#একটা_পরীর_গল্প
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#পর্ব_০৩
ভাতের সঙ্গে গরুর মাংস আর ইলিশ মাছ ভেজে দীপ্তির হাত দিয়ে খাবারগুলো পাঠিয়ে দিলাম অভীক ভাইয়ার ঘরে। আমি আর ওঘরে যাবো না বলে মনস্থির করে নিয়েছি। লোকটা আমাকে একদমই সহ্য করতে পারে না। বউ হয়ে বোধ হয় সবথেকে বড় ভুলটা করেছি আমি। আগে শুধু কথা দিয়ে মারতো আর এখন খাটিয়ে মারে। এই তো সেবার যখন এসেছিলো। আমি ঘরে বসে পড়ছিলাম। উনি সন্তর্পণে এসে আমাকে পেছন থেকে বেঁধে ফেললো গামছা দিয়ে। আমি চিৎকার দেওয়ার মতো শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম ভয়ে। কিন্তু পরক্ষনেই উনি নিজেই নিজের হাতে গামছা পেচিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েন। আমি তড়িৎগতিতে উঠে দাড়াই। এগিয়ে যাই ওনার দিকে। তখনই উনি চিল্লিয়ে বলেন।
– ” বাচাও, বাচাও এই ভুতটা আমাকে বেঁধে, মেরে ফেললো। ”
সাথে সাথে ঘরে ঢুকে পড়লেন আব্বু। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম উনি আব্বুর উপস্থিতি টের পেয়েই এমন করেছেন। আব্বু আমাকে দেখে তো সেই বকা, আমি কেন ওনাকে ভয় দেখিয়েছি? আমি তো জানতাম উনি ভুতে ভয় পায় তবুও এমন কেন করেছি? হ্যান ত্যান।আর উনি নীরব দর্শকের মতো কথা গিলছেন। আব্বুর হ্যাঁ’তে হ্যাঁ আর না’তে না মেলাচ্ছেন।যেহেতু আমি ছোটবেলায় ডানপিটে ছিলাম তাই এই মিথ্যুকের কথা সবাই বিশ্বাস করতো। সবাই ভাবতো এ সত্যবাদী যুধিষ্ঠির কার্বনকপি। আব্বু চলে যেতেই উনি মুখ ভেঙচি দিয়ে বলেন।
– ” কি রে কালো ভুত। কেমন লাগলো? জোস না? ”
আমি ঠোট উল্টিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম।
– ” এর শোধ আমি ঠিক নেবো। একে তো পরের বাড়ির ছেলে তারওপর অতিথি। সেজন্য এবারের মতো ছেড়ে দিলাম তোমাকে। ”
উনি বরাবরের মতো ভ্রু কুচকে তাকান।
– ” তুই কি ছাড়বি আমাকে? কখনও আমাকে ধরার সাহস কিংবা সুযোগ পেয়েছিস? যে ছাড়ার কথা আসছে। তোর মতো লিলিপুটকে আমি একহাতে তুলে আছাড় দেওয়ার শক্তি রাখি। আর উনি নাকি আমাকে ছেড়ে দেয়। কাইল্যা,গাইয়্যা, বাইট্টা। ”
আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে দীপ্তি খাবারের থালা নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির। আমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম ‘ কি হয়েছে? ‘। ও মুখ কালো করে বললো।
– ” ভাইয়া নাকি এঁচড়ের তরকারি খেতে চেয়েছে তোর কাছে। তুই এসব পাঠালি কেন? ভাইয়া খাবেন না। ”
– ” না খেলে, খাওয়া লাগবে না। এখন রান্না করবে কে? সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। বাড়িভর্তি মানুষ, সবাইকে খাওয়াতে ব্যস্ত। এমন মুহূর্তে উনি আবার ঢং শুরু করেছেন। ”
– ” আচ্ছা আমি রান্নায় তোকে সাহায্য করছি। তুই শুধু খাবার নিয়ে ঘরে যা। এটুকু তো পারবি? ”
– ” তুই কি সাহায্য করবি রে? দে এই খাবার। এগুলোই গিলবে উনি। কিচ্ছু রান্না করতে হবে না। গিয়ে দেখ মিষ্টি কোথায়। ও বোধ হয় সারাদিন না খেয়ে আছে। ”
দীপ্তি চলে গেলো মিষ্টিকে খুজতে। আমি খাবারের থালা হাতে আবার আসলাম ঘরে। আমাকে আসতে দেখে উনি উঠে বসলেন। পাঞ্জাবির হাতা কনুই অবধি গুটিয়ে হাত ধুয়ে নিলেন। আমি থালা সামনে এগিয়ে দিয়ে কঠোর স্বরে বললাম।
– ” আমি অসুস্থ। বাকি সবাই ব্যস্ত। সুতরাং এই মুহূর্তে এগুলো ছাড়া অন্য পদের খাবার রান্না করে আপনার গালে তুলে দেওয়া অসম্ভব। ”
অভীক ভাইয়া কিছু একটা ভেবে খেতে শুরু করলেন। আমি পাশেই বসে আছি। মাঝে মাঝে গ্লাসে পানি ঢেলে দিচ্ছি। উনি খাওয়া শেষ করে আবারও শুয়ে পড়লেন। আমি আগ্রহসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। যদি একবার আমার খাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করে এই আশায়। কিন্তু উনি জিজ্ঞেস করা তো দূরে আমার দিকে একবার তাকালেনও না। আমি হতাশ হয়ে প্লেটগুলো গুছিয়ে উঠে দাড়ালাম। দরজা দিকে পা বাড়াতেই উনি বলে উঠলেন।
– ” খেয়েছিস? নাকি চেয়ারম্যানের ছেলের চিন্তায় উপোস আছিস? হ্যাঁ উপোস থাকলে থাক, যদি ব্যাটা ফিরে আসে। আমার ঘাড় থেকে তোকে নামানোর বেস্ট উপায় ও। ”
আমি আহত দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালাম। উনি চোখ বুজে শুয়ে আছেন।কেন জানি না খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। কিন্তু কেন? উনি কি বললো না বললো তাতে তো আমার কিছু আসে যায় না। কবুল বলার পর থেকে কেমন একটা নতুন অনুভূতির সম্মুখিন হচ্ছি বারবার। মনে হচ্ছে যা হচ্ছে সেটাই আমার নিয়তি, আমিও এটাই চাই। কিন্তু অভীক ভাইয়া তো সেটা নাও চাইতে পারে। কেন অভীক ভাইয়ার অনিচ্ছাকে আমি সমর্থন করতে পারছি না? ঘর থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরে চলে আসলাম। আম্মু এসেছে ভাত নিতে। আমাকে দেখে আম্মুর চোখে পানি টলমল করতে লাগলো। আমি এগিয়ে যেতেই আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরেন। কপালে গভীরভাবে চুঁমু খেলেন।
– ” খেয়েছিস? ”
আমি ‘না’সূচক মাথা নাড়লাম। আম্মু একটা প্লেটে ভাত বেড়ে তরকারি দিখে মাখিয়ে আমার মুখের সামনে এক লোকমা তুলে ধরলেন। আমি তৃপ্তি নিয়ে খেতে শুরু করি। খাওয়ার মাঝে বলে উঠি।
– ” আম্মু অভীক ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিলো কেন সবাই? উনি তো ছোট থেকেই আমায় অপছন্দ করেন।”
– ” তোর বাবা আর অভীকের বাবা জানেন। এবিষয়ে কারোর মতামত তারা নেননি। ”
– ” তোমার মত ছিলো? ”
– ” থাকবে না কেন?অভীক এতো ভালো ছাত্র তারওপর পড়াশোনার পাশাপাশি গানও গায়। দেখতে শুনতে ভালো। ওকে না করার সাধ্য আছে কার? ”
আম্মু একটু থেমে আবার বলে উঠলেন।
– ” এবার নিজেকে একটু স্বাভাবিক কর পরী। তোর এমন চুপচাপ, নিশ্চুপ স্বভাব দেখতে কারোরই ভালো লাগে না। ”
আম্মুর কথায় চমকে তাকালাম আমি। নিজেকে স্বাভাবিক করবো বলতে কি বোঝালো আম্মু? আমি তো স্বাভাবিকই আছি। বরং এই কথাটা অভীক ভাইয়াকে বললেই বেশি মানাতো।কেউ যদি অস্বাভাবিক হয়ে থাকে তাহলে উনিই সেই অস্বাভাবিক প্রাণীটি। আমি খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। খেয়াল করলাম বাড়িতে আর কেউ নেই। বিয়েবাড়ি ফাঁকা ব্যাপারটা একটু সন্দেহজনক বৈ’কি? আমি সন্দিহান চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম।
– ” বাড়িতে কেউ নেই কেন? ”
আম্মু অকপটে উত্তর দিলো।
– ” অভীক মানা করেছে তাই। ”
আমি সরাসরি তাকালাম আম্মুর দিকে। আম্মু প্রসঙ্গের মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করে বললেন।
– ” ওর নাকি বেশি মানুষ পছন্দ না, অস্বস্তিবোধ করে। সেজন্য বাড়ি খালি রাখতে বলেছে। তাছাড়া তুই তো আছিস, দীপ্তি, মিষ্টি, শিমুল, অনা তোর বাকি ভাইবোন সবাই তো আসা যাওয়া করছেই।”
– ” অভীক ভাইয়ারা ফিরে যাবেন কবে? ”
– ” অভীক গ্রামটা ঘুরে দেখতে চায়। তাই কয়েকদিন এখানে থেকে তারপরেই ফিরবে। তুই ওকে নিয়ে কাল সকালে বের হোস তো। যেখানে যেতে চায় নিয়ে যাস। ”
আমি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালাম। সন্ধ্যার আগমুহূর্তে ঘন কালো অম্বুদে ছেয়ে যায় নীলাভ আকাশ।বুনো ভারী হাওয়ায় ধুলাবালি উড়ছে। বৃষ্টি নামবে বোধহয়। আমি উঠান থেকে একটা টুল উঠিয়ে রান্নাঘরে রাখলাম। এরপর মোম আর লম্ফ নিয়ে ঘরে ঢুকি। হারিকেন খুজে পাচ্ছি না আমি। তাই আপাতত এগুলো দিয়েই কাজ চালাতে হবে। আমাদের বাড়ির ঘরগুলো গোলাকৃতি সারির। আমার ঘরের ডানপাশে দীপ্তি এবং বামপাশের ঘরে অনারা থাকে। কিন্তু আজ ওরা সবার সাথে একঘরে থাকবে বলে পাশের ঘরদুটো ফাঁকা থেকে গেলো। আমার ঘরের ঠিক পেছনেই বাঁশবাগান। বাতাসে, বাঁশে বাঁশের সংঘর্ষে তুমুল শব্দ হতে শুরু করে। বিদ্যুৎ চলে যায় মুহূর্তেই। আমি ঘরে এসে একটা মোম জ্বালিয়ে জানালা বন্ধ করে দিলাম। অভীক ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে তখনও। টিনের ওপর বৃষ্টির ঝমঝম তালের সঙ্গে বজ্রপাতে কড়া শব্দ কানে যেতেই আমি বারান্দার চৌকিতে এসে বসি। ঘন বর্ষনে সবটা ঝাপসা হয়ে আসছে। উঠানে পানি জমতে শুরু করেছে। হাঁস মুরগির কোলাহলে মনে হচ্ছে দু-জাতির মধ্যে তুমুল ঝগড়া চলছে।একে একে সবাই এসে বারান্দায় বসলো। কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই অভীক এসে আমার সামনে দাড়ায়।
– ” ঘরের মোম নিভে গিয়েছে। ম্যাচবক্স কোথায়? মোম জ্বালিয়ে দিয়ে যা। ”
কথাটি বলেই অভীক ঘরে চলে যায়। আমিও ঘরে ঢুকি। আমি ঘরে ঢুকতেই অভীক দরজা লাগিয়ে দেয়।
– ” আমাকে একা ঘরে ফেলে রেখে বাইরে কি করছিলি পরী? ঘরে থাকতে সমস্যা কি? ”
আমি কিছু না বলে মোম জ্বালাতে লাগলাম। জানালার ফাঁক দিকে বাতাস এসে বারবার আলো নিভিয়ে দিতে লাগলো। পুরো ঘরটা আঁধারে নিমজ্জিত। কোনোকিছুই ঠিক করে দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ আমার মনোযোগ মোমের থেকে সড়ে গিয়ে কারোর ধীরপায়ে এগিয়ে আসার উপস্থিতির দিকে গিয়ে ঠেকলো। আমার একদম কাছাকাছি এসে কন্ঠটি বলে উঠলো। ‘ জ্বলতে যখন চাচ্ছে না, তখন বৃথা চেষ্টা করছিস কেন? মাঝে মাঝে আলোর থেকে কালোই ভালো। এতে করে আলোর মর্ম বোঝা যায়, যে অন্ধকারকে সবাই ভয় পায়, তাকে জানা যায়, চেনা যায়। ‘ এমন মিহি কন্ঠ শুনে আবেশে চোখ বুজে আসে আমার। হাত থেকে মোম পড়ে যায়। কানে শুধু বৃষ্টির ঝমঝম বোল ভেসে আসছে। অভীক আমার হাত ধরে খাটের কাছে নিয়ে গেলো। এই প্রথম অভীক আমার হাত এতো যতনে ধরেছেন। না কোনো ব্যাথা দিয়েছেন আর না কোনো খারাপ কথা বলেছেন। আমাকে খাটে বসিয়ে উনি নিজেও বসলেন আমার পাশে। আমি এক অজানা ভয়ে শঙ্কিত হতে লাগলাম।।দাদী বলেছেন ‘ বিয়ের রাতে বর যদি কাছে আসে বা শরীরে হাত দেয় তুই কিছু বলবি না। এটা স্বাভাবিক। ‘ কিন্তু আমার ভেতরে এক অস্বস্তিবোধ রীতিমত মনের দরজায় কড়া নাড়ছে। অভীক ভাই আমার হাতে হাত রাখলেন।
– ” ভাইয়া অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না তো। আলোটা জ্বালাতে দেন আমাকে। ”
ঠিক তখনই হাতে এক তীব্র ব্যাথা অনুভব করি। উনি খুব জোরে চিমটি দিয়ে উচ্চস্বরে হাসছেন। আমি হাত ডলতে ডলতে প্রায় কেঁদেই ফেলি। ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত।
– ” বলেছিলাম না অভীক কোনো ঋণ রাখে না। আজ সুদে আসলে তোকে ফেরত দিলাম, সেই চিমটি। ”
আমার কানে ভেসে আসলো এক বিদঘুটে হাসির শব্দ। মাথাটা ঝিম ধরে আসে। চোখের সামনেটা আগের থেকেও বেশি অন্ধকার হতে শুরু করে। হাত-পা নিস্তেজ হতে শুরু করলো। ঢলে পড়লাম অন্ধকারের অতল গভীরে।
তখন মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। কানে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির আওয়াজ আসতেই আমার চেতনা ফিরে আসে। আমি নড়ার চেষ্টা করতেই টের পেলাম কারোর পেশিবহুল হাতের বন্ধনিতে আবদ্ধ আমার সর্বাঙ্গ। তার ভারী পায়ের ভাজে আমার ছোট ছোট পা গুলো যেন বের হওয়ার জন্য ছটফট করছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। নাকে ভেসে আসছে সেই মিষ্টি মধুর ঝাঝালো ঘ্রাণ। তারমানে আমি অভীক ভাইয়ার বুকের ওপর? না জানি ঘুম থেকে উঠে লোকটা আমায় এভাবে দেখে আর কি কি শোনায়। আমি নিজের সবটুকু জোর দিয়ে সড়ে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার নড়াচড়ার পর উনি আরও শক্ত করে চেপে ধরেছেন আমাকে। আমার গলা থেকে অস্ফুট স্বরে ভেসে আসলো দুটি শব্দ
– ” আমার পা।”
সাথে সাথে ওনার পা আলগা হয়ে আসে। আমি পা সড়িয়ে নিতেই উনি ঘুমকাতুরে কন্ঠে বললেন।
– ” কি রে পরী। তোদের বাড়ি কি একটা কোলবালিশও নেই? আমার কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসেনা। সুতরাং নড়াচড়া বন্ধ কর। আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দে ”
মনে হচ্ছে আমার দম তখন বন্ধ হয়ে আসছে। একে তো রাক্ষসের মতো গায়ের জোরে চেপে ধরে আছে আমাকে, আবার আমার ঘুম হারাম করে আমাকেই বলছে ‘ আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দে।’ কিন্তু একদিক থেকে ভালোই লাগছে, পুরোনো সেই ভয়টা এখন আর করছে না। শুনতে পাচ্ছি না সেই বিদঘুটে শব্দগুলো। কিন্তু এভাবেই বা আর কতক্ষণ? আমি মৃদু স্বরে বললাম।
– ” বলছি একটু ঢিলা করে ধরে ঘুমান। আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ”
এতোক্ষন উনি আমার হাতের ওপর হাত রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। এ কথা বলায় উনি হাত ছেড়ে কোমর জড়িয়ে ধরে, ঘাড়ে মুখ গুজে শুয়ে পড়লেন। এতক্ষন দম বন্ধ হবে হবে করছিলো এখন মনে হচ্ছে দম আটকেই গিয়েছে। আমি হাত দিয়ে ওনার হাত সড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলেন। এ কি জ্বালা। বিয়ের আগেও শান্তি দেয়নি, পরেও দিচ্ছে না। এই প্রাণী বোধ হয় মরার পরও আমায় শান্তি দেবে না।
– ” আরে ভাই ওদিক গিয়ে ঘুমান তো। আমাকেও ঘুমাতে দিন। ”
উনি ঘোরলাগা কন্ঠে বিরক্তির সুরে বললেন।
– ” বড্ড বিরক্ত করিস তুই। যা ছেড়ে দিলাম তোকে। আমাকে টাচও করবি না আর। ”
উনি হাত সড়িয়ে নিলেন। আমি একটু দূরত্ব রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু দূরে গিয়ে মনে হচ্ছে আমি কোথাও পড়ে যাচ্ছি। কেউ ধাক্কা মারছে আমাকে। আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আসি ভাইয়ার দিকে। গা ঘেসে শুয়ে পড়বো ঠিক সে মুহূর্তে উনি বলে উঠলেন।
– ” একা যখন থাকতে পারবি না তখন ফালতু জেদ করিস কেন? একহাত আমার হাতের ওপর রেখে ঘুমা। ভয় লাগবে না। ”
ভাইয়ার কথা শুনে স্তব্ধ আমি। উনি বুঝলেন কি করে আমার ভয় লাগছে? নাকি আমার আচরণেই টের পেয়েছেন? হয়তো তাই। আমার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে উনি আবার আমার দিকে ফিরে শুয়ে ওনার হাতের ওপর আমার মাথাটা রাখলেন।
– ” দয়া করে ঘুমা, তোর ভাঙা খাটে, তুই যেভাবে নড়ছিস তাতে আমার ঘুমের দফারফা হয়ে গেলো। একটা ভালো খাট এনে রাখতে পারিসনি? তুই’ও যেমন ভাঙাচোরা তোর খাটও তেমন। দুটোতেই টাচ করতে মড়মড়, ভ্যা ভ্যা শব্দ হয়। ”
চলবে?
[ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ ]