#উদাসীনী (৪)
লেখনীতে – Ditipriya Roy
ফারহান স্যারের নিঃশ্বাস গুলো কপালে পরছে। সেই নিঃশ্বাসের স্পর্শে সারা শরীর শিউরে উঠছে।স্যারের
দিকে আমি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছি। আমার সর্বশরীর কাঁপছে। তার উপর স্যারের গায়ে টি-শার্ট নেই। বুকের কালো পশম গুলো দেখা যাচ্ছে। স্যারের মুখের পানি গুলো আমার মুখে পরছে। স্যার পরক্ষণের মধ্যে ছেড়ে দেয়। আমি এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে দৌড়ে নূরের রুমে যাই। নূর রুমে বসে ছিলো, আমাকে দেখে উঠে আসে।” আপু তুমি কোথায় গিয়েছিলে, আর তুমি এভাবে হাঁপাচ্ছ কেনো?
–নূর এক গ্লাস পানি দিবে আমায়।” এই নেও আপু পানি। ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে নেই। আমি যেনো এখনো ঘোরের মধ্যে আছি। একটুপর নূরকে পড়াতে শুরু করলাম। নূরের পড়া শেষ হলে, নূর কে বলে চলে যাই। কারণ স্যারের সামনে যাওয়ার সাহস আমার নেই। স্যারের কাছে পড়বো না আর।
–রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আবারো সেই বকাটে ছিলো গুলো হাসাহাসি করছে,বাজে কথাও বলছে। কিছু দূর গিয়ে পিছন ঘুরে দেখি ছেলে গুলো আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি ভয়ে দৌড়াতে লাগলাম, রাস্তায় লোকজন তেমন একটা নেই। সামনে গিয়ে শফিক চাচার দেখা পাই রিকশা নিয়ে বাজার যাচ্ছিলো। আমাকে দেখে রিকশা থামিয়ে বললো,
— কি রে উদাসী এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো? ” আমি একটু স্থির হয়ে দাঁড়ালাম। তারপর বললাম, পিছনে ছেলে গুলো আসছে।” চাচা ছেলে গুলো কে দেখে বললো, এ তো ফয়সাল আর আজওয়াদ চৌধুরীর চেলা চামুণ্ডার মধ্যে একজন আমান।” চাচা আমার ওদের এই রকম আচরণ গুলো সুবিধার লাগছে না। রাস্তায় দেখলে কেমন কেমন করে।
–তুই নিজেও জানিস আজওয়াদ চৌধুরীকে। গ্রামের একজন নাম করা মানুষ। সবাই তাকে ভয় পায়। আমান তো আজওয়াদ চৌধুরীর ক্ষমতা ধরেই বাজে কাজ করে। তার কাছে আমানকে নিয়ে বিচার দিলে হয়তো আমান আরো ক্ষেপে যেতে পারে। হয়তো বিপরীত হতে পারে।”
— চাচা এভাবে তো আর রাস্তা ঘাটে চলা যায় না। ওদের এই অন্যেয় কাজ গুলো কি করে মেনে নিবো। ” আচ্ছা তুমি তো বাজার যাচ্ছো, বাবা কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে চলো।” আচ্ছা ঠিক আছে চল তাহলে।
— বাবা কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসলাম। ডাক্তার ওষুধ দিলো কিন্তু ওষুধ গুলোর বেশি দাম। এক সপ্তাহের জন্য ওষুধ নিলাম। রাতে বাড়িতে ফিরে পড়তে বসেছি। হঠাৎ ঘরের উপরে ঢিল মারার শব্দ। সাহস করে বাইরে দেখার চেষ্টা করলাম। যা দেখলাম তা আমার সন্দেহর বাইরে ছিলো না। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। তাই নিজের ঘর ছেড়ে বাবা ঘরে গিয়ে রইলাম।” বাবা জিজ্ঞেস করলো,
–কি রে এই ঘরে এলি যে পড়া পড়বি না। আর তোর মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেনো?” বাবা কে এসব কথা বলা যাবে না নয়তো চিন্তা করবে হয়তো আরো অসুস্থ হয়ে পরবে।” কিছু না বাবা একা একা ভালো লাগছিলো না তাই তোমার ঘরে আসলাম। রাতে বাবার পাশেই ঘুমিয়ে পড়ি।”
— ফারহান ক্লাস নিচ্ছে। উদাসী কে দেখছে না, হয়তো কালকের ঘটনার জন্য এখনো লজ্জা পাচ্ছে। তাই সাহস করে সামনে আসতে পাচ্ছে না। তার পরেও ফারহানের উদাসী কে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে ওর বাবার কিছু হলো না তো। ক্লাস শেষে অলকের সাথে কথা বলে। আজকে উদাসী কেনো আসনি?
— সেটা তো বলতে পারবো না স্যার। আমি কলেজ ছুটির পর ওদের বাড়িতে না হয় চলে যাবো।” আচ্ছা, তোমার ফোন তো আছে তাই না। তোমার নম্বর টা দিয়ে দেও। ” ফোন নম্বর নেওয়া পর ফারহান চলে যায়।
— বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায়। কথা বলতে বলতে বাগানের দিকে কয়েকটা ছেলের দিকে চোখ যায়। উদাসীনী বলে চিৎকার করছে আর পাশের ছেলে গুলো মজা নিচ্ছে।” ফোনটা কেটে দিয়ে, বোঝার চেষ্টা করছে। পরক্ষণেই আবার ফোনটা বেজে উঠে। এইবার অলক ফোন করেছে।” উদাসী আর ওর বাবা ঠিক আছে শুনে ফোনটা কেটে দেয়। আর উদাসীকে চৌধুরী বাড়িতে আসতেও বলে।
— উদাসীনী একা আসতে ভায় পাচ্ছে তাই অলকেও সাথে নেয়। চৌধুরী বাড়ির সামনে এসে অলক চলে যায়। চৌধুরী বাড়ি থেকে আমানের দল বল বের হচ্ছে। উদাসীনী কে দেখে এগিয়ে এসে বলে,
— আমাদের থেকে পালিয়ে যাবি কোথায়। এক দিন না একদিন এই আমানের হাতে তোকে পরতেই হবে। সে দিন তোকে পালাতে দিবো না। ” কথা গুলো বলেই হাসতে হাসতে চলে যায়।
— আমানের কথা গুলো শোনা মাত্রই চোখে অশ্রু চলে আসে। চোখের অশ্রু গুলো মুছে ভিতরে চলে যায়। নূরের রুমে বসে আছে। নূর এসে বলে,আপু তোমাকে ভাইয়া ছাদে ডেকেছে।”
–ছাদে দোলনায় বসে আছে ফারহান। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে পরে। ফারহান বলে,
পাশে বসো। একবার তাকিয়ে গিয়ে বসে পরে। ফারহান আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,
— আমান কি বলেছে তোমায় একটু আগে? ” উদাসীনী ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।” এমন করে কি দেখছো, আমি ছাদে ছিলাম আর সব দেখেছি। তাই বলে ফেলো।
— প্রথম থেকে সব কথা বলে দেয়। উদাসীনীর চোখের অশ্রু গুলো আবার গড়িয়ে পড়ছে। আমান এর আগেও একটা মেয়ের সর্ব নাশ করেছে। ফারহান কথা গুলো শুনে খুব রাগ হচ্ছে। এতো টা নোংরা ছেলে কে কি করে মামা সাথে নিয়ে ঘোরে। আজকেই মামার সাথে কথা বলতে হবে।
— উদাসীনী নূরের রুমে যায়। ” এদিকে আজওয়াদ চৌধুরী ঢাকায় গিয়েছিলো। আজকেই সকালে ফিরেছে। ঘুম থেকে উঠে সোফায় বসে চা খাচ্ছে। ফারহান এসে সোফায় বসে পরে। আজওয়াদ ফারহানকে বলে, কেমন চলছে তোমার কলেজ। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো? ” না মামা সব কিছুই ঠিক আছে। তবে একটা কথা বলার জন্য আসলাম।
কি কথা বলে ফেলো?
— আমান এতো বাজে ছেলে হওয়া সত্যেও তুমি ওকে এ বাড়িতে আসতে দেও কি করে। আর ও তোমার সাথে থাকেই বা কেনো?
— কি করেছে আবার ওই শয়তান টা?” ফারহান সব কথা আজওয়াদ কে বলে দেয়। ” আজওয়াদ সব কিছু শুনে বলে, সত্যি এবার আর আমান কে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ভেবে ছিলাম ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু আমার কথা ও আবার অমান্য করেছে। ” আজওয়াদ দারোয়ান কে ডেকে আমান কে ডাকতে বলে। এখনি যেনো চলে আসে। ” ঠিক আছে স্যার।
— আমান প্রায় ১০ মিনিট পর চৌধুরী বাড়িতে আসে।
আজওয়াদ চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাথে ওর সঙ্গী গুলে আছে।
— আজওয়াদ চৌধুরী আমান কে জেরা করছে কিন্তু আমান চুপ করেই আছে কোনো কথা বলছে না।
এতে আজওয়াদ চৌধুরী খুব রেগে গিয়ে বলে, তো কে ভালো পথে আনবো বলে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনে ছিলাম। বাইরের লোক আমাকে তোর নামে নালিশ দিয়েছে, তাও চুপ করেছিলাম। কারণ তুই আমার উপকার করেছিলিস। ভেবে ছিলাম তুই ভালো হয়ে যাবি কিন্তু না। ভালো আর হলি কোথায়।
— চাচা সব কিছুই মিথ্যে আমি এসব কিছুই জানি না। আর আমি উদাসীনীর বাড়ি যাবো কেনো। তাও রাতে, রাস্তায় হয়তে এমনি হেসেছি কিন্তু রাতে গিয়েছে সব মিথ্যা। উদাসীনী মিথ্যা কথা বলছে ওর মা তো কম নাটক করেনি তাহলে মেয়েটা কেমন হবে বলো। ও আমাকে ফাসানোর চেষ্টা করছে। আসলে ওই উদাসীনী নোংরা টাইপের মেয়ে, কার সাথে রাতে কি করে আর আমার নাম বলে দিয়েছে।
— আমানের কথা গুলো ফারহানের কর্ণকুহরে আসতেই রক্তিম চোখে তাকায়। উঠে গিয়ে আমানে গালে ঠাস ঠাস করে দুই গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। উদাসীর আর একটা বাজে কথা বললে তোর জিহ্বা টেনে ছিড়ে ফেলে দিবো। এই ফারহানের সামনে মিথ্যা কথা বললে কি হাল হয় সেটা এখনো তুই জানিস না।
ফারহানের রাগি কন্ঠ শুনে উদাসীনী রুম থেকে বেরিয়ে আসে,নূর ভয়ে কাঁপছে। নূরের মা আর মদিনাও চলে আসে ততক্ষণে। আমানের শার্টের কলাট ধরেছে দেখে ভয় পেয়ে যায় উদাসী। মনে মনে ভাবছে, ফারহান স্যার এতো রাগ।
— এদিকে আজওয়াদ ফারহান কে খুব ভালো করেই চেনে৷ যতটা ভালো তার চেয়ে দ্বিগুণ খারাপ। তবে সেটা ভিতরে, বাইরে প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি হলে তখন তার খারাপ রুপ প্রকাশ করে। রীতিমতো আমান ফারহানের রক্তিম চোখ দেখে ভয়ে ঢোক গিলছে। সাথে ছেলে গুলো গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
— আজওয়াদ ফারহানের কাছে গিয়ে বলে, ছেড়ে দে ফারহান আমি ব্যাপার টা দেখছি।” তুমি কি দেখবে মামা, ওকে বলো উদাসীর দিকে চোখ বাড়িয়ে তাকালে ওই চোখ আমি তুলে নিবো। শুধু উদাসী কেনো উদাসীর মতো কোনো মেয়ের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকালে ওর জীবন টাও নিয়ে নিবো। মেয়েদের কে অসম্মান করা এই ফারহান চৌধুরী মোটেও সহ্য করে না।” আজওয়াদ চৌধুরী ফারহানকে একটু দূরে নিয়ে যায়।
— ফারহানের এমন কথা গুলো শুনে আমান অপমান বোধ করছে। আর এই সব কিছুর জন্য উদাসীনী কে দায়ী করছে। এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে স্থান ত্যাগ করে নেয় আমান। আমানের পিছন ছেলে গুলো চলে যায়। বাইরে বেরিয়ে আমান শান্তিতে থাকতে পাচ্ছে না। এই অপমানের প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বে৷ রক্ত গরম হয়ে উঠেছে তার, গা গিজগিজ করছে। সাথে সাথে ফয়সাল কে ফোন দেয়। ফয়সাল কে সব কথা বলে, আসতে বলে যত দ্রুত।
— এদিকে উদাসীনী কান্না করছে, আজকে তার জন্য যত ঝামেলা। অলকে কে ডেকেছে ফায়সাল, উদাসীনী কে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাকে একা পাঠিয়ে দেওয়া যাবে না। দুজনেই হাঁটছে, উদাসীনী চারপাশ ভালো করে দেখেছে কোথাও আমান নেই।
বাড়িতে এসে বাবা বাবা বলে বলতে থাকে তার বাবার কোনো সারা শব্দ না পেয়ে রুমে যায়।
#চলবে
(ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)