উত্তরাধিকার (৮ম পর্ব)

0
1169

উত্তরাধিকার (৮ম পর্ব)
লেখাঃ-মোর্শেদা রুবি
***********************
নাযিয়াতকে দেখে ওর বোনেরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো!নাযিয়াতের মা আঁচলে চোখ মুছে এগিয়ে গিয়ে মেয়ের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বললেন-“এবার দুটো দিন থাকবি তো?”
নাযিয়াত হাসলো-“ইনশাআল্লাহ,সেরকমই ইচ্ছে আছে।তাছাড়া আমি না থাকলে তুমি একা এতো ধকল সামলাবে কি করে?”
-“হ্যাঁ,রে জামাই আসবেনা?”
-“আসবে,ওকে বলে দিয়েছি অফিস থেকে ফেরার পথে যেন দেখা করে যায়!”
-“তোর মুখটা অমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন রে মা,সব ঠিক আছে তো?”
নাযিয়াত হেসে ফেললো-“আলহামদুল
িল্লাহ,সব ঠিক আছে।মায়ের চোখে সব ছেলেমেয়েকেই অমন দেখায়!”
অনেক দিন পর বড়বোনকে কাছে পেয়ে বোনেরা এক্কেবারে ছেঁকে ধরলো নাযিয়াতকে।অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলো ওরা।
নাযিয়াত অন্যান্য অবস্থার খোঁজ নিলো!তারপর ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে মায়ের হাতে দিলো!নাযিয়াতের মা চমকে গেলেন-“এতো টাকা দিচ্ছিস কেন?কোথায় পেলি এতো টাকা?”
-“মা…এখানে আমার মাদ্রাসার তিন মাসের বেতন আর রাফিজের দেয়া বিশ হাজার টাকা আছে !”
-“তোর মাদ্রাসার বেতন আমাদের দিচ্ছিস, তোর শ্বাশুড়ী রাগ করবেনা?জামাই বা কি বলবে!”
-“ওরা কিছুই বলবেনা,ওদের দুজনের সম্মতিতেই এই টাকা দিচ্ছি মা,রাফিজের পরিস্কার কথা মাদ্রাসার বেতনের উপর শুধু তোমার মায়ের হক,এ টাকা খরচ করবেনা,ওনাকে দেবে!আর আমার শ্বাশুড়ীরও এ ব্যপারে কোনো দ্বিমত নেই!”
নাযিয়াতের মা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস চাপলেন।এমন সময়ে এতোগুলো টাকা হাতে আসায় তার অনেক চিন্তা হালকা হয়ে গেলো!

নাযিয়াত ফজরের নামাজ পড়ে শুয়েছে অমনি তার মোবাইল বেজে উঠলো!
মোবাইল হাতে নিয়ে অবাক হলো-“এতো সকালে রাফিজের ফোন?”
দ্রুত রিসিভ করলো-“আসসালামুআলাইকুম!”
-“ওয়ালাইকুমুসসালাম…..কি করছো?”
-“এই তো নামাজ পড়ে উঠলাম,আপনি জেগে আছেন এখনো?”
-“সারারাতই তো একরকম জেগে কাটিয়ে দিলাম।ভাবলাম ফজর পড়ে ঘুমাবো সেটাও আসছেনা!তাই ভাবলাম তোমাকেই ফোন দেই!”
-“সারারাত ঘুমাননি কেন?”
-“আমার পাশটা যে খালি….তাই!”
নাযিয়াত চুপ!
-“কবে ফিরবে?”
-“ইনশাআল্লাহ্,আগামী পরশু।কাল আকদের সময় থাকছেন তো?”
-“তোমার সাথে দেখা হবার এ সুযোগ ছাড়ি কি করে?”
-“ইস্,একেবারে আবেগে টইটুম্বর হয়ে আছেন দেখছি,প্রিয়ন্তী কোথায়?আসেনি?”
-“এসেছে…!”
-“তো?”
-“তো আবার কি,সে তার মতো আছে! আমার সাথে ভালো করে কথা বলেনা,মায়ের সামনে টুকটাক বললেও একলা ঘরে তো মনে হয় চেনেনা!”
-“দেখুন,আপনি ওর স্বামী,আপনারই উচিত ওর মনটাকে হালকা করা!ওর মনের ভার লাঘব করা।ওকে দিন ওর সাথে একটু কথা বলি!”
-“এখানে নেই!পাশের রুমে শুয়ে আছে,আমি তো ষ্টাডিরুমে!”
-“আপনার ওর কাছে যাওয়া উচিত!”
-“আচ্ছা, রাখছি!”
-“রাগ করলেন?”
-“নাহ্…!তবে অবাক হচ্ছি ভেবে যে তুমি কোন ধাতুতে গড়া!তোমার কি এতটুকু ভয় নেই? ”
-“ভয়ের কি আছে?বিপদ তো ও না থাকলেও ঘটতে পারে! আমার অংশের পাওনাটুকু পেলেই আমি খুশি,পাবো তো?”
-“সামনাসামনি বলবো,এখন রাখি।তোমার সাথে কথা বলেছি,এখন ঘুম পাচ্ছে!তুমি কি ঘুমের ট্যাবলেট?”
-“রাখি,আল্লাহ হাফিজ!”নাযিয়াত হেসে বললো
-“আল্লাহ হাফিজ!”



প্রান্তিক মেয়ে দেখে আসার পর শাজিয়া ধরলেন ছেলেকে!
-“মেয়ে কেমন লাগলো বাবা!তুই যেমন চেয়েছিলি তেমনি কিন্তু!পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,পর্দা করে!”
-“হমম,সব তো বুঝলাম,কিন্তু শেষের কথাটা শোনোনি?মেয়েদের পুরো পরিবার যে কোন্ একটা পীরের মুরিদ?”
-“হ্যাঁ,তাতে সমস্যা কি?”
-“অনেক বড় সমস্যা আছে মা!ইসলাম খুব সরল একটা ধর্ম যার বুনিয়াদ হলো “লা…ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”!ইসলামের মূলনীতি হলো ইবাদত হবে শুধু আল্লাহর জন্য আর তা হবে শুধু এবং শুধুমাত্র রাসুল সাঃ এর আদলে যাকে আল্লাহ আমাদের জন্য নবী করে পাঠিয়েছেন।সাধারনত পীর ভক্তরা এই মূল ট্র্যাক থেকে সরে গিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বদলে পীরের ইতা’ত করা শুরু করে!আমি এই ঝুঁকি নিবোনা মা স্যরি!”
-“এতো কিছু দেখলে চলে?মেয়ের ফ্যামিলি ভালো।বাবার বিরাট সম্পত্তি…!”
প্রান্তিক বাধা দিলো-“মেয়ের বাবার বিরাট সম্পত্তি দিয়ে আমি কি করবো?”
শাজিয়া হতাশ কন্ঠে বললেন-“তাহলে এদের কি বলবো?”
-“বারন করে দাও!আমার ইচ্ছে নেই!”
শাজিয়া আর কিছু না বলে সরে গেলেন।

নাযিয়াতের মনে একটা খটকা ছিলো, পরে রাফিজের কিছু আচরণে তা সন্দেহে পরিণত হয়েছিলো।তারপর সে নিজের মতো কিছু প্রোটেকশন গ্রহন করার পর রাফিজের পরিবর্তনে পুরোপুরি নিশ্চিত হলো কেউ তার আর রাফিজের মধ্যে ঝামেলা লাগানোর চেষ্টা করছে এবং তা করছে খুব খারাপ ভাবে।
প্রথমে সে নিজের মতো সুরা ফালাক-নাস-ইখলাস এবং আয়াতুল কুরসীর আমল শুরু করলো।তারপর সে যখন কিছু বাহ্যিক সিমটমে বুঝতে পারলো,রাফিজ যাদুতে আক্রান্ত তখন দ্রুত বরই পাতার ট্রিটমেন্ট শুরু করলো!যেটা যাদু নষ্টের জন্য খুবই কার্যকরী একটি চিকিৎসা!নাযিয়াত জানে,পৃথিবীর যাবতীয় রোগের শেফা হলো আল কুরআন।সে তার পরিচিত একটি “রুকীয়া আশ শারইয়াহ” সেন্টারের একজন দ্বীনিবোনের নসীহত মতো ক্বুরআনী চিকিৎসা শুরু করলো!বোনটি একটা কথা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছিলো, যে তোমাদের সংসারে ঝামেলা পাকাচ্ছে সে তোমার পাক কালামের চিকিৎসায় নিজে অসুস্থ হয়ে পড়বে কারন সে তোমাদের দুজনকে পৃথক করার জন্য খুব খারাপ একটি পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে!
নাযিয়াত আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহর কালাম দিয়ে সেই কুফুরী কালামকে প্রতিহত করার চেষ্টায় আপ্রাণ আত্মনিয়োগ করলো পাশাপাশি সেই অদৃশ্য শত্রুর হেদায়াত কামনা করলো বারবার!
সেই চিকিৎসায় রাফিজ এখন অনেকটা পরিবর্তিত!
নাযিয়াত তাকে বারবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাবন্দী করতে বলে কারন এটা না হলে চিকিৎসা সহজ হয়না তবে এই চিকিৎসার মাধ্যমে মুসলিম ছাড়াও বিধর্মীরাও উপকৃত হচ্ছে। প্রয়োজন শুধু ধৈর্য্য ধরে আমলটা করা!
গত কয়েকদিন যাবৎ রাফিজের আচরন অনেকটা সহজ এবং প্রানবন্ত হয়ে গিয়েছে!
নাযিয়াত মায়ের বাড়ী বেড়িয়ে আসার পর থেকে সে আর প্রিয়ন্তী দুজনেই একসাথে এ বাড়ীতেই আছে কিন্তু প্রিয়ন্তী কথা খুব কম বলে!যেন তার কোনো কিছুতেই কিছু যায় আসেনা!
নাযিয়াত তার মতো যথাসাধ্য সমতা বজায় রেখে চলার চেষ্টা করে!তবু বেলা চোধুরী সুযোগ পেলেই প্রিয়ন্তীকে রাফিজের সাথে সময় কাটাতে দিয়ে নাযিয়াতকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেন!
নাযিয়াত সব বুঝলেও মুখে কিছু বলেনা।সে ধৈর্য্যধারনের চেষ্টা করে!আর আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজ দায়িত্ব পালনের পরিপূর্ণ চেষ্টা করে!
প্রতিদিনের মতো আজও দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছে
প্রিয়ন্তী!
ওকে উঠতে দেখে বেলা চৌধুরী ময়নাকে নির্দেশ দিলেন ওর জন্য নাস্তা তৈরী করে দিতে!
রাফিজ প্রতিদিনের মতো অফিসে চলে যাবার কিছুক্ষণ পর নাযিয়াতও মাদ্রাসায় চলে গেছে!প্রিয়ন্তী ক্লান্ত পায়ে ড্রইং রূমে এসে বসলো!গত কয়েকদিন থেকেই তার শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা।কিছুই খেতে ইচ্ছে করেনা।খালি গা গুলায়!বেলা চৌধুরী পত্রিকা পড়ছিলেন।প্রিয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে বললেন-“তোমার মুখটা অমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন?”
প্রিয়ন্তী হাসার চেষ্টা করলো!তখনি ময়না একটা ট্রে তে করে নাস্তা এনে সেন্টার টেবিলের উপর রাখলো।
বেলা প্রিয়ন্তীকে কিছু বলতে যাবার জন্য মুখ খুলতেই দেখলেন প্রিয়ন্তী বেসিনের দিকে দৌড় দিলো!
