#এই_ভালো_এই_খারাপ(৯)
#Jannat_prema
ভোরের আর সহ্য হলো না। নিজের গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারলো আবদ্ধকে৷ এমন আচমকা আসা ধাক্কাটার তাল সামলাতে না পেরে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো আবদ্ধ। অবাক হয়ে ভোরের লাল হয়ে আসা মুখের দিকে তাকালো। ভোরের রক্তিম মুখশ্রী দেখে ছ্যাঁত করে উঠলো আবদ্ধর বুকের ভিতর। একটু আগে সে কি করেছে ভাবতেই বলে উঠলো,
” শিট! আ’ম স্যরি ভোর। ”
ভোর ঢোগ গিললো৷ কান্নারা সব গলায় দলাপাকিয়ে আছে। আবদ্ধর গালে ঠা*শ করে থাপ্পড় লাগালো। আবদ্ধ এমন কিছু যেনো আশা করেনি। আচমকা ভোর আবদ্ধর বুকে ধাক্কা দিয়ে কেঁদে দিয়ে বললো,
” কিসের স্যরি? স্যরি বললেই সব কিছু আগের মতো হয়ে যায়। এতো সহজ সব কিছু। তোর যখন মনে হবে কাছে আসবি আবার যখন মনে হবে চলে যাবি। তুই কেনো এমনটা করলি, বল? তুই আমাকে স্পর্শ করার আগে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলি না। তুই এমন কেনো আবদ্ধ। তুই নিজেই আগে, আমার সাথে রিলেশনশিপে গেলি? তুই নিজেই প্রপোজ করেছিলি। তুই নিজেই ভালোবাসবি আবার তুই নিজেই কাউকে না জানিয়ে মাঝ পথে ছেড়ে যাবি। আবার হুট করে আমাকে বিয়ে করে নিলি, কাছে আসছিস, আবার দূরে সরে যাচ্ছিস। কেনো? সব সব কিছু শুধু তোর মর্জি মতো হবে? আমার চাওয়া, পাওয়া, ইচ্ছার কি কোনো দাম নেই। তুই যখন নিজে মর্জি মতো আমাকে মাঝ পথে ছেড়ে চলে গিয়েছিস তাহলে আমার শেষ পথে কেনো আসতে গেলি৷ সেটা তো আমি বলিনি। ”
ভোর থামলো৷ আবদ্ধ হতবুদ্ধি হয়ে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে কান্না করা মেয়েটার দিকে৷ ভোরের একেকটা কথা তার বুকের ভিতরে অঙ্গারের মতো পুড়ে যাচ্ছে। চোখের পানি মুছে ভোর আবারো বললো,
” তুই জানিস? জানবি কিভাবে? কতটা রাত আমি তোর জন্য ছটফট করেছি। হুটহাট পাগলের মতো কেঁদে উঠতাম। শুধু একটা বার তোর কলের আশায়। কিন্তু আমার আশা গুলো তুই ভেঙ্গে দিয়ে কোনো কলই দিতি না। মানে একটা মানুষ হুট করে কিভাবে উধাও হয়ে যায় সেটা তোকে না দেখলে বুঝতাম না। আমি যতবার ভাবি তোর সাথে একটু ভালো মত কথা বলি , সব কিছু ভুলে গিয়ে নাহয় তোর সাথে ভালে থাকি। একসময় নাহয় সব কিছু জিজ্ঞেস করবো কিন্তু তখনই মনে পড়ে তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেছিস যেটাকে বলে ধোকা। তুই আমার কাছে আসলে আমার অসহ্য লাগে সব। তুই চলে যাওয়াতে আমার যতটা না কষ্ট লেগেছিলো তার থেকে বেশি সেদিন বর হয়ে বসে থাকা তোকে দেখে লেগেছিল। আমি চাই না তোকে। চাই না আমি। আই জাস্ট হেইট ইউ, আবদ্ধ। ”
তীব্র যন্ত্রণায় হাসফাস করে উঠলো আবদ্ধ। এই ব্যাথাটা যে হৃদয়ের ব্যাথা। এ ব্যাথা না কাউকে দেখানো যায় আর না কাউকে বুঝানো যায়৷ ভোর বিছানায় বসে মুখে হাত দিয়ে কাঁদছে। একবার ভোরের দিকে এগিয়ে যাবে ভাবলেও ভোর তাকে ঘৃণা করে ভাবলেই বুক ভেঙে আসে। আর এগোয়া না। গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়। সব কিছু যেনো ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। তার ভোর আর তাকে ভালোবাসে না।
আবদ্ধ রুম থেকে বের হয়ে গেছে ভেবে দরজার দিকে তাকালো ভোর। আবদ্ধ রুমে নেই দেখে আবারো কেঁদে উঠলো। কি অসভ্য ছেলে দেখো। একটু এসে তাকে আগলেও নিলো না৷ ভোরের অভিমান যেনো তিরতির করে বেড়ে গেলো। ভোর ভাবলো আর এই অসভ্য, বেহায়া ছেলের জন্য কাঁদবে না। কিন্তু সেই চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছেই৷
” আপু আসবো? ”
সকালের ডাক শুনে তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে পিছনে তাকালো ভোর। ছোট বোনটাকে দেখে মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে বললো,
” দিবো এক চড়। আগে তো পারমিশন নিতি না। এখন ঢং করছিস কেনো? আয়। ”
সকাল দাঁত কেলিয়ে বোনের কাছে আসলো৷ চটপট দেখিয়ে বললো,
” আগে তো আর তোর জামাই ছিলো না। তবে আবদ্ধ ভাইয়া যে এভাবে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো। আম্মু, আব্বু বললো নাস্তা করে যেতে। ভাইয়া বললো কি আর্জেন্ট কাজ আছে নাকি। ”
ভোর ভ্রূ কুঁচকে বললো,
” হয়তো কোনো ইম্পোর্টেন্ট কাজ আছে তাই৷ ”
সকাল বোনের চেহারটা ভালো করে লক্ষ্য করে বললো,
” তুই কি কেদেঁছিস আপু? তোর নাক, চোখ, মুখ লাল হয়ে আছে। চোখগুলোও কেমন ফুলে আছে। ”
ভোর অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। সকাল চোরা চোখে তাকিয়ে আছে বোনের মুখের দিকে৷ কিছু একটা ধরার চেষ্টা তার। ভোর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
” কিছু হইনি। এমনি তোদের মিস করছিলাম। আজকে তো চলে যাবো তাই। ”
সকালেরও ঝুপ করে মন খারাপ হয়ে গেলো৷ তার আপুটা চলে গেলে কেউ তো আর তাকে মায়ের বকুনি থেকে বাচাতে আসবে না। মাঝে মাঝে দুবোনের মশারি টানানো নিয়ে ঝগড়া হবে না। আর না হবে খাবারে ভাগাভাগি করা। সকালের চোখ ছলছল করে উঠলো। ভোরকে জড়িয়ে ধরে বললো,
” ইশ! আমরা দুবোন যদি একই বাড়িতে সারাজীবন থাকতে পারতাম। তাহলে খুব ভালো হতো তাই নারে আপু? ”
ভোর সকালের কথায় হাসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
” তাহলে আমার দেবরজির সাথে তোকে বিয়ে দিয়ে দেই? ”
সকাল চট করে বোনের দিকে তাকালো৷ ভোর আবারো হেসে জিজ্ঞেস করলো,
” আদিলের সাথে তোকে__”
” থাক পরের লাইনটা আর মুখেও আনবি না। তোর ওই খচ্চর দেবরের ভাগ্যে আমার মতো ভালো মেয়ে জুটবে না। উনার কপালে তো পেত্নী জুটবে দেখিস। ”
ভোর হো হো করে হেসে উঠলো, সাথে সকালও।
.
কিছুক্ষণ আগেই আবদ্ধদের বাসায় আসলো ভোর। মেহমানরা অনেকে চলে গেলেও আবদ্ধর বড় খালা থেকে গেলেন৷ নায়েলি বেগম আবদ্ধর উপর চটে আছেন৷ নতুন বউকে বাপের বাড়ি রেখে এই ছেলে কি এমন মহা কাজ সম্পন্ন করতে গেলেন৷ কিচেন রুমে সবার জন্য নাস্তা বানাতে বানাতে আবদ্ধকে বকছে। আবদ্ধ আদিলকে সকালে ফোন দিয়ে বলেছিলো, সে যেনো ভোরকে নিয়ে বাসায় চলে যায়। তার ইম্পোর্টেন্ট কাজ আছে। এটা নিয়ে শ্রাবন্তী আক্তার আফসোস করলেন৷ মেয়ে জামাইটা নাস্তা করে গেলো না। অবশ্য ভোর বুঝতে পারলো, আবদ্ধ তার জন্য আর এদিকে আসলো না।
” তা ও নতুন বৌ! বাপের বাড়ি থাইকা কোনো কাজ কাম শিখছোনি? ”
আবদ্ধর বড় খালা নারগিস বেগমের কথায় ভোর চমকে উঠলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই শ্বাশুড়ি তার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়েছে। আলিফাও বসে আছে৷ নারগিস বেগমের কথার জবাবে ভোর বললো,
” জ্বি খালামনি৷ আলহামদুলিল্লাহ রান্নাবান্না অনেকটা জানি। ”
ভোরের জবাবে নারগিস বেগম সন্তুষ্ট হলেন। গালের ভিতর পানে আরেকটু আলগা চুন দিয়ে বললেন,
” মাশাল্লাহ! কাইলকা তাইলে তোমার হাতের চা খাওয়াইও এক কপ! ”
ভোর মিষ্টি করে হেসে মাথা দুলালো৷
” জ্বি ইনশাআল্লাহ! ”
.
রুমে আসার পর থেকেই ভোর এক দন্ড স্থির হতে পারছে না৷ আলিফা থেকে যখন কথাগুলো শুনেছে তখন থেকে শান্তি পাচ্ছে না। ভোর তখন আলিফার সাথে গল্প করার মাঝেই আলিফা বলে উঠলো,
” তুমি জানো ভোর? তোমাকে বিয়ে করার জন্য আবদ্ধ সেকি পাগলামি৷ আম্মু যখন বললো মেয়ের ছবি দেখা। তখন তোমার ছবি দেখে আম্মুর পছন্দ হলেও চেহারাকে এমন ভাব করেছিলো আবদ্ধর তখন ঘাম ছুটে গেছিলো। তখন আমি আর আদিল হাসি আটকে দাড়িয়ে ছিলাম৷ তখন কিন্তু আমার বিয়েও হয়নি। ”
ভোর অবাক হয়ে প্রত্যেকটা কথা শুনছিলো। আবদ্ধ সত্যি এমন কিছু করেছে। ভোর জিজ্ঞেস করলো,
” তাহলে অনেক আগে থেকে চিনেন আমাকে? ”
আলিফা ভ্রু কুঁচকে বললো,
” কি আপনি আপনি করছো। তুমি করে বললে আমি খুশি হবো৷ তবে তোমাকে আমাদের পরিবারের সবাই চিনে। তুমি যে আবদ্ধর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলে সেটাও তো জানতাম৷ ”
ভোরের মুখটা হা হয়ে গেলো। সে তো খালি আদিল আর আলিফাকে চিনতো বেশি। কারণ আবদ্ধ ওদের ছবি দেখিয়েছে তাকে। আলিফা ভোরকে অবাক হতে দেখে হাসলো। সে তো এখনো চরম অবাক হওয়ার কথাটা বলেনি তাকে। আলিফা মিটমিট করে হেসে বললো,
” এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। তুমি তো এখনো তোমার বিয়ের কথাটাই শুনোনি। ”
ভোর কিছু বললো না। চুপচাপ যখন এতোটুকু শুনে অবাক হয়েছে বাকি অবাক হওয়ার জন্যও নাহয় প্রস্তুতি নিক। আলিফা পেট চেপে ধরে একটু নড়ে বসলো৷ ভোর তা খেয়াল করলো। মাতৃত্ব কি সুন্দর তাই না! মা ডাক শুনার জন্য একটা মেয়ে কত সংগ্রাম করে। আলিফা ফের বললো,
” তোমার বিয়েটা কিন্তু আবদ্ধর সাথেই হতো। সিফাতের সাথে না। তোমার বরই ছিলো আবদ্ধ। আর একটা কথা তোমাকে বলি, আবদ্ধ আর তুমি তো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলে। নিশ্চয় এখনো তুই তোকারি করে কথা বলো? ”
ভোর কি বলবে ভেবে পেলো না। তার সন্দেহটা যে কড়ায়গণ্ডায় মিলে যাবে সেটা কখোনো ভাবেনি। আলিফার প্রশ্নে ভোর মাথা নাড়ালে আলিফা বললো,
” এখন যখন তোমরা স্বামী স্ত্রী। তাই প্লিজ চেষ্টা করিও তুই তোকারিটা বাদ দেওয়ার। মুরব্বিরা এটা নিয়ে খারাপ ভাববে৷ আমাকে একটু ধরো তো রুমে যাবো। শরীরটা ভালো লাগছে না। তোমার যা জানার সেটা আবদ্ধকে জিজ্ঞেস করিও, কেমন?”
ভোর আলিফাকে উঠতে সাহায্য করলো। সে তো এখনো ঘোরের মাঝে আছে৷ তার পিঠ পিছে এতো কিছু হয়ে গেলো সে টেরও পেলো না। আহ্জকে আবদ্ধ আসলে সব কিছু জিজ্ঞেস করবে সে। এতো ছলনা কেনো তার সাথে।
চলবে!