#এই_সাঝঁবেলাতে_তুমি_আমি🍁
পার্ট ১৩(শেষ)
#সারা_মেহেক
🍀🍁
মুসকান আফনানের ঠিকানা খুঁজার সংগ্রামের কাহিনি বলতে লাগলো,
“আজকে সকালে আপনাকে না দেখে খুবই খারাপ লাগছিলো।কান্নাও করেছি অনেক।কান্না করছিলাম আর চিন্তা করছিলাম কিভাবে আপনাকে খুঁজে পাবো। সরাসরি তো আর কাউকে আপনার ঠিকানা জিজ্ঞাসা করতে পারবো না।
আমি মিরাকো পাঠালাম ফুপির কাছে আপনার ঠিকানা জিজ্ঞাস করার জন্য।সাথে একটু ট্রিকস ও শিখায় দিলাম যাতে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা জিজ্ঞাস করা হয়।এতে সন্দেহ হবে না।
কিন্তু এতোকিছুর পরও ফুপি ঠিকানা দিলো না। পরে মাথায় আসলো যে আপনার ফেসবুক আইডি ঘাঁটাঘাঁটি করলেই তো কিছু পাওয়া যাবে।
পরে আপনার ফেসবুক আইডি থেকে আপনার এক ফ্রেন্ডকে নক করে ঠিকানা নিলাম। আর কাউকে যাতে কিছু না বলে তাও বলে দিলাম।
এ পর্যন্ত আসতেই বেশ খাটাখাটুনি করা হলো।পরে আপনাদরে বাসায় আসলাম তো ঠিকই কিন্তু আন্টী কোনোমতেই আপনার রুমে আসতে দিবে না।উনার এই সেই নানা প্রশ্ন।পরে আংকেল এসে আমাকে আপনার রুমো আসার পারমিশন দিলেন।
তো এই ছিলো এখানে আসার ঘটনা।”
আফনান এতোক্ষন গালে হাত দিয়ে মুসকানের দিকে তাকিয়ে মুসকানের কথা শুনছিলো।
মুসকানের কথা শেষে সে যখন আফনানের দিকে তাকায় সে তে পুরো লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
মুসকানের এমন লাজুক চেহারা দেখে আফনান মনে হয় আরেক দফা প্রেমে পরে।
মুসকান কিছুক্ষণ পর বলে,
“আমি বাসায় চলে যাই। নাহলে আবার আম্মু টেনশন করবে।আমি আমার এক বান্ধবীর বাসায় আসার কথা বলে বের হয়েছিলাম।”
“আচ্ছা চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।”
“আরে নাহ।আপনি পাগল হয়ে গিয়েছেন নাকি। আপনার সাথে আম্মু আমাকে দেখলে খুব বকবে।”
“আমি তোমাকে বাসা থেকে কিছুটা দূরে নামিয়ে দিয়ে আসবো।তাও তোমাকে এই সন্ধ্যাবেলায় একা যেতে দিবো না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
এরপর মুসকান আর আফনান রুম থেকে বের হয়ে মুসকানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
মুসকানের বাসার থেকে কিছুটা দূরে এসে গাড়ী থামে।মুসকান গাড়ী থেকে নামার আগে আফনান বলে,
“রেডি থেকো সেনোরিটা। ”
মুসকান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কেনো কিসের জন্য রেডি থাকবো??”
“কিসের জন্য মানে!!!বিয়ের জন্য আর কিসের জন্য হবে।”
বিয়ের কথা শুনতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেেলে মুসকান।
আফনান বললো,
“কাল/পরশু তোমাদের বাড়ীতে আমার আব্বু আম্মুকে নিয়ে আসবো। আম্মুকে রাজি করাতে একটু সময় লাগবে তো।কারন এভাবে হুট করে বিয়ের কথা শুনলে আম্মু একটু রেগেই যাবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে আপনি এখন চলে যান।”
“তুমি আগে বাড়ীর ভিতর যাও তারপর আমি যাচ্ছি।”
মুসকান আর কিছু না বলে শুধু একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।
বাড়ীর ভিতরে ভয়ে ভয়ে প্রবেশ করে মুসকান। কারন কেউ যদি তার চোখ দেখে ফেলে এই সেই নানা প্রশ্ন করবে। অবশ্য সে ভেবে নিয়েছে বলবে যে, মাহিরা চলে গিয়েছে তাই এতো কান্না করেছে।
মুসকান তার রুমে এসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কারন কেউ তাকে আসতে দেখেনি।আসতে দেখলে তো নিশ্চিত জিজ্ঞাস করতো এতোক্ষন কি করলি?এতো দেরী কেনো। এই সেই কতোকিছু। এখন রুমে এসে একটা ঘুম দিলে পরে আর কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করবে নাযেই ভাবে সেই কাজ। মুসকান বেডে শুয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলো। যে ঘুম ভাঙলো পরেরদিন সকালে।সকালটা অন্যান্য দিনের চেয়ে বড়ই স্নিগ্ধ লাগছে মুসকানের কাছে।কেনো তা সে নিজেও জানে না। হয়তো নতুন নতুন প্রেমে পরেছে তাই।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতেই একটা আননোন নাম্বার থেকে ফেন আসলো তার ফোনে। সাধারনত আননোন নাম্বার থেকে সে ফোন রিসিভ করে না। তাই সে ফোনটা রেখে দিলো। পরপর ২বার ফোন আসলো কিন্তু সে ফোন রিসিভ করলো না। ৩বারের বার ফোনের রিংটোনে অতিষ্ঠ হয়ে ফোন রিসিভ করতেই ফোনের অপর পাশ থেকে একটা পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেলো সে। কিন্তু ধরতে পারছে না যে সে ফোন দিয়েছে।
অপর পাশ থেকে বললো,
“কি ব্যাপার সেনোরিটা, ফোন রিসিভ কেনো করছিলে না?”
এবার মুসকান শিওর হলো যে ব্যক্তিটা কে।অন্য কেউ হলে তো সেই ঝাড়ি দিতো সে।
“আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করছিলাম না।”
“সে কি!!আমার নাম্বার তোমার ফোনে নেই!!”
“জ্বি না।আপনার নাম্বার আমার ফোনে থাকবে কেনো??”
“কেনো মানে!!আমাদের বিয়ে হবে তাই।”
“ওহ তাই!!আমি তো ভেবেছিলাম একেবারে বিয়ের পরেই নাম্বার নিবো।তার আগে না।”
এভাবেই তারা প্রায় আধ ঘন্টা যাবত ফোনে কথা বললো।
আফনান ফোন রাখার পর মুসকান ভাবলো যে তার আর আফনানের বিষয়টা সুমনাকে বলা উচিত।তাই সে সুমনাকে ২/৩দিনের জন্য বাড়ীতে আসতে বললো।প্রথমে সুমনা রাজি হলো না। কারন কেবলই তো গতকাল বাসায় গিয়েছে আবারো মুসকানদের বাড়ী কেনো আসবে সে।তবে মুসকানের বারবার রিকুয়েস্ট এ সে রাজি হয়ে যায়।
দুপুরে সুমনা আসার পর মুসকান তাকে আফনানের বিষয়টা বলে। সুমনা তো শুনে খুব খুশি হয়।
“তো আফনান ভাইয়া কবে উনার আব্বু আম্মুকে নিয়ে আসবে বিয়ের কথা বলতে??”
“গতকাল বলেছিলো আজকে অথবা কালকে।আজকে মনে হয় আসবে না। ”
“ওও।তাহলে তো খালামনিকে বলতে হবে এ কথা।”
সুমনার কথায় মুসকান ভয়ে চোখ বড় বড় করে বলে,
“পাগল হয়ে গিয়েছিস নাকি??আম্মুকে এ কথা বললে আম্মু আমাকে আস্ত রাখবে না।”
“আরে না বললে মেহমানদের জন্য নাশতা পানির আয়োজন কে করবে শুনি??”
“অতো নাশতা পানি করতে হবে না। আমি উনাকে বলে দিবো যে আন্টীকে যাতে ম্যানেজ করে এ ব্যাপারে।আর উনাকে বলবো আংকেল আন্টীকে নিয়ে একদম হুট করে চলে আসতে।তাহলে সমস্যা হবে না। কিন্তু যাই বলিস,আমি আম্মুকে এ ব্যাপারে কিছুই বলছি না।”
“আচ্ছা যেটা ভালো মনে করিস তুই।”
পুরোটা দিন সুমনা আর মুসকান গল্প করতে করতে কাটিয়ে দেয়।
এর মধ্যে একবার সুমনা ভেবেছিলো আকাশকে পছন্দ করার ব্যাপারটা বলবে।কিন্তু পরে ভাবলো যে আজকে না আগামীকাল বলবে।
.
.
.
বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙলো মুসকান আর সুমনার। কারন কালকে রাত ৩টা পর্যন্ত গল্প করেছে আর মুভি দেখেছে।
মুসকান আর সুমনার ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে নিলো। ড্রইং রুমে বসে দুজনই টিভি দেখছিলো। হঠাৎ আকাশের মায়ের আগমন।আকাশের আম্মুকে এভাবে দেখে মুসকান ভেবেছে হয়তো তার আম্মু সাথে কোনো কথা বা কাজ আছে।কিন্তু আকাশের মা মুসকানকে অবাক করে দিয়ে মুসকানের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
আকাশের মায়ের এমন কাজে মুসকান অবাক হয়ে গেলো।সুমনা বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিলো।
আকাশের মা মুসকানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“বউ সাজে তোকে তো সেইরকম সুন্দর লাগবে রে।”
আকাশের মায়ের কথায় সুমনা আর মুসকান দুজনেই অবাক হয়ে গেলো।
মুসকান বললো,
“মমানে আন্টী??এসব কথা কেনো বলছো??”
আকাশের মা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ীয়ে মুসকানের বাবা মা কে ডাকতে থাকে।কিছুক্ষন এর মধ্যেই মুসকানের বাবা মা ড্রইং রুমে এসে হাজির হয়।
মুসকানের মা আকাশের মা কে বলে,
“কি হলো ভাবি?? এ সময়ে যে এখানে??”
আকাশের মা মুখে হাসি নিয়েই বলে,
“একটা ভালো খবর নিয়ে এসেছি।আমার মনের অনেক দিনের ইচ্ছা।
মুসকানকে আমাদের বাড়ীর বউ করে নিতে চাই।আপনারা কি বলেন??”
আকাশের মায়ের এ কথা শুনে মুসকান আর সুমনার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো।দুজনেই স্তব্ধ হয়ে আছে।কেউই এসব ভাবতে পারেনি।দুজনের মুখেই বিষণ্ণতা, চিন্তা ভর করলো।
কিন্তু মুসকানের বাবা মায়ের মুখে হাসি। অর্থাৎ তারা দুজনেই খুব খুশি।
মুসকানের মা হেসে আকাশের মা কে জড়িয়ে ধরলো।আর বললো,
“আমারও অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো ভাবি।কিন্তু কিভাবে বলবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আপনি বলে আমাকে শান্তি দিলেন।আমি আর মাহিরার বাবা তো আগে থেকেই চাইছিলাম এটা।”
আকাশের মা মুসকানের মা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“এতোদিন দুই পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। আকাশ আর মুসকানের বিয়ের মাধ্যমে তা আত্মীতার সম্পর্কে রূপ নিবে।এর চেয়ে ভালো আর কিছু আছে নাকি।আকাশ আর মুসকানের বন্ধুত্বও গাঢ়ো হবে।তাদের এ সম্পর্ক ভালোবাসার সম্পর্কে পরিনত হবে।”
কিছুই যেনো বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না মুসকান আর সুমনার।কি থেকে কি হয়ে গেলো!!!
মুসকান তো আরেকটু হলেই যেনো কান্না করে দিবে।খুব কষ্ট লাগছে তার যে একবারো কি তার মতামত নেওয়া যায়না??তার কোনো ব্যক্তিগত পছন্দ আছে নাকি সেটা একবার জিজ্ঞাসা করা যায়না???
মুসকান কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
“আকাশ ভাইয়া এসব বিষয়ে জানে??”
আকাশের মা মুসকানের কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন,
“হুম জানে তো।আমার ইচ্ছা ছিলো।কিন্তু পরে ওর কাছ থেকে মতামত নিয়েই তো এলাম এখানে।”
“আকাশ জানে”এটা যেনো বিশ্বাস হতে চাইছে না মুসকান আর সুমনার।দুজনেই স্তব্ধ হয়ে আছে। দুজনের মনেই এখন চলছে যে আকাশ তো মুসকান আর আফনানের ভালোবাসার বিষয়ে সব জানে তাহলে!!!
এবার সুমনার দুচোখ ভরে গেলো।দুফোটা চোখের জলও ফেললো সে।কিন্তু চুপিসারে।যা কারোর নজরে না আসলেও মুসকান দেখেছে।সে অবাক হয়ে যাচ্ছে এ ভেবে যে আকাশ আর তার বিয়ের কথায় সুমনা কেনো কাঁদছে??তাহলে কি সে আকাশকে ভালোবাসে??
মুসকানের মনে হাজারো প্রশ্ন রয়েছে।একদিকে সুমনার কান্না।অন্যদিকে আকাশের বিয়ের জন্য রাজি হওয়া।
হঠাৎ করে কারোর আওয়াজে পিছনে ফিরে তাকালো সবাই। সবাই দেখলো আকাশ এসেছে।সাথে আফনানও।
দুজনকে একসাথে দেখে মুসকান অবাক হলো বেশ।দুজন একসাথে কেনো??
আকাশ আর আফনান এগিয়ে আসলো।আকাশ মুসকানের চেহারা দেখে বুঝে ফেললো যে তার মনে অনেক প্রশ্ন।
আকাশ এগিয়ে এসে মুসকানকে বললো,
“আমাকে এতো তাড়াতাড়ি দেখে অবাক হয়েছো তাইনা??আসলে গিয়েছিলাম দুদিনের জন্য কিন্তু কাজ শেষ হওয়ায় তাড়াতাড়ি চলে আসলাম।বাই দা ওয়ে আজকের সারপ্রাইজ টা কেমন লাগলো??”
মুসকান আকাশের দিকে ঘৃনা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সে হতবাক আকাশের কাজ দেখে।সব জানার পরও কিভাবে পারলেন উনি এমন করতে??আর আফনানই বা এখানে কেনো??
আকাশ আবারো বললো,
“আমি আফনানকে নিয়ে এলাম সারপ্রাইজ টা বলার জন্য।সেও কিন্তু কিছুই জানে না।”
আকাশ আফনানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
“দোস্ত,আমি আর মুসকান ছোটো বেলার বন্ধুত্ব থেকে আমাদের সম্পর্ককে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে রূপ দিতে চাইছি।”
আকাশের কথা শুনে আফনান হতবাক হয়ে গেলো।সে ভাবছে মুসকান কি তাহলে তাকে ধোঁকা দিলো!!!
মুসকান আর এসব সহ্য করতে না পেরে বললো,
“আমার কিছু কথা আছে। আকাশ ভাইয়া,সুমনা আর আফনান,আপনারা ৩জনই আসুন আমার সাথে।”
মুসকানের এমন কান্ড দেখে অবাক না হয়ে পারলো না আকাশের মা আর মুসকানের বাবা মা।কারন কথা থাকলে শুধু আকাশের সাথে থাকবে।সুমনা আর আফনান কেনো।
রুমের মধ্যে ৪জনই নিশ্চুপ।এ নিরবতা ভেঙে মুসকান ছলছল নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এমন কেনে করলেন আপনি??সবটা জানার পরও!!”
আকাশ অবাক হয়ে বললো,
“আমি কি করলাম!!”
“কি করেন নি তাই বলুন।আপনি কেনো আমার আর আপনার বিয়ের কথা এভাবে বললেন??আমি কি আপনাকে একবারো এসব বিষয়ে কিছু বলেছি??”
“না বলোনি কিন্তু তোমার আর আফনানের মধ্যে তো আর কিছুই নেই।তাই আমি ভাবলাম কেনোনা আমাদের সম্পর্কটাকে এগিয়ে নেওয়া যাক।”
এবার আফনান বললো,
“তোকে কে বলেছে যে আমার আর মুসকানের মাঝে কিছু নেই!!!”
“কেউ বলেনি।কিন্তু মুসকান তো তোকে ডেয়ারের জন্য ভালোবাসি বলেছে।আর তুইও সত্য জানার পর ওর সাথে আর কথা বলিস নি।”
আফনান এবার রেগে বললো,
“তুই আগে সম্পূর্ণ সত্যটা জেনে নিবি না একবারো??না জেনেশুনে এতোবড় ডিসিশন কেনো নিলি তুই??”
এবার মুসকান চোখের পানি মুছে বললো,
“আমাদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।যদিও সেটা ডেয়ার ছিলো কিন্তু আমি উনাকে সত্যিই ভালোবাসি।আর উনি আমাকে।
আর সুমনা ভালোবাসে আপনাকে।”
সুমনা যে আকাশকে ভালোবাসে এ কথা শুনে আকাশ, আফনান,সুমনা ৩জনই অবাক হয়ে যায়।সুমনা অবাক হয়ে মুসকানের দিকে তাকায়।
মুসকান বুঝতে পেরে বলে যে,
“তুই না বললেও বুঝতে পেরেছি।তখন আমার আর আকাশ ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনে যে তুই কান্না করেছিলে তখনই কিছুটা আঁচ করেছিলাম বিষয়টা।
তুই সত্যিই আকাশ ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাইনা??”
সুমনা কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ায়।
আকাশ হঠাৎ করে হেসে উঠে।আর গিয়ে সুমনাকে জড়িয়ে ধরে।আকাশের এমন হুটহাট কাজে সবাই অবাক।আকাশ সুমনাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
“উফ,শেষপর্যন্ত বললেন মহারানী আপনি।কেনো এতোদিন মুখ থেকে বের হলো না যে তুমি আমাকে ভালোবাসো???”
সুমনা এখনো কিছু বুঝতে পারছে না।আফনান আর মুসকানেরও একই অবস্থা।
আকাশ বললো,
“কি হলো সবাই সারপ্রাইজ তাইনা??হওয়ারই কথা।কারন কাজটাই এমন করেছি আমি।
সুমনা যে আমাকে ভালোবাসে এটা ওর কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য এতোকিছু করা।”
আকাশের কথায় রুমে উপস্থিত ৩জনেই স্তব্ধ হয়ে গেলো।
আফনান বললো,”তার মানে এসব নাটক ছিলো!! ”
“হুম দোস্ত।সুমনা যে আমাকে ভালোবাসে এটা তো কোনোদিনও স্বীকার করবে না। তাই এতোকিছু করা।যাতে ও সব স্বীকার করে।”
আকাশ সুমনার সামনে তৎক্ষণাৎ হাঁটু গেড়ে বসে বলে,
“উইল ইউ মেরি মি সুমনা??”
সুমনা মুচকি হেসে বলে,
“ইয়েস আই উইল। ”
সুমনার জবাবে সবার মুখেই হাসি ফুটে উঠে।
আকাশ বললো,
“আচ্ছা নিচে চলো সবাইকে জানাতে তো হবে এটা।”
“হুম চল।”
এরপর সবাই নিচে নেমে এলো।আকাশ সবাইকে সব ঘটনা খুলে বললো।সবাই তো অবাক।আকাশ যে এমন কাজ করবে ভাবেনি কেউ।
এরপর আকাশের কথামতো তার আর সুমনার এবং মুসকান আর আফনানের বিয়ের আয়োজন করা হয়।
আকাশের মায়ের প্রথমে একটু মন খারাপ ছিলো।কিন্তু উনার সুমনাকেও বেশ ভালো লাগতো বলে মন খারাপের কারনটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না।
আফনান তার আব্বু আম্মুকে মুসকানের কথা আগেই বলে রেখেছিলো।
সুমনার বাবা মা তো চরম খুশি।তারাও রাজি হয়ে যায় বিয়েতে।
সন্ধায় বড়দের উপস্থিতে আকাশ আর সুমনা এবং মুসকান আর আফনানের বিয়ে পরানো হয়।কিছুদিন আগেই মাহিরার বিয়ে হলো বলে আপাতত কোনো প্রকার অনুষ্টান ছাড়াই বিদায় করা হলো সুমনা আর মুসকানকে।
.
.
রাতের মেঘেছায়া আকাশ দেখছে আকাশ।সে ভাবছে নামটা যেমন মিলে, তেমনি আজকে এদের পরিস্থিতিও মিলেছে।আকাশের মনও আজকে মেঘেছায়া।কি ভেবেছিল আর হলো কি।সে তো ভেবেছিলো সুমনার জায়গায় আজকে মুসকান থাকবে।তার মনেও যে একটু একটু করে মুসকান জায়গা করে নিতে শুরু করেছিলো।ভাগ্যিস সময় থাকতে সব জেনে নিয়েছে সে।সে তো জানতোই না যে আফনান আর মুসকানের মাঝে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। সে তো ভেবেছিলো হয়তো মুসকান আফনানকে ভালোবাসে না। যাস্ট একটা ডেয়ার কম্পলিট করলো সে।কিন্তু আসলে তো অন্যকিছু ছিলো।
কিন্তু যা হয় ভালোর জন্যই হয়।মুসকানের প্রতি তার ভালোবাসাটা খুব একটা গভীর ছিলো না। কিন্তু আফনানের ভালোবাসাটা গভীর।
এখন তো সুমনা তার স্ত্রী।তো সুমনাকে সে ভালোবেসে ফেলবে, শুধু একটু সময়ের প্রয়োজন।আর আফনান এবং মুসকানকে এক করে সে তার বন্ধুত্বের দায়িত্বটা পালন করলো।
.
.
আফনান আর মুসকান দুজনেই বারান্দায় বসে গল্প করছে। একপর্যায়ে আফনান গিটার হাতে নিয়ে মুসকানকে তার পছন্দের গান শুনালো।
মুসকান যখন জানতে পারে যে আফনানই সেই ব্যক্তি যার কন্ঠ আর সুরে মুসকান মুগ্ধ হয়েছিলো তখন তার খুশির সীমা ছিলো না।।আফনানকে ভালোবাসার আগেই তো সে আফনানের কণ্ঠ আর সুরকে ভালোবেসে ছিলো।কিন্তু এ কথাটা মুসকান আফনানকে বলেনি। থাক না কিছু বিষয় অজানা।হয়তো পরে একটা সারপ্রাইজ হিসেবে জানানো যাবে বিষয়টা।
.
.
দেখতে দেখতে প্রায় ৯টা বছর পেরিয়ে গিয়েছে।অনেক কিছুই বদলে গিয়েছ।শুধু বদলায়নি আফনান আর মুসকানের ভালোবাসা।
আকাশ এখন সুমনাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। একদম চোখে হারায় যেনো।
মুসকান এখন দুই ছেলেমেয়ের মা।আর সুমনার এক ছেলের মা।মুসকানের প্রথম সন্তান ছেলে হয়েছে।দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে।মুসকানের ছেলের নাম মিহির আর মেয়ের নাম আফিয়া।সুমনার ছেলে সাহির আর মিহির সমবয়সী।দুজনের বয়স ৮বছর।আফিয়া এদের দুজনের চেয়ে ৪বছরের ছোটো।
পাশাপাশি ফ্লাটে থাকে আকাশ আর আফনান।আফিয়া আর সাহির এর একদমই মিল নেই। সারাটা দিন দুজনে ঝগড়ার উপরই থাকে।অল্প থেকে অল্পে এ দুজন ঝগড়া করে। মিহির বেশ চেষ্টা করে যাতে এ দুজনের ঝগড়া না লাগে কিন্তু সে ব্যর্থ।সুমনা আর মুসকানও পারে না এদের আটকাতে। মোটকথা দুজনের ঝগড়ায় সবাই অতিষ্ঠ। কিন্তু দিনশেষে এরা হ্যাপি ফ্যামিলি।খুব সুখেই দিন কাটছে এদের।
……………..সমাপ্ত…………..