#এই_সাঁঝবেলাতে_তুমি_আমি🍁
পার্ট ৪
#সারা_মেহেক
🍀🍁
দরজা খুলে আফনান চলে যেতে লাগলো।দরজা খুলার আওয়াজে যেনো হুঁশ ফিরে মুসকানের। সে দরজার কাছে এসে আফনানকে জোরে বললো,
“ঐ বাংলাদেশের এসআরকে।এসব কি করলেন আপনি হুম!!!”
আফনান না থেমে যেতে যেতে বললো,
“কেনো আবার করে দেখাবো??”
আফনান থামলো না দেখে মুসকান আফনানের পিছে যেতে যেতে বললো,
“আপনার সাহস তো কম না!!!আমাকে এভাবে টাচ করার অধিকারটা কে দিলো আপনাকে!!!”
আফনান সিঁড়ির কাছে এসে বললো,
“শাড়ী যে পরেছো ঠিকভাবে পরলেই তো পারো।নাকি ঠিকভাবে শাড়ি পরতে পারো না??তোমার যে পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিলো সেটা কি একবারো খেয়াল করেছো??”
আফনানের এ কথা শুনে মুসকান অবাক হয়ে গেলো। কারন সে জানতোই না যে শাড়ীর ফাঁক দিয়ে তার পেট দেখা যাচ্ছিলো। একবার মনেও এসেছিলো যে ব্লাউজের সাথে শাড়ী পেটের কাছে সেফটিপিন দিয়ে আটকে রাখবে, কিন্তু পরে ভুলে যায়।নিজের উপর নিজের চরম রাগ লাগছে তার। না জানি কতো মানুষের চোখ পরেছে সেদিকে।আজকাল মানুষের নজর তো ভালো না।হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে মুসকান।নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছা করছে তার।
আফনান হাত গুটিয়ে শুধু মুসকানকে খেয়াল করছে।সে বুঝার চেষ্টা করছে যে মুসকান এভাবে হাত মুঠো করে কেনো রেখেছে। আর চোখটাও বন্ধ করে রেখেছে।আর ওভাবে উইদাউট এনি টক দাঁড়ীয়ে আছে কেনো??
অবশ্য এভাবে মুসকানকে আলতো করে চোখ বন্ধ করে রাখা দেখে আফনানের বেশ ভালোও লাগছে।
পরে আফনান মুসকানের কাছে গিয়ে চোখের সামনে একটা তুড়ি বাজালো। তুড়ির আওয়াজ শুনে মুসকান যেনো বাস্তবে ফিরে এলো। নিজের হাতের মুঠ খুললো সে।আর ধীরে ধীরে চোখটাও খুললো। এখন অনেকটাই রাগ কন্ট্রোল এ। ছোটো থেকে নিজের উপর রাগ হলে এভাবেই সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতো।
আফনান ভ্রু উঁচিয়ে মুসকানকে জিজ্ঞাসা করলো,
“এভাবে দাঁড়ীয়ে ছিলে কেনো??ভুতে ধরেছিলো নাকি?নাকি কিছু সময়ের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলে??”
আফনানের কথাগুলো শুনে মুসকানের আবারো রাগ হতে লাগলো। সে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কি বলবেন??আমি দাঁড়ীয়ে থাকি,পাগল হই,বা আমাকে ভুতে ধরুক সেটা আপনার জানার বিষয় না। ”
আফনান বললো,
“অবশ্যই আমার জানার বিষয়।”
মুসকান সন্দেহের সুরে বললো,
“আপনার জানার বিষয় কেনো?? কি করবেন টা কি হুম??”
“সেটা তোমার না জানলেও চলবে সেনোরিটা।”বলে পাঞ্জাবীর পকেটে হাত ঢুকিয়ে চলে যেতে লাগলো।
মুসকান আবার পিছন পিছন যেতে যেতে বললো,
“আচ্ছা সেসব না হয় বাদই দিলাম। আপনি কেনো আমাকে টাচ করে আমার শাড়ীর আঁচল ওভাবে খুললেন বলুন?আমাকে তো বলতে পারতেন আগে বিষয়টা।”
মুসকানের কথার কোনো জবাব না দিয়ে আফনান উল্টো দিকে ঘুরে মুসকানকে দেখতে দেখতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো।দুই নম্বর সিঁড়িতে এসে সে থেমে গেলো।হয়তো মুসকানের কথা কোনো জবাব দেওয়ার জন্য।কিন্তু পারলো না।
মুসকান আফনানের কোনো জবাব না পেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো কিন্তু শাড়ীর খোলা আঁচলে আটকে পরে যেতে নিলো। কিন্তু তার আগেই আফনান হাত দিয়ে মুসকানকে ধরলো।
এভাবে হুট করে পরার জন্য মুসকান ভয় পেয়ে গেলো। বুক ঢিপঢিপ আওয়াজ করে যাচ্ছে।কারন এভাবে দোতালার সিঁড়ি থেকে নিচে পরলে হাত পায়ের হাড় কতোগুলা যে ভাঙতো তার হিসাব হয়তো দেওয়া সম্ভব না।
আফনান ধীরে ধীরে মুসকানকে সোজা করে দাঁড়া করালো।মুসকান সোজা হয়ে দাঁড়ীয়ে শাড়ী, চুল ঠিক করতে লাগলো।আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
“এইজন্যই ঠিক এইজন্যই আমি শাড়ীর আঁচল সবসময় ভাঁজ করে পরি।”
আফনানের কানে মনে হয় মুসকানের বলা কথাগুলো গেলো। সে বললো,
“ঠিক আছে শাড়ীর আঁচল ভাঁজ করে পরো প্রবলেম নেই।কিন্তু সবদিকে খেয়াল রেখে পরো।”
আফনান আর কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো।কয়েক সিড়ি যাওয়ার পর আবারো দাঁড়ীয়ে পরলো। মুসকানের দিকে ঘুরে সে বললো,
“আর একটা কথা,সব প্রশ্নের জবাব জানতে হয় না সেনোরিটা।কিছু কিছু প্রশ্নের জবাব অজানা থাকাই ভালো।হয়তো সময়মতো জবাব পেতেও পারো আবার না ও।”বলে বাঁকা হেসে চলে গেলো।
আর মুসকান সেখানেই ঠাঁয় দাঁড়ীয়ে রইলো।আফনানের বলা কথাগুলো সে ভাবছে শুধু।
নিচে নামার পর আফনান আর মুসকানের বেশ কয়েকবার চোখাচোখিও হয়েছে।এ বিষয়টা বেশ কয়েকবার খেয়ালও করেছে সুমনা।অবশ্য এ বিষয়ের চেয়ে সে বেশি খেয়াল করেছে আকাশের উপর।আকাশের আজকের গেটআপে সুমনা ক্রাশ না খেয়ে পারলো না।তার কাছে আকাশের সবচেয়ে যে বিষয়টা ভালো লেগেছে তা হলো বারবার হাত দিয়ে নিজের মাথার চুলগুলো ঠিক করা।তার কাছে মনে হয়েছে একদম ফিল্মে যেভাবে নায়করা স্টাইল করে নিজের মাথার ঘন চুলে হাত বুলায় আকাশের ভাবটাও একদম সে রকম।যদিও আকাশকে সে এসব নায়কদের সাথে কম্পেয়ার করতে নারাজ। কারন আকাশকে তার কাছে একটা নায়কের থেকেও বেশি ভালো লাগে।আপাতত আকাশ তার ক্রাশ লিস্টের উপরে এখন।
সুমনা আনমনেই ভাবছে আচ্ছা আকাশ কি তার দিকে একবারো তাকিয়েছে?যদি তাকিয়ে থাকেও তাহলে কেমন লাগছে আকাশের কাছে সুমনাকে।এসব ভাবতে লজ্জায় লাল হয়ে এলো সুমনার মুখ।
পুরো অনুষ্ঠান বেশ ভালোভাবেই শেষ হয়ে গেলো।সবাই বেশ মজাও করেছে।
সন্ধ্যার দিকে সব বসে গল্পগুজব করতে লাগলো।
কিছুক্ষন বাদে মুসকানের আম্মু তনয়া বেগম জোরে চিৎকার করে মুসকানকে ডাকলো।এভাবে ডাকায় সবাই ভয় পেয়ে যায়।সবাই ভাবতে লাগলো কোনো বড় বিপদ আসে নি তো আবার!!
