এই_ভালো_এই_খারাপ পর্ব-১১+১২

0
755

#এই_ভালো_এই_খারাপ(১১+১২)
#Jannat_prema

ভোর ডুকরে কেঁদে উঠলো। আবদ্ধ আগলে নিলো প্রিয়তমাকে। ঝাপটে ধরলো নিজের বুকের সাথে। ভোর আবদ্ধর শার্ট খামচে ধরে হু হু করে কাঁদছে৷ তার পিঠ পিছে এতো কিছু হয়ে গেলো, অথচ সে কিছু জানতেও পারলো না। সাথে বাবার প্রতি জেগে উঠলো অভিমান। মানছে বাবার জায়গা থেকে তিনি ঠিক৷ কিন্তু তাদের কষ্টগুলো তো ফিকে হয়ে যাবে না৷ আবদ্ধ তাকে কতটা ভালোবাসে তা যেনো আরেকবার প্রমাণ পেলো ভোর। ইশ! ছেলেটাকে না জেনে বুঝে কত কথা বলেছে। যতবার কাছে এসে ঠিক ততবার দূরে সরিয়ে দিয়েছে। নিজের প্রতিও যেনো খানিকটা রাগ হলো ভোরের। কেনো জানতে চাইলো না সে? আবদ্ধ মুক্ত শ্বাস ফেললো। মনের ভিতরটা যেনো হালকা হলো৷ যাক এবার তাদের মান অভিমানের পালা শেষ হবে। প্রেয়সীকে এবার মনের মধ্যেখানি বন্দী করে রাখবে৷ আবদ্ধর আর সহ্য হচ্ছে না ভোরের কান্না। সেই কখোন থেকে মেয়েটা কেঁদেই যাচ্ছে। চোখের পানি নাকের পানি এক করে তার বুক ভাসিয়ে দিচ্ছে৷ আবদ্ধ বললো,

” তুই এতো ছিঁচকাদুনে কিভাবে হলি, ভোর? যে হারে কেঁদে ভাসাচ্ছিস কখোন না যেনো আমিও ভেসে যাই।”

ভোর আবদ্ধর বুকে মাথা রেখে মৃদু হাসলো। চট করে মাথায় কিছু খেয়াল আসতেই আবদ্ধর বুক থেকে মাথা উঠিয়ে তাকালো। আবদ্ধ ভোরের চোখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। কান্নার কারণে এক অদ্ভুত সুন্দর লাগছে চোখ দুটো। ভোর আবদ্ধর কাছ থেকে সরে গেলো। মুখ ভেংচি কেটে রুমে চলে গেলো। আবদ্ধ থতমত খেয়ে দাড়িয়ে আছে। কি হলো ব্যাপারটা? এতোক্ষণ সে যে এতো হৃদয় বিদারক কাহিনী শুনালো, সেখানে এই মেয়ে তাকে ভেংচি কাটছে। আবদ্ধ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে তাকালো আকাশ পানে। আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ উড়ছে। খোলা হাওয়ায় আবদ্ধর পাতলা মসৃন চুলগুলো কপালের উপর আছড়ে পড়ছে৷ চাদের কিরণে চাপ দাঁড়িগুলো চিকচিক করছে। এমন সুন্দর মানুষটার মুখটা কেমন গোমড়া হয়ে আছে। ভোর কি তবে এখনো অভিমান করে থাকবে? সে চাইলেও যোগাযোগ করতে পারতো। অথচ করলো না ভোরের বাবাকে কথা দিয়েছিলো বলে। ভোর পড়ালেখায় কখোনো অত মনোযোগী ছিলো না। বাদল সাহেব চাননি মেয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে প্রেম করুক। তখন ওদের আবেগের বয়স ছিলো। একে অপরের প্রতি এতো আকর্ষণ না থাকাই ভালো। আবদ্ধর যে ভোরে সাথে কোনো যোগাযোগ ছিলো না তাও কিন্তু নয়। বাদল সাহেবের ফোনে ভিডিও কল দিলে তিনি স্ত্রীর হাতে ধরিয়ে দিতেন। তখন তিনি পিছনের ক্যামেরাটা ভোরের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে অনায়াসে কি সুন্দর ভান করতেন যেনো ফোনের ওপাশে কেউ ছিলোও না। অথচ তার কিছুই ভোর টের পেতো না। তখন তার বেশির ভাগ সময় কাটতো সকালের সাথে দুষ্টুমিতে। এক প্রকার নিজেকে সব রকম ভাবে ব্যাস্ত রাখতে চাইতো। আবদ্ধ চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে দেখতো ভোরে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া মুখটা। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছিলো। বেশির ভাগ সময় সে অন্যমনস্ক হয়ে থাকতো। হাহাকার করে উঠতো আবদ্ধর বক্ষ পিঞ্জর। তখন ইচ্ছে করতো সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে ছুটে চলে আসতে। গোল্লায় যাক সব কিছু। প্রথম প্রথম কয়েকদিন ভিডিও কল করলেও আর করতো না আবদ্ধ। নিজেও ব্যাস্ত থাকতো সব কিছুতে৷ যত তাড়াতাড়ি সে কিছু একটা করতে পারবে, ঠিক তত তাড়াতাড়ি ভোরের কাছে যেতে পারবে। এভাবে দুজনের কতগুলো সময় যে কেটে গেলো। আবদ্ধ চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বলে উঠলো,

” যদি সময়গুলো ফিরে পাওয়া যেতো। যদি প্রেয়সীর মায়াভরা মুখটা তৃপ্তি নিয়ে দেখতে পারতাম তাহলে জীবনের একটা আফসোস মিট যেতো । ”

হাতে কারো স্পর্শ পেতেই ভাবনার ইতি ঘটলো। আবদ্ধ চোখ খুলে তাকালো হাত স্পর্শ করা মানুষটার দিকে। ভোর কিছু না বলে টেনে নিয়ে আসলো তাকে। আবদ্ধ কিছু বললো না। চুপচাপ ভোরের কান্ড দেখতে লাগলো৷ ভোর আবদ্ধকে রুমে থাকা সোফায় বসিয়ে নিজেও বসে পড়লো পাশে। পাশে থাকা ছোট টি-টেবিলের উপর থেকে ভাতের প্লেটটা নিজের হাতে নিলো। লোকমা বানিয়ে ধরলো আবদ্ধর মুখের সামনে। ভোরের এমন কাজে আবদ্ধ বাকরূদ্ধ হয়ে আছে। ভোর যে তাকে নিজ হাতে এমন সময় খাইয়ে দিবে পুরোটা যেনো কল্পনাতীত। আবদ্ধকে এমন ক্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশারায় ভাতটা খেতে বললো। আবদ্ধ হা করে ভাতের লোকমাটা নিলো। ভোর খুশি হয়ে নিজেও এক লোকমা মুখে দিলো। আবদ্ধর দিকে চেয়ে ব’লে উঠলো,

” তোমার জন্য আমি নিচে কারো সাথে ডিনার করিনি, আবদ্ধ। ”

হুট করে আবদ্ধ খুক খুক করে কেশে উঠলো। নাকে মুখে ভাত উঠে গেছে বুঝতে পেরে ভোর জলদি করে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলো। ঝটপট পানিটা খেয়ে আবদ্ধ কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে আছে৷ ভোরের মুখ থেকে হঠাৎ তুমি শব্দটা শুনে কেঁশে উঠলো। ভোরের মুখে এমন অদ্ভুত লাগলো কেনো তুমি শব্দটা? তুই করে বলতে বলতে হুট করে তুমি করে বললে ব্যাপারটা খুব হাস্যকর৷ আবদ্ধকে এমন স্থির হয়ে বসে থাকতে দেখে ভোর বলে উঠলো,

” আর ইউ ওকে আবদ্ধ? ”

আবদ্ধ মাথা নাড়লো। ভোরের দিকে তাকিয়ে বললো,

” হঠাৎ এতো তুমি তুমি করছিস কেনো? ”

ভোর লাজুক হাসলো। আবদ্ধর মুখে আরেক লোকমা দিয়ে বললো,

” স্বামীকে কেউ তুই তোকারি করে নাকি? ”

আবদ্ধ হা করে চেয়ে আছে ভোরের দিকে। মেয়েটার হঠাৎ হলোটা কি। এমন আজব বিহেভিয়ার করছে কেনো? আবদ্ধ নিজেকে সামলে বললো,

” কি হয়েছে তোর? ”

” আমার আবার কি হবে? ”

” সেটা তো তুই জানিস। তোর এমন আচরণের কারণটা কি? ”

” কিসের কেমন আচরণ? ”

আবদ্ধর রাগ হলো ভিষণ। দাড়িয়ে গিয়ে রাগি স্বরে বললো,

” একদম রাগাবি না আমাকে ভোর। আমি কিসের কথা বলছি সেটা তুই ভালো ভাবেই বুঝেছিস। ”

ভোর হাত ধুয়ে সব কিছু গুছিয়ে আসলো আবদ্ধর কাছে। জড়তা ছাড়াই বললো,

” আমরা কি নিজেদের তুমি করে বলতে পারি না? এখন তো আর আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড না৷ আই মিন বেস্ট ফ্রেন্ডের পাশাপাশি হাসবেন্ড, ওয়াইফ। এখন যদি দুজন সেই আগের মতোই তুই তোকারি করি কেমন অকওর্য়াড লাগে না ব্যাপারটা? ”

আবদ্ধর কপালে ভাজ পড়লো। সহসা বলে উঠলো,

” এখন তুই বলতে চাইছিস আমি তোকে এখন থেকে তুমি করে বলতে হবে? ”

” তুই.. উফ মানে তুমি একা কেনো বলবে আমিও তো তো.. না না তোমাকে তুমি করে বলবো। ”

তুমি তুই তে গুলিয়ে গেলো ভোর। বারবার তুই বের হয়ে যাচ্ছে মুখ দিয়ে। ভোরের এমন তুই তুমি দেখে হেসে উঠলো আবদ্ধ। প্রাণ খোলা সেই হাসি। ভোর থমকে গেলো। থমকে গেলো হৃদয়ের হৃদ যন্ত্রটা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আবদ্ধর এমন হাসি ভোর প্রায় ছয়টা বছর পর আবার দেখতে পেলো। মনের ভিতর খুশির ঢেউ বয়ে গেলো। তার অভিমানের দেওয়ালটা যে ভেঙ্গে দিলো আবদ্ধ। এমন ভালোবাসার মানুষ যার আছে, সেকি আর অভিমান করে থাকতে পারে। উহু! কখোনো পারে না। আবদ্ধর কষ্টের কাছে তো তার কষ্টগুলো কিছুই না। এই যে দুজন এতো বছর কত কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করে গেলো৷ ফল হিসেবে তো দুজন দুজনকে পেয়ে গেলো সারাজীবনের জন্য। এখন তারা স্বামী-স্ত্রী। তাদেরকে আর লুকিয়ে বা কেউ দেখে ফেলবে এমন ভয় নিয়ে থাকতে হচ্ছে না। আবদ্ধর কথায় ভোরের ঘোর কাটলো।

” ইম্পসিবল! তোকে আমি তুই করে বলতে পারবো না৷ ”

ভোর চোখ ছোটো ছোটো করে বললো,

” কেনো? কেনো পারবি না? ”

” তুইও তো পারছিস না। ”

ভোর জ্বিভ কাটলো৷ সেই আবার তুই করে বলে ফেললো। ভোর কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

” সরো এখান থেকে৷ বলতে হবে না তোমাকে৷ যেদিন তুমি করে বলতে পারবে সেদিন কথা বলবো৷ তার আগে না। ”

বলেই বিছানায় শুয়ে পড়লো। আবদ্ধ বোকার মতো সেখানেই দাড়িয়ে আছে৷ কি এক জ্বালায় ফেললো মেয়েটা। এই ভালো এই খারাপ। এর চক্করে না তাকে আবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তবে ভোরের মাথায় এই তুমি শব্দটা কে ঢুকালো তার রহস্য আগে উদঘাটন করতে হবে। রুমের লাইট ওফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে আবদ্ধ ভোরের পাশটায় গিয়ে দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়লো৷ ইচ্ছে করেই এমন দূরত্ব রেখে শুয়েছে৷ দেখবে ভোর কি করে। আবদ্ধর এমন দূরত্ব পছন্দ হলো না ভোরের। আগে তো এমন করতো না। সারাক্ষণ তার কাছে আসার ফন্দি করতো। আর এখন দেখো ঢং করছে। সকাল বেলা নাহয় কিছু কথা বলেছে তাই বলে এমন করবে? ভোর মাথাটা হালকা করে উঠিয়ে দেখলো আবদ্ধ ঘুমিয়ে গেছে কিনা৷ আবদ্ধ চোখ বন্ধ করে আছে। ভোর আস্তে করে এগিয়ে গেলো আবদ্ধর দিকে। কাঁপা হাতটা জড়িয়ে ধরলো আবদ্ধর বুক। ভোর লজ্জায় মুখ গুজালো আবদ্ধর পিঠে। আবদ্ধ চোখ বন্ধ অবস্থায় মুচকি হাসলো। চোখ খুলে তাকালো ভোরের হাতের দিকে। বললো,

” কি সমস্যা? ”

মুখ গুজায় অবস্থায় ভোর বললো,

” কোনো সমস্যা না তো। ”

আবদ্ধ ভোরের দিকে ফিরলো। ভোর চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। আবদ্ধ আবারো বললো,

” কি চাই তোর। এইরকম করছিস কেনো? ”

ভোর কিছু বললো না। আবদ্ধর বুকে মুখ গুজে জড়িয়ে ধরে বললো,

” তোকে না না তোমাকে চাই। তোমার বুকে মাথা রেখে সুখ নিদ্রায় ডুবে যেতে চাই। ”

আবদ্ধ হেসে ফেললো। বললো,

” হঠাৎ এতো ভালোবাসার কারণ কি?”

” আই এম স্যরি আবদ্ধ! আমার তখন এতোটা মিসবিহেভ করাটা উচিত হয়নি৷ তখন প্রচুর রাগে, অভিমানে এমন করেছি। বারবার মাথায় আসতো তুই আমাকে ধোকা দিয়েছিস। ভালোবাসতাম তো তাই তোর এমন আচরণ সহ্য হয়নি। ”

” এখন ভালোবাসিস না? ”

” উহু! আমি তোমাকে প্রচুর আই লাভ ইউ করি এখন। ”

কথাটা বলেই হেসে উঠলো ভোর৷ আবদ্ধ প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিলো। নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে নিলো ভোরকে। যেখান থেকে আর বের হওয়ার কোনো উপায় নেই৷ ভোর চাইলেও আর সেখান থেকে বের হতে পারবে না।

.

” আসসালামু আলাইকুম! কোন মগা বলছেন? এতো রাতে কল করতে লজ্জা শরম লাগে নাই৷ নাকি ওগুলো বউকে দিয়ে এসেছেন৷ আর বউ যখন আছে তাহলে শুধু শুধু আরেক বেডার না হওয়া বউরে কল দিচ্ছেন কোন সুখে? ”

” স্টপ সকাল! ”

সকাল লাফ দিয়ে উঠে বসলো। কানে এখোনো মোবাইল ফোনটা ধরে আছে। রাতের দুইটা বাজে কেউ তাকে কল দেওয়ায় বিরক্ত হলো। ঘুম ঘুম চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো নাম্বারটা অচেনা। মাথাটা গরম হয়ে গেলো। এতো রাতে কার এতো তাকে মনে পড়ছে। বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করে উক্ত কথাগুলো বললো। অথচ ফোনের অপাশের মানুষটা কি ঝাড়িটাই না মারলো। সকাল তব্দা খেয়ে এখনো বসে আছে। ঘুমের রেশটা তার পুরোপুরি কাটেনি। আদিল ফোস করে নিঃশ্বাস ফেললো। সকাল যে তার ধমকে ঘুমের মাঝে ভয় পেয়েছে বুঝতে পেরেছে। সকালের কোনো সাড়া না পেয়ে আদিল বললো,

” সকাল শুনছো? ”

সকাল ঘন ঘন চোখের পলক ফেললো। মুহুর্তে চটে গিয়ে বললো,

” না শুনছি না আমি। এতো রাতে কাউকে কল দিয়েছেন কি তাকে আপনার কথা শুনাতে? ”

” ওহ হ্যালো! এই আদিল কাউকে সেধে সেধে কল দেয়না। নেহাতই দরকার ছিলো বলে দিয়েছি। ”

শেষের কথাটা যে ডাহা মিথ্যা কথা তা বুঝেনি সকাল। সকাল দমে গেলো৷ গলার স্বরটা নরম করে বললো,

” তো কি দরকারে এতো রাতে কল দিলেন? ”

আদিল কথা ঘুরালো৷ বললো,

” সেটা নাহয় বলবো এতো তাড়া নেই৷ আগে এটা বলো যে, তুমি ঘুমের মাঝে এতো ফাউল কথা কিভাবে বলতে পারো? নাকি ঘুমের ঘোরে বকার অভ্যেস আছে তোমার? ”

” এটা আপনার দরকারি কথা? ”

” এটা দরকারি কথা না হলেও। অনেকটা আবার দরকারিও। ”

সকাল চোখ মুখ কুঁচকে বললো,

” এটা আবার কেমন দরকারি? ”

আদিল খাটের সাথে হেলান দিয়ে বালিশটা কোলে নিয়ে আরাম করে বসলো৷ মোবাইল ফোনটা বাম কানে নিয়ে ডান হাত দিয়ে চুলগুলো আরেকটু এলোমেলো করে বললো,

” বললাম না অনেক দরকারি৷ শুনো! ধরো তোমার বিয়ে হলো। তখন তুমি যদি ঘুমের ঘোরে উল্টা পাল্টা বকো বেচারা তোমার হাসবেন্ড ভয় পাবে। ভাববে তোমাকে ভুতে ধরেছে৷ এ নিয়ে সবাই কত কথা বলবে। ভাবো তাহলে এটা কতটা দরকারি একটা বিষয়। ”

সকাল রাগে নাকের ডগা ফুলালো। এমন আজায়রা কথার কোনো মানে হয় তাও এতো রাতে? গলার স্বরটা নিচু করে দাঁতে দাঁত পিষে বললো,

” সেটা আমি এবং আমার না হওয়া জামাই বুঝবো। এই নিয়ে আপনাকে এতো ভাবতে হবে না বুঝেছেন? আপনি আপনার ভবিষ্যৎ বউকে নিয়ে চিন্তা করুন। ”

আদিল মুখ ফসকে বলে ফেললো,

” তুমি থাকতে কিসের চিন্তা। ”

সকাল কথাটার মানে না বুঝে বললো,

” মানে? ”

আদিল হকচকালো। কি বলে ফেললো সে। তাড়াতাড়ি করে বললো,

” মানে হলো তুমি থাকতে কিসের চিন্তা। তোমাকে দিয়ে আমার জন্য বউ খুজবো। ”

সকালের হুট করে মন খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু কেনো? নিজ মনেই প্রশ্ন করলো। কোনো প্রকার উত্তর পেলো না। আদিলের কথার পিঠে রাগ দেখিয়ে বললো,

” আমাকে কি ঘটক লাগে আপনার? ”

” তা কেনো লাগতে যাবে? ”

” তা তো আপনি জানেন। ”

” কি জানি আমি? ”

” আমার চৌদ্দগুষ্ঠির কল্লা জানেন আপনি। বিরক্তি কর লোক। ”

বলেই খট করে কল কেটে দিলো সকাল৷ এতো রাতে কল করেছে কি এগুলো বলার জন্য? লোকটা আস্ত এক খারুস। নিজ মনে এগুলোই বকছিলো সকাল৷ আদিল থতমত খেয়ে মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। যাহ! মেয়েটা এভাবে মুখের উপর ঠাশ করে কল কেটে দিলো। কিন্তু তার যে এখনো আরো কথা বলতে ইচ্ছে করছে। এমন অদ্ভুত ইচ্ছের কারণটা জানতে চাইলো না আদিল। আবার কল লাগালো সকালকে। মাত্রই ফোনটা রাখতে যাচ্ছিলো সকাল। আবারো আদিলের নাম্বার থেকে কল আসায় আর রাখলো না। একটু আগেই সে আদিলের নাম্বারটা ঝগড়ুটে লোক দিয়ে সেভ করেছে। সকাল কলটা ধরবে না ধরবে না করেও কল রিসিভ করে কানে ধরলো। ওপাশ থেকে আদিল বললো,

” এভাবে কল কেটে দিলে কেনো? ঠাস করে কল কেটে দেওয়া যে ম্যানার্সলেসের কাজ জানো না। ”

সকালও কম যায় না। সেও বললো,

” এতো রাতে যে কাউকে কল দিয়ে বিরক্ত করছেন। সেটা কি ম্যানার্স ল্যাসের কাজ নয়? ”

আদিল হাসলো। মেয়েটা কি ভাবে তাকে জব্দ করতে চাইছে। তার কথা তাকেই শুনাচ্ছে। আদিল বললো ,

” না তো। সেটা তো ভালো। ”

” আচ্ছা! তা কেমন ভালো?”

” বলবো? ”

সকাল অধ্যৈর্য হলো। এই আদিল ছেলেটা এতো কথা প্যাচাচ্ছে কেনো৷ সে তো আর এতো রাতে তার সাথে খেজুরে আলাপ করতে বসে নেই। দরকারী কথাটা বাদে সব কথা বলেছে৷ অথচ দরকারি কথাটার কোনো খবরই নাই। আদিল সকালের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বললো,

” তুমি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছো সকাল?”

সকাল ভাবনা থেকে বের হয়ে বললো,

” না আমি শুনছি না৷ এতো কথা না বলে যে কথাটা বলতে চাইছেন সেটা বলুন। ”

” আচ্ছা বলছি। মানুষ যাকে মিস করে তাকেই হুটহাট কল করে, জানো? ”

হুট করে সকাল খানিকটা লজ্জা পেলো। আদিল কি তাহলে তাকে মিস করছিলো? সকাল জিজ্ঞেস করলো,

” তাহলে আপনি আমায় মিস করছিলেন? ”

আদিল হাসলো। সকালকে রাগানোর জন্য বললো,

” না তো। আমি তো তোমাকে বিরক্ত করতে কল দিয়েছিলাম। ”

সকাল রেগেমেগে যেই কিছু বলবে তখনই আদিল মহৎ কাজটা করলো৷ খট করে লাইন কেটে দিলো। সে জানতো সকাল এখন রেগে তাকে কথা শুনাবে। সুযোগের সৎ ব্যাবহার করতে পেরে খুশি হলো আদিল। এখন মনে খুব শান্তি লাগছে তার। সকাল হা করে তাকিয়ে আছে। ফোনটাকে বালিশের নিচে এক প্রকার আছাড় মেরে বললো,

” অসভ্য! অভদ্র! বেয়াদব! খচ্চর! তোর কখনো বিয়ে হবে না দেখিস। ”

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে