‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৩১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
৪৭.
কোয়েল: এভাবে এখানে একা বসে আছেন যে?
রাজ একা চুপচাপ লেকের পাশে বসে ছিলো আর এটাই রাজের কাজ যা কোয়েল জানে। তাই রাজের পিছু নেওয়ার দরকার পড়েনি কোয়েলের। প্রথম থেকেই দেখে এসেছে ও রাজ বেশিরভাগ সময় একা থাকতে ভালোবাসে। অনেকক্ষণের দ্বিধাবোধ কাটিয়ে কোয়েল আমতা আমতা করতে করতে রাজকে প্রশ্নটা করেই ফেললো। প্রতিউত্তরে শুধুমাত্র নীরবতা। কোয়েল একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে রাজ যেই বেঞ্চে বসে আছে তার অপর কোণায় বসলো।
কোয়েল: (মনে মনে– কি এতো আকাশ-পাতাল চিন্তা করছে রাজ? প্রথম থেকেই দেখে এসেছি কোনো সিরিয়াস বিষয় হলে একা থাকতে। হয়তো আদিত্যদাও এই জন্যেই ওকে একা ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু কি হয়েছে সেটাও তো জানাটা দরকার। আরেকবার বরং…
রাজ: সন্ধ্যে হয়ে আসছে, হস্টেল ফিরে যাও।
রাজ কোয়েলের ভাবনার মাঝখানেই শার্ট ফোল্ড করতে করতে উঠে দাঁড়ালো। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো লেকটার দিকে তারপর পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ালো। কোয়েল একটু চমকে গেলো, হঠাৎ করেই। মুহূর্তে উঠে দাঁড়িয়ে যেই না রাজের দিকে এগিয়ে যাবে তখনই…
__রাজ! তুমি এখানে কি করছো?
একটা সুন্দর দেখতে ছিমছাম চেহারার মেয়ে। রাজ সেই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে এক গালে হাসলো তারপর সেদিকে ঘুরলো। মেয়েটি রাজের দিকে এগোতে শুরু করলে কোয়েল পিছতে শুরু করে। মেয়েটি রাজের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
__এখানে একা দাঁড়িয়ে আছো কেন?
মেয়েটির প্রশ্নে রাজ আবারও এক গালে হেসে কোয়েলের দিকে তাকালো। কোয়েল তো শুধু বেকুবের মতো একবার রাজের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার মেয়েটির দিকে। রাজের চাহুনি অনুসরণ করে মেয়েটি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো আর জিজ্ঞেস করলো,
__ও কে?
রাজ: (ভ্রু কুঁচকে) কি বললে টিনা?
টিনা: আসলে অন্ধকার তো তাই দেখতে পাচ্ছি না ঠিক ভাবে। (কাঁচুমাচু হয়ে)
রাজ: দেখতেও হবে না তোমায়। লেট’স গো।
রাজ হনহন করে বেরিয়ে গেলে টিনাও বেরিয়ে যায় রাজের পিছন পিছন কোয়েলের দিকে একবার তাকিয়ে। ওদের চলে যাওয়ার পর কোয়েল ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের জল আড়াল করে নিজে নিজেই হাসে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে উপরের দিকে তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে,
কোয়েল: সবসময় আমার ঠিক প্রমান হওয়াটা কি জরুরী? মাঝে মধ্যে আমিও ভুল প্রমাণিত হতে চাই কিছু কিছু জায়গায়।
কোয়েল মাথা নিচু করে চোখের জল মুছে রাস্তার দিকে এগিয়ে যায়। রাস্তায় উঠে কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে হাঁটতে যেতে নিলেই কোয়েলের হাত ধরে কেউ হ্যাঁচকা টান মারে পিছন দিকে।
কোয়েল: আরেহহহহ! এভাবে কে টা…
কোয়েল এতটুকু বলেই থেমে গেলো, দুটো সবুজ চোখের মণি দেখে। এই মানুষটার চোখের মায়ায় যদি একবার কোয়েল আটকে যায় তাহলে কিছুতেই নিজেকে সেই মায়া থেকে ছাড়াতে পারে না কোয়েল হাজার চেষ্টা করেও।
কোয়েল: আপনি তো চলে গিয়েছিলেন, এখনও এখানে কি করছেন তাহলে?
কোয়েল নিজের কথার কোনো উত্তর না পেয়ে একটু রেগে বললো,
কোয়েল: রাজ! (জোরে)
রাজ: বল।
কোয়েল: আপনি এখানে কি করছেন?
রাজ: (নিশ্চুপ)
কোয়েল: আরে? তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি? একটা কথার উত্তর দিচ্ছো তো আরেকটা কথার উত্তর দিচ্ছো না। (অতিরিক্ত রেগে)
রাজ: তুই ভেবে দেখ কেন উত্তর দিচ্ছিলাম না। (মৃদু হেসে)
কোয়েল: পারছি না অতো ভাবতে। (রাগ নিয়ে)
রাজ: আমি যতদূর জানতাম তুই অচেনা লোকের সাথে আপনি করে কথা বলিস। আমার জানা মতে আমি অচেনা নই তাই উত্তর দিইনি। (চোখ টিপ দিয়ে)
কোয়েল: আজব!
রাজ: আজব কে? আমি নাকি তুই? আমি আজ এসেছি এতগুলো দিন হয়ে গেলো আর তুই কথা বলছিস কবে? আজকে, তাও আবার আপনি করে।
কোয়েল: (মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে) তুমিও তো কথা বলোনি।
রাজ: সুযোগটা কোথায় দিয়েছিস তুই আমাকে? যখনই কথা বলতে গেছি, হুড়মুড় করে কথা না বলতে দিয়েই চলে গেছিস। আমার দোষ?
কোয়েল আর কিছু উত্তর দিতে পারলো না। সত্যিই তো, সেই তো কোনোরকম সুযোগ দেয়নি কথা বলার তাহলে আজ কেন বললো নিজে থেকে কথা বলার কথা? তাহলে কি কোয়েলও আশা করে ছিলো রাজ তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে?
হঠাৎ করেই রাজ কোয়েলের কোমর পেঁচিয়ে ধরে, তা বুঝতে পেরে কোয়েল তৎক্ষণাৎ রাজের দিকে তাকালে অনুভব করে রাজের গরম নিশ্বাস। রাজ আর কোয়েল এখন বেশ অনেকটাই কাছাকাছি রয়েছে।
কোয়েল: ছ..ছাড়ো আমাকে।
রাজ: হস্টেল তো এদিকে, তুই ওদিকে কোথায় যাচ্ছিলিস? (চোখ দিয়ে ইশারা করে)
কোয়েল: আব.. আমি, আমি, আমি তো…
রাজ: থাক, আর আমি আমি করা লাগবে না। গাড়িতে বস, আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
রাজের কথা শুনে কোয়েল অবাক চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। রাজ কোয়েলের চাহুনি দেখে হেসে ফেলে। কোয়েলের এমন প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
রাজ: তাকিয়েই থাকবি এভাবে আমার দিকে? যাবি না? (হেসে)
কোয়েল: এসব…?
কোয়েলকে টেনে নিয়ে গিয়ে রাজ গাড়িতে বসিয়ে দিলো। নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করতেই কোয়েল রাজকে জিজ্ঞেস করলো,
কোয়েল: গাড়িটা তোমার?
রাজ: একদমই না। আমি ড্রাইভারের কাজ করি।
কোয়েল: উফফ রাজ, মজা করো না। (বিরক্ত হয়ে)
রাজ: কেন? আমি তো এইসব কাজেরই যোগ্য তাই না? ভালো কোনো কাজ করার যোগ্যতা তো আমার নেই। (আনমনে)
কোয়েল: কি? কি উল্টো পাল্টা কথা বলছো তুমি? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? (রেগে)
রাজ: আ..আব কিছু না। এটা আমার ফ্রেন্ডের গাড়ি। (আমতা আমতা করে)
কোয়েল হাসলো রাজের কথা শুনে। রাজ চোখ বন্ধ করে না বোধক মাথা নাড়লো কোয়েলের হাসি দেখে।
কোয়েল: আজকাল ফ্রেন্ডও বানাচ্ছো তুমি? বেশ মজাদার ব্যাপার তো? (হেসে)
রাজ: ওকে ফাইন! পারি না আমি মিথ্যে বলতে। স্যরি! (ব্যর্থ হয়ে)
কোয়েল: তোমার ড্রেস আপ দেখে মনে হচ্ছে তুমি কোনো অফিসে কাজ করো।
রাজ: তোর আমার সম্পর্কে জানার ইচ্ছা আছে দেখে অবাক হচ্ছি আমি। নাহলে আমি তো জানতাম তুই আমাকে নিয়ে ভাবতে যখন চাস না তখন আমার সম্পর্কে জানারও কোনো ইচ্ছা থাকবে না। (চাপা স্বরে)
কোয়েল: আসলে তখন…
রাজ: ইটস ওকে। আমি আর এমন কে যে আমাকে নিয়ে ভাববি? হাহ! লেট ইট বি। (তাচ্ছিল্য হেসে)
কোয়েল: এতো তাড়াতাড়ি হস্টেল যাবো না। ওই দিক দিয়ে ঘুরে চলো। (রাজের হাতের উপর হাত রেখে)
রাজ নিজের হাতের উপর রাখা কোয়েলের হাতের দিকে তাকিয়ে কোয়েলের দিকে তাকাতেই কোয়েল হাত সরিয়ে নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো। রাজ বাঁকা হেসে গাড়ি অন্যদিক দিয়ে ঘুরিয়ে নিলো। এই রাস্তা দিয়ে গেলে হস্টেল পৌঁছাতে একটু বেশি সময় লাগবে। অর্থাৎ কোয়েল আরো কিছুক্ষন রাজের সাথে কথা বলতে চায়। এটা ভেবেই রাজের ভালো লাগছে কারণ যত বেশি সময় পাবে তত বেশি সুবিধা হবে নিজের অনুভূতি কোয়েলকে বোঝাতে আর কোয়েলের ওর প্রতি অনুভূতি বুঝতে।
কোয়েল: (মনে মনে– এখনই সময় রাজের থেকে সবটা জানার। আদিত্যদাও জানতে পারেনি পরেশবাবু কি বলেছেন ওকে, আমাকে কি বলবে? এটা না বলুক, এতদিন কোথায় ছিলো, কি করছিলো এগুলো অন্তত জানার চেষ্টা করি। এরপর না হয় আমার প্রতি ওর অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করবো।)
রাজ: এভাবে তাকিয়ে আছিস যে? কি বলতে চাস?
কোয়েল: গাড়িটা থামাও। সামনেই একটা চায়ের দোকান আছে, মনে আছে নিশ্চই জায়গাটা? (বাইরের দিকে তাকিয়ে)
রাজ: এই জায়গাটা ভোলার মতন নয়। (গাড়ি সাইড করে) চল।
রাজ আর কোয়েল গাড়ি থেকে নেমে চায়ের দোকানের সামনে গেল। কোয়েল গিয়ে বেঞ্চে বসলে রাজ দোকানদারকে দুটো চা দিতে বললো।
দোকানদার: আরে রাজ বাবা যে? এতদিন কোথায় ছিলে? আদি বাবা তো আমার দোকানে আসা বন্ধই করে দিয়েছিলো তুমি ছিলে না দেখে।
রাজ: এই তো আমি এসে গেছি। এবার থেকে তোমার আদি বাবা আবার আসবে। এখন তুমি দুটো চা দাও তো জলদি।
রাজ চা নিয়ে এসে কোয়েলের হাতে দিলে কোয়েল সেটা নিয়ে আস্তে আস্তে ফুঁ দিতে থাকে। রাজ নিজে চা না খেয়ে কোয়েলের দিকে তাকিয়ে কোয়েলকে দেখতে থাকলে কোয়েলের সেটার দিকে নজর যায়।
কোয়েল: কি ব্যাপার? আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? (রাজের দিকে তাকিয়ে)
রাজ: এখনো নিশ্চই জিভ পুড়ে যায় চা খেতে গেলে? (হেসে)
কোয়েল হেসে ফেলে রাজের কথায়। ছোটবেলায় আদিত্য আর রাজের সাথে এখানে এসে চা খেতে গেলে কোয়েলের জিভ পুড়ে যেতো। কারণ আদিত্য আর রাজ খুব তাড়াতাড়ি চা খেয়ে নিতো তাই ওদের দেখে কোয়েলও তাড়াতাড়ি করতে নিলে গরম চা থাকায় জিভ পুড়িয়ে ফেলতো।
কোয়েল: কোথায় ছিলে এই চার বছর?
রাজ: (কিছুক্ষন চুপ থেকে) সময় আসলে সবটা জানতে পারবে।
কোয়েল: সেই। তোমার বিষয়ে জানার অধিকার তো আমার নেই, আমিই ভুলে গিয়েছিলাম। (মুখ ছোটো করে)
রাজ কোয়েলের দিকে তাকিয়ে বললো,
রাজ: আমার সব বিষয়ে জানার অধিকার তোর আর আদির ছাড়া কাওর নেই। তুই আমার জন্য কি, সেটা হয়তো তুই এখনও ফীল করতে পারিসনি। (উঠে দাঁড়িয়ে)
কোয়েল: তাহলে কেন কিছু না জানিয়ে ছেড়ে গেছিলে? কোনো যোগাযোগ পর্যন্ত রাখেনি আমার সাথে। আমার কতটা খারাপ লেগেছে, আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি তোমার ধারণা আছে? (কাঁপা গলায়)
রাজ: (কোয়েলের সামনে এসে) তুই একা না আমিও কষ্ট পেয়েছি। আমি, আমি সবটা বলবো তোকে, শুধু সময়ের অপেক্ষা।
কোয়েল: ঠিক আছে। এতদিন যখন অপেক্ষা করেছি তখন আরেকটু না হয় করবো কিন্তু আজ? আজ যেটা হলো সেটা নিয়ে কি বলবে তুমি? কেন এতটা রিস্ক নিতে গেলে রাজ? এখন যদি পরেশবাবু তোমাদের কোনো ক্ষতি করে? (চিন্তিত সুরে)
রাজ: (কোয়েলের দু-বাহু ধরে) আজ না হয় কাল এটা হতেই হতো কোয়েল। আদিত্য মৌমিতার প্রতি জিয়ার ব্যবহারে ভীষণ পরিমাণ রেগে ছিলো। জিয়া বাড়াবাড়ি করতো শুধুমাত্র পরেশবাবু ভার্সিটির বোর্ড মেম্বার ছিলেন তাই। এই কারণেই বোর্ড মেম্বার থেকে পরেশবাবুকে সরাতে আদি উঠে পড়ে লেগেছিল। বুঝতেই তো পারছিস, প্রেম ভালোবাসায় অবিশ্বাসী ছেলে প্রেমে হাবুডুবু খেলে যা হয় আর কি।
রাজের শেষের কথা শুনে রাজ আর কোয়েল দুজনেই হেসে দিলো। কোয়েল নিজের হাসি থামিয়ে বললো,
কোয়েল: তুমি কীভাবে হেল্প করলে আদিত্যদাকে?
রাজ: সেটা বলতে গেলে আজকে তোর হস্টেলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। (কোয়েলের দিকে ঝুঁকে) থাকবি নাকি আমার সাথে?
কোয়েল: ধ্যাৎ! ও…ওই মেয়েটা কে ছিলো তখন?
কোয়েল দূরে সরে হাত কচলাতে কচলাতে কথাটা জিজ্ঞেস করলে রাজ আলতো পায়ে কোয়েলের পিছনে দাঁড়িয়ে কানের কাছে আস্তে করে বলে,
রাজ: ওটা টিনা! আমার ওয়ান এন্ড অনলি গার্লফ্রেন্ড। (ঠোঁট চেপে)
কোয়েল কেমন জানো দমে গেলো রাজের কথাটা শুনে। মাথা নিচু করে শুধু বললো,
কোয়েল: গার্লফ্রেন্ড তো একটাই হয়। ওয়ান এন্ড অনলি বলার কি আছে?
রাজ: তাই নাকি? আমি তো জানতাম বউ একটা হয়, গার্লফ্রেন্ডও একটাই হয়? কিন্তু আমার তো…?? (কোয়েলের দিকে তাকাতেই) এই, এই, কোয়েল এটা রাস্তা!
রাজের কথা শুনে কোয়েল বুঝলো রাজ মজা করছিল। আর তা বুঝতেই রাজকে মারতে যেতে নিলে রাজ দৌঁড়ে গাড়ির কাছে চলে যায়। কোয়েলও রাজের পিছু নিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে গাড়িকে কেন্দ্র করে গোলগাল ঘুরতে থাকে দুজনে। কিছু সময় পর একে অপরের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে ফেলে।
রাজ: (নিজের গাল বাড়িয়ে) নে, মেরে নে।
কোয়েল: হুহ! এটা তোলা রইলো। পরে সুদে আসলে ফেরত নেবো।
রাজ হেসে দোকানে গিয়ে টাকাটা দিয়ে আবার ফিরে এসে গাড়িতে দুজন উঠে বসলো। কোয়েল সিট বেল্ট লাগাচ্ছে সেই দেখে রাজ বললো,
রাজ: এইবার হস্টেল যাবি তো নাকি..??
কোয়েল: এইবার হস্টেলে না ফিরলে ম্যাডাম কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেবে। (হেসে)
রাজ: (মনে মনে– সময়টা যদি এখানেই দাঁড়িয়ে যেতো তাহলে আজকেই তোকে সবটা বলে দিতাম। বলে দিতাম আমি তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। আজ আমি যা কিছু সবটাই তোকে নিজের করে পাওয়ার জন্য। সব সত্যি জানলে তুই কষ্ট পাবি আমি জানি কিন্তু সত্যি তো কখনো চেপে রাখা যায় না। তাই একদিন না একদিন তোকে এই কষ্টটা পেতেই হবে। খুব তাড়াতাড়ি তোকে নিজের মনের কথা জানিয়ে নিজের করবো। আমার নিজেকে গড়ে তোলাটাকে সার্থক করতে হবে তো?)
কোয়েল: (রাজের চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে) কি হলো? কোথায় হারিয়ে গেলে?
রাজ: উহুম, কোথাও না।
রাজ নিজের মাথাটা একটু ঝাঁকিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। সন্ধ্যা হতে চললো প্রায়, কোয়েল ভাবছে কথা তো আদায় করা গেলো না। তার উপর আজকে হস্টেলে গেলে বকা খেতে হবে।
রাজ: কি এতো ভাবছো?
কোয়েল: আজ আমি তোমার থেকে যা কিছুই জানতে চেয়েছি তুমি এড়িয়ে গেছো পরে বলবে বলে। সেগুলো আদৌ বলবে তো? (করুন ভাবে)
রাজ: তোকে বলবো না তো কাকে বলবো? (ছলছল চোখে)
কোয়েল: পরেশবাবু আজকে শেষে তোমাকে কি বলে গেলেন? তোমাকে কি ভয় দেখিয়েছে? প্লিজ রাজ, এটা অন্তত বলো। (চিন্তিত হয়ে)
রাজ কোয়েলের দিকে বুঝলো কোয়েল চিন্তা করছে ওকে নিয়ে। একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,
রাজ: এই সব বিষয়গুলো একে অপরের সাথে যুক্ত কোয়েল। তুই কেন, আদিও জানে না এইসব বিষয়ে। এই চার বছরে আমি কি কি ফেইস করেছি শুধু আমি জানি। একটা ঘটনা বলতে গেলে আরেকটা ঘটনা বলতে হবে নাহলে কিছুই বুঝবি না। তবুও, তুই চিন্তা করছিস দেখে বলছি, পরেশবাবু আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়েছে।
কোয়েল: কি তোমার প্রিয় জিনিস? (শান্ত ভাবে)
কোয়েল অনেক আশা নিয়ে রাজের দিকে চেয়ে রইলো প্রশ্নটা করে। প্রশ্ন শুনে রাজও গাড়ি থামিয়ে কোয়েলের চোখের দিকে তাকায়। দুজনের চোখই ছলছল করছে, কথা বলছে একে অপরের সাথে। অনেক না বলা কথা যা এতদিন জমে ছিলো। অনেক অনুভূতি যা বলে প্রকাশ পায় না তা হয়তো ওদের চাহুনি দ্বারা প্রকাশ পাচ্ছে।।
‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৩২||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
কোয়েল অনেক আশা নিয়ে রাজের দিকে চেয়ে রইলো প্রশ্নটা করে। প্রশ্ন শুনে রাজও গাড়ি থামিয়ে কোয়েলের চোখের দিকে তাকায়। দুজনের চোখই ছলছল করছে, কথা বলছে একে অপরের সাথে। অনেক না বলা কথা যা এতদিন জমে ছিলো। অনেক অনুভূতি যা বলে প্রকাশ পায় না তা হয়তো ওদের চাহুনি দ্বারা প্রকাশ পাচ্ছে।
কোয়েল: (চোখ নামিয়ে নিয়ে) আসছি আমি।
কোয়েল সিট বেল্ট খুলে নামতে না নামতেই রাজ নেমে কোয়েলের সামনে এসে দাঁড়ায়। কোয়েল রাজের চোখের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নিলে রাজ কোয়েলকে মাঝখানে রেখে কোয়েলের দু-পাশে হাত রেখে গাড়িতে ভর করে ওর দিকে ঝুঁকে পড়তেই কোয়েল চোখ বুজে নেয়।
রাজ: (কানের কাছে আস্তে করে) কোনদিকে না তাকিয়ে, সোজা হস্টেলে যাবি। নো ডানদিক, বাঁদিক আর নো উপর, নিচ একদম সোজা হস্টেল। আজকে আর জানো বাইরে বেড়ানো না হয়। গট ইট?
রাজ কথা শেষ করে কোয়েলের দিকে তাকালে কোয়েল চোখ মেলে রাজের চোখের দিকে তাকায়। রাজ কোয়েলের দিকে এগিয়ে যায় ওর চোখের দিকে তাকিয়েই কিন্তু হঠাৎ করেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কোয়েলেরও জানো ঘোর কেটে যায়, আমতা আমতা করে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
কোয়েল: আসছি আমি। সাবধানে যাবে।
এটুকু বলেই কোয়েল রাজের কথামতো সোজা হস্টেলে ঢুকে যায় কোনদিকে না তাকিয়ে। রাজ পিছন ফিরেই আড় চোখে কোয়েলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,
রাজ: (মনে মনে– খুব ইচ্ছা করছিলো তোমার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে কিন্তু আমি এখনও সেই অধিকার তোমার থেকে পাইনি। আজ এরকম কিছু একটা হঠাৎ তোমার সাথে করলে যদি হিতে বিপরীত হয়ে যেতো? তুমি যদি আরো দূরে সরে যেতে আমার থেকে তাহলে? এটা আমি কিছুতেই মানতে পারতাম না, কিছুতেই না।)
কোয়েল: (মনে মনে– কখন যে কি চলে এই ছেলেটার মাথায় কিছুই বুঝিনা ছাই! ধুর, ভালো লাগে না। কি ভাবলাম আর কি হলো। এই জন্যেই বলে আশা করতে নেই। ভাবলাম ওর ঠোঁটের ছোঁয়া পাবো তা না ব্যাঙ! ধুর, ধুর!)
৪৮.
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হওয়ার পর মনে হলো উনি হয়তো এখনও দাঁড়িয়ে আছেন। নাকি চলে গেছেন? দেখি বরং একবার। টাওয়াল টা রেখে জানলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখলাম ওনার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
মৌমিতা: যা ভেবেছিলাম তাই। উনি এখনও এখানেই দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু কেন? আমি তো সেই কখন চলে এসেছি তাহলে…ওহ! কোয়েল তো এখনও ফেরেনি।
আমি আবার জানলার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি গাড়ি থেকে বেরোলেন। ঠিক করলাম ওনার সাথে একবার দেখা করে কোয়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। যেই ভাবা সেই কাজ আমি ঘর থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরোতে নিলাম আর সজোরে ধাক্কা খেলাম।
মৌমিতা: উফফ, কোয়েল! (কপালে হাত দিয়ে)
কোয়েল: এতো তাড়াহুড়ো করে কই যাচ্ছিস তুই। (কপাল ডলতে ডলতে)
মৌমিতা: নীচে আদিত্য দাঁড়িয়ে আছেন তাই যাচ্ছিলাম। উনি হয়তো তোর জন্যেই অপেক্ষা করছেন। কই ছিলি তুই এতক্ষন?
কোয়েল: (আমতা আমতা করতে করতে) ইয়ে, আমি একটু রাজের সাথে ছিলাম।
মৌমিতা: সিরিয়াসলি? কোনো কথা বার করতে পেরেছিস?
কোয়েল: ধুর! আর বলিস না। কিছুই বললো না আমায়। শুধু বললো…
মৌমিতা: শুধু কি বলেছেন?
কোয়েল: বললো যে, ওর প্রিয় মানুষকে ওর থেকে কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়েছেন পরেশবাবু।
মৌমিতা: আদিত্য তাহলে ঠিকই আন্দাজ করেছিলেন। রাজদাকে পরেশবাবু ভয় দেখিয়েছেন।
কোয়েল: হ্যাঁ। আচ্ছা তুই নীচে যা। ওরা হয়তো যায়নি এখনও দেখা করে আয় একবার।
মৌমিতা: যাবো বলছিস?
কোয়েল: নিজের বরের সাথেই দেখা করতে যাচ্ছিস বইন আমার। যা, যা, দূর হ!
মৌমিতা: হুহ! (ভেংচি কেটে)
কোয়েল: আর শোন! নিচে নেমে ভালো করে চারিদিকটা দেখবি তো।
মৌমিতা: কেন?
কোয়েল: আগে দেখে আয়। তারপর বলবো। আমি ফ্রেশ হতে চললাম।
কোয়েল ওয়াশরুমে চলে গেলে আমিও নীচে নেমে যাই। হস্টেল থেকে বেরোতেই দেখতে পাই রাজদা আর আদিত্য কথা বলছেন একে অপরের সাথে তাই আর আগে না এগিয়ে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লাম।
রাজ: আদি তুই এখানে কি করছিস?
আদিত্য: আমারও তো একই প্রশ্ন বন্ধু। তুমি এখানে কি করছো? (হেসে)
রাজ: কোয়েল গেছিলো আমার পিছু পিছু। একা আসবে তাই পৌঁছে দিলাম। (মুখ ঘুরিয়ে)
আদিত্য: বাহ! প্রেম না করেই শুধু শুধু হস্টেলে পৌঁছে দিলি? এটা আমাকে মানতে হবে? (হেসে ফেলে)
রাজ আদিত্যের মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু তাচ্ছিল্য হেসে চুপ করে রইলো। আদিত্য রাজের অবস্থা বুঝে নিজের হাসি থামিয়ে রাজের কাঁধে হাত রেখে বললো,
আদিত্য: কোয়েলও তোকে ভালোবাসে রাজ। নিজের অনুভূতি কোয়েলকে বোঝানোর আগে কোয়েলের তোর প্রতি অনুভূতিগুলো আগে বোঝার চেষ্টা কর। তুই যদি মনে ধরে বসে থাকিস যে ও তোকে ভালোবাসে না তাহলে তোদের মধ্যে দূরত্ব বাড়বে। আগে নিজের ডাউট ক্লিয়ার কর যে ও তোকে সত্যি ভালোবাসে কি না।
রাজ: (আদিত্যের দিকে তাকিয়ে) শেষমেশ তুইও ভালোবাসায় বিশ্বাস করলি তাই তো?
আদিত্য: (মাথা চুলকে) কি জানি কিভাবে ভালোবেসে ফেললাম।
রাজ: ওই যে বললাম, বিয়ে! ইংরেজি ভাষায় অ্যাটাচমেন্ট আর বাংলায় বিয়ে। তুই কাওকে কখনও ভালোবাসার চোখে দেখিসনি কারণ তুই এটায় বিশ্বাসী ছিলিস না। কিন্তু তুই জেলাসি, অধিকারবোধ এসবে তো বিশ্বাসী ছিলি না এমন তো নয়? বিয়ের জন্য তোর এগুলো হয়েছে আর সেখান থেকেই ইউ আর ফল ইন লাভ! ইউ নো ইট ইজ দ্য বেস্ট ফিলিং হোয়েন ইউ ফল ইন লাভ। (মুচকি হেসে)
আদিত্য: ভাগ্যিস বিয়েটা করেছিলাম নাহলে এতো ভালো একটা ফিলিংস কোনোদিন ফিল করতে পারতাম না। (নিজে নিজে হেসে)
রাজ: আমি আমার ডাউট ক্লিয়ার করি আর তুমি নিজের ফিলিংস ফিল করাও। আমি চললাম, চলে আসিস। টাটা!
রাজ হেসে চলে গেলে আদিত্য অবাক হয়ে রইলো।
আদিত্য: হুট করে এভাবে চলে গেল কেন? একই জায়গায় তো যাবো তো ওর আগে যাওয়ার কি হয়েছিলো? (অবাক হয়ে)
__আপনি এতক্ষন দাঁড়িয়ে কেন ছিলেন?
আদিত্য পিছন থেকে মৌমিতার গলার আওয়াজ পেয়ে রাজের চলে যাওয়ার কারণ বুঝলো। মৌমিতার দিকে ফিরতেই দেখলো মৌমিতা ওর দিকেই তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মৌমিতা: (মনে মনে– কিছু না বলে হুট করে এগিয়ে আসছেন কেন? কি করলাম আবার?)
আদিত্য আমার দিকে এগোতে শুরু করলে আমি মাথা নামিয়ে নেই। উনি আমার সামনে এসে আমার দিকে ঝুঁকে কানের কাছে বলেন,
আদিত্য: ঘরে যাও, এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা ঠিক না এখন।
আমি আদিত্যের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে চারিদিকে একটু তাকালাম। তখনই আমার মনে পড়লো কোয়েলের কথা।
আদিত্য: যেতে বলেছি আমি? (ধমক দিয়ে)
মৌমিতা: আব… ঠিক আছে যা..
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আদিত্য আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে হস্টেলের ভিতর ঢুকিয়ে দিলেন।
আদিত্য: সিধে ঘরে, একদম বেড়াবে না আজকে।
মৌমিতা: আপনি, আপনি একা বাড়ি যাবেন? রাজদা কোথায়? (চিন্তিত হয়ে)
আদিত্য: রাজ অপেক্ষা করছে আমার জন্য। তুমি যাও।
মৌমিতা: কিন্তু আমি তো দেখলাম রাজদা চলে গেলেন তাহলে?
আদিত্য: আমি তোমাকে যেতে বলেছি তো? (রেগে, অনেক জোরে)
আমি কেঁপে উঠলাম আদিত্যের ধমক শুনে। কাচুমাচু মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে পিছতে পিছতে বললাম,
মৌমিতা: বাড়ি পৌঁছে ফোন করবেন, আমি অপেক্ষা করবো।
কথা শেষ করে ছুটে চলে এলাম। ঘরে আসতেই দেখলাম কোয়েল কপালে হাত দিয়ে সমানে পায়চারি করছে। মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে চিন্তিত। আমাকে দেখতেই ছুটে এলো আমার কাছে।
কোয়েল: কি দেখলি বাইরে?
মৌমিতা: ওখানে অনেকগুলো ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো কোয়েল। ওদের চাহুনি আমার ভালো লাগলো না। আদিত্য আমাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগও দিলেন না ঘরে পাঠিয়ে দিলেন আর ব..
কোয়েল: আর বললো আজকে বেরোতে না তাই তো?
মৌমিতা: তুই কি করে জানলি? (অবাক হয়ে)
কোয়েল: রাজও আমাকে এক কথাই বললো। গাড়ি থেকে নামতেই হুট করে বললো যে সোজা হস্টেলে যেতে আর আজকে না বেরোতে।
মৌমিতা: আমি তো বুঝতে পারছি না ওরা আমাদের নিয়ে কেন চিন্তা করছে? আমার তো মনে হচ্ছে ওই লোকগুলো ওদের কোনো ক্ষতি করতে পারে। আমি স্পষ্ট দেখেছি রাজদা চলে গেছেন। এখন? এখন উনি কি একা যাবেন? আমার মাথায় না কিচ্ছু আসছে না বিশ্বাস কর। (কাঁদো কাঁদো গলায়, চিন্তিত হয়ে)
কোয়েল: পরেশবাবু আদিত্যদার ক্ষতি করবে না মৌ। কারণটা জিয়া! জিয়া ভালোবাসে আদিত্যদাকে। আদিত্যদা জিয়াকে প্রশ্রয় দিতো এই দিনটার জন্যেই যাতে পরেশবাবু আদিত্যদার ক্ষতি করতে চাইলেও ক্ষতি করতে না পারে কিন্তু তোকে জিয়া সহ্য করতে পারে না। আদিত্যদা আর তোকে একসাথে জিয়া দেখতে চায় না তাই পরেশবাবু তোর ক্ষতি করতেই পারে। তুই বুঝতে পেরেছিস কি না জানি না আমি তো বুঝে গেছি তুই আদিত্যদার উইক পয়েন্ট!
মৌমিতা: আদিত্য যেমন ওনার উইক পয়েন্ট জিয়াকে ওনার বিরুদ্ধে ইউস করেছেন তেমন উনিও আমাকে আদিত্যকে কাবু করতে ইউস করতে চাইছেন?
কোয়েল: এক্সাক্টলি! যেখানে রাজকেই উনি বলেছেন যে ওর থেকে ওর প্রিয় মানুষকে কেড়ে নেবেন সেখানে আদিত্যদার সাথে তো এটা করবেনই। শুধু তুই না, আন্টি মানে আদিত্যদার মা’ও আদিত্যদার উইক পয়েন্ট।
মৌমিতা: আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে কোয়েল। উনি, উনি আমাকে থাকতেই দিলেন না ওখানে।
কোয়েল: (মৌমিতাকে ধরে) আদিত্যদাকে আর কিছুক্ষণ পর কল করিস।
মৌমিতা: আমি উনাকে বলেছি বাড়ি পৌঁছে কল করতে।
কোয়েল: তাহলে ঠিক করবে চিন্তা করিস না। (মনে মনে– আমি তো কিছু বলতেও পারলাম না রাজকে। ও তো চলে গেলো, বাড়ি পৌঁছেছে? ওহ, আদিত্যদার সাথেই তো থাকছে আদিত্যদাকেই না হয় জিজ্ঞেস করবো। সেটাই ভালো হবে।)
৪৯.
মৌমিতা চলে যেতেই আদিত্য নিজের গাড়ির সামনে এসে নিজের শার্টের হাতা গোটাতে শুরু করলো। আদিত্যকে ওভাবে দেখে যে কয়জন ছেলে এতক্ষন দাঁড়িয়ে ওদেরকে নজরে রাখছিলো তারা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের গাড়ি করে চলে গেলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে। ওরা চলে যেতেই….
‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৩৩||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
৪৯.
মৌমিতা চলে যেতেই আদিত্য নিজের গাড়ির সামনে এসে নিজের শার্টের হাতা গোটাতে শুরু করলো। আদিত্যকে ওভাবে দেখে যে কয়জন ছেলে এতক্ষন দাঁড়িয়ে ওদেরকে নজরে রাখছিলো তারা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের গাড়ি করে চলে গেলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে। ওরা চলে যেতেই…. আদিত্য রাজকে ফোন করে,
আদিত্য: রাজ তুই কোথায়?
রাজ: কেন কিছু হয়েছে?
আদিত্য: তুই কিছু লক্ষ্য করিসনি? (গম্ভীর গলায়)
রাজ: করেছি দেখেই তুই থাকতে বেরিয়ে এসেছি। কারণ যতক্ষন তুই থাকবি ততক্ষণ ওরাও ওখানেই থাকবে আমার পিছন করতে পারবে না। এই পরেশবাবুর আমার সাথে খেলার জন্য আরো বেশি বুদ্ধির প্রয়োজন। এই বুদ্ধি নিয়ে পারবেন না আমাকে মারতে। (মজা মেরে)
আদিত্য: বাজে কথা বন্ধ কর। কি গ্যারেন্টি আছে ওরা এখন তোর পিছু নেবে না? কোথায় তুই? টেনশন হচ্ছে আমার বুঝিছিস না কেন? (চিন্তিত হয়ে)
রাজ: (হেসে) আই নো বাডি কিন্তু আমাকে অফিস আসতেই হতো। আমি না আসলে এদিকটা সামলানো যেতো না। টিনা এসেছিল আমাকে খবর দিতে ফোনে না পেয়ে। তুই টেনশন নিস না আমি চলে আসব।
আদিত্য: অফিস কোথায় তোর? আমি আসছি।
রাজ: পাগলামি করিস না ভাই আমার। কিচ্ছু হবে না আমার। নো প্যানিক অনলি টনিক! (হেসে, মজা করে)
আদিত্য: (হেসে) টনিক আর পাচ্ছি কোথায়? (আনমনে)
রাজ: কি বললি? (চমকে উঠে)
আদিত্য: ক..কিছু না। তুই সাবধানে আসিস।
আদিত্য সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিলো আর নিজের মনে মনে ব্লাশ করতে লাগলো। একবার উপরের দিকে জানলার দিকে তাকাতেই মৌমিতার সাথে চোখে চোখ পড়ে গেলো। আদিত্য ভাবেনি মৌমিতা জানলায় দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্যের সাথে চোখে চোখ পড়তেই আদিত্য দেখে মৌমিতা মুখের সামনে বই তুলে ধরলো জানো ও পড়ছে। আদিত্য হেসে ফেললো সেটা দেখে।
মৌমিতা: (মনে মনে– উফ! এখনও দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আর ওই ছেলেগুলো? ওদেরকেও তো দেখতে পাচ্ছি না।) এই কোয়েল! ওই ছেলেগুলো এখন আর নেই।
আমার কথা শুনে কোয়েল ছুটে এলো। ও আসতেই আমি সরে গেলাম। ও জানলা দিয়ে কিছুক্ষণ উঁকি ঝুঁকি মেরে নিয়ে আমার দিকে ঘুরে বললো,
কোয়েল: হ্যাঁ ওই ছেলেগুলো নেই আর আদিত্যদাও বেরিয়ে গেলেন। ধুর! গেলেন কি বলছি গেলো। এই তোর আপনি আপনি শুনে আমি নিজেও আপনি বলে ফেলছি। (কপালে চাপড় মেরে)
মৌমিতা: হুহ! (ভেংচি কেটে চলে গেলো।)
মৌমিতা ওয়াশরুম যেতেই কোয়েলের ফোন বেজে উঠলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য ফোন করছে।
কোয়েল: আদিত্যদা কেন ফোন করছে কেন হঠাৎ করে? রাজের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে হয়তো। (ফোন রিসিভ করে) হ্যাঁ আদিত্যদা বলো।
আদিত্য: কোথায় গেছিলি আজকে রাজের সাথে?
কোয়েল: আব…
আদিত্য: বল, বল। লজ্জা পাওয়া লাগবে না।
কোয়েল: লজ্জা কেন পেতে যাবো? আসলে, আমাকে রাজ কিছুই বলেনি। বললো সব ঘটনা একে অপরের সাথে যুক্ত, জানতে গেলে প্রথম থেকে জানতে হবে নাহলে কিছুই বুঝতে পারবো না। শুধু এটুকু বললো যে, ওর কাছ থেকে ওর সবথেকে প্রিয় মানুষটাকে কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়েছেন।
আদিত্য কথাটা শুনে চুপ করে রইলো। কোয়েলও কিছু বলছে না। বুঝতে পারছে না নিজের মনে থাকা প্রশ্নটা কিভাবে জিজ্ঞেস করবে আদিত্যকে।
আদিত্য: তা প্রিয়জনটা কে রাজের? জিজ্ঞেস করিসনি?
কোয়েল: ন..না মানে….
আদিত্য: সব জেনেও না বোঝার ভান করিস না। এখন যা পরিস্থিতি তাতে যেকোনো সময় রাজের বিপদ হতেই পারে, এইবার যদি হারিয়ে ফেলিস তাহলে কিন্তু কোনোদিন ফিরে পাবি না।
কোয়েল: আদিত্যদা প্লিজ! কিসব আজে বাজে কথা বলছো তুমি? (রেগে, ভয় পেয়ে)
আদিত্য: (শান্ত গলায়) কিছুক্ষন আগে কে জানো বলছিল রাজের খবর রাখার কোনো দরকার নেই, ওকে নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই?
কোয়েল: (নিশ্চুপ)
আদিত্য: রাজ আমার বাড়ি ফেরেনি। কল করেছিলাম বললো আমি থাকতেই ইচ্ছা করে বেরিয়ে গেছে যাতে ছেলেগুলো ওর পিছন না করতে পারে। আমাকে পরেশবাবু কোনো ক্ষতি করবেন না শুধু নজরে রাখবেন সেটা আজকেই বুঝে গেলাম কিন্তু রাজের ক্ষেত্রে উনি কি চাইছেন আমি জানি না। মৌমিতাকে আমি আগলে রাখবো, ওর কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবো না তেমন রাজও তোকে আগলে রাখবে কিন্তু রাজকে কে আগলাবে কোয়েল? আমি জানি তুই মৌমিতার ফোন থেকে রাজের নাম্বার নিয়ে রেখেছিস। রাখছি আমি।
আদিত্য ফোন রেখে দিলে কোয়েল ফোনটা কান থেকে নামিয়ে হাতে নিয়ে চুপ করে বসে থাকে। মনে মনে ভাবে,
কোয়েল: (মনে মনে– রাজ আজকে কিচ্ছু বললো না, বললো পরে বলবে। কিন্তু কবে? এতদিন আমি অপেক্ষা করছিলাম শুধুমাত্র যেদিন ও সামনে আসবে সেদিন ওর মুখ থেকে সবটা জানার জন্য। কি এমন কারণ ছিলো যার কারণে ও হুট করে কাউকে কিছু না জানিয়ে উধাও হয়ে গেলো? আদিত্যদা বললো ও বাড়ি যায়নি তাহলে কোথায় গেছে? আজকে তো অফিস আউটফিটে ছিলো, কিন্তু কেন?)
কোয়েল ফোনটা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাজকে ফোন করলো। রাজ ফাইল চেক করতে করতে ব্লুটুথ দিয়ে কল রিসিভ করে বললো,
রাজ: ইয়েস!
কোয়েল: কোথায় তুমি?
রাজ চমকে উঠে নিজের ফোনের দিকে তাকালো। দেখলো স্ক্রিনে “কুহুজান” নামটা স্পষ্ট। রাজ বিস্মিত হয়ে কিছুক্ষন একভাবে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলো। ও ভাবতে পারছে না কোয়েল ওকে ফোন করেছে? অন্যদিকে কোয়েল কোনো উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো,
কোয়েল: কি হলো, কোথায় তুমি?
রাজ: হ..হ্যাঁ? আ..আমি? আমি তো অ…
__রাজ আমার কাজ শেষ, চলো এবার। বাড়ি ফিরতে হবে তো নাকি? রাত হতে চললো।
রাজ নিজের জিভ কেটে চোখ বুজে রইলো কিছুক্ষন তারপর বলল,
রাজ: টিনা তুমি বেরিয়ে যাও, আমি আরেকটু পরে বেরোচ্ছি।
টিনা: কিন্তু রাজ রোজ তো তুমি আমাকে ড্রপ করে দাও, আজকে আমি একা যাবো?
রাজ: হ্যাঁ একা যাবে। কারণ আমি তোমাকে জাস্ট ওয়ান উইক ধরে ড্রপ করে দিচ্ছি এর আগে কি করতে? যেটা করতে এখনও সেটাই করো। কাওর উপর লাইফে ডিপেন্ড করা ঠিক নয় ওকেই? ইউ মে গো নাও!
টিনা আর কিছু না বলে চলে গেলে রাজ ফোন চেক করে দেখে কোয়েল এখনও লাইনে আছে।
রাজ: হ্যাঁ ব…
কোয়েল: মেয়েটা কে? আজকে বিকালে যাকে দেখলাম সেই?
রাজ: (মনে মনে– মনে হচ্ছে ভিতর ভিতর রাজরানী ভালোই জ্বলছে। (মনে মনে হেসে) হ্যাঁ, ও টিনা..
কোয়েল: তোমার সেই প্রিয়জন তাই না? যাকে পরেশবাবু কেড়ে নিতে চান? বুঝতে পে…
রাজ: হোয়াট রাবিশ! জেনে বুঝে কথা বল কোয়েল! (প্রচন্ড রেগে)
কোয়েল রাজের ধমকে একটু কেঁপে উঠলো।
রাজ: ওই জায়গাটা আমার জীবনে শুধুমাত্র ত..(থেমে) একজনের। ওই জায়গাটা নিয়ে অন্য কোনো ভুলভাল লোকের নাম জড়াবি না বারণ করে দিলাম আমি। (একনাগাড়ে)
কোয়েল: বাড়ি ফিরবে কখন? (শান্ত গলায়)
কোয়েলের এমন শান্ত গলায় প্রশ্ন শুনে রাজ একটা নিশ্বাস ছাড়লো। আস্তে করে বললো,
রাজ: একটু পরে।
কোয়েল: কয়েকদিন তাড়াতাড়ি আদিত্যদার সাথে বাড়ি ফিরলে খুব অসুবিধা হবে কি? আমার কথা না শোনো, আদিত্যদার কথা শুনে অন্তত চেষ্টা করো।(অভিমান করে)
রাজ: (চোখ বন্ধ করে মনে মনে– মান ভাঙাতে পারলাম না এখনও অবধি এর উপর অভিমান করে বসলো। নাহ আজকে আর কাজ করা যাবে না।) আমি বেরোচ্ছি এখনই। পৌঁছে তোমাকে কল করবো।
কোয়েল: কল রাখতেই হবে? (বিছানায় একপাশ হয়ে শুয়ে)
রাজ: (হেসে ফেললো) উহুম, দরকার নেই রাখার।
কোয়েল নিজেই বালিশে মুখ গুঁজে ফেললো রাজের কথা শোনা পর।
এদিকে,
আমি ওয়াশরুম থেকে এসে বই গুছিয়ে রাখার পরেও দেখলাম কোয়েল ফোনে কথা বলছে। কার সাথে এতো কথা বলছে ও? আগে তো কোনোদিন দেখিনি কাওর সাথে ফোনে কথা বলতে তাহলে আজ? আমি এগিয়ে গিয়ে কোয়েলকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই আমার ফোন বেজে ওঠে। আদিত্য ফোন করেছে এইভেবে দৌঁড়ে ফোনের কাছে ছুটলাম। যা ভেবেছি তাই! আদিত্য ফোন করেছেন। ফোনটা নিয়ে বসে পড়লাম ডেস্কে।
মৌমিতা: বাড়ি পৌঁছে গেছেন?
আদিত্য: আজ্ঞে। ফ্রেশ হয়েই কল করলাম।
মৌমিতা: একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
আদিত্য: হম করো। (বালিশ কোলে নিয়ে)
মৌমিতা: ওই ছেলেগুলো কে ছিল?
আদিত্য: পরেশবাবুর লোক। আমার উপর, আমার উইক পয়েন্টের উপর নজর রাখছিলো। আঘাত করতে হবে কি না? (গম্ভীর ভাবে)
মৌমিতা: আপনি রাজদার কথা বলছেন? (মুখ টিপে হেসে)
আদিত্য: (দাঁতে দাঁত চেপে) হ্যাঁ! তো আর কার কথা বলবো? ওই তো মার উইক পয়েন্ট! আমার জানের জান।, পরানের পরান। আর কদিন পর বিয়ে করবো তো ওকে, তুমি এসে খেয়ে যেয়ো ভালো ভাবে।
আমি পারছি না জোরে হাসতে। কোনো মতে মুখ চেপে রেখেছি ওনার কথা শুনে। বাপ রে, এতো মজা আগে কোনোদিন পাইনি যা আজকে পেলাম। উফ, মন খুলে হাসতে ইচ্ছা করছে কিন্তু এখন সেটা করলে বোম্ব ব্লাস্ট হয়ে যাবে।
আদিত্য: রাখছি আমি ফোনটা। (রেগে)
মৌমিতা: (হাসি চেপে) আরে শুনুন, শুনুন। আপনারা কবে বিয়ে করছেন বললেন না তো? ডেস্টিনেশন ওয়েডিং করবেন নাকি?
আদিত্য: বাড়াবাড়ি হচ্ছে এবার। (অতিরিক্ত রেগে)
মৌমিতা: আচ্ছা বাবা স্যরি! (হাসি থামিয়ে) কিন্তু হিহিহি…
আর পারলাম না নিজেকে সংযত করতে হেসেই ফেললাম। ওদিকে, আদিত্যও মৌমিতার হাসি শুনে আর রেগে থাকতে পারলো না হেসে ফেললো।
মৌমিতা: আদিত্য, আপনি মায়ের খোঁজ নিয়েছেন? পরেশবাবু বাবা-মার কোনো ক্ষতি করবেন না তো?
আদিত্য: হম, আমিও ভেবেছি বিষয়টা। দেখছি কি করা যায়, দরকার পড়লে মাকে এখানে এনে রাখবো।
মৌমিতা: আমারও মনে হয় এটাই ভালো হবে। বাবা তো এখন কাজের সূত্রে এখানেই থাকবেন এই সুযোগে পরেশবাবু মার ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারেন।
আদিত্য: হম। (নার্ভাস হয়ে)
মৌমিতা: আপনি এখন টেনশন করবেন না। আগামীকাল সকালে উঠেই মাকে এখানে আনার ব্যবস্থা করুন।
আদিত্য: তুমিও সাবধানে থাকো। হস্টেল থেকে বেরোবে না বেশি। কোয়েলকে তো বেরোতেই দেবে না।
মৌমিতা: কেন?
আদিত্য: তুমি কিছু বুঝতে পারনি? আমি যতদূর যা জানি তুমি বেশ বুদ্ধিমতী।
মৌমিতা: কোয়েল আর রাজদার মধ্যে কিছু একটা আছে এটা আমি জানি কিন্তু ওদের মধ্যে কি হয়েছে সেটা তো…
আদিত্য: জানবে, আস্তে আস্তে সব জানতে পারবে। রাজের বিষয়ে এখনও কোয়েল নিজেই কিছু জেনে উঠতে পারেনি। ও আগে জানুক, তুমিও জেনে যাবে। ও এখন রাজের সাথেই কথা বলছে প্রবাবলি।
মৌমিতা: আমারও তাই মনে হয়। আগে কোনোদিন দেখিনি এতক্ষন কাওর সাথে ফোনে কথা বলতে।
আদিত্য: মেয়েরা একটু বেশীই অবুঝ। কোনো কিছু সহজে বুঝতেই চায় না, স্যরি! পারে না। কি আর করা যাবে এতে? চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। (অসহায় ভাবে, দুঃখ করে)
মৌমিতা: (না বোঝার ভান করে) কি বলতে চাইছেন আপনি?
আদিত্য: বোঝোনি? নাকি বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করছো কোনটা?
মৌমিতা: ম..মানে? (আমতা আমতা করে)
আদিত্য: এই যে, রাজের কথা বলছিলাম। রাজের অবস্থাটা কোয়েল বুঝতেই চাইছে না। (বাঁকা হেসে)
মৌমিতা: (মনে মনে– বদ ছেলে, হুহ! কথাটা ঘুরিয়ে দিলো। ধুর!) ঠিক আছে আমি রাখলাম।
আদিত্য: (হেসে) কেন? হঠাৎ কি হলো?
মৌমিতা: কিছুই না। কি আবার হবে? (মন খারাপ করে)
আদিত্য: পরেশবাবু আমার আর রাজের দুজনেরই উইক পয়েন্ট এ আঘাত করতে চাইছেন কারণ আমি ওনার উইক পয়েন্টে আঘাত করেছি। রাজ যেমন চায় না কোয়েলকে হারাতে আমিও চাই না তো…
আমি আদিত্যের কথাটা শুনে চোখ বন্ধ করে নিলাম এদিকে আদিত্যও চুপ করে গেলেন। ওনার পরের কথাটা শোনার জন্য ভীষণ আগ্রহ হচ্ছে।
আদিত্য: (নিজেকে সংযত করে) আমিও চাই না যে আমার কারণে তোমার কোনো ক্ষতি হোক। জিয়া তোমাকে সহ্য করতে পারে না তাই তোমারও ক্ষতি করতে চাইবে পরেশবাবু।
মৌমিতা: ওহ! (মন খারাপ করে)
আদিত্য: (মনে মনে– আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছো আমার কথায়। তুমি শুনতে চেয়েছিলে আমিও তোমাকে হারানোর ভয় পাই কিন্তু কেন? কেন শুনতে চাও এটা তুমি? কারণ তুমি আমাকে ভালোবাসো আর এটা তোমাকে বুঝতে হবে মৌ! আমি তোমাকে বোঝাবো এটা।) কে মেনে নিতে পারে নিজের সবথেকে দুর্বল জায়গায় আঘাত করলে? আমিও পারবো না মেনে নিতে যদি তোমার কোনো ক্ষতি হয়..আমার জন্য!
আমি এবার হেসে ফেললাম। উফ! এই ছেলেটা নিজের মনের কথাটা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না? অবশ্য পারবে কিভাবে প্রেম-ভালোবাসায় অবিশ্বাসী ছিল কি না। বেশ মজাদার লাগছে এখন ব্যাপারটা, দেখি কতদিন সময় লাগায় নিজের মনের কথাটা বলতে।
আদিত্য: গুড নাইট! খেয়ে নিয়ে শুয়ে পরো। আমিও শুয়ে পড়বো খুব টায়ার্ড লাগছে।
মৌমিতা: হম, গুড নাইট।
আমি ফোন রেখে বিছানার কাছে যেতেই দেখলাম কোয়েল এখনও কথা বলছে। ওকে ডিস্টার্ব না করে খাওয়ার আনতে চলে গেলাম।
রাজ: পৌঁছে গেছি বাড়ি ম্যাডাম।
কোয়েল: আচ্ছা। যাও ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়ে শুয়ে পরো। আজকে অনেক খাটাখাটনি গেছে।
রাজ: (মনে মনে হেসে– এই মেয়ে নাকি আমার কথা ভাবে না। ভাবলেও হাসি পাচ্ছে।) আজ্ঞে। তুইও যা গিয়ে খেয়েনে।
কোয়েল: হম। গুড নাইট।
রাজ: রাতে ঘুমানোর আগে মেসেজ করে ঘুমাবি।
কোয়েল: যে আগে ঘুমোতে যাবে সে মেসেজ করবে।
রাজ: (হেসে) ওকে ডান!
কোয়েল: (হেসে) টাটা।
কোয়েল ফোন রেখে পিছন ঘুরতেই দেখে মৌমিতা খাবার নিয়ে বসে আছে।
কোয়েল: ও তুই খাবার নিয়ে চলে এসেছিস?
মৌমিতা: কেন? তুই কি ভাবলি আমি এখন ওয়াশরুম থেকে বের হলাম? (ঠোঁট চেপে হেসে)
কোয়েল: না, মানে ইয়ে…
মৌমিতা: থাক, থাক। খেয়েনে চুপচাপ এখন।
আমি আর কোয়েল খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমোতে চলে গেলাম।
চলবে।