#এই_সাঁঝবেলাতে_তুমি_আমি🍁
পার্ট ২
#সারা_মেহেক
🍀🍁
নিজের রুমে গিয়ে ধড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিলো মুসকান।প্রচন্ড রাগ লাগছে তার। এভাবে একজনকে সরি বললো,কিন্তু সে সরি একসেপ্টই করলো না!!এতো কিসের দেমাগ!!
নিচে থেকে সবাই মুসকানের জোরে করে দরজা আটকানোর আওয়াজ শুনতে পেলো।মুসকানের ফুপি বিড়বিড় করে বললো,
“নেও,মেয়ের আজকে তো তাহলে সেই রাগ উঠেছে। আমার উপর না কতোক্ষন রাগ করে থাকে।”
কিছুক্ষণ পর মুসকানের বাবা আফজাল সাহেব এসে দেখলো দুটো ছেেল চুপচুপে ভিজা অবস্থায় দাঁড়ীয়ে আছে।তিনি তৎক্ষণাৎ আকাশকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোমরা কারা বাবা??এখানে এ অবস্থায় দাঁড়ীয়ে আছো কেনো??”
আকাশ জবাব দিলো,
“আংকেল আমি আকাশ।মিজান আহমেদের ছেলে।চিনেছেন?”
বন্ধু মিজানের ছেলে আকাশকে এতোদিন পর থেকে খুশিতে চোখ চকচক করছে আফজাল সাহেবের।নিজেই ভাবছেন,এতোটুকু ছেলেটা কতো বড় হয়ে গেলো দেখতে দেখতে।
আফজাল সাহেব সে এক হুলস্থুল কান্ড বাধিয়ে দিলেন।আকাশকে বললো,
“তুমি এখানে কতোক্ষন দাঁড়ীয়ে আছো এমন ভিজা অবস্থায়?? ”
আফজাল সাহেব জোরে করে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
“কি ব্যাপার সব কই??এখানে যে দুটো ছেলে ভিজা অবস্থায় দাঁড়ীয়ে আছে কারোর চোখে পরে না নাকি?? কতোক্ষন ধরে এভাবে দাঁড়ীয়ে আছে!!ঠান্ডা লেগে গেলে তখন??”
তিনি বাড়ীর কাজের মেয়ে মিনাকে বললেন,
“বাড়ীর মানুষ যে এসেছে সেদিকে খেয়াল করেছিস একবারো?”
মিনা আমতা আমতা করে বলে,
“কাকা,আমি তো ওদিকে ঘর গুছানো তে ব্যস্ত ছিলাম।”
মুসকান রেগে চলে যাওয়ার পর যারা যারা এসেছিলো মুসকানের কান্ড দেখতে তারা সবাই চলে যায়। কারন তাদের অনেক কাজ। কালকে গায়ে হলুদ,আবার তার একদিন বাদে বিয়ে। বিয়ে যেহেতু বাড়ীেতই হবে তাই সবার কাজ একটু বেশিই। মাহিরার সব দেবররা শুধু আফজাল সাহেবের ব্যাকুলতা দেখছে।
আকাশের প্রতি আফজাল সাহেবের ভালোবাসা সেই ছোটো থেকেই।আকাশকে একদম নিজের ছেলের মতো ভালোবাসেন তিনি।আকাশ আর আফনানকে আফজাল সাহেব দোতালার একটা রুম দেখিয়ে বললেন,
“তোমরা বিয়ে পর্যন্ত এখানেই থাকবে।আসলে আকাশ,তোমাদের বাড়ীতে অনেক মেহমাম আছে তো।তাই তোমদের জন্য এই রুমটা।সমস্যা হবে না তো? হলে বলো।”
আকাশ বিনয়ী সুরে বললো,
“আরে আংকেল কোনো সমস্যা হবে না।আর বিয়ে বাড়ী তে,একটু ছোটোখাটো ঝামেলা হবেই,এটাই স্বাভাবিক। ”
জবাবে আফজাল সাহেব শুধু একটু হাসি দিলেন।
আফনান কে লক্ষ করে উনি বললেন,
“আসলে বাবা তোমাকে চিনতে পারলাম না।আকাশকে চিনি তো তাই আকাশের প্রতিই একটু বেশি নজর দিচ্ছি।তুমি কিছু মনে করো না।”
আফনান আফজাল সাহেবের হাতের উপর নিজের দুহাত রেখে বললো,
“আরে,আংকেল,আপনি তো অনেক ফর্মাল দেখছি।এসবে মনে করার কিছু নেই।
আর আমি আকাশের ফ্রেন্ড আফনান।আমি আপনদের বাড়ীতে কয়েকবার এসেওছিলাম তো আকাশের সাথে।আপনার হয়তো মনে নেই।”
আফজাল সাহেব বললেন,
“আসলে বয়স হয়ে গিয়েছে তো।অনেক কিছুই ভুলে যাই।সে যাই হোক,তোমরা তাহলে রুমে যাও।আমি নিচে যাচ্ছি।কাজ আছে তো অনেক।”
বলে মুসকানের রুমের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেন,
“আর তোমাদের কোনো প্রকার সমস্যা হলে আমার ছোটো মেয়েকে বলো।ও ঐ রুমে থাকে।”
আফনান বললো,
“ঠিক আছে আংকেল।”
এরপর আফনান আর আকাশ রুমে চলে আসলো আর আফজাল সাহেব নিচে চলে গেলেন।
.
.
রুমে ঢুকে বিছানার দিকে চোখ পরতেই আফনান এগিয়ে গেলো।এমনিতেই তো কম ধকল যায়নি তাদের উপর,তারপর আবার বিছানা দেখে এমনিই গা এলিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে।
আফনান যেই না শুইতে যাবে তার আগেই আকাশ আফনানের হাত ধরে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিলো।আকাশের এমন হুটহাট কাজে আফনান আলসেমো নিয়ে বললো,
“দোস্ত,আমি খুবই ক্লান্ত।আমাকে একটু ঘুমাতে দে।”
আকাশ রাগি গলায় বললো,
“নিজের দিকে তাকিয়েছিস একবারও??
এ অবস্থায় তুই শুইবি কিভাবে শুনি?যা আগে শাওয়ার দিয়ে নে। তারপর।আর হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি করবি।”
আফনান ঘুম ঘুম চোখে বলে,
“ঠিক আছে।”বলে ওয়াশরুমের দরজা আটকিয়ে দেয়।আর আকাশ দাঁড়ীয়ে দাঁড়ীয়ে মোবাইল নিয়ে টিপতে থাকে।
.
.
.
.
অনবরত দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভাঙে আফনানের।
আধো আধো চোখ খুলে সে চারপাশ দেখে নেয় আগে। পাক্কা ১মিনিট সময় লেগেছিলো তার এই বুঝতে যে, সে এখন বাংলাদেশ এ এবং আকাশের বাড়ীতে।না না আকাশের বাড়ীেত বললে ভুল হবে। সে তো এখন ঐ ঝগড়াটে মেয়ের বাড়ীতে।
ভালোমতো চোখ খুলে সে দেখলো আকাশ মুখ হা করে ঘুমাচ্ছে।আকাশের এভাবে ঘুমানো দেখলে অটোমেটিক আফনানের মুখে হাসি চলে আসে।যখন থেকে আমেরিকায় থাকে তখন থেকেই আকাশের এ অভ্যাস সম্পর্কে জানে সে। এ নিয়ে তো কয়েকবার সে প্র্যাঙ্ক ও করেছে। আকাশকে এ নিয়ে অনেক বলেছে,কিন্তু আকাশের এ অভ্যাস ঠিক হওয়ার মতো না।
দরজায় আবারো নক পরায় আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে দরজার কাছে এগিয়ে যায় খুলার জন্য।
দরজা খুলেই আফনান দেখতে পেলো একজন মধ্যবয়সী মহিলা খাবার ট্রে হাতে দাঁড়ীয়ে আছে।মুখে মিষ্টি হাসি।
আফনানের দরজা খুলার পর তিনি বললেন,
“সেই কখন থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছি। যাই হোক,দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো,তোমরা ঘুমিয়ে ছিলে বলে এতোক্ষন ডিস্টার্ব করিনি।
এখন খাওয়াদাওয়া করে নাও।”
আফনান হাসি মুখে সেই মহিলার কাছ থেকে খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে বললো,
“আমাদের ঘুমের জন্য আপনাকে এতোক্ষন দরজার বাইরে দাঁড়ীয়ে থাকতে হলো সে জন্য সরি।আর আপনি বাইরে কেনো ভিতরে আসুন আন্টী।”
সেই মহিলাটা মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলেন,
“আরে না,সমস্যা নেই। এমনিতেই অনেক কাজ পরে আছে তা করতে হবে।
আর তুমি আমাকে চাচি বলতে পারো।আমি নাজমা, মাহিরার বড় চাচি।”
আফনান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো নাজমা আক্তারের দিকে।যার সোজা মানে এই দাঁড়ায় যে মাহিরা নামক মেয়েটিকে সে চিনে নি।নাজমা আক্তার ঠিকই ধরতে পারলেন আফনানের সমস্যা।তিনি বললেন,
“আরে যার বিয়ে আরকি। সে মেয়ের নাম মাহিরা।”
আফনান একটা বোকা হাসি দিয়ে বললো,
“ওহ,বুঝতে পেরেছি।”
নাজমা আক্তার আফনানকে খাবার খেতে বলে নিচে চলে গেলেন।
মুসকান আর সুমনা গল্প করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে আসছিলো।আফনান দরজা লাগায়নি তখনো।
রুমের দিকে যাওয়ার পথে মুসকান আফনানের রুমের দিকে তাকাতেই আফনানের সাথে তার চোখাচোখি হয়ে যায়।মুসকান লজ্জা পেয়ে সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নেয়।
এদিকে আফনান মুসকানের লজ্জামাখা মুখের দুকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সে যে কেনো তাকিয়ে আছে তা সে নিজেও জানে না।
মুসকান তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
আফনানও দরজা বন্ধ করে দেয়।
রুমে ঢুকে দরজা লাগানোর সাথে সাথেই মুসকান সুমনাকে জিজ্ঞাসা করে ,
“ঐ রুমে ঐ ছেলেটা কে রে?”
সুমনা জবাব দিলো,
“আমি কিভাবে জানবো।”
মুসকান আর সুমনা,দুজনই জানে না যে এটা তাদের সকালের সেই ভুল টার্গেট।জানবেই বা কি করে,আকাশ আর আফনানের যে চেহারা সুরুতের অবস্থা ছিলো তাগে চেনার কথাই না।আবার মুসকান জানেও না যে ঐ রুমে কাউকে থাকতেও দিয়েছে।
সুমন কিছুক্ষন ভেবে বললো,
“ওয়েট,চাচিকে তখন নিচে নামতে দেখলাম। মনে হয় উনি ঐ রুমে গিয়েছিলো।উনাকে জিজ্ঞাসা করলেই তো জানা যাবে।আমি না হয় জিজ্ঞাসা করে আসি।”
মুসকান ফোন টিপতে টিপতে বললো,
“আচ্ছা যা।”
কিছুক্ষন পর সুমনা হাঁপাতে হাঁপাতে রুমে প্রবেশ করলো।সুমনার এই অবস্থা দেখে মুসকান বললো,
“কি ব্যাপার ম্যারাথন দিয়ে আসলি নাকি?”
সুমনা হাঁপাতে হাঁপাতে জবাব দিলো,
“বনু,ঐ রুমে আকাশ আর আফনান ভাইয়া আছে।দরজার কাছে তখন যে দাঁড়ীয়ে ছিলো ওটা আফনান ভাইয়া আর আরেকটা আকাশ ভাইয়া।সকালে এরাই আমাদের টার্গেট হয়েছিলো।”
সব শুনে মুসকান হতভম্ব হয়ে গেলো। কারন সে আকাশকে এখানে একদমই আশা করেনি।আকাশ নামক ব্যক্তিটা ছোটোবেলাতেই তার কাছে এক প্রকার ঘৃনার পাত্র হয়ে গিয়েছিলো। হবেই না বা কেনো।আমেরিকায় যাওয়ার আগে মুসকানের সাথে কি রাগারাগি ই না করে গিয়েছিলো।ছোটোবেলায় আকাশের সাথে কাটানো প্রায় সব ঘটনাই প্রায় মনে আছে তার।কতোই না স্মৃতি ছিলো ছোটোবেলার।
আকাশের সাথে মুসকানের ছিলো গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পাশাপাশি বাড়ী থাকায় একসাথে কতো খেলেছে তারা।আকাশ মুসকানকে মোটামুটি সব কাজেই সাহায্য করতো।মুসকানের হোমওয়ার্কেও কতো সাহায্য করেছে আকাশ।মুসকান বকা শুনলে আকাশের কাছে গিয়ে কান্না করতো।
আকাশের বন্ধু হওয়ায় আফনান ও মাঝে মাঝে দেখা করতো মুসকানের সাথে।
মুসকানের বয়স যখন ১০,তখন আকাশের বয়স ১৭।আকাশের বাবার ইচ্ছা ছেলে আমেরিকা থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করবে।আফনানের বাবারও একই ইচ্ছা।তাই আকাশ আর আফনানকে একসাথে আমেরিকায় পাঠানো হয়।
আমেরিকায় যাওয়ার আগের দিন রাতের বেলা একটা খাতা আর বই নিয়ে অঙ্ক বুঝার জন্য মুসকান আকাশের কাছে আসে।আকাশ তখন ব্যাগ গুছাচ্ছিলো।মুসকান কাঁদোকাঁদো গলায় বলে,
“আকাশ ভাইয়া,তুমি চলে গেলে আমাকে পড়া বুঝিয়ে দিবে কে?আমাকে প্রতিদিন চকলেট কে খাওয়াবে?”
আকাশ মুসকানের হাত ধরে বেডে বসিয়ে বলে,
“টিচার তো আছেই। আর আমি আংকেলকে বলে দিবো তোর জন্য প্রতিদিন চকলেট কিনে দিেত।ওকে মুসি?(আকাশ মুসকানকে মুসি বলতো।আফনানের কাছে এ ডাকটা খুব কিউট লাগতো বলে সেও মুসকানের সাথে দেখা হলে মুসি বলতো।)
মুসকান কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ায়।মুসকানকে রেখে আকাশ ব্যাগ গুছানো শুরু করে আবার।
হঠাৎ মুসকান খেয়াল করলো আকাশের ব্যাগের পাশে কার যেনো ছবি।সে ছবিটি হাতে নিয়ে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষন করতে করতে আকাশকে বললো,
“আকাশ ভাইয়া,এই মেয়েটা কে?”
আকাশ মুসকানের হাতে ছবি দেখে আলমারি থেকে কাপড় বের করে নিয়ে তাড়াতাড়ি এসে বলে,
“তুই এই ছবি ধরতে গিয়েছিস কেনো!!”
“বাইরে দেখলাম তাই।বলোনা এই মেয়েটা কে?”
আকাশ ভাবলো মুসকান যখন ছবি পেয়েই গিয়েছে তখন আর সব লুকিয়ে কি লাভ।সে বলে,
“এটা তোর হবু ভাবি।”
ভাবি শব্দটা শুনে মুসকানের চোখেমুখে একপ্রকার চমক দেখা গেলো।সে বললো,
“ওয়াও,ভাবি!!! অনেক সুন্দর তো দেখতে।নাম কি?”
আকাশ ছবির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
“লাবনি।”
“নামটা তো অনেক সুন্দর।”
“হুম।আর শোন,মুসকান তুই লাবনির কথা কাউকেই বলনি না এখন ওকে?প্রমিস কর।”
“ওকে প্রমিস।”
এরপর আকাশ ছবিটা বিছানায় রেখে আবার কাপড় আনতে গেলো।আর মুসকান তার বই খাতা গুছাতে লাগলো।বই খাতা গুছাতে গুছাতে কোনো একভাবে লাবনির ছবিটা মুসকানের বই খাতার ভাঁজে চলে যায়।কিন্তু সে এ সম্পর্কে একদমই অবগত ছিলো না।
রুম থেকে যাওয়ার আগে আকাশ মুসকানকে বলে,
“মুসি,দোকানে চল।তোকে চকলেট কিনে দেই।”
মুসকান খুশি হয়ে জবাব দিলো,
“ওকে চলো।”
বাইরে হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।আস্তে আস্তেই বৃষ্টি পরছিলো।আকাশ এই জন্য ছাতা নিয়ে বের হলো।
দোকানের এসে অনেকগুলা চকলেট কিনে দিলো মুসকানকে।মুসকানের হাতে তখনো বই খাতা ছিলো।
হঠাৎ করে আকাশের গায়ের সাথে ধাক্কা লেগে মুসকানের হাত থেকে বই খাতাগুলো সব পাশের ড্রেনে পরে যায়।আকাশ এটা দেখে বই উঠানোর জন্য ড্রেনের দিকে এগিয়ে যায়।এ দেখে মুসকান কান্না করতে করতে বলে,
“আকাশ ভাইয়া,আমার বই খাতা তো পরে গেলো।”
“আরে আমি উঠিয়ে দিচ্ছি।”
বলে পাশে থাকা একটা ছোটো গাছের ডাল দিয়ে বই খাতা আটকানোর চেষ্টা করছে।কিম্তু বড় ড্রেনের পানিতে হালকা স্রোত থাকায় আর বই খাতা আনতে পারে না সে।
পানির জন্য খাতার ভাঁজ থেকে লাবনির ছবিটি বের হয়ে যায়।আকাশ তে লাবনির ছবি দেখে চমকে উঠলো।লাবনির ছবি এখানে আসলো কি করে সেটা ভাবতে ভাবতে সে ছবিটা নেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলো।কিন্তু পানির সাথে লাবনির ছবিটা চলে গেলো।
এ দেখে আকাশের কান্না আসার মতে অবস্থা হয়ে গেলো।তার প্রথম পছন্দ লাবনি। লাবনিও তাকে খুব পছন্দ করতো।তাই ই তো দুজনের ছবি আদান প্রদান হয়েছিলো।আকাশ ভেবেছিলো আমেরিকা যাওয়ার সময় এ ছবিটাও সাথে নিয়ে যাবে।কিম্তু তা আর হলো কই।এ ছবিটা এতোদূর আসলো কি করে তা চিন্তা করতে করতে মুসকানের কথা মনে আসলো।কারন মুসকানের খাতার ভাঁজ থেকেই তো বের হয়েছে ছবিটা।
সে তৎক্ষনাৎ উঠেই মুসকানকে কষে এক চড় মারলো।
এভাবে হঠাৎ গালে চড় পরায় অবাক হয়ে গেলো মুসকান।এতো জোরে চড়টা মেরেছে যে ব্যাথায় কান্না চলে আসলো মুসকানের।সে কান্নারত অবস্থায় জিজ্ঞাসা করলো,
“আকাশ ভাইয়া,তুমি আমাকে এতে জোরে মারলে কেনো?”
আকাশ রেগে বলে,
“মারবো না তে কি আদর করবো?তোর কাছে লাবনির ছবি কি করছিলো?”
মুসকান অবাক হয়ে বললো,
“ভাবির ছবি আমি নিবো কেনো?”
আকাশ ধমক দিয়ে বললো,
“একদম মিথ্যা বলবি না।তুই না আনলে তোর খাতার ভাঁজ থেকে কিভাবে বের হলো ছবি?লাবনির দেওয়া একটা ছবি ই তো থাকতো আমার কাছে আমেরিকায়।তুই সেটাও রাখতে দিলি না।”
মুসকানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আকূশ ভিজতে ভিজতে বাড়ী চলে আসে।মুসকান সেখানেই দাঁড়ীয়ে কান্না করছিলো।
এরপর আমেরিকায় যাওয়ার আগে কেউই দেখা করেনি।সবাই এর কারন জিজ্ঞাসা করলেও আকাশ বা মুসকান কেউই এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এরপর থেকে আকাশ যে অল্প কয়েকবার দেশে এসেছিলো,তখন মুসকানের সাথে একবারের জন্যও দেখা হয়নি। হয় মুসকানের কোথায় চলে যেতো ঘুরতে না হয় সে ইচ্ছা করেই দেখা করতো না আকাশের সাথে।
মুসকানের মনে যেমন আকাশের জন্য প্রচন্ড ক্ষোভ ছিলো তেমন আকাশের মনেও মুসকানের জন্য প্রচুর রাগ ছিলো।
সময়ের স্রোতে আকাশ এ বিষয়টা কিছুটা ভুলে গেলেও মুসকানের চোখের সামনে এখনও অতিতের সেইদিনটা ভেসে বেড়ায়।কিছু সামান্য ভুল বুঝাবুঝির জন্য ছোটোবেলার সেই সুন্দর বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়।সেদিনকার সেই বৃষ্টির পানির সাথে ধুয়ে চলে যায় আকাশ আর মুসকানের বন্ধুত্বটা।
.
.
.
রাতের খাবারের জন্য ডাইনিং এ বসে আছে আকাশ আফনান সহ অনেকে।মানুষজন অনেক বেশি বলে একদল এসে খেয়েদেয় গেলে আরেক দল এসে বসলো।
ডাইনিং সম্পূর্ণ ভরে গিয়েছে।শুধু মুসকান আর সুমনার জন্য দুটো চেয়ার খালি আছে।
মুসকান সিড়ি দিয়ে নেমে ডাইনিং এর কাছে আসতেই আকাশের মা বলে,
“মুসকান আর সুমনা তোরা দুইটা আকাশের সামনের চেয়ারে বয়।”
আকাশের সামনের চেয়ারে বসতে হবে শুনে রাগ উঠে গেলো মুসকানের।কিন্তু এ রাগটা তার পেটের ক্ষুধার চেয়ে বড় না। তাই অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বে সেই খালি চেয়ারে বসতে হলো।মুসকান বসলো আফনানের সামনের চেয়ারে আর সুমনা বসলো আকাশের সামনের চেয়ারে।
আকাশের চোখেমুখে অনেক প্রশ্ন।সে ভাবছে এই ই কি সেই মুসকান।আকাশের মা মনে হয় আকাশের এ প্রশ্ন টা ধরতে পেরেছিলেন নাকি কে জানে।
তিনি মুসকানের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা কীে হঠাৎ বললেন,
“আকাশ এই হলো সেই মুসকান।তোর ছোটোবেলার বন্ধু।”
আকাশের মায়ের মুখে এ কথা শুনে আকাশ বিষম খেলো। সে আর আফনান চোখাচোখি করে অবাক হয়ে একসাথে বললো,
” এই সেই মুসি!!!!”
চলবে…