#এই_সুন্দর_স্বর্ণালী_সন্ধ্যায়
#পর্বসংখ্যা_০২
চোখ মেলার পর নিজেকে একটা অপরিচিত পরিবেশে আবিষ্কার করলো নিখিল। চারপাশে হৈ-চৈ; উচ্চস্বরে বাজতে থাকা গানের ছাড়াছাড়া অংশ কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো হুড়মুড়িয়ে। একমুহূর্তের জন্য সে চমকে উঠে ভাবলো, ‘এটা তো তার ব্যক্তিগত কক্ষ নয়। তার কক্ষের শান্ত – স্নিগ্ধ ভাবের বদলে এতো চেঁচামেচি, কলরব কোথা থেকে আসছে?’ বিস্ময় নিয়ে চোখ পিটপিট করতে করতে আশে-পাশে তাকাতেই নজরে এলো, পাশের বালিশে সৌভিকের ঘুমন্ত মুখখানি। সাথে সাথেই মনে পড়লো নিজের অবস্থান। ক্ষনিকের উত্তেজনা খামোশ হয়ে স্মৃতিপটে ভাসলো, ছুটি কাটাতে সৌভিকের সঙ্গে ওর বাড়িতে এসেছে; ওরই জোরাজুরিতে। এখানে একটা আয়োজন চলছে, সৌভিকের কোন বোনের বিয়ে সে উপলক্ষ্যে। তাই হয়তো এতো আওয়াজ। গানবাজনার হিড়িক!
ট্রেনের দীর্ঘ ভ্রমণের পর অবসন্ন শরীর নিয়ে তিনটের দিকে ওরা এসে পৌঁছে এ-বাড়িতে। তারপর কোনোমতে মধ্যাহ্নের আহারটুকু সেরে, সৌভিকের ঘরে এসে বিছানায় গা’এলিয়ে দিতেই ঘুম নেমে এলো চোখে। আর এইমাত্র জেগে উঠলো!
নিখিলের চটকা ভাঙলো একটা রিনরিনে কণ্ঠের ধ্বনি শুনে। বাইরের এতো কোলাহল ভেদ করেও কানে বাজলো একটা কিন্নরী সুর,
— “ভাইয়া, দরজা খোল!”
সঙ্গে করাঘাতের আওয়াজ। নিখিল পাশ ফিরে সৌভিককে ডাকে,
— “দোস্ত? কে যেন এসেছে! নক করছে বাইরে। ওঠ!”
চোখ না মেলেই আলসেটা শুধায়,
— “কে?”
— “আমি চারু। দরজা খোলো। জলদিই!”
— “হুঁ।”
বলেই মাথার নিচের বালিশ টেনে, কানে চাপা দেয় সৌভিক। নিখিল বিরক্তিতে হাল্কা ঝাঁকি দেয় ওকে,
— “আরে হুঁ কি? ওঠ, কে যেন এসেছে। দরজাটা খুলে দে।”
সৌভিকের হেলদোল নেই। মটকা মেরে পড়ে রয়েছে বিছানায়। ওদিকে দরজার ওপাশে ক্রমাগত নক করেই চলেছে চারু নামের মেয়েটা। নিখিল আবার ঠেলা মারলে বাধ্য হয়েই চোখ মেলে সৌভিক। মুখ ঘুরিয়ে উঁচু গলায় জিজ্ঞেস করে,
— “কি হয়েছে?”
তারপর ওর দিকে এলপল চেয়ে অনুরোধের সুরে বলে,
— “বোধ হয়, ঘরের কিছু লাগবে। তুই একটু কষ্ট করে দরজা খুলে দিয়ে আয় তো। কি লাগে, এসে নিয়ে যাক ঘর থেকে। আর যদি, বাইরে যেতে ডাকে তো বলিস, আমরা পড়ে যাবো। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে!”
বলেই কাঁথা দিয়ে কান-মাথা পেঁচিয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়!
অগত্যা উঠতে হয় নিখিলকেই। ঘুমঘুম চোখ দু’টো নিয়ে কোনোমতে দরজা খুলতে গিয়েই ঝটকাটা খেল!
সম্মুখে দাড়ানো চশমা পরা একটি রূপবতী তরুণীকে দেখে যেন বুকের ভেতর দামামা বেজে উঠলো ওর। শিরায় শিরায় ছলকে উঠলো র|ক্ত, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া সম্ভবত নিয়ম ভেঙে থেমে গেল কয়েক সেকেন্ডের জন্য!
মেয়েটি আনমনে কথা বলছিল। বলতে বলতেই হঠাৎ তার দিকে ফিরলো, আর সঙ্গে সঙ্গেই ঘোর বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
— “আপনি কে?”
চটকা ভাঙতেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো নিখিল। মেয়েটাকে ও আগে দেখে নি। তাই ওর পরিচয় জানে না। সম্ভবত নিখিলের কোনো বোন-টোন হবে। রমণী দ্বিতীয়বার মুখ খুললো, তবে আগের মত অস্বাভাবিক ভাবটা এবার তার চেহারায় নেই। বেশ নম্র কিন্তু সতেজের সাথেই বললো,
— “কিছু মনে করবেন না। আপনার পরিচয়টা কি আমি ঠিক জানি না। তাই চিনতে পারছি না। আপনি কে, কার কি হন, সেটা বললে আত্মীয়তার সম্পর্কটা বুঝতে সুবিধা হতো।”
ফর্মাল ভঙ্গিতে কথাগুলো বলেই দরজা থেকে একটু পিছিয়ে দাড়ালো মেয়েটা। নিখিল ওর কায়দা করে দাড়ানো, মুখভঙ্গি দেখে হাঁফ ছাড়লো। একটু আগে মেয়েটার প্রতিক্রিয়া দেখে ও বেশ ঘাবড়েই গিয়েছিল। না জানি, কার পাল্লায় পড়েছে–কেমন আচরণ করে! কিন্তু শির দাড়া সোজা করে মেয়েটার এই দাড়ানোর ভঙ্গি, ছোট পানপাতার মতো সুশ্রী মুখখানি আর তার শান্ত কিন্তু তীক্ষ্ণ লোচনের কড়া নজর দেখে বোঝা গেল, সে অবুঝ-নাদান বালিকার মতো অপরিচিত একটি লোককে দেখেই চিল্লিয়ে হুলস্থুল করবার মতো নয়। কিছু জ্ঞান বোধ নিশ্চয়ই রাখে!
কপাট থেকে হাত সরিয়ে প্রতিপক্ষের মতো সটান দাড়িয়ে নিখিল নওশাদ তার পরিচয় জ্ঞাপন করলো,
— “নিখিল নওশাদ। আমি ঠিক এ-বাড়ির আত্মীয় নই। আমার বন্ধুবর সৌভিক রেজার সৌজন্যে বিয়ের দাওয়াতে মেহমান হয়ে আসা। আপনি?”
চোরাচোখে লোকটার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ সেরে ছোট্ট করে বললো,
— “চারুলতা। সৌভিক ভাইয়ার ছোট বোন। দুঃখিত, আপনাকে চিনতে পারি নি।”
একটু লজ্জিত হয়ে নত হলো। নিখিল হাসলো ওর বিনয় দেখে,
— “আরে না, না। দুঃখিত হবার কিছু নেই। আপনি তো আমাকে দেখেন নি। চেনবার প্রসঙ্গ আসবে কোত্থেকে! হা হা।”
কথা সত্য। বাস্তবিকই পূর্বে তাদের সাক্ষাৎ হয় নি। অতএব, নিখিলকে চেনার কথা নয়। স্মিত হেসে প্রশ্ন করলো,
— “ভাইয়া কোথায়? ঘরে নেই?”
— “কে সৌভিক? হ্যাঁ, হ্যাঁ। ঘরে আছে তো। যান!”
দরজা থেকে সরে দাড়ালো নিখিল। পথ করে দিলো চারুর ভেতরে যাবার। ও কিন্তু গেল না। সামান্য উঁকি দিয়ে বিছানায় শোয়া মানুষটাকে দেখেই ফিরে তাকালো। ঠোঁট উল্টে বললো,
— “ভাইয়া তো ঘুমোচ্ছে। আমি বোধ হয় অসময়ে বিরক্ত করে ফেললাম। আচ্ছা, আসি।”
প্রস্থানের উদ্যোগ করছিল; নিখিল শুধালো,
— “ওকে ডাকছিলেন কেন? কোনো জরুরি দরকার? থাকলে বলতে পারেন। আমি ওকে টেনে তুলছি!”
চারু স্মিত হেসে মাথা নাড়ালো,
— “তেমন কিছু নয়। আমি আসলে একটা পেইন-কিলার ট্যাবলেটের জন্য এসেছিলাম। ভাইয়া গোছালো মানুষ, ওর কাছে সবকিছু ঠিকঠাক পাওয়া যায় তো।”
— “পেইন-কিলার? কেউ অসুস্থ হয়েছে না-কি?”
— “ওই সামান্য মাথা ব্যথা হয়েছে–”
— “সামান্য ব্যথায় কেউ তো ওষুধ গেলে না। অন্তত বাঙালিদের এ ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায় না। অবস্থা নিশ্চয়ই গুরুতর! আপনি দাড়ান, আমি এনে দিচ্ছি। আমার কাছে রয়েছে।”
চারুকে রেখে ঘরে ঢুকে গেল নিখিল। ফিরলো সেকেন্ড ত্রিশেক বাদে, হাতে একপাতা প্যারাসিটামল নিয়ে। সেটা চারুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— “নিন। একপাতা প্যারাসিটামল আমার কাছে সবসময়ই থাকে। এই দিয়ে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান করুন।”
— “ধন্যবাদ!”
চারু মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে এলো তৎক্ষণাৎ।
___
অনুর এই বিয়েতে বাড়ির কেউই প্রথমটায় রাজি ছিল না। বড়রা তো নয়ই, ছোটরা অবধি ঘোর বিরোধী ছিল এমন বিব্রতকর সম্বন্ধ মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে। সবার মুখেই ছিল একই কথা, এ কী করে হয়! যে বাড়িতে বড়বোনের সংসার টেকে নি, তালাক নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে বিয়ের মাস ছয়েকের মধ্যে; সে বাড়িতে তারই ছোট বোনের বিয়ে — এ কি মেনে নেয়া যায়?
কিন্তু মেনে নিতে হয়েছে। অনুর অসম্ভব রকমের জেদ, একগুঁয়েমির কারণে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে সবাই।
পারিবারিক ভাবেই চারুর বিয়েটা হয়েছিল মাহতাবের সঙ্গে। ওই বিয়েকে কেন্দ্র করেই বরের ছোট ভাই মাহাদের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয় কনের ছোট বোন অনুলেখার। বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতায়, চিরায়িত বেয়াই-বেয়াইন সম্পর্কের টক-ঝাল ঝগড়া আর ঠাট্টা-মশকরার আসরে সেটা বুঝতে বাকি ছিল না কারো। তাই মোটামুটি দু’ পরিবারই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এদেরও একই সুতোয় বাঁধবার!
সব ঠিক চলছিল। কিন্তু একদিন সব পাল্টে গেল। দমকা হাওয়ার মতো প্রবল ঝাপটায় চারুর সংসার নামক তাসের ঘর ভেঙে পড়লো নিমিষে! বিয়ের ছয় মাসের মাথাতেই একদিন চারুকে ফিরতে দেখা গেল, লাগেজ-ব্যাগ গুছিয়ে। বাড়ির সবার একটু খটকা লাগলো, জামাই কেন এলো না তা নিয়ে। কিন্তু কিছু বললো না। আসল ঘটনা জানা গেল রাত্রেই। বাপ – চাচার সামনে দাড়িয়ে নতমুখে চারু খবরটা দিলো। মাহতাবের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না কিছুতেই। দুটি মানুষ একসঙ্গে থেকেও যোজন যোজন দূরের মানুষ যেন। মিথ্যে মায়া নিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখার খেলা খেলতে খেলতে অতিষ্ট হয়ে ফিরে এসেছে চারুলতা। সব শুনে ওরা হতবাক, বিস্মিত, হতবিহ্বল!
তারপর শুরু হলো আরেক অশান্তি। সবাই অনেক চেষ্টা করলো ওই দুটি মানুষকে এক করে দেবার। তাদের নৌকার ভাঙা পাল জুড়বার। কিন্তু ভাঙা কাচ কি জোড়া লাগে? কাচের মতো চূর্ণ – বিচূর্ণ হয়ে একে-অপরের থেকে ছিটকে পড়ে যাওয়া ওদের তাই আর জোড়া লাগানো যায় নি। তালাকের তকমা নিয়ে ফেরে চারুলতা! চাঁদবদন মুখটিতে লাগে কলঙ্কের ছাপ!
চারুর সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও অনুর তখন সবে শুরু। চারুর বিয়েতেই প্রথমবারের মতো দেখা হয় মাহাদের সঙ্গে। এরপর, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেলে বোনকে দেখার অছিলায় প্রায়ই বোনের শ্বশুরবাড়িতে হাজির হতো অনু। নিয়মিত সাক্ষাৎ হতো মাহাদের সঙ্গে।ওদের রসায়নটা যখন জমে উঠতে শুরু করেছে, তখনই ভাঙ্গনের করাল গ্রাস লেগেছিল চারুর সংসারে। তারপর তো একসময় ওই পরিবারের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ফিরেই এলো চারু। সবকিছু জেনে-শুনেও ওরা এগিয়েছিল প্রণয় থেকে পরিণয়ে। স্বভাবতই এই বিষয় নিয়ে দ্বিমত ওঠে। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রথম দফাতেই প্রস্তাব নাকচ করা হয়। কিন্তু কথায় আছে, ’পিরিতি কাঁঠালের আঠা, লাগলে পরে ছাড়ে না!’ অনু – মাহাদের প্রেমও তাই ছাড়লো না। নানান জটিলতার পরও কাঁঠালের আঠার মতো লেগে থাকতে থাকতে শেষ অবধি দুই পরিবার রাজি হলো বিয়েতে!
___
ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে আটটা। বর্ণিল অরুণা ম্যানসনে চলছে আনন্দ উৎসব। ঝকঝকে – তকতকে সুন্দর পাঞ্জাবি পরে, গায়ে সুগন্ধি মেখে, এক্কেবারে ফুলবাবুটি সেজে, বন্ধু নিখিলকে নিয়ে ঘর থেকে বেরোলো সৌভিক। প্যান্ডেলের দিকে ছুটলো অন্যদের কাছে। বিয়ের আয়োজন চলছে জমিয়ে!
বধূবেশে সজ্জিত অনুকে ইতোমধ্যেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্টেজে। তাকে ঘিরেই এখন ভীড়। আত্মীয় – স্বজনের তো মেলা লেগে আছেই, সঙ্গে আছে ক্যামেরাম্যানের ভীড়। বিয়েতে বড় শখ করে একদল লোক ভাড়া করে এনেছে অনুলেখা। ফটোশ্যুট করবার জন্য। তার মতে, বিয়ে তো একবারই করবো, তাতে একটু ছবি-টবি তুলবো না?
ছবি তুলতে দোষ ছিল না। কিন্তু সেটা নিয়ে বাড়াবাড়িও ভালো লাগে নি কারোরই। এমনিতেই বিয়েটা নিয়ে একটু খুঁত-খুঁতে ভাব দুটো পরিবারের মধ্যেই আছে! তবুও কি আর করা—
নিখিলকে সঙ্গে নিয়ে প্যান্ডেলের ভেতরে ঢুকলো সৌভিক। কনের সঙ্গে দেখা করানো হয় নি বন্ধুকে। তাই দেখা করাতে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্টেজের যা অবস্থা, তাতে ওর কপালে সে সুযোগ মিলবে কিনা কে জানে! আশেপাশে একগাদা আত্মীয়ের ভীড় নিয়েও রংঢং করে ছবি তুলতে ব্যস্ত অনুলেখা। ওই ভীড় – ভাট্টা ঠেলে বন্ধুকে নিয়ে ভেতরে যাবার ইচ্ছে হলো না আর। অগত্যা ওরা এগোলো ভাই-বোনদের কাছে।
প্যান্ডেলের অন্য পাশে সবাই একত্র হয়েছে। মিউজিক বক্সে বাজছে জনপ্রিয় কিছু রোমান্টিক হিন্দি গান। তাতে কাপল ড্যান্স করছে বিবাহিত দম্পতিরা। নিখিলরা যখন এসে পৌঁছলো তখন বাজছে,
Tumko paya hai toh jaise khoya hoon
Kehna chahoon bhi toh tumse, kya kahoon?
Tumko paya hai toh jaise khoya hoon
Kehna chahoon bhi toh tumse, kya kahoon?
দর্শকদের মধ্যমণি হয়ে শাহরুখ – দীপিকার পাট করছে একটি সুদর্শন দম্পতি। টুকটুকে লাল শাড়ি জড়ানো এক রূপবতী বধূ আর কালো স্যুট-টাই পরিহিত সুপুরুষ নাচছে সুরের ছন্দে ছন্দে। চোখের দৃষ্টি যাদের স্বপ্নালু, ভঙ্গি যাদের অমায়িক। সৌভিক ওদের দেখিয়ে নিখিলের কানে ফিসফিস করে বললো,
— “ওই যে দেখছিস, নাচছে? আমার বড় ভাই – ভাবী। বিয়ে করেছে প্রায় তিনবছর গড়ালো। কিন্তু এখনও কি প্রেম! দেখে কি মনে হচ্ছে বল তো? এক্কেবারে সদ্য সদ্য প্রেম হওয়া কপোত-কপোতী, না?”
চাপা হাসলো সৌভিক। বন্ধুর সঙ্গে তাল দিয়ে নিখিলও হাসলো। তারপর বললো,
— “কিন্তু যাই বল, তারা যে একজন আরেকজনকে ভীষণ রকমের ভালোবাসে সেটা তাদের চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কি স্বচ্ছ চোখের চাহনি! মনেই হচ্ছে না আমাদের উপস্থিতি ওরা টের পাচ্ছে। কি সুন্দর!”
একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো সৌভিক। ওকেও পাশের চেয়ারে বসবার ইঙ্গিত দিয়ে বললো,
— “হুঁ। এদের এই প্রেম দেখলে মাঝে মধ্যে মনটা চায়, বিয়েটা করে ফেলি। কিন্তু—”
— “কিন্তু কি? করে ফ্যাল বিয়ে! আপত্তি কীসের?”
— “আপত্তি তো অনেক। পাত্রী যে নাই!”
হতাশার ঠোঁট উল্টালো। ওর ভঙ্গি দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো নিখিল। পিঠে একটা চাপড় মেরে বললো,
— “আরে মাম্মা, এইটা কোনো কথা! দেশে এতো মেয়ে থাকতে তোমার পাত্রীর অভাব? আমাদের বললেই তো, হয়ে যায়। দেখবি, এক চুটকিতে কতো মেয়ের লাইন লাগিয়ে দেই! হা হা হা।”
স্বর্ণালী সন্ধ্যাটা মুখরিত হয়ে ওঠে দু’ বন্ধুর কলহাস্যে!
চলবে___
#মৌরিন_আহমেদ