#এই_ভালো_এই_খারাপ(৩)
#Jannat_prema
ভোর অন্ধকারে আবদ্ধর গলাটা আরো ভালো করে চেপে ধরলো৷ ব্যাটাকে জব্দ করার সঠিক নিয়মটাই এপ্লাই করেছে ভোর। আবদ্ধ ওর থেকে অনেকটা লম্বা হওয়ায় আবদ্ধর গলটা ধরতে পা উচু করলো। ঝাঝালো স্বরে বলে উঠলো,
” তোকে আমি ছাড়বো না, হারামি! তোর সব চিন্তা ভাবনা আমি জেনে গেছি। আজকে তোকে আমি গলা চেপে মেরে ফেলবো। কি ভেবেছিস আমি জানতে পারবো না? এতো সহজ? ”
ভোরের কথায় আবদ্ধ ফিক করে হেসে উঠলো। অন্ধকার হাতড়ে ভোরের কোমড় জড়িয়ে পিছন থেকে সামনে এনে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। ভোর এতে আরো ক্ষেপে গেলো। আবদ্ধর গলা চেপে আছে এখনো। নিজের কোমড়টাকে এদিক ওদিক নাড়াতে নাড়াতে ব’লে উঠলো,
” আবদ্ধ আমার কোমড় ছাড়! একদম আমাকে টাচ করবি না।”
আবদ্ধ ভোরকে নিজের সাথে আরো একটু চেপে ধরলো। চোখ সয়ে যাওয়া অন্ধকারে ভোরের দিকে তাকিয়ে ব’লে উঠলো,
” বেকার নিজের শক্তিগুলো ক্ষয় করছিস কেনো? তোর এই চুনোপুটি হাতের চাপে আমার গলার তো কিছু হলো না, তবে তোর শক্তির অপচয় হচ্ছে। তবে আমার আরাম লাগছে। আরেকটু চেপে ধর মজা লাগছে কিন্তু! তুই যেনো কি জানার কথা বললি না, সেটা তুই এখন জানলেও কি পরে জানলে কি। তোর তো বিয়ে হয়ে গেছে আমার সাথে। ”
আবদ্ধর কথায় অবাক হলো ভোর। আবদ্ধ এখনো তার কোমড় জড়িয়ে আছে৷ গলা থেকে হাত সরিয়ে আচমকা আবদ্ধর চুল টেনে ধরলো। এতে আবদ্ধর কপালের সাথে বাড়ি খেলো। কপালে ব্যাথা পেলেও সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে ব’লে উঠলো,
” এখন আরাম লাগছে? তোর আরাম আমি হারামে রুপান্তর করবো। চিনিস না তো আমায়। বিয়ে তো তুই করেছিস। তবে তোকে কি ভাবে জ্বালাই সেটা দেখবি এবার। ”
চুল ধরায় আবদ্ধ ভড়কে গেলো৷ অন্ধকারে সে ভোরকে নিয়ে কোথায় দাড়িয়ে আছে ভালো মতো ঠাহর করতে পারলো না৷ ভোরকে জড়িয়ে ধরেই এগিয়ে গেলো সুইচ বোর্ডের কাছে। বাতির সুইচ দিতেই পুরো রুমে আলো জ্বলে উঠলো। ভোর দাঁত চেপে অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে আবদ্ধর দিকে। আবদ্ধ মাথাটাকে নিচু করে ভোরের নাকে চট করে চুমু খেলো। হুট করে এমন করায় বিদুৎ বেগে আবদ্ধকে ছেড়ে ধ্বাক্কা মেরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো ভোর। নিজের কাজে সফল হতেই আবদ্ধ প্রসস্থ এক হাসি দিয়ে বললো,
” ছাড়লি কেনো? এখন ধর আমাকে! তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। এই আফিয়ান আবদ্ধর সাথে টক্কর দিতে আসবি না। ”
রাগে পুরো মুখ লাল হয়ে আছে ভোরের। আবদ্ধর দিকে তেড়ে এসে বললো,
” তুই এটা কি করেছিস? ”
ভোরের দিকে এক কদম এগিয়ে আবদ্ধ বললো,
” কেনো? তুই দেখিসনি কি কিরেছি? চুমু খেয়েছি। আফটার অল ইউ আ’র মাই সুইট ওয়াইফ বলে কথা। ”
আবদ্ধকে এগোতে দেখে দমে গেলো ভোর। কয়েক পা পিছিয়ে আবদ্ধর দিকে তর্জনি আঙ্গুল তুলে বললো,
” তোর চরিত্র খুব খারাপ আবদ্ধ! ”
আবদ্ধ আবারো এগোলো ভোরের দিকে। বাকা হেসে বলে উঠলো,
” তাই? আমি এখোনো তোর সাথে কিছু করলাম-ই না তাতে চরিত্র খারাপ হয়ে গেলো? আর যদি করি__”
” স্টপ আবদ্ধ! তুই আমার থেকে একশ হাত দূরে দূরে থাকবি৷ যদি আমার কাছে আসার চেষ্টা করিস তাহলে, তাহলে আমি বালিশ দিয়ে বাড়ি মেরে তোর মাথা ফেটে ফেলবো । ”
ভোরের কথায় কপাল কুঁচকে গেলো আবদ্ধর। একবার ভোরকে দেখছে আবার বালিশের দিকে তাকাচ্ছে। আবদ্ধর এমন দৃষ্টি দেখে ভোর মনে মনে নিজের উপর বিরক্ত হলো। কি বোকা কথাটাই না বললো এখন। হঠাৎ আবদ্ধ জোরে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে ভোরের দিকে তাকিয়ে ব’লে উঠলো,
” সিরিয়াসলি! বালিশ দিয়ে বাড়ি মারলে মাথা ফাটে? ”
ভোর নাক ফুলালো। বিরক্ত লাগছে তার৷ যেটা বলবে সেটা না বলে কি ফাও কথা বলেই যাচ্ছে। ভোর চোখ ছোটো ছোটো করে বলে উঠলো,
” সিফাতকে কোথায় রেখেছিস? ”
আবদ্ধর মুখের হাসি উবে গেলো। তবে বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। নির্লিপ্ত স্বরে বললো,
” ও ওর জায়গায় আছে। ”
” তুই ওকে কোথায় রেখেছিস বল। তুই এমনটা করতে পারিস না আবদ্ধ! ”
এতোক্ষণ মেজাজ ঠান্ডা থাকলেও ভোরের সিফাতকে নিয়ে এতো প্রশ্ন ভালো লাগলো না আবদ্ধর। মেজাজ খারাপ করে ভোরকে আচমকা বিছানার উপর চেপে ধরলো। আবদ্ধর এমন কাজে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আবদ্ধর দিকে৷ রাগে ছেলেটার মাথার রগ ফুলে উঠেছে। চোয়াল শক্ত করে ভোরের মুখের উপর ঝুকে বললো,
” এতো প্রশ্ন করছিস কেনো ওর ব্যাপারে। আমার জিনিস সিফাত কেনো নিবে? আবদ্ধর জিনিস আবদ্ধই নিবে। ওর ব্যাপারে এতো কৌতুহল দেখাতে যাবি না, ভোর পাখি। মাইন্ড ইট! ”
একে তো আবদ্ধর এমন ঝুকে থাকায় কেমন অসস্তি হচ্ছে। এর মধ্যে আবদ্ধর রাগ্বত স্বর শুনে শুকনো ঢো*গ গিললো। বলে উঠলো,
” সিসিফাত তো তোর চাচাতো ভাভাই হয়। ”
আবদ্ধর রাগ পড়ে গেলো। ভোরের মুখের দিকে তাকিয়ে কখোন যে ঘোরের মাঝে ভোরের একদম কাছে চলে এসেছে খেয়ালই নেই। ভোরের ঠোঁটের দিকে তাকিয়েই আবদ্ধ জবাব দিলো,
” তো কি হয়েছে? ”
ভোর চমকে গেলো আবদ্ধর এমন স্বর শুনে। বুঝতে পারলো আবদ্ধ ঘোরের মাঝে আছে। যে কোনো মুহুর্তে কিছু একটা করতে পারে। ভোর আবদ্ধর হাতের নিচ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে আবদ্ধর বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বিছানা থেকে উঠে গেলো। মুহুর্তে আবদ্ধর ঘোর কেটে গেলো। ভোরের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,
” ধাক্কা মারলি কেনো? ”
” তো কি করবো৷ তোর মতো হাতি আমার গায়ের উপর থাকলে আমার কষ্ট হবে না? ”
আবদ্ধ উঠে বসলো। চুপ থেকে কিছু ভাবলো। এরপর ভোরের দিকে তাকিয়ে বললো,
” শুয়ে পড়। অনেক রাত হয়েছে। তোর জন্য আমার রোমান্টিক মুডটা ভেস্তে গেলো। পরে এটা আমি সুদে আসলে তুলবো। মনে রাখিস। ”
বলে ওয়াশরুমে গেলো আবদ্ধ। ভোর হা করে তাকিয়ে আছে। এই ছেলেটা ঠিক আগের মতোই আছে৷ ভোর আর মাথা ঘামালো না। সারাদিনের ধকলে চোখে ঘুমের আনাগোনা। বিছানার মাঝখানে কোলবালিশ রেখে নিজের জায়গায় সুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে গেলো।
.
রাইসা আর মিমের খোঁচাখুঁচিতে ছাঁদে পা রাখলো মেয়েটা। একটু দূরেই আদিল ছাদের রেলিং ধরে ফোনে হেসে হেসে কথা বলছে। মনে
মনে অনুশোচনায় ভুক্তভোগী সে। যখন থেকে জানতে পেরেছে আদিল তার দুলাভাইয়ের সেই ছোট ভাই, তখন থেকে অফসোস করছে। ইশ কেনো যে লোকটার সাথে এতো ঝগড়া করতে গেলো? এখন নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে। সকাল আদিলের পিছনে গিয়ে দাড়ালো। কান পেতে শুনার চেষ্টা করলো কার সাথে এমন দাঁত বের করে হেসে কথা বলছে ছেলেটি। নিজের পাশে সকালকে কান পাততে দেখে কপালে ভাজ পড়লো তার৷ কলের ওপাশের ব্যাক্তিটিকে বললো,
” ওহ বেবি আই এম কলিং ইউ লেটার! ”
সকাল দ্রুত সরে গেলো৷ মনে মনে, বেবি কথাটাকে কিছুক্ষণ বিকৃত করলো। আদিলকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে হেসে উঠলো। সকালের এমন হাসি দেখে আদিলের খটকা লাগলো। মেয়েটার হাসিটা দেখে ঠিক হজম হলো না। আদিল ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকে ব্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো,
” এতো রাতে এখানে কি করছো? কিছু বলবে আমায়? ”
সকাল মাথা ঝাকালো। সে কিছু বলবে৷ আদিল বললো,
” বলো কি বলবে আমাকে। ”
আদিল জানে সকাল কি বলতে এসেছে তাকে৷ তবুও তার মুখ থেকে শুনার জন্য প্রশ্ন করেছে। সকাল ডান হাত দিয়ে বাম হাত কচলাতে কচলাতে বললো,
” আআসলে, ইয়ে মানে আদিল ভাইয়া। আই এম সরি! ”
আদিল চরম অবাক হলো সকালের এমন মিষ্টি করে কথা বলার ধরন দেখে। কি সুন্দর ভাইয়া ডাকছে মনে হচ্ছে যেনো তার মায়ের পেটের ভাই৷ ভাইয়া ডাকটা পছন্দ হলো না আদিলের৷ তাই মুখটাকে গম্ভীর করো বললো,
” এতো ভাইয়া ডাকতে হবে না। আমি তোমার ভাই লাগি না। বুঝছো? ”
সকাল কপাল কুঁচকে তাকালো। ভাইয়া না ডাকলে তো কি ডাকবে? আংকেল? নাকি মামা? প্রশ্নটা করেই ফেললো সকাল,
” তাহলে কি আংকেল অথবা মামা ডাকবো? ”
আদিল অবাক হয়ে বললো,
” আমাকে কি আংকেল মামাদের মতো লাগে তোমার কাছে? ”
সকাল অকপটে জবাব দিলো,
” আপনিই তো বললেন ভাইয়া না ডাকতে। তো আমি কি বলে ডাকবো আপনাকে? ”
আদিল বিরক্ত হলো। কেনো আংকেল, মামা ছাড়া কি আর কিছু ডাকা যায় না? একটু ‘ এই যে শুনুন ‘ এটাও তো বলা যায়। এই ডাকটা শুনলে যে বউ বউ ফিলিংস পাওয়া যায় সেটা কি এই মেয়ে জানে? আদিল মনের কথা মনে রেখেই বললো,
” কি বলতে এসেছো সেটা বলে চলে যাও। ”
আদিলের কথাটা ভালো লাগলো না সকালের। যেভাবে যাওয়ার কথা বলেছে যেনো মনে হচ্ছে সে এখানে থাকতে এসেছে৷ মেজাজ খারাপ হলো সকালের৷ সরি তো বললো না উল্টো রাগ দেখিয়ে বললো,
” শুনুন! আমি এখানে থাকতে আসিনি। যে কথাটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা আর আপনাকে বলবো না৷ আপনি তার যোগ্য না৷ হুহ! ”
বলেই ধুপধাপ পা ফেলে ছাঁদ থেকে চলে গেলো সকাল। আদিল হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো সেদিকে। সকালের এই ভালো এই খারাপ রুপটা যেনো তাকে বেকুব বানিয়ে গেলো।
.
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ভোরের ঘুমন্ত চেহারাটা চোখে পড়লো আবদ্ধর। ভোরের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। তার ব্লু রঙের টিশার্ট গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আবদ্ধ খেয়াল করেনি কখোন ভোর তার টিশার্ট গায়ে দিয়েছে। ভোরের ঘুমন্ত মুখের সামনে হাটু মুড়ে বসে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আবদ্ধ। এই মায়াবি চেহারার মেয়েটাকে ছাড়া যে থাকতে পারেনা৷ তাই তো কত ছলনা করে তাকে পেয়েছে। ভোরের কপালের উপর পড়ে থাকা চুলগুলোকে কানের পাশে গুজে দিয়ে আবদ্ধ ব’লে উঠলো,
” আচ্ছা তুই ভোরের স্নিগ্ধতা দেখেছিস? তুই একদম সেই ভোরের স্নিগ্ধতার মতো। আমার সকল মুগ্ধতা যেনো তোকে নিয়ে ঘিরে আছে। তোর সকল প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিবো আমি। একটু অপেক্ষা কর। ”
এরপর ভোরের কপালে চুমু খেয়ে বারান্দায় চলে গেলো আবদ্ধ। সিগারেট জ্বালিয়ে রেলিংয়ে এক হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোয়া ছাড়লো। ভোর আর আবদ্ধ ছিলো বেস্ট ফ্রেন্ড। ক্লাস টেন থেকেই দুজনের বন্ধুত্ব ছিলো। দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড হলে সারাক্ষণ সাপে নেউলের মতো লেগে থাকতো। ভোরের পরিবারে এসব পছন্দ ছিলো না বলে ভোরও কখোনো জানায়নি তার ছেলে ফ্রেন্ডর কথা। এভাবেই দুজনে বড় হতে থাকে। যখন কলেজে উঠলো আবদ্ধ নিজের অনুভূতির কথা ভোরকে বললে ভোর সাথে সাথে না করে দেয়। কতদিন সে আবদ্ধর সাথে কথা বলেনি। ভোরের এমন এড়িয়ে চলায় আবদ্ধ পাগলামি করতে শুরু করে। একদিন রাতে ভোরের ফোনে কল দিয়ে আবদ্ধ বলে উঠলো,
” আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলিস না, ভোর পাখি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোকে ছাড়া। ভালোবাসি তোকে। আচ্ছা থাক তোকে আমায় ভালোবাসতে হবে না। তুই শুধু আগের মতো থেকে যা আমার পাশে। ”
চলবে!