একটা পরীর গল্প পর্ব-০৫

0
1948

#একটা_পরীর_গল্প
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#পর্ব_০৫

অভীক কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে কথা বলতে যাবেন, ঠিক সে মুহূর্তে আমি ছাদে পা রাখি। গল্প শোনার তীব্র আগ্রহ দমাতে পারলাম না কিছুতেই। কিন্তু খাঁটাশ ব্যাটা কি করলো? আমি যাওয়া মাত্র উনি ক্ষিপ্তস্বরে বললেন।

– ” শুভ্র পরিবেশে তমসার প্রবেশ ঘটলে কোনো ভালো ঘটনাই বর্ণনা করা অসম্ভব। আজ নয় #একটা_পরীর_গল্প অন্য কোনো দিন শোনাবো তোদের। ”

আমার এবার ভীষন রাগ হলো। এতোদিন সহ্য করতে পারলেও এখন আর পারছি না। ওনাকে কিছু না বলে বলে এই হাল। আমি ঠোট উল্টিয়ে বলি।

– ” ভালো ঘটনার বর্ণনা যেকোনো সময়ই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তাতে আলো কিংবা অন্ধকার কোনো প্রভাব ফেলে না। তবে যে ব্যাখ্যা করবে তার মনের ভেতর তিমির ঝেকে বসলে সে তো বেঁকে বসবেই। ”

আমার কথার অর্থ আর কেউ না বুঝলেও অভীক যে বুঝেছে তা ওনার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমার দিকে চোয়াল শক্ত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি। আমি ওনার চাহুনি উপেক্ষা করে বসার সাথে আসরে যোগ দিলাম। আমার দেবররা আমাকে নিয়ে বেশ উৎফুল্ল। তারা তাদের প্রশ্নের ঝুড়ি মেলে বসেছে। তাদের একেক জনের একেক রকম প্রশ্ন। পরিশেষে যেটা অনুধাবন করতে পারলাম সেটা হলো অভীক এবাড়ির ছেলেদের লিস্টের দ্বিতীয় সন্তান। ওর একজন বড় ভাই’ও আছেন। মেহবুব ভাই, বিবাহিত। একটা মেয়েও আছে তার।

রাতে সবার সঙ্গে একসাথে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘরে আসি আমি। ভেবে নিয়েছি এই ব্যাটা যেভাবে আমায় অপমান করে আমিও তাকে তার উত্তর সেভাবেই দিবো। আমি খাটের ওপর বসে নিজের হাতের চুড়িগুলো খুলতে লাগলাম। ডজন ডজন চুড়ি পড়ে ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব না আমার পক্ষে। একে তো শব্দ হবে তারওপর গুঁতো খেলে তো ব্যাথা ফ্রি। অভীক ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আমার পাশে এসে বসে নিজের ফোনে মনোযোগী হলেন। আজ নিজের ফোন নেই বলে চুপচাপ বসে থাকতে হচ্ছে। আমি উঠে জানালার পাল্লা খুলে বাইরের দিকে চেয়ে রইলাম। চাঁদের শুভ্র, স্নিগ্ধ আলো এসে পড়ছে উঁচু সারির গাছগুলোতে। নিচে সেই আলোর আবছা ছাঁয়া। চাঁদের পাশে কয়েকটা তারা মিটিমিটি জ্বলছে। দূর থেকে ভেসে আসছে শেয়ালের ডাক। হুক্কাহুয়া, হুক্কাহুয়া। কয়েকটা কুকুরও ঘেউঘেউ করে চুপ হয়ে গেলো। কানে এই নিস্তব্ধ পরিবেশে শুধু ঝিঁঝিঁপোকার শব্দ ভেসে আসছে। জানালার লোহার সিকটা একহাতে ধরে দাড়ালাম। কয়েকটা জোনাকি উড়ছে সামনে। টিমটিম করে জ্বলছে তাদের রশ্মি।অভীক ঝাঁঝালো কন্ঠে ডাকলেন আমাকে।

– ” ওখানে কি করছিস? মানছি তুই কালা ভুত, বাঁশঝাড়ে গিয়ে নিজের সইদের সাথে খেলতে চাস। কিন্তু ওসব তোর বাপেরবাড়ি গিয়ে করবি। এখানে নয়। ”

