ফুয়াদ , কাঁচামরিচ লাগবে। একটু নিচের থেকে কিনে এনে দাওতো।
– একটু খেলা দেখতে বসছি, সাথে সাথে শুরু করসো এই লাগবে ঐ লাগবে।
এই লাগবে ঐ লাগবে বলি নাই, বলছি কাঁচামরিচ লাগবে।
– আজ কাঁচামরিচ ছাড়াই রান্না করো। পারবো না যেতে এখন।
কোনদিন পারো শুনি? কিছু একটা বললেই বাহানার পর বাহানা।
– বাহানা না করে উপায় আছে? বাজার নাই বাজার করো, বিল দেয়া লাগবে বিল দাও, বাড়িওয়ালা ডেকেছে শুনে আসো, বুয়া আসেনি কাপড় মেলে দাও; নিজেকে মনে হয় কাজের ছেলে আব্দুল। আম্মু আব্বু জীবনে আমাকে দিয়ে কাজ করায় নাই। এমন জানলে জীবনেও বিয়ে করতাম না।
তা তো বোঝাই যাচ্ছে। বানিয়েছে একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি আর নিজেরা চালাতে না পেরে শেষমেষ আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। এখন তার ভারে আমিই মারা যাওয়ার দশা।
– বাপরে বাপ, মুখ তো না যেন বিষের বাক্স। কথা মাটিতে পরার আগেই তুলে বিষমাখা তীরের মতো ছুঁড়ে মারে। এ কারণেই শাস্ত্রে বলে মুখরা রমনী বিবাহ করিতে নাই।
আহা আমি মুখরা আর নিজে যে তর্কবাগীশ সে খবর নেই। করলামনা তোমার রান্না আজ। থাকো না খেয়ে। আজ থেকে যার যার তার তার।
– যাও যাও খেলাম না তোমার রান্না। রাঁধো তো এক ভর্তা আর ভাজি তা নিয়ে রোজদিন ফুটানি। আমার রান্না আমিই করে নেবো।
তারপর আর ঝগড়া চলেনি। রাগ করে ফুয়াদ আর রুমানা যে যার মতো দুই রুমে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।
………………….
(রুমানা)
কেন যে রাগ করি এই লোকটার সাথে? ও তো এমনই, খেলা দেখতে বসলে হুঁশ থাকেনা। আর তাছাড়া সবদিন মুখের ওপর না ও বলেনা। সারাদিন অফিস করে এসে নিজেরও এতো ক্লান্ত লাগে সবদিন কি আর মেজাজ ঠিক রাখা যায়? ভেবেছিলাম কাল আমার জন্মদিনের জন্য আজ একটু ভালো মন্দ রাঁধবো। কি এক কাঁচামরিচ নিয়ে লাগিয়ে দিলাম ঝগড়া। পাশের বাসা থেকে নিয়ে এলেও তো হতো। সপ্তাহের মাঝামাঝি ফ্রিজেও তেমন কিছু নেই। কিছু না খেয়ে কিভাবে থাকবে পুরো রাত? এদিকে সব জিনিসপত্র এলোমেলো রেখে এসেছি কিচেনে। এখন সামনে দিয়ে গোছাতে গেলে আবার পেয়ে বসবে। থাক পড়ে থাকুক সবকিছু। কাল গুছাবো।
………………
(সময়: রাত বারোটা)
রুমানা, খাবে এসো; খুব ক্ষুধা লেগেছে।
– আমি খাবো না। তুমি খাও।
আমি সরি। আর এমন করবো না। এখন থেকে তুমি বলার আগেই কাঁচামরিচ এনে রাখবো, প্রমিজ। যখন বাজারে যেতে বলবে তখনই বাজারে যাবো কথা দিচ্ছি।
– আমি মুখরা রমনী, আমার মুখ ভর্তি বিষের বাক্স, এমন মেয়ে বিবাহ করতে নাই। আমি কালই বাবার বাসায় চলে যাব।
তুমিও তো আমায় আমড়া কাঠের ঢেঁকি বলেছো। অবশ্য তোমার উপমা ভুল না। মেনে নিচ্ছি, হারও মানছি। এসো খেতে এবার প্লিজ।
– রান্না করিনিতো কিছু। কি খাবে?
আমি ডিমভাজি করেছি। সাথে একটু আলুভর্তা। চলবে না?
– হুম চলবে।
……………..
ডিমভাজি খেতে ভালো হয়েছে, রুমানা?
– হুম দশে দশ। আমিও সরি। এভাবে তোমাকে আর কথা শোনাবো না।
আচ্ছা হয়েছে এবার একটু চোখ বন্ধ করো।
– কেন?
একটু পরে বলি?
……………
চোখের সামনে আমার পছন্দের ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক আর এক গুচ্ছ গোলাপ দেখে সত্যিই দারুন আপ্লুত হলাম।
– শুভ জন্মদিন বৌ। কাঁচামরিচ আমি এনে দিতাম। কিন্তু যদি তুমি এই ফাঁকে ফ্রিজ খুলে কেক দেখে ফেলো তাই টিভি দেখার ভান করে ফ্রিজের সামনের সোফায় বসেছিলাম।
ফুয়াদ, লজ্জা দিওনা প্লিজ। খামোখা তোমায় কতগুলো কথা শোনালাম।
– আমি কিন্তু ততটা অপদার্থ না। বাজার করি, বিল দেই, বলো দেইনা? তুমি আমার চেয়ে বেশী কাজ করো এটা সত্যি। তবে এও জানি তুমি যতোই বিষের তীর ছুঁড়ে দাওনা কেন তার অন্য পিঠে ভালবাসার মিষ্টি ছোঁয়াটুকু ঠিকই পুষে রাখো।
ইস আসছে আমার সবজান্তা সমসের। আসো কেক খাই।
এমন ছোট ছোট ঝগড়াগুলোর অন্যপাশে ভালোবাসার ছোঁয়া থাকে বলেই দাম্পত্য জীবন বোধহয় সহসা একঘেয়ে হয়ে যায়না।
#ডা_জান্নাতুল_ফেরদৌস