এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় পর্ব-৩১+৩২

0
534

#এই_সুন্দর_স্বর্ণালী_সন্ধ্যায়
#পর্বসংখ্যা_৩১

রাতে বাসায় ফিরেই কেন যেন নিখিলের মনে হতে লাগলো পরিবেশ কেমন থমথমে। অদ্ভুত একটা গুমোট ভাব চারপাশে। কলিং বেল টিপে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। শেষটায় নাজিয়ার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চাবি দিয়ে সে নিজেই দরজা খুললো। তার ব্যাগের কোণে একটা অতিরিক্ত চাবি থাকেই সর্বদা। প্রয়োজনে যেন কাজে লাগাযতে পারে।

ভেতরে ঢুকেই অবাক হলো নিখিল। ঘন তমসায় নিমজ্জিত পুরো ফ্ল্যাট। অন্যান্য দিন এ-সময় ফিরলে বসার ঘর থেকে টেলিভিশনের শব্দ শোনা যায়, নাজিয়া হাসিমুখে ছেলের দিকে তাকান। কথা বলেন। আজ কোনো আওয়াজ নেই। নাজিয়াও নেই সেখানে।
নিখিল ধীর পায়ে হেঁটে মায়ের কক্ষের সামনে এলো। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। নিখিল শান্ত গলায় ডাকলো,
— “আম্মি!”
উত্তর এলো কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে,
— “ফ্রেশ হও গিয়ে।”
কি আশ্চর্য শীতল সে সুর। নিখিলের গা ছমছম করে উঠলো অজানা শঙ্কায়। কোনোমতে বললো,
— “তুমি কি অসুস্থ? ঘরদোর সব অন্ধকার করে রেখেছ যে—”
— “এমনই। তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। খাবার দিচ্ছি।”
নিখিল তবুও গেল না। কি যেন ভেবে দাড়িয়েই থাকলো। সেটাও কি করে যেন টের পেলেন নাজিয়া। গলা উঁচিয়ে বললেন,
— “কি হলো? যাচ্ছো না কেন?”
— “যাচ্ছি!”
বহুদিন পর মায়ের রাগ দেখে এবার সত্যিই খুব আশ্চর্য লাগলো ওর। মা সহজে রাগেন না, আজ হঠাৎ? তীব্র ভয়ে বুকে কামড় পড়লো ওর! মা কিছু আঁচ করেছে নাকি?

ফ্রেশ হয়ে এসে নিখিল আবিষ্কার করলো খাবার ঘরে বসে থাকা তার মাকে। ছেলের প্লেট সাজিয়ে তিনি বসে আছেন। অথচ এমনটা হওয়ার কথা নয়। রোজ তারা দু’ জন একসঙ্গে খেতে বসে। আজ ব্যতিক্রম কেন? নিখিল প্রশ্ন করতেই নাজিয়ার গম্ভীর প্রত্যুত্তর,
‘খেয়েছি। তুমি খাও!’
নিখিল আরও অবাক হলো। রোজ সে বলেও নাজিয়াকে আগে খাওয়াতে পারে না, আজ সেখানে—
প্রায়শই অফিস থেকে ফিরতে দেরি হয়ে যায় ওর। তখনও ছেলের জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করেন তিনি। নিখিল এই নিয়ে কতো রাগ করেছে ইয়াত্তা নেই। কিন্তু তবুও নাজিয়ার সিদ্ধান্ত বদলায় নি। আজ হঠাৎ!
যাই হোক, নিখিল নীরবে খাওয়া শেষ করলো। পুরো সময়টাই নাজিয়া তার পাশে রইলো কিন্তু একটা কথাও বললো না। প্লেট ধুয়ে নিখিল চলে যেতে লাগলো ঘুমোতে; তবুও নাজিয়ার হেলদোল নেই। তিনি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যাচ্ছেন!
অধৈর্য হয়ে উঠলো নিখিল। ঘুরে এসে মা’র ধরে টানলো। কাতর গলায় বললো,
— “কি হয়েছে আম্মি? এমন করছ কেন? ও আম্মি?”
নাজিয়া যেন ভারী বিরক্ত হলেন এতে,
— “কি করেছি? সর তো, ঘুমাবো আমি। জ্বালাস্ না!”
— “আম্মিইই! প্লিইজ! কি হয়েছে আমাকে বলো? আমি বুঝতে পারছি কিছু একটা ঠিক নেই। কিন্তু—”
— “অর্ধেক যেহেতু বুঝেছিস, সেহেতু বাকিটাও বুঝে নে। আর আমাকে ছাড়। বিরক্ত লাগছে আমার!”
হাত ছাড়িয়ে চলে গেলেন নাজিয়া। নিখিল হাজার ডেকেও ফেরাতে পারলো না!

মায়ের নীরব এই অভিমান চললো পরদিন বিকেল পর্যন্ত। এই পুরোটা সময় উনি খুব অদ্ভুত আচরণ করলেন। কথা বললেন না ঠিক করে। সবকিছুতেই থাকলেন নির্লিপ্ত। নিখিল কিন্তু থামলো না। ওর অসম্ভব জোরাজুরির ঠেলায়ই শেষ অবধি নাজিয়া মুখ খুলতে বাধ্য হলেন। তীব্র অভিমানে বললেন,
— “তুই আমাকে এতো পর ভাবিস কেন, নিখিল? আমি কি তোকে পেটে ধরি নি? ছোট থেকে পেলেপুষে এতোবড় করি নি? তবে কেন আমার থেকে কথা লুকাস তুই? কেন সবকিছু আড়াল করিস আমার থেকে?”
নিখিল একমুহূর্ত হতভম্ব হয়ে রইলো। সম্বিৎ ফিরতেই উদ্বেল নিয়ে বললো,
— “কি লুকিয়েছি আমি? কি—”
— “একদম ঢং করবি না, বলে দিলাম। আমি খুব ভালো করেই জানি, চারুকে নিয়ে তুই কিছু আমার কাছ থেকে কিছু লুকোচ্ছিস। ব্যাপারটা আমি ওর কাছেই শুনতে পারতাম কিন্তু শুনি নি। কেন জানিস? কারণ আমি চাই নি, চারুর কাছে আমাদের মা-ছেলের কথাটা প্রকাশ পাক। ওর কাছে ছোট হতে চাই নি আমি। অপেক্ষা করেছি, কাল রাতে – আজ সারাদিনে— অথচ তুই? এখনও সবটা লুকিয়েই যাচ্ছিস!”
একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো নিখিল। হতাশ হয়ে বললো,
— “তুমি সবটা জেনেই গেলে?”
— “জানতে আর দিচ্ছিস কই! সবই তো লুকিয়ে যাচ্ছিস!”
রাগে মুখ ফিরিয়ে নিলেন নাজিয়া।

নিখিল বুঝলো। মায়ের রাগের কারণটা ভালোই পরিষ্কার হয়েছে এতক্ষণে। এজন্যই তবে এতো রাগ!
লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে সে বললো,
— “বলো, কি জানতে চাও? আমি বলছি।”
— “শুরু থেকে বল্। আবার বলছি, কিচ্ছু লুকোবি না! একটা শব্দও না!”
ক্ষ্যান্ত দিলো নিখিল। হাত উঁচিয়ে পরাজয় স্বীকার করে বললো,
— “আচ্ছা, আচ্ছা। বলছি।”
— “হু, বল্।”
— “চারুর আগে একটা বিয়ে হয়েছিল, আম্মি। ছয় মাসের সংসার ছিল। সেই সম্পর্কের ইতি টানার পর থেকে গত আড়াই বছর ধরে চারু বাবার বাড়িতেই থাকে।”
নিঃস্তব্ধ ঘরটায় বিস্ফোরণ ঘটলো যেন! বিস্ময়ে প্রায় চেঁচিয়েই উঠলেন নাজিয়া,
— “কীহ্!”
— “হ্যাঁ, আম্মি। চারু ডিভোর্সী। এটা শুনবার পর তুমি যদি ওকে মেনে নিতে চাও, সেই ভয়েই আমি সবটা লুকিয়েছি তোমার কাছ থেকে। কিন্তু বিশ্বাস করো, চারু খুব ভালো মেয়ে। তুমি তো মিশেছ ওর সঙ্গে। আমার চেয়ে ওর তোমার সঙ্গে বেশি সখ্যতা গড়ে উঠেছে। ওকে তো তুমি চেনো!”
যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করলো নিখিল। আকুতি জানিয়ে মায়ের হাত চেপে ধরলো। সহসা নাজিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। কেমন নিষ্প্রাণ, নিষ্প্রভ কণ্ঠে শুধালেন,
— “ওর ডিভোর্স কেন হলো?”
— “বনিবনা হয় নি। ছেলেটা ভালো ছিল না। ফালতু—”
বলতে বলতেই মায়ের চোখের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল নাজিয়ার কঠিন মুখখানি। তিনি তীব্র রোষের সহিত ধমকে উঠলেন তিনি,
— “আবার কথা লুকোচ্ছিস!”
— “চারুর কখনো বাচ্চা হবে না, মা। শি ইজ অ্যান ইনফার্টেইল উম্যান।”
বলেই দু’ হাতে মুখ ঢেকে বসে পড়লো। নাজিয়ার বিস্ময়ের পারদ বাড়লো। নিশ্চল পাথরের মত বসে রইলেন তিনি। ঠিক যেন মূর্তি!

কিয়ৎক্ষণ পর হঠাৎ নিখিলকে উত্তেজিত দেখালো। অস্থির চিত্তে সে মায়ের হাত ধরে ঝাঁকালো,
— “আমি সবকিছুই মেনে নিয়েছি, আম্মি। তুমিও প্লিজ মেনে নাও। অমত করো না। চারুকে আমি কথা দিয়েছি। ওকে ভালোবাসি আমি! প্লিজ!”
যান্ত্রিক শোনালো তাঁর কণ্ঠটা,
— “সবকিছু জেনে শুনেও?”
— “হ্যাঁ, মা। সবকিছু জেনেই আমি ভালোবেসেছি ওকে। প্লিজ, এই বিয়েতে তুমি রাজি হও। তুমি মত না দিলে তো আমি ওকে বিয়ে করতে পারবো না। আমার কথা মিথ্যে হয়ে যাবে। তোমার ছেলে মিথ্যেবাদী প্রমাণিত হবে, আম্মি!”
— “কিন্তু ও যে বন্ধ্যা? ওকে বিয়ে করলে তুই যে কোনদিন বাবা হতে পারবি না, বাপ! এই সত্য তুই কি করে—”
তাকে আর বলতে দিলো না নিখিল। আচানক ওর ভেতর থেকে সব দ্বিধার দেয়াল অদৃশ্য হয়ে গেল। সুস্পষ্ট, সুদৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করলো সে তার অভিমত,
— “আমি ওকে ভালোবাসি, আম্মি। এরচেয়ে বড় সত্য আমার কাছে নেই!”
নাজিয়া বিমর্ষ মুখে মাথা নাড়লেন। সায় দিয়ে বললেন,
— “ঠিক আছে। তোর যা ইচ্ছা। তোরা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো!”
খুশিতে জ্বলজ্বলে হলো ওর চেহারা। প্রবল আনন্দে মাকে জড়িয়ে ধরলো সে।
___

চলতি মাস শেষের দিকে। এসময় নিখিল ছুটি নিতে পারবে না। সবার সঙ্গে কথা বলে তাই ঠিক হলো, পরবর্তী মাসের দুই তারিখে নিখিলরা তাদের দু’ একজন নিকটাত্মীয় সহ আংটি বদল করিয়ে আসবে চারুর।
দেখতে দেখতেই দিনগুলো কেটে গেল। নির্ধারিত দিনে আংটি বদল হয়ে গেল চারু-নিখিলের। সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো সবকিছু। বিয়ের দিন ঠিক হলো এর পনেরোদিন পর। খবরটা শুনবার পর থেকেই লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না চারু। ইসস , এতো লজ্জা কেন লাগছে?
সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের পর আজ ওরা এ বাড়িতেই থেকে গেছে। আশেপাশে কোথাও তো নিখিলদের আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। নিখিলরাও সবাই ঢাকাতেই সেটেল। তাই রাতটা অরুণা ম্যানশনেই থাকতে হলো। যদিও ওরা চেয়েছিল হোটেলে উঠতে; কিন্তু রাজি হন নি আজমীর রাজা। তারা থাকতে তাদের মেয়ের হবু শ্বশুরবাড়ির মানুষজন হোটেলে কেন উঠবে!

ওদিকে নিখিল সাহেব অধৈর্য হয়ে বসে! বারংবার কল দিয়ে যাচ্ছে চারুকে; তার প্রিয়তমাকে; হবু স্ত্রীকে! টেক্সট দিচ্ছে; ডাকছে ছাদে যেতে। চারু লজ্জায় উত্তর পাঠাতে পারছে না। ছাদে যাওয়া তো বহুৎ দূর কি বাত্!
সে জানে কিছু বললেই নিখিল শুরু করে দেবে বদমাইশি। উল্টোপাল্টা বলে বলে ওকে লজ্জার চূড়ান্তে পৌঁছে দেবে! যা লাগামছাড়া হয়েছে সে আজকাল! না বাবা, চারু আজ কারো কলই তুলবে না। কারো টেক্সটের রিপ্লাই লিখবে না!
ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিলো চারু। কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো দ্রুতই। ঘুমের মাঝে সে একটা স্বপ্নও দেখলো। ঝলমলে সুন্দর এক স্বর্ণালী সন্ধ্যায় তার আর নিখিলের বিয়ের দৃশ্য। ভারী সুন্দর সেই স্বপ্ন; অথচ ঘুমের মাঝেই চারুর ভয়ে বুক কাঁপতে লাগলো। শরীর ঘামে ভিজে গেল। দেখলো, শরীরে লাল টুকটুকে বেনারসি নিয়ে বসে থাকা স্বপ্নের চারুর সামনে কাজী এসে হাজির হয়েছেন। তার বাড়িয়ে দেয়া রেজিস্ট্রি খাতায় সই করতে বলা হয়েছে ওকে। চারু কলম তুলেছে সাক্ষর করতে, অথচ কি আশ্চর্য! কলমটা থেকে কালি বেরোচ্ছে না। চারু কম্পিত হস্তে কাগজের উপরে ঘষতে লাগলো সেটাকে, হঠাৎ কালো কলম থেকে বেরোল লাল রং। ফিনিক দিয়ে একগাদা রং বেরোল, বেরোতেই লাগলো অবিরাম। দেখতে দেখতেই রক্তের মতো লাল সে তরলে ভেসে গেল ওর বিয়ের রেজিস্ট্রি কাগজখানা!
চারুর সই করা আর হলো না!

চলবে___

#মৌরিন_আহমেদ

#এই_সুন্দর_স্বর্ণালী_সন্ধ্যায়
#পর্বসংখ্যা_৩২

মাসখানেক ধরে বেশ দুশ্চিন্তায় ভুগছে মাহতাব। রোজ সকালে অফিসে যাচ্ছে গভীর রাত করে ফিরছে। আবার কোনো কোনো দিন হুট করে বলছে, অফিস যাবে না; কিংবা সকালে গিয়েই দুপুর হতে না হতেই বাড়ি ফিরে আসছে। মেজাজ সারাক্ষণ থাকছে খিটখিটে। কিচ্ছু জিজ্ঞেস করবার উপায় নেই। ভুলবশত কিছু বলে ফেললেও শুরু করছে চিৎকার চেঁচামেচি। সমস্যাটা আসলে কি কেউ বুঝতে পারছে না!
খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করছে। এর দরুণ ক’দিন আগেই পোহাতে হলো। মারাত্মক জন্ডিস হয়েছিল বেচারার। প্রায় দশ-পনেরো দিন একদম বেড রেস্টে ছিল। পুরো পরিবারের সবাই মিলে তখন ওর সেবা করেছে। নিজে গর্ভবতী হয়ে মাহিয়া নিজে হাতে ওর সব করেছে। কতো যত্ন, কতো আদর! অথচ এতকিছুর মধ্যেও বেচারা কিছুতেই স্বস্তি পেল না। কঠিন মর্মবেদনায় কাটতে লাগলো তার দুর্বিষহ দিন!
_______

ইদানিং নিজেকে খুব একা একা লাগে সৌভিকের। বহুদিন হলো পরিবার ছেড়ে এই দূর পরবাসের বাসিন্দা হয়েছে সে। একা থাকার অভ্যাসটা হওয়ার কথা অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এতদিনেও যেন তা হয়ে ওঠে নি। সারাদিন অফিসের কাজ, কাজের ফাঁকে ভাইয়ের মতো বন্ধুর সাথে কাটত সময়। উইকেন্ডে পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে হ্যাং আউটে যাওয়া, হুটহাট পাওয়া ছুটিতে ট্যুর দেয়া — বিন্দাস ব্যাচেলর লাইফটা নিয়ে ভীষণ খুশিই ছিল সৌভিক। কিন্তু আস্তে আস্তে ওর আনন্দগুলো ফিকে হয়ে যেতে লাগলো। বন্ধুবান্ধবদের অধিকাংশই বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেল। আগের মত প্রত্যেক ছুটিতে টিএসসিতে আড্ডা জমানো, মাসে মাসে গেট টুগেদার করা, হৈচৈ করে ট্যুরে যাওয়া, বন্ধ হয়ে গেল। নিজ নিজ জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সবাই। কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়ে বিদেশ অবধি চলে গেল!
সবাই সব পেল, সংসার, একটা নিজস্ব মানুষ, ভালো চাকরী, ভালো জীবন ব্যবস্থা — কিন্তু কি পেল সৌভিক? প্রায়শই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খায়। তার আসলে কি আছে? না আছে প্রেমিকা, না আছে বৌ। নিজের কথাগুলো বলবার, নিজের সময়গুলো কাটানোর সঙ্গী যেন কেউই নেই ওর কাছে। আগে নিখিল ছিল। কিন্তু আজকাল সেও যেন নেই। চারুর সঙ্গে প্রেম হবার পর থেকেই ওর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল। নিখিলও ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। আংটি বদলের পর সেই ব্যস্ততা যেন বহু গুণে বেড়েছে ওর। বিয়ের প্রস্তুতি, শপিং ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কাজ তার। এখন আর রোজ সৌভিকের সঙ্গে আড্ডা দেবার মতো পর্যাপ্ত সময় কই?

সৌভিক অবুঝ নয়। জানে সব, বোঝেও। জগতে কেউ কারো নয়। বন্ধু-বান্ধব সে যতোই কাছের হোক, আত্মার বন্ধন থাকুক, একসময় দূরত্ব সৃষ্টি হয়ই। এই নিয়ম কেউ খন্ডাতে পারে না। অন্য সব বন্ধুর মত নিখিলও এখন বিয়ে করবে, নিজের সংসার গড়বে। একসময়ে তাই নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এই তো নিয়ম!
কিন্তু সৌভিক? সে কি করবে? প্রেম? তার কি প্রেম করার সুযোগ আছে? না আছে সেই মানসিকতা? আর বিয়ে? হুট করে একটা অচেনা-অজানা মেয়েকে বিয়ে করে নিজের সহধর্মিণীর অধিকার দিতে পারবে তো সে?

— “কি রে, কি এতো ভাবছিস?”
চটকা ভাঙলো নিখিলের কথায়। সৌভিক একটু অপ্রস্তুত হলো,
— “কিছু না। তোর কাজ হলো?”
— “হুঁ। এইতো।”
হাতের ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখতে শুরু করলো নিখিল। গত আধা ঘণ্টা যাবৎ নিখিলের ডেস্কের সামনেই বসে ছিল সৌভিক। আজ তার কাজ আগেই হয়ে গেছে। এসেছিল বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু নিখিলের তখনও কাজ বাকি। তাই সেখানেই বসে অপেক্ষা করছিল। অপেক্ষায় থাকতে থাকতেই কখন যে নিজের ভাবনায় মশগুল হয়েছিল টের পায় নি!
নিখিল আড়চোখে বন্ধুর দিকে তাকালো। ওর দৃষ্টি বাইরে, কেবিনের দরজায়। আধ খোলা দরজার ফাঁক দিয়ে এই কেবিনের মুখোমুখি যে রুমটা সেটার দরজা দেখা যায়। ওই রুমটায় আগে আনিকা বসত। দু’ জন সহকর্মীর সঙ্গে। কেবিনের দরজা খুললে সর্বপ্রথম ওর ডেস্কটাই নজরে পড়ে। যদিও আনিকার ট্রান্সফারের পর থেকেই ওই ডেস্ক ফাঁকা; তবুও! সৌভিকের দৃষ্টি ঠিক সেখানটায় বুঝতে পেরে নিখিল হাসলো। দুষ্টুমির স্বরে বলল,
— “কি অতো দেখছিস ওই ফাঁকা ডেস্কে? কি আছে ওখানে?”
বলেই মুখ টিপে হাসতে লাগলো। সৌভিক ফিরে তাকালো না। ওর মজা করার দূরভিসন্ধি টের পেয়েও নির্বিকার রইলো। ফাঁকা ডেস্কটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে খুব শান্ত গলায় উচ্চারণ করলো,
— “ইদানিং কেন যেন আনিকাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে আমার। জানতে ইচ্ছে করে, কি করে মেয়েটা। কেমন আছে? মেয়েটাকে খুব মিস করি রে!”
— “লক্ষণ তো ভালো নয়। প্রেমে-ট্রেমে পড়লি নাকি?”
ভ্রু নাচিয়ে বললো। সৌভিকের আনমনা উত্তর,
— “কি জানি! হতেও পারে!”
সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দে লাফিয়ে উঠলো নিখিল,
— “আরে! তুই তো তাহলে পাক্কা প্রেমে পড়েছিস!”
সৌভিক হেসে মাথা নামিয়ে নিলো। কিঞ্চিৎ লজ্জা লাগছে তার। নিখিল উচ্ছ্বসিত হলো,
— “তো, তারপর? প্রেমে যখন পড়লি, উঠবার ব্যবস্থা করবি না? প্রপোজ?”
— “না।”
দু’ পাশে মাথা নেরে অসম্মতি জানাতেই ও অবাক হয়ে তাকালো,
— “সে কি? কেন?”
— “একবারে বিয়ে করে ফেলবো!”
নিখিল কিছুক্ষণ অবাক হয়ে চেয়ে রইলো ওর দিকে। সৌভিক মুখ তুললে চোখে চোখ পড়তেই একসঙ্গে হেসে ফেললো দু’জনে!
_____

অনুর মেজাজটা আজ অত্যধিক খারাপ। নানা কারণে খিঁচড়ে আছে। গত দুদিন ধরে ওর শ্বশুর বাড়িতে নেই। জরুরি কাজে গ্রামে গিয়েছেন। বুড়ো মানুষ, একা যাবেন? সঙ্গে শাশুড়িও গিয়েছেন। এখন ওরা দুই জা আছে শুধু। বাড়ির পুরুষেরা তো হামেশার মতো ব্যস্ত তাদের অফিস নিয়ে!
দু’জনেই অসুস্থ। গর্ভবতী। দুজনেরই যত্ন দরকার। এসময় কি একা ফেলে রাখা যায়? সেজন্য মাহতাব একজন সার্বক্ষণিক কাজের লোক রেখেছে বাড়িতে। বলা বাহুল্য, সেই কাজের মহিলাটিকে আগেই দখল করে নিয়েছে মাহিয়া। অবশ্য দখল করবেই বা না কেন? তার স্বামী বেতন দিচ্ছে; তারই তো সেবা পাওয়া উচিৎ, তাই না?
অনুর এই নিয়েও ক্ষোভ আছে। জায়ের বাচ্চা হবে জন্য তার স্বামী একটা স্পেশাল কাজের মেয়ে রেখে দিলো, আর এদিকে মাহাদ? কি করলো সে? কাজের মেয়ে না রাখতে পারুক, দুটো দিন অফিস থেকে ছুটি নিলে কি হতো?
রাগে ফোঁসফোঁস করতে লাগলো অনু। একই বাড়ি, একই অবস্থান দুজনের। অথচ একজন আট মাসের উঁচু পেট নিয়ে নিজের ঘরে শুয়ে আরাম করছে, আর অন্যজন ছ’ মাসের গর্ভবতী হয়েও রান্নাঘরে। এক কাপ চা বানিয়ে দেয়ার মত মানুষ নেই!
এরমধ্যেই ফুলির মাকে আসতে দেখা গেল। ওদের দেখাশুনার জন্য ফুলির মাকে রেখে যাওয়া হয়েছে। অথচ সকালবেলা নাশতার সময়ে অনু গিয়ে দেখল, ফুলির মা ঘরে নেই। এমনকি বাড়িতেই নেই!
রাগ করে তাকালো সে,
— “সকাল সকাল কোথায় গিয়েছিলে ফুলির মা?”
— “পান খাইতে গেছিলাম, ভাবী। পান খাইতে! আপনেরা তো পান খান না। কিন্তুক আমার আবার এইটা ছাড়া চলে না। সকাল বেলা এক খিলি পান না খাইলে শরীলডা ভালা ঠেহে না।…”
— “হয়েছে। হয়েছে। এখন চা বানাও তো। মাথা ধরেছে খুব। কড়া লিকারের চা করো।”
বলেই সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আবার আগের ভাবনা নিয়ে বিড়বিড় করতে শুরু করলো। সেই বিড়বিড় কথা শুরু হলো মাহিয়াকে গাল দিয়ে আর শেষ হলো ফুলির মাকে নিয়ে। ফুলির মা সবই শুনলো, কিন্তু তার কোনো বিকার হলো না। সে আপনমনে কাজ করতে লাগলো। অনুকে সে ভালো চোখে দেখে না। তার হিসেবে এই মাইয়া পাগল, আর পাগলের কোনো হুশ জ্ঞান নাই। তাদের কথায় জিন্দা পীরের আওলাদ ফুলির মা কিছু মনে করে না!

কিন্তু অনুর রাগটা কমলো না। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। ওর রাগটা কমার বদলে আরও বেড়ে গেল। হুরহুর করে! যখন দেখলো দুপুরের খাওয়াও মাহিয়া দোতলায় নিজের ঘরে বসে খেল!
প্রায় অনেকদিন হয়ে গেছে রান্নাঘরে আসা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে মাহিয়া। রোজ রান্নার সময় এলেই যতো বাহানা! মাথায় ব্যথা, পেটে ব্যথা, পায়ে ব্যথা — নড়তে পারে না। এই যে এখন বাড়িতে কেউ নেই, এখনো সে এলো না রান্নাঘরে। কাজ না করুক, উঁকি তো দিবে?
কিন্তু সে কিছুই করবে না। মাহতাবের ঠিক করে দেয়া কাজের মেয়ে, হাফসাকে সাথে নিয়ে সারাদিন ঘরের মধ্যে বসে। হয় গা টিপে নিচ্ছে নয় তো পা! একটা মানুষ এতো খারাপ কেন? অনুর রাগ তুঙ্গে চড়লো। সে ডাইন ইনে বসে একা খাচ্ছে, ফুলির মা নিচে বসে; হাফসা এসে মাহিয়ার খাবার নিয়ে গেল। খাবার সেরে গুছাচ্ছে সবকিছু, হাফসা এসে প্লেট জমা দিয়ে গেল সিংকে! সেই এঁটো প্লেটটা দেখে এত রাগ হলো অনুর!

এতটাই ক্রোধান্বিত হয়ে পড়লো যে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো সে। প্রচণ্ড রাগে অন্ধ হয়ে একটি ভয়াবহ অপরাধ করতেও তার হাত কাঁপলো না। সব কিছু গুছিয়ে হাফসা আর ফুলির মা যে যার ঘরে চলে গেল। মাহিয়া তখন খেয়েদেয়ে ঘুমোচ্ছে। সেও এলো নিজের ঘরের দিকে। ভাতঘুম দিবে বলে। কিন্তু তার আগে সবার অলক্ষ্যে একগাদা তেল এনে ঢেলে দিলো মাহিয়ার ঘরের দরজার সামনে। ওর দরজার কাছেই সিঁড়ি। পোর্চের সেই অংশটায় তেল ঢালতে ঢালতে এনে দিলো সিঁড়ি অবধি! যেন পা পড়বা মাত্রই পিছলিয়ে পড়ে যায় নিচে, আর ঘটে কোনো মর্মান্তিক দুর্ঘটনা!
নিজের কুটিল পরিকল্পনার কথা ভেবে ক্রুর হাসি ফুটে উঠল অনুর ঠোঁটে। খালি বোতল নিয়ে নিজের ঘরে ফিরতে ফিরতে সে বিড়বিড় করলো,
— “এবার দেখাবো মজা! ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুলে মহারানীর আরাম, তাই না? এবার বেরোবে সব!”
ঘরে এসে দোর দিলো অনু। তারপর বিছানায় শুয়েই এক লম্বা ঘুম!

অনুর সেই ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যায়। মাহিয়ার আর্তচিৎকার শুনে। হুট করে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সবকিছু ভুলে গিয়েছিল সে। হঠাৎ চিৎকারে ভয় পেয়ে গেল। দরজা খুলে হুড়মুড় করে করিডোরে আসতেই দেখতে পেল ঘটনা ঘটে গিয়েছে! তেলের বারান্দায় ফেলে রাখা তেলে পা পিছলে পড়ে গিয়েছে মাহিয়া, সিঁড়িতে চক্কর খাচ্ছে। চোখের পলকেই সিঁড়ির একেবারে নিচে পরে গেল সে। একটা প্রচণ্ড চিৎকার দিয়ে হঠাৎই থেমে গেল ঘূর্ণন, নিথর হয়ে রইলো তার অসুস্থ শরীরটা। লাল রক্তে ভেসে যেতে লাগলো সবকিছু!
এই কাঙ্ক্ষিত দৃশ্য দেখে ওর খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু অনু খুশি হতে পারলো না। চোখের সামনে এমন বিভৎস দৃশ্য দেখে কেই বা খুশি হিরে পারে? একমুহূর্তের জন্য সব ভুলে গেল অনু। এগোতে চাইলো মাহিয়ার সাহায্যের জন্য। কিন্তু পা বাড়াতে গিয়েই, সামনের তেল নজরে পড়লো ওর। এগোতে পারলো না। ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,
— “ফুলির মা! হাফসা! কে কোথায় আছো! ভাবী!”
ততক্ষণে ফুলির মা, হাফসা সবাই ছুটে এসেছে। নিথর হয়ে পরে থাকা মাহিয়াকে নিয়ে এরমধ্যেই হৈ-চৈ শুরু হয়ে গেছে। ঘটনাক্রমে সেই সময়ই বাড়িতে প্রবেশ করেছিল মাহাদ। চেঁচামেচি শুনে ছুটে এলো সিঁড়ির গোড়ায়,
— “কি হয়েছে?”
— “সিঁড়ি থেইকা পইড়া গেছে!”
কয়েক পল হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকল সে। তারপর সম্বিৎ ফিরতেই মাহিয়াকে ডাকতে শুরু করলো। জাগানোর চেষ্টা করলো। অনু উপর থেকে শুনতে পেল ওর কণ্ঠ। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তেলের পাশে দাড়িয়ে, কোনোমতে উঁকি দিলো,
— “মাহাদ? ভাবী—ভাবী—”
মুখ তুলে তাকালো মাহাদ। ওর ঘামে ভেজা মুখটায় অজস্র এলোমেলো দুশ্চিন্তার ছাপ দেখতে পেল অনু। বলবার চেষ্টা করলো,
— “ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও। আমি—আমি—”
— “হ্যাঁ। নিচ্ছি। নিচ্ছি। তুমি নেমো না, অনু। কিছু একটা হয়ে গেলে—”
অনু নামলো না। তবে উল্টো ঘুরে দ্রুত নিজের ঘরে ছুটে যেতে যেতে জানালো,
— “অ্যাম্বুলেন্স ডাকছি আমি—”

রাতের বেলা। নিজের ঘরে থ হয়ে বসে আছে অনু। মনে মনে ভাবছে সন্ধ্যার কথাটা। বাড়িতে এখন কেউ নেই। সবাই হসপিটালে ছুটছে। তখন মাহাদই মাহিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। ওকে নিচে নামতে নিষেধ করে। ওরা তিনজন আড়াল হতেই; সেও দ্রুত ন্যাকড়া এনে তেলগুলো মুছে ফেলে। একটা ভয়াবহ পাপ সে করে ফেলেছে ভেবেই চুপসে গেছে সে। তখন থেকে একলা ঘরে বসে আছে আর ভাবছে। কি হয়ে গেল?
ফোনে খোঁজ নিয়েছিল। অসংখ্যবার কল করা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। মাহাদ একবার রিসিভ করেছে। বলেছে, মাহিয়ার অপারেশন করানো হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও বাচ্চাটাকে নাকি বাঁচানো যায় নি। মারা গেছে মাহতাব-মাহিয়ার ছেলেটা!
খবরটা শুনেই বুকে কামড় পড়েছে অনুর। তার ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেই তখন থেকেই। এ কি করল সে? রাগের মাথায়, কি ভয়ংকর অপরাধ করে ফেললো? কি করে কেড়ে নিলো একটা নিষ্পাপ প্রাণকে?
অনুশোচনায় অন্তর পুড়তে লাগলো অনুর। হঠাৎ নিজেকে খুব পাগল পাগল লাগলো। আচ্ছা, সে যেমন করলো এরকম যদি মাহিয়াও ওর সঙ্গে করে? প্রতিশোধ নেয়? তবে? ওর বাচ্চাটা? মেঝেতে বসে নিজের চুল ছিঁড়তে লাগলো অনু। উন্মাদিনীর মতো শুরু করলো চিৎকার! এ কি করলো সে? এখন কি হবে?

একটা দশ। ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরলো মাহাদ। সারাদিন প্রচুর ধকল গেছে আজ! সারাদিন অফিস, তারপর সন্ধ্যায় হসপিটাল, শেষমেষ থানা — উফ্! কি অবস্থা!
স্ত্রীর খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিল মাহতাব। মাহিয়া যখন অপারেশন থিয়েটারে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, তখনই সেখানে হঠাৎ পুলিশ গিয়ে পৌঁছলো। কোনোকিছু বুঝে ওঠবার আগেই হ্যান্ড কাপ পরিয়ে থানায় নিয়ে গেল মাহতাবকে! তার বিরুদ্ধে গ্রেফতার ওয়ারেন্ট আছে, সরকারি কাজে দুর্নীতির দায়ে। কথাটা শুনেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠেছিল মাহাদের। এমনটা হওয়ার আশঙ্কা সে অনেক আগে থেকেই করতো। কিন্তু আজকের দিনেই তা হবে কে জানত?
হাসপাতালের অবস্থা কিছুটা সামলে নিয়েই সে ছুটেছিল থানায়। সেখানেই বাকি খবর শুনলো। দুদক কর্তৃক প্রায় একমাস আগেই নোটিশ দেয়া হয়েছিল মাহ্তাবকে। নিজের আয়, ব্যয় এবং সমস্ত সম্পত্তির হিসেব চাওয়া হয়েছিল। সময় পেরিয়ে গেলেও মাহতাব কোনোকিছুর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে নি। মামলা হয়েছে তাই ওর বিরুদ্ধে!
ভাইয়ের এই পরিণতির কথা ভালোই জানতো মাহাদ। একটুও অবাক হয় নি। কেবল কষ্ট পেয়েছে এই ভেবে, স্ত্রীর কঠিন দুঃসময়ে মাহতাব তার পাশে থাকতে পারছে না। যখন স্ত্রী মৃত বাচ্চা প্রসব করে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে, মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে তখন তার পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারছে না! হাহ্, দীর্ঘশ্বাস!
সিঁড়ি পেরিয়ে বারান্দায় আসতেই হঠাৎ পায়ে কি যেন ঠেকল ওর। একেবারই পাত্তা না দিয়ে এগোতে চাইলো কিন্তু কি যেন ভেবে থেমে গেল হঠাৎ। পিছু ফিরে আবার হাঁটলো সেই জায়গায়। পায়ের তলায় চ্যাটচ্যাটে লাগছে কি যেন! কি আশ্চর্য! মাহাদ ভ্রু কুঁচকে আশেপাশে পা দিয়ে দেখল, পুরো জায়গাটাতেই কেমন চ্যাটচ্যাটে ভাব। কিছু ফেলেছিল নাকি? সন্দেহে কপালে ভাঁজ পড়ল ওর। কয়েক পা এগিয়ে নিজের ঘরে ঢুকতেই আরও অবাক হলো। মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে আছে অনু। মাথার চুল এলোমেলো, মুখখানি একেবারে বিধ্বস্ত। অবসন্ন দেহ নিয়েও মাহাদ ছুটে এলো প্রিয়তমার কাছে,
— “তুমি ঠিক আছো, অনু?”

চলবে___
#মৌরিন_আহমেদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে