#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat
মৌ কিছুটা ভয় পেলো রুশানের হাতে চিঠিটা দেখে।এখন রুশান কি বলবে না বলবে এটা ভেবেই ঢোক গিলছে।এদিকে রুশান মৌ কে ঘাবড়ে যেতে দেখে বলল,’ভয় পাচ্ছো কেনো মৌ?’
‘না মানে আসলে এটা আসার সময় আমার এক ক্লাসমেট দিয়েছিলো।আমি এমনিতেই নিয়েছিলাম কিন্তু পড়া হয় নি।’
রুশান স্বাভাবিক ভাবেই বলল,’ও আচ্ছা।তো এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?ইট’স সিম্পল।চলো এটা পড়ি।তুমি পড়বে নাকি আমি পড়বো?’
‘আপনিই পড়ুন।’
‘আচ্ছা তাহলে ছাঁদে চলো।সারাদিন পড়তে পড়তে তো বোর হয়ে গেছো।এক কাপ চা খেতে খেতে একটু প্রেমপত্রের মজা নেওয়া যাক।’
‘ঠিকাছে চলুন।’মৌ কিছুটা হেসেই বলল।
‘তুমি ছাঁদে চলে যাও।আমি চা নিয়ে আসছি।’
‘আচ্ছা।’
রুশান চলে যাওয়ার পর মৌ চিঠিটা নিয়ে ছাঁদে গেলো।এর আগে আর রুশানদের ছাঁদে আসা হয় নি মৌ এর।মোটামুটি বড়ই ছাদটা।মৌ পিলারে হেলান দিয়ে রুশানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।রুশান দশমিনিট পর দুই কাপ চা নিয়ে হাজির হলো।এককাপ মৌ কে দিয়ে বলল,’ছাদের বাইরে পা ঝুলিয়ে বসতে পারবে?’
‘কখনো বসি নি।তবে চেষ্টা করতে পারি।’
‘আচ্ছা তাহলে আসো।তবে খুব সাবধানে।’
‘আচ্ছা।’
আগে মৌ’কে বসিয়ে তারপর রুশান ওর পাশে বসলো।চায়ের একটা চুমুক দিয়েই প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,’চলো চিঠিটা পড়ি।’
‘আচ্ছা।’
রুশান ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে চিঠিটা খুললো।তারপর পড়তে শুরু করলো।
‘প্রিয়তমা মৌ’
তোমাকে প্রথম দেখেই ভালো লেগেছিলো।তারপর তোমার সাথে ক্লাস করে তোমার পড়াশোনা দেখে আর ব্যাবহার দেখে আমি মুগ্ধ হলাম।এখন বোধহয় আমি তোমাকে ভালোই বেসে ফেলেছি।তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?প্লিজ অ্যান্সার দিও।’
ইতি ‘শাওন’
চিঠিটা পড়ে রুশান মুখে হাত একটু চাপা হাসলো।মৌ ভ্রু কুচকে মুখ গোজ করে বলল,’হাসছেন কেনো?’
‘এমনিই।পিচ্চি পিচ্চি পোলাপানে আবেগ দেখে হাসি পায় আর কি।যাক তুমিই বলো তোমার অ্যান্সার কি?’
