#এই_সাঝঁবেলাতে_তুমি_আমি🍁
পার্ট ১১
#সারা_মেহেক
🍀🍁
আফনান একহাত দিয়ে নিজের ব্যাথা পাওয়া জায়গাটা ধরে আছে।আর আরেক হাত দিয়ে আলতো করে মুসকানের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
“এতো কান্না করার কি আছে সেনোরিটা??সামান্য একটু তো ব্যাথা পেয়েছি।”
মুসকান রেগে বললো,
“এটা কি সামান্য ব্যাথা!! আমি তো দেখছি না যে এটা সামান্য।হাত আর পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে,আর আপনি বলছেন সামান্য!!নিজের খেয়ালও রাখতে পারেন না। এতো বড় ছেলে হয়েও যদি নিজের খেয়ালটুকু না রাখতে পারেন, তবে কে খেয়াল রাখবে শুনি??”
আফনান মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
“কেনো তুমি।”
মুসকান হয়তো কথাটা শুনেনি।সে আকাশকে লক্ষ করে বললো,
“আকাশ ভাইয়া আপনার কিছু হয়নি??”
“আরে না।আমার কিছু হয়নি।আফনান আমাকে কিছু হতে দিলে তো।আমাকে ও ধাক্কাটা না দিলে কি যে হতো আজকে আল্লাহ জানে।”
শাওন এগিয়ে এসে বললো,
“আরে এভাবে রাস্তায় বসেই থাকবে নাকি??আফনানকে আশেপাশের একটা হসপিটালে নিয়ে গিয়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে আনতে হবে তো।নাহলে এভাবে থাকলে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।”
মুসকান আকাশ আর শাওনকে বলে,
“আপনারা দুজন উনাকে উঠিয়ে রিকশায় করে নিয়ে যান।আমি আর সুমনা আরেক রিকশায় আসছি।”
আফনান বললো,
“আরে না। শাওন আর মাহিরা বাচ্চাদের নিয়ে চলে যাক।নতুন জামাই মানুষ,অযথা সমস্যায় জড়াবে কেনো।”
শাওন আর আকাশ আফনানকে একসাথে উঠালো।শাওন আফনানকে উঠাতে উঠাতে বললো,
“আরে এটা কি কোনো সমস্যা নাকি। তুমি বিপদে পরেছো।সো হেল্প তো করতেই হবে।”
সুমনা বললো,
“দুলাভাই আপনি মাহিরা আপু আর বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় চলে যান। আমি,মুসকান আর আকাশ ভাইয়া তো আছিই।”
সুমনার সাথে মুসকানও বললো,
“হুম,আপনি চলে যান। এমনিতেই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে প্রায়।”
সবার জোরাজুরিতে শাওন মাহিরা আর বাচ্চাদের নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
.
.
.
বাসায় আসার পর আকাশ আর মুসকানের আম্মুর সে কি হুরোহুরি কান্ড।আফনানের কিভাবে এমন হলো,কেনো হলো,বাকি সবাই কোথায় ছিলো,বেশি ব্যাথা আছে নাকি?এসব জিজ্ঞাসা করতে করতে সবার অবস্থা ১২টা বাজিয়ে দিয়েছে এ দুজন।
আফনান তার বাবা মা কে এই এক্সিডেন্ট এর কথা বলতে মানা করেছে কারন তারা অযথাই চিন্তা করবে।
আকাশের আম্মু আফনানকে বলে,
“আফনান,তুমি এখন রেস্ট নাও।বেশ ব্যাথা পেয়েছো তো।রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। আর পিঠে এই বামটা আকাশ লাগিয়ে দিবে।”বলে উনি আকাশের হাতে বাম দিলেন।
আফনান বললো,
“আন্টী,আমি বেশিক্ষণ রেস্ট নিবো না। কারন আমি এখন একদম সুস্থ বোধ করছি।আর যে ব্যাথা আছে হাতে পায়ে তা ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। আর পিঠের ব্যাথার জন্য আকাশ বাম লাগিয়েই তো দিবে।আর আপনারা কেউ প্লিজ এতো টেনশন করবেন না।প্লিজ।আমার জন্য সবাই বেশ টেনশনে ছিলো এখন তো আমি সুস্থই তো একদম টেনশন ফ্রি হয়ে যান সবাই।”
মুসকানের আম্মু বললো,
“সত্যি বলছো তো??সুস্থই তো?নাকি আমাদের রুম থেকে বের করার ধান্ধা আঁটছো??”
আফনান হেসে বললো,
“আরে না, আন্টী।আমি একদম সত্যি বলছি।আমি ফিট এন্ড ফাইন আছি।”
সবাই রুম থেকে চলে গেলেও মুসকান থেকে যায়।সে আড়চোখে আফনানকে দেখছিলো।আফনান মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো??”
“আপনার মিথ্যাটা ধরার চেষ্টা করছি।”
“মানে??আমি মিথ্যা কি বললাম?”
“এই যে,আপনি এখন সুস্থ।”
আফনান ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
“আরে এতে মিথ্যার কি হলো??আমি সত্যিই সুস্থ।এখন কি আমি ক্রিকেট খেলে দেখাবো নাকি??”
মুসকান রুমের বাইরে যেতে যেতে বলে,
“না না থাক।ওতো খেলাধুলা করতে হবে না।আপাতত রেস্ট নিন।আমি আসি।”বলে রুমের দরজা লাগিয়ে চলে গেলো মুসকান।
মুসকান চলে যাওয়ার পর আকাশ আফনানের পিঠে বাম লাগাতে লাগাতে বললো,
” আমার মনে হয় মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে।”
“এতে মনে হওয়ার কি আছে।সত্যিই ও আমাকে ভালোবাসে। আজকে ওর রিয়েকশন দেখলি না??”
“হুম,চোখে পানি চলে এসেছিলো ওর।”
আফনান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“দোস্ত,আমি একটা কথা ভাবছি।”
আকাশ আফনানের সামনে এসে বসতে বসতে বললো,
“কি কথা??”
“ভাবছি,আজকেই আমি মুসকানকে আমার মনের কথা বলবো।আর আজকেই বিয়ের জন্য প্রপোজ করবো ওকে।”
এটা শুনে আকাশ খুশি হয়ে বললো,
“বাহ দোস্ত,ঝাক্কাস আইডিয়া।আমার তো খুব ভালো লাগলো শুনে।মুসকান তো শকড হয়ে যাবে। বেশ ভালো একটা সারপ্রাইজ ওয়েট করছে ওর জন্য।”
“হুম।আমি তো শুধু মুসকানের রিয়েকশনের কথা ভাবছি শুধু।”
জোৎস্না রাতে ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে সবাই। শাওন,মাহিরা,মুসকান,সুমনা,আকাশ,আফনান,শিলা,মায়া আর তাদের হাসবেন্ড।
আফনানকে প্রথমে জানানো হয়নি এ কথা।কারন আজকে এক্সিডেন্ট করলো,তাই রেস্ট নেওয়া উচিত।কিন্তু কে শুনে কার কথা।আকাশ চেষ্টা করেও পারেনি তাকে আটকাতে।আকাশ নিষেধ করলে সে বলে,
“আমি মুসকানকে প্রপোজ করবো।আর এর চেয়ে বেটার মোমেন্ট আমার মনে হয় না আজকে আসবে।আর আমার ব্যাথাও কমে গিয়েছে একদম।”
আকাশ হাল ছেড়ে দিয়ে বলে,
“আচ্ছা চল।”
ছাদে বসে সব গল্পে ব্যস্ত।খাওয়াদাওয়ার চিন্তা নেই।কারন একেবারে রাতের খাবার খেয়েই বসেছে সবাই।
মুসকান তো শাওনকে ইচ্ছামতো প্রশ্ন করছে।তার সঙ্গ দিয়েছে শিলা,মায়া আর সুমনা।শাওনের অতিত নিয়ে যত কিছু জানা দরকার,যতটুকু জানা সম্ভব সব জেনে নিচ্ছে মুসকান। একদম খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করছে সব কথা শাওনের পেটের থেকে।
আফনান একদৃষ্টিতে মুসকানের দিকে তাকিয়ে আছে।মুসকানের কথা বলার ধরন,কথা বলার সময় হাত নড়ানোর ধরন সবই যেনো মোহিত করছে আফনানকে।
মনে মনে সে ভাবছে কিভাবে মুসকানকে প্রপোজ করবে সে।কিন্তু তার ভাবনার মাঝে এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে শিলা প্রশ্ন করলো আফনানকে।
“কি আফনান ভাইয়া আমার ননদকে এভাবে দেখছো কেনো??”
শিলার এ কথায় সবাই তার দিকে ফিরে তাকায়।
আফনান বললো,
“আরে না তেমন কিছু না।”
শিলা আত্মবিশ্বাস এর সাথে বললো,
“মিথ্যা বলবেন না। আমি কিন্তু শুরু থেকেই খেয়াল করছি।
আচ্ছা একটা কথা জানার ছিলো।”
“জ্বি বলেন।”
“গত পরশুর ডেয়ারটা কেমন ছিলো??”
শিলার কথা শুনে মুসকানের গলা শুকিয়ে এলো। সে ভাবতে লাগলো, তাহলে কি শিলা সব বলে দিবে এখন?গতকাল থেকে সে চেষ্টা করে আসছে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য।কিন্তু হয় পরিস্থিতি তার পক্ষে থাকে না, নাহয় নিজেরই এটা বলার কথা মনে থাকে না।আজকে বিকালে কিন্তু সে বলতে পারতো ডেয়ারের কথা। কিন্তু মনেই ছিলো না।মনে থাকবেই বা কিভাবে।এতো সুন্দর মূহুর্তে এসব উল্টাপাল্টা বিষয়ের কথা মনেই থাকে না।
আচ্ছা উনি এসব জানলে কি আমায় ভুল বুঝবে??
শিলার কথায় আফনান অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“মানে??কিসের ডেয়ারের কথা বলছেন?”
“মুসকানের ডেয়ারের কথা বলছি।”
আফনান ধৈর্যহারা হয়ে বললো,
“আমি কিছুই বুঝছি না। একটু ভালোভাবে বলুন।”
শিলা অবাক হয়ে বললো,
“সে কি আপনি জানেন না এ বিষয়ে??মুসকান আপনাকে বলে নি??”বলে শিলা মুসকানের দিকে তাকালো।
মুসকান ভয়ে,লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
শিলা আবারো বললো,
“মুসকান যে কালকে আপনাকে প্রপোজ করলো সেটা ডেয়ার ছিলো।মায়া ওকে ডেয়ার দিয়েছিলো।আমি তো ভেবেছি আপনি জানেন এ বিষয়ে।”
সব শুনে আফনান পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়।সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি এমন।সে তো ভেবেছিলো মুসকান সত্যিই তাকে ভালোবাসে।তাই সেদিন প্রপোজ করেছিলো সে।কিন্তু আসলো সব খেলা ছিলো!!সে খেলার একটা অংশ হয়ে কাজ করেছে!!
আফনান এর গলা দিয়ে যেনো কোনো আওয়াজ বের হতে চাচ্ছে না।সে কষ্ট করে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
“নাহ, আমি জানতাম না। এইমাত্র জানলাম।আপনাকে অনেক অনেক থ্যাংকস জানানোর জন্য।আপনি না জানালে হয়তো আমাকে কেউ জানাতোই না যে এসব খেলা ছিলো।কারোর মনের কথা না।”সব গুলো কথা মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো সে।
আফনানের মনে যে এখন কি ঝড় চলছে তা হয়তো কেউ বুঝতে পারছে না। কিন্তু আফনানের চেহারা দেখে কিছুটা বুঝতে পেরেছে মুসকান।নিজেকে এখন সবচেয়ে বড় দোষী মনে হচ্ছে মুসকানের।কারোর ফিলিংস নিয়ে এমনটা করলো সে!!ভাবতেই রাগ লাগছে তার।বৌভাতের দিন বলে দিলে কি এমন হতো??কেনো মনে ছিলো না তার??কেনো??
আফনান একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
“আমার একটা জরুরি ফোন কল করতে হবে।আমি চলে যাচ্ছি। আর খুব ঘুমও পাচ্ছে।”বলে সেখান থেকে উঠে চলে গেলো আফনান।
আফনান চলে যাওয়ার সময় মুসকানের মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজাটা ছিড়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে।প্রচুর কষ্ট হচ্ছে তার।তাহলে আফনানের কি অবস্থা হচ্ছে!!এটুকু সে বুঝে গিয়েছে যে আফনান তাকে ভুল বুঝেছে।কিন্তু এখন চাইলেও তো আফনানের পিছু পিছু গিয়ে কথা বলে ভুল ভাঙ্গানো সম্ভব নয়।কারন এখানে সে একা বসে নেই।আরো অনেক মানুষ আছে।এখান থেকে উঠে গেলো তাকে হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।কিন্তু আফনানের এভাবে যাওয়া দেখে বসে থাকতেও ইচ্ছা করছে না তার।
অবশেষে সে ভাবলো যে কালকে সকালে কথা বলবে।
.
.
.
সারাটা রাত ঘুম হয়নি মুসকানের।সে অপেক্ষায় ছিলো কখন সকাল হবে আর কখন আফনানের সাথে কথা বলবে।
.
.
ভোরের দিকে একটু ঘুম এসেছিলো মুসকানের।কিন্তু বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারেনি সে।
সকাল হতেই সে আফনানের রুমের দিকে গেলো।কিন্তু আফনানকে পেলো না। কারন আফনান মুসকান আসার বেশ কিছুক্ষন আগেই নিজের বাসায় চলে গিয়েছে।
আফনানের যাওয়ার কথা শুনে মুসকানের কান্না চলে এলো।সে দৌড়ে নিজের রুমে এসে ওয়াশরুমের দরজা আটকিয়ে ইচ্ছামতো কান্না করেছে।কি করে সে আফনানের ভুল ভাঙ্গাবে??কি করে বলবে যে আফনানকে সে কতোটা ভালোবাসে।আচ্ছা আফনান কি বুঝবে??
#চলবে