#একটি_প্রেমাচ্ছন্ন_বিকেল
#পর্বঃ১১এবং শেষ
#Arshi_Ayat
রুশান ফোনটা বুকের ওপর রেখেই আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।হঠাৎ ঘুমের মধ্যেই মনে হলো মৌ এসেছে এবং ওর বুকের ওপর শুয়ে আছে।ওরা দু’জনে খোলা মাঠে শুয়ে জোৎস্না বিলাস করছে।যদিও রুশানের অমাবস্যা ভালো লাগে তবুও আজ কেনো জানি পূর্ণিমাই ভালো লাগছে।
কিন্তু দৈবাৎ ঘুমটা ফানুসের ন্যায় উড়ে গেলো।রুশান ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলো এটা স্বপ্ন ছিলো।ওর মন খারাপ হয়ে গেলো।যে আসবেই না সে স্বপ্নে এসে কেনো কষ্ট দেয়?
রুশান বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো।হঠাৎ দরজার দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলো।একটা নীল রঙা শাড়ি পড়ে চুল ছেড়ে স্বয়ং মৌ দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।রুশান তড়িঘড়ি করে হাতঘড়িটা দেখলো।এখন রাত ১.০০ টা।এই সময়ে মৌ আসবে এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না রুশানের।এটা নিশ্চয়ই হ্যালুসিনেশন।অবশ্য হ্যালুসিনেশন হবে নাই বা কেনো!সারাদিন মাথার মধ্যে মনের মধ্যে স্বায়ত্তশাসন করলে তো হবেই!
রুশান দরজার সামনে গিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,’তুমি আমাকে শান্তি দিবে না তাই না?ঘুমিয়ে ছিলাম স্বপ্নে এসে জ্বালাতক করে গেলে।এখন আবার হ্যালুসিনেশন হয়ে সামনে দাড়িয়ে আছো।কি সমস্যা তোমার?যখন আসবেই না তখন স্বপ্ন,কল্পনায়ও এসো না প্লিজ।’
‘আমি সত্যিই এসেছি আপনার কাছে।’
কি ব্যাপার হ্যালুসিনেশন এসে আবার কথাও বলছে?সত্যি হ্যালুসিনেশন নাকি!রুশান ভ্রু কুঁচকে একবার আগাগোড়া মৌ কে দেখে নিলো।তারপর সন্দিহান গলায় বলল,’তুমি সত্যিই এসেছো?আসলেই তুমি মৌ তো?’
মৌ একহাতে মুখ চেপে ধরে হাসলো।তারপ বলল,’কি করলে বিশ্বাস করবেন?’
‘একবার জড়িয়ে ধরো তবে বিশ্বাস করবো।’
মৌ একটু এগিয়ে এসে সত্যি সত্যিই জড়িয়ে ধরলো।রুশানও শক্ত করে আকড়ে ধরলো।মৌ কানে কানে বলল,’বিশ্বাস হলো?’
রুশান কিচ্ছু বলল না।মৌ’কে ভেতরে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।মৌ অবাক হয়ে বলল,’দরজা বন্ধ করলেন কেনো?’
‘কিছু প্রশ্নের উত্তর নিতে।’রুশান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।তারপর নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজগুলো দেখিয়ে বলল,’কি অপরাধ ছিলো আমার যে রিপ্লাই পাওয়ারও অযোগ্য ছিলাম?কলও রিসিভ হতো না।দুইমাসে একবারও দেখা,কথা কিছুই কেনো হলো না?কি অপরাধ ছিলো?সেদিন তুমিই বলেছিলো আমার চাওয়া বলতে তাই আমি বলেছিলাম।তোমার যদি আমাকে ভালো না-ই লাগতো তবে বলে দিতে পারতে এট লিস্ট যোগাযোগটা রাখতে পারতে।বন্ধু হয়ে থাকতাম।কিন্তু না তুমি তো পুরো পরই বানিয়ে দিলে।এতো বার করে বলেছি যে আমি চলে যাচ্ছি তাও এলে না কেনো?’
রুশান একনাগাড়ে কথাগুলো বলো থামলো।মৌ কিছুটা এগিয়ে এসে রুশানের গালে হাত রেখে বলল,’আমি বলতেই এসেছি।সেদিন যখন আপনার চাওয়াগুলো শুনলাম তখন আপনাকে আমার তথাকথিত ছেলেদের মতোই মনে হয়েছিলো।তাই আপনার ম্যাসেজ আর কল রিসিভ করি নি।কিন্তু আপনি সিলেট চলে যাওয়ার পর আমি আপনার শূন্যতা বুঝতে পারি।বুঝতে পারি আমিও আপনাকে ভালোবাসি।চেয়েছিলাম ছুটে আসতে।কিন্তু সকাল বেলা বের হওয়ার সময় আম্মুর ফোন আসে।ওরা আম্মুকে প্রচন্ড মারধর করছে।আম্মু শুধু ‘মৌ আমাকে বাঁচা’ এটা বলেই জ্ঞান হারায় ফেলছিলো।আমি কি করবো দিক দিশা পাচ্ছিলাম না।এক বান্ধবীকে ফোন দিলাম ওর ভাই পুলিশ।ওকে সব বললাম।তারপর ওর ভাই,আমি আর ও ওইখানে যাই মা’কে আনতে।গিয়ে দেখলাম মায়ের মাথা ফেটে গেছে।সারা শরীরে কালশিটে দাগ।মা’কে হসপিটালাইজড করলাম।মায়ের জ্ঞান ফেরার পর ওনার স্বামী,রাশেদ আর ওর বাবার নামে কেস করলাম।মা সুস্থ হওয়ার পর মা’কে নিয়ে নতুন একটা বাসায় উঠতে হলো।তারপর ডিভোর্সের জন্য উকিলের কাছে গেলাম।ডিভোর্স কাগজপত্র রেডি হওয়ার পর মা সাইন করলো তারপর ওদের কাছে ডিভোর্সের কাগজ পাঠালাম।দেড়মাস হয়েছে ওদের ডিভোর্স হলো।এতোকিছুর পরও আমি প্রতিদিন আপনার পাঠানো পুরোনো মেসেজগুলো পড়তাম আর কাঁদতাম।বারবার আপনার সাথে কথা বলতে মন চাইতো কিন্তু পারতাম না।ভাবতাম একদিন সামনাসামনি দাড়িয়ে সব বলবো।কাল আপনার যাওয়ার কথা শুনে আজ আর থাকতে পারলাম না।হ্যাঁ আমি জানি একটাবার কথা বলা উচিত ছিলো কিন্তু… ‘মৌ শেষ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো।তারপর চোখ মুছে বলল,’আমায় একটা বার ক্ষমা করা যায় না?’
‘না যায় না।শাস্তি পেতে হবে তোমায়।আমাকে তো কষ্ট দিয়েছো তারপর আবার নিজেকেও দিয়েছে।একটাবার পর্যন্ত জানাও নি।এতো সহজে তো মাফ পাবে না।’
মৌ কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,’কি শাস্তি?’
‘অপেক্ষা করতে হবে আমার জন্য।কাল আমি চলে যাবো।যতোদিন না আসবো ততদিন আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
‘কবে আসবেন আপনি?’
‘একবছর অথবা দেড়বছর পর ছুটিতে আসবো।’
‘আচ্ছা করবো।ততদিনই অপেক্ষা করবো আপনার জন্য।’
তারপর সত্যি সত্যিই রুশানের জন্য প্রায় দেড়বছর অপেক্ষা করতে হয় মৌ এর।কারণ পরেরদিন সকালেই রুশান চলে যায় আর মৌ এর অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হয়।মাঝেমধ্যে রুশানের সাথে কথা হয়।বেশিরভাগ সময়ই হয় না।কারণ সময় মিলে না কথা বলার জন্য তবুও দিনশেষে একটা মেসেজ মৌ এর ফোনে আসতো।
দেড় বছর পর রুশান গতকালের আগেরদিন সকালে ফিরেছে।ফিরেই মৌ এর সাথে দেখে করেছে।গতকাল মৌ আর ওর মা এসেছিলো রুশানদের বাড়িতে।বিয়ের তারিখ ঠিক করতে কারণ রুশান দেরি করতে চায় না।আর বিয়ের সব আয়োজন এখানেই হবে।তাই মৌ ওর মা এখানেই আছে।
বিকেলে শিরিন শিহান আর মাহমুদা বেগম সিনিথিয়া বেগমের বাসায় গেছেন।রুনা বেগম সকালেই ভাইয়ের বাসায় গেছেন রুশানের বিয়ের খবর দিতে।ইফরা সন্তানসম্ভবা।এখন ছয়মাস চলছে তাই বাবার বাড়ি গেছে।রুহান কারখানায় আর রুমান অফিসে।রুশানও একটু আগে বেরিয়েছে।বাড়িতে শুধু মৌ ছাড়া আর কেউ নেই।মাহমুদা বেগম মৌ কে সাথে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মৌ যায় না।সবাই চলে যাওয়ার পর সে রুশানের ঘরে এসে ওর খাটে বসেছিলো।আজ এটা শুধু রুশানের রুম হলোও বিয়ের পর এই রুমটা দু’জনের হবে।
হঠাৎ হাট করে কেউ একজন দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো।মৌ আচমকা ভয় পেয়ে তাকাতেই দেখলো রুশান।ওকে দেখে খানিকটা লজ্জা পেলো কারণ ওর অগোচরে ওরই রুম এসে এভাবে বসে থাকাটা কেমন দেখায়!রুশান মৌ’কে অস্বস্তিতে পড়তে দেখে বলল,’রিল্যাক্স!আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো না।এটা কিন্তু তোমারও ঘর।যদিও এখনো অফিশিয়ালি হয় নি তবে হয়ে যাবে।’
তবুও যেনো লজ্জা আর অস্বস্তি কাটছেই না মৌ এর।তাই সে উঠে দাড়িয়ে বলল,’আচ্ছা।আমি আসছি।’এটা বলে চলে যেতে নিলেই রুশান মৌ এর হাত ধরে ঘুরিয়ে ওর কোমড় আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,’এতো লজ্জা পাও তুমি?’
মৌ কিছু বলল না।নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।রুশান আস্তে আস্তে ওর লজ্জায় কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে এগুতেই মৌ চোখ বন্ধ করে ফেললো।রুশান হেসে ফেললো।শাহাদাত আঙুলট মৌ এর ঠোঁটে ছুঁইয়ে বলল,’থাক এটা বাসর রাতের জন্য তোলা রইলো।’
মৌ যেনো হাঁপ ছেড়ে বাচলো।রুশান ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,’চলো একটু হাঁটতে বের হই।’
‘চলুন।’মৌ এর এখনো লজ্জায় গাল লাল হয়ে আছে।
তারপর ঘরে তালা দিয়ে দুজনই বেরিয়ে পড়লো।পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সোনালি সূর্যটা বিকেলের জানান দিচ্ছে।হালকা একটা মৃদু হওয়ায় চারপাশের গাছে ছড়িয়ে পড়েছে।মৌ আর রুশান পাশাপাশি হাটছে।সময়টা অনুভব করছে।রুশান আরেকটু কাছে এসে মৌ এর হাতটা ধরলো।মৌ কিছু বলল না আরেকটা দৃঢ় হলো বন্ধনটা,দুজনের মুখেই পূর্ণতার হাসি ছেয়ে গেলো।
সমাপ্তি…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।বড়ো করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সত্যিকারের কাহিনিগুলো অহেতুক বড়ো করতে চাইলে গোলমেলে হয়ে যায় তাই আর করি নি।এই গল্পটা একটা আপুর জীবনের গল্প ছিলো।কাহিনীর কিছুই পরিবর্তন করা হয় নি শুধু গল্পের মাধুর্যটা রাখার জন্য কিছু চরিত্রের আগমন ঘটিয়েছি তবে শেষটা এমনই ছিলো হয়তো বা আরো সুন্দর ছিলো।আপনারা কল্পনা করে নেবেন।)