বেলা চোখ থেকে চশমা খুলে হাতে নিয়ে সেদিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
কিছুক্ষণ পর প্রিয়ন্তী খানিকটা স্বাভাবিক হলে তিনি প্রিয়ন্তীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন!প্রিয়ন্তীও ক্লান্ত মুখে জবাব দিয়ে চললো!
বেলা চৌধুরীর মনে হলো হঠাৎ করে তার চারপাশটা যেন আলোকিত হয়ে উঠলো।তবু মুখে কিছু বললেন না,মনের সন্দেহ নিরসনের জন্য তৎক্ষণাৎ তার গাইনী ডাক্তার বান্ধবীকে ফোন করলেন বিকেলে আসার জন্য।
ডাক্তার আসার আগ পর্যন্ত বেলা প্রিয়ন্তীর চুড়ান্ত যত্ন নেয়া শুরু করলেন।তার বুকের ভেতর হ্রৎপিন্ড এমন ভাবে লাফাচ্ছে যে মনে হচ্ছে ওটা বাইরেই বেরিয়ে পড়বে!
বেলা চৌধুরীর গাইনি ডাক্তার বান্ধবী বিকেলে এসে প্রিয়ন্তীকে খুব ভালো করে চেকআপ করে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন তারপর বেলাকে বললেন-“সমস্ত সিমটম তো প্রেগন্যান্সিকেই সাপোর্ট করছে তবু নিশ্চিত হবার জন্য তুমি ওকে কাল সকাল দশটার দিকে আমার চেম্বার নিয়ে আসো।একটা সনোগ্রাফী করে দেখি।আমি তো প্রথমেই বলেছিলাম তোমার ছেলে আর বৌ এর ফিজিক্যালি কোনো প্রবলেম নেই।বোওথ দে আর ওকে…!’
বেলার আনন্দ যেন আর ধরেনা।অবশেষে তার প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে।তিনি দাদী হতে যাচ্ছেন।খুশিতে দৌড়ে এসে প্রিয়ন্তীর কপালে চুমু খেয়ে বললেন-“আমি খুব দোয়া করি,কাল সকালে তুমি আমাকে একটা গুডনিউজ শোনাও!ওহ্, ভালো কথা!আপাতত কনফার্ম না হওয়া পর্যন্ত এটা গোপন থাকবে,কেমন !নাযিয়াতকে একথা জানানোর কোনো দরকার নেই!শুনলে হিংসেয় মরবে।আমি চাইনা সে কোনো ঝামেলা করুক।কারন আমার নাতির এ বাড়ীতে আগমন মানে ওর দিন শেষ।আহ্,এতো খুশি কোথায় রাখি আমি।এটা তো বোনাস পাওনা হলো, নাতিও পেলাম সেও তোমার গর্ভে।
এখন আর আমার ওকে দরকার নেই।কালকে সকালে ওরা দুজন বেরিয়ে যাবার পর আমি তোমাকে নিয়ে আমার বান্ধবীর ক্লিনিকে যাবো,কেমন?”
প্রিয়ন্তী ফ্যাকাশে চোখে চেয়ে রইলো কেবল, কোনো উত্তর করতে পারলোনা।
বেলা উঠে চলে যেতে গিয়ে ফের দৌড়ে এসে বললেন-“একথা রাফিজকে ও বলবেনা,নইলে ঠিক নাযিয়াতের কানে তুলে দেবে।ইদানীং বউ পাগলা হয়েছে ছোঁড়াটা!এবার তোমার কাছ থেকে ছেলে পেলে মতি ফিরবে আমার ছেলেটার। নাযিয়াত নাযিয়াত করে তো পাগল হয়ে আছে,যত্তসব।কাল পাকা খবর পেয়ে নেই, তারপর মিষ্টি নিয়ে তোমাদের বাড়ী যাবো! ইস্,এতো খুশি লাগছে যে কি বলবো!”
