#উদাসীনী
অন্তীম পর্ব
#Ditipriya_Roy
মাঝরাতে উঠে পাশে ফারহান কে না পেয়ে উদাসী ভয় পেয়ে যায়। ভালো করে চারপাশ টা দেখে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আসে। ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে দরজা খোলা। বেলকনির দরজা বন্ধ। এবার উদাসী কান্না করে দেয়। রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে যায়, ছাদেও নেই ফারহান। সোজা নীলিমার রুমে চলে আসে, দরজা ধাক্কা দেয় আর কাঁদে। নীলিমার কর্ণকুহরে উদাসীর কান্না যেতেই চমকে উঠে নীলিমা। তারাতাড়ি দরজা খুলে বের হয়ে আসে। উপর থেকে নাদিয়াও চলে আসে। নীলিমা বলে,
— কি হয়েছে উদাসী?” মা আপনার ছেলে ঘরে নেই। তিনি কোথায় যেনো চলে গেছে।” কি বলো মা, এই ছেলেকে নিয়ে আমি পারছি না।” বউকে একা ঘরে রেখে মাঝরাতে চলে যায়। ” উদাসীর কান্না কোনো ভাবেই থামছে না।
— ফারহান তাদের টিমের সাথে একটা গোডাউন ঘিরে রেখেছে। অন্ধকার গোডাউনের ভিতরে কোনো সারাশব্দ নেই। সবাই সাবধানে এগোচ্ছে, এর মাঝেই ভিতর থেকে কারো আত্ম চিৎকার ভেসে উঠে। সবাই
ভিতরে চলে যায়। ফ্লোরে পরে আছে লাশ, রক্ত ভেসে বেরাচ্ছে ফ্লোরে। সবাই চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। গোডাউনের চারিদিকে পুলিশ ঘিরে রেখেছে। লাশের মুখটা ঘুরাতেই ফারহান আমানের মুখটা দেখতে পায়।
কালো কোড পরা লোকটাকে পুলিশ চারিদিকে ধরে রেখে। ফারহান লোকটির কাছে এসেই থমকে যায়।
–আজাদ তোকে ধরা আমার কাছে কিছু সময়ের দরকার। আগেই তোকে ধরতে পেতাম। কিন্তু মায়ের জন্য হয়ে উঠেনি। গ্রামে যখন আমানের বন্ধুর লাশ পাওয়া গেলো, অথচ আমান কে পাওয়া যাই নি তখনি আমার সন্দেহ হয়েছিলো। কারণ উদাসীর বাবার খুন টা তুই করেছিলি। কি করে বুঝলাম?”তোর মনে আছে তুই আগের বার একজন কে খুন করেছিলি, ঠিক উদাসীর বাবার মতো।” আর আমি আমান কে দেখে যতটা বুঝেছি ও এতোটাও হিংস্র ছিলো না যত টা তুই। আমি জানতাম তুই ফিরে আসবি তাই তোর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলাম। আমান তার বন্ধুদের কখনোই নিজ হাতে খুন করবে না। আর তুই আমান কে সরিয়ে এটাই বোঝাতে চাইলি যে আমান নিজ হাতে খুন করেছে। আর এর প্রকট আমার গায়ে এসে লাগুক। কিন্তু কি বলতো তোর প্লান টা না ঠিক ভুল ছিলো।
–যখন ধরাই পরেছি তাহলে নিজের ভিতরের যন্ত্রণা টা কমিয়ে নেই। কথা বলার সাথে সাথে আমানের বুকে এসে বুলেট লেগে যায়। ফ্লোরে লুটিয়ে পরে ফরাহান।
— চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পায়। তার হাত ধরেই ঘুমিয়ে আছে উদাসী। নীলিমা কেবিনে ঢুকেই ফারহানকে বলে, তুই জেগে গেছিস। নীলিমা দ্রুত প্রস্থান ত্যাগ করে ডাক্তার কে ডাকতে যায়। ” নীলিমার কথা শুনেই উদাসী জেগে যায়। ফারহানের দিকে তাকিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলে, ঠিক আছেন আপনি?
— হ্যাঁ বউ, ভালোই আছি। তবে আমার বউটা ঠিক নেই। ” উদাসী রক্তিম চোখে তাকায় ফারহানের দিকে।
এই সময়েও আপনাকে মশকরা করতে হবে। কেনো আমাকে একা রেখে গেছিলেন আপনি। সবাই আমাকে একা রেখে যায়। ” উদাসী বেশ কষ্ট পেয়েছে বুঝতে আর বাকি নেই। উদাসীর কষ্ট দেখে ফারহামের বুকটা হাহাকার করে উঠে। উদাসীর মুখটা তুলে অশ্রু মুছে দিয়ে বলে, ও বউ আমি আর তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। খুব যতনে করে আগলে রাখবো এই বুকে।
— ডাক্তার ভিতরে এসে ফারহান কে চেক-আপ করে নেয়। তারপর বলে কয়েক দিন পর নিয়ে যেতে পারবেন। রোগী এখন ঠিক আছে।”এই কয়েক দিন উদাসী হাসপাতালেই ছিলো কারো কথা শোনে নি। কয়েকদিন পর বাসায় নিয়ে আসা হয় ফারহান কে।
— সম্পূর্ণ সুস্থ এখন ফারহান। তাই তারা গ্রামে চলে যাবে বলে নীলিমা কে বলে। নীলিমা কিছুতেই উদাসীকে যেতে দিবে না। উদাসীর সামনে এক্সাম না গেলেই নয়। তবে নীলিমা ফারহামকে শর্ত দিয়েছে এক্সামের পর উদাসীকে যেনো ঢাকায় রেখে যায়।
— দুপুরে নাদিয়া জেদ ধরেছে, ভাবি চলে যাচ্ছে। ভাবির সাথে ঘুরতে যাবে, কেনা কাটাও করবে। উদাসী বলেছে নীলিমাকেও সাথে করে নিয়ে যাবে। ফারহান সবাইকে ঘুরতে নিয়ে যায়। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় বাসায় চলে আসে। নীলিমা ফারহান আর উদাসীর জন্য রান্না করবে তাদের পছন্দের। তাই তিন জনে মিলে হাতে হাতে কাজ করে দেয়। খাওয়ার পর উদাসী কাপর গুছিয়ে নিচ্ছে । সকালেই যেতে হবে তাদের। ফারহান বিচানায় বসে ফোন টিপছে। উদাসী গিয়ে ফোনটা কেরে নেয়।
— একটু তো আমাকে সাহায্য করতে পারেন তাই নয় কি। ” বউ ফোনটা দিয়ে দেও৷ ” গ্রামে প্রচুর ঠান্ডা তার জন্য কি কি নিতে হবে নিয়ে নিন। ফোন আমি দিচ্ছি না। ” আগে একটা কিস দেও।
–উদাসী টুপ করে ফারহানের গালে কিস দেয়। ফারহান মুচকি এসে বিচানা থেকে নেমে কাপর গোছাতে শুরু করে।
____
— চৌধুরী বাড়িতে এসেছে কিছুক্ষণ আগে। নূর সব থেকে বেশি খুশি হয়েছে। কারণ উদাসীনীকে সে ভাবি বলেই ডাকবে। নূর সব সময় সাথে থাকে উদাসীর। দু’জনে মিলে বাড়ি টাকে মাতিয়ে রেখেছে।
— কলেজে এসেই অলক আর হাসির সাথে দেখা করেছে। উদাসীর বিয়ে হয়েছে বলে খুব খুশি তাও আবার ফারহানের সাথে।
— ফারহান পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে, আর উদাসী ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। উদাসী তার মাঝেই চোখ মারে,তা দেখে ফারহান বিষম খায়। উদাসী চুপি চুপি হাসছে। ফারহান তা দেখে বলে, বউ গো বাসায় চলো তোমাকে বোঝাবো আজকে। কলেজ ছুটি হয়ে দুজনে এক সাথে বাড়িতে ফেরে।
— নূর জেদ ধরেছে মেলায় যাবে। তাই সবাইকে নিয়ে মেলায় চলে যায়। মেলায় উদাসীকে অনেক রঙের চুরি কিনে দিয়েছে। দুল কিনে দিয়েছে, কাজল, লিপস্টিক। সবাই মিলে ফুচকা খেয়েছে।
— রাতে ফারহান বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। উদাসী এসে ফারহানের পাশে শুয়ে কোলে মাথা রাখে। ফারহান বলে,কি হয়েছে উদাসী? শরীর খারাপ লাগছে। ” না, আমি ঘুম যাবো, আপনি কাজ করুন। ” আচ্ছা ঘুমাও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেই।
— এই ভাবেই দিন গুলো কেটে যায়। উদাসীর এক্সাম শেষ হয়ে যায়। আজকেই তারা ঢাকায় যাবে তাই সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে দুজনে। ফারহানের দিকে একবার তাকিয়ে বলে, আপনি তো সব কিছুই গুছিয়ে নিলেন।
কিন্তু আমার জানা মতে আপনি আবার গ্রামে আসবেন।
— বউকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তাই বউ যেখানে যাবে আমিও সেখানে যাবো। ” উদাসী হালকা হেসে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে।
— ঢাকায় এসে ফারহান জবে ঢুকেছে। এতে নীলিমাও অনেক খুশি হয়েছে, সবাই এক সাথে থাকবে। হাসি খুশি একটা সংসার তার। তবে একজন কে ছাড়া তার সংসার পরিপূর্ণ নয় ৷ তাই নীলিমা চুপ করে উদাসীকে বলেছে, বউমা পাশের বাসার ভাবির ছেলের বাচ্চা হয়েছে। কি সুন্দর দেখতে। তা আমাকেও একটু নাতনি নাতনির মুখ দেখার সুযোগ টা করে দেও।
— উদাসী রাতে কি করে ফারহান কে এই কথা বলবে এই কথাটা মাথায় আসতে তার ভিষণ লজ্জা লাগছে। তার আজকে সাজতে ইচ্ছে করছে তাই কালো শাড়ি, চোখে কাজল, হালকা লিপস্টিক ঠোঁটে দিয়েছে। ফারহান অফিস থেকে এসে রুমে উদাসীকে দেখেনি। ভেবেছে নাদিয়ার রুমে আছে। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে আসে। নীলিমা কে বলে, উদাসী কোথায়? ” নাদিয়ার রুমে আছে, তুই খেয়ে নে।
— মা উদাসী কে ডাকো এক সাথে খাবো। ” উদাসী বলেছে খাবে না তার পেট ভরা আছে। ” ওহ আচ্ছা দেও আমাকে।
— ফারহান রুমে আসার আধা ঘণ্টা হয়ে যাচ্ছে এখনো উদাসী রুমে আসেনি। তার বউকে দেখা জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। বউয়ের মনেই নেই তার বর আছে।
— দরজার দিকে দৃষ্টি যেতেই উদাসীকে দেখতে পায়। তবে দেখছে মুগ্ধ হয়ে। উদাসী দরজা লাগিয়ে দেয়। আসতে আসতে সামনে চলে আসে ফারহানের। ” আমার বউ দেখি সারপ্রাইজ দিতেও পারে। ” কেনো পারবো না। ” উদাসী ফারহানের শার্ট ধরে বলে, শুনছেন, আমি না আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।
” ওহ বলো বউ নিঃসংকোচে। ” আমার না একটা বেবি চাই। কথাটা বলেই মুখ হাত দিয়ে ঢেকে নেয়। “বউ চেয়েছে আমি কি আর না করতে পারি। ” কথা বলার সাথে সাথে উদাসীকে কোলে তুলে নেয়। তারপর শুয়ে দেয় বিছানায়। দুজনে তাদের কার্য সিদ্ধতে ব্যস্ত হয়ে পরে। দুজনে চলে যায় অন্য এক জগতে।
#সমাপ্ত