একদিন তুমিও ভালোবাসবে পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
2347

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~১৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৩১.
‘সকাল থেকে জলপট্টি দেওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। জ্বরটা অনেকটা কমে গেছে। আমি তো বলেছিলাম ওনাকে রেস্ট নিতে তাহলে?’

ডাক্তারবাবুর করা প্রশ্নে আমি আমতা আমতা করে উত্তর দিলাম,

‘আ..আসলে উনি একটু বেরিয়ে ছিলেন।’

‘এই অবস্থায়?’

‘হ..হ্যাঁ। নিজেই ড্রাইভ করেছেন ওই অবস্থায় আর রোদের মধ্যে অনেকটা হাঁটাও হয়েছে।’

আমি কথাটা বলেই মাথা নিচু করে নিলাম। ডাক্তারবাবুর দিকে তাকিয়ে কথা বলা অসম্ভব কারণ উনি যে রাগ করেছেন তা বোঝাই যাচ্ছে। উনি ওনাদের ফ্যামিলি ডক্টর! রাগ করাটা স্বাভাবিক।

‘আমার আর কিছু বলার নেই। জাস্ট কিচ্ছু বলার নেই। আদিকে বারবার বলেছিলাম বেরোতে না এই অবস্থায়। ওরকম বাজে ভাবে একসিডেন্ট করেছে তারপর এভাবে…ভাবা যাচ্ছে না। ও নিজেকে নিয়ে ভাবে না জানতাম বাট এতটা কেয়ারলেস? কি এমন কাজ ছিল কে জানে?’

‘আদিত্যদার আর জ্বর আসবে না তো?’

কোয়েলের প্রশ্নে উনি কোয়েলের দিকে বড়ো বড়ো করে তাকালেন। কোয়েল অসহায় ভাবে ওনার দিকে তাকালে উনি উত্তর দেন,

‘রাতের দিকে আসতেই পারে। ব্যাথা থেকে জ্বর আসছে, ব্যাথা যতদিন থাকবে ততদিন আসতেই পারে। এইবারও যদি রেস্ট না নিয়ে বেরিয়ে যায় আমি আর আসবো না ওকে দেখতে। কোনোসময় কাওর কথা শোনেনা। চললাম আমি।’

ডাক্তারবাবু চলে গেলে কোয়েলও ওনার পিছু পিছু যায়। হরি কাকা আমায় বলেন,

‘ডাক্তারবাবু আদি বাবাকে নিজের ছেলের মতন ভালোবাসে। ওনার তো নিজের কোনো সন্তান নেই তাই। ছোটো থেকেই আদি বাবা একটু বদমেজাজি।’

‘একটু?’

আমি প্রশ্নটা করতেই হরি কাকা হাসলেন। আমিও হাসলাম। তারপর উনি আবার বললেন,

‘আদি বাবা কখনই কাওর কথা শুনে চলতে পছন্দ করেন না। শুধু কর্তামার কথা একটু যা শুনতেন। কর্তা বাবার কথার তো ভীষণ অবাধ্য ছিলেন কিন্তু তারপরেও কর্তা বাবা আদি বাবাকে ভীষণ ভালোবাসেন। আসলে, আদি বাবা কখনও অন্যায় করেননি তাই হয়তো অতো বেশি বকাবকি আদি বাবাকে করতেন না কিন্তু এই ডাক্তারবাবুই একমাত্র মানুষ যে আদি বাবাকে বকাবকি করতেন। আদি বাবা খেলতে গিয়ে কতবার হাত-পা ভেঙেছেন তার ঠিক নেই। তারপর নাচের কারণেও পায়ে চোট পেয়েছেন আর রইলো বাকি একসিডেন্ট..এটা নিয়ে না বলাই ভালো।’

‘উনি কি আগেও এমন করেছেন? যার জন্য ডাক্তারবাবু এতো রেগে গেলেন?’

‘তা আর বলতে? আদি বাবা রেগে গেলে কাওর কথা শোনেন না, একা থাকতে পছন্দ করেন তাই সবার থেকে দূরে থাকেন। প্রথমবার একসিডেন্ট করার পর কর্তা মা আর কোনোদিন আদি বাবাকে বাইরে যেতে দেননি রাগ হলে। এইখানে আসার পর প্রত্যেকদিন কর্তা মা ফোন করে আমার থেকে খোঁজ নেন যে আদি বাবা কোনো কারণে রাগ করেনি তো? কালকেও করে ছিলেন।’

‘কি বললেন আপনি?’

‘মিথ্যে বলেছি। আদি বাবা বারণ করেছিলেন কিছু বলতে। আদি বাবা কর্তা মার সাথে কথা বলার পরেই গিয়ে ঘুমিয়েছেন। আচ্ছা বউমা, আদি বাবা রেগে কেন ছিলেন?’

হরি কাকার প্রশ্নে আমি আদিত্যের দিকে তাকালাম। মনে পড়ে গেলো সেই দৃশ্যটা যখন অঙ্কিত আমাকে ওনার কাছ থেকে টেনে এনেছিলো। আমি হরি কাকা কে মাথা নিচু করে বললাম,

‘আমি জানি না।’

‘ও, আসলে আদি বাবার রাগটা মারাত্মক। কিন্তু ও সব বিষয়ে রাগ করে না। নিজের লোকের বিষয়ে হলেই এতটা রাগ করে। আগে যতবার রাগ করেছে কর্তা বাবার উপর। কর্তা বাবা চাইছিলেন আদি বাবা জানো ওনার সাথে ওনার ব্যবসায় সাহায্য করে আর আদি বাবা নিজের পড়াশোনা করে নিজে কিছু করবে বলে ঠিক করেছিলো, এই নিয়েই সেই রাগারাগি কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে। সেটাই প্রথমবার, খুব বাজে ভাবে একসিডেন্ট হয়েছিলো।’

‘তারপর? তারপর আর এমন কিছু হয়নি?’

‘হতো যদি কর্তা মা না আটকাতেন। ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে এই যা। আমি ভাবছি, কি নিয়ে এতো রাগ করলেন? কোয়েল মা কে নিয়ে কিছু কি?’

হরি কাকার শেষ কথাটা উনি খুব আসতে বললেও আমি শুনতে পেয়েছি। হরি কাকাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো তার আগেই ওনার গলার আওয়াজ পেলাম।

‘জ..জল।’

আমি ওনার কাছে বসে জল খাইয়ে দিতেই উনি আলতো চোখে আমার দিকে চেয়ে বললেন,

‘মৌ!’

আমার নাম ধরে ডেকে আবার চোখ বুঁজে নিলেন। এরপর বারবার চোখ খুলছেন আর বন্ধ করছেন। মনে হয় বোঝার চেষ্টা করছেন এটা বাস্তব নাকি স্বপ্ন। এমন সময় কোয়েল পিছন থেকে বললো,

‘শুধু মৌ না, আমিও আছি।’

এইবার জানো আদিত্যের টনক নড়ল। কোয়েলের দিকে একঝলক তাকিয়েই উনি আমার দিকে তাকালেন। উঠে বসতে নিলেই আমি বাঁধা দিলাম,

‘আরে উঠছেন কেন?’

‘তু..তুমি এখানে? কখন এলে?’

‘যখন তুমি জ্বরের ঘোরে বেঘোর ছিলে তখন। মৌ আমাকে ঘুম থেকে তুলে ছুটিয়েছে। কেন এমন করো বলো তো তুমি? নিজের একটু খেয়াল রাখলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে নাকি?’

‘আ..আমি তো…

‘থাক। আপনাকে আর কথা বলতে হবে না। ডাক্তারবাবু বলেই গেছেন রেস্ট না নিলে উনি আর আসবেন না।’

আমার কথা শুনতেই উনি কোয়েল মুখ বেজার করে তাকালেন। কোয়েল মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,

‘আমার দোষ নেই। তুমি করেছো কেন ওমন কাজ? জানো কতটা খারাপ হয়েছিলো তোমার অবস্থা?’

আদিত্য মাথা নিচু করে নিলেন কোয়েলের কথায়। আমি উঠতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে বললেন,

‘কোথায় যাচ্ছো?’

‘আব, আসছি।’

আমি নীচে নেমে এলাম হরি কাকার সাথে কথা বলতে। ওনার থেকেই এখন থেকে খবর নিতে হবে আমায়। আমার মনে হয় না আদিত্য শরীর খারাপ হলেও আমাকে জানাবে বলে তাই একমাত্র উপায় হরি কাকাই।

অন্যদিকে,

‘কোয়েল।’

‘কথা বলবে না একদম।’

‘আরে শোন তো। আমি ইচ্ছা করে জ্বর এনেছি নাকি?’

‘হ্যাঁ। কে বলেছিল ওই অবস্থায় ড্রাইভ করে ভার্সিটি যেতে?’

‘আমি না গেলে জিয়া মৌমিতাকে ফাঁসিয়ে দিত। আমি কি করে ওর ক্ষতি হতে দিতে পারি? সবার সামনে ওকে হ্যারাস হতে হতো যেটা আমি মানতে পারতাম না।’

‘কেন? কে হয় মৌমিতা তোমার?’

আদিত্য চুপ করে গেলো কোয়েলের কথায়। কোয়েল আবারও বলতে শুরু করলো,

‘কি কারণে তোমার রাগ হয়েছিল? মৌ আর অঙ্কিতকে একসাথে দেখে?’

আদিত্য অবাক হয়ে কোয়েলের দিকে তাকালে কোয়েল সামান্য হাসে। আর বলে,

‘মৌকে অঙ্কিতের সাথে ক্লোজ হয়ে ডান্স করতে দেখে কেন এতো রাগ হচ্ছিলো তোমার? আমি কিন্তু সবটা দেখেছি আদিত্যদা।’

‘আমি জানি না।’

আদিত্য মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলে কোয়েল বলে ওঠে,

‘নিজের স্ত্রীকে অন্য একটা ছেলের সাথে ক্লোজ হতে দেখে রাগ হচ্ছিলো তাই না?’

আদিত্য চমকে উঠে কোয়েলের দিকে তাকায়। দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় আদিত্য অপরাধীর মতো চোখ নামিয়ে নেয়।

‘ভেবো না মৌ আমাকে জানিয়েছে। তুমি যেমন ওকে বিয়ের রাতে বলেছিলে কাওকে জানাতে না ও তেমনটাই করেছে কাওকে কিছুই জানায়নি আর এখানে এসেও তোমার সাথে ওর কি সম্পর্ক সেটা বলেনি। আজ ডাক্তারবাবু কে ছেড়ে দিয়ে এসে তোমার ঘরে ঢুকবো সে সময় হরি কাকার ”বউমা” ডাকটা শুনতে পাই। বুঝতে সময় লাগেনি আমার, একে একে সব হিসেব মিলে গেছে।’

আদিত্য চুপ করে রয়েছে কিছু বলছে না। কোয়েল আবার বললো,

‘এটা আমি তোমার থেকে আশা করিনি আদিত্যদা। তুমি যদি নিজের ভালো টা এখনই বুঝে যাও তাহলে তো ভালোই নাহলে অনেক কষ্ট পেতে হবে তোমায়। নিজের পরিস্থিতি, অবস্থা মাথায় রেখে নিজের অনুভূতিটা বোঝার চেষ্টা করো। আসলাম।’

আদিত্য কোয়েলের শেষ কথাগুলো ভাবতে লাগলো। কেমন যেনো খটকা লাগলো ওর, এটা কি কোয়েল মৌকে নিয়ে ওর অনুভূতির কথা বলে গেলো? ভাবছে আদিত্য। কোয়েল বেরিয়ে যাচ্ছে হুঁশ আসতেই আদিত্য জোরে বললো,

‘আমি যতদিন ভার্সিটিতে যেতে পারবো না ততদিন মৌমিতার খেয়াল রাখিস। ওই জিয়া জানো কোনো সুযোগ না পায়।’

ধরাম! করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো কোয়েল। আদিত্য সেটা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এদিকে কোয়েল দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মনে মনে হাসছে আর বলছে,

‘তোমার এই অনুভূতির নাম ভালোবাসা। মৌকে ভালোবেসে ফেলেছো তুমি নিজের অজান্তে। ব্যাপারটা আমার জন্যও খুবই আশ্চর্যের কারণ আমি ভাবিনি তুমি কোনোদিন কোনো মেয়েকে ভালোবাসবে। আসলে, এটাই হয়তো বিয়ের বন্ধন। আর মৌয়ের মতো মেয়েকে না ভালোবেসে থাকা যায় না কিন্তু তুমি তো ওর সাথে থাকনি তাহলে কীভাবে ভালোবাসলে? আমি জানি এই প্রশ্নটাই ভাবাচ্ছে তোমায় আদিত্যদা। এসবই বিয়ের কারণে, তুমি মনে মনে এটা জানো মৌ তোমার বিয়ে করা বউ। ওর উপর শুধু তোমার অধিকার আছে, তাই তো অন্য কোনো ছেলের সাথে মৌকে দেখলে তুমি সহ্য করতে পারছো না। মৌকে কেউ হ্যারাস করলে মানতে পারছো না, শুধুমাত্র ও তোমার স্ত্রী দেখে। মুখে বলে দিয়েছো মানো না এই বিয়ে কিন্তু মনে মনে কখন যে মৌকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছো বুঝতে পারো নি। এটাই তোমাকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে তুমি এই বিয়েটা মেনে নিয়েছো, তুমি ভালোবেসে ফেলেছো মৌকে। মৌয়ের উপর তোমার অধিকার, তোমার যত্ন, ওকে নিয়ে ভাবা, জেলাসি সবকিছু সেটার প্রমান।’

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~১৭||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৩২.
হরি কাকার থেকে ওনার নাম্বার নিয়ে নিয়েছি। আদিত্যর খবর ওনার থেকেই নেবো, এমনিতেও উনি আমাকে সত্যি কথা বলবেন বলে মনে হয় না। হরি কাকার সাথে কথা বলে উপরে উঠতে গেলেই দেখলাম কোয়েল নীচে নেমে আসছে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘চলে এলি যে?’

‘ভার্সিটিতে যেতে হবে তাই। তুই চাইলে থাকতেই পারিস।’

‘হ্যাঁ? না না। আমিও যাবো তোর সাথেই।’

কথাটা নিস্তেজ হয়ে বললাম। ওনার ঘরের দিকে একনজর তাকিয়ে কোয়েলর দিকে অসহায় মুখ করে বললাম,

‘আরেকটু থেকে গেলে হতো না?’

‘কেন? এখন তো আদিত্যদা রেস্ট নেবে। আমরা থেকে কি করবো?’

‘ওহ, হ্যাঁ তাই তো। ঠিক আছে চল। কিন্তু আমার ব্যাগটা ওনার ঘরে আছে। নিয়ে আসছি দাঁড়া।’

কথাটা বলেই ছুট লাগলাম ওনার ঘরের দিকে। ওনার ঘরে ঢুকে দেখলাম উনি চোখ বুঁজে শুয়ে আছে। ওনাকে একটু ভালো ভাবে দেখে নিয়ে ওনার পাশে রাখা আমার ব্যাগটার উপর হাত দিয়ে ওটা নিতেই উনি আমার হাতের উপর হাত রেখে হুট করেই জিজ্ঞেস করলেন,

‘তুমিও চলে যাচ্ছো?’

‘হ..হ্যাঁ। কেন?’

‘না মানে, জিয়া আছে তাই বলছিলাম।’

‘ওহ। কিছু হবে না। ওকে অতো ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। ও কোনো ক্ষতি করতে পারবে না আমার। আপনি রেস্ট নিন, আমি আসছি।’

আমার কথার পরিবর্তে আর কোনো কথা বললেন না উনি। আমিও বেরিয়ে এলাম ব্যাগটা নিয়ে। আসার সময় আড় চোখে দেখলাম উনি আমার দিকে মুখ ছোটো করে তাকিয়ে আছেন। কেন যে এমন আবভাব ওনার জানি না। ফুলশয্যার রাতের ব্যবহারের সাথে ভার্সিটি আসার পর থেকে করা ব্যবহারের সাথে কোনো মিল নেই। এসব ভাবতে ভাবতে নীচে এসে দেখলাম কোয়েল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে।

‘চল।’

কোয়েল আমার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে এগিয়ে গেলে আমিও এগিয়ে যাই। ওনাকে তো বড়ো মুখ করে বলে এলাম জিয়া আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না কিন্তু এখন তো নিজেরও নার্ভাস লাগছে। জিয়া তো আমার পিছনে হাত ধুয়ে পরে আছে। একেকদিন একেকরকম কান্ড ঘটাচ্ছে আমাকে ফাঁসানোর জন্য। এতদিন তাও আদিত্য ছিলেন, উনি হেল্প করতেন কিন্তু এখন..?? না জানি কি হবে।

‘কি ভাবছিস এতো?’

কোয়েলের কথায় ওর দিকে তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়লাম।

‘তুই তো থেকে যেতে পারতিস আদিত্যদার কাছে। চলে এলি কেন?’

‘তুই না থাকলে আমি থেকে কি করবো?’

‘তুই আর আমি কি এক?’

‘ম..মানে? আমি একা একটা মেয়ে ওনার সাথে থাকলে লোকে কি বলবে?’

‘নিজের স্বামীর সাথে থাকবি এতে লোকে কি বললো না বললো ভাবছিস কেন?’

কোয়েলের কথা শুনে আমি থমকে দাঁড়ালাম। অনেক্ষন ধরেই কোয়েলের ব্যবহার আমাকে ভাবাচ্ছিলো। কিন্তু ও? ও কি করে জানলো এই বিষয়ে? হরি কাকা বলে দিয়েছেন? নাকি…

‘কি হলো? ওহ এবার আমি জানি তুই কি ভাবছিস। তোর আর হরি কাকার কথা শুনে নিয়েছিলাম ডাক্তারবাবু কে ছেড়ে ঘরে ঢোকার সময়।’

‘আ..আসলে….

‘থাক। আর কোনো মিথ্যে অজুহাত দিতে হবে না। আমার মনে আছে তোর স্বামী তোকে ফুলশয্যার রাতে কি বলেছিলো। তুই সেটাই পালন করেছিস।’

আমি অবাক হয়ে কোয়েলের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘তুই রেগে নেই আমার উপর?’

‘আমি কেন রেগে থাকবো?’

কোয়েলের কথা শুনে কোয়েলকে জড়িয়ে ধরলাম। ও ছাড়া এখানে আমার কেউ নেই। ও’ও যদি এখন রেগে আমার সাথ ছেড়ে দেয় তাহলে তো আমি বড্ড একা হয়ে যাবো। কোয়েল আমাকে সোজা করে আমার চোখের জল মুছিয়ে বললো,

‘এতোই যখন ভালোবাসিস বরকে তাহলে তো থেকেই যেতে পারতিস।’

কোয়েলের কথায় মাথাটাই গরম হয়ে গেলো। আমি ওর থেকে দূরে সরে উত্তর দিলাম,

‘আমি ভালোবাসবো! তাও কাকে? আদিত্যকে? যে কি না আমার সাথে বিয়ের রাতে অতো খারাপ ব্যবহার করেছে? আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অন্য মেয়ের সাথে রিলেশন রেখেছে? অসম্ভব। ওনাকে আমি কোনদিন ভালোবাসতে পারবো না।’

‘আচ্ছা? তাহলে এই সাদ সকালে আমাকে ঘুম থেকে তুলে এভাবে ছুটে এলি কেন? কাল সারারাত না ঘুমিয়ে ওরকম ছটফট করছিলি কেন?’

‘কৃতজ্ঞতার জন্য।’

‘কিহ?’

‘হ্যাঁ। তা নয়তো কি? উনি যদি আমার কপিটা ঠিক সময় না নিয়ে আসতেন তাহলে আমাকে জিয়া ফাঁসিয়ে দিতো। ম্যাডামের কাছে আমাকে অনেক কথা শুনতে হতো, সারা ক্লাসের সামনে হ্যারাস হতে হতো। উনি ওনার ওই অবস্থায় আমার কথা ভেবেছেন তাই তো ওনার শরীর খারাপ করেছে। সেই কৃতজ্ঞতা থেকেই এতো কিছু করেছি। আমি যদি এখন মুখ ফিরিয়ে থাকতাম তাহলে সেটা আমার বিবেকে বাঁধত।’

কোয়েল আমার কথা শুনে হাসলো,

‘তুই হাসছিস কেন? হাসির কি বলেছি আমি?’

