এক আকাশ দূরত্ব পর্ব-২০

0
498

#এক_আকাশ_দূরত্ব (২০)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

“এখন শ্রেয়া যদি নিজের মুখে সবটা বলে আর তোকে বিয়ে করতে চায় তো?”

শান্ত কোনো উত্তর দিল না দেখে আবরার বুঝল অভিমানের পাল্লাটা অনেকটাই ভারি হয়ে গেছে। যেটা ভাঙতে শ্রেয়াকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে।

– “অভিমান করেছিস ভালো কথা, তবে দেখিস অভিমানের পাল্লাটা এতটাও ভারি করে ফেলিস না যাতে ভালোবাসার মানুষটি হারিয়ে যায়।”

শান্ত তাচ্ছিল্যের হেসে বলল,
– “যে যাবার সে তো যাবেই, জোর করে কি কাউকে আগলে রাখা যায়! আর যে থাকার সে ঠিকই থাকবে।”
– “উঁহু ভুল বললি, কখনো-সখনো পরিস্থিতির শিকার হয়ে মানুষ অনেক বড়ো‌ সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। পরিস্থিতির কাছে হার মেনে ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে দেয়, দোষ না করেও দোষী হতে হয় সমাজ এবং ভালোবাসার মানুষটির কাছে। তাই বলব, যেটা করবি ঠান্ডা মাথাতে ভেবে করবি। ভুল করা খুব সহজ কিন্তু ভুলটা শুধরে নেওয়া খুব কঠিন।”

২দিন‌ পর,
আজ‌ আবারো সবাই একত্রিত হয়েছে। আবির আবরার শান্তর জন্য অপেক্ষা করছে। শান্ত কিছু কথা বলার জন্য আবিরকে ডেকে পাঠিয়েছে, সাথে আবরারকেও বলেছে‌ আসার জন্য। নাজিয়া ইচ্ছাকৃতভাবেই আসেনি, হয়তো নাজিয়া থাকলে শান্ত কথা বলতে দ্বিধা করতে পারে তাই ওরা একা যাওয়াটাই শ্রেয়।

– “সরি ফর লেট।”

শান্ত তড়িঘড়ি চেয়ারে বসতে বসতে বলল। আবির, আবরার দুজন ওর দিকে তাকাল শান্ত ঘামছে, দেখে মনে হচ্ছে তাড়াহুড়ো করে এসেছে।

– “পানি খা একটু।”
– “হু।”

শান্ত পানিটা খেয়ে কিছুটা দম নিল। তারপর আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “ভাবি আসেনি?”
– “নাহ্। কেন?”
– “ভাবিকে আমার একটা হেল্প করতে হবে।”
– “কি হেল্প?”

শান্ত আবির আবরারকে সবটা বুঝিয়ে বলল। আবির সবটা শুনে চিন্তিত গলায় বলল,
– “বিষয়টা একটু বেশি রিস্ক হয়ে যাচ্ছে না?”
– “একটু তো রিস্ক আছেই, দ্যাখ আবরার আমি আমার প্ল্যান বলেছি এখন সিদ্ধান্ত তোর আর ভাবির।”

আবরার আবিরের দিকে তাকাল, আবির চোখের ইশারায় বোঝাল শান্ত মাথায় চিন্তা করার জন্য।

শান্ত আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিস।”

আবরার কিছু না বলে নাজিয়ার নম্বরে কল লাগাল।

– “হ্যালো।”
– “হ্যাঁ বলো।”
– “কোথায় আছো তুমি?”
– “এই তো প্রানকে নিয়ে ঘরেই আছি।”
– “আশেপাশে কেউ আছে?”
– “নাহ্ বলো।”

আবরার নাজিয়াকে কিছু একটা বলল, নাজিয়া কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল,
– “আমি রাজি, আমার কোনো আপত্তি নেই।”
– “ওকে।”

আবরার কলটা কেটে শান্ত’র দিকে তাকিয়ে বলল,
– “নাজিয়া রাজি। তুই প্ল্যান সাজা…

***

একটা বড়ো অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নাজিয়া। এই অফিসে জবের জন্য এসেছে। রিসেপশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “ইন্টারভিউ’টা কোথায় হচ্ছে?”
– “সামনে গিয়ে ডানদিকে।”

নাজিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে গেল, বড্ড টেনশন হচ্ছে যেভাবেই হোক চাকরিটা ওকে পেতেই হবে।অনেকেই জবের জন্য এসেছে, নাজিয়া একপলক সবার দিকে তাকাল। এত জনের মধ্যে চাকরিটা কি আদৌও পাবে!

একে একে নাজিয়ার পালা আসল। নাজিয়া নিজের চোখের চশমাটা পেছনের দিকে ঠেলে কেবিনের দরজায় নক করল,
– “মে আই কাম ইন স্যার।”
– “ইয়েস…

নাজিয়া দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল, ভেতরে তিনজন ছেলে বসে আছে। সবাই নাজিয়ার দিকে নজর দিল, পরনে সাধারন থ্রি-পিস, চোখে চশমা সব মিলিয়ে সাধারন একটা মেয়ে।

নাজিয়া নিজের ডকুমেন্টস জমা দিল, ওর নম্বর ভালোই ছিল। তিনজনের মধ্যে একজন বলল,
– “আপনার নম্বর তো ভালোই কিন্তু আপনার মাঝে অনেককিছুর কমতি আছে। আপনি নিশ্চয় জানেন স্মার্টনেস একটা জবের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”
– “জ্বি স্যার। স্যার চাকরিটা আমার খুব দরকার, প্লিজ আপনারা একটু দেখুন। আর আমাকে একটু সময় দিলে আমি সবকিছু শিখে নেব।”

তিনজন নিজেদের মধ্যে কিছু একটা আলোচনা করলেন। তারপর একজন বললেন,
– “আপনি একটু বাইরে গিয়ে বসুন, আমরা জানাচ্ছি আপনাকে।”

নাজিয়া ঘাড় নাড়িয়ে বাইরে চলে গেল। তিনজন লোক নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল,

– “মেয়েটার রেজাল্ট ভালোই আছে, রাখা যেতে পারে।”
– “কিন্তু মেয়েটা স্মার্ট না, আর আগে চাকরির কোনো অভিজ্ঞতা নেয়। এইরকম মেয়েকে কি নেওয়া ঠিক হবে? হাসিব তুই কি বলিস?”
– “আমার কাছে তো মেয়েটাকে ভালোই লেগেছে।না মানে বলছিলাম, তিনমাসের জন্য মেয়েটাকে রেখে দাও। তিনমাস পর পারফরমেন্স দেখে চাকরি ফাইনাল করবে।”
– “এটা খারাপ বলিস নি।তবে সেটাই হোক।”

নাজিয়াকে ডেকে সবটা জানিয়ে দেওয়া হয়।

– “তিনমাস মন দিয়ে কাজ করো, এই তিন মাসের কাজের উপরেই তোমার চাকরি নির্ভর করছে।”
– “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।”

তিনজন স্যার নাজিয়ার সাথে হ্যান্ডশেক করে চলে গেল। তারা নাজিয়া’কে জানায় কাল থেকেই ওর জয়েনিং।

——

পরেরদিন, সঠিক সময়ে নাজিয়া অফিসে উপস্থিত হয়। একজন মেয়ের সাথে ওর ভালোই পরিচয় হয়, মেয়েটার নাম শম্পা অনেকদিন যাবত এই অফিসেই কাজ করছে।

– “আচ্ছা এই অফিসের এমডি কে?”
– “এমডি তো হাসিব স্যার।”
– “ওহ।”

আরো কিছু টুকটাক কথা আলোচনা হতে থাকল, নাজিয়া অফিসের মোটামুটি সবার সম্পর্কে জানতে পেরেছে শম্পার কাছ থেকে। হাসিব স্যার কেবিনে আসার কিছুক্ষণ পর, একজন মোটামতো লোক দেখে মনে হচ্ছে পিওন টাইপের কিছু একটা কাজ করে। সে এসে বলল,
– “নাজিয়া’কে স্যার নিজের কেবিনে যেতে বলল।”

শম্পা নাজিয়াকে বলল,
– “যাও স্যার ডাকছে।”
– “হুম।”

নাজিয়া নিজের চশমাটা ঠিক করে পড়ে কেবিনের দরজায় টোকা মারল। হাসিব অফিসের মেইল চেক করছিল, দরজায় টোকা মারার শব্দে ভেতরে আসতে বলল।

– “স্যার আমাকে ডেকেছিলেন?”

হাসিব নাজিয়াকে একনজর পুরো পর্যবেক্ষন করে বলল,
– “হ্যাঁ, বসো।”

নাজিয়া হাসিবের সামনে‌ বসতেই হাসিব মিষ্টি হেসে বলল,
– “আজকে তো প্রথমদিন তো কেমন লাগছে?”
– “খুব ভালো স্যার। আমি তো কাজ নিয়ে খুব এক্সসাইটেড।”
– “আই হোপ তুমি পারবে।”
– “নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব স্যার।”
– “ইয়েস, এই স্পিডটাই তো দেখতে চায়।”

কিছুক্ষন কথা বলার পর হাসিব ম্যানেজারকে ডেকে বলল,
– “নাজিয়াকে নিজের কাজগুলো বুঝিয়ে দাও। আর নাজিয়া বেস্ট অফ লাক।”
– “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।”

—–

সময় পানির মতো এগিয়ে চলেছে, আজ নাজিয়ার অফিসে জয়েনিং এর ১মাস পূর্ণ হলো। নাজিয়া পুরোদমে নিজের বেস্টটা দেবার চেষ্টা করে চলেছে, আর কিছুটা সফলও হয়েছে। হাসিবের সাথেও একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সবকিছু মিলিয়ে নাজিয়ার জীবন ভালোই কাটছে।

নাজিয়া রোজকার মতো অফিসে গিয়ে নিজের ডেস্কে আসতেই শম্পা বলল,
– “কি নাজিয়া কি খবর।”
– “এই তো সবকিছু আলহামদুলিল্লাহ, তোমার।”
– “আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। স্যারের সাথে দেখলাম ভালোই ভাব হয়েছে।”

নাজিয়া কিছুটা লজ্জা পাবার ভান করে বলল,
– “ওই আর কি।”
– “থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।‌ লেগে থাকো, হয়ে যেতেও পারে।”
– “আরে দূর তুমি কি বলো না।”

শম্পা হেসে দিয়ে বলল,
– “বুঝি বুঝি সব বুঝি গো।”

নাজিয়া কথার টপিক অন্যদিকে নিয়ে যাবার জন্য বলল,
– “শম্পা’দি হাসিব স্যারের পার্সোনাল পি.এ নেয় কেন?”

শম্পার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কিছুটা মনখারাপ করে বলে,
– “তুমি জয়েন করার ১মাস আগে পর্যন্ত একজন মেয়ে ছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই মেয়েটা চাকরি ছেড়ে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।
– “নাম কি মেয়েটার?”
– “শ্রেয়া।”

#চলবে…

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে