#এই_সাঝঁবেলাতে_তুমি_আমি🍁
পার্ট ১০
#সারা_মেহেক
🍀🍁
একটু সকাল করেই ছেলের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সবাই।সবচেয়ে বেশি তাড়া মুসকানের। মনে হয় তার আপুকে তাড়াতাড়ি না আনলে ফুড়ুৎ করে উড়াল দিবে।
দুপুরে খাওয়াদাওয়া শেষেই সব ছেলের বাড়ী থেকে রওনা দেয়।আসতে খুব একটা সময় লাগে না।
মুসকান আর সুমনা প্ল্যান করে রেখেছে যে নতুন দুলাভাইকে নিয়ে সবাই বাড়ীর থেকে একটু দূরে যে নদীটা আছে সেখান দিয়ে ঘুরবে।
বাড়ীতে আসার পর ভালোভাবে বিশ্রামও নিতে দেয়নি মাহিরা আর শাওনকে।হুরোহুরি করে রেডি হতে বললো মুসকান।বাড়ীতে মেহমান এখন একটু কম। আজকেই অনেকে চলে গিয়েছে।নাহলে বাড়ীভর্তি মেহমান থাকলে মুসকান হয়তো সাহস করতো না বিকালবেলা নদীর ধারে ঘুরতে যাওয়ার জন্য।
বাড়ী থেকে হেঁটেই এসেছে সবাই। সবাই বলতে মুসকান,সুমনা,মাহিরা,শাওন,আকাশ,আফনান, রুমা আর ছোটো দুইটা কাজিন।
মাহিরা আর শাওন সবার থেকে বেশ খানিকটা পিছে পিছে হাটছে।শাওনের প্রথমে একটু রাগ হলেও নদীর পারের ঠান্ডা হাওয়া তার রাগটা একদম কমিয়ে দিয়েছে।মাহিরা আর সে গল্প করতে করতে হাঁটছে।মাহিরা বিষয়টা বেশ ইনজয় করছে। প্রিয়জনের সাথে হয়তো পাশাপাশি এভাবে হাঁটতে গেলে এমনই অনুভব হয়।
সুমনা,আকাশ,মুসকান,আফনান পাশাপাশি হাঁটছে। নদীর পারের এ জায়গাটা বেশ চওড়া বলে পাশাপাশি ৪জন হাঁটতে পারছে।
আজকে হালকা একটু গরম পরেছিলো।কিন্তু নদীর পারে এসে পুরো শরীরটাই ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে সবার।মন, মেজাজ বেশ ফুরফুরে সবার।
আকাশ হঠাৎ মুসকানকে বললো,
“সম্পর্ক সময়ের সাথে সাথে কতো বদলিয়ে যায় তাইনা??”
মুসকান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মানে বুঝলাম না।”
আকাশ সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আগে আমি তোমাকে “তুই”করে সম্বোধন করতাম।আর তুমি আমাকে “তুমি”বলে। অথচ ১০বছরের ব্যবধানে ‘তুই’ হয়ে গিয়েছে ‘তুমি’ আর ‘তুমি’হয়ে গিয়েছে ‘আপনি’।
সবার ক্ষেত্রে ঠিক এর উল্টো হয়।”বলেই একটা মুচকি হাসি দিলো আকাশ।হাসি টা যেনো একদম হৃদয়ে গিয়ে লাগলো সুমনার।
মুসকান বললো,
“ঠিক বলেছেন।তবে হয়তো সময় যেতে যেতে আবারো আমাদের বন্ধুত্ব আগের মতো হয়ে যাবে।শুধু সময়টা দরকার।”
কিছুদূর হাঁটার পর আকাশ মুসকানকে বললো,
“জানো আমেরিকায় থাকতে আফনানের কতোটা গার্লফ্রেন্ড ছিলো??”
“গার্লফ্রেন্ড “শব্দটা শুনে মুসকানের যেমন রাগ হলো আবার তেমন খারাপও লাগলো।
আফনান রেগে আকাশকে বললো,
“বেটা সুন্দর একটা মূহুর্তকে কেমনে নষ্ট করতে হয় এটা ভালোই জানো দেখি তুমি।”
আফনানের কথা শুনে আকাশ দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো।
মুসকান একটু রেগে বললো,
“বলুন দেখি কতোজন।”
আকাশ ছোটো বাচ্চাদের আঙ্গুল গুনে গুনে কিছুক্ষন পর বললো,
“বেশি না।ওনলি ২০টা।”
আকাশের কথা শুনে মুসকানের রাগ যেনো এবার চরমে পৌঁছে গেলো।
আর আফনান তো অবাক।আকাশ যে এমন বাঁশ দিবে সেটা ভাবেওনি সে।সে তো ভেবেছে আকাশ সত্যটা বলবে।
আফনান আকাশকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই চলার পথে থেমে গিয়ে মুসকান আফনানের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“ঐ মিয়া,আপনি মানুষ তো খুবই খারাপ দেখছি। এতোগুলো গার্লফ্রেন্ড কে রাখে!!!ছি….আপনাকে আমি খুব ভালো মানুষ ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি তো তা নন।আপনাকে খুব হেল্পফুল, আর মেয়েদের সাথে ভালো ব্যবহার করা একজন মানুষ ভেবেছিলাম।কিন্তু আপনি তো মেয়েদের মন নিয়ে খুব ভালো খেলতে পারেন দেখি।”
আফনান বেচারা করুন চেহারা নিয়ে মুসকানকে বললো,
“আরে সেনোরিটা, আকাশের কথায় বিশ্বাস করো না। ও মিথ্যা বলছে।”
মুসকান এবার কোমড়ে হাত রেখে বলে,
“ওহ তাই। আকাশ ভাইয়া মিথ্যা বলবে কেনো শুনি??আপনি বলুন সত্যটা কি??”
পাশে থেকে আকাশ মুখ টিপে হেসেই যাচ্ছে।আকাশের এ হাসি দেখে আফনানের মন চাচ্ছে আকাশকে এ নদীর পানিতে নাকানি চুবানি দিতে।
আফনান বলতে যাবে সত্যটা তার আগেই আকাশ মুসকানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“আরে এতো হাইপার কেনো হচ্ছো ছোটো ময়না।আমি যাস্ট তখন মজা করছিলাম।আসলে আফনানের যাস্ট একটা গার্লফ্রেন্ড ছিলো। তাও ১সপ্তাহের বেশি টিকতে পারেনি।”
আকাশের এ কথা শুনে আফনান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।মুসকানের এবার রাগ হয়ে গেলো আকাশের উপর।সে বললো,
“তাহলে আপনি এমন ফালতু মজাটা করলেন কেনো??”
আকাশ সুমনার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার রাগের লেভেলটা দেখার জন্য।আমি আর সুমনা তো বিষয়টা বেশ ইনজয় করেছি।তাইনা সুমনা??”
সুমনা একটা হাসি দিয়ে বললো,
“হুম।বেশ ভালো লাগলো তোর রাগ দেখে।”
সবার এমন কাজ দেখে মুসকান এবার হাতে হাত গুটিয়ে মুখ ফুলিয়ে হাঁটতে লাগলো।মুসকানের এমন চেহারা দেখে আফনানের মন চাচ্ছে এমন গোলুমলু করে রাখা গালটায় আলতো করে একটা চুমু দিতে। কিন্তু এখন তো তা সম্ভব নয়।
কিছুদূর এগিয়ে মুসকান দেখতে পেলো রাস্তার অপর পাশে ফুচকা বিক্রি করছে।ফুচকা দেখে মুসকানের মুখে হাসি ফুটে গেলো।মুসকানের মুখে হাসি দেখে সুমনা বললো,
“কি রে এই মুখ গোমড়া করে রাখলি আবার হুট করে হাসছিস যে??”
মুসকান জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলে,
“সুমু, সামনে দেখ ফুচকাওয়ালা।”
এটা শুনে সুমনার মনও নেচে উঠলো।সে বুদ্ধি আটলো নতুন দুলাভাই থেকে ফুচকা খাওয়ার টাকা নিবে। সে তার এ আইডিয়াটা মুসকানকো জানালো। মুসকান এটা শুনে রাজিও হয়ে গেলো।
আকাশ আর আফনান পাশে দাঁড়ীয়েই গল্প করছিলো।কিছু সময় পরে মাহিরা আর শাওনও এসে যোগ দিলো তাদের সাথে।রুমা আর পিচ্চি দুইটা পাশেই দাঁড়ীয়ে।
শাওনকে দেখে মুসকান বললো,
“আমার ওয়ান এন্ড অনলি দুলাভাই,তোমার শ্যালিকা গুলোকে ফুচকা ট্রিট দাও।”
শাওনও বেশ রাজি হয়ে গেলো।কিন্তু আকাশ বললো,
“মুসকান,নতুন দুলাভাইর কাছ থেকে বড় রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে ট্রিট চাইবা।এতো কম টাকায় ছেড়ে দিলে হয় নাকি।”
আকাশের এ কথা সাথে মুসকান,সুমনা আর রুমা একমত হলো।আসলেই তো এতো কম টাকায় ছেড়ে দেওয়া যায়না।
সুমনা বললো,
“সেটা নাহয় মানলাম।কিন্তু এখন যে ফুচকা খেতে ইচ্ছা করছে সেটা??”
আকাশ ভাব নিয়ে বলে,
“কেনো আফনান খাওয়াবে।”
আকাশের কথা শুনে শুকনো একটা কাশি দিলো আফনান।সে বললো,
“আমি আমি কেনো??”
আকাশ বললো,
“সেদিন মুসকানের মেহেদি নষ্ট করে দিলি সেটার জন্য খাওয়াতে বলেছিলো না মুসকান মনে নেই??”
“হুম মনে আছে তো।”
“তো সেটার খাওয়াদাওয়া এখন হবে।”
আকাশের কথার সাথে তাল মিলালো মুসকান আর সুমনা।মুসকান বললো,
“হুম আপনাকে সেটার জন্য খাওয়াতে হবে।”
আফনান আর উপায় না পেয়ে বললো,
“ঠিক আছে চলো।”
আফনানের কথা শুনে সবাই বেশ খুশি হলো।
সবাই সামনের দিকে হাঁটছে আর আফনান আর আকাশ একটু পিছে হাঁটছে।
আফনান পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে টাকা দেখে আকাশকে বললো,
“দোস্ত, তুই এতো বাঁশ দিস কেনো??এতোগুলা মানুষকে ফুচকা খাওয়ানোর টাকা নেই আমার কাছে।”
আকাশ আফনানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
“চিল কর দোস্ত,আমি আছি না। আমি বাকি টাকা দিয়ে দিবো।আর শোন তোকে আজকে ফুচকা না খাওয়াতে বললে পরে রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গিয়ে খাওয়াতে হতো।তো ফুচকা খাওয়ানোতে অল্পের উপর দিয়ে টাকা যাবে তোর।আর রেস্টুরেন্ট এ গেলে কতো খরচ হতো ভেবেছিস??”
আকাশের কথা শুনে আফনান আকাশকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“দোস্ত ইউ আর গ্রেট।এতো চিন্তাও করে ফেলেছিস এটুকু সময়ের মধ্যে!!!থ্যাংকস আ লট।আমাকে বাঁচালি তুই।”
আকাশ আফনানকে তাড়াতাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“ঐ,তুই রাস্তাঘাটে এমন কাজ করলি কেন!!মানুষ কি ভাববে বলতো??”
আফনান হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“মানুষের তে খেয়েদেয়ে কাজ নেই এতো ভাবতে যাবে।
সে যাই হোক,বেচারা শাওনের যে কতে টাকা গচ্চা যাবে ভবিষ্যতে আল্লাহ জানে।”
আকাশ হেসে বলে,
“হুম।”
মুসকান আর সুমনা বেশ ইনজয় করে ফুচকা খাচ্ছে।মুসকানের খাওয়া দেখে আফনান ভাবছে, মনে হয় এ জগতে ফুচকার মতো মজাদার খাবার আর নেই।এতো কি টেস্টি খাবার এটা!!আমার তো দুটো খেলেই আর খেতে ইচ্ছা করেনা।এরা এতো খায় কিভাবে!!!!
ফুচকা খাওয়া শেষে সবাই এক এক করে রাস্তা পার হচ্ছে।
আকাশ আর আফনান রাস্তা পার হওয়ার সময় আফনান দেখলো দূর থেকে একটা ট্রাক আসছে।তখন তারা রাস্তার মাঝ বরাবার। আকাশ সামনপ আর আফনান পিছনে।আফনানের মনে হলো মূহুর্তের মধ্য ট্রাক কাছে চলে আসলো। সে ধাক্কা দিয়ে আকাশকে সরিয়ে দিলো।সেও সরে আসলো তবে সরে যাওয়ার আগে ট্রাকের সাইড দিয়ে হালকা একটু ধাক্কা লেগে রাস্তায় পরে গেলো আফনান।।
সবকিছুই এতোটা তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো যে কেউ কিছু বুঝতেই পারেনি।
আকাশকো ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে সে উঠে পরে।আর আফনানের পরার শব্দে সবাই পিছে ফিরে তাকিয়ে দেখলো আফনান পরে আছে।আফনান হাতে, পায়ে আর পিঠে একটু ব্যাথা পায়।আর রাস্তায় পরার জন্য হাত, পা ছিলে একটু একটু করে রক্ত বের হতে লাগলো তার।ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো সে।
কাছে আকাশ থাকায় সে তাড়াতাড়ি আফনানের পাশে গেলো।আফনানের এ অবস্থা দেখে মুসকান এক ছুটে আফনানের কাছে আসলো।আফনানের এ অবস্থা দেখে বুকে ছ্যাত করে উঠলো মুসকানের। সারা পৃথিবীই যেনো থমকে গিয়েছে কিছু সময়ের জন্য।সে আফনানের পাশে বসে বললো,
“এটা হলো কিভাবে??আপনি দেখে চলতে পারেন না??কচ্ছপের গতিতে হাঁটেন কেনো? দেখুন তো কি করেছেন!!!নিজের প্রতি কি একটুও মায়া নেই??আপনার এ অবস্থা দেখে যে অন্যজনের কি হবে তা ভেবেছেন একবারো??এতো কেয়ারলেস কেনো আপনি!!!”এসব বলতে বলতে চোখে দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরতে থাকে মুসকানের।
মুসকানের চোখের এ পানি দেখে আফনান একটা খুশির হাসি দেয়।তৃপ্তির হাসি দেয়।সে বুঝতে পেরেছে যে মুসকান তাকে কতোটা ভালোবাসে।
এদিকে মুসকানের কান্না দেখো মাহিরা মনে হাজারো প্রশ্ন চলতে থাকে।সে ভাবতে থাকে, তাহলে আসলেই কি মুসকান আফনানকে ভালোবাসে???
#চলবে