‘হাসির কিছু বলিসনি বলছিস? আচ্ছা মেনে নিলাম এইগুলো সব কৃতজ্ঞতার খাতিরে করেছিস কিন্তু কম্পিটিশনে জিয়ার সাথে আদিত্যদা কে দেখে গ্রীন রুমে কান্নার কারণ?’

‘ও..ও..ওটা তো আমি আমার পরিবারের জন্য কাঁদছিলাম। তুই ওটাকে এখানে কেন টানছিস? ওনার যার সাথে ইচ্ছা হয়েছে তার সাথেই পারফর্ম করেছেন। এখানে আমি বলার কে? আমি তো ওনার কেউ হইনা। আমি ওনার জন্য যা করেছি তা কৃতজ্ঞতা, ব্যাস এটুকুই! এখন চল। দেরী হয়ে যাচ্ছে আমাদের।’

আমি আর কোনো কিছু না বলে হেঁটে চলে এলাম ওখান থেকে। কি সব উল্টো পাল্টা যে বলছে না এই কোয়েল টা। আমি নাকি ওনাকে ভালোবাসি? হুহ! কোনোদিনও না।

‘হায় ভগবান! আমি ভেবেছিলাম শুধু আদিত্যদা নিজের ফিলিংস বোঝে না বাট এখানে তো দেখছি এরও একই অবস্থা। দেবা-দেবী দুজনেই এক প্রকার। যাক একদিকে ভালোই হলো, দুটোতে একসাথেই যা বোঝার বুঝবে। নাহ যাই, ওদিকে তো এখন আবার জিয়া আছে। আজব জ্বালা মাইরি!’

আমি ভার্সিটিতে ঢুকে সোজা ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাসে ঢুকে দেখলাম জিয়া নিজের কাজে ব্যস্ত। আজকে তো সবার অ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করার কথা ওর, তাই হয়তো এরকম নাজেহাল অবস্থা। আমি কিছু না ভেবে নিজের জায়গায় বসলাম। কিছুক্ষণপরেই কোয়েল এসে জিয়ার দিকে তাকিয়ে আমার পাশে এসে বসলো।

‘একি রে? এর অবস্থা তো গুরুতর।’

‘সেটাই তো দেখছি। কমপ্লিট করতে পেরেছে?’

‘সেটা তো ম্যাডাম আসলেই বোঝা যাবে। উনি আসছেন দেখলাম ত..

কোয়েলের কথা শেষ হওয়ার আগেই ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকলেন। যেহেতু উনি খুব স্ট্রিক্ট তাই চুপ করে বসে রইলাম আমরা।

‘জিয়া! তোমার কাজ কমপ্লিট করেছ?’

‘ই..ইয়েস ম্যাম।’

‘ভেরি গুড। সাবমিট করো রাইট নাও।’

জিয়া কাচুমাচু মুখ করে আস্তে আস্তে সব কটা কপি সাবমিট করে দিলো ম্যাডামের কাছে। ম্যাডাম ক্লাস নিতে শুরু করলেন। মাঝে মধ্যেই আমার আদিত্যের কথা মনে পড়ে গেলে কোয়েলের কথাগুলোও মনে পড়ে যাচ্ছে তাই তৎক্ষনাৎ ক্লাসে মন দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই এক কথাগুলো মাথায় চলে আসছে। এই করতে করতেই ক্লাস শেষ হলো।

‘এই কোয়েল? চল হস্টেলে ফিরে যাই। আর ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না।’

‘কেন? তোর আবার কি হলো?’

__’কেন তুই জানিস না কোয়েল মৌমিতার কি হয়েছে? আজকে আদি আসেনি তো তাই ওর কোনো কিছুই ইচ্ছা করছে না।’

আমাদের কথার মাঝখানে জিয়া এভাবে কথা বলবে ভাবিনি। আমি ওকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ও আবার বললো,

‘কি ব্যাপার বল তো তোর? সব সময় এভাবে আদির আগে পিছে কেন ঘুরিস?’

‘তোর কি চোখে কোনো সমস্যা আছে জিয়া? নাকি এতোগুলো অ্যাসাইনমেন্ট একসাথে করায় চোখে পাওয়ার এসে গেছে কোনটা?’

‘হোয়াট?’

‘হ্যাঁ। তা নয়তো কি? একমাত্র তুইই দেখতে পেয়েছিস আমি আদিত্যের পিছনে সারাক্ষন ঘুরি। যেখানে সবাই আমাকে ক্লাস করতে দেখে ভার্সিটিতে।’

জিয়া আবার কিছু বলতে নিলে আমি ওকে আটকে বলি,

‘আচ্ছা তুই আদিত্যকে কি মনে করিস বল তো? ও কি সূর্য নাকি যে ওর আগে পিছে সবাই গ্রহ হয়ে ঘুরে বেড়াবে? ও তোর কাছে সূর্য হতে পারে আর তুই ওর গ্রহ হতে পারিস যে কি না সারাক্ষন আদিত্য আদিত্য করে কিন্তু আমার কাছে সেটা নয়। সো নিজের এই ননসেন্স কথাগুলো নিজের কাছে রাখ।’

‘খুব কথা বলছিস তাই না কয়েকদিন আদির আশকারা পেয়ে? এখন আমিও দেখবো তোকে কে বাঁচায়?’

__’আমি বাঁচাবো!’

আমরা তাকিয়ে দেখলাম অঙ্কিত দাঁড়িয়ে আছে। অঙ্কিত আমাদের দিকে এগিয়ে এসে জিয়ার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

‘তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস আদিত্যের অবর্তমানে আমি ইউনিয়নের হেড। আমার কাছে কিন্তু তোর এই উৎপাত চলবে না। আর আশকারা আদিত্য একমাত্র তোকেই দিয়েছে আর কাউকে নয়। যা, নিজের ক্লাসে যা।’

অঙ্কিতের কথা শুনে জিয়া রেগে কটমট করে একবার আমার দিকে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো। কোয়েল অঙ্কিতকে জিজ্ঞেস করলো,

‘তুমি একদম ঠিক সময়ে হাজির হলে কি ভাবে?’

কোয়েলের কথা শুনে আমিও অঙ্কিতের দিকে একই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।

ফ্ল্যাশব্যাক……………………………

‘কি ব্যাপার? স্বয়ং আদিত্য ব্যানার্জী আমাকে কল করেছেন?’

‘দেখ অঙ্কিত। আমি তোর সাথে কোনো তর্কে যেতে চাইছি না। আমি তোকে কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা বলতে কল করেছি।’

‘ওয়াও! আমার সাথে তোর ইম্পরট্যান্ট কথা? গ্রেট! তা বলে ফেল কি কথা।’

‘শোন, আমি কদিন ভার্সিটি যেতে পারবো না। আমার জায়গায় তুই হেড হবি ইউনিয়নের তাই…

‘কি হয়েছে তোর? কেন আসতে পারবি না?’

‘ওই ছোট একটা একসিডেন্ট হয়েছে। তাই ডক্টর রেস্ট নিতে বলেছেন।’

‘ওকে। তুই রেস্ট নে আর তোর অবর্তমানে তো আমারই হেড হওয়ার কথা।’

‘হ্যাঁ। দেখ, মৌমিতা কে একটু দেখে রাখবি কারণ জিয়া আর সৌভিক ওর পিছনে হাত ধুয়ে পড়েছে। ওরা ওর ক্ষতি করতে চাইবে, আমি এটা বলার জন্যেই তোকে কল করেছি।’

‘সৌভিক এর মধ্যে এলো কি করে?’

আদিত্য অঙ্কিতকে প্রথম থেকে ফ্রেশারস পার্টির ব্যাপারে সবটা বললো। সবটা শুনে অঙ্কিত বললো,

‘শুধুমাত্র তোর জন্য ওরা এতটা বার বেড়েছে। তুই ভালো ভাবেই জানতিস তোর নাম করে ওরা এসব বাঁদরামি অনেকদিন ধরে করছে, স্পেশালি জিয়া। আর তুই তো নাকি ফাস্ট দিন এটাও বলেছিস যে জিয়া মৌমিতা কে যা বলেছে ঠিক করেছে। আমিও যখন এসব আটকাতে চেয়েছিলাম তুই বাঁধা দিয়েছিলি তাহলে এখন কি হলো?’

‘সেসব নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাইছি না।’

‘আমি জানি তুই জিয়ার বাবার জন্য চুপ করে আছিস। কিন্তু এভাবে আর কতদিন আদি?’

‘বেশিদিন না। খুব তাড়াতাড়ি একটা ব্যবস্থা করবো আমি। উনি ভার্সিটির ডিরেক্টর হয়েছেন তাই না?’

‘হ্যাঁ।’

‘ঠিক আছে। এই জন্যে আরো বেশি সাবধান থাকিস। আর কাউকে জানবি না আমি তোকে কল করেছিলাম।’

‘ওকে, তুই রেস্ট নে।’

প্রেসেন্ট……………………………….

‘এই অঙ্কিত! কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি?’

‘হ্যাঁ? কোথাও না। বল।’

‘সঠিক সময়ে এন্ট্রি মারলে কি ভাবে?’

‘ওটাই তো আমার কাজ বেবি!’

অঙ্কিত কোয়েলকে একহাতে জড়িয়ে কথাটা বললে কোয়েল ধাক্কা মেরে অঙ্কিত কে সরিয়ে দু-ঘা বসিয়ে দেয়।

‘সবসময় মারিস কেন আমায়?’

‘বেশ করি।’

ওরা দুটিতে মিলে ঝগড়া করতে থাকলো আর আমি হাসতে থাকলাম ওদের দেখে।

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~১৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৩৩.
রাতে ঘরে পায়চারি করছি। আজকের দিনটা বেশ ভালোই কেটেছে। প্রথমত ওনার বাড়ি গিয়ে ওনার খোঁজ নেওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। আর তারপর জিয়াকেও মোক্ষম জবাব দিতে পেরেছি। এরপরেও যে কেন অস্বস্তি কাটছে না বুঝছি না। ভাবছি, একবার ওনাকে ফোন করলে কেমন হয়?

‘করেই ফেল ফোনটা। এরকম পায়চারি করে করে ফোনটাকে বারবার দেখার কোনো মানে হয় না। তোরই ফোন আর তোরই বর, তাই করেই ফেল।’

কোয়েলের কথা শুনে ওর দিকে রেগে তাকালাম।

‘কি বর, বর করছিস বল তো সকাল দিয়ে?’

‘সে কি? তোর বরকে তোর বর বলবো না তো কি বলবো?’

‘ধুর! মানি না বর। যে এই বিয়েটাকেই মানে না সে বর হওয়ার যোগ্যতা রাখে?’

‘আমি জানি মৌ তোর কতটা খারাপ লেগেছে ফুলশয্যার রাতে ওরকম একটা কথা শুনে আদিত্যদার মুখে। কিন্তু আদিত্যদার ওরকম বলার কারণ ও নিজের জীবনের সাথে কাওকে কোনোদিন জড়াতে চায়নি। সারাটাজীবন একা থাকতে চেয়েছে। ও তোকে মানেনি দেখে যে অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসে এমনটা নয়। ও তোকে ওরকম কথা বলার পর নিজেই অনুতপ্ত, এই জন্যই তো তোকে দেখে দেখে রাখছে। মনে মনে ও ঠিকই বিয়েটা মেনে নিয়েছে, দেখবি আর কদিন পর বলেও দেবে তোকে।’

কোয়েলের কথা শুনে তাচ্ছিল্য হাসলাম, বললাম,

‘উনি এতদিন পর আমার কাছে এসে ক্ষমা চাইলেই কি আমার ফুলশয্যার রাতটা ফিরে আসবে? আমি যে এতটা কষ্ট পেয়েছি এবং পাচ্ছি সেগুলো মুছে যাবে? নাহ! প্রত্যেকটা মুহূর্তে তীরের মতো বিঁধেছে ওনার কথাগুলো আমার বুকে, যখনই মনে করছি সবটা মেনে নেবো। আমার নিজের জীবন নিয়ে যা স্বপ্ন ছিলো তা এক নিমিষে ধুলোয় মিশে গেছিলো বিয়ের কথা শুনে। তাই মেনে নিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম নতুন করে শুরু করবো জীবনটা কিন্তু সেটাও উনি হতে দেননি। তাহলে আমি কেন এত কষ্ট পাওয়ার পর উনি ফিরে আসলে ওনাকে মেনে নেবো? বলতে পারিস?’

আমার কথা শুনে কোয়েল আমাকে ওর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বললো,

‘আমি তোকে বলছি না এক্ষুনি আদিত্যদাকে মেনে নিতে। আমি শুধু বলছি ওকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেকে শাস্তি দিয়ে বসিস না। ও ভুল করেছে, শাস্তিটা ওর প্রাপ্য। এতো সহজে ওকে কেন ক্ষমা করবি? কিন্তু এই রাগের বশে নিজের অনুভূতিগুলো চিনতে ভুল করিস না। তাহলে তুইও শাস্তি পাবি। বুঝলি? আমি অলওয়েজ তোর পাশে আছি। যা এবার ঘুমিয়ে পর।’

কোয়েল গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ওর কথাগুলো মাথায় ঘুরতে লাগলো। অনুভূতি? কোন অনুভূতির কথা বললো ও? ধুর! এসব নিয়ে ভাবতেই চাই না আমি। যাই ঘুমাই।

কিছুক্ষণ পর,

কোয়েলের কথামতো শুয়ে তো পড়লাম কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছে না। নাহ, ওনাকে ফোনটা করেই ফেলি, ঘুমিয়ে থাকলে না হয় ধরবে না। এই ভেবে উঠে বসলাম। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম কোয়েল ঘুমিয়ে পড়েছে। আস্তে আস্তে ফোনটা নিয়ে জানলার কাছে গিয়ে ওনাকে কল করলাম। রিং হয়ে যাচ্ছে সমানে, একটা সময় কেটে গেলো।

‘আরেকবার করি। না ধরলে না হয় আর করবো না।’

আবার করলাম কিন্তু সেই একই ভাবে রিং হয়ে যাচ্ছে ফোনটা। তাই ফোনটা কাটতে যাবো সেই সময় একদম শেষ মুহূর্তে ওপাশ থেকে ঘুম ঘুম গলায় আওয়াজ এলো,

‘হ্যালো।’

‘হ..হ্যালো, আমি মৌমিতা।’

এক সেকেন্ডের জন্য ওনার ঘুমের আওয়াজ শুনে হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু উনি চুপ করে আছেন কেন এখন?

‘আদিত্য! আপনি ঠিক আছেন?’

‘হ..হ্যাঁ কিন্তু তুমি এতো রাতে?’

‘আব, আসলে.. ফোন করবো কি করবো না ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই…

‘কেন? আমি বাঘ না ভাল্লুক যে তুমি ফোন করলে তোমার ফোনের ভিতর ঢুকে তোমাকে খেয়ে নেবো?’

বলে উনি মুখ চেপে হাসতে থাকলে আমি সেটা বুঝতে পারি। রাগ হয়ে গেলো,

‘এই আপনি হাসছেন কেন হ্যাঁ? হুট করে ফোন করলে আপনি কি ভাববেন তাই করিনি। হুহ!’

‘আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।’

‘আবার হাসছেন?’

‘আচ্ছা, আচ্ছা হাসবো না।’

তারপরেও উনি হাসতে থাকলে আমিও হেসে ফেললাম। এইভাবেই কথা বলতে থাকলাম আমরা। ওনাকে বললাম আজ আমি জিয়াকে কি কি বলেছি আর অঙ্কিত আমাকে হেল্প করেছে। ভেবেছিলাম অঙ্কিতের কথা শুনে উনি রাগ করবেন কিন্তু না, উনি কিছুই বললেন না। কথা বলা শেষ করে ঘুমোনোর সময় কোয়েলকে একবার দেখলাম তারপর আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।

‘ঠিকই ভেবেছিলাম আমি। এই দুটোকেই ভালোবাসার মানে বুঝতে হবে। বরের সাথে কথা না বললে, তার খোঁজ না নিলে রাতে ঘুম হচ্ছে না আবার বর বললে সে নারাজ! হা হা!’

কোয়েলের ঘুম ভেঙে গেছিলো যখন মৌমিতা কথা বলছিল ফোনে। ফোনে কথা বলার ধরণ শুনেই কোয়েল নিমিষে বুঝে গেছিলো আদিত্যের সাথেই কথা বলছিল মৌমিতা।

৩৪.
বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। এখন আদিত্যও পুরোপুরি সুস্থ, ভার্সিটি আসা শুরু করেছেন। ভার্সিটি আসার পর আদিত্য আমারর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেননি একবারও। অবশ্য করবেনই বা কেন? আমি কে হই? কেউ হইনা বলেই তো এতো টা ইগনোর করছেন আমাকে। ঠিক আছে, আমারও কোনো দরকার নেই ওনার সাথে কথা বলার।

‘কি রে কি ভাবছিস এভাবে একা বসে?’

পাশে তাকিয়ে দেখলাম অঙ্কিত এসে বসেছে। অঙ্কিতকে উত্তর দিতে যাবো ঠিক সেই সময়,

‘কার চিন্তায় মগ্ন তুমি দেবী?’

আরেক পাশে কোয়েল এসে বসলো। আমি ওকে হেসে উত্তর দিলাম,

‘এমন একজনের চিন্তায় যে আমায় নিয়ে ভাবে না। তোর মত তো আর এতো ভাগ্য নেই যে, এমন একজন সারাদিন আমার খোঁজ নেবে, আমাকে ভালোবাসবে।’

আমার কথা শুনে অঙ্কিতের কাশি উঠে গেলো। আর আমি হেসে ফেললাম এদিকে কোয়েল বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

‘আমার খোঁজ সারাদিন কে নেয়? কে ভালোবাসে আমাকে? ধুর! কি যে বলিস না।’

কোয়েলের মুখে ভয় ফুঁটে উঠলো আমার কথা শুনে যা দেখে আমি অবাক হলাম। এমন কি বলেছি যে ভয় পেয়ে গেলো কোয়েল? আমি অঙ্কিতের দিকে তাকাতেই ও আমাকে বললো,

‘মৌ তুই যেটা ভাবছিস সেটা একদমই নয়। কোয়েলকে আমি স্কুল লাইফ থেকে চিনি তাই বোনের মতো ভালোবাসি। এর চাইতে বেশি কিছু না।’

‘আচ্ছা সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু ও এমন ভয় পেয়ে গেলো কেন আর তুমিই বা কাশতে লাগলে কেন?’

‘ইয়ে, না মানে। এমনি! চল দেখি ও কোথায় গেলো।’

অঙ্কিত উঠে কোয়েল যেদিকে গেছে সেদিকে গেলে আমিও উঠে যাই। ওখানে গিয়ে দেখি অঙ্কিত কোয়েলকে কিছু একটা বলছে, আমি গেলেই চুপ করে যায়।

‘কি রে এভাবে তখন উঠে গেলি কেন?’

‘সে কি! তুই দেখিসনি?’

‘কি দেখবো?’

‘জিয়া আসছিলো তাই।’

‘তুই যার থেকে বাঁচার জন্য এখানে এলি, সেই এখানে আসছে উইথ আদিত্য!’

অঙ্কিতের কথা শুনে আমি আর কোয়েল পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলাম আদিত্য এক হাতে পকেটে গুঁজে আরেকহাতে ফোন ঘাটতে ঘাটতে আসছেন আর ওনার পকেটে গোঁজা হাতের বাহু জড়িয়ে জিয়া হাসতে হাসতে এদিকেই আসছে। জিয়া নিজের মতো কথা বলছে হেসে হেসে আর আদিত্য মাঝে মধ্যে হেসে ওর দিকে তাকাচ্ছেন। এসব দেখে আমি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলাম অর্থাৎ একে মেনে নিতে বলছিলি তুই আমায়।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে