একটি পানকৌড়ির গল্প….  ১০. 

0
3591
একটি পানকৌড়ির গল্প….
১০.
পিএ ইউনুস একা গ্রামের দিকে যেতে রাজি হচ্ছে না। আফতাব হোসেন তাকে অনেক বার বুঝিয়েছেন কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। এর আগে নাকি একা গ্রামে গিয়ে ভয়াবহ বিপদে পড়েছিলেন।
আফতাব হোসেন কোনো উপায় না পেয়ে ইউনুসকে বললেন
– তোমার ক্লোজ ফ্রেন্ডকে নিয়ে যাও সব খরচ আমার। রাজি?
ইউনুস বিজ্ঞের মতো করে বললেন
– রাজি। কী কী প্রশ্ন করতে হবে আমাকে লিখে দিয়েন। ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
– শর্ত হচ্ছে কোনো তথ্যই তুমি ছাড়া দ্বিতীয় জন যেন না জানে। প্রত্যেক মানুষের অপ্রীতিকর অতিত থাকে। আমাদের দুজনের কাজ হচ্ছে সেটা জেনে ছোট্ট মেয়েটার সাহায্য করা। বুঝতে পারছেন?
– তাহলে আজকেই যাবো?
– অবশ্যই।
২ দিন পর পিএ ইউনুস আর তার ক্লোজ ফ্রেন্ড ফিরে এলেন। পিএ ইউনুসকে চুপচাপ দেখে আফতাব হোসেন জিজ্ঞেস করলেন
– কোনো সমস্যা হয়েছিল ওখানে?
– না জার্নি করার কারণে হালকা মাথাব্যথা হয়েছে এই আরকি।
ইউনুসের দেয়া  আর তার জোগাড় করা ইনফরমেশন নিয়ে সমাধানের দিকে পা বাড়ালেন। রাত প্রায় ২ টা বেজে ১০ মিনিট তার স্ত্রী রেহানা সেই টিয়াপাখি নিয়ে খেলছে! বারান্দায় দাঁড়িয়ে টিয়াপাখির সাথে খেলতে নাকি তার খুব ভালো লাগে। এই বারান্দা থেকে রাস্তাটা পুরোপুরি দেখা যায়। রাস্তায় যা যা ঘটছে যাবতীয় কর্মকাণ্ড আরামে বসে বসে দেখা যায়। আফতাব হোসেন প্রথম প্রথম বেশ মনযোগ দিয়েই দেখতেন। আজকাল আর তেমন ভালো লাগেনা।
মানুষের বড্ড অদ্ভুত স্বভাব। একসময়ের প্রাণের চেয়ে প্রিয় জিনিসটাও অপ্রিয় হয়ে যায় সময়ের প্রবাহে!
মোটামুটি একটা সমাধানে আসতে পারছেন না। নিজের উপরই বিরক্ত হলেন আফতাব হোসেন। বিরক্তি কাটানোর জন্য স্ত্রীর কাছে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন!
রাস্তার দিকে চোখ দুটো আটকে গেলো আফতাব হোসেনের!
কোনো এক ছায়া মূর্তি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
আফতাব হোসেন মুচকি হেসে স্ত্রীকে বললেন
– রেহানা চলো তো ঘুমাই।
রেহানা বললেন
– আর একটু থাকিনা।
– মনে হচ্ছে আমার চেয়ে টিয়াপাখিটাকে বেশি ভালোবাসা হয়?
রেহানা বললেন
– কী যে বলো? তোমার সাথে একটা টিয়াপাখির তুলনা হয়?
– তাহলে চলো ঘুমাবে। অনেক রাত হয়েছে।
আমার সকালে জরুরি কাজ আছে। পেট ভরে খেয়ে বের হবো।
ভোর ছ’টায় রিনির ফোনে আফতাব হোসেনের ঘুম ভাঙলো। অনেক রাতে ঘুমানোর কারণে মাথাটা তার ঝিম ধরে আছে। কোনোমতে ফোন রিসিভ করলেন। ফোনের ওপাশ থেকে রিনি বললেন
– আপনি ৭ টার মধ্যে আসতে পারবেন?
– ৮ টায় আসি? আমার স্ত্রীর রান্না এখনো হয়নি।
– এখানে এসে নাস্তা করবেন।
বাধ্য হয়ে আফতাব হোসেনকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে  বের হলেন। ফারিয়ার নামের খাতাটা নিয়ে বিরক্তিকর মেজাজ নিয়ে বের হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
আফতাব হোসেনকে দেখে দারোয়ান কোনো কথা না বলেই গেট খুলে দিলেন। সাথে বড়সড় সালামও দিলেন।
ড্রয়িংরুমে ঢুকেই দেখতে পেলেন রিনি ম্যাডাম বসে আছেন। গায়ের জামা কাপড় এলোমেলো, মাথার চুল এলোমেলো আর দৃষ্টিতে তার ভয় খেলা করছে। চোখ দুটো লাল টকটকে আর ফুলে আছে।
সোফায় বসে টি-টেবিলের ওপর খাতাটা রেখে আফতাব হোসেন বললেন
– কোনো সমস্যা হয়েছে?
রিনি কিছু বলতে গিয়েও পারলেন না। গলায় কথা আটকে যাচ্ছে। চোখ দুটো বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আ
আফতাব হোসেন বললেন
– কাঁদবেন না প্লিজ। কী হয়েছে আস্তে ধীরে বলুন।
রিনি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। বয়স্ক একজন মহিলা নাস্তা এনে টি-টেবিলের ওপর রেখে গেলেন।কাজের লোক হবে সম্ভবত।
রিনি বললেন
– গতকাল রাতে ঘুমাবো মানে বিছানায় শুয়েছি কেবলমাত্র। আমি।সাধারণত রাত ১২ টার দিকেই বিছানায় যাই। লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাতে পারিনা। অন্ধকারে ঘুমাই। স্বাভাবিকভাবেই ঘর পুরো অন্ধকার। চোখ লেগে আসছে ঠিক তখন মনে হলো আমার পাশে কেউ শুয়ে আছে। নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছিলাম। গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকলে মানুষের যেভাবে নিশ্বাস পড়ে ঠিক তেমন। আমি ভয়ে চোখ খুলতে পারছিলাম না। পুরো শরীর আমার ঠান্ডা হয়ে আসছে।
তারপর চিৎকার শুনতে পারলাম, ভয়ংকর চিৎকার! আমার পাশ থেকেই আসছে। আমি লাফিয়ে উঠে বিছানা থেকে নেমে গেলাম। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি ১০-১১ বছরের একটা মেয়ের শরীর ছটফট করছে। মেয়েটার মাথা পুরো থেতলে গেছে আর পুরো শরীরে রক্ত!
তারপর আর মনে নেই। ভোর ৫ টায় রুনুর মা এসে,আমাকে রুমের ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখেছে।
রিনি শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।
– রক্ত কি আপনার বিছানার চাদরে লেগে ছিলো?
কান্না থামিয়ে বললেন
– না।
– আপনার হ্যালুসিনেশন হয়েছিলো। আপনার মেয়ের সমস্যা আপনি জানেন তাই তো?
– হ্যাঁ।
– সারাক্ষণ  মেয়ের এমন স্বপ্ন দেখার কারণ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত আপনি। এজন্যই আপনার গতকাল রাতে হ্যালুসিনেশন হয়েছিলো।
– সমস্যার কোনো সমাধান করতে পেরেছেন?
– আপনি বাসায় একা থাকেন?
– না, রুনুর মা আর দারোয়ান।
– আপনার বাবা?
– দুই বছর আগেই মারা গেছেন।
– স্বাভাবিক মৃত্যু?
– স্ট্রোক করেছিলেন।
– আপনার মা, ভাই বা বোন কেউই নাই?