আমি ফুসে উঠে বললাম।
– ” আমি না হয় কালা ভুত, দেখতে কালো, কিছু পারি না। কিন্তু আপনি কি? বাইরে টাই শুধু সাদা। ভেতরে তো ঘুটঘুটে অন্ধকার। সবসময় শুধু খোঁটা দেন। আপনার মতো গান গাইতে আমার দু সেকেন্ডও সময় লাগে না। শহরে থাকেন বলে গ্রামের মানুষকে মানুষ বলে ভাবেন না। তাইনা? ”

উনি বিরক্তির সুরে বললেন।
– ” এই গ্রামে তুই বাদে সবাইকেই মানুষ ভাবি। আর আমার ভেতরটা কেমন সেটা তুই বুঝলি কি করে? এই তুই লুকিয়ে চুরিয়ে আমার ইজ্জত দেখে ফেলিস নি তো? তাই তো বলি বিয়ের জন্য “না” করে না কেন? আমার মতো সুঠামদেহি পুরুষ দেখে মন, মাথা, চোখ সামলে রাখতে পারিস নি তাইনা? ”

ওনার কথা শুনে আমি পুরো থ। এই লোকটার সামনে চুপ করে থাকলে উনি আমাকে অপমান করেন, আর কিছু বললে সেই কথার মোড় পাল্টে এমন বেহায়া জাতিয় কথা বলে যেটা শোনার পর আমি আর ঝগড়া করার পর্যায়ে থাকি না। লজ্জায়, অপ্রস্তুত হয়ে নিজের আগ্নেয়গিরির তপ্ত লাভা নিজের ভেতরেই দমিয়ে রাখতে হয় যেন তারা বাইরে বেড়িয়ে এসে আমাকে আর বিস্ফোরণের সম্মুখিনে না ফেলায়। একেবারে নির্লজ্জ খাঁটাশ খচ্চর ছেলে এই ব্যক্তি। আমি দরজা খুলে বাইরে বের হতেই দেখি অভীকের ভাই-বোনেরা করিডোরেই ঘুরঘুর করছে। যার অর্থ ওরা আমাদের ভেতরের খবর জানার জন্য প্রবল উৎসুক। আমি নিরুপায় হয়ে আবার ঘরের ভেতরে চলে আসি। অভীকের চোখ তখনও ফোনে নিবদ্ধ। আমি গিয়েই ওনার পাশে দূরত্বে রেখে শুয়ে পড়ি। উনি আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন।

– ” তোর বাপটা আমাকে একেবারে ফাঁসিয়ে দিলো রে পরী। শেষে কিনা ধরে বেঁধে পঁনের বছর বয়সী এক কালো ভুতের সাথে বিয়ে দিলো। বাল্যবিবাহ’র কেসে যদি আমি জেলে যাই? তোর চৌদ্দগুষ্টিকে ফাঁসিয়ে তবেই যাবো। মনে রাখিস অভীকের এই কথাটা। ”

আমি হাই তুললাম ওনার কথার প্রতিক্রিয়ায়। উনি সেটা দেখে রেগে বিপরীত পাশে শুয়ে পড়লেন। আমি শুধু ভাবছি বিয়ের পরও বউএর কাছে আসে না কেন এই ছেলে। এর কোনো সমস্যা নেই তো? ভাবিরা যে বিয়ের দিন সকালে এতোকিছু শেখালো, বোঝালো আমাকে। কিন্তু সেসব কোন কাজে আসবে? যাক আমার কি? আমার জন্য তো ভালোই হলো। কোনো ঝামেলা ঝঞ্ঝাটে পড়তে হলো না। উনি এবার আমার দিকে ফিরলেন।

– ” এই পরী তোর কাছে চকলেট আছে? ”

ওনার এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে যাই আমি। মাথা নেড়ে “হ্যাঁ ” বলতেই উনি উঠে গিয়ে আমার ব্যাগ হাতড়াতে শুরু করলেন। আমি লজ্জায় পড়ে যাই এবার। আমার ব্যক্তিগত অনেক কিছুই আছে ব্যাগে, লোকটা তো আমার কাছ থেকে একবার অনুমতি নিয়ে তারপর ব্যাগ ধরতে পারে ।তা না, অসভ্যলোক কোথাকার। আমি উঠে, ছুটে গিয়ে ওনার হাত থেকে ব্যাগ কেড়ে নিলাম। মুখে বললাম।

– ” আমি দিচ্ছি। ”

চকলেট হাতে নিয়ে উনি বাইরে চলে গেলেন।আমি নিজের ব্যাগটা লুকিয়ে রাখলাম। না জানি আবার কখন এসে টানাটানি করে। উনি মুহূর্তেই ফিরে আসলেন ঘরে। আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে উনি ক্লান্ত সুরে বললেন।

– ” লাইট টা বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে রাখ। নাহলে তোর আঁধারে ঘুমাইলে চোখে কিছুই দেখবো না। ”

– ” মানুষ ঘুমালে এমনিতেই চোখে কিছু দেখে না। তাই আমার আঁধার নিয়ে এতো ভাবতে হবে না আপনার।”

উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দম নিয়ে বললেন।
– ” সাধে কি আর বলি তোর ঘটে গ ব র ছাড়া কিছু নেই। মানুষ ঘুমালেও ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে সে। কিন্তু তোর ঘুটঘুটে কালোয় আমার স্বপ্নের ভেতরেও আলোর অভাব দেখা দেবে। তাই ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দে। বেশি বকবক করিস না তো। তোর ফাঁটা বাঁশের গলা শুনলেই কানে পো পো শব্দ হয়।”

আমি স্তব্ধ ওনার কথায়। মানে প্রতিটা কথার একটা ত্যাড়া উত্তর উনি তৈরি রাখেনই। কিছু বললেই তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে অপমান করার হেতুতে কিছু না কিছু বলবেনই। এই লোকটাকে নিয়ে কি সত্যিই আমায় সারাজীবন কাটাতে হবে? আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে উনি আবার বললেন।

-” কি রে খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছিস কেন হাম্বা? হাম্বা মানে বুঝিস তো? গরু। হাম্বা হাম্বা করার ইচ্ছে থাকলে বাইরে গিয়ে কর। আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে। এমনিতেও তো আমার ঘুম হারাম করার জন্য তোর মতো একটাকে ঝোলানো হয়েছে আমার ঘাড়ে তাই আকুতি মিনতি করে ঘুমাতে হচ্ছে। একটু কৃপা কর ডাইনি। ”

– ” আপনার মুখ কি একটু চুপ থাকতে জানে না? সারাটাদিন আমার পেছনে অযথা বাক্য অপচয় করে চলেছে। ”

– ” আল্লাহ মুখ কিসের জন্য দিয়েছেন? কথা বলার জন্যই তো। তাহলে চুপ থাকবো কেন? আর তোর ফালতু কথা আমি শুনছিই বা কেন? দেখি সড় তো আমিই লাইট অফ করে দিচ্ছি। ”

আমি ঠায় দাড়িয়ে রইলাম। উনি গিয়ে শুয়ে পড়েছেন। অগত্যা আমিও গিয়ে ওনার পাশে শুয়ে পড়ি। মাঝরাতে টের পেলাম ওনার এক পা আমার পেটের ওপর তুলে দিয়েছেন। পাশে তাকাতেই দেখি উনি ঘুমের ঘোরে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে। নে পরী আজকের রাতটাও তোকে চ্যাপ্টা হয়েই শুয়ে থাকতে হবে। এতো বচন ছাড়েন ইনি, এতো কিছু জানেন, শিখেছেন, অথচ নিজের হাত-পা’ই সংযত করতে শেখেননি। আমি ওনার পা’য়ে জোরে চিমটি দিলাম। উনি মশা ভেবে জোরে চর দিলেন পায়ে। আমি ততক্ষনে ওনার থেকে কিছুটা সড়ে এসেছি। দানবের মতো হাত-পা, শরীরে পড়ে পুরো ব্যাথা হয়ে গিয়েছে আমার হাত- পা, পেট। ভোরে ঘুম ভাঙে আমার। উনি তখন নামাযে দাড়িয়েছেন। আমি ওযু করে এসে নামায পড়ে নিলাম।

– ” পরী। ”

আমি জায়নামায গোছাতে গোছাতে উত্তর দিলাম।
– ” হ্যাঁ বলুন। ”

– ” তোকে আজ সুন্দর লাগছে। ”

এইটুকু বলেই থেমে গেলেন উনি। আমিও থমকে দাড়ালাম।কিন্তু পরক্ষনেই উনি বলে উঠলেন।

– “একদম তোদের বাড়ির গাছের ডালে যে বাঁদরটা আসে তার মতো লাগছে, লাল টকটকে ঠোট, ফর্সা চেহারা, চোখের লেপ্টে যাওয়া কাজল, এলোমেলো চুল। ”

আমি উদাসিন চোখে তার দিকে চেয়ে উত্তর দিলাম।
– ” তবুও ভালো। অন্ততো ফর্সা চেহারা তো বললেন।”

অভীক উচ্চস্বরে হাসলেন।আমি আর তর্কে জগালাম না। ওনার সাথে তর্কের যুদ্ধে কখনই জিততে পারবো না আমি। শুধু শুধু কষ্ট করে যুক্তি সাজিয়ে লাভ নেই। তবে লোকটার এই স্বভাবের জন্যই হয়তো ওনাকে এতোটা ভালো লাগে। লজ্জায় আমার চোখেমুখে ফুটে ওঠে এক রক্তিম আভা। ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি। আমার হাসি দেখে অভীক ভ্রু কুচকে তাকায়।

– ” কি রে ভুতেরা কি দল বেঁধে এসে তোকে ফানি জোক্স শোনাচ্ছে? এভাবে হাসছিস কেন? নাকি পাগল-টাগল হয়ে গেলি? শেষে কিনা আব্বু, পাগল ঝুলিয়ে দিলো আমার ঘাড়ে? ”

আমি কিছু না বলে বাইরে চলে আসি। সবার জন্য নাস্তা বানাবো বলে, মনস্থির করলাম। দীপ্তি মিষ্টিও ঘুম থেকে উঠে আমার কাছে চলে আসলো। দীপ্তি আর আমি সবার জন্য পরটা, গরুর মাংসের ঝাল বানিয়ে ফেলেছি। আম্মু এসে মাঝে একবার দেখে যান আমাদের। দীপ্তি চায়ের পানি বসিয়েছে।

– ” দীপ্তি চা’য়ের কাপগুলো নিয়ে যা। আমি তোর ভাইয়ার জন্য কফি নিয়ে আসছি। ”

পরক্ষনেই ভাবলাম আমি কফি দিলে হয়তো উনি খাবেন না। তাই দীপ্তিকে আবার ডেকে কফির মগটাও ওর হাতেই দিলাম।

– ” বলবি না যে আমি বানিয়েছি। বলবি তুই বানিয়েছিস। ”

দীপ্তি সন্দিহান চোখে আমার দিকে তাকালো। এরপরই শব্দ করে হেসে উঠলো। ওর হাসির তালের সঙ্গে আমার হাসিও যোগ দিলো। ছোট্ট মিষ্টি শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আমাদের হাসির কারন খোজার চেষ্টা করছে। দীপ্তি কফি দিয়ে, আমার পাশে এসে দাড়ায়। সবাই খাচ্ছে। আর অভীক পরটা ছিড়ে ছিড়ে প্লেটের পাশে রাখছে। সবাই খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওনার দিকে তাকায়। মেহবুব ভাই সন্দিহান চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

– ” কি করছিস অভীক?পরটা না খেয়ে ছিড়ে ছিড়ে প্লেটের পাশে রাখছিস কেন? ”

অভীক উত্তর দিলেন না। দীপ্তি কৌতুহলী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

– ” আপু ভাইয়ার কি করছে বল তো? ”

– ” আমি কি করে জানবো?

– ” তুই জানবি না তো কে জানবে? বল এমন করছে কেন ভাইয়া? ”

– ” আমি কোনো গণক না যে গণনা করে বলবো। সড় তো তোর কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ”

দীপ্তি মুখ ভেঙচি দিয়ে বলে।
– ” এখন তো মেজাজ খারাপ লাগবেই। বর পেয়ে বোনকে ভুলে গিয়েছিস। ভালো, ভালো। আমি কে? কে হই তোর? ”

আমি চোখ রাঙিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও ফিক করে হেসে দিয়ে আমার ওরনা ধরে রাখলো। অভীক মিষ্টিকে ডেকে নিজের প্লেটটা মিষ্টির হাতে দিয়ে দিলো। একটা বাটিতে মাংসের টুকরো গুলোও ছিড়লো, এরপর তাতে ঝোল দিয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।

– ” এবার খেয়ে নে। পেঁচার মতো মুখ করে থাকিস না। ”

এতক্ষণে আমরা সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পারলাম। মিষ্টির জন্য উনি এতক্ষণ এসব করলেন। মিষ্টি লাজুক হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। মধুরস্বরে বললো।

– ” চলো আমরা একসাথে খাই। পেঁচার মতো মুখ করে থেকো না ভাবি। দেখো ভাইয়া আমাদের সবার জন্য ছিড়ে দিয়েছে। ”

মিষ্টির কথা শুনে প্রথমবার প্লেটের দিকে তাকালাম। অন্ততো ১০-১২ টা পরটা ছিড়ে রাখা। ১০বছরের বছরের বাচ্চার জন্য এতো পরটা ছিড়েছেন উনি? দীপ্তি আমাকে খোঁচা মারলো। এই মেয়েটাও বয়সের আগে পেঁকে গিয়েছে। মিষ্টির দিক থেকে চোখ সড়িয়ে খাবার টেবিলের দিকে তাকালাম আমি। একি ১২-১৩জোড়া আমার দিকে তাক করা। আমার কানে ভেসে আসলো মিষ্টির বলা সেই কথাটি ‘ পেঁচার মতো মুখ করে থেকো না ভাবি।’ তার মানে উনি মিষ্টিকে নয় আমাকে পেঁচা বলেছেন। মেহবুব ভাই গলা উঁচু করে বললেন।

– ” ওহ আচ্ছা। এই ব্যাপার। তাহলে ইদানিং মিষ্টিকেও অযুহাত বানানো হচ্ছে। ”

অভীক খানিকটা ভড়কে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। শক্তগলায় বললেন।

– ” ভুলবশত ভাবে ছিড়ে ফেলেছি। খেয়াল ছিলো না। এতে ‘ওহ আচ্ছা, এই ব্যাপার, সেই ব্যাপার ‘কোথা থেকে আসলো? আম্মু আমাকে খেতে দাও। বাইরে যাবো একটু। কাজ আছে।”

আমি সরাসরি মুখ ভেঙচি দিলাম ওনাকে। সবাই সেটা দেখে মুখ টিপে হাসলো। আর উনি তো রেগে পুরো আগুন। না পারছে কিছু বলতে, না পারছে করতে। ব্যাপারটা খানিকটা আগুনে ঘি ঢালার মতো। ঘরে এসে আমরা তিনজন টিভি দেখতে দেখতে খাচ্ছি এমন সময় অভীক ঘরে আসলেন।

– ” মুখ ভেঙচি দিলি ক্যান? ”

– ” আমার মুখ। আমি দিয়েছি, তাতে আপনার এতো জ্বলে ক্যান? ”

উনি আর কথা বাড়ালেন না। শার্ট বদলে বাইরে চলে গেলেন। মিষ্টি টিভি দেখতে দেখতে বললো।

– ” জানো ভাবি, আমরা যেদিন তোমার বিয়েতে এসেছিলাম তার আগের দিন ভাইয়া অনেক কেঁদেছিলো। আমাকে বলতে মানা করেছিলো যেন এসব আমি তোমাকে না বলি। কেন বলোতো? তোমার সাথে কি ভাইয়ার ঝগড়া হয় অনেক? তোমরা কি আমাদের মতো মারামারি করো? ”

আমি মিষ্টির কথা শুনে অবাক হই। মিষ্টির কথার ধরন পাঁচবছরের বাচ্চাদের মতো এটা আজ খেয়াল করলাম। আর দশটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক নয় ও। অভীকের কান্নার কথা তখন মগজে জায়গা পেলো না। আমি ব্যস্ত মিষ্টিকে নিয়ে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে