#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৬
#Arshi_Ayat
জীবনটা পুরা হাগুময় হয়ে গেছে।ওপরে,নীচে,ডানে,বামে সব জায়গায় হাগু আর হাগু।এই মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই এমন হচ্ছে।রুশান নাক মুখ কুচকে এগুলোই ভাবছে আর চুপচাপ হাঁটছে।এদিকে শারমিন ননস্টপ হেসেই যাচ্ছে তবে মৌ উচ্চস্বরে না হাসলেও মুচকি মুচকি হাসছে।এদের হাসি দেখে রুশানের রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।একটা কিছু পেলেই হলো হাসি আর বন্ধ হয় না।
—————-
শপিং মল থেকে বের হয়ে বান্ধবীকে বিদায় দিয়ে ইফরা রুমানকে ফোন দিলো।হঠাৎ ইফরার ফোন পেয়ে রুমান হকচকিয়ে গেলো।সে এই সময়ে তাও ইফরার ফোন আশা করে নি।তবুও রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইফরা হাই/হ্যালো না বলেই ডাইরেক্ট বলল,’আপনি কোথায়?’
‘অফিসে আছি।’
‘ছুটি কখন?’
‘আধঘন্টা পরই বের হবো।’
‘আধঘন্টা পর মাজারের সামনে চলে আসুন।’
‘আচ্ছা।’
ইফরা ফোন রেখে হাঁটা ধরলো।মাজারের সামনে পৌঁছাতে পনেরো মিনিট লাগবে।আরো পনেরো মিনিট রুমানের জন্য দাড়াতে হবে।
এদিকে ইফরা ডেকেছে বলে রুমান বসকে বলে আধঘন্টা আগেই বেরিয়ে গেছে।ফলে ইফরা পৌঁছানোর আগেই দেখলো রুমান নির্দিষ্ট জায়গায় দাড়িয়ে আছে।রুমানকে নিজের আগে পৌছাতে দেখে ইফরা বলল,’আপনার তো আরো পরে আসার কথা।এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে এলেন?’
‘আপনি ফোন দেওয়ার পরই বের হয়েছিলাম তাই।’রুমান এলোমেলো হেসে মাথা চুলকে বলল।
‘একি!মাথায় উঁকুন আছে নাকি?মাথা চুলকাচ্ছেন কেনো?’
রুমান দ্রুত জবাব দিয়ে বলল,’না না উকুন নেই।এমনিই চুলকাচ্ছিলাম।’
‘ওহ!আচ্ছা চলুন একটু হাটি।’
‘হ্যাঁ চলুন।’
ইফরা আর রুমান ফুটপাত ধরে পাশাপাশি হাঁটছে।হাঁটতে হাঁটতেই ইফরা বলল,’বিয়েটা কবে হলে ভালো হয়?’
এমন একটা কথা শুনবে এটা রুমান ভাবেও নি।নিজেকে অতি কষ্টে সামলে নিয়ে বলল,’আপনি যখন বলবেন।’
ইফরা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল,’মানে কি!আপনার পছন্দ নাই?’
রুমান একটু থতমত খেয়ে বলল,’না মানে আমার তো সমস্যা নেই আপনি যখন বলবেন আমি তখনই জামাই সেজে হাজির হয়ে যাবো কিন্তু আমি তো আপনার জন্য বলেছি।আপনার তো কোনো সমস্যা থাকতেই পারে।’
ইফরা একবার রুমানের দিকে তাকিয়ে বলল,’আচ্ছা আপনি অফিশিয়ালি আপনার পরিবারকে দিয়ে আমার বাসায় প্রস্তাব পাঠান তারপর তারা কথা বলে যেদিন ধার্য করে সেদিনই।’
‘হ্যাঁ এটাই ভালো।ঝালমুড়ি খাবেন?’রুমান হালকা সাহস নিয়ে অফারটা করেই ফেললো।কারণ এই স্বর্ণকেশী মানবীকে সে ভালোবাসলেও তার সামনে কথা বলতে বেচারার হাঁটু কাপে,কথা এলোমেলো হয়ে যায়,টেনশনে গলা শুকিয়ে যায়,আরো নানান সমস্যা।কেনো যে এমন হয়!
ইফরা মৃদু হাসলো।অফারটা গ্রহণ করে বলল,’ঠিকাছে তবে বেশি ঝাল দেওয়া চলবে না।’
‘আচ্ছা ঠিকাছে।আপনি দাড়ান আমি আসছি।’
পাঁচ মিনিটের মধ্যে রুমান দুটো ঠোঙায়ভরা ঝালমুড়ি নিয়ে এলো।ইফরা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ দিলো।আর তাতেই যেনো রুমানের রাতের ঘুম,স্বপ্ন সব উড়ে বাষ্প হয়ে গেলো।এই মেয়েটাকে কেনো যে এতো ভালোবাসে রুমান নিজেও জানে না।খুব সাধারণ ভাবেই ভালো লেগে যায় মেয়েটাকে।একদিন বন্ধু আয়ানের গায়ে হলুদের মেয়েটাকে দেখেছিলো রুমান।সবার থেকে আলাদা দাড়িয়ে কাঁদছিলো।কাঁদতে কাঁদতে কাজল চোখের নিচে লেপ্টে গিয়েছিলো।দেখতে পেত্নী লাগছিলো কিন্তু চিকন সরু ঠোঁটের ওপরের তিলটা পেত্নী নামক শব্দটায় সায় দিচ্ছিলো না।সেদিন রুমান বিপাকে পড়েছিলো!
কেনো জানি কৌতূহলী হয়ে পুরো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ওকে ফলো করেছিলো সে।তারপর থেকে গোপনে!হ্যাঁ খুব গোপনে ভালোবেসে ফেলেছিলো।তারপর একদিন বন্ধুর বোনের সাহায্যে মেয়েটার সব খবরাখবর নিয়ে জানতে পারে কিছুদিন আগেই মেয়েটার ব্রেকাপ হয়েছে।এবং সে এটা নিয়ে আপসেট তবে।তবে রুমান স্বার্থপরের মতো খুশিই হয়েছিলো।মেয়েটার বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে মেয়েটার মা’কেও হাত করে ফেলেছিলো।
————
আজকে কাছাকাছি একটা পার্কে কতক্ষণ ঘুরাঘুরি করে,রাস্তার ধারে ফুচকা,চটপটি খেয়ে বাসায় ফিরেছে তিনজন।এই পুরোটা সময় মৌ শারমিনের সাথে দুই একটা কথা বললেও রুশানের সাথে কথা হয় নি।রুশানও বলে নি।ওর ধারণা মেয়েটা মেয়েটার প্রচন্ড অহংকার!তাই হয়তো ওর সাথে কথা বলে না।থাক না বলুক!এমন দু’একটা মেয়ে কথা না বললে কিচ্ছু আসে যায় না।
বাসায় ফিরে মৌ আর শারমিন ঘরে গেলো ফ্রেশ হতে আর রুশান একটু বাইরে গেছে।দশ মিনিট পর একটা দুই লিটারের সেভেন আপের বোতল নিয়ে হাজির হলো।শারমিন খুশীতে গদগদ হয়ে বলল,’উফ!বেয়াই সাহেব আপনি কিভাবে আমার মনের কথা বুঝে যান!আমিও এটাই চাইছিলাম।’
রুশানও মজা নিয়ে বলল,’বেয়াইনের মনের ভাবে বেয়াই না বুঝলে কে বুঝবে বলুন!’
এদিকে মৌ এদের অতিরিক্ত আদিখ্যেতায় বেশ বিরক্ত হচ্ছে।এসব ইন্ট্রোভার্ট মানুষের এই একটাই সমস্যা স্রোতের টানে ভাসতে পারে না।তাই দামও পায় না।
শারমিন গ্লাস এনে সেভেন আপ ঢেলে মা’কে এক গ্লাস দিয়ে এলো।সিনথিয়া বেগম নিজের ঘরে বসে তসবি টিপছেন।প্রত্যেকদিন তিনি নামাজের পর তসবি পড়েন।মা’কে দিয়ে এসে আগে রুশানকে দিয়ে মৌ’কে দিতে নিলেই মৌ বলল,’আমি খাবো না গো! তুমি খাও।’
বিষয়টা মৌ স্বাভাবিকভাবে বললেও রুশান ভেতরে ভেতরে ভিষণ ক্ষেপে গেলো।কথা না হয় নাই বলবে তাই বলে এখন সে এনেছে বলে খাবেও না।এতো তেজ!রুশান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার মৌ এর দিকে তাকালো।মৌ ও চাইলো ওর দিকে কিন্তু ওর এমন ধারালো দৃষ্টির কারণ বুঝতে পারলো না।
অনেক্ক্ষণ আড্ডা চললো কিন্তু আড্ডায় শারমিনের ছাড়া আর কারোই মনোযোগ নেই।মৌ এর এসব আড্ডা জমে না কিন্তু রুশান মৌ এর ওপর ক্ষেপে আছে বলেই মনোযোগ দিতে পারছে না।
রাতের খাবার খাওয়া শেষ হওয়ার পর আরো কিছুক্ষণ গল্পসল্প চলল।তারপর সবাই শুতে গেলো।মৌ আর শারমিন একসাথে ঘুমালো আর রুশান গেস্ট রুমে।
মাঝরাতে হঠাৎ মৌ এর ঘুম ভেঙে গেলো।মায়ের কথা মনে পড়ছে।কান্না আসছে।আজ দুইটা দিন হয়ে গেলো মা’কে দেখা হয় না।সামনাসামনি কথা হয় না।শোয়ার আগে সিনথিয়া খালার নাম্বার থেকে কিছুক্ষণ কথা হয়েছিলো।তারপর মা রেখে দেয়।জীবনটা এমন কেনো!মৌ বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে সন্তপর্ণে বিছানা ছাড়লো।পানি খাওয়া প্রয়োজন তাই ড্রইং রুমে যেতে হবে।মৌ ড্রাইং রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে পানি খেয়ে আবার লাইট’টা বন্ধ করে চলে যেতে নিলেই কেউ একজন এসে ওর মুখটা চেপে ধরে।আর হাতদুটো পিছনে নিয়ে আটকে ফেলে।অন্ধকারে চেহারা বোঝা না গেলেই বোঝাই যাচ্ছে পুরুষ অবয়ব।মৌ ভয়ে লোকটার হাতে কোমড় দিয়ে বসলো।আর সাথে সাথেই লোকটা মৌ এর মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললো।তারপর আর্তনাদ করে বলল,’ডাইনি একটা।এতো জোরে কেউ কামড়ায়?’
এতক্ষণে গলার স্বর চেনা গেলো।এটা রুশান।মৌ কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলল,’আপনি!’
‘হ্যাঁ আমি।এতো জোরে কেউ কামড়ায়?এখন যদি আমার জলাতঙ্ক হয়?’
মৌ এর রাগ উঠে গেলো।ছেলাটা ওকে কুকুর বলল!
‘তুই ছাগল!তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী ছাগল।তুই ছাগলের গু, মুত সব খাস।’
আচমকা এই কথাগুলো বলেই মৌ বিদুৎ গতিতে রুমে চলো এলো।আর রুশান বেক্কলের মতো দাড়িয়ে রইলো।কি বলে গেলো মেয়েটা?রুশানের গা গুলাচ্ছে!ছি!
মৌ এর মতো রুশানও পানি খেতেই উঠেছিলো কিন্তু যখন নিজের রুম থেকে বেরিয়ে মৌ কে দেখলো তখন ভাবলো ভয় দেখাবে।কিন্তু এসে মুখ চেপে ধরতেই কামড়ে দিলো।
রুশান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ড্রইং টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে খেতে নিলোই মৌ এর বলা’ তুই ছাগলের গু মুত সব খাস’ এটা মনে পড়ে গেলো।এখন পানিকেও মুত লাগছে কি একটা অবস্থা।রুশান পানি না খেয়েই ঘরে চলো গেলো।
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)