এক আকাশ দূরত্ব পর্ব-২৫

0
476

#এক_আকাশ_দূরত্ব (২৫)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

– “আমার ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলে তুমি!”

নাজিয়া পেছন ফিরে বলল,
– “আসলে কি বলুন তো, আপনার মতো মানুষ কাউকে সত্যিকারের ভালবাসতে পারে এই বিষয়টা আমাদের মাথাতেই আসেনি। আপনাকে আপনার পথে মাত দেবার জন্যই এই পথ অবলম্বন করতে হয়েছে।”

হাসিব মলিন হাসল। তারপর বলল,
– “অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি আমি তোমাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার কারনে নিজেকে বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু দ্যাখো তার আর কোনো প্রয়োজন পড়বে না।”

নাজিয়া হাসিবের মুখের দিকে তাকাল, ছেলেটার মুখে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মনের ব্যথাগুলো। হয়তো সত্যি নাজিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছে। নাজিয়া পুনরায় চেয়ারে বসল, তারপর হাসিবের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলতে শুরু করল,

– “জানেন ভালোবাসা মানে কি? ভালোবাসা হলো এমন একটা অনুভুতি যেটা না চাইতেও হয়ে যায়, হাজার বারন সত্ত্বেও আমাদের মনে অন্য মানুষের বসবাস হয়ে যায়। কাউকে ভালোবাসার প্রথমদিনের অনুভূতি’গুলো বড্ড সুন্দর, কিন্তু দিন যত আগিয়ে যায় অনুভুতি গুলো নানান কারনে বিষাক্ত হতে শুরু করে। কখনো হয় আমরা যাকে ভালোবাসি সে আমাদের ভালোবাসে না। আবার দুজন দুজনকে ভালোবাসলে পরিবারের মত থাকে না, মানে সমস্যা একটা না একটা লেগেই থাকে। ভালোবাসলে স্বার্থপর হলে চলে না, ভালোবাসতে জানলে ত্যাগ করতেও জানতে হয়। ভালোবাসা মানে অপর মানুষটিকে সুখী দেখা, তাকে ভালো থাকতে দেখা।”

হাসিব আহত গলায় বলল,
– “ভালোবেসে আমিও বদলে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি সেই সুযোগটা দিলে না।”
– “বাহ্ এই আপনার ভালোবাসা!”
– “মানে?”
– “আমাকে ভালোবেসে বদলে যেতে চেয়েছিলেন, আর আমাকে পাননি বলে বদলাবেন না খারাপ মানুষটাই থাকবেন! তাহলে আমাকে ভালোবাসলেন কোথায়?”

হাসিবের চোখে মুখে কৌতুহল। নাজিয়া কি বলতে চাইছে?

– “আপনি যদি আমাকে সত্যি ভালোবেসে থাকেন তাহলে একজন সৎ মানুষ হয়ে দেখান।অন্যের চোখের পানিতে কখনোই সুখী হওয়া যায় না।”

হাসিব মৃদু হেসে বলল,
– “তাহলে তো তুমিও কখনো সুখী হতে পারবে না।”
– “অভিশাপ দিচ্ছেন?”
– “না তোমার কথার প্রেক্ষিতেই বলছি।”

নাজিয়া মৃদু হাসল। আবরারকে পাবার লড়াইটা কম ছিল না, নিয়তির জোরে দুজন এক হয়ে হয়েছে আর সুখেও আছে। বিধাতা ছাড়া ওদের আলাদা করবে কে!

নাজিয়ার মুখে হাসি দেখে হাসিবের কৌতুহল আরো বেড়ে গেল।

– “তুমি হাসছ কেন?”
– “ভাগ্যের কথা ভেবে।ভাগ্যে‌ থাকলে কি না হয়, যেমন আমাকেই দেখুন না যার কাছে নিজের ভালোবাসার করব না বলে ৫বছর নিজের পরিবার পরিজন ছেড়ে হোস্টেলে গিয়ে থাকলাম শেষে ভাগ্যও তার সাথেই জড়িয়ে গেল।”
– “বুঝলাম না।”
– “কি গল্প অজানাই থাকুক, কখনো যদি দেখা হয় তখন না হয় আমাদের “এক আকাশ দূরত্ব” এর গল্পটা আপনাকে বলব। আজ আসি, ভালো থাকবেন আর পারলে ভালো মানুষ হয়ে উঠুন।”

নাজিয়া আর পেছন ফিরে তাকাল না। হাসিব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, মনে মনে খুব করে চাইছিল নাজিয়া একটাবার পেছনে ফিরে তাকাক কিন্তু সেটা হয়নি। নাজিয়ার কোনো পিছুটান নেয় তাই ফিরে তাকানোর কথাও আসছে না।

****

মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। সবকিছু এখন স্বাভাবিক ভাবেই চলছে, সবাই ভালোই আছে।আবির,আবরার নাজিয়া নিজেদের বাড়ি ফিরে এসেছে। আল ওইদিকে, শ্রেয়া আর শান্তর বিয়ের কথা চলছে। একটা নির্দিষ্ট দিনে শান্তর পরিবার শ্রেয়াকে দেখতে যাবার সিদ্ধান্ত হয়েছে।সেটা নিয়ে শান্ত আবরারকে খুঁচিয়ে চলেছে।

আবরার প্রানকে নিয়ে দুষ্টুমি করছিল, আর নাজিয়া পাশে বসে ওদের কান্ড দেখছে। তখনি আবরারের ফোন বেজে উঠল।

– “কে ফোন করেছে দ্যাখো তো।”

নাজিয়া ফোনটা নিয়ে দেখল শান্তর নম্বর।

– “শান্ত’দা।”
– “ফোনটা রিসিভ করে স্পিকারে দাও।”

ফোনটা রিসিভ করে স্পিকারে দিতেই ওপাশ থেকে শান্তর গলা ভেসে আসলো।

– “হ্যালো ভাই।”

আবরার শয়তানি করে বলল,
– “এটা কোনো ভাইয়ের নম্বর না। আপনি কোন ভাই’কে খুঁজছেন?”
– “এই শালা শয়তানি বন্ধ করবি।”

আবরার ফিসফিস করে বলল,
– “এতদিনে ঠিক সম্বোধন করেছিস।‌ সাব্বাস।”
– “এই বলছিস? শুনতে পাচ্ছি না তো।”
– “কিছু না তুই বল।”
– “ভাই আমার খুব টেনশান হচ্ছে। কাল কি হবে?”

আগামীকাল শ্রেয়াকে দেখতে যাবার কথা, সেটা নিয়ে প্রচন্ড টেনশনে আছে শান্ত। শ্রেয়ার বাবা যদি বেঁকে বসে তো!

– “কি আর হবে? যাবি খাবি কথা বলবি।”
– “আমার খুব টেনশান হচ্ছে কিন্তু।”
– “এত টেনশান করার কি আছে? কিছু হবে না।”
– “ওই হিটলার যদি না মানে তো।”

হিটলার! সেইটা আবার‌ কে? আবরার বুঝতে না পেরে বলল,
– “এই হিটলার’টা কে?”
– “ওই শ্রেয়ার বাপ। যন্ত্রর পিস মাইরি, মেয়ের রিলেশন আছে জানার পরেও বোনপোর সাথে বিয়ে দিতে চাইছিল।”

ওদের কথা শুনে নাজিয়া মুখ চেপে হাসছে। শান্ত এখনো আবরার আর শ্রেয়ার সম্পর্কের কথা জানেনা, ওরা সারপ্রাইজ দেবে বলে বলেনি। আবরার শান্তকে ইচ্ছা করে খোঁচা দিয়ে বলল,
– “তাহলে বিয়ে ভাঙল কিভাবে?”
– “শ্রেয়ার ফুপাতো ভাই অন্য একজনকে পছন্দ করত শেষে তার সাথেই বিয়ে হয়। ভাগ্যিস তার অন্য কেউ ছিল নাহলে আমি বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যেতাম।”
– “বিধবা!! ছেলেরা আবার বিধবা হয় নাকি?”
– “ঐই বাদ দে এইসব টপিক। আসল কথাতে আসি।”
– “বলুন দুলাভাই।”

শান্ত কপাল কুঁচকে বলল,
– “কে দুলাভাই? কার দুলাভাই?”
– “আরে তুই একটু আগে শালা বললি তাই বললাম।”
– “ওহ সেটাই বল। আচ্ছা শোন কাল তুই আমার সাথে শ্রেয়াদের বাড়ি যাবি।”
– “পাগল নাকি ভাই, আমি কি করতে যাবো।”
– “আরে তুই গেলে আমি একটু সাহস পাবো, প্লিজ চল না।”

আবরার নাজিয়ার দিকে তাকাল, নাজিয়া হ্যাঁ বলতে বলে। কিন্তু আবরারের মাথাতে তো অন্যকিছু ঘুরে চলেছে,তাই সে বলল,
– “যেতে পারি তবে কী দিবি বল।”
– “আমার বউ বাদে যা চাইবি তাই দেব। প্লিজ চল।”

আবরার হেসে উঠল, ওর জীবনে এই সময় গুলো আসেনি কিন্তু তবুও শান্তর এক্সসাইটেড দেখে বুঝতে পারছে ভালোবাসার মানুষটিকে পরিবার নিয়ে দেখতে যাবার অনুভূতি কেমন হয়।

পরেরদিন, যথাসময়ে আবরার, শান্ত ও শান্তর পরিবার শ্রেয়ার বাড়িতে উপস্থিত হলো। শান্ত প্রচন্ড নার্ভাস, সেটা নিয়ে আবরার মজা নিয়ে চলেছে। শান্ত আবরারের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে বলল,
– “তোর কপাল ভালো তোর বিয়ে হয়ে গেছে,আর বিয়ের সময়ে আমি ছিলাম না। নাহলে আমার সাথে মজা করার শখ তোর মিটিয়ে দিতাম।”

আবরার হেঁসে উঠল, সেটা দেখে শান্ত ও ওর পরিবার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। শান্ত আবরারকে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
– “এই তুই কি করছিস, আমার বিয়ে ভাঙবি নাকি?”
– “আরে চিল…

আবরার কথাটা শেষ করে শিষ বাজাতে বাজাতে ভেতরে চলে গেল। শান্ত আর ওর পরিবার হতভম্বের মতো তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে, আসলে হচ্ছেটা কি!

#চলবে….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে