এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় পর্ব-০৯

0
511

#এই_সুন্দর_স্বর্ণালী_সন্ধ্যায়
#পর্বসংখ্যা_০৯

সন্ধ্যায় পড়তে বসতে হয় — সম্ভবত এটা বাঙালিদের সর্বজনীন বিধির আওতায় পড়ে। প্রাইমারি থেকে কলেজ সব জাতের শিক্ষার্থীদের বাড়িতেই বাপ-মায়েরা এই নিয়ম চালু করে রেখেছে। সন্ধ্যাবেলায় বাড়ির সবাই যখন সান্ধ্যকালীন চায়ের আড্ডায় মেতে ওঠেন, বাচ্চারা তখন বইয়ের ভাঁজে মুখ গুঁজে থাকে। অরুণা ম্যানশনও এর ব্যতিক্রম নয়। কটা দিন বিয়ের আমেজে সেজে-গুজে বেড়িয়ে রিংকু – টিংকুর পড়ালেখা চাঙ্গে চড়েছে। আজ বাড়ি ফাঁকা হতেই ছোট চাচী কান ধরে দুটোকে পড়তে বসিয়েছেন। কিন্তু বসালে কি হবে? পড়তে তো হবে?
বদমায়েশির চুড়ামণি, শিরোমণি এই রিংকু – টিংকুর কি সহজে পড়া হয়?
কাজের মেয়েটা জলখাবার দিয়ে গেল। সেই রোজকার এক খাবার। গ্লাস ভর্তি দুধ বিস্কিট। দেখেই মুখ কুঁচকে ফেললো দু’ ভাই। এ বাড়ির সবাই জানে, দুধ নামক তরল পদার্থের প্রতি তাদের কি পরিমাণ অনাসক্তি! তবুও রোজ এটাই আসে নাশতা হিসেবে। বিস্কিটটা তবুও বদলায়, কখনো বা অন্য কিছু আসে। কিন্তু দুধের হাত থেকে নিস্তার নেই!
ট্রে থেকে গ্লাস নামিয়ে মেয়েটা বললো,
— “ভাইজানেরা দুধটুকু খাইয়া লইয়েন কইলাম। ফালায় দিয়েন না। ছোট আম্মা জানলে রাগ করবো!”
— “আরে যাও, যাও। খেয়ে নেব আমরা!”
মেয়েটাকে বিদায় করে টিংকু। তারপর উঠে গিয়ে জানালা দিয়ে দু’ গ্লাস দুধ ঢেলে দেয় বাইরে। ফিরে এসে বসে বিছানায়। রিংকু বিস্কিটের পিরিচটা দখলে নিয়ে বসেছে। সেখান থেকে একটা বিস্কিট তুলে নিয়ে বসলো সামনের চেয়ারটায়। টেবিলে খোলা বইখাতার দিকে চেয়ে বললো,
— “এটা কোনো কথা, বল? বাড়িতে একটা বিয়ে — আর আমাদের ঘাড় ধরে পড়তে বসিয়ে দিয়েছে?”
— “বিয়ের অজুহাতে কদিন পড়া হয় নি, সে হুশ আছে? সামনের সপ্তাহে মান্থলি টেস্ট শুরু হবে। সিলেবাস কিছু হয়েছে?”
কপট রাগ দেখায় রিংকু। দু ’ ভাইয়ের মধ্যে তুলনামূলক সে একটু লেখাপড়ায় আগ্রহী। টিংকু তো পুরোপুরি বি|দ্বে|ষী এ ব্যাপারে। ভাইয়ের জ্ঞানী আলাপে সে বিরক্ত হয়,
— “আরে রাখ তোর সিলেবাস। আমি বাঁচছি না আমার জ্বালায়!”
— “তোর আবার কীসের জ্বালা?”
— “দু’ বছর ধরে ঝুলতে-ঝুলতে ফেলটুস অনুপার বিয়ে হয়ে গেল। আর আমি এখনো আমার রাইমাকে পটাতেই পারলাম না।”
— “পড়ালেখা ছেড়ে তুই এখন রাইমার কথা ভাবছিস?”
রিংকু অবাক হয় খানিক। রাইমা ওদের ক্লাসমেট। দারুণ সুন্দরী এই মেয়েটির প্রতি টিংকুর প্রবল আকর্ষণ। বছর তিন ধরে ওই মেয়ের পিছে সে ঘুরছে। যদিও পাত্তা পাচ্ছে না একরত্তি! দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টিংকু বলে,
— “অনুপার মতো বজ্জাত মেয়ের যদি প্রেম হয়, তবে আমার মত ভদ্র ছেলের সঙ্গে রাইমার মতো ভদ্র মেয়ের প্রেম কেন হবে না?”
— “নিজেকে ভদ্র দাবী করে আর পাপ বাড়াস নে ভাই! ধর্মে সইবে না!”
বিড়বিড় করে ছেলেটা। ওর কথার দাম দেয় কে? উদাসী টিংকু তখন দার্শনিক চিন্তা-ভাবনায় ব্যস্ত,
— “আমি একটা কথা চিন্তা করলাম, জানিস? পৃথিবীতে ভালো মানুষের কোনো সুখ নেই। তারা তাদের ভালবাসা পায় না। এই দেখ না, আমি কতো ভালো মানুষ। ক্লাস ফাইভ থেকে রাইমাটার পেছনে পড়ে আছি। কোনো লাভ হচ্ছে? ভালোবাসা পাচ্ছি? পাচ্ছে কে বল তো? অনুপার মতো বদগুলো। এই দুনিয়ায় আসলে ভালো মানুষের কোনো দাম নেই। বুঝলি?”
ওর জ্যাঠামী দেখে কপাল কুঁচকে রিংকুর প্রতিবাদ,
— “না বুঝি না। তোর এই পাকামো দেখে আব্বা যখন পেঁদিয়ে পেছন লাল করে দেবে? তখন বুঝবো।”
ভালো কথার মধ্যে এই উত্তম-মধ্যমের প্রসঙ্গ আনলে বেজায় খাপ্পা হয় টিংকু। কিঞ্চিৎ রাগ করে বলে,
— “আমার কথা তোর পছন্দ হচ্ছে না, না? আব্বার ক্যালানি খেতে খুব মন চাইছে বোধ হয়? তো আব্বাকে ডাকবো আমি? ডেকে বলবো, তোর কুকীর্তির কথা? গতমাসে স্কুলের ফিসের নাম করে আব্বার কাছ থেকে যে হাজার টাকা মে|রে দিয়েছিস?”
দোষ ধরতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো,
— “আমি একাই সে টাকা মেরেছি? তুই বুঝি খুব তুলসী পাতা?”
— “সে তো আমি। এমনই একটু, হে হে হে।”
দমে গিয়ে হে হে করে হেসে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। রিংকুও ভাইকে দেখিয়ে দাঁত বের করে হাসে।
হঠাৎ কি একটা মনে পড়ে যাওয়ায় তার ভাবগতির পরিবর্তন হলো। ভাইয়ের দিকে ঝুঁকে এসে টিংকু বলে,
— “একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস, রিংকু?”
— “কি ব্যাপার?”
বিস্কিটে ছোট্ট কামড় দিয়ে জিজ্ঞেস করে সহোদর।
— “নিখিল ভাইয়ের হাবভাব! আমার ঠিক ভালো ঠেকছে না। কেমন যেন লাগছে!”
— “কেমন?”
ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ওর প্রশ্নে একটু চুপ করে টিংকু। চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে বিছানায় চড়ে। ভাইয়ের ঠিক সামনে বসে, মুখের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
— “নিখিল ভাই কিছু একটা পাকাচ্ছে। আমার ধারণা, ও ব্যাটা আপার উপর ফল করেছে।”
— “কে? ঋতুপা?”
সন্দিহান সুরে বললো রিংকু। ওর দ্বিধান্বিত উত্তর,
— “ঠিক বুঝতে পারছি না। ঋতুপাও হতে পারে। আবার চারুপাও। নিখিল ভাইকে দেখছি, ওদের পিছ পিছ ঘুরতে। ওরা যেখানে যাচ্ছে, বা যায়-— সেখানেই এই লোক থাকছে, জানিস? ঋতুপা ছাদে ঘুরাফেরা করে। নিখিল ভাই ছাদে। চারুপা দখিন হাওয়ায় বসে। সন্ধ্যায় দেখি, উনি দখিন হাওয়ায় বসে গলা ছেড়েছেন! বুঝছিস কিছু? এই লোকের মতলব? আমি নিশ্চিৎ এ ব্যাটার চরিত্রে দোষ আছে!”
ত্যক্ত হয়ে রিংকুর কথা,
— “এমনই একটা কথা বলবি না তো। সৌভিক ভাইয়ের বন্ধু উনি। এতো খারাপ নিশ্চয়ই নন! ভাইয়াকে তো চিনিস। কত্তো চুজি। থার্ড ক্লাস কারো সঙ্গে সে ফ্রেন্ডশিপ করবে?”
— “আরে ধুর। সে কথা নয়। আমার খটকা অন্য জায়গায়। নিখিল ভাই খারাপ কিনা আমি জানি না। কিন্তু উনি আমাদের কোনো এক আপার উপর ফল করেছে, এ আমি সুনিশ্চিত!”
— “কচুর সুনিশ্চিত! কি দেখেছিস, কি বুঝেছিস আল্লাহ্ মালুম। এখন ঘরে বসে খিচুড়ি পাকাচ্ছিস। যা সর। পড়তে বসবো।”
উঠে দাড়ালো রিংকু। ওকে পাশ কাটিয়ে পাশের চেয়ার টেনে বসলো। বইখাতা খুলে মনোযোগ দিলো। ওর কাজে মহাবিরক্ত হয়ে মাথায় গাট্টা বসালো টিংকু,
— “আমার কথার তো দাম দিচ্ছিস না। পড়ে বুঝবি। গরীবের কথা বাসি হলেও ফলে! হুহ্!”
___

রাতের খাবার খেয়ে ঘরে ফিরতেই সৌভিকের দেখা মিললো। বিছানার পাশের সিঙ্গেল সোফাটায় বসে আছে। থমথমে চাউনি মেলে চেয়ে আছে ওরই দিকে। নিখিল অবাক হলো একটু, বললো,
— “সারাদিন কোথায় ছিলি? দেখাই পেলাম না তোর! আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে, একা ফেলে উধাও হলি?”
সৌভিকের কোনো ভাবাবেগ হলো না। সে গম্ভীর স্বরে উচ্চারণ করলো,
— “তোর সঙ্গে কথা আছে।”
— “কথা তো আমারও আছে। কিন্তু তুইও তো না শুনে পালিয়ে গেলি। দাড়া, একটু কাজ আছে। সেরে আসছি।”
বলেই ঘরের অন্যদিকে যেতে উদ্যত হলো নিখিল। রাশভারী গলায় আদেশ দিলো,
— “কাজ পড়ে। আগে কথা শেষ করে নেই। বারান্দায় চল।”
বলেই আসন ছেড়ে উঠে দাড়ালো। যন্ত্রমানবের মতো কাঠকাঠ ভঙ্গিমায় হেঁটে ব্যালকনিতে চলে গেল। নিখিল কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। সুযোগ হলো না। অগত্যা বন্ধুবরের ইচ্ছে অনুযায়ী ওর পিছু পিছু হাঁটলো।
আলোহীন জায়গাটাতে কুচকুচে কালোর পসরা। সামনেই অন্ধকার বাগান, এরচেয়েও অন্ধকার এই ব্যালকনি। পাশাপাশি পেতে রাখা দু’টো বেতের চেয়ার। তারই একটাতে সৌভিক এসে বসেছে। নিখিলকে চেয়ার টেনে সামনে বসবার ইঙ্গিত দিতেই ও বসলো।
মুখোমুখি দু’টি মানুষ বসে।
পিনপতন নীরবতা ভেঙে কথা শুরু করলো সৌভিক,
— “তুই চারুকে নিয়ে সিরিয়াস?”
— “তোর কি মনে হয়? আমি ফাজলামি করেছি? নেহাৎ মজা করে একটা কথা বলে তোর ঘুষি হজম করেছি?”
প্রশ্নের বিপরীতে প্রশ্ন। সৌভিক শ্বাস ছাড়লো একটা। নিখিলের হাবভাব বলে দিচ্ছে ও যথেষ্ট সিরিয়াস। এমতাবস্থায় কি করে ও বলবে সবটা? অথচ না বলেও উপায় নেই। অদ্ভুত জটিল এক পরিস্থিতির কবলে ওরা পড়েছে। যেখানে সবকিছু খোলাসা না করলে আর চলছেই না!
বললো,
— “তুই কিছুই জানিস না। চারুকে তোর চোখের দেখায় ভালোলেগেছে। তাই বলছিস, ভালোবাসিস। স্বপ্ন দেখছিস। কিন্তু যাকে নিয়ে তোর এত কল্পনা-জল্পনার আসর। তার সম্পর্কে তোর জানা উচিৎ না?”
সরাসরি তাকায় ওর দিকে। অন্ধকারে নিখিলের মুখটা স্পষ্ট বোঝা যায় না। তাই ওর চেহারায় কি ভাবের খেলা চলছে তা দেখতে পেল না। শুধু শুনতে পেল নিখিলের আত্মবিশ্বাসী জবাব,
— “যতটুকু জানবার, সম্ভবত আমি জেনে নিয়েছি। চারু তোর বড় চাচার মেয়ে। ছোট বোন অনুর বিয়ে হয়েছে দু’দিন আগে। বিয়েটা প্রেমের। চারু মেয়েটাকে দেখে মনে হয়, শান্ত-শিষ্ট; কিছুটা অন্তর্মুখী চরিত্রের। পড়ালেখা কতদূর আমি জানি না। তবে বোধ হয়, অনার্স পড়ছে। পাশও করতে পারে। আর মেয়ের বাবা সম্বন্ধে? তোদের দাদা আহাদ রাজার গড়া পরিবারিক ব্যবসা, এখন বংশানুক্রমে তোর বাবা – চাচা দেখছেন — সে কি আমার অজানা? তাহলে বল এতকিছু জানবার পর বিয়ে করতে আর কি লাগবে?”
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো নিখিল। তার ভাষ্যমতে বিয়ে করতে এসব জানলেই চলবে। কিন্তু ছেলেটা সব খবর নিলেও আসল খবরটাই যে নেয় নি, এটা বেশ বুঝলো সৌভিক। ওর কথার রেশ ধরেই বললো,
— “ব্যস? এটুকুই?”
— “তুইই বল। আর কিছু লাগবে?”
— “তোর কি মনে হয় না, একটা মেয়েকে বিয়ে করবার আগে তার ম্যারিটাল স্ট্যাটাস সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিৎ?”
দাঁতে দাঁত পিষে প্রশ্নটা ছুঁড়ে। হঠাৎ করে এমন কথায় একটু ভড়কায় নিখিল। তথাপি বলে,
— “চারুকে দেখে মনে হয় না, সে বিবাহিত। আর বিবাহিত হলে অনুষ্ঠানে ওর বরকে দেখতাম না?”
সৌভিকেরও পাল্টা যুক্তি,
— “হতে পারে তার বর আসে নি। বিদেশে বা দূরে থাকে। আর তোর মাথায় এই প্রশ্নটা কেন আসলো না, যে বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারে বড় বোনের পড়ে ছোট বোনের বিয়ে হয়। সেখানে চারুকে রেখে ছোট বোনকে কেন বিয়ে দেবে?”
এই খটকা তো নিখিলেরও লেগেছিল। কিন্তু চারুর প্রতি অত্যধিক মুগ্ধতায় ও বেচারা ভুলে গিয়েছিল সারা দুনিয়া। প্রশ্নটা মাথায় এসেও যেন আসে নি। সৌভিক ফের শুধায়,
— “বল, প্রশ্নটা তোর মাথায় আসে নি? এই ব্যাপারটা নিয়ে খটকা লাগে নি তোর?”
প্রত্যুত্তরে বিভ্রান্ত সুর,
— “আমি কিছু বুঝতে পারছি না, সৌভিক। তুই এরকম পেঁচিয়ে কথা বলছিস কেন?”
— “কথাটা পেঁচানো বলেই পেচাতে বাধ্য হচ্ছি।”
সরল জবাব। যদিও তারমধ্যে সরলতার লেশ অবধি পেল না নিখিল! অধৈর্য হয়ে উঠলো ক্রমশ,
— “প্লিজ, সৌভিক। ক্লিয়ার করে বল সবকিছু। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে অতঃপর সৌভিকের স্বগতোক্তি,
— “চারু অবিবাহিত নয়, নিখিল। ওর বিয়ে হয়েছিল। মাস ছয়েকের সে সংসার টেকে নি বিধায় অনুর বিয়েতে ওর বরকে তুই দেখতে পাস নি। চারু কুমারী নয়। ডিভোর্সীর ট্যাগ ওর নামের সাথে যুক্ত!”
বেশ বিষণ্ন শোনালো ওর কণ্ঠস্বর। সহসা কি বলবে কোনো ভাষা খুঁজে পেল না নিখিল। মনে হলো যেন, ওর বিশাল শব্দভাণ্ডার মুহূর্তেই শুন্যতায় ডুবে গেছে। অনেক হাতড়েও কোনো সুরাহা হলো না তার!
নিখিলের নীরবতা দেখে হয় তো কিছু আন্দাজ করতে পারলো সৌভিক। রাখঢাক না করেই তাই সবটা জানালো,
— “চারুর বিয়ে হয়েছিল আজ থেকে প্রায় আড়াই বছর আগে। অনুর ভাসুর, মাহতাবকে দেখেছিলি গতকাল অনুষ্ঠানে? ওই মাহতাবই হলো চারুর প্রাক্তন বর। মাহতাবের সূত্র ধরেই মাহাদের সঙ্গে অনুর পরিচয়। বিয়ে।”
— “ওদের ডিভোর্স কেন হলো?”
নিস্পলক চোখে তাকালো। আরেকটা দীর্ঘশ্বাস গোপনে মোচন করলো সৌভিক,
— “চারুর শারীরিক সমস্যা আছে। শি ক্যান নেভার বি অ্যা মাদার। মাতৃত্বের স্বাদ নেয়ার ক্ষমতা ওর নেই। মাহতাব বিয়ে করেছিল, বাচ্চারই উদ্দেশ্যে। ওদের পরিবারে বাচ্চার অভাব। তাই—”
— “সেজন্য ডিভোর্স দিয়ে দেবে? বাচ্চা না হলে একটা মেয়ের আর দাম নেই? সংসার ভেঙে দিতে হবে? এটা কেমন কথা?”
হঠাৎ তেঁতে উঠলো ছেলেটা। কণ্ঠে রাগের স্ফুলিঙ্গ ঝরছে। জবাবে কিঞ্চিৎ হাসলো সৌভিক। তাচ্ছিল্য ভরা সে হাসি,

— “আমি জানি, কথাটা খুব তুচ্ছ। সামান্য একটা কারণে কারো সংসার ভেঙে যাবে — এটা তোর মানতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সত্যিটা নির্মমই হয়। মাহতাবের মতো অতি শিক্ষিত, আধুনিক বসবাসকারী একজন মানুষ যে এমন করবে আমি নিজেও ভাবতে পারি নি। ব্যাপারটা আমার জন্যও শকিং ছিল। কিন্তু কিছু করবার নেই। কেউ যদি বলেই দেয়, আমি সংসার করবো না; তখন কি তাকে জোর করা শোভা পায়? আর ওর বিরুদ্ধে মামলা করেই বা কি? তামাশা করে লোক হাসানো ছাড়া?”

কথা সত্য। স্বাভাবিক ভাবে এ ঘটনা যে কেউ শুনলেই অবাক হবেন। স্বাধীন এবং আধুনিক মানসিকতার লোকেরা হয় তো রাগও হবেন। কিন্তু তাতে কি হবে? চারুর সঙ্গে যা হয়েছে তা কি ফেরানো যাবে? আমরা মুখে মুখে যতই বলি, আমরা শিক্ষিত, আধুনিক, উন্নত যুগে বাস করি। কিন্তু আমাদের মনের যে অন্ধকার সংস্কার, ধ্যান-ধারণা আছে সেটুকু কি শিক্ষার আলো দিয়ে সবাই দূর করতে পারি? যদি পারতামই তাহলে, মাহতাব আর তার পরিবারের মত মানুষেরা নারীকে এতো ছোট করে দেখতে পারতো না। নারীকে শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দেয়ার মেশিন জ্ঞান করতো না। ভাবত না, সন্তান জন্ম দিতে না পারলে মেশিনটা নষ্ট, অযোগ্য; তাকে ভাগাড়ে ছুঁড়ে ফেলা উচিৎ!
হায় রে, সভ্যতা!

সৌভিক নিজের কথা শেষ করে উঠে চলে গেল ভেতরে। নিখিল বসে রইলো অন্ধকারে, একা!

চলবে___

#মৌরিন_আহমেদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে