#এক_আকাশ_দূরত্ব (২৪)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
শ্রেয়া মৃদু হেসে বলল,
– “এই বছরটা আমাকে অনেককিছুই দিয়েছে। এমনকি আংশিক মৃ’ত্যুর স্বাদটাও পেয়েছি, এখন মনে হচ্ছে সেইদিন ম’রে গেলেই ভালো….
কথাটা শেষ করার আগেই শ্রেয়ার গালে থাপ্পর পড়ল। শ্রেয়া ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল, আর শান্ত! নিজের ভালোবাসার মানুষটির মৃ’ত্যু কামনা কি কেউ করতে পারে! না সহ্য করতে পারে! শান্তও পারল না। বসা থেকে উঠে গিয়ে শ্রেয়াকে আগলে নিল, শ্রেয়াও শান্তর কোমড় জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল। অভিমানের কারনে সম্পর্কটা কিরকম ফিকে হয়ে গিয়েছিল।
– “মরার কথা বললে, ঠাটিয়ে গাল লাল করে দেব। তোমাকে মরতে দেব বলে কি এতকিছু করলাম।”
শ্রেয়া ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
– “তো কি করব! তুমি তো আমার উপরে অভিমান করে কথায় বলছিলে না।”
– “অভিমান করাটা কি স্বাভাবিক না।”
শ্রেয়া কিছু না বলে চুপ করে রইল। শান্ত মলিন কন্ঠে বলল,
– “জানো তোমার এড়িয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে ব্লক দেওয়া আমাকে ঠিক কতটা মানসিক অশান্তিতে রেখেছিল। প্রতিটা মুহূর্তে নিজের সাথে লড়াই করে চলেছিলাম, একটা কথা খুব করে বুঝেছিলাম তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। তোমাকে পাগলের মতো খুঁজে চলেছিলাম, যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারিনি। যখন তোমার সত্যিগুলো জানতে পারলাম তখন তোমার উপরে বড্ড অভিমান হলো, তুমি যদি একটাবার আমাকে সবটা খুলে বলতে তাহলে এতকিছু সহ্য করতে হতো না।”
– “সরি। আসলে সেই পরিস্থিতিতে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল সেইটা বিচার করার ক্ষমতা আমার ছিল না।প্লিজ একটা শেষ সুযোগ দাও, কথা দিচ্ছি আর কখনো এইরকম করব না।”
– “আর সুযোগই দেব না এইরকম করার।”
শ্রেয়ার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তাহলে কি শান্ত ওকে মাফ করবে না!
– “বলো বাড়িতে কবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো।”
শ্রেয়া চমকে উঠে শান্তর মুখের দিকে তাকায়, শান্তর মুখে হাসি। শ্রেয়া বলল,
– “সত্যি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে!”
– “হুম।”
শ্রেয়া নিজের প্রান ফিরে পেল। যাক অবশেষে শান্তর অভিমান ভাঙাতে পেরেছে এইটাই অনেককিছু।
***
আবরার আবিরকে খোঁচা দিয়ে বলল,
– “এই দাদা ওইদিকে কি হচ্ছে বল তো!”
– “আমি কিভাবে বলব! তুই যেখানে আমিও সেইখানেই আছি।”
– “আমার কিন্তু অনেক টেনশন হচ্ছে। ওই হাসিবকে নাজিয়া কিভাবে হ্যান্ডেল করবে কে জানে।”
– “টেনশান করিস না, নাজু ঠিক সামলে নেবে। তবে সামনে আমাদের কিন্তু অনেক কাজ।”
আবিরের কথার অর্থ আবরার বুঝল না। কাজ! কি কাজ? আবরার আবিরকে জিজ্ঞেস করল,
– “কি কাজ?”
– “আরে শান্ত আর শ্রেয়ার বিয়ে লাগবে, আর আমরা ওর বড়োদাদা তার জন্য আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে না।”
– “হ্যাঁ সেটা তো বটেই। আমরা আমাদের বোনের বিয়ে ধুমধাম করে দেব, তবে শান্তর অভিমান এত সহজে ভাঙলে হয়।”
– “নারীর ভালোবাসার কাছে পুরুষের অভিমান ভাঙতে বাধ্য। শ্রেয়া ঠিক শান্তকে মানিয়ে নেবে তুই এত টেনশান নিস না।”
– “হু।”
—-
নাজিয়া আর হাসিব দুজন দুজনের মুখোমুখি বসে আছে। হাসিব নাজিয়াকে দেখতে ব্যস্ত, আজ ওকে অন্যরকম লাগছে। চোখে চশমা নেয়, সাজটাও অনেকটাই আলাদা যেন এক অন্য নাজিয়া ওর সামনে বসে আছে। অন্যদিকে নাজিয়া উশখুশ করছে, সত্যিটা আজকে ক্লিয়ার করতেই হবে কিন্তু তারপর হাসিব কি রিয়াক্ট করবে সেটাই বুঝতে পারছে না।
– “কি নাজিয়া চুপ করে আছো কেন? কি বলবে বলছিলে।”
– “আসলে।”
– “আচ্ছা তোমারটা পড়ে শুনব, তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে।”
– “কি নিউজ।”
– “আমি মাকে তোমার কথা বলছিলাম, মা বলেছে তোমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে।”
হাসিবের কথা শুনে নাজিয়ার চোখ চড়কগাছ। সর্বনাশ! এই ছেলে তো দেখি বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছে। না আজ যে করেই হোক সত্যিটা বলতেই হবে।
হাসিব নাজিয়াকে বলল,
– “তুমি তোমার বাড়ির ঠিকানা’টা দাও।”
– “তার আর কোনো দরকার নেয়।”
– “কেন?”
– “আপনার আর আমার বিয়ে হওয়া পসিবল না।”
হাসিবের কপালে ভাঁজ পড়ল। নাজিয়ার কথার অর্থ কিছুই বুঝতে পারছে না, মেয়েটা কি সব বলছে!
– “কেন? কি সমস্যা।”
– “কারন আমি বিবাহিত।”
– “হোয়াট?”
– “হ্যাঁ আমি বিবাহিত আর আমার একটা ছেলেও আছে।”
হাসিব বিরক্ত হয়ে বলল,
– “নাজিয়া ফাজলামি বন্ধ করো, এইসব মজা আমার একদম পছন্দ না।”
নাজিয়া সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
– “আপনার সাথে আমি কোনো মজা করছি না। সত্যিটা বললাম।”
হাসিব এখনো নাজিয়ার কথা বিশ্বাস করেনি, ওহ ভাবছে নাজিয়া ওর সাথে প্রাঙ্ক করছে। তাই সিরিয়াস না হয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
– “ওকে। এটাই যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে তুমি নিজের স্বামী সন্তান ছেড়ে আমার সাথে রিলেশনে গিয়েছ কেন?”
নাজিয়া কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর বলল,
– “আপনাকে শাস্তি দেবার জন্য।”
এইবার হাসিবের কপালে ভাঁজ পড়ল। নাজিয়া কোন শাস্তির কথা বলছে! বিষয়টা কেন যেন হাসিবের কাছে আর মজা লাগল না, এইবার মনে হলো নাজিয়া সত্যি বলছে। তাই জিজ্ঞেস করল,
– “কিসের শাস্তি! কি অন্যায় করেছি আমি?”
নাজিয়া তাচ্ছিল্যের হেসে বলল,
– “একটা মেয়ের প্রাইভেট ভিডিও করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার পরেও বলছেন কি অন্যায় করেছি!”
হাসিব চমকে উঠল। নাজিয়া বিষয়টা জানল কিভাবে? আমতা আমতা করে বলল,
– “কি সব বলছ তুমি? এইসব তু-মি কিভাবে জানলে?”
– “কেন অবাক হচ্ছেন আমি কিভাবে জানলাম? শুধুমাত্র আপনার জন্য শ্রেয়া’দি সুই-সাইড করতে গিয়েছিল। আর একটু দেরি হয়ে গেলে, মানুষটাকে আর বাঁচানো যেত না।”
হাসিব মাথা নিচু করে নিল। প্রথমদিকে নিজের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও নাজিয়ার সাথে পরিচয় হবার পর নিজের অতীতের কাজগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছিল না। মনের মধ্যে একটা অপরাধবোধ জেগে উঠছিল, মনে হচ্ছিল অন্যায় করেছে। তার জন্য শ্রেয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ফোনও করেছিল কিন্তু শ্রেয়াকে ফোনে পায়নি। কাল যখন নিজে থেকে শ্রেয়া এসেছিল তখন সবকিছু মিটিয়ে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চেয়েছিল কিন্তু কি হলো?
নাজিয়া হাসিবের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
– “আপনার সাথে আমার পার্সোনাল কোনো শত্রুতা নেই। শুধুমাত্র শ্রেয়া’দির ভিডিওটা ডিলিট করার জন্য আমি আপনার ক্লোজড হতে বাধ্য হয়েছি। এটা সত্যি আমি বিবাহিত, আর আমি আমার স্বামীকে খুব ভালোবাসি। আজকের পর আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না প্লিজ।”
হাসিব এইবার অধৈর্য হয়ে উঠল,
– “হ্যাঁ আমি মানছি আমি শ্রেয়ার সাথে অন্যায় করেছি কিন্তু তোমাকে আমি ভালোবাসি এই আমার জীবনের চরম সত্যি। প্লিজ নাজিয়া আমাকে এইভাবে ফেলে চলে যেও না।”
– “মাফ করবেন সেটা সম্ভব না। আমি আপনার জন্য আমার নিজের মানুষটাকে ঠকাতে পারব না। দোয়া করব, আপনার জীবনে সঠিক মানুষটার আগমন ঘটুক। ভালো থাকবেন।”
নাজিয়া বসা থেকে উঠে চলে যেতে যাবে তখনি হাসিবের একটা কথায় থমকে দাঁড়াল।
#চলবে
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।