মুসকান তাড়াতাড়ি তার মার রুমে গেলো।পিছে পিছে বাদবাকি লোকজন।সবাই দেখলো তনয়া বেগম পুরো আলমারির কাপড় এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন।আলমারির কাছে কিছু একটা খুঁজছেন।
মুসকান তার মােয়র কাছ গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“এভাবে কি খুঁজছো আম্মু??”
তনয়া বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
“মাহিরার বিয়ের জন্য আনা গহনার সেট কোথায় মুসকান???পাচ্ছি না তো।”
তনয়া বেগমের এ কথা শুনে মুসকানের গলা শুকিয়ে এলো।সে কাঁপা কণ্ঠে বললো,
“আরে ভালো করে দেখো আম্মু পেয়ে যাবে।”
তনয়া বেগম আলমারির হাতরাতে হাতরাতে কান্না কণ্ঠে বললেন,
“কই পাচ্ছি না আমি। তোকে এ দায়িত্ব দিয়েছিলাম,তুই তো বললি এখানেই রেখেছিস। তাহলে এখন পাচ্ছি না কেনো??”
মুসকান তাড়াতাড়ি আলমারির কাছে গিয়ে গহনা খুঁজতে লাগলো। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে তার।কি হবে যদি এ গহনার সেট না পায়!!!
এদিক ওদিক করে খুঁজাখুঁজির পর মুসকানকেও হতাশ হতে হলো কারন সেও গহনা পেলো না।
মুসকানের এখন কান্না চলে আসছে।তাও অনেক কষ্টে কান্না আটকে রেখেছে সে।
সবার চেঁচামেচি শুনে নিজের রুম থেকে মাহিরাও চলে আসে। এসে দেখে এ কান্ড।সে তো হতভম্ব হয়ে গেছে।এতো টাকার গহনা তাহলে চুরি হয়ে গেলো!!!
মুসকানের চাচি উদ্বিগ্ন স্বরে বললো,
“পেয়েছিস মুসকান??”
“না চাচি।আমি তো এখানের লকারেই রেখেছিলাম।কিন্তু কোথায়……..”
পুরে কথ আর শেষ করতে পারলো না মুসকান। তার আগেই সজোরে একটা চড় পরলো তার গালে। আর চড়টা মেরেছেন তনয়া বেগম সবার সামনে।
তনয়া বেগম কান্না করছেন। রেগে চিৎকার করে করে মুসকানকে বললেন,
“একরা দায়িত্ব দিয়েছিলাম তোর উপর তাও তুই সামলাতে পারলি না। পারিস টা কি তুই?সারাদিন ধিং ধিং করে ঘুরে বেড়াতে দাও, এটা খুব পারবি। অথচ একটা দায়িত্ব, কাজ দিলে পারিস না।
এখন গহনাগুলে আনবি কোথাথেকে শুনি?এতো টাকার গহনা একদিনে তো আবার বানানো তো সম্ভবও না।আর এই মূহুর্তে এতো টাকা পাবোই বা কোথায়??”
