#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৪৬
#Saji_Afroz
আরশান ও মানতাশার দুরত্ব দেখে এজাজের মনে যেন নতুন এক আশা জন্ম নিয়েছে। আর তা হলো মানতাশাকে আবারও নিজের করে ফিরে পাওয়ার। সে লোভে পড়ে ভুল করেছিল। এখন নিজের ভুল শোধরাতে চায়। তবে ভুল শুধরে কী সে এজাজের কাছে ফিরে আসতে পারে না? জানে, সবটা এতটাও সহজ হবে না। এজাজের পরিবার মেনে নেবে না। কিন্তু আজও যে এজাজ ভুলতে পারেনি মানতাশাকে। তাইতো এতকিছুর পরেও তাকে আবারও ফিরে পেতে চায় সে।
এজাজের হাতে সময় খুব বেশি নেই। একবার কী কথা বলে দেখবে মানতাশার সঙ্গে?
এই ভেবে এজাজ ফোন দেয় মানতাশাকে। তার সঙ্গে একা দেখা করতে বলল। মানতাশা তাকে আসবে জানায়।
এদিকে মানতাশাকে তৈরী হতে দেখে কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞাসা করে আজরা। মানতাশা মুখ ফসকে সঠিক ঠিকানা দিয়ে দিলেও এজাজের সঙ্গে দেখা করবে তা জানায়নি।
বলল, এসে সব জানাব তোকে। কিন্তু তুই প্লিজ আরশানকে যেন কিছু বলতে না যাস!
আজরাকে ফোন করেছিল আরশান। লাইনে রেখেই সে এখানে এসেছিল। কারণ একটাবার সে মানতাশার সঙ্গে কথা বলতে চায়। জানাতে চায় নিজের সিদ্ধান্ত। তাই আজরা ফোন হাতে এখানে এসেছিল। ওপাশ থেকে সবই শুনে আরশান।
মানতাশা বেরুনোর পর ফোন কানে নিয়ে মুচকি হেসে আজরা বলল, আমি কিন্তু কিছু বলিনি ভাই!
আরশানও হেসে বলল, বেরুচ্ছি তবে আমিও।
.
.
.
আজরা কী সবসময় নাবীহাকে নিয়ে এমন কথাবার্তা বলতে থাকে? নিশ্চয়! নাহলে সে এসব বলার সময়ই কেন নাবীহা গিয়ে পৌঁছায় সেখানে?
প্রথমদিন অবশ্য ভুলবশত সেসব শুনে ফেলেছিল নাবীহা। কিন্তু পরবর্তীতে আড়ালে দাঁড়িয়ে গোপনে ইচ্ছেকৃতভাবেই সব শুনেছে সে। নিজের প্রতি আজরার এমন ধারণা শুনে কষ্ট পাওয়ার চেয়েও রাগ হচ্ছে নাবীহার। সে নাকি তাদের হিংসে করে! যদি তাই করতো তবে শুরুতেই আজরার সঙ্গে ইনতিসারের বিয়ের কথা শুনে কুপরামর্শ দিতো তাকে। কই! এমন কিছুই তো সে করেনি! আরশান মানতাশার গায়ে হাত তুলেছে বলে তার কাছে এখন ফিরে না যাওয়ার পরামর্শ সে দিয়েছে। আর কখনোই না যেতে তো বলেনি! শুধুমাত্র আরশান যাতে মানতাশার শূন্যতা অনুভব করে সেইজন্যেই তার এমন চাওয়া। এটাকে এমন বাজে ভাবে আজরা উপস্থাপন করবে কখনো ভাবেনি সে।
নাবীহার ফোন বেজে উঠে। তার ফুফু ফোন করেছে। নিশ্চয় তাকে আরও কিছু কথা শোনাবেন। তবুও সে ফোনটা রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে সাজেদা বেগম বললেন, সাজির তার বউ এর রাগ ভাঙিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে এসেছে।
নাবীহা বলল, ভালো খবর। আমাকে কেন বলছেন?
-যাতে তুমি আর কোনো শয়তানি না করো।
নাবীহা একটু কর্কশ কণ্ঠে বলল, সবসময় আজেবাজে কথা আপনি বলবেন না। আগে ফুফু মনে করে চুপ থাকতাম। এখন সম্পর্ক নেই বলে যখন আপনি আমাকে অপমান করেন তেমনি আমিও করতে পিছপা হব না। তাই মুখ সামলে কথা বলবেন।
হঠাৎ নাবীহার মুখে এমন কথা শুনে চমকালেন সাজেদা বেগম। অবাক হয়ে বললেন তিনি, কিসের এত তেজ তোমার? জাত বংশের কিছু ঠিক নাই! এত বড়ো মুখ নিয়ে চলো কিভাবে? ওহহো! শুনেছি বান্ধবীর দয়ায় দিন পার হচ্ছে। এসবই পারবা। ওমন পরিবারের দয়া পাবার যোগ্য তুমি, সদস্য হওয়ার নয়।
-তাই! খুব তাড়াতাড়ি দেখা যাবে আমি কিসের যোগ্য।
এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় নাবীহা।
একটুর জন্য মনে হয়েছিল সে যা করছে তা ঠিক নয়। কিন্তু তার সাথে যা হচ্ছে তা কী ঠিক? এইবার আর ভুল ঠিক কিছুই ভাববে না সে। তাই করবে যেটা তার মন বলে। এবং সবাইকে দেখিয়ে দেবে সে চাইলেই কী করতে পারে!
-আসব?
ইনতিসারকে দেখে ভেতরে আসতে বলল নাবীহা। সে আসলে নাবীহা বলল, তারপর? কী সিদ্ধান্ত নিলেন আপনি?
-আমি তোমাকেই ভালোবাসি। এটা তো মানো?
-কিভাবে মানব বলুন? মানার মতো করে দেখান কিছু!
-আজরার মতন বউ থেকেও তোমার পেছনে ঘুরছি। এতে বোঝো না?
-স্বীকার করলেন তবে আজরা ভালো?
-নি:সন্দেহে সে ভালো।
-তবে থাকুন তার সঙ্গে।
-না নাবীহা। আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। কিন্তু তোমার কী মনেহয়? আজরাকে বললেই তালাক দিয়ে দেবে? দেবে না! কারণ ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। প্রয়োজনে সতীনের সংসার করবে সে।
একটু ভেবে নাবীহা বলল, হুম। এটা আমিও মানি। কিন্তু কতদিন আর যন্ত্রণা সহ্য করবে? জোর করে কী সংসার করা যায়? ঠিকই ছেড়ে দেবে একদিন।
-একদিন সেটা কোনদিন হয় তা কী বলা যায় বলো? তাছাড়া আমার মা জানলে এটা কখনোই হতে দেবেন না।
-তবে আপনি কী চাইছেন?
-বিয়েটা সেরে নিতে৷ বিয়ে হয়ে গেলে মা ও কিছু করতে পারবে না। এদিকে আজরা তার বান্ধবীকেই বিয়ে করেছি দেখে নিজেই চলে যাবে।
-গ্যারান্টি কী? যদি সে থেকে যায়! তালাক ছাড়া আপনাকে আমি বিয়ে করছি না। আমি আজরা নই। ভুলভাল আমাকে বোঝাবেন না প্লিজ। যদি আজরাকে ছাড়তে না পারেন তবে আমাকে জীবনে জড়াতে আসবেন না।
হতাশ হয়ে উঠে পড়ে ইনতিসার। অনেক ভেবেছে সে। ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবনে তার নাবীহাকেই প্রয়োজন। আরেকবার ওকে পাওয়ার সুযোগ সে হাত ছাড়া করতে চায় না। কিন্তু এখন তালাকের কথা বললে কত ধরনের অসুবিধা হবে এটা নাবীহা বুঝছে না।
যেতেও চেয়েও থেমে যায় ইনতিসার। পেছনে ফিরে বলল, আমার এই কথাটা শোনো। এতে করে আমাদের সবার জন্যই ভালো হবে। আমি চাইনা কোনো ঝামেলায় আর তোমাকে হারাতে। একবার বিয়ে হয়ে গেলে বাকি সব সহজে হয়ে যাবে।
.
.
.
-কী বলবে বলে ডেকেছ? বলছ না কেন?
মানতাশার কথা শুনে এজাজ বলল, তুমি তো জানো কত ভালোবাসতাম তোমাকে আমি? একটু হলেও তো ধারণা রয়েছে?
-হুম।
-সেই ভালোবাসা এখনো রয়েছে মানতাশা। তাই তুমি কষ্ট আছ জেনে স্থির থাকতে পারছি না। যার কারণে পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।
-কী?
-তোমাকে আবার আমার করে নেওয়ার।
একথা শুনে মানতাশা অবাক হয়ে বলল, কী বলছ?
-হু৷ আমি চাই তুমি আবারও ফিরে আসো আমার কাছে। যা হয়েছে সব ভুল মনে করে ভুলে যাও।
আজও তার প্রতি এজাজের এমন ভালোবাসা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয় মানতাশা। আরও একবার তাকে ঠকানোর জন্য আফসোস হলো তার৷ কিন্তু মানতাশা এজাজের প্রস্তাব মুহুর্তেই প্রত্যাখ্যান করে বলল, তুমি কী চাও? আরও একবার ভুল করি আমি?
-চাইনা বলেই এসেছি তোমার কাছে।
-তোমাকে ঠকিয়েছিলাম এর শাস্তিস্বরূপ এসব আমার প্রাপ্য ছিল। কিন্তু আমি এখন নতুন করে আর কাউকে ঠকাতে চাইনা। আরশান যেমনোই হোক, সে আমার স্বামী। এই সম্পর্কটাকে এতটা ঠুংকো আমি বানাতে চাইনা। আমার ভুল ছিল, ওর ও ছিল। সবটা সংশোধন করে আমি আবার নতুন করে শুরু করব ওর সাথেই। আরশান আমাকে ফিরে পেতে চায়। আমিও কী ওর সাথে কম অন্যায় করেছিলাম! তবে আমি কেন যাব না!
একটু থেমে মানতাশা বলল-
আমি আরশানকে একটি শর্ত দিয়েছিলাম। এটি সে পূরণ করলেও যাব না করলেও যাব। জানি যে এটি পূরণ করলে হয়তো ভাই ভাবীর সাথে সম্পর্ক ছেদও হতে পারে। এতে করে এত আরাম আয়েশের জীবন থেকে বঞ্চিত হব আমরা। কারণ সবকিছুই তার ভাই এর গড়া। বিশ্বাস করো, তবুও আমি আরশানের সঙ্গেই থাকতে চাই। শুধু তাই কেন! যদি কুড়ো ঘরেও কোনো কারণে থাকতে হয় আমি থাকব। আর কোনো লোভ আমি করব না। এইবার অন্তত বৈবাহিক সম্পর্কটাকে গুরুত্ব আমি দেব। কিছু মনে করো না এজাজ। আজ আরেকবার তোমাকে প্রত্যাখ্যান করতে হচ্ছে নিজের সম্পর্কের খাতিরে।
মানতাশার কথা শুনে দু:খ পেল না আজ। বরং আজ সে মানতাশার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানালো। কারণ আজ সে নিজের সুখের কথা না ভেবে সম্পর্কের গুরুত্ব এর কথা ভেবেছে। মানতাশার মাঝে এমন পরিবর্তন দেখে সত্যিই খুশি হয়েছে এজাজ।
সে বলল, আমি দু:খ পাইনি। তুমি খুব সুখী হও এই আশা করি।
এদিকে দূর থেকে এসব শুনে মুখে হাসি ফোটে আরশানের। মানতাশার অতীতের কথা জেনেও তার কষ্ট হচ্ছে না। ভালো লাগছে তার বলা কথাগুলো শুনে। আরশান নিজেও মানতাশাকে ফিরে পেতে চায়। এর বিনিময়ে তার সব শর্ত মানতে রাজি সে।
.
.
.
কলিংবেল বাজলে আজরা ভাবলো মানতাশা এসেছে। সে ড্রয়িংরুমে ছিল বলে নিজেই দরজা খুলতে এলো। দরজা খুলে নাবীহাকে বউ সাজে দেখে অবাক হলো সে। বিস্ময়ভরা কণ্ঠ নিয়ে বলল, কোথা থেকে এলি তুই?
সে কিছু বলার আগে পেছনে তাকিয়ে আরও বেশি অবাক হলো আজরা। এই কাকে সে বর বেশে দেখছে! এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি!
.
চলবে
#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৪৭
#Saji_Afroz
ইনতিসারকে বরের বেশে দেখে আজরা বলল, আপনারা হঠাৎ এভাবে সেজে এসেছেন? অফিসে কী কোনো প্রোগ্রাম ছিল?
ইনতিসার বলল, ভেতরে এসে সবটা বলছি।
এই বলে নাবীহাকে নিয়ে ভেতরে আসলো সে। আজরা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাথার পাগড়িটা সোফার উপরে রেখে আজরার সামনে আসলো ইনতিসার। সে বলল, একটা চরম সত্য শুনতে তৈরী হও আজরা।
-কী?
ছোট্ট একটা নি:শ্বাস ফেলে ইনতিসার বলল, আমরা বিয়ে করেছি।
কথাটি শুনে পা এর নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায় আজরার। সে কথাটি স্পষ্ট শোনার পরেও আবার জিজ্ঞাসা করলো, কী বললেন?
-আমি আর নাবীহা বিয়ে করে নিয়েছি।
এইবার চ্যাঁচিয়ে উঠে আজরা। সে বলল, কেন? মানে কেন! আপনারা কেন বিয়ে করবেন?
ইনতিসার শান্ত স্বরেই বলল, কারণ আমি ওকে আজও ভালোবাসি। আমার কথাতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে ও।
এইবার নাবীহার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আজরা। সাথে সাথেই নাবীহা দুচোখ নিচের দিকে করে ফেললো। তা দেখে আজরার বুঝতে বাকি রইলো না, ইনতিসার যা বলছে সবই সত্য!
আজরা তার সামনে আসে। ভাঙা গলায় প্রশ্ন করলো, এতবড়ো সর্বনাশ কেন করলি আমার? আমার ইনতিসারকে কেড়ে নিলি কেন?
তার দিকে তাকিয়ে নাবীহা বলল, ইনতিসার কখনোই তোর ছিল না। শুধুমাত্র তোর কাছে ছিল।
আজরা অবাক হয়ে বলল, তুই এসব বলছিস?
-হুম। কারণ আমিও এখন বলতে শিখেছি।
এই বলে নাবীহা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। আজরা নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। ইনতিসার বলল, আমি আর নাবীহা বিবাহিত। এটাই সত্যি আজরা। এখন তুমি চাইলে চলে যেতে পারো। নতুন করে নতুন কাউকে নিয়ে শুরু করতে পারো নতুন জীবন।
তার কথা শুনে আজরা কী বলবে ভেবে পায় না। ইনতিসারও উপরে উঠতে থাকে। তার পথের দিকে তাকিয়ে থাকলো আজরা। একটু আগেও কী ভেবেছিল? এমন একটা দিন দেখতে চলেছে সে!
.
.
.
কাল রাতেই ভয়ংকর এক স্বপ্ন দেখে মানতাশা। আর তা হলো, তার লোভের কারণে সবকিছু হারাতে হয় তাকে। এমনকি মা বাবা ও আরশানের প্রাণও হারায়! সে রাস্তার ধারে একাকিত্ব জীবন শুরু করে। এমন একটি ভয়ানক স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তার। সারা রাত ছটফট করেছিল মানতাশা। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়, এই লোভ সে ত্যাগ করবে। আজরার কথাতে আরশানের কাছে ফিরে যাবে। ভালো মতন চলবে সে। একটাবার এভাবেও চলে দেখুক জীবন কেমন হয়! যেমনই হোক, নিশ্চয় স্বপ্নের চেয়ে ভয়ানক হবে না!
এদিকে মানতাশার এরূপ পরিবর্তন দেখে বেশ খুশি আরশান। তার সম্পর্কের কথা শুনে রাগ হওয়ার কথা আরশানের। কিন্তু সে হলো না। বরং মানতাশাকে আবারও ফিরে পাবে বলে আনন্দিত সে। মানতাশা সম্পর্কের কথা ভেবে যদি লোভ ত্যাগ করতে পারে তবে আরশানও তার এই আলিশান জীবন ত্যাগ করতে প্রস্তুত। সে আজই ভাবীর সাথে কথা বলবে মানতাশাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার।
বাড়িতে এসে মেঝেতে আজরাকে বসে থাকতে দেখে তার পাশে আসলো মানতাশা। তার কাধে হাত রাখতেই কেঁপে উঠলো আজরা। পরমুহূর্তেই মানতাশাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো সে৷
কী হয়েছে জানতে চাইলে আজরা সব খুলে বলল তাকে। সবটা শুনে সে হেসে বলল, নিশ্চয় মজা করছে।
-নাহ। সত্যিই ওরা বিয়ে করেছে।
-আচ্ছা তুই উঠে সোফাতে বসে পড়৷ মেঝেতে থাকিস না এভাবে। আমি দেখছি বিষয়টা।
আজরাকে পানি খাইয়ে মানতাশা উপরে আসলো৷ আজরা অহেতুক ভয় পেয়েছে। এমন কিছু নাবীহা করবে? এটা অসম্ভব। হতে পারে ইনতিসারের কথাতে অভিনয় করছে। নিশ্চয় কোনো বড়ো সারপ্রাইজ আজরাকে দেবে ইনতিসার। গেস্ট রুমে এসেই নাবীহাকে পেল মানতাশা। সে লাগেজে নিজের কাপড় নিচ্ছে। লাল টুকটুকে কাতান শাড়ি পরে রয়েছে নাবীহা। মানতাশা বলল, তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।
কাপড় ভাজ করতে করতে নাবীহা বলল, ধন্যবাদ।
-কিন্তু এত সাজগোছ?
-আজরা বলেনি কিছু?
-বলেছে। কিন্তু ওসব মিথ্যে জেনেও ও কেঁদে চলেছে। এই তোরা কী প্লান করেছিস বল তো?
নাবীহা কাপড় গুলো ব্যাগে রেগে চেইন লাগাতে শুরু করে। মানতাশা একই প্রশ্ন করলে সে বলল, মিথ্যে বলেনি আজরা। আমরা বিয়ে করেছি।
-তাই! তবে লাগেজ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
-এখুনি দেখবি।
লাগেজ হাতে বেরুলো নাবীহা। তার পিছু নেয় মানতাশা। সে আজরার রুমে আসলো। এদিকে বুয়ারা ইনতিসারের কথাতে আজরার সমস্ত জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে নিয়েছে। সেসব নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়ে। মানতাশা অবাক হয়ে বলল, কী হচ্ছে?
-এখন থেকে এই রুমে আমি থাকব।
-মানে?
-মানে ইনতিসার যার সঙ্গে থাকতে চায় সেই তো তার রুমে থাকবে। তাই না?
এইবার মানতাশা অবাক হয়ে বলল, এসব কী হচ্ছে! মানে কী করছিস তুই? ওয়েট ওয়েট! মজা করছিস তোরা তাইনা? একটু বাদেই বলবি সব মজা ছিল?
হাত ব্যাগ থেকে একটি কাগজ বের করে মানতাশার দিকে এগিয়ে দিলো নাবীহা। কাবীননামা দেখে মানতাশা বিস্ময় এর শেষ পর্যায়ে চলে গেল। তার মানে যা হয়েছে সব সত্যি!
সে রেগেমেগে বলল, এটা কী করলি তুই? বান্ধবীর সংসার নষ্ট করে দিলি? তুই এমনটা করলি নাবীহা! আরে এটা আমি হলে নাহয় মানতে কষ্ট হত না আজরার। কারণ আমার স্বভাবই এমন। কিন্তু তুই কিভাবে এটা করলি নাবীহা?
কানের দুল খুলতে খুলতে নাবীহা বলল, নিজে সুখে থাকার জন্য।
-অন্যের সংসার নষ্ট করে তুই সুখে থাকবি?
-ভালো থেকে আমার সাথে কী ভালো হয়েছে বলতে পারিস? কিছুই না! তাই আমি মহান হতে চাইনা আর। ইনতিসার আমাকে চায়। আমি ওকে ধরা দিয়েছি। ব্যস এতটুকুই! আজরাকে সে চায়না। আজরা চলে গেলেই হয় এখন।
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে এসব শুনে শব্দ করে কেঁদে উঠলো আজরা। সেখান থেকে দ্রুত প্রস্থান নেয় সে। তার পিছু নেয় মানতাশা।
নাবীহা আয়নার দিকে তাকিয়ে আপন মনে বলল, একটু খারাপ হলে যদি সুখে থাকা যায়! তবে আমি খারাপই হব।
.
.
-আজরা শান্ত হো!
মানতাশার কথা শুনে আজরা বলল, কিভাবে? কিভাবে আমি শান্ত হব বলতে পারিস?
ইনতিসারের আগমন ঘটলো। তাকে দেখে মানতাশা বলল, এটা কেন করলেন? আপনার কাছে এটা আশা করিনি আমি।
-আজরার সঙ্গে কিছু কথা রয়েছে আমার।
একথা শুনে মানতাশা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইনতিসার বলল-
তোমাকে না জানিয়ে এমনটা করতে চাইনি আমি।
কর্কশ কণ্ঠে আজরা বলল-
জানানোর মতোও কিছু করেছেন কী?
শান্তস্বরে ইনতিসার বলল-
কী করব বলো? নাবীহাকে এতটাই ভালোবাসি আমি, ওকে নিজের করে পাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।
-আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে ভালোবাসেন।
-চেষ্টা করেছি। কিন্তু সক্ষম হইনি।
-এমনটা করতে একটুও খারাপ লাগেনি আপনার?
-লেগেছে। কিন্তু আমি নিরূপায় ছিলাম।
একটু থেমে ইনতিসার বলল, আজরা তুমি খুব ভালো। তোমাকে ভালোবাসে এমন কাউকে তুমি পাবে।
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আজরা বলল-
চলে যেতে বলছেন আমায়?
হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ে ইনতিসার। ব্যাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে আজরা বলল-
ব্যাগ গোছানোর কাজ তো আপনার নতুন বউ করে দিয়েছে। আপনি নিশ্চয় গাড়িও বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন?
ইনতিসার তার হাতে থাকা কাগজটি আজরার দিকে এগিয়ে দিলো। ডিভোর্স পেপার দেখে ছলছল করে উঠলো আজরার দুচোখ!
কত সহজেই ইনতিসার সব করে ফেলছে। তবে আজরা কেন এত কষ্ট পাচ্ছে!
আজরাও দেরী করলো না। সাইন করে কাগজটা দিয়ে দিলো। মানতাশাকে ডেকে বলল বেরুনোর জন্যে। মানতাশা কিছু বলতে চাইলে তাকে থামায় আজরা। সে কাপড় গোছাতে সময় চায়। আজরা নিচে নেমে এসে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বুয়ারা আজরার লাগেজ নিয়ে আসলে সে বলল, এসবের প্রয়োজন নেই আমার। নাবীহাকে দিয়ে দিও।
নাবীহা এখানে আসে। সেকথা শুনে বলল, তোর ব্যবহৃত জিনিস আমি ব্যবহার করব?
-আমার স্বামীকে নিজের করে নিতে সমস্যা হয়নি, জিনিসে কী সমস্যা?
নাবীহা কিছু বলতে পারে না। মানতাশা আসলে তারা বেরিয়ে যেতে থাকে। একটু থেমে পেছনে ফিরে তাদের দিকে তাকিয়ে আজরা বলল-
আজ আমি কাঁদছি। কিন্তু আমার জায়গায় আপনারা থাকবেন এক সময়। একদিন কাঁদবেন আপনারাও!
এই বলে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো সে। বাড়ির কাজের লোকেরা কাঁদতে কাঁদতে ভেতরে চলে যায় সকলে। হঠাৎ এ কী হয়ে গেল! ইনতিসারের ভয়ে তারা আজরার হয়ে কিছুই বলতে পারলো না।
শূন্য ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইনতিসার ও নাবীহা। ইনতিসার বলল, বলেছিলাম না? বিয়ে ছাড়া আজরাকে সরানো সম্ভব হত না। এখন কত সহজেই কাজ হয়ে গেল।
-অফিসিয়াল ভাবে ডিভোর্সটা হয়ে গেলেই হলো।
-চিন্তা করো না। সবই টাকার খেলা! সাইন হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় লাগবে না বাকি কাজ প্রসেসিং হতে।
-হয়ে যাক। তবেই এই নকল বিয়ে আসল বিয়েতে রূপান্তর হবে। এর আগে নয়।
এই বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে নাবীহা।
.
চলবে
#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৪৮
#Saji_Afroz
অনেকটা দিন কেটে যায়। ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যায়। যদিও আইন অনুযায়ী এত তাড়াতাড়ি এসব সম্ভব ছিল না। কিন্তু ইনতিসার টাকার জোরে সবটা সম্ভব করে নেয়।
নিজের রুমে বসে রয়েছে আজরা। তার পাশে রয়েছেন আজহার শেখ। তিনি বললেন-
ইনতিসারের টাকা থাকলেও ক্ষমতা কিন্তু আমারও কম নেই! শুধুমাত্র তোর জন্য কোনো পদক্ষেপ আমি নিতে পারলাম না। নাহলে তোকে কিভাবে ছাড়তো আমি দেখে নিতাম।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আজরা বলল-
মন যেখানে সাই দেয়না সেখানে জোর করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত বলতে পারো?
আজিজা বানু কেঁদে বললেন-
সবসময় মানতাশাকে ভাবতাম তোর ক্ষতি করবে! এখন এই নাবীহা তোর ক্ষতি করে দিলো! কী করিসনি তুই ওর জন্যে? উপকারের এই প্রতিদান দিলো মেয়েটা!
আজরা বলল, আমি যেভাবে ওকে ভালোবেসেছি সেভাবে হয়তো আমাকে বাসেনি ও!
আজিজা বানুকে কাঁদতে দেখে আজরা বলল, আর কেঁদোনা। দেখো আমি ঠিক আছি! নিশ্চয় সামনে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে আমার জন্যে।
.
.
.
হাতভর্তি শপিংব্যাগ নাবীহার। গাড়ির ড্রাইভারকে ডেকে সেসব গাড়িতে পাঠানো হয়। সে আরও কেনাকাটা করলো।
হঠাৎ সাজেদা বেগমকে দেখে থামলো সে। পাশে রয়েছে সানজিদা।
তাদের দোকানদার বলছে, আমাদের শপে সবকিছুই ফিক্সড প্রাইজ ম্যাম। দামাদামি করবেন না প্লিজ।
নাবীহা এসে বলল, ছেলের বউ এর টাকায় দামী শপিংমল থেকে শপিং করা হচ্ছে বুঝি? তবুও তো নিতে পারছেন না দেখি! বউ কী টাকা কম দিলো?
পেছনে ফিরে নাবীহাকে দেখে তিনি বললেন, তুমি?
-হু।
সানজিদা বলল, তোমাকে তো চেনাই যাচ্ছে না আপু!
-হু। যার বাড়িতে দয়ায় চলতাম তার বউ হয়েছি সেইজন্য এত পরিবর্তন।
সাজেদা বেগম ব্যঙ্গ সুরে বললেন, মহৎ কাজ করেছ বান্ধবীর সংসার নষ্ট করে তাইনা?
-যে অন্যের স্বপ্ন নষ্ট করে সে কিভাবে এসব কথা বলতে পারে?
সাজেদা বেগম কিছু বলতে চাইলে নাবীহা শুনলো না। তিনি যে শাড়িটি পছন্দ করেছিলেন সেটি নিজের জন্য কিনে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
এরপর সে রওনা হলো নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
এই ঘটনা জানার পর থেকে নায়লা খাতুন তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। গালাগাল করে সেই থেকে কথা বলা বন্ধ করেছেন তিনি।
এতদিন পর নাবীহা মা এর কাছে যাচ্ছে। এতসব জিনিস পেয়ে নিশ্চয় তাকে ক্ষমা করে দেবে।
রান্নাঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত নায়লা খাতুন। জহির এসে জানায় নাবীহা এসেছে। তিনি ড্রয়িংরুমে এসে নাবীহাকে দেখে চোখ সরাতে পারলেন না। এ ক’টা দিনেই নিজেকে কতটা পরিবর্তন করেছে সে! চুল স্ট্রেইট ও কালার করেছে, চেহারাও আগের চেয়ে অনেকটা উজ্জ্বল হয়েছে, নখ রেখেছে বড়ো, পোশাক পরিধান করেছে দামি। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই নাবীহাই আগের নাবীহা!
-তোমাদের জন্য উপহার নিয়ে আসলাম।
নায়লা খাতুন বললেন, এসবের কোনো প্রয়োজন নেই৷ পেট চালানোর জন্য টাকাটা নিতে হচ্ছে। নাহলে সেটাও গ্রহণ করতাম না।
নাবীহা বলল-
অহেতুক রাগ করে নিজেদের ক্ষতি করো না মা। আমার এখন অনেক সম্পদ। আমার সবই তোমাদের। তাইনা?
-তোর সেসবের প্রতি কোনো লোভ আমার নেই। এসব নিয়ে যা তুই।
-আমি অনেক শখ করে এনেছি!
-তুই এসব ফেরত না নিলে আমি দান করে দেব।
নাবীহা অবাক হয়ে বলল, মা!
তিনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন-
আসলেই আমার আজ কী মনে হচ্ছে জানিস? তোকে গর্ভে ধারণ না করে ভালো কাজ করেছি আমি। পেলেছি বলেই নিজের উপরে ঘৃনা হচ্ছে আমার। আর সত্যি সত্যি গর্ভে ধারণ করলে হয়তো এই অপকর্মের জন্য গলা টিপে মেরেই ফেলতাম তোকে। পেটের সন্তান না বলে সেই অধিকার রাখি না। নতুবা এই কাজটি অনেক আগেই করে ফেলতাম।
মা এর কথা শুনে ছলছল করে উঠে নাবীহার দুচোখ। সে ফিরে যেতে চাইলে তাকে থামিয়ে নায়লা খাতুন বললেন, এসব নিয়ে যা। দু:খভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাসায় ফিরে আসে নাবীহা। তার কী নেই এখন! সবটাই আছে। শুধু শান্তি নেই মনে।
.
.
.
মালিহা ও মানতাশা বসে কফি খাচ্ছে। দু’জনে গল্পগুজবে মশগুল রয়েছে। কথার এক ফাঁকে মালিহা বলল, বাচ্চাকাচ্চার কথা ভাবলে নাকি মানতাশা?
লাজুক হাসি দিয়ে মানতাশা বলল, এখনো না। ভাবছি আগে একটু ঘুরাঘুরি করে নিই। এরপর নাহয় এসব ভাববো।
-এটাও মন্দ বলোনি। এটা সম্পূর্ণ তোমাদের ইচ্ছে। জীবনটাকে নিজেদের মতন উপভোগ করো।
-জি ভাবী।
আরশান যেদিন মানতাশাকে ফিরিয়ে আনার কথা মালিহাকে জানায়, তিনি অনেক রেগে গিয়েছেন। কিন্তু আরশান বাসা ছাড়ার কথা শুনে নিজেকে সামলে নেন তিনি। তবে মানতে হয়, মানতাশার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। সাথে আরশানেরও। মালিহাও নিজেকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। একটু পরিবর্তন এ যদি সবাই ভালো থাকে তবে সেই পরিবর্তনই শ্রেয়!
.
.
.
রাতের খাবার খেতে বসেছে ইনতিসার ও নাবীহা। ইনতিসার বলল, সবটা শেষ হয়েছে। এইবার বিয়েটা সেরে নিই আমরা?
নাবীহা খেতে খেতে বলল, হুম। এখন করা যায়।
-মা বাবা আসার আগেই সারতে হবে। ভাগ্যিস আরও কিছুদিন সময় তারা বেরিয়েছিল। নাহলে আজরার পরিবার ঝামেলা না করলেও আমার পরিবার করতো।
-আজরা চাইলে কিন্তু অনুমতি ব্যতীত দ্বিতীয় বিয়ে করার অপরাধে আপনাকে শাস্তি দিতে পারতো।
-তোমার কী মনেহয়? এসব আমি ভাবিনি! সবটা সামলে নিতাম। তবে এটা সত্য যে এমন কিছু আজরা করবে না আমি জানতাম। কারণ ধোকা খেয়ে সে আমার সাথে থাকতেই রাজি হবে না এটা বেশ বুঝতে পেরেছিলাম।
কলিংবেল বেজে উঠলো। এত রাতে কে এসেছে!
একজন বুয়া দরজা খুলে দিলো। ইলারা জামান ও ইলহাম শেখকে দেখে বুয়া চ্যাঁচিয়ে বলল, ম্যাডাম আর স্যার এসেছেন!
একথা শুনে ইনতিসার ও নাবীহা অবাক হয়ে যায়! তারা হাসিমুখে ভেতরে আসে। ইনতিসার ও নাবীহা সালাম জানায় তাদের। সালাম গ্রহণ করেই তিনি আজরা কোথায় জানতে চাইলেন।
ইনতিসার বলল, হঠাৎ ওর বাবার শরীর খারাপ হওয়াতে সেখানে গেল ও।
একথা শুনে নাবীহার দিকে তাকিয়ে তিনি ভ্রু কুচকে বললেন, তবে ও এখানে?
-ও এখানেই ছিল আজরার সঙ্গে।
-তা আমি জানতাম। কিন্তু আজরা যাওয়ার পরেও এখানে?
-আজরা হুট করে না বলে গেল। আমরা অফিসে ছিলাম বলে জানতাম না।
-ও আচ্ছা! আমি আরও ভেবেছি হুট করে এসে সারপ্রাইজ দেব। এসে মেয়েটাকে পেলাম না! যাক,
আমরা ফ্রেশ হয়ে খেতে আসছি। তোমরা খেয়ে নাও।
তারা উপরে যেতেই বাড়ির কর্মচারীদের ডাকা হয়। তাদের সব গোপন করতে বলল ইনতিসার। তা শুনে নাবীহা বলল, সত্য একদিন জানবেই। বলে দিলেই হয়!
-আমি বলব সময় করে।
-তবে বলার পরেই বিয়েটা হবে। এর আগে নয়।
-কেন?
-তারা আমাকে মেনে না নিলে আপনি যদি বাহানা করেন! তাই যা হবে সবটা তারা জানার পরে।
-তুমি আমাকে অবিশ্বাস করছ?
-না করার কারণ রয়েছে কী?
-কী কারণ?
-আজরাও কিন্তু বিশ্বাস করেছিল আপনাকে।
এই বলে নাবীহা খেতে শুরু করলো। ইনতিসার আর খেতে পারলো না। আসলেই তো! আজরা তাকে অন্ধ বিশ্বাস করতো। এর ফলস্বরূপ কী পেয়েছে সে!
.
.
সকাল সকাল ইলারা জামানকে দেখে অবাক হলো আজরা। তিনি একগাল হেসে বললেন, কালই এসেছি। ইনতিসারের কাছে শুনলাম তোমার বাবা অসুস্থ। তাই দেখতে চলে এলাম।
আজরা বুঝতে পারলো তাকে মিথ্যে বলেছে ইনতিসার। সে তাকে সাদরে ভেতরে প্রবেশ করায়। তার হালচাল জিজ্ঞেস করলে কেঁদে ইলারা জামানকে জড়িয়ে ধরে আজরা। তিনি বললেন, চলে এসেছি তো। আর মিস করতে হবে না আমায়।
হঠাৎ আজরা তাকে ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে যায়। প্রচুর বমি হয় তার। যার শব্দ বাইরে থেকে ইলারা জামানও শুনছেন। আজিজা বানু এসে তাকে দেখে অবাক হয়। সাথে অবাক হয় মেয়ের বমির শব্দ শুনে।
আজরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলে ইলারা জামান বললেন, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? সব ঠিক আছে তো?
-মাথাটা খুব ধরেছে।
-সে কী! আমি এখুনি ডাক্তার আনছি।
-তার প্রয়োজন নেই মা।
-আরেহ থামো তো!
ডাক্তার আসলো। সবাই বেশ চিন্তিত ছিল। কিন্তু ডাক্তার যে এমন একটি খুশির সংবাদ দেবে ভাবেনি কেউ। আর তা হলো, আজরা মা হতে চলেছে!
.
চলবে