#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৮_০৯
#Arshi_Ayat
পাত্রপক্ষ আসার সময় হয়ে গেছে।এদিকে ইফরার মা ইফরাকে বলে বলেও পার্লারে নিতে পারে নি।ইফরা মায়ের উপদেশ বাণী এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে।তাই সে ইফরার ওপর বেজায় রাগ।ইফরাও কিছু বলল না।মা টা শুধু শুধুই রাগ করে।ছোটোবেলা থেকেই ইফরার রংচং মাখতে ইচ্ছে করে না।মেকাপ তো জীবনেও কিনে নি।ওর বান্ধবীরা যখন মেকাপ কিনতো তখন ইফরা মনে মনে বলতো ‘টাকাগুলো ওয়েস্ট’।দুই কালারের দু’টো লিপস্টিক আর একটা কাজ ছাড়া কিছুই নেই ইফরার।তাও এগুলো গত জন্মদিনে বান্ধবী গিফট করেছিলো।সেই যে এগুলো ড্রেসিং টেবিলে ফেলে রেখেছিলো এখনো তেমনই আছে।সাজার মধ্যে শুধু চুলটা আচড়ে মুখটা ধুয়ে ঠোঁটে হালকা একটু লিপবাম দিয়ে বেরিয়ে যায়।এতটুকুই তার সাজ!এদিকে তারই বিপরীত চরিত্রে অধিকারী তার ছোট বোন ফাইজা।প্রচুর মেকাপ,লিপস্টিক,আইলেনারের কালেকশন তার কাছেই পাওয়া যাবে।
পাত্র পক্ষ আসার আধঘন্টা আগে একটা মেরুন রঙের শাড়ি পড়ে চুলে খোপা করে মায়ের জোরাজোরিতে হালকা একটু লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে ইফরা তৈরি হলো।ছোটো বোন ফাইজা চেয়েছিলো বড়বোনকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে কিন্তু বড়োবোন মেকাপ আর হাবিজাবি কিছুই দিবে না।সাফ মানা করে দিয়েছে।
রুমানের বাড়ি থেকে রুমান ওর মা,ভাবি আর বড়ো ভাই এসেছে।ইফরাকে দেখেই রুমানের মায়ের যে পছন্দ হয়েছে সেটা ওনার কথাবার্তায় প্রকাশ পাচ্ছে।শিরিনের পছন্দ হয়েছে এখন শুধু রুহান বাকি!রুহান ইফরার সাথে পড়াশোনার বিষয়ে কিছু কথা বলল।মনে মনে রুহানেরও ভালো লেগেছে।তাই ইফরার মা’কে বলল,’আমরা কিন্তু আজই বাগদান করে ফেলতে চাই।’
ইফরার মা আলহামদুলিল্লাহ পড়লেন।তারপরই বললেন,’আচ্ছা।আপনারা যেভাবে বলবেন।’
তারপর বাগদান শেষ করে ওর চলে যায়।বিয়ের দিন আগামী শুক্রবার ধার্য করা হয়।
—————-
আজ রুশান মৌ’কে কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দিলো।যেহেতু রুশান এখানে পড়ায় সেহেতু মৌ এর ভর্তি হতে ফি লাগে নি।মৌ কে ভর্তি করে আর্টসে কয়েকজন টিচারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আর্টসের এডমিশন টেস্টের বইগুলো সংগ্রহ করে ফেললো।মোটামুটি ম্যাক্সিমাম বই সংগ্রহে আছে বাকিগুলোও হয়ে যাবে।রুশান মৌ’কে কোচিং থেকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেলো।বাসায় এসে মৌ হালকা নাস্তা খেয়ে পড়তে বসে গেলো।তারপর দুপুর পর্যন্ত পড়ে খেয়ে আবারও পড়তে বসলো।মাঝখানে সন্ধ্যার সময় একটু ব্রেক নেওয়া হয়।তারপর আবারো রাত পর্যন্ত পড়ে।মাঝেমধ্যে হাতাশায় কান্না এলে রুশানের মোটিভেশনগুলো স্মরণ হয়।নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে।এই একসপ্তাহে বোধহয় চার বার মায়ের সাথে কথা হয়েছে তাও কিঞ্চিৎ!
বাড়িতে উৎসব!উৎসব! লেগে গেছে।রুমানের বিয়ে তে অনেক আত্মীয় স্বজনের আসা শুরু হয়েছে।বাড়ির সকলের ব্যস্ততা বাড়ছে।রুশানকে আর শিরিনকে একা হাতে সব সামলাতে হচ্ছে।কারণ রুমান অফিস থেকে বিয়ের আগেরদিন ছুটি নিবে আর রুহানের তো নিজের কারখানা।নিজের কারখানায় নিজে না গেলে সব গোলমেলে হয়ে যায়।তবুও এতো ব্যস্ততার মাঝেও রুশান মৌ কে সাপোর্ট করতে ভোলে না।
আজ গায়ে হলুদ।বাইরে প্রচুর হইচই হচ্ছে।ভেতর থেকে এমন শব্দে পড়ার মনোযোগ পাচ্ছে না মৌ।তাই হতাশ হয়ে টেবিলের সামনে বসে আছে।আজ যেহেতু ভাইয়ের হলুদ সেহেতু রুশানকে তো থাকতেই হবে।সে আছোও কিন্তু মৌ এর কি অবস্থা!সমস্যা হচ্ছে কি না!সেটারও তো খোঁজ নিতে হবে!মূলত সেইজন্যই রুশান একটা বাহানা দিয়ে ঘরে চলে এলো।তারপর মৌ এর দরজায় নক করলো।মৌ দরজা খুলতেই রুশানকে দেখলো।রুশান ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে বিছানায় এসে বসে মৌ’কেও ইশারা দিলো বসতে।মৌ বসতেই রুশান বলল,’কি অবস্থা পড়া হচ্ছে?’
‘না।হইচই এ মনোযোগ পাচ্ছি না।’
‘দেখো মৌ।তুমি এখন একটা যুদ্ধে আছো।আর যুদ্ধে জয়লাভ করতে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা পেরুতে হয়।মাঝপথে এমন নানা বাধা আসবে যেগুলো তোমাকে লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইবে।এখন যদি তুমি বাধা কে বাধা মনে করে না এগোয় তাহলে তুমি সফল হতে পারবে না আর যদি বাধা স্বত্বেও সাহস নিয়ে এগিয়ে যাও তবে সূদুর ভবিষ্যতে তোমার জয় নিশ্চিত।এই যে যেমন কেউ কাউকে ভালোবাসলে শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তাকে আপন করে তেমনিই তোমার ভালোবাসা তোমার মা।তোমার মা’কে তোমার কাছে নিয়ে আসতে হলে তোমাদের মধ্যকার সব ভালোবাসা উপড়ে ফেলতে হবে।আর সহজ করে বলি শোনো,এই অনুষ্ঠান,বিয়ে,হাসি ঠাট্টা আনন্দ এগুলো তোমাকে আর তোমার মা’কে আলাদা করার চক্রান্ত।তুমি কি চাও এই চক্রান্ত সফল হোক?’
‘নাহ!কখনোই না।’
‘তাহলে পুনরায় পড়তে বসো।কাউকে আসতে দিও না তোমাদের মাঝে।’
‘আচ্ছা।’
মৌ কে পুরোপুরি মোটিভেট করে রুশান পড়তে বসালো।তারপর ওর রুম থেকে বেরিয়ে এক প্লেট তেহারি,একটা পেপসি,আর চার/পাঁচটা মিষ্টি নিয়ে এসে বলল,’পড়তে পড়তে আবার খাওয়ার কতা ভুলো না।দুর্বল হলে কিন্তু পড়তে মন চাইবে না।’
মৌ পড়তে পড়তে শুধু একবার ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানালো।রুশান ওর একাগ্রতা দেখে মুগ্ধ।যদি শেষ পর্যন্ত লড়তে পারে তবে অবশ্যই সফল হবে।এই বিশ্বাসটা আছে রুশানের।এখন শুধু ওকে সাপোর্ট করতে হবে।হতাশ হতে দেওয়া যাবে না।
হলুদের অনুষ্টান শেষ হওয়ার পর যে যার মতো শুতে চলে গেলো।রুমানও ঘরে এসে গোসল করে ফ্রেশ হলো তারপর ইফরাকে ফোন দিলো।ইফরাও ঘরে একাই ছিলো।একটু পরই ওর কাজিন আর ছোটোবোনের চলে আসবে ওর সাথে ঘুমাতে।এমনিতে ইফরার গাদাগাদি কর শুতে মন চায় না তবুও ওরা আবদার করেছে বলে শুতে হবে।রুমানের ফোন পেয়ে ইফরা রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে রুমান বলল,’কি করছেন?’
‘বসে আছি।মাত্রই ঘরে আসলাম।’
‘আপনি?’
‘আমিও।আচ্ছা মেহেদী দিয়েছেন?’
‘হ্যাঁ দিয়েছি।’
‘যদি কিছু না মনে করেন তবে মেহেদী রাঙা হাতের একটা ছবি চাই।’
ইফরা একটু হাসলো।বলল,’এভাবে চাওয়ার কি আছে?এখনো সংকোচ?হলুদ তো হয়ে গেলো।কাল বিয়ে।এতো সংকোচ নিয়ে সংসার হবে?’
‘না মানে আপনার যদি সমস্যা হয় তাই আর কি!’
‘কিসের সমস্যা?সুন্দর করে চাইবেন।বলবেন ইফরা আপনার মেহেদী রাঙা হাতের ছবি দিন আমি আমার অক্ষিযুগল শান্ত করবো।’
‘ওহে হৃদয়রাণী,
আপনার মেহেদী রাঙা হাত দুখানা দেখিয়ে আমায় ধন্য করুন।’
রুমানের এমন কাব্যিক প্রচেষ্টা দেখে ইফরা একটু চাপা হাসলো।তারপর বলল,’দিচ্ছি।হোয়াটসঅ্যাপ দেখুন।’
‘আচ্ছা।আরেকটু কথা বলবেন নাকি ঘুমিয়ে পড়বেন?’
‘ওরা আসতে আসতে আরেকটু কথা বলাই যায়।’
‘আচ্ছা।’
—————
সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর রুশান মৌ এর রুমে নক করলো।মৌ দরজা খুলতেই রুশান এক কাপ কফি দিয়ে বলল,’এটা রাখো।পড়তে পড়তে খাবা।আর এখন রাত একটা বাজে।আর পনেরো বিশমিনিট পর ঘুমিয়ে যাবা।তারপর সকালে তাড়াতাড়ি উঠে আবার বসবা।লেট নাইট পড়ার চেয়ে সকালে পড়া ভালো।’
‘আচ্ছা।আপনি ঘুমাবেন না?’
‘আধঘন্টার মধ্যেই শুয়ে পড়বো।আসছি।দরজা আটকে দাও।’
এটা বলেই রুশান চলে গেলো।আর মৌও দরজা আটকে দিলো।
একটু আগেই বিয়ে পড়ানো হয়েছে।বর কনে একসাথে বসে আছে।অনেক আত্মীয় স্বজন এসে ওদের সাথে কথা বলছে ছবি তুলছে।রুমান ইফরা দুজনকেই ভালো লাগছে।হঠাৎ ইফরা রুমানকে খোঁচা দিয়ে ফিসফিস করে বলল,’আমার এক্সকে দেখবেন?’
রুমান ভ্রু কুঁচকে বলল,’কোথায়?আসছে নাকি?’
‘হ্যাঁ।ওই তো!সামনে তাকান।দু’টো ছেলে কথা বলছে।এরমধ্যে ডান পাশের পার্পেল কালারের পাঞ্জাবি পরাটা।’
রুমান দেখলো।দু’টো ছেলের মধ্যে ওর ভাই রুশানও আছে।রুশান আর ওই ছেলেটা কথা বলছে।রুশানের বন্ধু নাকি!ডাক দিবে!এটা ভাবতে ভাবতেই পাশ থেকে ইফরা রুশানকে ডাক দিলো,’হেই দেবর সাহেব এদিকে আসুন।’
নতুন ভাবির ডাক শুনে রুশান স্টেজের দিকে গেলো।আহাদ তো স্টেজের দিকে তাকিয়ে বউ সাজে ইফরাকে দেখে অবাক।সেও রুশানের পিছনে পিছনে গেলো।রুশান স্টেজে আসতেই ইফরা বলল,’দেবর সাহেব আপনার সাথে তো আমার তেমন ছবি নেই।আসুন কয়েকটা ছবি তুলি।’
‘জ্বি ভাবি।অবশ্যই।’
ইফরা চোখ দিয়ে ইশারা করে রুমানকে দাড়াতে বলল। দুইভাইয়ের মাঝে দাড়িয়ে ইফরা নানারকম পোজ দিয়ে ছবি তুললো।আর আহাদ বেক্কলের মতো তাকিয়ে রইলো।
রুশান মৌ কে বিয়ে বাড়িতেও আসতে দেয় নি।আসার সময় খাবার দিয়ে এসেছিলো।সারা বাড়িতে মৌ একা।ওর ঘরে পড়ছে আর সবাই বিয়ে বাড়িতে।যদিও বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে কার না যেতে মন চায়।তবুও মনকে বাঁধতে হবে।
পুরোটা সময় আহাদ শুধু সুযোগ খুঁজেছে ইফরার সাথে কথা বলতে।কিন্তু পারছে না।কারণ একটু পর পরই মানুষজন আসে,কথা বলে ছবি তোলে।আর ইফরার এতো খুশীর কারণও বোঝা যাচ্ছে না।বিদায়ের আগে হঠাৎ ইফরা ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠতেই আহাদ সুযোগ পেয়ে গেলো।ইফরাকে ফলো করতে করতে ওয়াশরুমের সামনে চলে এলো।তারপর ওকে ডেকে বলল,’ইফরা দাড়াও কথা আছে।’
ইফরা লেহেঙ্গাটা উঁচু করে ধরে বলল,’কি কথা?’
‘তুমি অনেক তাড়াতাড়ি মুভ অন করে ফেলছো দেখছি।’
‘কি ভেবেছে তুমি ধোকা দেওয়ার পর আমি সুইসাইড করবো?হাত কেটে ফেলবো?পাগল হয়ে যাবো?তোমার বিরহে বিরহিণী হয়ে যাবো?
অবশ্য কিছুদিন শোক পালন করেছিলাম তারপর রুমান মানে আমার স্বামী,আমার ভবিষ্যত আর করতে দেয় নি।এই জীবন নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।আর থ্যাংকস টু ইউ।নিজেকে চেনানোর জন্য।তা নাহলে যদি তোমার সাথে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে জড়িয়ে ফেলতাম তবে হয়তো অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতো।’
এটা বলে ইফরা ঘুরে দাড়াতেই আহাদ বলল,’এতো সুখী হইও না।এখনো খেল বাকি!আমাদের রিলেশন চলাকালীন আমাদের যতো কাপল পিক আছে সব যদি তোমার স্বামীর হাতে পড়ে তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো?তোমার সুখ টিকবে তো?’
ইফরা শান্ত গলায় বলল,’ব্ল্যাকমেইল করছো?’
‘না তোমার সুখের সীমানা দেখালাম আর কি!’
‘আচ্ছা তাই?’এটা বলেই ইফরা জোরে হেসে দিলো।বলল,’ছবি দেখাবে রুমানকে?দেখাও।সমস্যা নাই।’
তারপর নিজের ফোন থেকে একটা ভিডিও ওপেন করে আহাদের সামনে ধরলো।ভিডিওটায় চোখ রাখতেই আহাদের শিরদাঁড়া খাড়া হয়ে হয়ে গেলো।ভিডিওটা তে ওর রিসেন্ট গার্লফ্রেন্ডের সাথে একটা রুমে ওরা।এই ভিডিওটা ওর গার্লফ্রেন্ডই ইফরাকে দিয়েছে। এই ভিডিওটা দেখে আহাদ আতংকগ্রস্ত হয়ে বলল,’এটা কোথায় পেয়েছো তুমি?’
‘কোথায় পেয়েছি বলবো না।শুধু বলবো ব্ল্যাকমেইল করতে এসে যেনো নিজেই ফাঁদে না পড়ে যাও।’
‘তুমি এই ভিডিওটা আমায় দিয়ে দাও।আমি তোমার সব ছবি রিমুভ করে দিবো।’
‘তুই রিমুভ করলেই কি না করলেই কি!ওইসব ছবি আমি রুমানকে আগেই দেখিয়েছি।আর এই ভিডিও আমি ডিলিট করবো না।কখন কাজে লেগে যায় বলা তো যায় না তাই না?’
এটা বলেই ইফরা একটা ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে স্টেজে চলে আসলো।স্টেজে আসতেই রুমান বলল,’কাজ শেষ?’
‘হ্যাঁ শেষ।ভিডিওটা দেখার পর কি যে অবস্থা হয়েছিলো ওর!’এটা বলেই ইফরা হেসে ফেললো।
সাথে রুমানও হাসলো।হাসি থামিয়ে ইফরা বলল,’আমি সত্যি আপনার এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য কি না জানি না তবে আমি আমি এই কদিনে বোধহয় আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।আগে খুব কষ্ট হতো।কিন্তু এখন হয় না।আমি আপনাকে কখনোই ছেড়ে যাবো না।’
‘আপনি চাইলেও পারবেন না।’
‘আমি চাইও না।’
সন্ধ্যায় বউ নিয়ে ঘরে ফেরা হয়েছে।ইফরাকে মধ্য মণিক করে বসানো হয়েছে।সবাই ওকে ঘিরে বসেছে।মৌ ও কিছু সময়ের জন্য এসে বউ দেখে গেছে।আরেকটু থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু রুশানের চোখ রাঙানিতে আর থাকতে পারে নি।
—————-
আজকে রিসেপশন।বরপক্ষের অনেক কাজ।এর মধ্যে মেইন দায়িত্বে আছে রুশান।তবুও একফাঁকে মৌ কে কোচিং এ দিয়ে এসেছে।আজকে ওর মডেল টেস্ট আছে।
মৌ পরীক্ষা দিয়ে বের হতেই ওরই এক ক্লাসমেট শাওন ডাক দিলো ওকে।মৌ দাড়ালো।শাওন এসে ওর পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল,’পরীক্ষা কেমন হয়েছে তোমার?’
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোমার?’
‘ভালো।আচ্ছা তোমার অর্থনীতির প্রিপারেশনে কি অবস্থা?’
‘ওটাও ভালো।দুইবার রিভিশন দিয়েছি আজকে গিয়ে আবার দিবো।’
‘ওহ!আচ্ছা।শোনো তোমাকে কিছু দেওয়ার ছিলো।’
মৌ ভ্রু কুঁচকে বলল,’কি?’
শাওন ব্যাগ থেকে একটা চিঠি বের করে মৌ’কে দিয়ে বলল,’বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ করে পড়বে।’
‘কি আছে এতে?’
‘আমার ভালোবাসা।’
মৌ এর আগে কখনো লাভ লেটার পায় নি।তবে বান্ধবীদের যখন লাভ লেটার আসতো তখন দেখতো।আর শাওন যখন দিয়েছে তখনই বুঝতে পেরেছে এটা লাভ লেটার।মৌ লেটারটা বইয়ের ভেতর রেখে দিয়ে বললে,’আচ্ছা পড়বো।’
‘আচ্ছা।তাহলে আমি আসি।’
এটা বলেই শাওন অন্যদিকে চলে গেলো।বাসায় এসে বইগুলো টেবিলে রেখে মৌ গোসল করে বের হতেই দেখলো রুশান এসে বসে আছে।মৌ কে দেখে বলল,’পরীক্ষার কি অবস্থা?’
‘অনেক ভালো।’
‘নেগেটিভ কয়টা দাগাইছো?’
‘পাঁচটা শিউর ছিলাম না।ওই পাঁচটা ছাড়া সবই শিউর।’
‘ওই পাঁচটা দেখে নিও।আর কাল কি পরীক্ষা?’
‘অর্থনীতি।’
‘আচ্ছা তাহলে সুন্দর করে পড়তে বসে যাও।আমি খাবার দিয়ে যাচ্ছি।খেয়ে নিবা।’
‘আচ্ছা।’
তারপর রুশান চলে গেলো।দুপুরে বাড়ি ভর্তি মানুষজন।পাঁচজন ওয়েটার রেখেও যেনো হচ্ছে না।অগত্যা রুশান নিজেও ওয়েটার হয়ে সবাইকে সার্ভ করলো।তারপর মৌ এর জন্য আলাদা করে বেড়ে ওকেও দিয়ে আসলো।পুরো সারাটা দুপুর খাটুনি করে পায়ের ওপর পা তুলে আরম করে বসা মেজো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,’সমস্যা নাই আমারও দিন আসবে।সেদিন আমিও জামাই সেজে বসবো আর তোমরা ওয়েটার সেজে খবার সার্ভ করবা।’
আস্তে আস্তে মেহমান বিদায় হতে থাকলো।এদিকে ইফরা আর রুমানকে কনের বাড়ির লোকেরা নিয়ে গেলো।ওরা যাওয়ার পর রুশান একটু শান্তি করে বসলো তবুও যেনো শান্তি নেই এখনি আবার একটু টিউশনিতে যেতে হবে।তাই একটা মিষ্টি মুখে পুরে বেরিয়ে গেলো।
সন্ধ্যার সময় মৌ একবার নিজের রুম থেকে বেরিয়ে শিহানের সাথে দুষ্টুমি করলো।শিরিন আপুর ফোন দিয়ে মায়ের সাথে কথা বলে আবার নিজের ঘরে এসে পড়তে বসলো।এদিকে পৌরনীতি বইয়ের ভেতরে যে শাওনের লাভ লেটারটা পড়ে আছে সেটা সে বেমালুম ভুলে গেছে।
রাত এগারোটা পর্যন্ত পড়ে প্রচুর মাথাব্যথা করছিলো তাই মৌ ওয়াশরুমে গেলো মাথায় পানি দিতে।এদিকে রুশান টিউশনি থেকে ফিরেই মৌ এর ঘরে এলো।ওয়াশরুমে পানি পড়ছে দেখে বুঝলো ও ওয়াশরুমে তাই বিছানায় এসে বসল।খালি খালি বসতে ভালো লাগে না।তাই ওর অর্থনীতি বইটা হাতে নিয়ে উল্টাতে উল্টাতে দেখলো একটা ইনটেক চিঠি এখনো খোলা হয় নি।চিঠিটার ওপর লেখা ‘প্রিয়তমা মৌ’
রুশান ভ্রু কুঁচকে ফেললো চিঠিটা দেখে।এরইমধ্যে মৌও বের হয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে।মৌ কে দেখে রুশাম গম্ভীর স্বরে বলল,’এটা কি?’
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)