– মা আর ভাই আছেন তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। বাবা মারা যাবার পর মা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে গেছেন।
– আপনার চেনাজানা পুলিশের লোক আছে?
– না।
– তাহলে ভালো। আমি আপনাকে একজন পুলিশের ঠিকানা আর নাম লিখে দিচ্ছি। তার সাথে গিয়ে দেখা করবেন।
– আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা!
– ওই ঠিকানায় পৌঁছে গেলে বুঝতে পারবেন। আপাতত আমি আসি।
– নাস্তা করে যান।
– না, আমার স্ত্রী আমার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করে আছে।
আফতাব হোসেন রিনির বাড়ি থেকে বের হয়ে রশীদ আলমকে ফোন করলেন। দু’বার রিং বাজতেই ফোন রিসিভ করলেন রশীদ আলম।
– ভালো আছেন রশীদ সাহেব?
– এইতো আছি। কিছু বলবেন?
– আপনার স্ত্রীকে একটু আমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবেন। সমস্যা নাই আমার স্ত্রী বাসায় আছেন।
– এখনই যেতে হবে?
– নাহ ১০ টায় আসলেই হবে।ফারিয়ার অবস্থা এখন কেমন?
– ওই আগের মতোই।
ফোন কেটে গেলো। আফতাব হোসেন বুঝতে পারলেন ফারিয়ার বিষয়ে রশীদ আলম বেশ বিরক্ত হয়েছেন।
রশীদ আলমের সম্পর্কে রিনি যা বলেছেন সব সত্য। জুয়াখেলা রশীদ আলমের নেশা ছিলো।
রেহানা বসার ঘরে ছোট্ট সোফায় বসে আছেন। তার মুখোমুখি লিমা বসে আছেন। লিমা ঠিক ১০ টায় এসে হাজির হয়েছেন কিন্তু আফতাব হোসেন বাসায় নেই। রেহানা ফোন করেছিলো। আফতাব হোসেন বলেছেন
– ১০ মিনিট পর আসছি।
কিন্তু ২৫ মিনিট পার হয়ে যাচ্ছে তার খোঁজ নেই। রেহানা, লিমাকে বারবার দেখছেন পা থেকে মাথা অবদি। সৎ মা এতো ভালো কীভাবে হতে পারে ভেবে!
৩৫ মিনিট পর আফতাব হোসেন হাসোজ্জল মুখে ঘরে ঢুকলেন। লিমাকে বসে থাকতে দেখে আফতাব হোসেন মুচকি হেসে বললেন
– আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এভাবে অপেক্ষায় রাখার জন্য।
লিমা চোখ মুখ শক্ত করে বললেন
– এভাবে কাউকে বসিয়ে রাখা ঠিক? বাসায় মেয়েটা একা একা আছে।
– কেনো আপনার ছেলেটাও তো একা!
লিমা কী বলবে বুঝতে পারছিলেন না। মাথা নিচু করে বসে রইলেন।
আফতাব হোসেন স্ত্রীকে বললেন
– রেহানা তুমি তোমার কাজে যাও।
রেহানা বেগম কোনো কথা না বলেই উঠে গেলেন।
বসার ঘরের পাটিতে আরাম করে বসে আফতাব হোসেন বললেন
– আপনি মানুষ টা কিন্তু খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন!
– আপনি আপনার এসিস্ট্যান্টকে আমার গ্রামে পাঠিয়েছিলেন?
– আপনি তো সব জানেনই তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেনো?
– আপনাকে সমস্যা সমাধানের জন্য বলা হয়েছিলো, সমস্যা তৈরি করার জন্য না।
– সত্যিটা কি আপনি বলবেন না আমি বলবো?
– কীসের সত্যি শুনি?
