একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব-২৬ এবং বোনাস পর্ব

0
1414

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৬
‘ মাফ করবো না কিছুতেই মাফ করবো না।কি করে পারলো ওরা এমন করতে আমার সাথে।ওই হেমন্ত’র বাচ্চাকে তো পঁচা পুকুরের পানি চুবাবো আমি।কুত্তা কোথাকার।’ বিরবির করে ইচ্ছে মতো বকছে ইশি,প্রাহি আর হেমন্ত’কে।আর গাল বেয়ে গড়িয়ে পরা চোখের জলগুলো দুহাতে বারবার মুছে নিচ্ছে।তাও যেন কান্না থামছে না।ইশি হাটার মাঝেই ওর সামনে একটা বাইক এসে জোড়ে ব্রেক মারতেই ইশি ভয় পেয়ে দু-পা পিছিয়ে যায়।সাথে সাথে বুকে থু থু দেয় ইশি।জানটা বের হয়ে যেতো আরেকটু হলে।ইশি বাইকের দিকে তাকায়।তাকাতেই রাগ যেন সাত আসমানে উঠে গিয়েছে ওর।এটা তো হেমন্ত’র বাইক।এই ছেলে এখনো ঠিক হলো না।কিভাবে বাইক চালায়।যদি কিছু হয়ে যেতো।ইশি তেড়ে গিয়ে হেমন্ত’কে বাইক থেকে ওর কলার ধরে নামায়।হেমন্ত মাথার হেলমেট কোন রকম খুলে কিছু বলতে নিবে।তার আগেই ইশি ধুমধাম করে ওর পিঠে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো।ব্যাথায় চোখ উলটে নিয়েছে হেমন্ত।দ্রুত সরে আসে ইশির থেকে।ব্যাথাতুর কন্ঠে বলে,
‘ মেরে ফেলার প্লান করেছিস?কি খাস তুই মুটকি?এতো শক্তি কোথা থেকে পেলি?মাগো আমার পিটটা শেষ।হাত না যেন হাতুরি!’
ইশি আবারো রাগে ফুসতে ফুসতে এগিয়ে যেতে নিতেই হেমন্ত ভয়ে দ্রুত সরে যায়।ইশি রাগী গলায় বলে,
‘ আমার সামনে আয় তুই।আজ তোমাকে বাইক চালানোর শখ জন্মের মতো গুচিয়ে দিবো।হারামি কোথাকার।’
হেমন্ত দুহাত মাফ চাওয়ার মতো করে বলে,
‘ নাহ! আর করবো না মাফ কর আমায়।বড্ড ভুল হয়ে গিয়েছে।’
ইশি কর্কশ কন্ঠে বলে,
‘ কি চাই?কেন আবার আমার সামনে এসেছিস?’
‘ বিয়ে করবো!’
ইশি অবাক হলো হেমন্ত’র কথায়।ও তো ভেবেছিলো হেমন্ত ওকে মানাতে এসেছে।কিন্তু এই ছেলে তো ওকে ওর বিয়ের খবর দিতে এসেছে
ইশি লাল লাল চোখ নিয়ে তাকালো।পারলে এক্ষুনি ধ্বংশ করে দিবে হেমন্ত’কে।চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
‘ তুই বিয়া কর নাহলে হা*ঙ্গা কর তাতে আমার কিছু যায় আসে না।তুই শুধু আমার সামনের থেকে সর।নাহলে জুতা মেরে তোর চেহারার নকশা বদলে দিবো।’
হেমন্তকে ক্রোশ করে সামনের দিকে হাটা শুরু করলো।হেমন্ত বাঁকা হেসে এইবার ইশির কাছে গিয়ে ওকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো।ইশি হচকচিয়ে গেলো। ভয়ে হেমন্ত’র গলা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে,
‘ এইগুলো কি ধরনের অসভ্যতা হেমন্ত।এটা একটা পাবলিক প্লেস।তুই এমন করছিস কেন?’
হেমন্ত সামনের দিকে হাটা অবস্থায় সেদিকে দৃষ্টি রেখেই বলে,
‘ আমি আমার হবু বউকে কোলে নিয়েছি।তাতে কার কি সমস্যা হবে?আর সমস্যা হলেও আমার তাতে কিছু যায় আসে নাহ!’
ইশি অবাক হলো অনেকটা।কি বলছে কি এসব হেমন্ত?হবু বউ মানে?ও কবে আবার হেমন্ত’র হবু বউ হলো?ইশি বিষ্মিত নয়নে তাকিয়ে বলে,
‘ আমি তোর হবু বউ মানে?এই আমি তোর কোন জন্মের হবু বউ হ্যা? তোর আমার বিয়ের কথা কবে হয়েছে? এইসব আজগুবি কথা একদম বলবি নাহ!’
হেমন্ত ইশিকে বাইকের উপর বসালো।খুব সাবধানে বাইকের কিনারা থাকা ধরি দিয়ে ইশির হাত দুটো বেধে দিলো।ইশি ভয় পেয়ে গেলো।কি শুরু করলো হেমন্ত এসব?ওর হাত বাধছে কেন?ইশি কিছু বলতে নিবে তার আগে হেমন্ত ওর মুখে রুমাল বেধে দেয়।এতে মুখের কথা মুখেই রয়ে যায় ইশির।শুধু হাত মুচঁরামুচঁরি করছে আর অস্পষ্ট স্বরে গোঙ্গাচ্ছে ইশি।না পেরে শেষ বাইক থেকে লাফ দিয়ে পালাতে নিলেই হেমন্ত ওকে ধরে ফেলে।গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘ আমাকে রাগাবি না ইশি।তুই এমন করলে কিন্তু আমি তোর পা’টাও বেধে দিবো।এখন সোজা কথায় আসি তুই কি আমার সাথে ভালোভাবে যাবি না-কি এইভাবে আমার সামনে বসিয়ে দিয়ে তোকে নিয়ে যাবো?কোনটা ভালো মনে হবে বল?আমার এতে কোন সমস্যা নেই।একটু দূরে আমার গাড়িও দার করানো আছে।আমি চাইলেই তোকে এইভাবে নিয়ে যেতে পারি।’
ইশি বুঝলো এই ছেলে সব কিছু প্লান করেই এসেছে।ইশি মাথা নাড়িয়ে বুঝালো যে ও ভালোভাবেই যাবে।হেমন্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইশির হাত-মুখ খুলে দিলো।ইশি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।হেমন্ত তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,
‘ জলদি বাইকে উঠ।সবাই অপেক্ষা করছে।’
হেমন্ত বাইকে উঠতে নিলেই ইশির ফোপাঁনোর আওয়াজ ওর কানে আসে।থেমে যায় হেমন্ত।তাকিয়ে দেখে ইশি ওর দিকে করুন চোখে তাকিয়ে কাঁদছে।হেমন্ত চোখ বুছে নিশ্বাস নিলো।ইশির কাছে গিয়ে ওর গালে আলতো স্পর্শ করে বলে,
‘ আমি আর প্রাহি অনেকগুলো সরি তোকে প্রাহির অসুস্থতা সম্পর্কে না জানানোর জন্যে।আসলে পরিস্থিতি এমন ছিলো না।প্রাহির এরকম অবস্থা দেখে আমাদের ভয়ে অবস্থা পুরো খারাপ ছিলো।যাও কিছু বলবো তোকে।তার আগে ও আবারও সেই জায়গায় আঘাত পায়।আবারও আমাদের মাথায় একগাদা টেন্সন ভর করে।তুই তো সব বুঝিস বল।তুই আমাদের কাছে কি তা তো আর তোকে আর বলতে হবে নাহ তাই নাহ?তুই নিজেও জানিস আমরা তোকে কতো ভালোবাসি।’
ইশি হেমন্ত’র কথায় ওর বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে।হেমন্ত’ও দুহাতে ওকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে।ইশি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আমার আর এসব ভালো লাগে না হেমন্ত।আমার জীবনটাই কেন এতোটা কঠিন বলতে পারিস?কেন আমি একটু মনমতো বাঁচতে পারি নাহ?আমার জীবনের কোন সিদ্ধান্ত আমি নিজের মতো নিতে পারি নাহ। সবাই শুধু তাদের সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দেয়।কেন বুঝে না আমিও তো একটা মানুষ।আমারও তো কিছু চাওয়া পাওয়া আছে।বাবা বলা নেই কওয়া নেই।হুট করে কাল ফোন দিয়ে আজ সকালে ফোন দিয়ে বলে কাল নাকি আমার এংগেজমেন্ট তার পছন্দ করা ছেলের সাথে।উনি এমন কেন?সারা জীবনেও তো ভালোভাবে দুটো কথা আমার সাথে বলেনি শুধু আমার উপর জোড় খাটিয়ে গিয়েছে।আমি ঘৃনা করি তাকে।আমি আর চাইনা এই লাইফ।আমি একটু শান্তি চাই।মন ভরে বাঁচতে চাই।প্লিজ আমাকে মুক্ত কর এই জীবন থেকে!’
হেমন্ত’র চোখজোড়াও ছলছল করে উঠলো নিজের প্রেয়সীর এমন বাধভাঙ্গা আর্তনাদে।হেমন্ত ইশিকে আরেকটু ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে মায়াভরা কন্ঠে বলে,
‘ বিয়ে করবি আমাকে?’
ইশি কেঁপে উঠলো হেমন্ত’র কথায়।মুখ উচু করে তাকাতেই হেমন্ত ইশির দুগালে হাত রেখে ওর চোখে চোখ রেখে বলে,
‘ প্রমিস করছি আমাকে বিয়ে করলে আজকের পর থেকে তোকে আর কখনো কষ্ট পেতে দিবো না।সারাজীবন তোকে আগলে রাখবো বুকের মাঝে।তোকে তোর স্বাধিনতা পুরোটা দিবো।তুই নিজের মতো বাঁচবি।আর আমি আমার দায়িত্ব পালন করবো।একজন যোগ্য স্বামি হয়ে সবসময় তোর পাশে থাকবো।তোর সব সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করবো। আমি ভুল পথে গেলে তুই আমাকে সঠিক পথ দেখাবি ঠিক তেমনভাবে আমিও তোকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিবো তুই ভুল পথে গেলে।আমরা দুজন দুজনের পরিপূরক হবো ইশি।বল তুই রাজি আমাকে বিয়ে করবি?’
ইশি মনো্যোফ দিয়ে সব কথা শুনলো।ভীতরটায় তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে হেমন্ত’র কথায়।ইশি পা উচু করে হেমন্ত’র বারাবর হলো।একটু অন্যরকম কন্ঠে বলে,
‘ কেন করবি আমাকে বিয়ে? কি কারনে আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তুই?যেখানে আমার থেকেও বেশি সুন্দরী সুন্দরী মেয়েরা তোর জন্যে পাগল সেখানে আমাকেই কেন বিয়ে করবি?করুনা করছিস আমাকে?কিন্তু আমি তো চাইনা তোর করুনা।’
ইশি ওর ভালোবাসাকে করুনা বলছে?হেমন্ত বেজায় রেগে গেলো।শক্ত করে ইশির দুবাহু ধরে বলে,
‘ আর একবার করুনা বলবি তো থাপড়ে তোর গাল লাল করে দিবো। কেন বুঝিস না ভালোবাসি তোকে আমি।এখন থেকে নাহ যখন ভালোবাসার মানেও বুঝতাম না তখন থেকে তোকে ভালোবাসি আর তুই কিনা আমার ভালোবাসাকে করুনা বলছিস।তোর সাহস দেখে আমি অবাক।মন তো চাচ্ছে তুলে একটা আছাড় মারি তোকে।’
রাগে মেজাজ খারাপ করে হেমন্ত উলটো দিকে ফিরে জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলতে লাগলো।এদিকে ইশি সিক্ত চোখেও হেসে দিলো।আজ ওর ঠোঁটের হাসি হলো পূর্ণতার হাসি।ইশি ঝট করে হেমন্তকে পিছন হতে জড়িয়ে ধরলো।এতে হেমন্ত খানিকটা সামনের দিক ঝুকে গেলো।পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিলো হেমন্ত।আলতো হেসে নিজের বুকের মাঝে ইশির নরম তুলতুলে হাত দুটোর উপর নিজের হাত রাখলো।ইশি কান্নাজড়িত কন্ঠেও খুশির আভাস,
‘ কেন আমায় এতোটা দিন অপেক্ষা করালি?কেন ভালোবাসি বলতে তোর এতো দ্বিধাবোধ ছিলো।তুই কি বুঝিস?যে তুই আমায় ভালোবাসিস তা আমি জানিনাহ?আরে বোকা কোথাকার।আমি তোর বেষ্টফ্রেন্ড।যদি বেষ্টফ্রেন্ড হয়ে তোর মনের কথা আর চোখের ভাষা বুঝতেই না পারি তাহলে কেমন বন্ধু হবো আমি।তুই এতো ডোরুকু আমি আগে জানতাম নাহ!’
হেমন্ত চট করে ইশির দিকে ঘুরে গেলো।ইশির দু কোমড়ে হাত রেখে ওকে নিজের কাছে টেনে এনে বলে,
‘ তুই যেহেতু জানতি আগে থেকে তাহলে করুনা করছি আমি তোর উপর এসব বললি কেন?কেন আমায় রাগিয়ে দিলি?’
ইশি হেসে দিলো।বললো,
‘ আমি এই কথাগুলো না বললে কি আজ তুই নিজের মনের কথাগুলো এভাবে আমার সামনে প্রকাশ করতি বল?’
হেমন্ত ইশির নাক টেনে দিলো,
‘ ওরে আমার বুদ্ধিমান রে।এখন চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।’
ইশি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই।হেমন্ত ওকে ছেড়ে দিয়ে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট করলো।ইশারায় ইশিকেও বসতে বললো।ইশি বাইকে উঠে বসতেই বাইক নিয়ে শা করে চলতে লাগলো।ইশি হেমন্তকে ঝাপ্টে ধরে ওর পিঠে মাথা রাখলো।সাথে সাথে ওর চোখের কোণ বেয়ে সুখের অশ্রু গড়িয়ে পরলো।হেমন্ত আর ইশির ঠোঁটে আজ তৃপ্তির হাসি সরছেই না।এইভাবেই পূর্ণতা পেতে থাকুক সবার ভালোবাসা। ওদের দেখলেই যে কেউ বলবে ভালোবাসা সুন্দর।

#চলবে___________

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#বোনাস_পর্ব
টুকটুকে লাল বেনারসী গায়ে জড়ানো,চোখে কাজল,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর সাথে হালকা পাতলা কিছু স্বর্নের গহনা পরানো বঁধুবেশে ইশিকে যেন কোন হুরপরী লাগছে।লজ্জার রেশ পুরো মুখশ্রীতে জুড়ে রয়েছে ওর।সেই সাথে প্রানভুলানো লাজুক হাসি ঠোঁটে।পাশেই হেমন্ত বসে আছে ওর সাথে লেপ্টে।ইশি লজ্জায় সেই যে চোখ নামিয়ে নিয়েছে আর একটুও তাকায়নি কারো দিকে।একটু আগেই ওর আর হেমন্ত’র বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।ইশি আর হেমন্তকে এতোটা হাসিখুশি দেখে সকলের যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছেন হাতে।ওনাদের ছেলেমেয়েরা যেখানে এতো হাসিখুশি সেখানে আর কিইবা চাইবেন তারা।হেনা বেগম আসেননি।তবে প্রয়োজনীর সকল কিছু নিজ হাতে গুছিয়ে দিয়েছেন রায়হানা বেগমের কাছে।গহনা গাটি, আর নিজের বিয়ের বেনারসীটাও দিয়েছেন।এগুলো যেন তার পুত্রবধুকেই পরিয়ে বিয়ে দেওয়া হয় তা আদেশ জারি করে দিয়েছেন তিনি। নিজ হাতে নিজের পুত্রবধুকে বরন করার সকল আয়োজন একা হাতে করছেন তিনি।ইশি মেয়েটাকে খুব ভালো লাগে উনার।নিজের ছেলের বউ হিসেবে ইশিকেই চাইতেন তিনি।কিন্তু ছেলের সাথে রাগারাগি হবে ভেবে কোনদিন সাহস পাননি তিনি।তবে আজ তার মনের আশা পূর্ন হয়েছে।তার খুশির যেন বাধ মানছে না। কলিংবেল বাজতেই হেনা বেগম ছুটে গেলেন দরজা খোলার জন্যে।দরজা খুলে দিতেই উনি ইশি আর হেমন্তকে একে-অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন প্রানটা জুরিয়ে গেলো উনার।এদিকে হেমন্ত আর ইশিকে দেখে প্রাহি অর্থকে বলে,
‘ আমাকে একটু উঠতে সাহায্য করুন নাহ।ওরা এসে গেছে। আমিও যাবো ওখানে!’
অর্থ ভ্রু-কুচকে তাকালো প্রাহির দিকে।গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘ ওখানে যাওয়ার মতো কি হয়েছে?ওদের বরন করে তো এখানেই আনবে তাহলে উঠে ওখানে যাওয়ার কি হলো?তুমি যে অসুস্থ সেই খেয়াল কি তোমার নেই?’
প্রাহি অর্থ’র কথায় মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।অর্থ ভ্রু-কুচকে এখনো তাকিয়ে প্রাহির দিক।মেয়েটা এমন বাচ্চা কেন?নিজের ভালোমন্দ কেন বুঝে না?বিরক্তির শ্বাস ছাড়লো অর্থ।মুখ ফুলিয়ে থাকুক তাও উঠতে দিবে না অর্থ ওকে। হেমন্ত আর ইশিকে বরন করে আনতেই ওদের দুজনকে সোফায় এনে বসানো হলো।প্রাহি অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইশির দিকে।ইশি আলতো হেসে উঠে গিয়ে অনেক সাবধানে প্রাহিকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।প্রাহির ঠোঁটের কোনেও হাসি ফুটে উঠলো।ইশি ছাড়তেই প্রাহি বলে উঠে,
‘ আই এম সরি ইশি।আমার কারনে তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস!’
ইশি আলতো হেসে বলে,
‘ আরে ধুর কিসের সরি।আমার তখন মাথা ঠিক ছিলো না।তাই মুখে যা এসেছে বলে দিয়েছি।তুই এতে মন খারাপ করিস না।আর তুই এখানে কি করছিস?তুই না অসুস্থ?ঘুমাসনি কেন?ক’টা বাজে খেয়াল আছে?’
অর্থ ইশির কথা শুনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো প্রাহির দিকে।চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
‘ এই মেয়ে কারো কথা শুনে?সেই কখন বলেছি চলো রুমে চলো।কিন্তু সে তোমাদের না আসা পর্যন্ত এখান থেকে একপাও নরবেনা বলেছে।খাওয়া দাওয়া করিয়েছি তাও জোর করে। অসুস্থ দেখে কিছু বলছিনা নাহলে এতোক্ষনে থাপড়ে থাপড়ে গালের চামড়া উঠিয়ে ফেলতাম।অসভ্য মেয়ে আমার কোন কথা শুনে নাহ!’
অর্থ’র এতোসব কথা শুনে মুহূর্তেই প্রাহির চোখ ভরে এলো।লোকটা ওকে এইভাবে বকতে পারলো?কিভাবে যাবে ও?যেখানে আজ নিজের দুজন বেষ্টফ্রেন্ডের বিয়ে। তাও ওরা একে-অপরের সাথে।এতো খুশিতে কি প্রাহির ঘুম আসবে চোখে?লোকটা কি বুঝে না? প্রাহি কাঁদো গলায় বলে উঠে,
‘ মা তোমার ছেলে আমায় বকছে দেখো!’
রায়হানা বেগম হেসে দিলেন প্রাহির কথায়।পরক্ষনে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে,
‘ অর্থ তুই আমার বউমাকে বকছিস কেন?ওর বেষ্টফ্রেন্ডেদের বিয়ে একটু সজাগ থাকলে কিছু হবে নাহ।’
প্রাহি আঁড়চোখে তাকিয়ে অর্থকে ভেংচি কেটে দিলো।অর্থ এখনো রাগিভাবে তাকিয়ে প্রাহির দিক।চোখের ইশারায় বুঝাচ্ছে রুমে গিয়ে নেই তারপর তোমাকে কে বাচায় দেখবো।প্রাহি শুকনো ঢোক গিললো।এর মাঝে আরাফ আর হিয়া একগাধা ফুলের ব্যাগ নিয়ে হাজির।তারা কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা হেমন্ত’র রুমে চলে গেলো।একঘন্টা যেন তাদের কেউ ডিস্টার্ব না করে জানিয়ে দিয়েছে তারা এখন বাসর সাজাবে।সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আরাফ হিয়ার কানে কানে বললো,
‘ হেমন্ত আমার ছোট হয়েও বিয়ে করে নিলো।আমি এখনো সিংগেল ঘুরছি।ও হিয়াপাখি রাজি হয়ে যাওনা।চলো আমরাও বিয়ে করে নেই।’
হিয়া রাগি চোখে তাকিয়ে দাঁত খিচিয়ে বলে,
‘ সেটা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকুন।আমি আপনাকে কখনো বিয়ে করবো না!’
বলেই হিয়া হনহন উপরে উঠে চলে গেলো।আরাফও চললো ওদের পিছু পিছু। এক দেঢ় ঘন্টা পর বাসর সাজানো হলে হেমন্ত আর ইশিকে বাসর ঘরে ডুকানো হয়।অবশ্য এতে হেমন্তকে দশহাজার টাকা দিয়ে বাসর ঘরে ডুকতে হয়েছে।নাহলে যে কিছুতেই হিয়া আর আরাফ যেতে দিচ্ছিলো না।শেষমেষ না পেরে দশহাজার টাকাই দিয়েছে।নাহলে আজ বউ ছাড়াই থাকতে হবে ওকে।বিয়ে করেছে কি বউ ছাড়া থাকতে?উহু মোটেও না।হেমন্ত এটা মেনে নিবে না।এদিকে প্রাহিও এসবে সামিল হতে যাচ্ছিলো কিন্তু অর্থ প্রাহিকে ধমকে ধামকে রুমে নিয়ে গিয়েছে।প্রাহিও আর কি করবে অর্থ’র কথাই গাল ফুলিয়ে মেনে নিয়েছে।

#চলবে__________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে