#এই_ভালো_এই_খারাপ(১৪)
#Jannat_prema
আবদ্ধ গোমড়া মুখেই নাস্তার টেবিলে বসলো। আলিফা মিটমিট করে হাসছে। আহা! আবদ্ধর গোমড়া মুখটাকে সেই লাগছে। আলিফা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে আবদ্ধর একটু পাশে গেলো। আদিল আলিফাকে আবদ্ধর কাছে যেতে দেখে কান পাতলো। এরা কি তাকে বাদ দিচ্ছে নাকি। তামিম কপাল কুঁচকে আছে। কারণ আদিল তার সামনে দিয়ে নিজের মাথাটা হেলিয়ে রেখেছে। তামিম নিজেও নেই তেমনটা না। আলিফার পাশে বসায় সেও কান পেতে শুনার চেষ্টায় আছে। আদিল তামিমকে খোঁচা দিয়ে বললো,
” ভাইয়া আপি কিছু বললে আমাকেও একটু বলিও। আমি এখান থেকে কিছু শুনতে পারছি না।
” তোমার আপু তো এখনো কিছুই বলে নাই শুনবে কিভাবে! বলুক আগে। ”
আদিল মাথা নাড়লো। কিন্তু মাথা সড়ালো না। চোখে এখনো অনেকটা ঘুম ঘুম ভাব। কাল রাতে সকালের সাথে কথা বলায় ঘুমাতে দেরি হয়ে গিয়েছিলো তার। যার কারণে ঘুম পুরো হয়নি। আলিফা ভাইয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
” খুব কষ্ট লাগছে নারে ভাই? আমাদেরও লেগেছে জানিস? ”
আবদ্ধ চোখ কুঁচকে বোনের দিকে তাকালো। আলিফা দাঁত বের করে হাসলো। তামিম মাথাটা আরেকটু এগিয়ে আনলো ভালো করে শুনার জন্য। আদিলও একই কাজ করলো। সে তেমন সুবিধা পাচ্ছে না। তবুও হাল ছাড়লো না৷ তাকে শুনতেই হবে। আবদ্ধ আলিফাকে এভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসতে দেখে বললো,
” তুই আগে হাসি বন্ধ কর আপি। এরপর বল কি বলতে চাইছিস তুই? ”
আলিফা যেনো এই কথাটার অপেক্ষায় ছিলো। গলাটা একটু ঝেড়ে কেশে বললো,
” চল্লিশ হাজার টাকা দিয়েছিস? এতো কষ্ট করে তোর বাসর ঘর সাজালাম __”
” তুই সাজিয়েছিস? ”
আলিফা থতমত খেয়ে গেলো। সাথে চোরের মতো করে শুনতে থাকা তামিম আর আদিলও। আলিফা দমলো না তবুও। বললো,
” আমি সাজাইনি তো কি হয়েছে। তোর ভাইয়া, আদু, রাফি আর রাহুল সাজিয়েছে। তাও আবার সব কিছু আমি দেখিয়ে দিয়েছি। ”
” সো হোয়াট? ”
” মানে? তুই কি করলি চল্লিশ হাজারের জায়গায় তুই কত দিলি! মাত্র বিশ হাজার। এটা কোনো টাকা হলো? ”
তামিম কপাল চাপড়ালো। তার বউটা একটু বেশিই বলে ফেলেছে। আদিল দুলাভাইয়ের এমন হা-হুতাশ দেখে নিজেও একটু সান্ত্বনা দিলো।
” আপিটা একটু বেশিই বলে ফেলছে না ভাইয়া? ”
তামিম ভোঁতা মুখে রুটি খেতে খেতে বললো,
” তোমার বোন তো একটু বেশিই বলে৷ আবদ্ধ শালা যে বিশ হাজার টাকা দিয়েছে এটাইতো অনেক। সে তো দিতেই চাই ছিলো না। এখন দেখো আবদ্ধ কি বলে! ”
আলিফা বুঝলো সে একটু বেশিই বলে ফেলেছে৷ এখন যদি আবদ্ধ বিশ হাজার টাকাটা চেয়ে বসে। আলিফার ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করতে আবদ্ধ বাঁকা হেসে বললো,
” ওহ তাই? তো তোর কাছে ওটা টাকা মনে না হলে দিয়ে দে। বিশ হাজার টাকা তো কোনো টাকাই না। কি করবি সেটা দিয়ে৷ এর থেকে ভালো না আমার টাকা আমাকে দিয়ে দেওয়া। ”
আদিল পানি খেতে গিয়েও খেতে পারলো না। তামিম কেশেঁ উঠলো। নাকে মুখে খাবার উঠে গেছে তার। ঠিক যেটা নিয়ে মনে মনে আশংকায় ছিলো সেটাই হলো। কে বলছে এতো পাকনামি করে বলতে। আদিল তিতি বিরক্ত হয়ে বড় বোনের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আবদ্ধর কথায় আলিফা মেকি হাসি দিয়ে বললো,
” থাক ভাই। কাউকে কিছু দিলে ফেরত নিতে নেই। ”
আবদ্ধ হাসলো। ঠিক জানতো তার বোনটা এমন কিছু বলবে। নায়েলি বেগম, নারগিস বেগম, আফিল রহমান আর ভোর তারা এতোক্ষণ নিজেদের ভিতর খোশগল্প করলেও তামিমের কাশি শুনে তাদের দিকে তাকালো। ভোর আবদ্ধর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে৷ এরা কি নিয়ে এমন ফুসুরফাসুর করছে? সবাইকে নিজেদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদিল আর আলিফা বলে উঠলো,
” কি তাকিয়ে আছো কেনো সবাই? ”
তামিম নিরুদ্যেগ। নায়েলি বেগম আলিফার নাস্তার প্লেটের দিকে তাকিয়ে বললো,
” তোর খাবার নড়ছে না কেনো? এ সময় যত বেশি করে খাওয়া দাওয়া করবি বাবুর তত পুষ্টি হবে৷ ছোট মটো হবে। সিজার করা লাগবে না। এখন কি আর বলবো! ডেলিভারি করতে গেলেই ধরে সিজার করিয়ে দেয়৷ নরমাল ডেলিভারি বলে কোনো কথা নাই। ”
নায়েলি বেগমের সাথে সুর মিলিয়ে নারগিস বেগম বললেন,
” এইডা এখখান কথা কইলি নায়ু। আমাগো পাশের বাড়ির জোবেদার মাইয়ারে ডাক্তার কইছিলো নরমালে বাচ্চা হইবো৷ কিন্ত মাইয়ারে কইরা দিছে সিজার। বাচ্চা বলে পেটের ভিতরে হাইগা দিসিলো। ”
আদিল মাত্রই রুটির আরেক টুকরো মুখে দিয়িছে৷ খালার হাইগা দিসে শুনে মুখের রুটিটা চিবোতে ইচ্ছে হলো না। কোনো রকম পানি দিয়ে রুটি গিলে নাস্তা শেষ করলো। আলিফা মা আর খালার ক্যাঁচাল শুনলো না। সেও ঝটপট নাস্তা শেষ করে নিজ রুমে চলে গেলো।
.
আবদ্ধর জন্য কফি নিয়ে রুমে আসলো ভোর। পুরো রুমে আবদ্ধকে খুজলো। হাতে থাকা কফির মগটা ছোট টি – টেবিলের উপর রেখে বেলকনিতে এগিয়ে গেলো। সেখানেও নেই আবদ্ধ। কিন্তু একটু আগেই তো তার জামাইটাকে রুমে আসতে দেখলো। তাহলে এখন গেলো কই? ভোর চিন্তিত মুখ নিয়ে পিছনে ফিরতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে কারো হাত তার শাড়ি ভেদ করে উম্মুক্ত পেট জড়িয়ে মিশিয়ে নিলো নিজের বুকের সাথে। ভোর কিছুটা ভয় পেলেও শিউরে উঠলো। আবদ্ধ ভোরের খোপা করা চুলগুলো ছেড়ে দিলো। ঘাড়ে থুতনি রেখে বললো,
” আমাকে খুজছিলেন ম্যাডাম? ”
ভোর সত্যি কথাটা গিলে ফেললো। মিথ্যে বললো,
” আপনাকে খুজতে যা_আহ আবদ্ধ ব্যাথা পাচ্ছি!”
আবদ্ধ ভোরের কামড় দেওয়া জায়গায় ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
” আর একবার শুধু আপনি করে বল! তোর সাহস তো ডে বায় ডে বেড়েই যাচ্ছে। ”
ভোর এক প্রকার ঝামটি মেরে আবদ্ধর হাত কোমড় থেকে ছাড়িয়ে ঘুরে দাড়ালো আবদ্ধর মুখোমুখি। আবদ্ধ ঘাড়ের যে জায়গায় কামড় দিয়েছিলো সেই জায়গায় হাত বুলিয়ে বললো,
” এভাবে কেউ কামড় দেয়? আর আমার সাহস আগে থেকেই ছিলো। নতুন করে আর কি হবে। ”
শেষের কথাটা বুক ফুলিয়ে বললো ভোর। আবদ্ধ ভোরের দিকে ডান ভ্রু উঠিয়ে তাকিয়ে আছে। বুকের সাথে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে ভোরকে বললো,
” রিয়েলি! বাহ আবদ্ধ তোর বউয়ের তো অনেক সাহস। ”
ভোর কাঁধ দুটো উঁচিয়ে বললো,
” এটা নিয়ে তো…তোমার গর্ব করা উচিত, বুঝলে। এখন কফিটা গরম থাকতে থাকতে খেয়ে নাও। ”
আবদ্ধ কফির মগটা নিলো। চুমুক দেওয়ার আগে বললো,
” হ্যাঁ তাই তো। আমার তো গর্ব করা উচিত। আমার তেলাপোকা দেখে ভয় পাওয়া বউকে নিয়ে তো সব সময় গর্বে বুক ফুলিয়ে হাটা উচিত।”
ভোর নাক ফুলিয়ে আবদ্ধর দিকে তেড়ে আসার আগেই আবদ্ধ আবার বলে উঠলো,
” কফিতে চিনি কই? ”
ভোর থেমে গেলো। সে তো কফিতে চিনি দিয়েছে৷ পুরো দুই চামচ। ভোর বললো,
” আমি তো কফিতে চিনি দিয়েছি। ”
” তাহলে আমি মিথ্যে বলছি? ”
” বলতেও পারো। ”
আবদ্ধ কফির মগটা এগিয়ে দিলো ভোরের নিকট। বললো,
” চেখে দেখ! ”
ভোর হাত বাড়িয়ে নিলো কফির কাপটা। কফির মগে চুমুক দিয়ে বুঝলো সব কিছু ঠিকঠাকই আছে।
” সব তো ঠিকঠাক আছে। মিথ্যে বলছি…বলছো কেনো? ”
আবদ্ধ কপালে ভাজ ফেলে বললো,
” কই দেখি! ”
ভোর কফির মগটা আবদ্ধর হাতে দিলো। ভোর যেখানটায় চুুমুক দিয়েছিলো, সেই জায়গায় নিজেও চুমুক দিয়ে বললো,
” বাহ! এখন একদম ঠিক আছে। মিষ্টি টাও ঠিকঠাক। ”
ভোর অবাক হয়ে দেখছে সব৷ শেষের কথাটায় লজ্জা পেলো। আবদ্ধ ইচ্ছে করে এমন করেছে। ভোর মনে মনে আবদ্ধকে চরম অসভ্য বললেও উপরে উপরে ঠিকই লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। হুট করে তীব্র আওয়াজে বেজে উঠলো আবদ্ধর মুঠোফোন। দুজনেই তাকালো সেদিক পানে। আবদ্ধ কল রিসিভ করে কথা বলা শেষ করে রেডি হতে চলে গেলো। রেডি হয়ে ভোরের কাছে এসে বললো,
” আমাকে এখনি আর্জেন্ট যেতে হবে। ফিরতে রাতও হতে পারে। ”
ভোর বুঝলো না আবদ্ধ এখন কোথায় যাবে। আবদ্ধর ডান হাত আকড়ে ধরে বললো,
” কোথায় যাবে? ”
আবদ্ধ নিজের হাতের দিকে তাকালো। ভোরের চোখের দিকে চেয়ে বললো,
” হসপিটাল যেতে হবে। ”
ভোর ঘাবড়ানো কন্ঠে বললো,
” কারো কিছু হয়েছে কি? ”
আবদ্ধ মুচকি হাসলো। ভোরের নাক টেনে বললো,
” কারো কিছু হয়নি ভোর পাখি। ”
” তাহলে? ”
” ইওর হাসবেন্ড ইজ আ সিনিয়র ডক্টর, ম্যাডাম!”
চলবে!
#এই_ভালো_এই_খারাপ(১৫)
#Jannat_prema
ভোর বিস্ময় নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তার মানে আবদ্ধ নিজের সপ্নটা পূরণ করতে পেরেছে। ভোর যারপরনাই খুশি হলো। দৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো। আবদ্ধ গাড়িতে উঠার আগে একবার দোতলায় তাকালো। ওই তো তার প্রিয়তমা স্ত্রী তার ভোর পাখি দাড়িয়ে আছে। আবদ্ধ হেসে হাত নাড়লো। জানালো বিদায়। ভোর মাথায় ঘোমটা দিলো। নিজেও মুচকি হেসে প্রান প্রিয় স্বামীকে বিদায় জানালো। ভোরের বিস্ময় এখনো কাটেনি। আবদ্ধর গাড়ি চোখের আড়াল হতেই ভোর মুচকি হাসলো। অদুরে উড়তে থাকা পাখিদের পানে তাকালো। ঠোঁট দুটো নেড়ে বললো,
” আমার ডাক্তার হাসবেন্ড। অনেক ভালোবাসি আপনাকে! ”
.
করিডোর দিয়ে উঠার সময় আচমকা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়তে গিয়েও পড়লো না মেয়েটি। সামনের ব্যাক্তিটা তার ডান হাত ধরে তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। অথচ মেয়েটার সেদিকে কোনো ধ্যান নেই। সে তো হারিয়ে তার হাত ধরে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাচানো মানুষটার দিকে। হা করে তাকিয়ে আছে সাদ শার্ট পড়া সুদর্শণ পুরুষটার দিকে। যার গোলগাল ফর্সা মুখের চাপ দাড়িগুলো বড্ড আকর্ষণীয়। তার পেশিবহুল হাতগুলো জিম করার কারণে ফুলে আছে। প্রশস্ত বুকটা সাদা শার্টের আড়ালে ডেকে রয়েছে। মেয়েটা মুগ্ধ হলো। হৃদয়ের মাঝে যেনো বসন্তের হাওয়া লাগলো। আবদ্ধ যারপরনাই বিরক্ত হলো। মেয়েটা কিভাবে হা করে তার দিকে চেয়ে আছে। কিভাবে হাটে এই মেয়েগুলো। আবদ্ধ বিরক্ত হয়েই বললো,
” হেই মিস ঠিক আছেন? ”
মেয়েটির ধ্যান ভাঙ্গলো। চেতনা ফিরতেই সোজা হয়ে দাড়ালো। আবদ্ধ চট করে নিজের হাতটা সরিয়ে ফেললো। তার সাথে ধাক্কা খাওয়ায় মানবতার খাতিরে মেয়েটাকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাচিয়েছে। মেয়েটা মনে মনে একটু কষ্ট পেলো৷ ইশ! এতো তাড়াতাড়ি হাতটা ছেড়ে দিলো। আরেকটু ধরে রাখলে কি হতো৷ ঠিক সিনেমার নায়কদের মতো। মেয়েটা নিজের এমন ভাবনায় লজ্জা পেলো। কপালের সামনে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে বললো,
” জ্বি ঠিক আছি। সরি আসলে তখন আমি আপনাকে খেয়াল করিনি। প্লিজ কি__”
” ইট’স ওকে। ”
কথাটা বলেই আবদ্ধ হনহনিয়ে প্রস্থান করলো সেখান থেকে। প্রচন্ড বিরক্তিতে গলবিল পর্যন্ত যেনো তেতো হয়ে আছে। বারবার চোখে ভাসছে অচেন মেয়েটির হা করে তার দিকে চেয়ে থাকা৷ আবদ্ধ নিজ কেবিনে এসেই সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুলো৷ ভোর ছাড়া অন্য নারীকে ছোঁয়া যেনো কল্পনার বাহিরে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ভোরের হাস্যজ্জল মায়াবী মুখখানা। শীতল হাওয়া বয়ে গেলো হৃদয়ের মাঝে আবদ্ধ মুচকি হাসলো। হাত মুছলো তোয়ালে। ভুলে গেলো অচেনা মেয়েটির কথা।
মেয়েটা বারবার নিজের হাতের ঠিক আবদ্ধ যেই জায়গায় ধরেছে সেখানে তাকাচ্ছে আর হাসছে। এক নতুন অনুভূতি দোল খেলো তার অন্তরিক্ষে। বান্ধবীর ডাক শুনে মাথা তুললো মেয়েটা।
” এই প্রেমা! তুই এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো? ”
প্রেমা আজকে বিরক্ত হলো না। কেনো যেনো হতে ইচ্ছে করলো না৷ বরং মুচকি হেসে আবারো নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
” কিছু না তো। এমনি দাড়িয়ে আছি। ”
নাঈমা অবাক হলো। যে মেয়েটার রাগ সবসময় নাকের ডগায় নিয়ে থাকে৷ কথায় কথায় বিরক্ত হয়। হুট করে সেই মেয়েটা আজকে বিরক্তির জায়গায় হেসে কথা বললো। নাঈমা অবকতা নিয়েই প্রশ্ন করলো,
” আ’র ইউ ওকে প্রেমা? এমন অদ্ভুত ব্যাবহার করছিস কেনো? তখন আবদ্ধ স্যারকে দেখলাম তোর সামনে৷ ”
প্রেমা চকিতে তাকালো নাঈমার দিকে। কিছু জানার আকাঙ্খায় গদগদকন্ঠে বললো,
” তখন কাকে দেখেছিস আমার সামনে? কি নাম বললি? ”
কপালে ঈষৎ ভাঁজ পড়লো নাঈমার৷ আগে কখোনো কোনো বিষয় নিয়ে প্রেমাকে এতো আগ্রহ দেখাতে দেখেনি সে। নাঈমার এমন নীরব থাকা পছন্দ হলো না৷ তাড়া দেখিয়ে বললো,
” কি হলো? বলনা! ”
নাঈমা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” বললাম তোর সামনে যিনি ছিলো উনি আবদ্ধ স্যার ছিলো। উনার পুরো নাম আফিয়ান আবদ্ধ। আমাদের সিনিয়র ডক্টর। আজকে আমরা উনার আন্ডারে কাজ করবো৷ ”
প্রেমা সব কিছু বাদ দিয়ে পড়ে রইলো এই দুইটা নামে। ঠোঁট নেড়ে উচ্চারণ করলো,
” আফিয়ান আবদ্ধ! প্রেমাবদ্ধ! ওয়াও দারুণ! ”
” কি দারুণ? ”
ওভার এক্সাইটেড হয়ে শেষের কথাটা জোড়ে বলে ফেললো। নাঈমা আবার কিছু বলতে গেলে উপর থেকে মায়া ডেকে উঠলো,
” ওই তোরা দুটো কি এখানে দাড়িয়ে থাকবি৷ ওদিকে আবদ্ধ স্যার ওপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেছে৷ রোহিত স্যার জলদি আসতে বলেছে। ”
আজকে একজনের ব্রেইনে এমার্জেন্সি অপারেশন আছে। যেখানে আবদ্ধ সহ আরো অনেক সিনিয়র জুনিয়র ডক্টর রয়েছে। প্রেমা, নাঈমা, মায়া এরা আজকে থাকবে সেই অপারেশনে৷ যার অপারেশন করা হবে তার মাথায় টিউমার সেটাই আজকে অপারেশন করবে৷ অথচ নাঈমা আর প্রেমা নিচে দাড়িয়ে খেজুরে আলাপ জুড়ে বসে আছে। মায়া আবারো ডাকলো।
” তোরা আসবি? ”
” হ্যাঁ আসছি। ”
নাঈমা কথাটা বলে প্রেমার দিকে তাকালো৷ মেয়েটা নেই। আজব কই গেলো মেয়েটা? একটু আগেই তো এখানে ছিলো। চোখোর পলকে কই উধাও হয়ে গেলো। উপরে তাকালো মায়াও নেই৷ তার মানে সবাই ওকে রেখে চলে গেলো৷ তবুও নাঈমার মনে একটা খটকা থেকেই গেলো। অতশত না ভেবে সেও চলে গেলো৷
.
সময়টা কিছুতেই কাটছে না ভোরের। প্রায় অনেকটা আগেই আবদ্ধর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে শেষ করেছে। তবুও যেনো মনে হচ্ছে কতগুলো সময় আবদ্ধর কন্ঠ শুনেনি। অনেক বছর পর কাছে পাওয়ায় যেনো ছাড়তে ইচ্ছে হলো। মাঝামাঝি কয়েকদিন ভুল বোঝাবুঝির কারণে তো ঠিক মতো কথাই বলেনি। অথচ আবদ্ধ ঘুমিয়ে গেলে ঠিকই আবদ্ধর ঘুমের সুযোগ নিয়ে তার কাছে যেতো। মন ভরে দেখতো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে আবদ্ধর চোখের নিচে কালো দাগে হাত বুলিয়ে দিতো। বুঝাই যেতো ছেলেটা কতটা রাত জেগেছিলো। মাঝে মাঝে ভোর আবদ্ধর চোখের কোণায় পানি টের পেতো। ভোর তখন আদুরে হাতে মুছে দিয়ে গালে একটা চুমু খেত। ইচ্ছে করতো জড়িয়ে ধরতে। আবদ্ধর ওই প্রশস্ত বুকে মাথা রাখতে। অবশেষে সব মান অভিমান ভুলে দুজনে কাছে এসেছে। ভোর এগিয়ে গেলো আবদ্ধর বুক শেলফের কাছে৷ সব সাইন্সের বইয়ে ঠেসে আছে। ভোর মনে মনে আবদ্ধকে বকাঝকা করার মাঝে চোখ আটকালো বাদামি মলাটের ডায়েরির উপর। ডায়েরির অর্ধেকটা বাদামি আর অর্ধেকটা কালো রঙের। ভোর নিলো ডায়েরিটা। বেশ আগ্রহ নিয়ে বসলো বিছানায়। ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠা উল্টালো সেখানে কালো কালিতে ” ভোরের আবদ্ধ “। ভোর হেসে কয়েকবার আঙুল বুলালো লিখাটার উপর। আরো দুই তিনটা পৃষ্ঠা উঠালো। ঠিক পরের পৃষ্ঠায় কিছু লেখা আছে। ভোর আরো আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসলো।
.
অপারেশনের আগে সবাইকে সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে আবদ্ধ। গম্ভীর তার স্বর। যেনো ভীষণ রাগি সে। যেহেতু অপারেশনটা অনেকটা রিস্ক। প্রেমা এক ধ্যানে আবদ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার মাঝে এতো মুগ্ধতা ঘিরে আছে কেনো? চোখ সরানো দায় হয়ে আছে৷ আবদ্ধর কথা বলতে অস্বস্তি হচ্ছে। মেয়েটা সেই কবে থেকে তাকিয়ে আছে৷ ভীষণ রাগ লাগলেও আপাতত সে শান্ত হয়ে আছে। আবদ্ধ গলা খাকাড়ি দিয়ে আচমকা বলে বসলো,
” মিস প্রেমা! ”
প্রেমা চমকে উঠলো। আবদ্ধর মুখে তার নামটা এতো সুমধুর শুনালো কেনো? নাকি সে প্রেমে পড়েছে বলে? না আবদ্ধর কন্ঠটাই এতো চমৎকার। একদম বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু করে দেয়। আবদ্ধ যখন তাকায় না, উফ! প্রেমা যেনো প্রতি পদে পদে ঘায়েল হয়। নাঈমা প্রেমাকে সেই আগের মতো থাকতে দেখে পিছন থেকে মাথায় চাটি মারলো। হুশ ফিরতেই প্রেমা ঝটপট উত্তর দিলো,
” জ্বি স্যার! ”
আবদ্ধ তপ্ত শ্বাস ফেললো। বিরক্তিটা গিলে বললো,
” আপনার ধ্যান কোথায়? আমরা সবাই এখানে একটা ইম্পর্টেন্ট টপিক নিয়ে কথা বলছি। আর আপনি কোন ধ্যানে জ্ঞান হারিয়ে আছেন? ”
প্রেমার খুব করে বলতে চাইলো আপনার ধ্যানে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি৷ সে দৃষ্টি সরালো না। বললো,
” সরি স্যার! আর হবে না। ”
” গুড! না হলেই ভালো। ”
এদিকে নাঈমা ঈগল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রেমার দিকে৷ মেয়েটার হাবভাব সুবিধার ঠেকছে না৷ সেই কখোন থেকে আবদ্ধ স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে৷ প্রেমার অমন দৃষ্টির কারণ একটা জিনিস ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু সেটা যে হবার নয়। তাকে খুব শীঘ্রয় প্রেমার সাথে কথা বলতে হবে। খুব শীঘ্রয়!
চলবে!