#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১১
প্রাহিকে শাড়ি পরাচ্ছে ইশি আর হিয়া। এদিকে প্রাহি তব্দা খেয়ে আছে।আসলে ওর সাথে হচ্ছেটা কি?ও কিছুই বুঝতে পারছে না।আজ সকাল থেকে ইশি’র হাবভাব কেমন যেন লাগছিলো।মেয়েটা কোন কারন ছাড়াই যেন খুশি সারাবাড়ি সকাল থেকে নেঁচেকুদে যাচ্ছে।সেই সকাল থেকেই নানান পদের রান্না করে যাচ্ছে।আর কতোক্ষন পর পর প্রাহিকে এটা ওটা এনে দিয়ে টেস্ট করতে বলছে।প্রাহি শুধু বসে বসে তামাশা দেখেছে এই মেয়ের।বেলা বারোটা বাজতেই ওকে ঠেলেঠুলে গোসলে পাঠিয়ে দিয়েছে।আর রুম থেকে বের হতে দেয়নি।বাহির থেকে অনেক মানুষের আওয়াজ আসছিলো সব ওর চেনাজানা লোকেরাই।সবাই যে শিকদার বাড়ির লোকেরা তা বুঝতে বেশি অসুবিধে হয়নি প্রাহির।কিন্তু গিয়ে যে দেখবে নিচে গিয়ে তা আর করতে দিলো কোথায় ওকে?রুমের ভীতরে এসে বাহির থেকে দরজা আটকে রেখে চলে গেছে ইশি।বিরক্ত হয়ে রুমে বসেই ইশিকে ইচ্ছামতো বকতে লাগলো প্রাহি।ঠিক তখনি হাতে করে শাড়ি গহনার বাক্স নিয়ে হাজির ইশি আর হিয়া।তারপর ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রাহিকে সাজাতে লেগে পরেছে দুজনেই।এতোক্ষন প্রাহি চুপ ছিলো কিন্তু এইবার না পেরে প্রশ্ন করেই ফেললো, ‘ আশ্চর্য কি শুরু করেছিস তোরা? এমন হুট করে এসে আমাকে এইভাবে সাজানোর মানে কি?’
হিয়া অতি এক্সাইটেড হয়ে মুখ ফোসকে বলেই ফেললো, ‘ আজ তো তোমার আর অর্থ ভাইয়ার বাগদান হবে।সম্ভবত আজই তোমাদের আকদ ও হয়ে যেতে পারে। তারপর তোমার, ইশি আপুর আর হেমন্ত ভাইয়ার অনার্স ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শেষ হলে তোমাকে একেবারে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।অবশ্য তা সম্পূর্ণ তোমার মতামতের উপরে।তুমি চাইলে আজই নিয়ে যাবে।তারপর একটা বড় করে রিসিপশন পার্টি রাখবে।’
হিয়া নিজের মতো বকরবকর করেই যাচ্ছে।ইশি যে ওকে থামানোর জন্যে এতো চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হলো না।এই মেয়ে গড়গড় করে সব বলে দিয়েছে।বলা শেষে ইশির দিকে চোখ যেতেই দেখে ইশি ওর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।পরক্ষনেই ওর মনে পরলো অধিক উত্তেজনায় ও পেটের কথা সব উগলে দিয়েছে।হিয়া কানে হাত দিয়ে সরি বুঝালো।এইবার ইশি আর হিয়া ভয়ে ভয়ে প্রাহির দিকে তাকালো। প্রাহি তো সেই কখন থেকেই স্ট্যাচু হয়ে আছে।ও কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।অবশেষে কি ওর ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে চলেছে?ও কি সত্যি শুনলো সব?হৃদস্পন্দনের গতি দ্রুত থেকে দ্রুত হয়েছে।অদ্ভুত শিহরনে পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।মাথাটাও ঘুরাচ্ছে।প্রাহি আর সহ্য করতে পারলো না এইসব।জ্ঞান হারিয়ে ইশির গায়ে পরে গেলো।এদিকে ইশি আর হিয়া বেক্কল হয়ে তাকিয়ে আছে।হলো কি এটা?কাল হেমন্ত বিয়ের কথা শুনে জ্ঞান হারিয়েছে আর আজ প্রাহিও? এ কি হলো? হিয়া শুকলো ঢোক গিললো।বললো, ‘ তুমি প্রাহি আপুকে সামলাও আমি নিচে গিয়ে বলে আসি যে প্রাহি আপু সেন্সল্যাস হয়ে গিয়েছে।’
ইশি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।হিয়া এক দৌড়ে নিচে আসলো।তারপর দু হাটুতে ভর দিয়ে হাপাতে লাগলো। হিয়া এইভাবে হাপাতে দেখে আরাফ বললো, ‘ কি হয়েছে হিয়া? তুমি এইভাহে হাপাচ্ছো কেন?’
হিয়া জোড়েজোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেক স্বাভাবিক করে বললো, ‘ প্রাহি আপু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে বিয়ের কথা শুনে।’
অর্থ কথাটা শোনার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পরলো।চেঁচিয়ে বললো, ‘ হোয়াট? কি বলছিস এসব?’
অর্থ একদৌড়ে উপরে চলে গেলো।হেমন্ত নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে নিজেও ভাইয়ের পিছে পিছে গেলো।হেমন্ত জানে প্রাহি কেন জ্ঞান হারিয়েছে।প্রাহি যে ওর ভাইকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে এটা জানে হেমন্ত।আর আকস্মিক এইভাবে প্রাহির আর অর্থ’র বিয়ের কথা শুনে যে প্রাহিও যে হেমন্ত’র মতো অতিরিক্ত শক সহ্য করতে না পেরে যে জ্ঞান হারিয়েছে সেটা হেমন্ত ভালো করেই জানে।হেমন্ত উপরে এসে দেখলো ইশি প্রাহির পাশে বসে আছে।হেমন্ত একপলক ওর ভাই আর প্রাহির দিকে তাকিয়ে।এগিয়ে গিয়ে ইশির হাত ধরে টেনে হিছড়ে রুমের বাহিরে এনে রুম বাহির থেকে লক করে দিলো।এদিকে ইশি হেমন্ত’র এমন ব্যাবহারে কপট রাগ নিয়ে বললো, ‘ আশ্চর্য এইভাবে টেনে আনলি কেন?দেখছিস না প্রাহি ওখানে অসুস্থ?’
‘ তোর মতো মাথামোটারাই এমন প্রশ্ন করে।দেখেছিস ভাইয়া ভীতরে গিয়েছে।তাহলে তুই ওখানে গাম্বার মতো বসে ছিলি কেন?’
‘ তো কি করবো?প্রাহির জ্ঞান ফিরাতে হবে না?মেয়েটা এইবাবে আচানক অজ্ঞান হয়ে গেলো।’
‘ সেটা তোকে ভাবতে হবে না।যার জিনিস সেই সামলে নিবে চল এখন চার চোখা মেয়ে।’
ইশিকে হেমন্ত চার চোখা বলায় ইশি বেজায় রেখে গেলো।রেগে দাত কিরমিরিয়ে বললো, ‘ দেখ হেমন্ত’র বাচ্চা আমি চশমা পড়ি বলে তুই আমাকে এইভাবে অপমান করতে পারিস না।’
হেমন্ত ইশিকে চোখ টিপে বললো,, ‘ অবশ্যই বলবো।আর আমি শুধুই হেমন্ত।আমার এখনও কোন বাচ্চা হয়নি।অবশ্য তুই চাইলে সেটাও হতে পারে।আমি তো এক পায়ে রাজি।’
হেমন্ত চলে গেলো শিষ বাজাতে বাজাতে।আর এদিকে ইশি কনফিউজড হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।হেমন্ত বলে গেলো কি এটা?সব ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো।
_____________
চোখে মুখে পানির ছিটা পরতেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো প্রাহি। ঝাপ্সা চোখজোড়া স্পষ্ট হতেই এইভাবে মুখের উপর অর্থকে ঝুকে থাকতে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠতে নিলেই অর্থ প্রাহির মুখ চেপে ধরলো।প্রাহি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে অর্থ’র।অর্থকে নিজের এতোটা কাছে দেখে ওর পুরো শরীর কাঁপছে।অর্থ লাল রাগি চোখ নিয়ে তাকিয়ে প্রাহির দিকে।
‘ চেঁচাতে কেন যাচ্ছিলেন স্টুপিট?’
প্রাহি অসহায় চোখে অর্থ’র দিকে তাকালো।অর্থ বুঝতে পেরে প্রাহির মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।অর্থ এইবার একটানে প্রাহিকে শোয়া থেকে উঠিয়ে নিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলো।প্রাহি ভয় পেয়ে গেলো।দু হাত অর্থ’র বুকে রেখে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো অর্থ’র দিকে।কাঁপা গলায় বলে,
‘ কি..কি করছেন আপনি?’
অর্থ তেজি কন্ঠে বলে, ‘ কাল কার থেকে অনুমতি নিয়ে আপনি চলে এসেছেন এই বাড়িতে হ্যা?আমি দিয়েছিলাম অনুমতি?কেন আসলেন?একটুও বুক কাঁপেনি যে আমাকে রাগালে কতোটা খারাপ হবে আপনার জন্যে?সামান্য বাহিরের মানুষের কথা শুনে আপনি হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে এলেন এই বাড়িতে?আপনার তো দেখি বড্ড বেশি পাখা গজিয়েছে।পাখা গজালে এই অর্থ সেই পাখা কেটেও দিতে পারি গট ইট?’
প্রাহি ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো।কোনরকম তুতলিয়ে বলে, ‘ দেখুন……! ‘
প্রাহিকে বলতে না দিয়ে ওর দিকে আরো গভীরভাবে তাকালো অর্থ বললো, ‘ দেখছিই তো।এখন আপনি আরো অন্য কিছু দেখাতে চাইলে আই হেভ নো প্রোবলেম।’
অর্থ’র ইঙ্গিত বুঝতে পেরে লজ্জায় প্রাহির গাল,কান গরম হয়ে উঠলো।সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো প্রাহি।এই লোকটা যে এমন ঠোঁটকাটা স্বভাবের হবে জানা ছিলো না প্রাহির।এইভাবে লাগামহীন কথা বলে ফেললো ওর সামনে।ছিঃ! অর্থ প্রাহির গাল চেপে ধরে প্রাহিকে নিজের মুখোমুখি করলো দাঁতে দাঁত চিপে বলে, ‘ লিসেন আর কোনদিন আমার মতামত বিহীন কোন কিছু করার দুঃসাহস করবেন না।তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।’
প্রাহি ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে ছিলো।গালে ব্যাথা পাচ্ছে প্রাহি।তাও নিজের ব্যাথাটুকু সামলে নিয়ে সাহস জুগিয়ে বললো, ‘ কেন আপনার সব কথা শুনতে হবে কেন?’
অর্থ ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকালো প্রাহির দিকে।মনে হয় এক্ষুনি ওকে এই চোখ দিয়ে ধ্বংশ করে দিবে।রাগি কন্ঠে বললো, ‘ আমাকে রাগাবেন না প্রাহি।আর আমার কথা কেন শুনতে হবে তা একটু পরেই টের পাবেন আপনি।ভেবেছিলাম আজ শুধু বাগদান করে রাখবো।আপনার উপর কোন প্রেসার দিবো না।কিন্তু কাজটা আপনি ভালো করলেন না।এইটার শাস্তি হিসেবে।আজ এক্ষুনি আপনার আর আমার বিয়ে হবে।কাগজে কলমেও আর শরিয়ত মোতাবেকও।আমি আজই আপনাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।তারপর আপনাকে হারে হারে বুঝাবো আমার কথা আপনার কেন শুনতে হবে। মিস প্রাহি বি রেডি ফোর বিয়িং মিসেস প্রাহি।’
প্রাহি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অর্থ’র দিকে।প্রাহি এতোক্ষন ভাবছিলো শিকদার বাড়ির লোকেরা বুঝি অর্থকে জোড় করে ওকে বিয়ে করার জন্যে। কিন্তু এখানে তো অন্য কিছু এই লোক নিজের নেঁচেকুদে এখানে চলে এসেছে।আর ওরই সামনে ওরই বাড়িতে এসে এমন ট্রেড দিলো।
প্রাহিকে এইভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধমকে উঠে অর্থ, ‘ উঠুন।নিজেকে ঠিকঠাকভাবে রেডি করুন।আমি কিন্তু কাল থেকে প্রচন্ড রেগে আছি আমার রাগ আর বারিয়ে দিয়েব না।লক্ষি মেয়ের মতো রেডি হয়ে নিচে আসুন।আমি হিয়া আর ইশিকে পাঠাচ্ছি।’
অর্থ কথাগুলো বলেই হনহন করে চলে গেলো।আর ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকেই প্রাহির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।
#চলবে________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।