#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩২
নিস্তব্ধ মধ্যরাত্রি।আকাশটা পরিষ্কার পুরো।রাতের আকাশে মেঘেদের আনাগোনা।পূর্ণ থালার মতো চাঁদ উঠেছে।চাঁদের জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে চারদিকে।মৃদুমন্দ বাতাস।কক্ষের ভীতরে পিনপতন নিরবতা।চাঁদের আলো ঠিকরে পরছে কক্ষে।বাতাসে কালো পর্দাগুলো উড়ছে।ঘরের মোমবাতিগুলো সেই কখন নিভে গিয়েছে।বেলুনগুলো পুরো ঘরময় বিচড়ন করছে বাতাসের সাথে ক্ষনে ক্ষনে।বিছানায় প্রাহি অস্পষ্ট স্বরে গুঙ্গিয়ে উঠছে একটু পরপর।ব্যাথায় মুখশ্রী নীল হয়ে গিয়েছে।শরীরটা এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছে।অস্থির অর্থ প্রাহিকে বুকে নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।করুন দেখাচ্ছে ওর চোখের চাহনী।প্রাহির সিক্ত চোখজোড়া দেখে অর্থ’র হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বার বার।প্রাহিকে নিবীড়ভাবে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে বলে,
‘ একটু ছাড়ো আমাকে প্রাহি।আমি এখানেই আছি।একটু সময় দেও আমায়!’
অর্থ’র কথা শুনে ফুঁপিয়ে উঠে প্রাহি।ব্যাথাতুর কন্ঠে বলে,
‘ কোথাও যা..যাবেন না আ..আপনি প্লিজ!’
‘ এমন করে না সোনা।তোমার ভালোর জন্যেই বলছি প্লিজ একটু ছাড়ো!’
অর্থ’র এতো এতো কথায় প্রাহি অর্থকে ছেড়ে দেয়।একটু নড়তে ব্যাথায় অস্পষ্ট আওয়াজ করে কুকিঁয়ে উঠে।অর্থ করুনভাবে তাকিয়ে প্রাহির কপালে চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়ালো।ওয়াশরুমে গিয়ে হিটারে গরম পানি করে মগে করে একটু গরম পানি করে আনে।তারপর প্রাহির কাছে বসে রুমালটা গরম পানিতে ভিজিয়ে ওর শরীরটা আলতো হাতে মুছে দেয়।শরীরে গরম কিছুর ছোঁয়া লাগতেই।প্রাহির যেন জান যায় যায় অবস্থা।কেঁদে দিয়ে বলে,
‘ কি করছেন আপনি?ব্যাথা লাগে!জ্বলছে!’
‘ একটু কষ্ট করো এইতো হয়ে গেছে।’
প্রাহি দূর্বল হাতদুটো উঠিয়ে বাধা প্রদান করে অর্থকে।অর্থ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর জোড় করলো না।মগটা নিয়ে উঠে সেটা ওয়াশরুমে রেখে আসে।তারপর হাতে করে একটা অয়েন্টমেন্ট এনে প্রাহির শরীরের ব্যাথিত জায়গাগুলোতে লাগিয়ে দেয় আলতো হাতে।যেন তার প্রাহি একটুও ব্যাথা না পায়।লাগানো শেষে আবার এসে প্রাহিকে বুকে নিয়ে সুয়ে পরে।প্রাহির চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে অর্থ অসহায় কন্ঠে বলে,
‘ আ’ম সরি প্রাহি।আ’ম রেয়েলি ভেরি সরি!’
অর্থ’র এতোদিনের অপেক্ষা শেষ হওয়ার পালা যেন অনেক ভারি ঠেকেছে প্রাহির উপর।অর্থ’র বলিষ্ট দেহের সকল প্রকার ভালোবাসাময় অত্যাচার যেন প্রাহির ছোট্ট নরম দেহখানাকে একদম নেতিয়ে দিয়েছে।ব্যাথায় জর্জরিত প্রাহি দূর্বল শরীরটাকে টেনেটুনে অর্থ’র আরেকটু কাছে যায়।একেবারে অর্থ’র বুকের মাঝে ঢুকে যেতে চাইছে মেয়েটা।অর্থ বুঝতে পেরে আগলে নিলো প্রাহিকে।প্রাহির কপালে ক্রমাগত চুমু খেয়ে বিরবির করে বারবার প্রাহির কাছে ক্ষমা চাইতে লাগলো।কিছুক্ষন পর প্রাহি ঘুমিয়ে যায়।অর্থ প্রাহির চিন্তায় একফোঁটা চোখের পাতা আর এক করতে পারে না।
______________
সকালে এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে প্রাহির।কপাল কুচকে আঁধো আঁধো করে চোখ মেলে তাকায়।ভালোভাবে তাকাতেই নিজেকে অর্থ’র বাহুডোরে আবিষ্কার করে প্রাহি।চোখ ঘুড়িয়ে তাকায় অর্থ’র দিকে।লোকটা ঘুমাচ্ছে।কে বলবে এই লোকটাই রাতে কিরকম অস্থির হয়ে গিয়েছিলো।কতোটাই না পাগলামি করেছিলো।আবার তার কষ্টে কষ্টও পাচ্ছিলো।রাতের কথা মনে হতেই লজ্জায় প্রাহির গাল, কান গরম হয়ে যায়।লজ্জায় হাসফাস করতে লাগে।ইস,,কি হলো এসব?অবশেষে কিনা সে পুরোপুরি অর্থ’র হয়েই গেলো।লজ্জায় কাথা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে প্রাহি।কিন্তু পরক্ষনে নিজের দিকে চোখ যেতেই হতভম্ব হয়ে যায়।তার গায়ে কাপড়ের ছিটেফোটাও নেই।আর সে কিনা এইভাবে অর্থ’র সাথে লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে।লজ্জা, লজ্জা, কি লজ্জা।লজ্জায় জুবুথুবু প্রাহি কাথা গায়ে জড়িয়ে তড়িঘড়ি করে উঠতে নিতেই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে অর্থ’র।চোখ মেলে তাকাতেই প্রাহি উঠে বসে থাকতে দেখে ভ্রু-কুচকে যায় ওর।প্রাহি উঠে যেতে নিলেই মাথা ঘুরে উঠে ওর।শরীরটা বেশ দূর্বল লাগছে ওর।প্রাহিকে এমন করতে দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসে অর্থ।দুহাতে প্রাহিকে বুকে আগলে নেয়।চিন্তিত কন্ঠে আওড়ালো,
‘ কি হয়েছে প্রাহি?কোথায় কষ্ট হচ্ছে?’
প্রাহি জোড়পূর্বক হাসার চেষ্টা করলো।এখনো লজ্জায় চোখ মিলাতে পারছে না অর্থ’র সাথে।এদিক ওদিক দৃষ্টি রেখেই বলে,
‘ কিছু না।আমি ঠিক আছি।অস্থির হবেন নাহ!ফ্রেস হবো আমি একটু ছাড়ুন।’
প্রাহির কথায় অর্থ’র মন গললো না।প্রাহিকে সেই অবস্থাতেই কোলে নিয়ে উঠে দাড়ালো।প্রাহি হকচকিয়ে যায়।বলে,
‘ কি করছেন?’
‘ হুশ কোন কথা না। দুজন একসাথে ফ্রেস হবো চলো।’
চোখ বড়বড় করে তাকায় প্রাহি অর্থ’র দিকে।লজ্জায় পুরো মুখশ্রী লাল হয়ে যায়।কাঁপা কন্ঠে বলে,
‘ কি বলছেন এসব?ছাড়ুন প্লিজ।আ..আমি লজ্জায় মরে যাবো প্লিজ।’
অর্থ ঠোঁট কামড়ে হাসলো।দুষ্টু কন্ঠে বলে,
‘ কিসের এতো লজ্জা হ্যা?কাল রাতে না সব লজ্জা ভেঙ্গে দিলাম?তাও এতো লজ্জা কোথায় থেকে পাও?’
প্রাহি কিছু বলবে তার আগেই অর্থ বলে,
‘ নো মোর ওয়ার্ড্স।’
প্রাহি আর কিছু বললো না।মুখ লুকালো অর্থ’র বুকে।অর্থ প্রাহিকে ওয়াশরুমের বাথটবে বসিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে আসলো।লাজুক হাসলো প্রাহি সে জানতো অর্থ এমনটাই করবে।অর্থ বেড়িয়ে গিয়ে জামা-কাপড় বের করলো।প্রাহিকে জামা কাপড় দিয়ে।নিজেও চলে গেলো গেস্ট্ররুমের ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হতে।
খানিকবাদে বের হয়ে আসে প্রাহি।এখনও একটু খারাপ লাগছে।প্রাহি ড্রেসিংটেবিলের কাছে এগিয়ে গেলো।হেয়ার ড্রয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিলো।তারপর চুলগুলো আঁচড়ে।রুমের দিকে চোখ বুলালো।দীর্ঘশ্বাস ফেললো।আস্তে আস্তে রুমটা পুরো পরিষ্কার করে নিলো।বিছানার চাঁদর বদলে নতুন চাঁদর বিছাতে যাবে ঠিক তখনি খাবার হাতে প্রবেশ করে অর্থ।রুম এতো পরিষ্কার দেখে বুঝতে বাকি রইলো না কিছু।সোফায় খাবারগুলো রেখে।রেগে প্রাহির কাছে গিয়ে বলে,
‘ পাকনামি না করলে ভালো লাগে না?’
পিটপিট চোখে তাকায় প্রাহি,
‘ কে পাকনামি করেছে?’
‘ কেন তুমি?’
প্রাহি অবাক হয়ে বলে,
‘ আমি কি করলাম?’
অর্থ রাগি চোখে তাকালো,
‘ অসুস্থ তুমি।তাও কেন পুরো রুম পরিষ্কার করতে গিয়েছো?কে বলেছে এইসব করতে?’
প্রাহি ইতস্তত কন্ঠে বলে,
‘ তাহলে কে করবে?পরিচারিকাদের দিয়ে করালে বুঝি আমি লজ্জা পাবো না?’
লাস্টের কথাটা মিনমিন করে বলে প্রাহি।অর্থ ধমকে উঠে,
‘ এতো বেশি বুঝো কেন?আমি কি বলেছি মেইডদের দিয়ে করাবো?আমি ছিলাম নাহ?’
‘ আচ্ছা সরি।আর করবো না!’
প্রাহি বিছানায় আবার চাঁদর বিছাতে গেলে।অর্থ খপ করে প্রাহির হাত থেকে তা নিয়ে নিজেই সুন্দরভাবে বিছিয়ে দিলো।রাগ নিয়ে প্রাহির কাছে গিয়ে ওকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো।খাবার এনে প্রাহিকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো।প্রাহি রিনরিনে কন্ঠে বলে,
‘ আপনি খেয়েছেন?’
‘ হ্যা! আমি খেয়েই তোমার জন্যে নিয়ে এসেছি!’
খাওয়া শেষে প্রাহির মুখ মুছিয়ে দিলো।প্লেট গুলো সরিয়ে দিয়ে আবারও ফিরে আসে প্রাহির কাছে।তারপর কোনকিছু না ভেবে প্রাহিকে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে।করুন কন্ঠে বলে,
‘ এখন কেমন লাগছে প্রাহি?’
প্রাহি হাসলো।লোকটাও না কেমন ক্ষনে ক্ষনে অস্থির হয়ে যায় ওর জন্যে।অর্থ’র থেকে সরে আসে প্রাহি।অর্থ’র গালে হাত রেখে বলে,
‘ চিন্তা করবেন না আমি ঠিক আছি।এটা সাধারন একটা বিষয়।সব মেয়েদেরই একটু কষ্ট হয় অর্থ।এতোটা অস্থির হবেন নাহ!’
অর্থ সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।প্রাহির দিকে একটা ওষুধ এগিয়ে দিতেই নিস্তব্ধে খেয়ে নেয় প্রাহি।অর্থ প্রাহির কপালে চুমু খেয়ে আবারও জড়িয়ে ধরে ওকে।এইভাবে অনেকক্ষন পেড়িয়ে যায়।প্রাহি অর্থকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার জন্যে বারবার হাসফাস করছে।প্রাহিকে এমন ছটফট করতে দেখে অর্থ নিজেই বলে,
‘ কি হয়েছে প্রাহি?এমন করছো কেন?শরীর খারাপ লাগছে?’
‘ না তা না আসলে…!’
প্রাহিকে আমতা আমতা করতে দেখে ভ্রু-কুচকে তাকায় অর্থ।বলে,
‘ কি প্রাহি?কিছু বলবে?’
প্রাহি দৃষ্টি নত করে।ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
‘ আপনি আসলে!মানে আপনি ইলফাকে কি করেছেন সেদিন?দেখুন রাগবেন না।আমার মনটা খচখচ করছিলো জানার জন্যে।প্লিজ বলুন না।’
প্রাহি ভয়ে ভয়ে তাকায় অর্থ’র দিকে।দেখলো অর্থ পুরোপুরি শান্তভাবে তাকিয়ে আছে প্রাহির দিক।ঠিক সেইভাবে তাকিয়ে থেকেই শীতল কন্ঠে বলে উঠে,
‘ ওর যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে।ওই ব্লা*ডিবিচটা মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।তাই ওকে পাগলাগারদে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
প্রাহি অবাক হয় বড্ড।জিজ্ঞেস করে,
‘ আপনি কিছু করেননি ওকে?সত্যি করে বলবেন!’
অর্থ বাঁকা হেসে বলে,
‘ আমার ভালোবাসার দিকে যে হাত বাড়াবে তাকে কি আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিবো?ভাবলে কি করে তুমি? ও তোমাকে আঘাত করেছে এর শাস্তি তো আমি ওকে দিবো না এটা কি হতে পারে?’
অর্থ’র ঠোঁটের কোনের ক্রুর হাসি দেখে যা বুঝার বুঝে ফেলেছে প্রাহি। তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।চুপচাপ লেপ্টে রইলো নিজের স্বামির বুকে।
#চলবে________
কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।
#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৩
মুম্বাইয়ের পাঁচ তারকা এক হোটেলের রুমে আয়েশীভঙ্গিতে বসে আছে জয়।সাথে আছে ওর দুপাশে দুটো মেয়ে।জয় তাদের সাথে অশ্লীলতায় ব্যস্ত।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে জয়ের।এমন সময় হঠাৎ ফোন আসায় প্রচুর বিরক্ত হয় জয়।বিরক্তিতে রিতিমতো কপাল কুঁচকে এসেছে ওর।পাশের মেয়েগুলোকে ইশারা করতেই তারা একটু সরে বসে।জয় ফোন উঠিয়ে ফোনের স্ক্রিনে যার নাম দেখলো তাতে যেন মনে হলো ওকে কেউ করলার রস খাইয়ে দিয়েছে কেউ।জয় আবারও ইশারায় মেয়েগুলোকে একেবারে বাহিরে চলে যেতে বললো।মেয়েগুলো বেড়িয়ে যেতেই জয় ফোন রিসিভ করে কানে ফোন রাখলো।সাথে সাথে একটা কন্ঠস্বর ঝংকার তুললো যেমন।
‘ এই কি তোমাকে কাজ দিয়েছিলাম আমি?মুম্বাইয়ে গিয়ে তো দেখি সব কিছু ভুলতে বসেছো।তোমার দেখি কোন গুরুত্বই যেন কাজের উপরে।মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে তুমি সেখানেই আটকে। বলেছো কি যেন নাম হ্যা ইলফা ওকে দিয়ে অনেক বড় একটা কাজ করাবে।তা কাজ কতোদূর এগোলো?’ অপাশের ব্যাক্তির কথায় জয়ের কপালে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে আমতা আমতা করে বলে,
‘ আসলে হয়েছে কি?ইলফাকে ওই জয় ধরে ফেলেছে আর প্লান ফ্লপ!’
‘ কি আশ্চর্য? তুমি আমাকে জানাও নি কেন?আর ওই মেয়ে কোথায়?’
‘ ইলফাকে ওই জয় পাগলাগারদ পাঠিয়ে দিয়েছে।ওই স্টুপিড মেয়েটা প্রতিশোধ নিতে না পেরে মানষিক ভারসাম্য হারিয়েছে।’
অপাশের ব্যাক্তি বিরক্তি আর রাগে দাত কিরমির করলো।রাগে গজরাতে গজরাতে বলে,
‘ আমি তোমাকে এতো এতো টাকা কেন দিচ্ছি? তোমার কোন ভ্রুক্ষেপই তো আমি দেখছি না।কাজটা না পারলে বলবে আমায়!’
জয় নিজেও রেগে গেলো। বললো,
‘ এইভাবে আড়ালে থেকে আমাকে কাজের হুকুম দিয়ে যান।আমি নিজের লাইফের রিস্ক নিয়ে কতোবার চেষ্টা করলাম।কিন্তু ওই অর্থ’র সাথে আমি পেরে উঠি না।ওই সালা অনেক চালাক।ওর সাথে আমি পেরে উঠবো না আমি বুঝে গিয়েছি।আপনি অন্য কাউকে খুজে নিন।আমি পারবো না!’
ব্যাক্তিটি বাঁকা হাসি দিলো বললো,
‘ ভেবে বলছো তো?পরে কিন্তু তোমায় পস্তাতে হবে অনেক।’
জয় চেঁচিয়ে উঠে,
‘ হ্যা যা মন চায় করেন আমি এইসবে আর নেই। প্রাহি’র মা বাবাকে খুন করে এমনিতেই আমি অনেক পস্তাচ্ছি।আমি আর পারবো না।’
‘ যাকে মারতে বললাম তাকে তো কিছুই করতে পারলে না?মারার কথা প্রাহিকে ছিলো ও তো দিব্বি বেঁচে আছে।ওই মেয়ের কারনে আমার প্লান সব ফ্লপ খেয়েছে।নাহলে এতোদিনে আমার প্লান সাকসেসফুল হতো।অর্থসহ ওর পুরো পরিবার এখন কবরে থাকতো।কিন্তু তা আর হলো কই।তোমার মতো রিডিউকুলাস একটা ছেলেকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েই আমি ভুল করেছি।পস্তাতে হবে অনেক পস্তাতে হবে সবাইকে।আমি যখন সামনে আসবো তখন কেউ বাঁচতে পারবে না কেউ না!’
‘ হ্যা আপনার যা মনে হয় করে নিন।আমি ভয় পাই না।আমাকে মুক্তি দিন।আমি আর আপনার কাজ করতে পারবো না।ওই অর্থ শিকদারের সাথে কেউ পারবে না!’
অপাশের ব্যাক্তিটি হিসহিসিয়ে হেসে উঠলো।গা হিম করা সেই হাসি।তারপর ফোনটা খট করে কেটে দিলো।জয় রাগে ক্ষোপে তৎক্ষনাৎ সেই স্থান ত্যাগ করলো।
______________
‘ ওই ইলফা কিছু স্বিকার করেছে অফিসার?’ হেমন্ত’র ঠান্ডা প্রশ্ন।
অফিসার মাথা নিচু করে বলেন,
‘ সরি মিষ্টার হেমন্ত শিকদার।উনার মানষিক অবস্থা একেবারে খারাপ।তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে কিছুই বলছে না।তার মতো সে উলটা পালটা কথা বলতেই থাকে।’
আরাফ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।বুকটা ভার হয়ে আসে কষ্টে।হাজার হোক বোন তো ওর।চাচাতো বোন হলেও ইলফাকে নিজের আপন বোন মনে করে আরাফ।সেই বোনের জন্যে কষ্ট তো হবেই।ছোট থেকে এই বোনের সকল আবদার পূরন করেছে সে।ইস,, ইলফা যদি একটু ভালো মনের হতো তাহলে আরাফ অর্থকে যেকোন ভাবে রাজি করাতো ইলফাকে বিয়ে করার জন্যে।কিন্তু যেখানে ইলফাই ভালো না শুধু মাত্র টাকার লোভে পরে ও অর্থ’র পিছনে ছুটছে এসব জানতে পেরে ও নিজেই ইলফাকে অর্থ’র কাছে যাওয়ার জন্যে বারবার আটকাতো।আরাফের চোখের কোনে জলবিন্দুরা চকচক করে উঠে।কিন্তু তা চোখের কোটর হতে গড়িয়ে পরতে দেয়না আরাফ।নিজেকে অতিসন্তর্পনে সামলে নেয়।অর্থ বন্ধুর অবস্থা বুঝতে পারে আরাফের কাধে হাত রেখে শান্তনা দেয়।বিনিময়ে মলিন হাসি দেয় আরাফ।সবাই গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। অর্থ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চললো অফিসের উদ্দেশ্যে।হেমন্ত কিছুদিন হয়েছে ওদের অফিসে জয়েন করেছে।ভার্সিটি করে দুপুরের পরে আসে ও অফিসে।এখন লাঞ্চ টাইম।আশেপাশে কোথাও লাঞ্চ করলে দেরি হয়ে যাবে।তাই সবাই ভাবলো অফিসে গিয়েই খাওয়া দাওয়া করা যাবে।অফিসে পৌছাতেই যার যার কেভিনে সে সে পৌছে গেলো।
______________
আজ প্রাহি নিজের হাতে রান্না করেছে দুপুরের খাবার।সব অর্থ’র পছন্দের।অর্থ বলেছে আজ দুপুরে বাড়িতে আসতে পারবে না কাজের প্রেসার অনেক।তাই প্রাহি ভাবলো ও নিজেই রান্না করে অর্থ’র জন্যে লাঞ্চ নিয়ে যাক।সার্প্রাইজ হয়ে যাবে অর্থ। প্রাহির রান্না শেষ হতেই রান্নাঘর হতে বেড়িয়ে আসে প্রাহি।আজ ভার্সিটি যাওয়া হয়নি কারো।ভার্সিটিতে আজ কন্সার্ট হবে।আর প্রাহির এসব এটান্ট করার কোন ইচ্ছা নেই।প্রাহির নিজের মনে রুমে চলে গেলো।ঝটপট গোসল সেরে নিলো।আলমারি খুলে কি পরবে ভেবে পাচ্ছে না।হঠাৎ দৌড়ে গেলো ইশির কাছে।ইশির রুমে গিয়ে দেখে ইশি হেমন্ত’র জামাকাপড় ভাঁজ করে আলমারিতে গুছাচ্ছে।প্রাহি ইশির কাছে গিয়ে বলে,
‘ এই ইশি আমার রুমে চল না।’
ইশি হঠাৎ প্রাহিকে এখানে দেখে ভয় পেয়ে যায়।বলে,
‘ শাকচুন্নি মাইয়া আসবি তো একটু আওয়াজ দিয়ে।তা না করে হঠাৎ এমন ভুতের মতো এসে কথা বললে ভয় পাই না আমি?’
‘ আচ্ছা সরি।এখন চল না আমার সাথে।’
‘ আরে দারা হাতের কাজটুকু শেষ করে নেই।’ ইশিকে কাজ করতে না দিয়ে তার আগেই প্রাহি ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।বলল,
‘ দূর ওগুলো পরে করিস।এখন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।জলদি চল।’
ইশি আর কিছু না বলে প্রাহির পিছুপিছু চললো।
.
.
খাটের উপর বসে আছে প্রাহি।ইশি আলমারি ঘেটেঘুটে অবশেষে নেভিব্লু কালারের একটা জামদানি শাড়ি বের করে প্রাহির সামনে আসলো।মুচঁকি হেসে বলে,
‘ এইটা অনেক সুন্দর মানাবে তোকে।যা এটা পড়ে আয়।’
প্রাহি মুচঁকি হেসে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।তারপর সুন্দরভাবে শাড়িটা পড়ে বেড়িয়ে আসলো।ইশি এগিয়ে গিয়ে প্রাহির শাড়িটা আরেকটু ভালোভাবে গুছিয়ে দিতে দিতে বলে,
‘ আজ হঠাৎ ভাইয়ার অফিসে খাবার নিয়ে যাওয়ার প্লান?’
প্রাহি লাজুক হেসে বলে,
‘ আরে এমনি।তিনি ফোন করে জানালেন তিনি আজ বাসায় আসবেন না লাঞ্চ করতে তাই ভাবলাম আমি রান্না করে নিয়ে যাই উনার জন্যে।’
‘ বাহ বাহ এতো প্রেম!’ প্রাহি ইশির এইভাবে বলায় লজ্জা পেলো প্রচুর।ইশি প্রাহিকে নিয়ে হালকা সাজিঁয়ে দিলো।সাজানো শেষে ইশি মুখে হাত দিয়ে বড়সড় গলায় বলে,
‘ মাই গড।তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।ভাইয়া তো আজ তোকে দেখলেই কাত হয়ে যাবে।না জানি অফিসের ভীতরেই রোম্যান্স না শুরু করে দেয় দেখিস।’
প্রাহি হেসে ইশির বাহুতে থাপ্পর মেরে বলে,
‘ যাহ! অসভ্য মেয়ে কিসব বলিস।ভুলে যাস না আমি তোর বড় ঝা!’
‘ হ্যা হ্যা।তা বড় ঝা আপনি তাড়াতাড়ি যান নয়তো দেরি হয়ে যাবে!’
ইশির কথায় প্রাহি ঘড়ির দিকে তাকায়।আসলেই দেরি হয়ে যাচ্ছে।ইশিকে বলে নিচে নেমে আসলো।তারপর রায়হানা বেগমকে বলে টিফিন বক্স নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।গাড়ি ছুটলো অর্থ’র অফিসের দিকে।
#চলবে___________
ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।