#ঋতুর_স্মৃতি
#সিজন_২
#পর্ব_০৪
#Jechi_Jahan
আজকে রনিকে স্কুলে দিয়ে আর বাড়িতে গেলাম না।কারণ রনি আমার উপর রেগে আছে কিছুক্ষণ এর জন্য না থাকলে ও আর বাড়ীতে যাবেনা।তাই আমি ওর স্কুলের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।বেশ কিছুক্ষণ পর আমি দেখলাম স্কুলের সামনে একটা গাড়ী এসে থামে।গাড়ীটা থেকে একজন লোক নেমে ওদিকে ফিরে আছে।এবার মুখটা এদিকে ঘুরানোর পর দেখলাম উনি রাহাতের আব্বু।আমি ওনাকে দেখে মুখ লুকিয়ে ফেলি।
রাহাতের আব্বু-আরে ঋতু না?(কাছে এসে)
আমি-(বাবার ডাকে আমি একটু ঘাবড়ে যাই তবু ও মনে সাহস রেখে ওনার দিকে ফিরলাম)আমি।
রাহাতের আব্বু-ঋতু কেমন আসিস মা?
আমি-খুব ভালো আছি।
রাহাতের আব্বু-হুম!!!রনি কেমন আছে?
আমি-হ্যাঁ রনি ও ভালো আছে।
রাহাতের আব্বু-তুই এই স্কুলের সামনে কেনো?
আমি-রনি এই স্কুলেই পড়ে।
রাহাতের আব্বু-তাই!!তাহলে তো দেখা হবে।
আমি-হুম।(মাথা নিচু করে)
রাহাতের আব্বু-আচ্ছা ঋতু তোর সাথে কত দিন পর দেখা হলো।চলনা কোথাও গিয়ে বসি।
আমি-না বাবা রনিকে একা রেখে আমি যাবোনা।
রাহাতের আব্বু-ছুটি হতে আরো কিছুক্ষণ বাকি আছে।চলনা আজ বাবা-মেয়ে আড্ডা দিই।
আমি-হুম চলো(মুচকি হেসে)
আমি আর বাবা একটা রেস্টুরেন্টে আসলাম।বাবা দুইটা কফি অর্ডার করে আর আমার সাথে বসে বসে কথা বলে।
রাহাতের আব্বু-তা তোর স্বামী ভালো আছে তো?
আমি-স্বামী?(অবাক হয়ে)
রাহাতের আব্বু-আরে রাহাত বলেছে।
আমি-ওহ!!হ্যাঁ ভালো আছে।
রাহাতের আব্বু-জানিস ঋতু! রাহাত এখনো তোর আর ওর বিয়ের চবিটা নিয়ে কাঁদে।আসলে লোক বলেনা “ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না” রাহাতের ও এই অবস্থা।তখন যদি একটু ভেবে কাজ করতো তাহলে তোর আর ওর জীবন আজ খুব সুখিময় হতো।বেচারা সঠিক সময়ে বুঝেনি।
আমি-তুমি একটুও বদলাও নি দেখছি।
রাহাতের আব্বু-আচ্ছা ঋতু রাহাত যদি কোনদিন
এসে তোর কাছে ক্ষমা চায় তখন তুই কি করবি?
আমি-ক্ষমা করে দেবো।
রাহাতের আব্বু-কি এতো সহজে?
আমি-ক্ষমা করবো কিন্তু ফিরে যাবোনা।
রাহাতের আব্বু-তাছাড়া তোর সংসার ও আছে।
আমি-আচ্ছা ছুটির সময় হয়ে যাবে চলো।
এবার আমি আর বাবা আবার স্কুলে গেলাম।আর ওখানেও কিছুক্ষণ কথা বললাম।স্কুল ছুটি হওয়ার পর রনি আমার কাছে আসলো।
আমি-রনি আজকে কেমন লেগেছে?
রনি-………
আমি-ওকে আমার সাথে কথা বলতে হবেনা।কিন্তু দেখো তোমার সাথে কেও একজন দেখা করতে এসেছে।তুমি তার সাথে পরিচিত হও।
রাহাতের আব্বু-কেমন আছো দাদাভাই।(রনির কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে)
রনি-ভালো আছি।আচ্ছা তুমি কে হও আমার?
আমি-উনি তোমার দাদা হয়।
রনি-তাই?তাহলে এতদিন আসলে না কেনো?
রাহাতের আব্বু-আমিতো ব্যস্ত ছিলাম তাই।
(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
আমি-আচ্ছা রনি তুমি গাড়ীতে গিয়ে বসো।
এটা বলার পর রনি কোল থেকে নেমে চলে যায়।
আমি-কাঁদছো কেনো তুমি?
রাহাতের আব্বু-আমি ওর দাদা হই এটা ওকে আজ জানানো হচ্ছে তাও পরিচয় এর মাধ্যমে।
(কেঁদে কেঁদে)
ঋতু-বাদ দাও না।আচ্ছা তুমি কি কাজে জানি স্কুলে এসেছিলে ওই কাজে তো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
রাহাতের আব্বু-ওহ হ্যাঁ আচ্ছা তুই যা।
—বাড়ীতে—
আমি রনিকে নিয়ে বাড়ীতে আসার সাথে সাথে রবিন কে ডাকতে লাগলাম।
রবিন-কি এতো জোরে ডাকছো কেনো?
আমি-আব্বু এসেছে?
রবিন-হ্যাঁ কিছুক্ষণ আগেই এসেছে।
আমি-আচ্ছা তুমি রনিকে ফ্রেশ করিয়ে কিছু খাওয়াও।আমি একটু বাবার কাছে যাচ্ছি।
আমি তাড়াতাড়ি বাবার রুমের সামনে গেলাম।
আমি-বাবা আসবো?
বাবা-আজব তো পারমিশান কেনো নিচ্ছিস?
আমি-আরে বাদ দাও শুনোনা।
বাবা-তো বলনা।
আমি-বাবা আজকে রনির স্কুলের সামনে রাহাত এর আব্বুর সাথে দেখা হয়েছিল।দেখা হওয়ার পর আমি আর রাহাতের আব্বু একটা রেস্টুরেন্টে এ যাই।আর ওখানে আমি একজন কে দেখি।তখন রাহাতের আব্বুর সামনে কিছু বলিনি।
বাবা-কাকে দেখেছিস তুই?
এরপর আমি যার নাম বললাম তার নাম শুনে বাবা রীতিমতো শকড খেলো।
—রাহাতের বাড়ীতে—
রাহাতের আব্বু-জানিস তোর আর তোর মায়ের একটা ভুলের কারণেই আজ এমন হচ্ছে।
রাহাতের আম্মু-কি হয়েছে যে এমন করছো?
রাহাতের আব্বু-আমার থেকে শুনতে চেওনা তোমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করো।মা আর ছেলের কত মিল।মা যা বলে ছেলে তা করে আমার কথা শুনেনা।তো জিজ্ঞেস করো নিজের ছেলেকে।
রাহাতের আম্মু-কি হয়েছে রে রাহাত?
রাহাত-বাবার আজকে ঋতুর সাথে দেখা হয়েছে।
রাহাতের আম্মু-ঋতুর সাথে!!!কখন?
রাহাত-আজকে সকালে স্কুলের সামনে।
রাহাতের আম্মু-এটার জন্য তোর বাবা এমন….
রাহাত-না মা এটার জন্য না।
রাহাতের আম্মু-তাহলে কিসের জন্য?
রাহাত-স্কুলে বাবা ঋতুর সাথে রনিকেও দেখে।
রাহাতের আম্মু-রনি কে?
রাহাত-আমার #ঋতুর_স্মৃতি।
রাহাতের আম্মু-ঋতুর ছেলে?
রাহাত-হুম!!!তো বাবা যখন রনিকে দেখেছে তখন নাকি রনি ঋতুকে জিজ্ঞেস করেছে বাবা ওর কি হয়।তাই বাবা এমন করছে….
রাহাতের আম্মু-হুম বুঝেছি!!!আমি তোকে বিয়ে না দিলে ঋতু তোকে ছেড়ে যেতোনা।আর আজ রনি আমাদের সাথে থাকতো।তোর বাবাকে দাদা হিসেবে চিনতো।কিন্তু তোর বিয়ে দেওয়ায় আজ আজ এসব হচ্ছে।এটাই তো?
রাহাত-হুম।
সকালেঃ-
আমি রনির সাথে এখনো কথা বলতে পারিনি।তাই আর চেষ্টাই করলাম না।আজকে স্কুল ছুটি তাই রনি বাড়ীতেই আছে।
আমি-রনি নাস্তা পুরোটা শেষ করবে ওকে।
রনি-……
আমি-রবিন একটু খেয়াল রাখো তো।
রবিন-আচ্ছা!!!
আমি সোফার রুমে গিয়ে বাবাকে ডাকলাম।
আমি-বাবা তোমার চা।(চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে)
বাবা-হুম।(চা টা নিয়ে)
-আসবো???
হঠাৎ এটা শুনে আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি রাহাতের আব্বু আর আম্মু।
বাবা-আসুন আসুন।(সোফা থেকে উঠে)
রাহাতের আব্বু -কেমন আছেন?
বাবা-এইতো ভালো।আপনারা?
রাহাতের আব্বু-আমরা ভালো আছি।
বাবা-তা হঠাৎ কি মনে করে?(মুচকি হেসে)
রাহাতের আম্মু-আসলে আমরা আপনাদের ইনভাইট করতে এসেছি।
বাবা-ও রাহাতের বিয়ের???
রাহাতের আব্বু-আরে না না।রানির জন্মদিনের।
আমি-ও আজকে রানির জন্মদিন?
রাহাতের আম্মু-হুম।ঋতু তুমি এসো কেমন।হয়তো এখনো তোমার কাছে ঘৃণার প্রাত্রী। তবুও যদি পারো ক্ষমা করে দিয়ে জন্মদিনে এসো।রানির খুব ইচ্ছে তোমাকে ওর জন্মদিনে দেখার।
আমি-রাহাতের তাইনা?
রাহাতের আম্মু-এসো কেমন?আমরা আসি।
বাবা-আরে বসুন।
রাহাতের আব্বু-না না আজ না আরেকদিন।
বাবা-আচ্ছা।
ওনারা চলে যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিলাম যাবোনা।কিন্তু পেছনে ফিরে দেখলাম রনি দাঁড়িয়ে আছে।
-চলবে