#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#সূচনা_পর্ব
নিজের বেষ্টফ্রেন্ডের কাছ থেকে পাওয়া বিয়ের প্রস্তাবে না করে দেওয়াতে ভার্সিটির মাঠে ভরা স্টুডেন্টদের সামনে প্রাহিকে সজোড়ে থাপ্পড় মেরে বসলো ওরই বেস্টফ্রেন্ড হেমন্ত।তাও আবার কাকে বিয়ে করার প্রস্তাব? হেমন্ত’র বড়ভাইকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছে হেমন্ত।আর তা প্রত্যাখান করাতেই চড় মারলো প্রাহিকে হেমন্ত।বিষ্ময়ে অবাক হয়ে গিয়েছে প্রাহি।হেমন্ত যে ওকে এইভাবে সবার সামনে চড় মেরে বসবে ভাবতেও পারিনি প্রাহি।
প্রাহি ছলছল চোখে হেমন্ত’র দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
-‘ তুই আমাকে এইভাবে মারলি হেমন্ত?’
হেমন্ত রাগে দাঁত কিরমির করছে।পারলে এক্ষুনি সে প্রাহিকে গলা টিপে মেরে ফেলে।হেমন্ত রাগী কন্ঠে বলে,, ‘ তোকে আমি কি বলেছিলাম?আজ হোক কাল হোক।তোকে আমার ভাইকেই বিয়ে করতে হবে।তাও তুই কেন আমাকে ফিরিয়ে দিলি আজ।
প্রাহি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-‘ আমি কি জানতাম তুই সেসব কথা সিরিয়সভাবেই বলতি? আমি ভাবতাম তুই আমার সাথে দুষ্টুমি করে এইসব কথা বলিস। আর এইজন্যে তুই আমাকে চড় মারলি?’
-‘বেশ করেছি মেরেছি।আরো মারবো।’
হেমন্ত’র এমন কথায় প্রাহি ‘ আই হেইট ইউ, হেমন্ত!’ বলে দৌড়ে চলে গেলো।হেমন্ত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রাহির যাওয়ার পানে।হঠাৎ কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে তাকায় হেমন্ত। ইশি দাড়িয়ে আছে ওর পিছনে।ইশি অসহায় কন্ঠে বলে,
-‘কেন শুধু শুধু ওকে মারলি?ওর তো কোন দোষ ছিলো নাহ?শুধু এই সিনক্রিয়েট’টা করলি।এমনিতেই সবাই শুধু তোদের নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে।পুরো ভার্সিটি তোদের নিয়ে রঙচঙ মাখিয়ে নানান কাহিনি সাজায়।তার উপর তুই আবার আজ এই ঘটনা ঘটালি।’
হেমন্ত কিছু বললো নাহ।পুরো মাঠে একবার চোখ বুলালো।সবাই কানাঘুষা করছে।কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছেও।হেমন্ত চিৎকার করে হাঁক ছাড়তেই সবাই ভয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।ইশি নিজেও ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।হেমন্ত’র এমন চিৎকারে।হেমন্ত এইবার তাকালো ইশির দিকে।মেয়েটা অল্পতেই ভয় পেয়ে যায়।এইযে দেখো এখন কিভাবে কাঁপছে।হেমন্ত গম্ভীর মুখে ইশির হাত শক্ত করে ধরলো।এখন ওর গরম মাথাটা ইশিই ঠান্ডা করতে পারবে।ইশি হেমন্ত’র এইভাবে ওকে টেনে নিয়ে যেতে দেখে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে।’
-‘ জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছি।’
-‘ আমি যাবো নাহ।!’
-‘ এখন এই মুহূর্তে আমার সাথে না গেলে তোকেও সেইমভাবে থাপ্পড় মারবো।ঠিক যেইভাবে প্রাহিকে মেরেছিলাম।’
হেমন্ত’র এমন থ্রেড শুনে গলা শুকিয়ে গেলো ইশির।সে হেমন্ত’র হাতের চড় খেতে চায়না।একদম চায়না।তাই বিনাবাক্যে হেমন্ত’র সাথে সাথে চললো ও।
————
প্রাহিকে অনবরত ডাকছেন ওর মা রাবেয়া বেগম।কিন্তু প্রাহি দরজাই খুলছে না।রাবেয়া বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন নিজের কাজে। এই মেয়েকে নিয়ে আর পারেননা তিনি।কিছু একটা হলেই দরজা জানালা বন্ধ করে রুমের ভীতর ঘাপটি মেরে বসে থাকে।কিছু বলেও না কি হয়েছে? বা কেউ কিছু করেছে কি না! বিড়বিড় করে মেয়েকে বকতে বকতে রান্না করতে লাগলেন রাবেয়া।একটু পর এরশাদ সাহেব আসবেন।তিনি হলেন প্রাহির বাবা।আর প্রাহি হলেন তার আদরের দুলালি।একমাত্র তিনি এলেই এই মেয়ে রুম থেকে বের হবে।তারপর বাবার বুকে উপর হয়ে পড়ে কেঁদেকেটে একাকার করে সবার নামে নালিশ করবে।তার আগে প্রাহি একটা টু শব্দও করবে না।
———
এদিকে দরজায় কান পেতে রেখেছিলো প্রাহি। রাবেয়ার প্রস্থান করার আওয়াজ পেতেই।নিস্তব্ধে একপ্রকার উড়াধুরা ডান্স করলো রুমের ভীতর।
একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে ধপাস করে বিছানায় সুয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকলো কতোক্ষন।আনন্দে আর অতী উত্তেজনায় ওর সারা শরীর কাঁপছে থরথর করে।
প্রাহি উঠে বসলো।টেবিলের ড্রয়ারের লকারটা খুলে সেখান থেকে একটা ডায়রী বের করলো।এবং ডায়রী থেকে একটা ছবি।একধ্যানে ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখে।সেটা বুকে জড়িয়ে নিলো ও।
ছলছল চোখে মুখে হাসি নিয়েই বললো,
-‘ এইবার হেমন্তই পারবে আপনাকে আমার করতে।কতো কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে এর জন্যে।এতোদিন ও শুধু বলতো।কিন্তু আমি সিয়র ছিলাম না ভাবতাম ও দুষ্টুমি করছে।কিন্তু না আজ আমি পুরোপুরি সিয়র।হেমন্ত আমাকে তার ভাবি হিসেবে গ্রহন করতে একদম প্রস্তুত।ইসস,হেমন্ত রাজি তো এইবার তুফান হলেও সেই আমিই হবো ওর ভাইয়ের বধু।ইসস, আপনাকে যদি বুঝাতে পারতাম ঠিক কতোটা ভালোবাসি আপনাকে।কিন্তু কিভাবে বলবো বলুন।আপনাকে আমি দেখেছি শুধু একবার।আর কাউকে একবার দেখাতেই এতোটা ভালোবেসে ফেলা যায়।সেটা আমার ক্ষেত্রে না হলে বুঝতেই পারতাম না।উলটো এই আপনি তো জানেনই না যে আমি প্রাহি আপনাকে প্রচন্ড ভালোবাসি।আপনি তো আজও পর্যন্ত দেখেনও নি।কবে আসবেন আপনি?কতো বছর হলো আপনাকে দেখিনা।প্লিজ জলদি দেশে ফিরে আসুননা।’
হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হতেই সম্ভিৎ ফিরে পেলো প্রাহি।বাহির হতে একটা হাসোজ্জল আওয়াজ ভেসে এলো,
-‘ প্রাহি আম্মু।কি করছো ভীতরে।বাবাই এসেছি তো।জলদি আসো বাবাইয়ের কাছে।বাবাই অপেক্ষায় আছি।’
-‘ আসছি বাবাই।’
কথাটা বলেই উঠে দাড়ালো প্রাহি।ডায়রীর ভাজে তার প্রানপ্রিয় মানুষটার ছবি রেখে দিয়ে আবারও ড্রয়ারে লক করে রাখলো।জলদি উঠে আয়ানার সামনে গিয়ে দাড়ালো।নিজেকে পরিপাটিরূপে ফিরিয়ে এনে সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।এরশাদ সাহেব তার মেয়েকে এলোমেলো অবস্থায় দেখতে একদম পছন্দ করেননা।
প্রাহি কাঁদো কাঁদো মুখে আয়নায় তাকিয়ে আছে।সবই ঠিক আছে কিন্তু হেমন্ত তাকে চড় মেরেছে সেই দাগটা দেখা যাচ্ছে।স্পষ্ট তিন আঙ্গুলের ছাপ।প্রাহি বিরবির করে বললো,
-‘ হেমন্ত’র বাচ্চা। চড় মারলি ভালো কথা তাই বলে এতো জোড়ে মারলি। এখন এই মুখ নিয়ে আমি বাবাইয়ের কাছে কিভাবে যাবো।উনি এটা দেখলেই রেখে যাবে।উফফফ!’
প্রাহি বিরক্তি সহকারে মুখের ওই অংশটুকুতে ফাউন্ডেশন লাগালো তার উপর লুস পাউডার লাগিয়ে নিলো।আয়নায় দেখে নিলো আরেকবার নিজেকে।নাহ এখন আর অতোটা বুঝা যাচ্ছে না।
আস্তে ধীরে রুম থেকে বের হয়ে সোজা ড্রয়িংরুমে বাবার কাছে গিয়ে বসলো প্রাহি।এরশাদ সাহেব আদরে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।প্রাহিও তার বাবাকে ঝাপটে ধরলো।
এরশাদ সাহেব বলে উঠেন,
-‘ শুনলাম ভার্সিটি থেকে এসেই নাকি নিজেকে রুমবন্ধি করে রেখেছো?কিছু খাওনি?কেন আম্মু?’
প্রাহি করুন চোখে তাকালো বাবার দিকে।এরশাদ সাহেব হেসে দিলেন।বললেন,
-‘ আবারও হেমন্ত’র সাথে ঝগরা করেছো বুঝি?’
-‘ হ্যা তোমার তো এটাই মনে হয় আমিই শুধু ঝগরা করি।ওই হেমন্ত কাউকার বাচ্চাটা তো একেবারে দুধে ধোয়া তুলসীপাতা। ‘
এরশাদ সাহেব আবারও শব্দ করে হেসে দিলেন মেয়ের এমন বাচ্চামো কথায়।রান্না ঘর হতে রাবেয়া বেগমের ঝাঝালো কন্ঠস্বর শুনতে পাওয়া গেলো,
-‘ বাবা মেয়ের কতো আনন্দ।আমি তো দিব্যি একঘন্টা ডেকে ডেকে হয়রান হলাম।মেয়ে টু শব্দও করলো।বাবা ডাকতেই একেবারে নেঁচেকুদে হাজির।বলি আমি যদি তোদের এতোই পথের কাটা হয়ে যাই।তাহলে বল আমি চলে যাই এখন থেকে।’
প্রাহি বিরক্ত হয়ে বললো,
-‘ উফফ আম্মু প্রতিদিন এক কথা শুনতে ভালো লাগে না।তুমি কেন এতো রাগ করো বলোতো?আমি কি কিছু বলেছি তোমাকে?’
-‘ কিছু বলেননি ধন্য হয়ে গিয়েছি তাতে আমি।’
এরশাদ সাহেব গম্ভীর স্বরে এইবার বললেন,
-‘ রাবেয়া খাবার নিয়ে আসো জলদি।আমার মেয়ে না খেয়ে আছে।’
-‘ আনছি একটু অপেক্ষা করুন!’
রাবেয়া বেগম যেমন হোক।স্বামিকে অতি সম্মান করেন।একেবারে স্বামিভক্ত বউ।এইযে একটু আগেই কেমন রনচণ্ডী হয়ে ছিলেন।আর এরশাদ সাহেবের এক কথায় একেবারে শান্ত।এরশাদও তার স্ত্রীকে বড্ড ভালোবাসেন।এরেঞ্জ ম্যারেজ হয়েও তার বাবা মার মাঝে এতো বিশ্বাস আর ভালোবাসা দেখে অবাক হয় প্রাহি।মনে মনে সে রবের দরবারে প্রার্থনা করে।ওর প্রিয় মানুষটিও যেন ওকে অনেক ভালোবাসে।ঠিক যেমন বাবা তার মাকে ভালোবাসে।
#চলবে________