– আপনার পরিবার গ্রামের উচ্চবিত্ত। আপনি দেখতেও যে খুব অসুন্দর তা না। আবার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাশ। গ্রামের মেয়ে হিসেবে উচ্চবিত্ত পরিবারে বিয়ে হবার কথা অবিবাহিত যুবকের সাথে। কিন্তু আপনার হলো বিবাহিত মধ্যবিত্ত একটা মেয়ে সহ পুরুষের সাথে। আমি ভেবেছিলাম আপনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। এইজন্যই এরকম পরিবারে বিয়ে দেয়া হয়েছে। আপনি যে শিক্ষিত সেটা আপনার কথাবার্তায় আর আপনার বাবার কথায় বোঝা যায়। আমি ভাবলাম ফারিয়ার মা রিনির মধ্যে সমস্যা আছে। রিনির বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। পুরো ধারণাটাই ভুল। ম্যাডাম লিমা আপনার অতীত আমি বলবো নাকি আপনি নিজেই বলবেন?
লিমা চোখ মুখ শক্ত করে বললেন
– আমি তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। কলেজের এক বড় ভাইয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম। সে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জোর করতো। প্রথম দিকে আমি রাজি হয়নি। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে। এভাবে বেশ কয়েকবার চলার পরে টেস্ট এক্সামের কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাই। বাসায় কী বলবো? কী করবো বুঝতে পারছিলাম না।
সবুজ নাম ছিলো ওর। ওকে জানালাম। ও বললো, ” এই বাচ্চা আমারও তো নাও হতে পারে! কার না কার পাপ আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছো তার কোনো ঠিক আছে? “
আমি কিছুই বলার সাহস পাইনি। শুনেছিলাম তার বলা কথা গুলো। কতো সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যেগুলো বলছে। জানেন আফতাব হোসেন, খুব চেনা মানুষ যখন অচেনা হয়ে যায় তখন না কিছু বলার বা করার থাকেনা।
আমি ওই অবস্থায় ফাইনাল এক্সাম দিলাম। সমস্যা হয়নি কারণ আমার তখন ৪ মাস চলছিলো বা ৫ মাস।
কিন্তু আমি তাকে ঠিক ভুলতে পারলাম না। আমার জমানো কিছু টাকা ছিলো সেটা দিয়েই এক্সামের পর থেকে গিয়েছিলাম মহিলা হোস্টেলেই। বাবা খুব বিশ্বাস করে শহরে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। সেই বিশ্বাস ভাঙতে দেখলে বাবা হয়তোবা সহ্য করতে পারতেন না। বাচ্চাটাকে লুকিয়ে জন্ম দিয়ে এতিমখানায় দিয়ে দিবো। পাপ আমার ওর তো না। কিন্তু কী যে হলো, সবুজ এক্সিডেন্টে মারা গেলো। তখন আমার ৯ মাস। ডেলিভারির কাছাকাছি সময়। ওকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য লাশকাটা ঘরের দিকে গেলাম।
সবুজের মাথা পুরো থেতলে গিয়েছিল। চেহারা দেখে বোঝার উপায় ছিলোনা এ আমার সেই সবুজ।
শুনেছিলাম অন্ধকারে একা একা রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো তারপর ট্রাকের নিচে পড়ে সব শেষ। মাথার থেতলে যাওয়া অংশ বেলচা দিয়ে উঠাতে হয়েছিলো।
ওইদিনই আমার ডেলিভারি হলো। মরা মেয়ে জন্ম দিয়েছিলাম আমি। সবুজের শেষ চিহ্নটাও আমার কাছ থেকে সরে গেলো। প্রায় পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। হোস্টেলের সবাই জানতে পারলো আমি অবিবাহিত। কেউই আমাকে রাখতে চাইলোনা। বাধ্য হয়ে আমার বান্ধুবী বাসায় নিয়ে গেলো। প্রায় ৬ মাস ওভাবে থাকার পর আব্বা আমাকে রশীদের সাথে বিয়ে দিলেন। বিয়ে দিতে পারতেন না যদি রশীদের ছোট্ট মেয়েটার কথা না জানতাম।
আমার মন বললো – আমার মেয়ে ফিরে এসেছে।
আমি ওকে মেয়ের স্নেহে বড় করেছি কিন্তু সবুজের এক্সিডেন্টের ঘটনা কয়েকবার ওকে বলেছিলাম।
আমার বুকের মধ্যে চেপে থাকা কষ্টের কথা গুলো অবুঝ ফারিয়াকে বলতাম। অন্যভাবে বলতাম। কষ্টটা হালকা হতো। কিন্তু এটা যে ওর উপর এরকম প্রভাব ফেলবে আমি বুঝিনি। আমিই ওকে নিষেধ করেছিলাম আপনাকে যেন আমার এক্সিডেন্টের গল্পটা না বলে।
– তা তো আমিই বুঝতে পেরেছি। আপনি রিনির কাছে কেনো যেতেন?
– আমার কেনো যেন মনে হতো রিনি ওর মা না। আমার ওই মরা মেয়েটাই ফারিয়া।
তাই বারবার বিভিন্ন ভাবে জানার চেষ্টা করতাম রিনি ওর সত্যিই মা কিনা।
– কিন্তু আপনি প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছেন।
আমি কিছু কথা বলবো শান্ত ভাবে শুনবেন।
– হ্যাঁ।
– আপনার প্রভাব থেকে ফারিয়া মুক্ত হতে পারলে সুস্থ হতে পারবে। আপনার ঔ এক্সিডেন্টের গল্পটা ওর উপর খুব গাঢ় প্রভাব ফেলেছিলো। আর তার ফলাফল তো আপনি নিজেই জানেন। আমি তাই ফারিয়াকে তার জন্মদাত্রী মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তার সুস্থ হবার এই একটাই উপায়। আপনি যতোই চেষ্টা করুন না কেনো ওকে ওই এক্সিডেন্টের গল্পটা বলবেনই। আপনি নিজেকেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। গতকাল রাত ২ টায় আপনি এই বাসার সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাই না?
– হ্যাঁ।
– কারণ জিজ্ঞেস করবোনা। ফারিয়ার মৃত্যু যদি না তাহলে ওর থেকে দূরে থাকুন। আর আপনার ছেলেটার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। তা না হলে একেও হারাবেন আপনি।
– আমি কি ওকে লাস্ট বারের মতো দেখতে পারবো?
– না, আপনাকে দেখলে ও যেতে চাইবেনা রিনির কাছে। ফারিয়াকে যদি সত্যি নিজের মেয়ে ভাবেন তাহলে ওর থেকে দূরে থাকুন।
লিমা অল্পতেই কাঁদতে শুরু করার মতো মেয়ে। কিন্তু আজকে তার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানিও পড়ছেনা।
রিনি ঘুমন্ত মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। মেয়েকে যে এভাবে পেয়ে যাবে বিশ্বাসই হচ্ছেনা তার। আফতাব হোসেন তাকে একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট এর নাম,ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে। সবই আল্লাহর রহমতে হয়েছে। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত মেয়েকে নিয়ে সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়রওয়ানা হয়েছেন। একটা দিনও সে এখন নষ্ট কর‍তে চাননা তিনি।
সকালের দিকে আকাশে মেঘ সাজতে শুরু হয়েছিলো। সেই মেঘ এখন বৃষ্টি হয়ে ঝড়ছে। রিনির আজ প্রায় ১১ বছর পরে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মেয়েটা তার কোলে কতো আরামে ঘুমিয়ে আছে। এই ঘুম ভাঙানো যাবেনা। গাড়ির কাচ নামিয়ে দিয়ে বৃষ্টির  ফোঁটা  স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন।
বৃষ্টির ফোঁটার মতো তার জীবনেও এখন নতুন সুখের বর্ষণ শুরু হয়েছে নতুন করে!
সমাপ্ত।
© Maria Kabir