প্রিয়ন্তী নিরবে সব কথা শুনে গেলো কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারলোনা।বেলা ওকে বিছানায় শুইয়ে খুশিতে গুণগুণ করতে করতে নিজের কামরায় চলে গেলেন।আজ তার বড় আনন্দের দিন।তার এতোগুলো বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।আসলে তার আরেকটু ধৈর্য্য ধরা উচিত ছিলো।
অযথাই নাযিয়াতকে রাফিজ আর প্রিয়ন্তীর মাঝখানে আনা।ডাক্তার তো বলেই ছিলে যে আপনার ছেলে আর বৌ দুজনই ফিট।তবু কেন যে ঐ পাগলামোটা করতে গেলেন।যাক্,যা হবার হয়ে গেছে।কাল পাকা খবর পেলে নাযিয়াতকে কৌশলে ওর মায়ের বাড়ী পাঠিয়ে তারপর যা করার করবেন।এখানে থেকে ওকে বের করা অসম্ভব প্রায়। রাফিজের জন্য পারবেন না।যা করার তা করতে হবে রাফিজের অগোচরে!
বেলা মনে মনে বিভিন্ন পরিকল্পনায় মেতে উঠলেন!

প্রিয়ন্তী বেশ বুঝতে পারছে তার সাথে কি ঘটছে।এবং এও বুঝতে পারছে রাফিজ এই সন্তানের বাবা নয়।এটা ফ্রিকের সন্তান।কিন্তু একথা বেলা চৌধুরী জানেনা।
প্রিয়ন্তীর বুকের ভেতর এক যন্ত্রনার শুরু হয়েছে কাল থেকে।কি করবে সে?
পুরো ব্যপারটা চেপে যাবে?
এতো বড় সত্য ছাইচাপা দিবে?
কিন্তু কিভাবে সম্ভব!রাফিজতো ঠিকই ধরে ফেলবে।
প্রিয়ন্তীর মাথাটা কাজ করছেনা!
মা’কে ফোন দেবার জন্য রিসিভার তুলতেই নাযিয়াত হাসিমুখে ওর ঘরে ঢুকলো-“কেমন আছো তুমি?ময়না বললো সকালে নাকি বমি করেছো?”
-“ঐ এসিডিটি আর কি?”
-“হমম…তোমাকে কত বলি রাতে না খেয়ে থেকোনা।তুমিতো গতরাতেও কিছু খাওনি।এখন কিছু খাবে? এনে দেই?”
-“না না ধন্যবাদ।তুমি বাইরে থেকে এসেছো।তুমি বরং বিশ্রাম নাও গে,আমি ঠিকআছি!”
নাযিয়াত একটু মুচকি হাসি দিয়ে উঠে পড়লো!

বেলা বাকরুদ্ধ হয়ে ওর গাইনী ডাক্তার বান্ধবীর কথাগুলো শুনতে লাগলেন।তার মনে হচ্ছে তিনি যেন আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছেন।এতো সুখ তার কপালে ছিলো।প্রিয়ন্তী মা হতে যাচ্ছে!আহা!কি আনন্দ!
কিন্তু আবেগের বশে ছোট্ট একটা ভুল করে ফেলেছেন তিনি ।এখন সেই ভুল শোধরানোর সময় এসেছে।যা করার এরই মধ্যে করতে হবে!
যত্ন সহকারে প্রিয়ন্তীকে জাপটে ধরে গাড়ীতে তুললেন।প্রিয়ন্তী বুঝলো এসব যত্ন সেই অনাগত সন্তানের কারনে কিন্তু বেলা চৌধুরী যখন জানবে এটা তার বংশ প্রদীপ নয় তখন কি হবে?
কিভাবে কি করবে প্রিয়ন্তী?
মাথা কাজ করছে না!



নাযিয়াত বোকার মতো বেলা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইলো।মনে হলো যেন তার কথাগুলো ঠিকমতো কানে ঢোকেনি।অথবা ভুল শুনেছে।
বেলা চৌধুরী চশমা খুলে মুছতে গিয়ে বললেন-“বুঝেছো,কি বলেছি?তুমি কাল মাদ্রাসা থেকে তোমাদের বাসায় চলে যাবে!”
-“জ্বী,মা।কিন্তু কেন?”
-“কারনটা তোমাকে আমি পরে জানাবো।তোমার বোনদের খুব বিপদ! তোমার এখন ওদের পাশে থাকা উচিত।তোমার মা তো একদম একা, তাই না?”
-“জ্বী,কিন্তু কি বিপদ!মা তো আমাকে কিছু বললেন না?”
-“হয়তো সংকোচবশতঃ বলেনি!তুমি কাল যেয়ে দেখা করে এসো তারপর সবই বুঝতে পারবে!”
-“রাফিজকে না জানিয়ে….!”
-“ওকে এসব থেকে দুরেই রাখো তো ভালো।সে কি তোমাকে বিয়ে করেছে তোমার মায়ের সংসারের ঘানি টানার জন্য?”
নাযিয়াত চুপ হয়ে গেলো।তারপর মৃদু স্বরে বললো-“কিন্তু স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোথাও যাওয়াটা তো গুনাহের পর্যায়ভুক্ত। আমি নাহয় রাতে অনুমতি নিয়ে নেবো?”
-“একবার তো বলেছি,ওকে এসব থেকে দুরে রাখো তো ভালো হবে!এখন কথা না বাড়িয়ে যাও সামনে থেকে!ওকে যা বলার আমিই বলে দেবো! ”
নাযিয়াত চিন্তিত মুখে ঘরে এসে শুয়ে পড়লো।
রাতে খাবার টেবিলে ওকে নিরব দেখে রাফিজ দু’একবার ওর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলো কিন্তু বেলা চৌধুরীর কারনে বেশী কিছু বলেনি।তিনি যেন আজ ওদেরকে পাহাড়ায় রাখছেন।এমনকি রাফিজ যখন নাযিয়াতের রুমে ঢুকতে যাচ্ছিলো তখন পেছন থেকে বাধা দিয়ে বলে ওঠেন-
-“প্রিয় টার শরীর অনেক খারাপ।ওর দিকে একটু খেয়াল রাখিস।নাযিয়াত তুমি আমার রুমে এসো কথা আছে!”
অগত্যা রাফিজ প্রিয়ন্তীর রুমে ঢুকতে বাধ্য হলো আর নাযিয়াত বেলা চৌধুরীর রুমের দিকে এগিয়ে গেলো!

★★★
নাযিয়াতকে দেখে ওর মা অবাক হয়ে গেলেন কিছুটা-“কি রে মা?এই অসময়ে তুই?একটা ফোন না কিছু!তুই যে আসবি জানাবি তো?”
কি হয়েছে কোনো সমস্যা?তোর শ্বাশুড়ী ফোনে বললো তোকে কিছুদিন আমাদের বাড়ী রাখতে।রাফিজ নাকি তোর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে?উনি এজন্য তোদের দুজনকে দুই দিকে রেখে পরীক্ষা করতে চায়!কিন্তু এটা কোনো সিষ্টেম হলো স্বামী স্ত্রী’র মাঝে দুরত্ব ঘোঁচাবার?কি হয়েছে, আমাকে বলতো?”
নাযিয়াত এবার কেঁদে ফেললো!
মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো-“আমি নিজেও কিছু বুঝতে পারছিনা মা,উনি কেন এমন করছেন!ওনার কথাবার্তার ধরন আমার ভালো ঠেকছে না।তোমাদের জামাই কিচ্ছু জানেনা,আমি যে আজ এখানে আসবো সেটা ওনাকে বলে আসতে পারিনি।চিন্তায় সে সারারাত ঘুমাতে পারবেনা!কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।উনি মিথ্যে কথা বলে আমাকে বাড়ী পাঠালেন কেন!”
বলতে বলতে নাযিয়াত দুহাতে মাথা চেপে ধরলো।ওর চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এসেছে।
নাযিয়াত আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা।
জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো!

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে