একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব-২৩

0
1417

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৩
বাড়িতে আসার পর থেকে নানারকম প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে অর্থকে।’ প্রাহির হাতে কি হয়েছে?ওর অবস্থা এমন কেন?তোরা কোথায় ছিলিস?’ ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন করতে করতে বাড়ির সবাই অস্থির।অর্থ প্রাহিকে কোলে নিয়েই শান্ত কন্ঠে বলে,
‘ মা! আমি বিস্তারিত পরে বলছি।এখন প্রাহি আর আমি একটু রেস্ট নিবো।ওর শরীর প্রচুর দূর্বল।আর আমিও কাল সারারাত ঘুমাইনি একটুও।প্লিজ মা।’
সবাই অর্থ’র এরূপ কন্ঠস্বর শুনে আর কোন জেরা করলো না।অর্থও প্রাহিকে নিয়ে রুমে চলে আসলো।বিছানায় প্রাহিকে বসাতেই প্রাহি দূর্বল গলায় বলে,
‘ আমি একটু ফ্রেস হবো।কাল থেকে পানির ধারেকাছেও যেতে পারিনি। কেমন যেন অস্থির লাগছে আমার।প্লিজ মানা করবেন নাহ!’
মেয়েটা কি পাগল?হাতের ক্ষতটা পুরো তাজা এখনো। ডাক্তার ঘা না শুকানো অব্দি পানি লাগাতে বারন করেছে।অন্তত দুটোদিন তো যেতে দিবে মেয়েটা।অর্থ কড়া কিছু কথা বলতে গিয়েও নিজেকে থেমে গেলো প্রাহির করুন মুখশ্রী দেখে।হতাশ হয়ে বললো,
‘ অনুমতি দিবো তবে এক শর্তে!’
প্রাহি অবাক হলো,
‘ এর মাঝে আবার শর্ত কিসের?’
‘ আগে বলো রাজি হবে শর্তে।রাজি হলেই আমি অনুমতি দিবো।’
প্রাহি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।গোসল না করতে পারায় কেমন অস্থির লাগছে।ঝটফট করছে ভীতরটা।এই অস্থিরতা দূর করার মাধ্যম একটু ফ্রেস হতে পারা।তাই কোনকিছু না ভেবে প্রাহি রাজি হয়ে গেলো।বললো,
‘ আমি আপনার সব শর্তে রাজি।’
অর্থ বাঁকা হাসলো।ওর এমন হাসির মানে প্রাহি বুঝলো না।অর্থ একটু কাছে আসলো প্রাহির।প্রাহি ভড়কালো,ধমকালো।একমুহূর্তের জন্যে নিশ্বাস আটকে গেলো অর্থ’র এতো কাছে আসায়।অর্থ প্রাহির কানের কাছে মুখ নিলো ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ তোমাকে আমার হাতে গোসল করতে হবে।’
কথাটা কর্ণপাত হতেই চমকে তাকালো সে অর্থ’র দিকে।ততোক্ষনে অর্থ প্রাহির থেকে দূরে সরে ভদ্র সেজে বসে আছে।প্রাহি ঘাবড়ানো কন্ঠে বলে,
‘ মানে?এইসব কি?অসম্ভব এটা হবে নাহ!’
অর্থ’র শীতল কন্ঠ,
‘ তাহলে তোমার গোসল করারও প্রয়োজন নেই।আমি মগে করে পানি এনে হাত পা মুছে দেই এটাই এনাফ।’
প্রাহি করুন আর অসহায় দৃষ্টি ছুড়ে মারলো অর্থ’র দিকে। এতে অর্থ’র কোন ভাবান্তর হলো না।অর্থ পারতো হিয়া অথবা ওর মা বা চাচিকে ডেকে আনতে। কিন্তু এতে তারা সন্দেহ করবে যে ওদের সম্পর্কতে কোন সমস্যা আছে।নাহলে স্বামি থাকতেও কেন তার স্ত্রীর সেবা করতে অন্য কেউ আসবে?এটা অবশ্যই পরিবারের কাছে একটা লজ্জাকর পরিস্থিতি হবে।অর্থ প্রাহির বামহাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।প্রাহি থমকানো দৃষ্টিতে তাকালো।অর্থ লম্বা শ্বাস ফেলে বললো,
‘ দেখো প্রাহি।আমি চাইলেও কিন্তু পাহি হিয়া অথবা মা নাহলে চাচিকে ডেকে আনতে।কিন্তু এটা ভালো চোখে দেখায় না।তারা এতে কষ্ট পাবে আমাদের সম্পর্কটা এই দু মাসেও স্বাভাবিক হয়নি এটা ভেবে।কারন একজন স্ত্রীর সর্বোত্তম সেবা তার স্বামিই করতে পারে যেমনটা একজন স্ত্রী করে তার স্বামিকে।আর এসব পরিবারের সবাই জানলে আমাদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।যা তোমার এবং আমার জন্যে খুবই লজ্জাকর একটা বিষয়।এখন তারা তো আর বুঝবে না যে আমরা একে অপরকে সময় দিচ্ছি নিজেদের বুঝার জন্যে জানার জন্যে।আমাদের স্বামি স্ত্রীর সম্পর্কটা যেন অনেক দৃঢ় হয় সেইজন্যে দুজনেই অপেক্ষা করছি।যেদিন আমাদের মনের মিলন হবে নির্দ্বিধায় সেদিন আমরা দুজনও দুজনার হয়ে যাবো পুরোপুরি।শুধু একটু অপেক্ষা।এখন তুমি কি চাও প্রাহি?এইভাবে নিজেকে গুটিয়ে রাখলে আমরা নিজের সম্পর্কটাকে নিয়ে কিভাবে আগাবো?তুমি নিজেকে খোলা বইয়ের মতো আমার কাছে সপে দিবে আমিও তোমার কাছে নিজেকে খোলা বইয়ের মতো সপে দিবো তাহলেই না আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হবে।একদিন না একদিন তো আমাদের দুজনের এক হতে হবেই প্রাহি।বিয়ে যেহেতু হয়েছে আমাদের মনের আর দেহের মিলিন একদিন হবেই।কিন্তু তুমি আমার কাছে এলে এইভাবে অসস্থি প্রকাশ করলে আমি কিভাবে তোমার কাছে আসবো প্রাহি।তোমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে ছুঁয়ে দিতে গেলেও যে আমার অন্তর কাঁপে।মন বার বার ভেবে উঠে তোমাকে এই বুঝি কোন কষ্ট দিয়ে ফেললাম না তো।তাহলে যে আমি নিজের কাছেই নিজে ছোট হয়ে যাবো প্রাহি।তুমি প্লিজ আমাকে বুঝার চেষ্টা করো প্রাহি।বিনিময়ে আমি তোমাকে আমার হৃদয়ের সবটা দিয়ে ভালোবাসবো।
মানুষের জীবনে চাওয়ার শেষ নেই,
স্বপ্নের সমাপ্তি নেই,আকুলতার অন্তি নেই ,
আমার চাওয়া তুমি,স্বপ্ন তুমি ,
আমার সব আকুলতা শুধু তোমার মাঝে
আমার জীবন শুধু তোমাকে ঘিরে!’
অর্থ’র প্রতিটা কথা যেন প্রাহির হৃদয়ে প্রশান্তির ঢেউ তুলে দিয়েছে। বার বার অর্থ’র বলা কথাগুলো ওর পুরো মস্তিষ্ক জুড়ে বিচড়ণ করছে।অর্থ কি তবে ওকে ভালোবাসে?অর্থ’র প্রতিটা কথায় নিজের জন্যে অসীম ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে প্রাহি।লোকটার হৃদয়ে যে ওর জন্যে এতোটা আকুলতা,ব্যাকুলতা,ভালোবাসা লুকিয়ে আছে তা তো আজ লোকটা না বললে প্রাহি জানতেই পারতো না।প্রাহির ভীতরের সেই কিশোরি মনটা কেমন যেন আজ ঠেলেঠুলে বাহিরে বেড়িয়ে আসতে চাইছে আবার সেই আগের কিশোরী প্রাহির মতো নিজের ভালোবাসার জন্যে পাগলামি কর‍তে মন চাইছে।ওযে নিজেও অর্থকে ভালোবাসে সেটা চিৎকার করে বলে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু প্রাহি চাইলেও পারছে না কান্নাগুলো দুচোখ ভরে উপচে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।এই এতো সুখ কিভাবে সামলাবে প্রাহি?কোথায় রাখবে সুখগুলো লুকিয়ে যাতে কেউ ওর সুখের উপর নজর দিতে না পারে?কি করবে প্রাহি।এতো সুখে যে ও মরে যাবো।সাত সাতটি বছর যাবত একপাক্ষিক ভালোবেসে এসেছে প্রাহি এই লোকটাকে।আর আজ সেই লোকটার মুখের নিজের জন্যে এতো এতো ভালোবাসাময় কথা শুনে কি নিজেকে সামলানো যায়?উহু মোটেও না।তাইতো প্রাহিও পারেনি।নিজের সাত বছরের ভালোবাসার জন্যে দিনরাত যে প্রার্থনাগুলো করেছে কতোশতো রোজা রেখেছে।আজ সবকিছুর প্রতিদান উপরওয়ালা দিয়েছেন।ওকে।একসাথে শতো আনন্দের ঝুরি ওর কোলে ঢেলে দিয়েছেন।প্রাহি আর সামলাতে পারলো না নিজেকে অর্থ বুকে মাথা ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।অর্থও পরম মমতায় নিজের স্ত্রীকে ওর বাহুডোরে বন্দি করে নিলো।অনেকক্ষন কাঁদলো প্রাহি এইবার আর প্রাহির এতো কান্না সহ্য হচ্ছে না অর্থ’র।মেয়েটা এমনিতেই অসুস্থ এইভাবে এতো কাঁদলে তো আরো অসুস্থ হয়ে পরবে।অর্থ প্রাহিকে সোজা করে বাসালো।প্রাহির কপালে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে মায়াভরা কন্ঠে বলে,
‘হয়েছে তো আর কাঁদেনা।চলো ফ্রেস হবে।’
প্রাহি পরম ভরসায় নিজের বাম হাতটা বাড়িয়ে দিলো অর্থ’র দিকে।অর্থ’র ঠোঁটের কোণে প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।প্রাহিকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে এনে একটা মোড়ার উপর বসিয়ে দিলো। তারপর ওয়াশরুমের লাইট ওফ করে দিলো।লজ্জায় মাথা নিচু করে ছিলো প্রাহি।হঠাৎ লাইট ওফ করাতে ঘাবড়ে যায় ও।উঠে দাঁড়াতে নিতেই।একজোড়া শীতল হাতের স্পর্শ অনুভব করে ওর কাধে।সাথে শীতল কন্ঠ,
‘ ভয় নেই আমি আছি।আমিই লাইট ওফ করেছি।যাতে তোমার কোন অসস্থি না হয়।ভয় পেও না!’
প্রাহি কি বলবে ভেবে পেলো না।লোকটা এতোটা বুঝে কেন ওকে?কেন ওকে কিছু মুখ ফুটে বলতেও হয়না লোকটা অনায়াসে ওর সব না বলা কথাগুলো বুঝে ফেলে।অর্থ প্রাহির আরেকটু কাছে আসলো।নিবিড়ভাবে প্রাহির সাথে অনেকটা মিশে গেলো।আস্তে করে প্রাহির জামার চেইনটা খুলে ফেলতেই।প্রাহি কেঁপে উঠে নিজের জামা খামছে ধরলো।শ্বাস প্রশ্বাস বেড়ে গিয়েছে প্রাহির।অর্থ আস্তে আস্তে প্রাহির জামাটা সম্পূর্ণ খুলে ফেললো।লজ্জায় জান যায় যায় অবস্থা প্রাহির।চোখজোড়া চেপে বন্ধ করে আছে ও।অর্থ নিজ হাতে আস্তে আস্তে অল্প অল্প পানি মগ ভরে প্রাহির শরীরে ঢালতে লাগলো।তাও খুব সাবধানে যাতে প্রাহির ডানহাতে পানির কোন স্পর্শ না লাগে।আর ও যেন ব্যাথা না পায়।পুরো শরীরে পানি ঢালা শেষ হতেই গভীর নিশ্বাস ফেলে অর্থ।ওর ভীতরটা উত্তপ্ত মরুভূমির ন্যায় হয়ে গিয়েছে।ভীতরটা যেন প্রাহি নামক তৃষ্ণায় খাঁখাঁ করছে।বারবার শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে।বাহির থেকে আসা হালকা আলোতেও প্রাহির রক্তিম আভায় রাঙা মুখখানি নজর এড়ালো না অর্থ’র।সেই সাথে নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর এমন ভয়ংকর সুন্দর রূপ দেখে দিশেহারা হয়ে যাওয়ার জোগাড় অর্থ’র।নারিদেহের দেহের প্রতিটা বাঁক যেন তীব্র আকর্ষন।স্ত্রীর এমন মোহনীয় রূপে নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলতে পারে অর্থ যেকোন মুহূর্তেই তাই দ্রুত।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো।বুকটা এখনো ধড়ফড় করছে।প্রাহির জন্যে এক সুট স্ত্রী পিছ নিয়ে ওয়াশরুমে আসলো অর্থ ততক্ষণে নিজেকে তাওয়াল দ্বারা আবৃত করে নিয়েছে প্রাহি।অর্থ আস্তে করে এগোলো।অন্যদিকে মুখ ফিরিয়েই অতি সাবধানে প্রাহি জামাকাপড় পরিয়ে দিলো।তারপর দ্রুত প্রাহিকে কোলে করে রুমে এনে সুইয়ে দিয়ে বলে,
‘ তুমি ঘুমাও।আমিও ফ্রেস হয়ে এসে ঘুমাবো।’
প্রাহি মাথা দুলালো।তবে কিছু বললো না।লজ্জায় ওর কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।অর্থ স্ত্রীর এমন লজ্জামাখা মুখ দেখে হাসলো।তারপর দ্রুত পায়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
প্রাহিও আস্তে করে সুয়ে পরলো।কিছুক্ষন বাদে অর্থ ফ্রেস হয়ে এসে প্রাহিকে সাবধানে বুকে টেনে নিলো।মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছে এটুকু সময়েই।এতো করা ডোজের ওষুধের ফলেই এমনটা হয়েছে আর সেই সাথে শরীরটাও দূর্বল মেয়েটার।অর্থ প্রাহি বুকে নিয়ে চোখ বুঝলো।আপাততো বিশ্রামের প্রয়োজন।এতোক্ষনে হয়তো সবটা আরাফ বলে দিয়েছে ওর পরিবারকে।তাই আর খামাখা টেন্সন করলো না ও।ঘুম থেকে উঠে বাকিটা সামলানো যাবে।

#চলবে_____________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে