁটকে সিটব্লেট লাগালো। বললো,“আপনি কখন এলেন?”
ফারিশের দ্রুত জবাব,“গেছিলাম কখন।”
আদ্রিতা অবাক হলো। বিস্মিত নজরে তাকালো। বললো,“আপনি তখন যান নি?”
ফারিশের দ্বিধাহীন উত্তর,“আপনার চুড়িগুলো যেতে দিল কই।”
ফারিশ গাড়ির পিছন থেকে হাজি সমেত চুড়ি আদ্রিতার হাতে দিলো। বললো,“নিন যত্নে রাখবেন। মাঝে মধ্যে পড়বেন। রিনিকঝিনিক শব্দ করে আমাকে মাতাল বানাবেন। ঠিক আছে।”
ফারিশের শেষ কথায় হাসলো আদ্রিতা। বললো,
“আপনি একটা বিশাল আজব মানুষ।”
“সত্যি কি আজব মানুষ আমার কিন্তু মনে হয় না।”
“আপনার সাথে কথায় জেতা মুশকিল।”
“হারতেও তো নারাজ।”
আদ্রিতা এবার চুপ হয়ে গেল। কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। ফারিশ প্রশ্ন করলো,
“খেয়েছেন?”
“না বাসায় গিয়ে খাবো।”
“আমার সাথে খাবেন।”
“মা অপেক্ষা করছে।”
“আচ্ছা তাহলে অন্য আরেকদিন।”
“ঠিক আছে।”
“আপনায় একটা কথা বলবো?”
“জি বলুন,
ফারিশ সময় নিলো এক সেকেন্ড, দু’সেকেন্ড, এক মিনিট চলে তাও কিছু বললো না। আদ্রিতা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,“কি হলো বলুন?”
এবার তড়িৎ উত্তর ফারিশের
“আজ থাক। অন্য আরেকদিন।”
আদ্রিতাও আর জোর করলো না। ফারিশ গাড়ি নিয়ে এসে সোজা থামালো আদ্রিতাদের বাড়ির সামনে। আদ্রিতা একঝলক বাড়িটার দিকে তাকিয়ে। ফারিশের দিকে এগোলো। ফারিশ চমকে উঠলো। প্রশ্ন করলো,“কি করছেন?”
আদ্রিতার হাঁসি পেল। ছেলেটা কি ভয় পাচ্ছে। আদ্রিতা ফারিশের কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বললো,“বিকেলের উত্তরটা এখন দিলে আপনি কি খুব রাগ করবেন মিস্টার বখাটে?”
ফারিশ কিছু বলে না। আদ্রিতা শীতল স্বরে আওড়ায়,
“আমি আপনিহীনা কোনো পুরুষকে গভীর ভাবে কখনোই ছুঁই নি।”
আদ্রিতা কথাটা বলেই জড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল। ফারিশ ঠায় বসে। তার কথাটা বুঝতে তিন সেকেন্ডের মতো সময় লাগলো। পরক্ষণেই বুঝতে পেরে মুচকি হাঁসলো। নিদারুণ সুখময় কণ্ঠ নিয়ে বললো,“এ বুকের হাজারো যন্ত্রণার ভিড়ে আপনি এক শ্রেষ্ঠ অনুভূতি ডাক্তার ম্যাডাম।”
#চলবে…..
#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৭
নিকষ কালো অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। শীতের আমেজে ভরপুর রাত্রিটা। ফারিশ আনমনা একা একা ড্রাইভ করছে। হৃদয়ের অনুভূতি দারুণ। ফুড়ফুড়ে মেজাজ। হঠাৎই সেই মেজাজে তার সামনে হাজির হলো কিশোর। হাতের ইশারায় গাড়ি থামাতে বললো ফারিশকে। ফারিশ থামালো। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বললো,“আরে অফিসার সাহেব যে,
কিশোরের গায়ে পুলিশ ইউনিফর্ম নেই। কিশোর বললো,“আমাকে কি একটু লিফট দেয়া যায়। আসলে আমার গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে।”
ফারিশ কিশোরের থেকে একটু দূরে থাকা কিশোরের গাড়িটা দেখলো। বেশি না ভেবেই বললো,“আসুন।”
কিশোর ঢুকে বসলো গাড়িতে। কিশোর বসতেই ফারিশ গাড়ি স্ট্যার্ট দিলো। কিশোর প্রশ্ন করলো,
“এত রাতে কোথা থেকে ফিরছেন?”
ফারিশের সোজা জবাব,“বউকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসলাম।”
ফারিশের কথায় কিশোর হাসলো। বললো,
“মজা করছেন?”
“এত রাতে আমি আপনার সাথে মজা করবো অফিসার সাহেব।”
কিশোর কিছুটা দ্বিধায় পড়লো। খানিকটা দ্বন্দ্ব নিয়ে বললো,
“কিন্তু আমি যতদূর জানি আপনি বিয়ে করেন নি। তাহলে?”
“ঠিকই জানেন। আমি সত্যি মজা করছিলাম।”
কিশোর থতমত খেল। নিজেকে সামলে শুঁকনো হাসলো। বললো,
“আপনি আসলেই একটা কনফিউশানে ঘেরা মানুষ।”
“আপনি যা মনে করেন। আমাকে একেক মানুষ একেক কিছু মনে করে। কেউ ভাই, কেউ মাফিয়া, কেউ বখাটে, কেউ ঔষধ কোম্পানির মালিক আরো কত কিছু কে জানে কিন্তু আসলে যে আমি কি তা কেউই জানে না।”
“তবে কি আপনি শিকার করছেন আপনি এগুলোর একটাও নন।”
“তা কখন বলেছি। ক্লিয়ার করে বলছি শুনুন আমি হলাম ফারিশ মাহমুদ। একজন ঔষধ কোম্পানির মালিক।”
কিশোর নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
“তবে আমি কিন্তু জানি আপনি একজন মাফিয়া। তাও দেশ বিরোধী মাফিয়া।”
ফারিশের মুখচুখ স্বাভাবিক। সে মটেও ঘাবড়ালো না। উল্টো শান্ত করেই জবাব দিলো,“আপনি যা মনে করেন। আপনার মনে করায় তো আমি মানুষটা বদলাচ্ছি না।”
কিশোর চুপ হয়ে গেল। অনেকক্ষণ পর আবার বললো,“আপনি কি জানেন আপনার পাওয়া সেই ট্রেকে মেয়েমানুষ ছিল যাদের কি না বাংলাদেশ থেকে ব্যাংককে পাচার করার কথা ছিল।”
ফারিশ এবারও শান্ত। দ্বিধাহীন উত্তর,“সত্যি কি মেয়েমানুষ ছিল আমি তো জানতাম না।”
ফারিশের গা ছাড়া ভাবটা একদমই সহ্য হচ্ছে না কিশোরের। তবুও নিজেকে শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালালো। সফলও হলো। এবার ফারিশ প্রশ্ন করলো,“আচ্ছা আমার ট্রেকে যে মেয়েমানুষ ছিল তা আপনি কি করে জানলেন?”
কিশোর নড়েচড়ে উঠলো। বললো,
“জেনেছি কোনো একভাবে। আপনাকে জানাতে চাচ্ছি না।”
“যাক ভালো। চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে একটা সত্যি কথা বলি। ফারিশ মেয়েমানুষ নিয়ে কিছু করে না। এই তথ্য আপনাকে যারা দিচ্ছে ভূয়া দিচ্ছে। হয়তো অন্যকেউ কাজটা করে আমাকে ফাঁসাচ্ছে। তাই শুধু শুধু আমার পিছনে পড়ে না থেকে সঠিক মানুষ খুঁজুন। আমি জানি গত পনের দিনে ঢাকার দশটা ভার্সিটির পনেরজন ছাত্রী নিখোঁজ। আপনি হয়তো এই বিষয়টায় আমার হাত আছে ভেবে আমার পিছনে পড়ে আছেন। পড়ে থাকুন আমার সমস্যা নেই। কারণ আমি যা করি না তাতে ধরা পড়ার মতো আমার বিন্দুমাত্র ভয় নেই। তাই এখনো সময় আছে আসল মানুষকে খুঁজুন। নয়তো পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। আপনার ওপর প্রেশার বাড়বে অফিসার সাহেব।”
কিশোর বিনিময়ে আর কিছু বললো না পুরো চুপ হয়ে বসে রইলো। ফারিশের শেষের কথাগুলো তার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। ছেলেটি কি সত্যিই, সত্য কথা বলছে। কিশোর বুঝতে পারছে না।’
—-
সূর্যের কিরণে ঝলমল করছে আদ্রিতার কক্ষ। গায়ে কম্বল জড়িয়ে আদ্রিতা ঘুমে বিভোর। আজ বৃহস্পতিবার। হাসপাতাল থেকে হাপ বেলার ছুটি নেয়া হয়েছে। এই ছুটিটা নেয়ার পিছনে একটা বিশাল কারণ আছে। কারণটা হলো মৃদুলের পাত্রী দেখতে যাওয়া। বেশ ঘটা করেই আজ মৃদুলকে নিয়ে পাত্রী পক্ষ দেখতে যাওয়া হবে। আদ্রিতারাও সঙ্গে যাবে। আদ্রিতার ফোন বাজলো। ঘুমটা ভেঙে গেল আচমকা। আদ্রিতা ফোনটা সাঁতরে নিয়ে ঘুমো ঘুমো কণ্ঠে বললো,“হ্যালো।”
অপরপাশের মানুষটি কিছু বললো না। আদ্রিতার চট করেই ঘুমটা চলে গেল। সে ফোনটা দেখলো আননোন নাম্বার। আদ্রিতা পুনরায় ফোনটা কানে নিয়ে বললো,
“কে বলছেন?”
এবার উত্তর আসলো,
“নাম না বললে কি কথা বলা যাবে না।”
তড়িৎ বুকটা কেঁপে উঠলো আদ্রিতার। বিস্ময়কর কণ্ঠে বললো,“মিস্টার বখাটে।”
ফারিশ চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো এবার। বললো,“আপনায় কতবার বলবো আমি বখাটে নই।”
আদ্রিতা মৃদু হেসে বললো,“জানি তো।”
ফারিশ তার ড্রয়িংরুমের সিঙ্গেল সোফায় বসলো। মৃদু হাসলো। বললো,
“একটা কথা বলবো ডাক্তার ম্যাডাম?”
“জি বলুন।”
সময় গড়ালো এক সেকেন্ড, দু’সেকেন্ড, চার সেকেন্ড ফারিশ কিছু বলছে না। আদ্রিতা দ্বিধায় পড়ে বললো,“আজও কি বলবেন না?”
ফারিশ বেশ আদুরে স্বরে বললো,
“কথাটা বললে কি কথাটা আপনি রাখবেন?”
“কথাটা রাখার মতো হলে আমি নিশ্চয়ই রাখবো।”
ফারিশ তাও দোনামনা করলো। ভিতর থেকে কথাটা বের করতে পারছে না। ফারিশ অনেকটা যুদ্ধ করে আবদার নিয়ে বললো,“আমাদের যতবার দেখা হবে ততবার কি আপনি আমায় রোজ দশ মিনিট করে জড়িয়ে ধরে রাখতে পারবেন ডাক্তার ম্যাডাম।”
ফারিশের কথা শুনে আদ্রিতার কেমন অনুভূতি হওয়া উচিত সে বুঝচ্ছে না। আদ্রিতার কথা আঁটকে গেল। নিশ্বাস হলো ভাড়ি। ফারিশ বললো,“কি হলো?”
আদ্রিতা জোরে নিশ্বাস ফেলে বললো,
“যদি না রাখি।”
“আমি কি আপনায় জোর করতে পারি।”
আদ্রিতা হেঁসে ফেলে কিছু বলে না। ফারিশও আর কিছু বললো না। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,“চলুন বিয়ে করে ফেলি।”
তড়িৎ চমকে উঠলো আদ্রিতা। হেঁসে হেঁসে বললো,“জোর খাটানোর ধান্দা।”
উচ্চ স্বরে হাসে ফারিশ। হাসির শব্দ মোবাইল থেকে আদ্রিতার কানেও গিয়ে বিঁধে। ফারিশ মাথা চুলকে বলে,“কিছুটা।”
আদ্রিতা মিষ্টি হেঁসে বলে,
“আপনি একটা পাগল।”
ফারিশ সিঙ্গেল সোফায় তার মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে,
“জানি তো।”
আবারও হাসলো আদ্রিতা। ফারিশ ফিস ফিস করে বললো,“আমাকে পাগল বানানোর অভিযোগে আমার বুকের মধ্যিখানে এক নিস্তব্ধ জেলখানায় আপনার শাস্তি হোক।”
আদ্রিতা কি বলবে বুঝছে না। সে চুপ করে রইলো।’
—-
পাত্রপক্ষ বেসে পাত্রীর বাড়িতে বসে আছে মৃদুল,আশরাফ,মুনমুন, চাঁদনী,আদ্রিতা আর রনি। মৃদুল খুব নার্ভাস। কিভাবে কি বলবে বুঝছে না। পাত্রী হলো মৃদুলের বাবার বন্ধুর মেয়ে। বেশ আসা যাওয়া মৃদুলের বাবার এখানে। তার মেয়ে পছন্দ। শুধু মৃদুল পছন্দ করলেই হয়ে যাবে বিয়েটা। মেয়ে একজন পুলিশ। মৃদুল বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে বললো,“দোস্তরা আমার কি খুব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে হবে। দুই একখান অশুদ্ধ কইলে সমস্যা আছে।”
মৃদুলের প্রশ্নে সবাই হেঁসে ফেলে। আদ্রিতা বলে,
“তোর যেমন ইচ্ছে তেমনই কথা বলবি।”
“আমার খুব নার্ভাস লাগছে মেয়েটা আমায় পছন্দ করবে তো।”
“এত প্যারা নিচ্ছিস কেন আমি আছি তো(রনি)
মৃদুল চোখ কুঁচকে বললো,“তুই আছিস মানে রনি ভুইলা যাস না মুন এইখানে আছে।”
রনি তাকালো মুনমুনের দিকে। মুনমুন চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চাঁদনী উঠে এগিয়ে গেল বাড়ির দরজার দিকে কারো আসার নাম গন্ধ নেই। অদ্ভুত তো ব্যাপারটা। আশরাফ চাঁদনীর কান্ডে মৃদুস্বরে বললো,“চাঁদ এদিকে আয়।”
চাঁদনী গেল। আশরাফের পাশে চুপটি করে বসলো। বললো, “ওনারা কেউ আসছে না কেন? পাত্রীর মা সেই কখন বলে গেল মেয়ে আসছে। কই এখনো দেখি না ক্যান?”
এমন সময় হাতে ট্রে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো এক বুড়ি মহিলা। গায়ে জড়ানো লাল ঢুকঢুকে শাড়ি, মাথায় সাদা চুল,চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। কোমড় নুইয়ে হাতে ট্রে নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে আসছে বুড়িটি। মৃদুল তাকে দেখেই শক্ত করে চেপে ধরলো আশরাফের হাত। থমথমে কণ্ঠে বললো,“দোস্ত এ আবার নীলিমা না তো।”
আশরাফ নিজেকে যথেষ্ট ধাতস্থ করে বললো,“না এই মেয়ে নীলিমা হবে কেন এ নিশ্চয়ই পাত্রীর দাদি-টাদি হবে।’
বুড়ি মহিলাটি এক হাত ঘোমটা টেনে লাজুক ভঙ্গিতে সামনের চেয়ারে বসলো। আদুরে স্বরে বললো,“কি কইবেন কন আমিই নীলিমা।”
সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সবাই থতমত খেল। মৃদুল বললো,“আমনে নীলিমা।”
বুড়িটির লাজুক কণ্ঠস্বর,“জে আমি নীলিমা। আমনের আব্বার বন্ধুর মাইয়া।”
সঙ্গে সঙ্গে কুপকাত মৃদুল। কারণ সে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েছে বিছানায়। উপস্থিতি সবাই মৃদুলের কান্ডে হতভম্ব হয়ে গেল।’
#চলবে….
#TanjiL_Mim♥️