‘আমি আর কি বলবো!আমার এগুলো ভালো লাগে না।এখন শুধু একটাই চাওয়া আমার সেটা হলো আমার সাফল্য।’
‘ইয়েস এটাই শুনতে চেয়েছিলাম আমি।এই চিঠিটা কাল ওই ছেলেকে দিয়ে বুঝিয়ে বলে দিবে।এরপরও যদি ছেলেটা বাড়াবাড়ি করে তাহলে ওকে আমি দেখবো।’
‘আচ্ছা।’
তারপর আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে রুশান মৌ’কে ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও চলে এলো।
———–
রুশানের কেয়ার,সাপোর্ট আর নিজের পরিশ্রমে মৌ নিজের প্রস্তুতি অনেক ভালোভাবে শেষ করেছে।অবশেষে বহুল কাঙ্ক্ষিত ভর্তি পরীক্ষা চলেই এলো।কাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা।ওরা আজই চলে এসেছে কারণ সিলেট থেকে ঢাকা আসতে অনেক সময় লাগে।আর জার্নি করে এতোদূর এসে পরীক্ষা দিতে মৌ এর কষ্ট হবে ভেবে আজই চলে আসলো।ওরা ঢাকায় রুশানের বন্ধু হাসিবের বাসায় থাকবে। ওর বন্ধু হাসিবের বোনও এবার ভর্তি পরীক্ষার্থি।ভালোই হলো মৌ এস জন্য।
ভর্তি পরীক্ষাগুলো ভালোভাবেই শেষ করলো মৌ।এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর জাহাঙ্গীরনগরে,চট্টগ্রাম আর খুলনায় চান্স পেয়েছে মৌ।এইজন্য কনফিউশনে পড়ে গেছে সে কোনটা রেখে কোনটায় ভর্তি হবে।সবগুলোতেই ভালো সাবজেক্টও পেয়েছে।তবুও ঢাকা ভার্সিটিতেই ‘ব্যারিস্টারি’ তে ভর্তি হলো।হলেও সীট পেয়ে গেলো।আজই হলে উঠবে।তারপর এক দুইমাস হলে থেকে।ওই বাসা থেকে মাকে নিয়ে এসে আলাদা বাসা নিয়ে থাকবে।
মৌ কে ভর্তি করিয়ে দিয়ে রুশান বলল,’যাক তুমি তোমার স্বপ্নে পৌঁছে গেছো।এখন আমার কাজ শেষ।আমি তোমার চেয়েও বেশি তোমার সাফল্য কামনা করেছিলাম।আজকে তোমার চেয়ে বেশি খুশি আমি।’
মৌ কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে রুশানের দিকে চেয়ে বলল,’আজকের সাফল্যে আমার যতোটুকু পরিশ্রম ছিলো তার চেয়েও বেশি আপনার সাপোর্ট ছিলো।আমি সত্যিই খুব লাকি আপনার মতো একজনকে পাশে পেয়েছিলাম।’
‘এটা তো তোমার পরিশ্রম আর ভাগ্যেরই ফলাফল।বেষ্ট অফ লাক।’
‘ধন্যবাদ।আচ্ছা আপনি বলেছিলেন আপনি কিছু চাইবেন।আজ তো আমি সফল।এবার চেয়ে ফেলুন।’
‘চাইবো?’
‘হ্যাঁ অবশ্যই।আমি চেষ্টা করবো আপনার চাওয়া পূর্ণ করার।’
‘শ্রাবণের পহেলা বৃষ্টিতে তোমার সাথে ভিজতে চাই,
দমকা বাতাসে তোমার উড়ন্ত চুলগুলো ভালোবাসায় বাঁধতে চাই,
বেদনায় তোমার শুষ্ক কপলে গড়িয়ে পড়া অশ্রুবারি মুছতে চাই,
তোমার ওষ্ঠের সুধায় আকন্ঠ ডুবে থাকতে চাই,
আমি তোমার মাঝে বাঁচতে চাই,
আজন্ম তোমায় ভালোবাসতে চাই,
আর তোমার সাথে কিছু স্মৃতিমধুর প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল চাই,
এতক্ষণ মন দিয়ে রুশানের কথাগুলো শুনলো মৌ।রুশান নিজের চাওয়াগুলো প্রিয়তমার কাছে বলে দিয়ে জানতে চাইলো,’আমার চাওয়া পূরণ করতে পারবে?’
মৌ রুশানকের দিকে তাকালো।কিন্তু কিছু বলল না।নিশ্চুপতায় ভর করে চলে গেলো।মৌ এর চলে যাওয়ার পথে রুশান বহুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।
———————
ঢাকায় দুইদিন থেকে রুশান আজই সিলেট ফিরবে।ভেবেছিলো মৌ এর সাথে দেখা করবে কিন্তু মৌ ফোনই রিসিভ করে না।রুশান ভেবেছে হয়তো ওইদিনের কথাগুলো মৌ এর ভালো লাগে নি!অথবা এমন কোনো অনুভূতিই নেই ওর মনে যেটা রুশানের মনে আছে ওর জন্য।রুশান কখনো জোর করবে না এ নিয়ে।ও শুধুই ওর অনুভূতিটা জানিয়েছে যা এই দুইমাসে জন্মেছে।আর জীবনটা অবশ্যই মৌ এর ওর ভালো লাগা মন্দ লাগা সবার আগে প্রায়োরিটি পাবে।এখন মৌ এর রুশানকে ভালো নাই লাগতে পারে এই নিয়ে আপসেট হওয়ার কিছু নেই।এগুলো রুশান মনে মনে বললেও তার মন বিদ্রোহ করে বলতে চাইছে মিথ্যা বলিস না রুশান!মনের কথা শুনে রুশান হাসলো।
রুশান কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে পড়লো গন্তব্য সিলেট।মৌ ফোন না ধরায় কাল রাতেই মেসেজ করেছে যে ও চলে যাচ্ছে।মেসেজ সিন হয়েছে কিন্তু কোনো রিপ্লাই আসে নি।রুশান ভেবেছিলো হয়তো দেখে করবো কিন্তু না শেষ পর্যন্ত আর দেখা হয় নি।
দুইমাস পরের কথা……..
রুশানের ইন্জিনিয়ারিং শেষ।ফরেইন থেকে একটা জব অফার এসেছে।বাড়িতে সবাই খুশী।তবে রুশান এখনো কনফার্ম করে নি মৌ এর জন্য।এই দুইমাসে অনেক কল আর মেসেজ দিয়েছে সে মৌ কে কিন্তু কোনোটারই উত্তর আসে নি।অন্তত একটাবার কথা বলে না করে দিতো।নাহ!তাও করে নি।হ্যাঁ, না কিছুই বলে নি।আজকে শেষবারের মতো একটা মেসেজ করবে এবং এটাই শেষ।
রাত বারোটা,
রুশান মেসেজ টাইপ করছে।
‘মৌ’
কেমন আছো?মনে পড়ে আমাকে?আমার ফরেইন এ একটা ভালো জব হয়েছে।আমি চলে যাবো।যদি মনে হয় তাহলে একবার এসো দেখা হয়ে যাবে।আর আমার চাওয়াটা নাহয় অপূর্ণই থাক।সব চাওয়া সবসময় পূর্ণ হয় না।ভালো থেকো।’
মেসেজটা সেন্ড হতেই মৌ সিন করলো করলো কিন্তু প্রতিবারের মতোই রিপ্লাই নেই।অভিমানে রুশান জব অফারটা ফাইনাল করে ফেললো।আগামী পনেরোদিন পরেই ফ্লাইট।এই পনেরোদিন ভিসা পাসপোর্ট তৈরি হবে।
——–
অবশেষে চলে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসলো।কালই ফ্লাইট।তাই আজ রুশান ওর সব বন্ধু আর আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলল।যাদের সাথে দেখা হয় নি তাদের সাথে ফোনে কথা বলেছে।এদিকে রুনা বেগম তো ভেবে নিয়েছে ছোট ছেলে প্রথম ছুটিতে এলেই বিয়ে করিয়ে দিবো।এইজন্য তিনি গোপনে পাত্রীও খোঁজা শুরু করেছে।
আজ প্রচন্ড ক্লান্ত রুশান বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে পুরো সময় শেষ তাই আজ এতো রাত হলো।ঘরে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফোনটা নিয়ে দেখলো মৌ অনলাইনে আছে।ভেবেছিলো একবার মেসেজ দিবে কিন্তু পরে ভাবলো মেসেজ দিয়েও তো লাভ নেই সিন করবে বাট রিপ্লাই করবে না আর এটা দেখে আরো বেশি কষ্ট লাগবে।থাক ও ওর মতোই থাকুক।কালই তো শেষদিন তারপর বোধহয় আর কথাও হবে না আর না-ই বা দেখা।
চলবে…