#ঋতুর_স্মৃতি
#সিজন_২
#পর্ব_০৩
#Jechi_Jahan
আমি ফোনটা কেটে রনির দিকে তাকিয়ে আছি।আর রনি আমার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে।ওর এই রেগে তাকিয়ে থাকার কারণটা আমি বুঝলেও রনির সামনে আর প্রকাশ করলাম না।
আমি-অনেক কথা হয়েছে এবার খেতে চলো।
রনি-হুম চলো।(আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগল)
আমি-রনি তুমি ফোন কেনো ধরেছো?
রনি-কথা বলতে।
আমি-কি কথা বলতে?বলেছিলাম না ছোটদের ফোন ধরতে নেই।ধূর কাকে কি বলছি তুমি তো এখন আমার কোনো কথাই শুনো না।
রনি-ওকে আম্মু এখন থেকে শুনবো।
আমি-সত্যি?
রনি-হুম সত্যি।
আমি-এইতো গুড বয়।(রনির গাল টেনে)
রনি-আম্মু এখন আমরা কি করবো?
আমি-এখন আমরা ডিনার করবো।চলো!!!
রনি-আম্মু আমি কি হাঁটবো?
আমি-কি???(অবাক হয়ে)
রনি-বলছি আমি কি হাঁটবো?
আমি-আসো আমার সাথে হাঁটো।
আমি রনির হাত ধরে খাবার টেবিলের সামনে আসলাম।দেখলাম রবিন টেবিলের সামনে বসে বসে মোবাইল টিপছে।আমরা ওখানে গেলাম।
রবিন-ওকে ডাকতে গিয়ে নিজে হারাই গেছো।
আমি-চুপ থাকো তো!!!রনি বসো।
রনি-কোন চেয়ারে বসবো আম্মু?
আমি-বাবার পাশের চেয়ারে বসো।(খাবার সার্ভ করতে করতে)
রবিন-ঋতু দাও বাকিটা আমি সার্ভ করি।
আমি-হুম!!!খাও রনি।(খাবার সামনে দিয়ে)
রনি-আম্মু আমি কি খাবার মুখে দিবো?
আমি-খাও উফফ(বিরক্ত হয়ে)
রবিন-বাবা তাড়াতাড়ি খাও।
আমি-আচ্ছা রনি কি নিবে বলো?
রনি-তোমার ইচ্ছে।
আমি-আচ্ছা আগে মাছ টা নাও পরে মাংস নিবে।
রনি-মাছের কোন পিচটা নিবো?
আমি-রনি এসব…জ্বালাচ্ছো কিন্তু তুমি আমাকে।
(রেগে চিৎকার করে)
রনি-আমি কোথায় জ্বালালাম?তুমিই তো বলেছো তোমার সব কথা শুনে চলতে।
আমি-আচ্ছা যাও কিচ্ছু শুনতে হবেনা।
রনি-সত্যি!!!ওকে বলে টিভির রুমে চলে গেলো।
আমি-রনি তুমি ওখানে কেনে যাচ্ছো?(রেগে)
রবিন-ওকে ঋতু বাদ দাও।খাও!!!
কিছুক্ষণ পর রনি ওর প্লেটটা এনে টেবিলে রেখে চলে যায়।এবার আমরাও উঠে চলে এলাম।
আমি-আচ্ছ রনি তুমি কি এখন রাহাত আঙ্কেল এর সাথে কথা বলো?
রনি-আজকেই বললাম প্রথমে রানির কথা বলে ছিলাম তারপরে আঙ্কেলের সাথে কথা বলেছি।আচ্ছা আম্মু তুমি তো তখন কথা বলতে দাওনি এখন ফোন দাও আরেকবার কথা বলি।
আমি-তুমি আর কক্ষনো ওদের সাথে ফোনে কথা বলবেনা।যদি বলো তোমার খবর আছে।(রেগে)
রনি-তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?
আমি-কিভাবে কথা বললাম?(রেগে)
রনি-নানা বাড়ীতে নেই বলে এমন করছো তাইনা?
আমি-তোমার নানা থাকলে কি হতো শুনি?
রনি-নানা থাকলে তুমি কখনো আমার সাথে এমন করে কথা বলতে পারতে না।(কান্না করে)
আমি-কেনো আমি কি তোমার নানাকে ভয় পাই।
রনি-অবশ্যই পাও।(কান্না করে)
আমি-না আমি ভয় পাই না।যাও এখান থেকে।(এটা বলার সাথে সাথে রনি দৌড়ে চলে গেলো)
রবিন-এমন করছো কেনো?
আমি -কষ্ট হয় তাই।
রবিন-এতে কষ্ট কিসের?
আমি-একটা ৫ বছরের ছেলে রোজ সামনাসামনি না হয় ফোনের মাধ্যমে তার বাবার সাথে কথা বলে কিন্তু সে ব্যক্তি টা যে তার বাবা সেটা সে জানেই না।কি করে কথা বলতে দিই বলো।
রবিন-ওকে ঘুমাতে যাও দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আমি-হুম তুমিও আসো।
সকালেঃ-
রাহাত আর রানি একসাথে বসে নাস্তা করছিলো।তখন হঠাৎ রাহাতের আম্মু একটা কথা বলে।
রাহাতের আম্মু-রাহাত কিছু ভেবেছিস?
রাহাত-কি ভাববো।(ফোন টিপতে টিপতে)
রাহাতের আম্মু-আরে বিয়ের কথা।
রাহাত-কেনো?(খাওয়া বন্ধ করে)
রাহাতের আম্মু-কেন মানে কি বলিস তুই এগুলা?
দেখছিস না রানির বয়স ৫ বছর হয়ে গেছে আর ও তো তোকে আগে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করত।
রাহাত-এখন তো করেনা সো লাগবেনা।
রাহাতের আব্বু-কর্মের ফল ভোগ করলে সব মানুষ এমনই করে।
রাহাত-কেও যখন আমার পাশে নেই তখন তুমিই বা কেনো থাকবে তুমিও চলে যাও।
রাহাতের আব্বু-বুঝতে পারছো তো যখন খারাপ সময়ে কেও কারো পাশে থাকেনা তখন কেমন কষ্ট হয়।ঋতুর ও হয়েছিল ঠিক ৫ বছর আগে।তোমরা কেও ওর পাশে ছিলেনা এবং কি আমিও ওর পাশে ছিলাম না।তবে চেষ্টা করেছিলাম ওর পাশে থাকার তোমাদের কে বুঝিয়ে।
রাহাত-আব্বু রানি সামনে আছে।
রাহাতের আব্বু-আরে জানতে দাও ওকে।ওর বাবার কুকর্মের কথা।(রেগে চলে গেলেন)
রাহাত-আসলে মা তখন যদি বাবার কথাটা শুনতে তাহলে আজ এমন হতোনা।
রাহাতের আম্মু-আচ্ছা যা দেরি হয়ে যাচ্ছে।
রাহাত আর দেরি না করে রানিকে নিয়ে চলে যায়।
সকাল থেকে চেষ্টা করেও রনির সাথে আমি কথা বলতে পারলাম না।কারণ ও নিজেই আমার সাথে কথা বলতে চাইছেনা।আসলে কোনোদিনও ওকে বকিনি শুধুমাত্র কালকে ছাড়া।আর এখন ও কথা বলতে পারছিনা।এবার না পেরে…….
আমি-রনি আমি সরি বাবা।
রনি-………
আমি-রনি সকাল থেকে কথা বলোনি আমার সাথে এখন একটু কথা বলো পিলিজ।
রনি-…….
আমি-মায়ের সাথে কথা বলবেনা।(কান্না করে)
রনি-(কোনো কথা না বলে অন্য ফিরে গেলো।আর গাড়ীর জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিলো)
আমি-(আর কিছু না বলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমি নিজেও জানালার দিকে ফিরে গেছি)
-চলবে