মুসকান গালে হাত দিয়ে কান্না করতে করতে বললো,
“আম্মু আমি সত্যিই জানি না কোথায় গহনা।আমি এখানেই রেখেছিলাম।”
এ কথা শুনে তনয়া বেগম আবার মারতে গেলেন মুসকানকে, কিন্তু তার আগেই মুসকানের চাচি মুসকানকে সরিয়ে নেন।আর মুসকানের খালা গিয়ে ধরেন মুসকানের আম্মুকে।
তনয়া বেগম চিল্লিয়ে বলেন,
“এখনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা বলছি।এখনি।”
মুসকান আর কিছু না বলে নিজেকে চাচির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে সিড়ি বেয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে গেলো।
চিৎকার চেঁচামেচিতে রুম থেকে বের হয়ে নিচে যেতে যাবে আফনান,কিন্তু তার আগেই সে দেখলো মুসকান কান্না করতে করতে ছাদে গেলো।এদিকে আকাশ মাথাব্যাথার ওষুধ খেয়ে ঘুৃেৃম ব্যস্ত।এতোকিছু হয়ে গেলো অথচ সে টেরই পেলো না।
ছাদে দাঁড়ীয়ে নিঃশব্দে কান্না করছে মুসকান।বার বার চোখের পািন মুছছে।
এদিকে সুমনা মুসকানকে খুঁজতে খুজতে গার্ডেনে গেলো।গার্ডেনে না পেয়ে সে নিচ থেকে ছাদের দিকে তাকালো।আর মুসকানকে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। মুসকান নিচের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।সুমনা মুসকানকে ইশারা করে বললো যে সে আসছে ছাদে।
.
.
.
কিছুক্ষন পর মুসকান অনুভব করলো যে কেউ তার কাঁধে হাত রেখেছে।মুসকান কিছু না বলে চোখ বন্ধ বন্ধ করে কান্না করতে করতে সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।তবে এবার নিঃশব্দে নয়। হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো সে।কান্না করছে তো করছেই। এ কান্না যেনো শেষ হচ্ছে না। কারন এতোগুলো মানুষের সামনে তার মা তাকে এভাবে থাপ্পড়টা মারবে ভাবতেও পারেনি সে।
প্রায় ১০মিনিট এভাবে কান্না করতেই থাকে মুসকান।যাকে জড়িয়ে ধরে যে সে এভাবে কান্না করছে তার জামা যে চোখের পানিতে ভিজে গিয়েছে তা সে খেয়াল করেনি।
কান্না ধীরে ধীরে কমে যেতে লাগলো মুসকানের।সে খেয়াল করলো তার নাকে পুরুষ মানুষের পারফিউম এর গন্ধ লাগছে।তারপরও আবার খুব কাছে।বলা যায় একদম কাছে।এতোক্ষন কান্না করতে করতে হুঁশই ছিলো না তার।তাই হয়তো এতোক্ষন ঘ্রাণটা খেয়াল করেনি সে। কি চিন্তা করে সামনে থাকা ব্যক্তিটা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো সে। এরপর সামনে তাকাতেই চমকে গেলো সে।
কারন সামনে থাকা ব্যক্তিটা আফনান।তাহলে সে এতোক্ষন একে ধরে কান্না করছিলো!!!সে তো ভেবেছিলো এটা সুমনা।কারন সুমনাই তো উপরে আসছিলো।সে ভাবতেও পারেনি এখানে আফনান হবে।আর তাকে জড়িয়ে এভাবে কান্না করবে সে।খুব লজ্জা লাগছে তার।খুবই লজ্জা। এর জন্য আফনানের সোজাসুজি তাকাতেও পারছে না।মাথা নিচু করে রেখেছে সে।মাথা নিচু করে রেখেই সে বললো,
“আই এম সরি। সো সরি।আমি বুঝতে পারেনি যে আপনি হবেন।আমি তো ভেবেছিলাম সুমনা।”
আফনান ধীর গলায় বললো,
“ইটস ওকে সেনোরিটা।প্রবলেম নেই।”
আফনানের কথা শুনে মুসকান অবাক হয়ে যায়।কারন সে ভেবেছিলো আফনান হয়তো রাগ করবে।
আফনানের বলা শেষ শব্দটা”সেনোরিটা”,মুসকানের কানে এখনো বাজছে।কেনো যেন এই সম্বোধনটা মন ছুৃঁয়ে দিলো মুসকানের। এতে সুন্দর করে আফনান “সেনোরিটা” বলেছে,মন চাচ্ছে বারবার শুনি।
চলবে….