এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-০৩

0
2950

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম♥️
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat

রুহি সেই কখন থেকে কাঁদছে।মনে হচ্ছে আজকেই চোখ থেকে সব পানি ঝরিয়ে ফেলবে।কিন্তু ওকে এভাবে ভেঙে পড়লে তো হবে না।অরুণী রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল”এবার তো থাম।আর কতো কাঁদবি?কাঁদলে কি কিছু ঠিক হবে?অযথা চোখের পানি ঝরানোর কোনো মানেই হয় না রুহি।চোখের পানি মোছ।”

রুহি বাম হাতে চোখের পানি মুছতেই আবার পানিতে ভরে গেলো চোখের কার্নিশ।এবার আর রুহি মুছলো না অরুণী ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল”আর যেনো না কাঁদতে দেখি আমি।”

রুহি অরণীকে জড়িয়ে ধরে বলল”আমি কি করবো বল!আমার যে অনেক কষ্ট হচ্ছে।আমি যে ওর প্রতারণা সহ্য করতে পারছি না।আমার ভাগ্যটা এতো খারাপ কেনো রে?”

“তার ভাগ্য খারাপ না রুহি।ভাগ্যতো তার খারাপ যে তোর ভালোবাসাকে অসম্মান করেছে।হতেও পারে একদিন এই ভালোবাসার জন্য সে ভীষণভাবে কাতর থাকবে কিন্তু তখন আর কোনো কিছু করার থাকবে না।”

অরুণী রুহির চোখ আবার মুছে দিয়ে বলল”বাবা মা কাছে যাবি?”

“কোন মুখে দাড়াবো তাদের সামনে বল?এতোটা কষ্ট যাদের দিয়েছি তারা কি আমাকে মাফ করবে?যাদের ভালোবাসাকে আমি অসম্মান করেছি তারা কি আমাকে মেনে নিবে?”রুহি ভেজা কন্ঠে বলল।

” বাবা মায়ের সামনে দাড়াতে কোনো মুখ লাগে না রুহি।ওনারা বাবা মা।বাবা মা এমন দুটো মানুষ যাদের হাজার শব্দেও ব্যাক্ত করা যায় না।হাজার অপরাধ করার পরও বাবা মা সন্তানকে মাফ করে দেয়।সেইজন্যই তারা বাবা মা।আর আমার বিশ্বাস এতোদিন পর আঙ্কেল আন্টি তোকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিবে না।”

“আমি যাবো অরু।অন্তত মাফটাও যদি পাই!” রুহি এটা বলে একটা গোপন দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
———————
বাসাবো তে এসে আকাশ একটা বাড়িতে গেলো কিন্তু সেখানে রুহিকে পেলো না।আকাশের যতোদূর মনে আছে রুহি এই বাড়ির কথাই বলেছিলো।ওর নাকি এখানে এক বান্ধবী আছে।নামটা মনে পড়ছে না আকাশের।এখন রুহিকে পাবে কোথায়?
আকাশ রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে রুহিকে কল করলো কিন্তু এখন ফোন বন্ধ বলছে!কি মসিবত!বাসাবো তে কয়েকটা বাসা খুঁজেও যখন রুহিকে পাওয়া গেলো না তখন আকাশ হতাশ হয়ে ফিরে গেলো।এভাবে খোঁজা সম্ভব না। নির্দিষ্ট ঠিকানা ছাড়া এতো বড়ো এরিয়াতে কোথায় খুজবে রুহি কে।

আকাশ চলে যাওয়ার দুই মিনিট পর অরুণী আর রুহি বের হলো যে বাড়িটা থেকে সেখানে দু’মিনিট আগেও আকাশ দাড়িয়ে ছিলো।বলা বাহুল্য এ যাত্রায় রুহির কপাল ভালো ছিলো।রুহি আর অরুণী রাস্তায় এসে অটো নিলো।গন্তব্য রুহির বাড়ি!
———————
আকাশ হতাশ ভঙ্গিতে নাতাশার কেবিনে ঢুকে নাতাশার চেয়ার বরাবর একটা চেয়ারে বসে পড়লো।নাতাশা এখন কেবিনে নেই।হয়তো হাসপাতালের কোনো ওয়ার্ডে আছে।আকাশ নাতাশাকে ফোন করলো।নাতাশা কল কেটে দিয়ে দু’মিনিটের মধ্যে কেবিনে চলে এলো।কেবিনে এসেই জিগ্যেস করলো”পেয়েছো মেয়েটাকে?”

“না পাওয়া যায় নি।ওর ফোনের লোকেশন ট্রেস করে জানতে পেরেছি বাসাবো তে আছে।আর বাসাবো তে ওর এক বান্ধবীর বাড়ি আছে।ভেবেছিলাম সেখানে গেলেই পাবো কিন্তু পেলাম না।তবে ও বাসাবোতেই
আছে।কিন্তু নির্দিষ্ট ঠিকানাটা জানি না।আর একটু আগেই ফোন বন্ধ করে দিয়েছে।”

“ইশ!এখন কি হবে?বলো?আমি জাস্ট আর চিন্তা করতে পারছি না।”

“কুল বেবি।এতো হাইপার হইয়ো না।ওকে আমরা ঠিকই পেয়ে যাবো।কাল একবার ওর বাসায় যাবো।দেখি সেখানে আছে কি না।”

“হুম তাই করো।আর ওকে তাড়াতাড়ি ডিবোর্স দাও।ওকে ডিবোর্স দিলেই আমাকে বিয়ে করতে পারবে।”

“একটু সময় দাও।আমি ওকে ডিবোর্স দিয়ে দেবো।”

নাতাশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন নার্স এসে বলল রোগীর কাছে যেতে হবে।নাতাশা চলে গেলো।নাতাশা যেতেই আকাশও উঠে গেলো।আজ আর অফিসে যাবে না।
——————
অনেক্ক্ষণ যাবত রুহি আর অরুণী রুহিদের বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।দাড়িয়ে থাকার কারণ হলো রুহি ভয় পাচ্ছে।নিজেও নক করছে না অরুণীকেও করতে দিচ্ছে না।অরুণী এবার বিরক্ত হয়ে বলল”এবার কিন্তু মাইর খাবি রুহি।এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো?”

“যদি বাবা মা মাফ না করে তাহলে?” রুহি মলিন গলায় বলল।

“আরে ওনারা মাফ করে দিবে।আর যদিও মাফ না করে তবে পা ধরে বসে পড়বি যতক্ষণ পর্যন্ত মাফ না করে।”

রুহি অরণীর কথায় সম্মতি দিলো।অরুণী একবার রুহির দিকে তাকিয়ে দরজায় নক করলো।দুইবার নক করার পর একটা মেয়ে দরজা খুললো।ওদের দেখে বলল”কে আপনারা?আর কি চাই?”

অরিণী সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলল”আমি অরুণী আর ও আমার বান্ধবী।বাসায় কি রুনা আন্টি আর আনোয়ার আঙ্কেল আছেন?”

“হ্যাঁ আছে।কিন্তু তাদের দিয়ে আপনার কাজ কি?”

“কাজ আছে বলেই বলছি।তাদের একটু ডেকে দিন।”

মেয়েটা ওদের দাড়াতে বলে ভেতরে চলে গেলো।এতক্ষণ সবকথা অরুণী বললেও রুহির মুখ দিয়ে একটা কথাও ফোটে নি।মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছিলো।

দু’মিনিট পর মেয়েটা সাথে করে রুহির মা কে নিয়ে এলো।রুহির মা দরজার সামনে রুহিকে দেখেই ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।আর রুহিকে পায় কে।এমনিতেই সে কাঁদতে কাঁদতে শেষ তার ওপর আবার নিজের মা কাঁদছে তাই সেও কান্না ধরে রাখতে পারলো না।দুই মা মেয়ে এবার কেঁদে কেটে ভাসিয়ে ফেলছে।তবে দৃশ্যটা দেখার মতো।অরুণী আর দরজায় দাড়ানো মেয়েটা মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো মা মেয়ের কান্না।এই কান্নায় কতোটা আকুতি থাকতে পারে এটা কেবল তারাই জানে।

ঘর থেকে রুহির বাবা আনোয়ার সাহেব বলে উঠলো”কি গো কে এসেছে?

রুহির বাবার কথা শুনে রুহির মা রুহিকে নিয়ে ভেতরে গেলেন।সাথে অরুণী আর মেয়েটায় পেছনে এসে দাড়ালো।রুহিকে দেখে রুহির বাবা চোখ মুখ শক্ত জোরালো কন্ঠে বলল”ও এখানে কেনো?চলে যেতে বলো ওকে।”

বাবার কথা শুনে রুহি আরো কান্না পাচ্ছে।কান্না দলা পাকিয়ে আসছে ভেতর থেকে।রুহির মা আনোয়ার সাহবের পাশে বসে বলল”মেয়ের সাথে আর রাগ করে থাকবেন না।কথা বলুন ওর সাথে।”

“আমার ওর সাথে কোনো কথা নেই।” আনোয়ার সাহেব অন্যাদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল।

রুহি কান্না করতে করতে আনোয়ার সাহেবের পায়ের কাছে বসে ওনারা পা ধরে কান্না করতে করতে বলল”বাবা মাফ করে দাও প্লিজ।আমার খুব কষ্ট লাগছে।এভাবে চুপ করে থেকো না।যা শাস্তি দিবে মেনে নেবো কিন্তু মাফ করে দাও বাবা।দেখো তোমাদের কষ্ট দিয়ে আমিও ভালো নেই।আকাশ আমার সাথে প্রতারণা করেছে।তোমাদের সাথে প্রতারণা করার ফল আমি পেয়েছি।এবার যদি আমাকে মাফ না করো তাহলে কখনো নিজেকে মাফ করতে পারবো না।মাফ করবে না আমাকে?”

মেয়ের আর্তনাদে আনোয়ার সাহেবের এতো বছরের রাগ পানি হয়ে গেলো।মেয়েটা তার এতো কষ্টে আছে।ভাবতেই আনোয়ার সাহেবের বুক ভারী হয়ে গেলো।আনোয়ার সাহেব রুহিকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।

আসলেই বাবা মা কখনো সন্তানের ওপর রেগে থাকতে পারে না।তারা সবসময় সন্তানের মঙ্গল চায়।সন্তানের কষ্ট অনুভব করতে পারে।পৃথিবীতে এই দুটো মানুষই সবসময় পাশে থাকে সন্তানের।আর এদের ভালোবাসা সবসময় স্বার্থবিহীন হয়।
.
.
অরুণী আর রুহি মিলে সবটা রুহির বাবা মা কে বুঝিয়ে বলেছে।সব শুনে রুহির বাবা রেগে বলল”ওই কুত্তার বাচ্চার কাছে আমি আমার মেয়ে আর দিবো না।কিছুতেই না।”

শুধু রুহির বাবাই না রুহির মাও প্রচন্ড রেগে গিয়েছেন।যে মেয়েকে ছোট বেলা থেকে অনেক আহ্লাদে বড়ো করেছেন তার সাথেই এমনটা মানতে পারছেন না।

কিছুক্ষণ আগে অরুণী চলে গেছে।রুহির বাবা মা থেকে যেতে বলেছিলো কিন্তু সে থাকে নি।তার বাবা মাও তার জন্য অপেক্ষা করছে
————-
অরুণী যাওয়ার পর রুহি নিজের ঘরে এলো।চারদিকে চোখ বুলাতেই দেখলো কিছুই পরিবর্তন হয় নি।সব আগের মতোই আছে।কোথাও একটু ময়লাও নেই।এতো দুঃখের মাঝেও অরুণী একটু হাসলো কারণ তার মা এখনো তার ঘরে এসে ঘরটা পরিস্কার করে যায়।যার জন্য মনেই হয় না এইঘরে অনেকদিন ধরে কেউ থাকে না।

রুহি জানালার সামনে গিয়ে জানালাটা খুলে দিলো।ঘরটা দিনের আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো।রুহি বিছানায় বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে শুয়ে রইলো।অতিরিক্ত কান্নার ফলে চোখগুলো লাল হয়ে আছে আর মাথাব্যথায় ফেটে যাচ্ছে।শরীর দুর্বল হওয়ায় তাড়াতাড়িই ঘুম চলে এলো।
—————–
একটু আগে রুহির বাসায় আকাশ এসেছে।এসেই ভাংচুর করছে।রুহির বাবা মা বাধা দিতে চাইলেও কাজ হয় নি।আকাশ রুহির চুলের মুঠি ধরে বলল”কি ভেবেছিস আমার থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবি?কখনো না।তোর বাচ্চা নষ্ট করবোই আমি।”

আকাশ রুহির চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো।রুহি কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো”আকাশ!দয়া করো আমার বাচ্চাকে।ওকে মেরো না।আমি বা আমার বাচ্চা কখনো তোমার পথের কাটা হবো না।আমি সরে যাবো তোমার জীবন থেকে।তবুও তুমি আমার বাচ্চাকে বাঁচতে দাও।আমি ওকে ছাড়া মরে যাবো।”

আকাশের মনে দয়া হচ্ছে না।সে রুহিকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো।
রুহির আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু পাষাণের মন গলছে না।

চলবে…..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে