একটি পানকৌড়ির গল্প…..
পর্ব ২
আফতাব হোসেন রাস্তায় হাঁটছিলেন। ফোন বেজে উঠাতে বিরক্ত হলেন। আজকে তাকে বিরক্তিতে ধরেছে। সবকিছুতেই বিরক্ত হচ্ছেন। তার স্ত্রী রেহানা ফোন করেছেন। রিসিভ করার ইচ্ছা না থাকলেও করতে হবে। সকালে বেশ হালকা ধরনের কথা কাটাকাটি হয়েছে দুজনের মধ্যে। ঠিক ২ টা বেজে ১০ মিনিটে বাসায় পৌঁছে যান আফতাব হোসেন। কিন্তু আজ ২ টা বেজে ৫৫ মিনিট কিন্তু বাসায় আসেননি। রেহানা বেগম সকালের কথা কাটাকাটিকে মনে রেখেই ৪৫ মিনিটে কোনো কল করেননি কিন্তু ৪৫ মিনিটের মাথায় তার ধৈর্য্যচ্যুত হলো এবং স্বামীকে ফোন করলেন।
আফতাব সাহেব ফোন রিসিভ করে বললেন
– কিছু বলবে?
– এখনো বাসায় আসছো না ক্যানো?
– এইতো আসছি।
কথাটা বলেই ফোন কেটে দিয়ে রিক্সায় চড়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। তার মনে পড়তে লাগলো প্রায় ১৫ বছর আগে এই রেহানাকে নিয়েই নিতে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। দুই পরিবারের কেউই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। অবশ্য পালিয়ে যাওয়ার দুদিন পরেই আফতাব সাহেব বাসায় স্ত্রীসহ ফিরে আসেন।
তার বাবার খুব রাগ করার কথা ছিলো কিন্তু বাসার সবাইকে চমকে দিয়ে সে শান্তস্বরে ছেলেকে বলেছিলেন
– যেহেতু এই মেয়ের জন্য বাড়ি ছেড়েছিলে সেহেতু এই মেয়েকে কখনো কাঁদাবা না। মনে থাকবে কথা?
– হ্যাঁ।
কথাটা সে আজও ভুলেনি কিন্তু কথাটা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারেননি। সে প্রায়শই বুঝে না বুঝে স্ত্রীকে কাঁদান খুব ভালোভাবেই কাঁদান। কারণ তিনি জানেন তার স্ত্রীর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
মেয়েরা বিয়ের আগে থাকে মায়াবতী আর বিয়ের পরে হয় রাষ্ট্রপতি। বিয়ের পরে তারা সংসারের সকল ভাড় কাঁধে তুলে নিবে। রাষ্ট্রপতি শাসিত দেশে যেমন সকল ভাড় রাষ্ট্রপতির ঘাড়ে ঠিক তেমনভাবে স্ত্রীর ঘাড়েও থাকে।
ফারিয়া তার ছোটো ঘরটাতে চুপচাপ বসে আছে। নাকের কাছে সেই গন্ধটা এখনো আছে। বমি আসছে পেট গুলিয়ে কিন্তু বমি হচ্ছেনা। মাথাটা ঝিম ধরে আছে। ব্যথাটা বাড়ছেনা। দুপুরে এখনো খাওয়া হয়নি। বাবা আসবে তাই তার খাওয়া হবে। বাবা হাসি হাসি মুখে বলবে
– মামনী হা করো তো….
সেও হাসার ভান করে লোকমা টা মুখে পুড়ে নিবে।
তবে আজব ব্যাপার হচ্ছে ওই ডাক্তার টাও তাকে মামনী বলে ডেকেছে। এই পৃথিবীতে মোট দুজন মানুষ পেলো ফারিয়া যারা তাকে মামনী বলে ডেকেছে। তার কাছে একটা ডায়েরি আছে। বাবা কিনে দিয়েছিলেন তাকে। সেই ডায়েরিতে তার ভালো লাগা, খারাপ লাগা লিখে রাখে। শরীর যখন একটু ভালো লাগে তখন ডায়েরি লিখতে বসে ফারিয়া। কষ্ট গুলোকে সে এখন আর ডায়েরির পাতায় লিখে রাখেনা। কারণ তার বাবা।
তার বাবা লুকিয়ে লুকিয়ে তার ডায়েরি পড়ে। কষ্টের কথা গুলো পড়ে সে বাচ্চাদের মতো কেঁদে চোখ ভেজায়। অশ্রুপাতের এই বিষয় টা তার ঠিক পছন্দ না।
তার বয়সী ছেলে মেয়েদের সে নকুলের মাঠে খেলতে দেখে। তারও খুব ইচ্ছা জাগে ওদের সাথে খেলতে কিন্তু সে পারেনা। ওর ভয় হয় যদি একই সমস্যা ওদের মাঝেও ঢুকে যায়? তখন কী হবে?
পেটের মধ্যে থেকে গুলিয়ে কী যেন একটা বিশ্রী জিনিস তার বমির সাথে বের হয়ে আসলো! একটা আস্ত মাকড়সা যার পুরো শরীরে অতি সুক্ষ্ম সাদা রঙের রেখা আঁকা বাঁকা হয়ে গেছে।
আফতাব হোসেন বাসায় পৌঁছে গোসল সেরে নিলেন। রেহানা বেগম স্বামীর জন্য খাবার বেড়ে টেবিলের পাশে চেয়ারে বসে ছিলেন।
আফতাব হোসেন খুব গম্ভীর মুখে চেয়ারে বসে খেতে শুরু করলেন। রেহানা বেগম যে সামনে বসে আছেন সেটা সে বুঝতে পারছেন না।
রেহানা বেগম বললেন
– এখনো রেগে আছো? আচ্ছা স্যরি আফতাব।
আফতাব হোসেন বললেন
– তুমি তো খাওনি। আসো একসাথে খেয়ে নেই। আর ওই প্রসঙ্গে আর একটাও কথা বলবেনা। যা যাবার সকালেই চলে গেছে ওটাকে টেনে এনে বিরক্ত করার কিছুই নেই।
আর আজকে আমার সেই স্পেশাল সালাদ কই?
রেহানা বেগম মাথা নিচু করে বললেন
– তোমার উপর রাগ করে আজকে ওটা করিনি।
– পারোই তো ওই এক কাজ। সালাদ করা বন্ধ করে দাও। তোমাকে ৫ মিনিট দিলাম। এর মধ্যেই সালাদ করে নিয়ে আসবা।
– একটা কথা বলি রাগ করবেনা তো?
আফতাব হোসেন বললেন
– বলো
– ডালে অনেক ঝাল দিয়েছি। খেয়ো না তোমার আবার পেট জ্বালা করবে।
– যাও সালাদ করে আনো।
সন্ধ্যার দিকে একজন মানুষ বাসায় আসবে। তার জন্য ভালো কোনো নাস্তা রাখা দরকার। যদিও তার ছেলেদের জন্য খাবার থাকে। তারপরও একজন মেহমান তাকে ভালো কিছু না দিলেই নয়। আর তার কাছ থেকে ফী টা নিতেই হবে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ গুলোর আত্মসম্মান বোধ তীব্র থাকে। এদেরকে আর যাইহোক আত্মসম্মানে আঘাত করা ঠিক না। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ছিলেন তার বাবা।
© Maria Kabir
https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/boro-golpo/%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%95%E0%A7%8C%E0%A7%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC/