একটি প্রেমাচ্ছন্ন বিকেল পর্ব-০৩

0
3191

#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat

মৌ কে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিয়ে রুশান বগির দরজার সামনে দাড়িয়ে ইচ্ছে মতো হাসছে।এতক্ষণ প্রায় হাসি চেপে রাখতে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।আর এদিকে মৌ এর লজ্জায় মাথাকাটা যাচ্ছে।কি বলতে কি বলে ফেললো।মুখ ফসকে কি এটাই বের হওয়ার ছিলো!ছি!ছেলেটা কি ভাবলো!

হাসির বেগ কমে আসতেই রুশান বগিতে এসে বসলে প্রায় সাথে সাথেই মৌ ও এসে নিজের সীটে বসলো।কিন্তু রুশানের দিকে তাকালো না।বাইরে তাকিয়ে রইলো।সে আজ প্রতিজ্ঞা করেছে কোনো ভাবেই রুশানের দিকে তাকাবে না।রুশান প্রথম কয়েকবার তাকালেও এরপর আর তাকালো না।নিজের ফোন নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

সারা রাস্তা আর কোনো কথা হয় নি।সিলেট স্টেশনে এস যখন ট্রেন থামলো তখন দেড়টা বাজে।রুশান মৌ’কে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে একটা হোটেলে ঢুকলো।তারপর দুই প্লেট কাচ্চি অর্ডার দিলো।একটু পরই দুই প্লেট কাচ্চি সামনে চলে এলো।রুশান হাত ধুয়ে খাওয় শুরু করলো।সংকোচ হওয়া স্বত্বেও মৌও খাওয়া শুরু করলো।রুশান আগে খাওয়া শেষ করে বিল দিয়ে একটু বসলো মৌ এর জন্য কারণ মৌ এর এখনো খাওয়া হয় নি।যেনো ওর অস্বস্তি নাহয় তাই ফোনে মনোযোগ দিলো।খাওয়া শেষে মৌ’কে নিয়ে মেইন রোডে এসে একটা রিকশা ঠিক করলো।প্রথমে ওকে উঠতে দিলো।মৌ রিকশায় উঠে মাঝখান দিয়ে নিজের ব্যাগটা রাখলো।তাই দেখলে রুশান ভ্রু কুঁচকে বলল,’পুরো রিকশায় যদি আপনি আর আপনার ব্যাগ বসেন তাহলে আমি বসবো কোথায়?কি মেয়ে রে বাবা!’

মৌ মুখ কালো করে ব্যাগটা কোলে নিয়ে নিলো চেপে বসলো।তারপর রুশান পাশে বসলো।এইটুকু রিকশার মধ্যে মৌ এমন ভাবে চেপে বসেছে যেনো একটু ঝক্কি খেলেই রাস্তায় পড়ে যাবে।রুশান বিরক্ত মুখে কয়েকবার ঠিক হয়ে বসতে বললেও মৌ আগের অবস্থাতেই রইলো।রিকশা চলতে চলতে হঠাৎ একটা ঝক্কি খেতেই মৌ পড়ে যেতে নিলো।রুশান পেছন থেকে ত্বরিতগতিতে মৌ এর দুইবাহু চেপে ধরলো।ঘটনার আকস্মিকতায় মৌ এর আত্মা শুকিয়ে গেছে।রুশান ওকে ধরে সীটে বসালো।তারপর রুষ্ট হয়ে বলল,’এইজন্যই বারবার বলেছিলাম ঠিক হয়ে বসুন।না আমার কথা শুনবেন কেনো?আপনার তো পড়ে গিয়ে ভর্তা হওয়ার ইচ্ছে ছিলো।এখন পড়ে গেলো পুরো ভর্তা হয়ে যেতেন।’

মৌ মিনমিনে গলায় বলল,’সরি।’

রুশান বিরক্ত মুখে একবার চাইলো।কিছু বলল না।বাসার সামনে এসে ভাড়া মিটিয়ে মৌ’কে নিয়ে ভেতরে গেলো।ড্রইং রুমে শিরিন আপু আর ওনার শ্বাশুড়ি বসে আছে।মৌ’কে দেখে শিরিন উঠে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,’আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো?’

মৌ কিছু বলার আগেই রুশান বলল,’হবে কিভাবে?আমি আছি না!সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে তোমার বোন নিয়ে আসছি।’

‘মহৎ কার্যসাধন করিয়াছেন আপনি।এখন যান ঘরে যান আপনার বন্ধু আসিফ আর সিয়াম এসেছে।’

‘কখন আসলো ওর?’

‘একটু আগেই আসছে।তোর রুমে বসে আছে।’

‘আচ্ছা আমি রুমে যাচ্ছি।’
এটা বলেই রুশান নিজের রুমের দিকে যেতে যেতেও আবার ফিরে এলো।বলল,’দাড়াও এক মিনিট।তোমার থেকে আজকের আর ওইদিনের মিলিয়ে দুই হাজার টাকা পাই।আমার দুইহাজার দাও।’

‘আজকে হাতে টাকা নাই রে ভাই।তোর ভাইয়ের থেকে নিয়ে দিবো।’

‘তুমি সবসময়ই এমন করো ভাবি।দিবো বলে আর দাও না।’

‘আচ্ছা যা এবার দিবো।’

‘মনে থাকে যেনো।তোমার জামাইয়ের থেকে নিয়া দিবা কিন্তু।’

শিরিন হেসে বলল,’আচ্ছা।’
রুশান নিজের রুমে চলে গেলো।

রুশান যেতেই শিরিন মৌ’কে বলল,’যাও তুমি শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।তারপর খাবে।’

‘আপু আমি খেয়ে আসছি তো।রুশান ভাইয়া বিরিয়ানি খাইয়েছে।’

মৌ এর কথা শুনে শিরিন কিছু বলতে যাওয়ার আগেই শিরিনের শ্বাশুড়ি রুনা বেগম বললেন,’তো কি হয়েছে?আবার খাবে।যাও হাত মুখ ধূয়ে আসো।’

মধু মাথা নাড়িয়ে সন্তপর্ণে চলে গেলো শিরিনের দেখিয়ে দেওয়া ঘরে।একদম রুশানের পাশেরটাই ওর ঘর।ঘরে এসে ব্যাগটা গুছানো খাটের ওপর রেখে সেখান থেকে একটা থ্রি পিছ বের করে গোসল করতে চলে গেলো।
——————-
‘মা বললাম না আমি বিয়ে করবো না।তুমি তবুও আমায় জোর করছো কেনো?’পারুল প্রচন্ড বিরক্তির সহিত বলল।

‘দেখ মা ছেলে ভালো।ভালো চাকরি করে।স্বভাব চরিত্র ভালো।বংশও ভালো।তুই না করিস না।ভালো সম্বন্ধ পাওয়া মুশকিল আজকালের জামানায়।তাই ভালো সম্বন্ধ হাত ছাড়া করতে নেই।আর তোর বাবার শরীরের অবস্থাও ভালো না।কখন কি হয় বলা যায় না।তোদের দুইবোনকে বিয়ে দিয়ে তবে আমাদের মুক্তি।’

‘মা দেখো আমি নিজের খরচ নিজেই চালাই।আমাকে নিয়ে তোমাদের সমস্যা হওয়ার কথা না।অতএব মুক্তি কিন্তু তোমরা পাচ্ছোই।আর বিয়েটাই কেনো জীবনের সব হতে হবে?বিয়ে ছাড়া কি চলা যায় না?’

‘ইফরা!কেনো তুই বিয়ে করতে চাচ্ছিস না?দেখ জীবন কিন্তু কারো জন্য থেমে থাকে না।একজনের জন্য তুই সবাইকে খারাপ ভাবতে পারিস না।আহাদ খারাপ ছিলো বলে অন্যছেলেও খারাপ হবে সেটা তো বলা যায় না।’

‘খারপ যে হবে না সেটার কি গ্যারান্টি মা?’

‘তবুও তোর ভাগ্য তো সুপ্রসন্ন হতেও পারে।’

ইফরা তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলল,’হলে তো অনেক আগেই হতো।আচ্ছা যাও ওই ছেলেকে আসতে বলো আমি দেখা করবো।’

আশা বেগম উৎফুল্ল হয়ে বললেন,’সত্যি?কখন আসতে বলবো?’

‘বিকেল ৫.০০ টায় বলে দিও।’

‘আচ্ছা।’
ইফরা কথা শেষ করে বেরিয়ে পড়লো।দু’টো টিউশনি শেষ করে ওই ছেলের সাথে দেখা করবে।

ড্রইং রুমে বসে শিরিন,মৌ আর শিরিনের শ্বাশুড়ি বসে বসে গল্প করছিলো।হঠাৎ রুমানকে বের হতে দেখে শিরিন বলল,’কোথায় যাও রুমান?’

রুমান হালকা হেসে বলল,’একজনের সাথে দেখা করতে যাই ভাবি?’

চশমা নাকের ডগা থেকে তুলে রুনা বেগম বললেন,’কার সাথে?’

‘এখন বলবো না।দেখা করে এসে বলবো।’রুমানের মুখে একটা মিষ্টি হাসির ঝলক দেখা গেলো।

রুমান কিছু না বললেও শিরিন বুঝে গেলো।কারণ আগের রাতে বেশিকিছু না বললেও একটা মেয়েকে ওর ভালো লাগে সেটা বলেছিলো।হয়তো তার সাথেই দেখা করতে যাচ্ছে।তবে শিরিন বুঝলেও রুনা বেগম বুঝলো না।গোয়েন্দাগিরির উদ্দেশ্যে আরো কিছু জিগ্যেস করতে নিলেই শিরিন থামিয়ে দিয়ে বলল,’থাক মা যেতে দিন।ও এসে বলুক।এখন বোধহয় ওর দেরি হচ্ছে।তাই না রুমান?’
এটা বলেই রুমানের দিকে দাত কেলিয়ে একটা হাসি দিলো।রুমান একটু লজ্জা পেয়ে বলল,’আসছি আমি।’
রুমান চলে যাওয়ার পর আবারও কথা বলা শুরু করলো।
কথা বলতে বলতেই শিরিন শুনতে পেলো ওর ফোন বাজছে।কিন্তু ফোন তো রুমে।শিরিন আড্ডা ছেড়ে উঠে চলে গেলো।শিরিন যাওয়ার দুই মিনিট পর রুনা বেগমও চলে গেলেন পান খাওয়ার জন্য।মৌ একাই ড্রইং রুমের সোফায় বসে রইলো।আচমকাই মৌ এর পাশের সৌফায় রুশান এসে বসলো।টি টেবিলে রাখা রিমোট দিয়ে টিভি চালালো।চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতেই শিহান এসে চাচার কোলে এসে বসে পড়লো।রুশান ভাতিজাকে আদর করলো।শিহান কৌতুহলী দৃষ্টিতে একবার মৌ এর দিকে তাকিয়ে চাচাকে জিগ্যেস করলো,’চাচ্চু এই মেয়েটা কে?’

রুশান ভাতিজার চুলে আঙুল চালাতে চালাতে কানে কানে বলল,’এটা হলো তোমার হাগু খালামনি।’

চাচার কথা শুনে শিহান হেসে দিলো।চাচা ভাতিজা দু’জনেই হাসলো।তারপর আবারও রুশান কানেকানে বলল,’শিহান এটা কিন্তু কাউকে বলবা ঠিক আছে?’

শিহান মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে আবারও চাচা ভাতিজা একযোগে হাসা শুরু করলো।আর এদিকে চাচা ভাতিজার এমন হাসির কারণ ভুঝতে না পেরে মৌ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে

চলেবে..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে