এই_ভালো_এই_খারাপ পর্ব-১৬+১৭

0
734

#এই_ভালো_এই_খারাপ(১৬)
#Jannat_prema

” আমি তখন বন্ধুদের সাথে স্কুল মাঠে ফুটবল খেলছিলাম৷ আমাদের স্কুলে তখন ভর্তি চলছিলো। জানুয়ারির শেষের দিকে। খেলার মাঝেই হঠাৎ আমার চোখ আটকালো সাদা ফ্রক পড়া একটা ছোট পিচ্চি পরির দিকে। যেনো আকাশ থেকে সে ধরনীর বুকে নেমে এসেছে। মেয়েটা তার বাবার হাত ধরে গেট দিয়ে ঢুকলো। কিন্ত আমি যে থমকে রইলাম। বন্ধুরা বল দেওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছে অথচ আমার সেদিক ধ্যানই নেই। জানতে পারলাম মেয়েটা আমাদের স্কুলে নতুন। আমারই ক্লাসের। শুধু গ্রুপটা আলাদা ছিলো। গ্রুপ সাবজেক্টগুলোতে আমরা আলাদা বসতাম৷ তখন ভালোলাগতো না আমার। বুঝতে পারলাম অল্প বয়সেই ক্রাশ নামক বাঁশটা খেতে যাচ্ছি। পরিচয় সুত্রে জানতে পারলাম মেয়েটার নাম ইনায়াত হোসেন ভোর। “ভোর” ঠিক ভোরের মতোই শীতল, সুন্দর। মেয়েটা হাসলে দারুণ লাগে। হালকা লম্বাটে ফর্সা বদন। ঘন কালো ভ্রুর নিচে ঘন পাপড়ি চোখ দুটো যখন হাসলে ছোট হয়ে যায় ভীষণ মায়াবী লাগে। দেখে বুঝা যেতো আমার ছোট। কত আর হবে দুই বছরের। আব্বুর ব্যবাসার কারণে নানান জায়গায় গেলে আমাদের নিয়ে যেতেন। এতে আমার পড়ালেখা অনেক পিছিয়ে যায়। অতশত বুঝি না। খালি ইচ্ছে করতো ওই ছোট্ট মিষ্টি ভোর পাখিকে দেখতে। আমি উঠেপড়ে লেগেছি মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব করতে। তবে সাহসে কুলতো না। এভাবে আমার এক বছর কেটে গেলো। অনেক সাহস যোগালাম। একদিন ভোরের কাছে গিয়ে বললাম হাই আমি আফিয়ান আবদ্ধ। মেয়েটা একটু অবাক চাহনিতে তাকালো৷ তাতেও যেনো কতশত মুগ্ধতা জড়িয়ে আছে৷ পরমুহূর্তে মেয়েটা হাসলো। সেও বললো,

” হাই আমি ইনায়াত হোসেন ভোর। তুমি এই ক্লাসের টপার না? ”

আমি মুচকি হাসলাম। মাথা নেড়ে বললাম,

” তুমি জানো কিভাবে? ”

” ক্লাসের বেশির ছেলেমেয়েরা তোমাকে নিয়েই আলাপ আলোচনা করে। সেই সুত্রে জানা। ”

” ওহ। সো উই আ’র ফ্রেন্ডস? ”

আমি হাত বাড়িয়ে বললাম। বুকের ভিতরটা উত্তেজনায় ফেটে পড়বে মনে হয়। কারণ আমি কখোনো সেধে কোনো মেয়ের সাথে কথা বা ফ্রেন্ডশীপ করতে যাইনি। ভোরই প্রথম। কেনো ওর প্রতি আমার এতো টান, মায়া, অনুভূতি জানিনা। জানতেও চাই না। ভোর কিছুক্ষণ আমার হাতের দিকে তাকিয়ে হেসে নিজেও হাত মিলালো৷ আমার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো হাসি। হাতের সাথে হাত মিলিয়ে ভোর বলে উঠলো,

” ফ্রেন্ডস। তবে আজকে থেকে আর তুমি নয়। তুই করেই বলবো। ”

আমি রাজি। সেখান থেকেই আমরা ফ্রেন্ডস। অথচ দিন দিন মেয়েটার প্রতি আমি দুর্বল হয়ে পড়তাম৷ সে জানতেও পারতো না। দু’জনেই হলাম বেস্ট ফ্রেন্ড। এভাবে আমাদের স্কুল লাইফ শেষ। কলেজেও দু’জনে একসাথে ভর্তি হলাম। ভাগ্যক্রমে একই কলেজে চান্স পেয়েছি। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। ভোরের কাছে ব্যাক্ত করলাম মনের সকল অনুভূতি। এটাই হয়তো আমার চরম ভুল ছিলো। ভোর না ছাড়া আর কিছু বলেনি সেদিন৷ কিন্তু তারপরের দিন থেকে মেয়েটার কোনো খোজ পাচ্ছিলাম না৷ প্রপোজ করায় যে ভোরকে হারিয়ে ফেলবো ভাবিনি। ভোরের টেনশনে আমার নাওয়াখাওয়া, ঘুম উঠে গেছে। এতে অল্প বয়সে যে কেউ এভাবে একজনের প্রেমে আসক্ত হতে পারে আমাকে দেখলে বুঝা যেতো। কলেজে সবার আগে গিয়ে উপস্থিত থাকতাম । কিন্তু ভোর আসতো না। ওর বাসার নিচেও গেলাম অথচ ওর দেখাটুকুও পেতাম না৷ পাগল পাগল লাগছিলো নিজেকে। কেনো বললাম নিজের মনের কথাগুলো। নিজের উপর রাগে জিদে চুল খামচে ধরে ফ্লোরে বসে পড়ে কেঁদে দিতাম। মনে হতো কত জনম আমি আমার ভোরকে দেখিনি। আমি আবারো কল লাগালম৷ হুট করে কলটা রিসিভ করলো ভোর।
খুশিতে তখন আমি কি করবো বলবো খুজে পেলাম না। কাতর স্বরেই বলে উঠলাম,

“আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলিস না, ভোর পাখি। আমার খুুব কষ্ট হচ্ছে তোকে ছাড়া। ভালোবাসি তোকে। আচ্ছা থাক তোকে আমায় ভালোবাসতে হবে না। তুই শুধু আগের মতো থেকে যা আমার পাশে। ”

মেয়েটা আমার কথা শুনে বুঝলো আমি কাঁদছিলাম৷ জিগ্যেস করলো আমি কাঁদছি। মিথ্যে বললাম৷ সেটাও কি সুন্দর অনায়াসে ধরে ফেললো৷ আমি বললাম আমাকে যখন এতো ভালো চিনিস তাহলে ভালোবাসলে ক্ষতি কি। ভোর ভাবলো যদি আমি বদলে যাই। বললাম তখন নাহয় তোর ভালোবাসায় শুধরে দিস। শেষে ভোর টালবাহানা করে যখন বললো ভালোবাসি। সত্যি তখন আমি থমকে গিয়েছিলাম৷ আমার পুরো পৃথিবীটাও যেনো থমকে আছে। আমার ভোর পাখিও আমাকে ভালোবাসে। খুশিতে রাতে ঘুমোতে পারিনি আমি৷ সবটা কেমন সপ্ন সপ্ন লাগছিলো। আমার ভোর সে। শুধু আবদ্ধর ভোর। ”

আর কোনো লেখা পেলো না ভোর। কতটা অনুভূতি জড়িয়ে আছে এই লেখাগুলোতে। ভোর আরো কয়েক পাতা উল্টালো। না কিছু লিখা নেই৷ হয়ত আবদ্ধ আর লিখেনি। ভোর আবদ্ধর ডায়েরিটা বুকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে হাসলো। নিবিড় ভাবে অনুভব করল আবদ্ধর প্রত্যেকটা অনুভুতি। আবদ্ধ কতটা গভীর ভাবে ভালোবাসে তাকে। যে ভালোবাসাতে কোনো খুঁত নেই। আবদ্ধর প্রতি ভালোবাসাটা যেনো আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো৷ ভোর মনে মনে বললো,

” কারো নজর না লাগুক আমার আবদ্ধর উপর। সে শুধু আমারই থাক! ”

.

আজকে বেশ আগ্রহ নিয়ে রেডি হচ্ছে সকাল৷ সাদা রঙের কারুকাজ করা একটা গোল জামা গায়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর নিজেকে আয়নায় দেখছে। না সুন্দর লাগছে৷ খাটের উপর গালে হাত দিয়ে বসে আছে সকালের প্রাণ প্রিয় বান্ধবী লিজা। এই মেয়ের রেডি হওয়া দেখে তার এলার্জি শুরু হয়ে গেছে। বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,

” আমরা কোনো দাওয়াতে যাচ্ছি না সকাল! আমরা ভার্সিটিতে যাচ্ছি। ”

সকাল ঠোঁটে আরেকটু লিপবাম লাগিয়ে নিলো। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘুরে তাকালো লিজার দিকে। লিজার হাত ধরে রুম থেকে বের হতে হতে বললো,

” আরে ইয়ার! এমন করছিস কেনো? আজকে আমাদের ভার্সিটিতে প্রথম দিন৷ একটু সাজবো না। ”

” সাঁজ! না করেছে কে? তাই বলে এতোক্ষণ লাগে? ”

সকাল কিছু বললো না। ইনোসেন্ট ফেস করে একটা হাসি দিলো। লিজা কিছু বললো না। শ্রাবন্তি মেয়েকে রেডি হয়ে বের হতে দেখে বলে উঠলেন,

” সাবধানে যাবি। রাস্তা ঘাটে পাগলের মতো হাসবি না। সোজা যাবি আর সোজা আসবি৷ আর লিজা ও যদি কোনো রকম বাঁদরামি করে আমাকে এসে বলবে। ”

” জ্বি আন্টি অবশ্যই! ”

সকাল কটমট করে তাকালো লিজার দিকে। লিজা শুকনো ঢো*গ গিললো। মেকি হাসি দিয়ে শ্রাবন্তির থেকে বিদায় জানিয়ে সকালকে নিয়ে বাইরে চলে আসলো। সকাল ঝাড়ি মেরে লিজার হাত ছাড়িয়ে বললো,

” আম্মুর সাথে তো খুব ভালো খাতির করছিস। তোর বয়ফ্রেন্ডের কথা যদি আমি তোর আম্মুকে বলে দেই? ”

লিজা অসহায় মুখ করে তাকালো৷ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,

” তুই সিরিয়াস নিচ্ছিস ক্যান? আমি কি আর আন্টির মুখের উপর বলতে পারি যে, না আন্টি আমি আপনাকে কিছু বলতে পারবো না৷ সকাল যেভাবে ইচ্ছে সেই ভাবে চলুক। বল বলতে পারবো? ”

সকাল মিটমিট করে হেসে বললো,

” আচ্ছা আচ্ছা! এখন চল দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”

ভার্সিটির গেটের সামনে আসতেই খুশিতে পুলকিত হলো সকাল। দীর্ঘ শ্বাস টেনে বললো,

” আমার সপ্নের ভার্সিটি। ওয়াও কি সুন্দর। ”

” এখানে দাড়িয়ে ওয়াও ওয়াও করবি ? ভিতরে চল। ”

লিজার কথায় ভিতরে যেতেই অবাক হলো সকাল। ভার্সিটির ভিতরটা দারুণ সুন্দর। কত বড় মাঠ। চারদিকে ছেলেমেয়েরা আড্ডা দিচ্ছে। লিজা নিজেও মুগ্ধ হয়ে দেখছে। আচমকা পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,

” এই যে! পিছনে তাকাও! ”

সকাল আর লিজা পিছনে ঘুরে তাকালো। কয়েকটা ছেলেমেয়ে দাড়িয়ে আছে৷ যে মেয়েটা ওদের ডাকলো সে মেয়েটা আবারো বলে উঠলো,

” ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট? ”

সকাল লিজা দুজনেই মাথা নাড়লো৷ মেয়েটা আবারো বলে উঠলো,

” জানো তো। নিউ স্টুডেন্টদের র্যাগ দেওয়া হয়? ”

” হুম জানি! ”

সকাল বললো। মেয়েট আবারো বলে উঠলো,

” এই যে সাদা ড্রেস পড়া মেয়ে। তুমি এখন ওই যে আকাশি রঙের শার্ট পড়া ছেলেটাকে দেখেছো?”

সকাল কপাল কুঁচকালো। তার মানে এখন তাকে র্যাগ করবে? সকাল তাকালো আকাশি রঙের শার্ট পড়া ছেলেটার দিকে। শুধু তার পিঠ দেখা যাচ্ছে। সকাল সেখান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললো,

” দেখেছি। তো? ”

সকালের প্রশ্নে মেয়েটা বললো,

” তুমি এখন তাকে প্রপোজ করবে। ”

সকালের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। লিজা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সকাল বলে উঠলো,

” ইম্পসিবল! আমি এটা কিছুতেই পারবো না। ”

চলবে!

#এই_ভালো_এই_খারাপ(১৭)
#Jannat_prema

সকাল প্রচন্ড বিরক্ত হলো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা ফাজিল জানতো৷ কিন্তু এতো বেয়াদব জানতো না। বুকের ভিতরটা রাগে ফেটে চূর্ণ হয়ে ইচ্ছে করছে সবগুলোকে ভস্ম করে দিতে৷ সেই মেয়েটা আবারো বললো,

” এই মেয়ে যাচ্ছো না কেনো? সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করলে তোমাদেরই ক্ষতি হবে। ”

পাশে থাকা লিজা ফিসফিস করে সকালের কানে কানে বললো,

” এক কাজ কর প্রপোজ করে পরে ভাইয়াটাকে বলে দিস যে তোকে র্যাগ দেওয়া হয়েছে। ”

লিজার কথায় মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দিলো সকাল৷ এই বেয়াদব, কচুর সিনিয়রদের বিশেষ করে যে মেয়েটা তাকে এতো ফালতু একটা যার্গ দিয়েছে, তার চুল ছিড়তে পারলে শান্তি লাগতো। সকাল মুখ গোমড়া করেই বললো,

” ওকে আমি রাজি। ”

মেয়েটা খুশি হলো। সকালের হাতে একটা গোলাপ দিয়ে বললো,

” এটা দিয়ে প্রপোজ করবে। যাও। ”

সকাল গোলাপ ফুলের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দত চিপলো৷ মনের গহীনে এক অদম্য ইচ্ছে পোষণ করলো। মেয়েটার এমন দাঁত কেলিয়ে থাকার জন্য দাঁতগুলো ভাংতে চাইলো। মুহুর্তে সকালের মানস্পটে ভাসলো৷ মেয়েটার দাঁতগুলো সকাল এক ঘুষি দিয়ে ভেঙ্গে দিলো৷ মেয়েটা আর্তনাদ করে উঠলো। ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে অনুনয় করে বললো,

” আমাকে মাফ করে দাও। আমি আর জীবনেও কাউকে র্যাগিং করতে যাবো না৷ ”

সকাল পৈশাচিক হাসি হাসলো। আত্মতৃপ্তির সহিত বলে উঠলো,

” সত্যি? আজ থেকে যদি কারো সাথে এমন বেয়াদবি করিস তাহলে বাকি দাঁতগুলোও ভেঙ্গে দিবো। ”

মেয়েটা মেকি হাসলো৷ তবে সামনের দাঁতগুলো না থাকায় কেমন হাস্যকর লাগলো। তবুও বললো,

” পাক্কা তিন সত্যি আর করবো না। ”

” এই মেয়ে যাচ্ছো না কেনো? ”

সুর সুর করে মানস্পটে জেগে জেগে করা কল্পনাটা ভেঙ্গে গেলো সকালের। আবারো রাগে জিদে বিরক্তিতে বিষিয়ে উঠলো অন্তস্থল। ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে গেলো আকাশি শার্ট পড়া ছেলেটির দিকে। তবে কেমন চিনা চিনা লাগছে ছেলেটিকে। তবে কে হতে পারে ঠাহর করতে পারলো না। ছেলেটা আরো দুটো ছেলের সাথে কথা বলছে। ছেলেটা একবারো পিছনে ফিরলো না। যার কারণে সকালের কৌতুহল হলো অজ্ঞাত ছেলেটির প্রতি। আচ্ছা সে যদি মিথ্যে প্রপোজ করায় ছেলেটা যদি তাকে পুরো ভার্সিটির সামনে অপমান করে৷ তাহলে তো লজ্জায় সকালের নাক না মাথা, চোখ, নাক, মুখ সব কাটা যাবে সব। সকাল মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ বলে গিয়ে দাড়ালো ছেলেটির পিছনে। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে৷ একবার পিছনে তাকালো। সেই ছেলেমেয়ে গুলো ইশারায় বুঝালো ” প্রপোজ কর”। রাগে আবারো সকালের নাক মুখ লাল হলো। মনে মনে বললো, ‘ এতো তাড়া থাকলে তুই এসে প্রপোজ কর। বেদ্দপ! ”
জীবনে কখোনো কোনো ছেলেকে প্রপোজ করেনি সকাল। কিভাবে শুরু করবে ভেবে পেলো না। পরে অদৃশ্য ভাবে নিজেই নিজের মাথা থাপ্পড় লাগালো৷ এতো ভাবার কি আছে। এ ছেলেকে তো তুই আর পছন্দ করিস না। শুধু আই লাভ ইউ বলে কাজ সেরে ফেল। ব্যাস! সকাল ঢোক গিলে গলা ভিজালো। কাঁপা হাতে গোলাপ ফুলটা বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,

” এই যে ভাইয়া। আই লাভ ইউ। আমি আপনাকে ভালোবাসি। ”

মেয়েলি স্বরটা কর্ণপাত হতেই অবাক হয়ে পিছনে ফিরলো আদিল৷ ওমনি দু হাজার ভোল্টেজের শক খাওয়ার মতো তাকিয়ে আছে গোলাপ ফুল বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে থাকা সকালের দিকে৷ মেয়েটা কেমন চোখ খিচে আছে। আদিল হাতের দিকে তাকালো। মেয়েটার হাতটাও থরথর করে কাঁপছে। আদিল মাথা বাঁকিয়ে সকালের পিছনে তাকালো। ওদের ক্লাসের কয়েকটা ছেলো মেয়েকে দেখে খনিকের মাঝেই ব্যাপারটা বুঝে গেলো। সকালকে রাগানোর জন্য আদিল গোলাপ ফুলটা নিয়েও নিজ অজান্তেই মুগ্ধতায় ব’লে উঠলো,

” আই লাভ ইউ টু! ”

চিরচেনা কন্ঠস্বর কানে আসতেই ঝট করে নিজের আঁখি দুটো চট করে খুলে তাকালো সামনের সেই আকাশি শার্ট পড়া ছেলেটির দিকে৷ আদিলের সাথে থাকা বন্ধু দুটো এখনো অবাক হয়ে আছে। সকাল চার হাজার ভোল্টেজের ঝটকা খেয়ে দু পা পিছিয়ে ব’লে উঠলো,

” আপনি? ”

চোখে মুখে অবাকতা ফুটে আছে৷ আদিল সকালের এমন রিয়্যাকশনে হাসলো। এক কদম এগোলো সকালের দিকে। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বললো,

” আমাকে যখন ভালোবাসো আগেই বলতে পারতে৷ শুধ শুধু ভার্সিটির সবার সামনে বলা লাগতো না। ”

সকালের দু অধর আপনা আপনি ফাঁক হয়ে গেলো৷ শেষে কি না এই ছেলেকেই তাকে আই লাভ ইউ বলতে হলো। আর এই ছেলে সেটা সিরিয়াসলি নিয়ে নিলো। সকাল নিজের প্রতি সাফাই দেওয়ার জন্য বলললো,

” ও ভাই! আমি আপনাকে মোটেও ভালোবাসি না। ”

” তাহলে প্রপোজ করেছো কেনো? ”

সকাল নিজের পিছনে সেই মেয়েগুলোর দিকে তাকালো। লিজা সহ সবাই উৎসুক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ সকাল আদিলকে বুঝাতে গেলো।

” শুনুন ওই যে পিছনে__”

আদিল বাকিটা বলতে দিলো না৷ সকালের হাত ধরে মেয়েগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

” থাক আর বলতে হবে না। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো৷ এন্ড আই লাইক ইউ।”

সকালের অত কিছুর দিকে খেয়াল নেই৷ আদিলের ধরে রাখা হতের দিকে দৃষ্টি আটকে আছে। অজানা এক শিহরণে শরীর নেতিয়ে আছে৷ অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে। আদিল মেয়েগুলোর সামনে এনে দাড়ালো। যে মেয়েটা সকালকে র্যাগ দিয়েছিলো তাকে বলে উঠলো,

” তোদেরকে নিষেধ করা হয়েছিলো র্যাগিং করতে। অথচ তুই আবারো এমন করেছিস অন্তরা৷ ”

অন্তরা মুখ বাকাঁলো। নিজের বন্ধুদের উদ্দেশ্য বললো,

” এই চল চল! আমাদের কাজ শেষ। ”

আদিল ডাকলো ওদের। সকালের ধরে রাখা হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বললো,

” আমার গার্লফ্রেন্ডের কাছ থেক দুরে থাকবি। ”

সবাই অবাক হলো। ঠিক তেমন সকালও অবাক হলো। আদিল একবার সকালের দিকে তাকালো। অন্তরা অবাক হয়ে বললো,

” এটা তোর গার্লফ্রেন্ড? ”

” হ্যাঁ! শী ইজ মা’ই লাভ। অনলি মা’ইন! ”

সকাল বড় সড় হা করে তাকিয়ে আছে আদিলের দিকে। ছেলেটা একটু বেশিই বকছে৷ যে হারে বলা শুরু করেছে যেনো সে তার সত্যিকারের গার্লফ্রেন্ড লাগে। সকাল মনে মনে ভেংচি কাটলো৷

.

” তুই যেসব কর্মকান্ড করছিস প্রেমা এটা কি ঠিক? ”

প্রেমা না জানার ভাণ করে তাকালো নাঈমার দিকে। নাঈমা ফোস করে শ্বাস ফেলে ফের বললো,

” আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি। আর তুই কি করেছিস? কাজ রেখে আবদ্ধ স্যারের দিকে কেমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলি। ”

প্রেমা বিরক্তি নিয়ে তাকালো৷ খ্যাক করে বলে উঠলো,

” মুখ সামলে কথা বল নামু। আমি উনার দিকে বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলাম না। কেনো জানি বারবার আমার নজর উনার উপর আটকে যায়। মুগ্ধতা ঘিরে ধরে উনার প্রতি। ইচ্ছে করে চিরকাল তাকিয়ে থাকি৷ আমার জীবনে হয়ত আমি কারো প্রতি এতো মুগ্ধতা খুজে পাইনি৷ যেটা আবদ্ধ স্যারের প্রতি পাই। ”

নাঈমার ধারণাই সঠিক। এই মেয়ে প্রেমে পড়েছে। তাও কিনা বিবাহিত ছেলের উপর। প্রেমা তো জানেনা আবদ্ধ স্যার বিবাহিত৷ নাঈমা ভাবলো এখুনি সে প্রেমাকে বলবে বিষয়টা। নাঈমা কথাটা বলার আগেই প্রেমা হনহনিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,

” পাপা মেসেজ দিয়েছে। জলদি যেতে বলেছে। পিপিও আছে। তোকে আর বাসায় যাওয়া লাগবে না। আমার সাথে আয়। আর হ্যাঁ আমাকে নিয়ে ভাবা বন্ধ কর। ”

নাঈমা তপ্ত শ্বাস ফেললো। তার এই মামাতো বোন রুপি বেস্ট ফ্রেন্ড কষ্ট পাক এটা সে কিছুতেই চায়না। নিঃসন্দেহে প্রেমা রুপে গুনে সুন্দর একটা মেয়ে৷ শুধু রাগ জিদটা বেশি। প্রেমা আবদ্ধ স্যারের থেকেও বেস্ট কাউকে পাবে। তবে আবদ্ধ স্যারের প্রতি অনুভুতি তীব্র হওয়ার আগেই তাকে যে করেই হোক প্রেমাকে বলতে হবে। আবদ্ধ স্যারের জীবনসঙ্গী আছেন। যাকে পাওয়ার জন্য তিনি ছয়টা বছর প্রিয় মানুষটার থেকে দূরে ছিলো। নাঈমা আর ভাবলো না। চলে গেলো প্রেমার উদ্দেশ্য।

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে