উত্তরাধিকার (৬ষ্ঠ পর্ব)

0
1102

উত্তরাধিকার (৬ষ্ঠ পর্ব)
লেখাঃ-মোর্শেদা রুবি
***********************
হোটেল শৈবালের নিজস্ব মনোরম বীচে হাঁটছিলো ওরা দুজন!
নাযিয়াতের কাছে খুব ভালো লাগছিলো হাঁটতে!ভালো লাগার সবচে বড় কারন হলো চারপাশে কোনো লোকজন নেই।
রাফিজ ইচ্ছে করেই এই হোটেলটা নিয়েছে কারন বীচটা এদের নিজস্ব আওতাভুক্ত।কেবল এই হোটেলের বাসিন্দারাই এই বীচে বিচরণের অধিকার পাবে।ফলে বীচ একরকম খালিই প্রায়!দুরদুরান্তে দু একজন ইতিউতি ছড়িয়ে আছে!
রাফিজ নাযিয়াতের হাত ধরে সাগরে নামলো!নাযিয়াত প্রথমে নামতে চায়নি কারন ভেজা কাপড় গায়ে সেঁটে থাকবে,কিন্তু রাফিজ ওকে অভয় দিয়ে বলেছে,কোনো সমস্যা নেই!তোমাকে দেখার মতো এখানে আমি ছাড়া কেউ নেই!তাছাড়া শুকনো আবায়া সাথে নিয়ে এসেছি,চাইলে ফেরার সময় সেটা পড়ে নিলেই তো হলো!
নাযিয়াত কোমড় পানিতে নেমে আরো এগিয়ে যাচ্ছিলো দেখে রাফিজ টান দিলো ওকে-“আরে,ঐ দিকে কই যাচ্ছো?প্রথমে তো নামতেই চাওনি আর এখন একেবারে মাঝসাগরে রওনা দিয়েছো!”
নাযিয়াত যতই বারন করুক তবু রাফিজ এক মুহূর্তের জন্য ওর হাত ছাড়েনি!
তার ধারনা হাত ছাড়লেই কোনো একটা বিপত্তি ঘটবে!সে কোনো ঝুঁকি নিতে রাজী না!
এমনিতেই সময়টা অফ সিজনের!
সাগর আজ সকাল থেকেই বৈরী আচরন শুরু করেছে।আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে।গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে।তিন নম্বর বিপদ সংকেত দেখাচ্ছে!
রাফিজ নাযিয়াতকে নিয়ে দুপুরের পরপরই বেরিয়েছে,পুরোটা বিকেল নিস্তদ্ধ বীচে ওরা দুজন!যেন জনমানবহীন প্রান্তরে এক জোড়া কপোত-কপোতী!নাযিয়াতের কোমর বেষ্টন করে দাঁড়িয়েছিলো রাফিজ।
বাতাসের প্রবল ঝাপটা ওদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যেন !
নাযিয়াত একবার বলেই ফেললো-“ইস্,কি এলোপাতাড়ী বাতাস, মনে হচ্ছে দুজনকে দুদিকে উড়িয়ে নিয়ে ফেলবে!”
রাফিজ ওর দিকে তাকিয়ে আরো শক্ত করে ওকে কাছে টেনে বলেছে-“এ বাঁধন বড় শক্ত।চাইলেই কেউ ছিঁড়ে ফেলতে পারবেনা!”
নাযিয়াত মৃদু হেসে ওর কাঁধে মাথা রেখেছে!রাফিজ ওর কানের কাছে মুখ রেখে ফিসফিসিয়ে বললো-“আশেপাশে কিন্তু কেউ নেই…দেখেছো?”
নাযিয়াত কিছুটা কুঁকড়ে গেলো যেন!
চারপাশে আরেকবার তাকালো!
রাফিজ অনেকটা জোর করেই নাযিয়াতকে নিজের দিকে ফেরালো!
নাযিয়াত দুচোখ বন্ধ করে ফেললো!
বাতাসের প্রবল ঝাপটা ওদের চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছে!
কিন্তু ওরা দুজনই স্থির অবিচল!

রাতে প্রকৃতি আরো বিমুখ হয়ে গেলো!সন্ধ্যের পর মাগরিবের নামাজ সেরে ওরা দুজন ফের বেরোতে চেয়েছিলো।কিন্তু বাতাসের এলোপাথাড়ী আক্রমন আর সাগরের গর্জন দেখে রাফিজ মত বদলালো!সন্ধ্যেটা দুজনে খোলা বারান্দায় বসে সাগরের ক্রুদ্ধরূপ দেখেই কাটিয়ে দিলো!
ঈশার নামাজের জন্য নাযিয়াত রাফিজকে ধরলো ইমামতির জন্য!
-“দুজনেই তো সুন্দর জামাত হয়,আপনি থাকতে একা একা পড়ার কোনো যুক্তি নেই!নিন্,আজ আপনিই নামাজ পড়ান!”
*
রাফিজ মুচকি হেসে বললো-“তুমি দেখছি আমাকে পাক্কা মুসল্লী বানিয়ে ফেলবে!”
-“শুধু আপনাকেই বানাতে চাইনা নিজেও হতে চাই!তারপর একসাথে জান্নাতের বাগানে চিরযৌবনা হয়ে আপনার হাত ধরে হাঁটতে চাই,জান্নাতের নহরে গা ভেজাতে চাই,মোতির মতো তাবুর নিচে দুগ্ধফেনিল নরম পালকের মতো বিছানায় আপনার সাথে অবগাহন করতে চাই!আপনি চান না?”
রাফিজ গম্ভীর মুখে বললো-“আল্লাহ আমাদের দুজনকে কবুল করুন!
নাযিয়াত বললো-‘আমিন!”
*
পরের দিন প্রকৃতি অনেকটাই শান্ত! রাফিজ নাযিয়াতকে নিয়ে ইনানী বীচে যাবার পরিকল্পনা করলো!একটা চাঁদের গাড়ী ভাড়া করে দুজনে ইনানী সৈকতে রওনা দিলো!সারাটা দিন সেখানে কাটিয়ে বিকেলে হিমছড়ি হয়ে শৈবালে ফিরলো।
নাযিয়াতের কাছে নাকি শৈবালের বীচটাই বেশী ভাল লাগে।
রাফিজ হাসলো-“কারন ওখানে চারপাশে দুরদুরান্ত পর্যন্ত কেউ নেই,এইজন্য! আর ইনানী বীচতো মোটামুটি ভীড়।শান্তিতে বসার কোনো উপায় নেই!”
রাতে খাবার রুমে আনিয়ে খেলো ওরা।দুজনই খুব ক্লান্ত।নাযিয়াত বাসায় ওর মা আর বোনদের সাথে কথা শেষ করে দেখলো রাফিজ খুক খুক করে কাশছে!
তৎক্ষাণাৎ ব্যাগ থেকে সর্ষের তেলের বোতল বের করে ওর কাছে এসে বসলো!
রাফিজ অবাক হয়ে তাকালো-
-“এটা আবার কি?”
-“সর্ষের তেল।বুকে পিঠে মালিশ করে দিলে কাশিটা কমে যাবে!”
–“ও,তাই নাকি!আহ্ দারুন!নিজের সৌভাগ্যে নিজেরই ঈর্ষা হচ্ছে!এতো যত্ন শেষ কবে পেয়েছি মনে পড়েনা!”
-“বদনজরের দু’আ পড়ুন।কারন বদনজর কিন্তু মারাত্মক।আর নিজের নজরই বেশী লাগে।বদনজর সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন-“বদনজর সত্য।বদনজর উটকে পাতিলে ঢোকায় আর মানুষকে ঢুকায় কবরে!যদি কোনো পোশাকে বা কোন ভালো কিছুর কারনে নিজেকে ভাল ও সুন্দর দেখতে পান তখনই আল্লাহর পানাহ চাইবেন নতুবা আপনার নিজের অথবা অন্য যে কারো বদনজর লেগে যাবে!
রাসুল সাঃ বলেছেন-“যদি কোনো জিনিস তাক্বদীর পরিবর্তন করতে পারতো তবে সেটা বদনজরই হতো!”
আর মা আঈষা রাঃ বলেছেন কারো উপর বদনজর লাগলে রাসুল সাঃ ঝাঁড়ফুঁক করতে নির্দেশ দিয়েছেন-!(বুখারী/মুসলিম)!
-“ঝাঁড়ফুক মানে তো দু’আ,তাই না?তা বদনজরের দু’আটা কি?”
-“জ্বী,দু’আ!এমনিতে বদনজর ছাড়াও বিভিন্ন বিপদাপদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য পড়তে পারেন-“আ’উযুবি কালিমা তিল্লাহিত্তাম্ম
াতি মিন শাররি মা খলাক্ব!”(মুসলিম)
এছাড়া সুরা ফালাক্ব,নাস,ইখলাস পড়ে ঝাঁড়ফুক করা যায়!এগুলির ফজিলত অসীম!”
বলে নাযিয়াত সযত্নে রাফিজের বুকে তেল মালিশ করে দিতে লাগলো!

★★

আজ প্রিয়ন্তীর আর্ট এগজিবিশন চলছে!
বাঙালী পাড়ার মোটামুটি সবাই এসেছে! প্রিয়ন্তীর বড়মামা আজ প্রায় বিশ বছর ধরে এখানে আছেন তাই এখানকার সবাই তাকে বেশ ভাল ভাবেই চেনে।বিয়ের পরপরই তিনি অষ্ট্রেলিয়া চলে আসেন।পরে মামার একমাত্র সন্তান ‘ফারিক চৌধুরী’ জন্ম নেবার পর ওকে আর মামীকে অষ্ট্রেলিয়া নিয়ে আসেন।তারপর থেকে তিনি এখানেই সেটেলড!
আর ফারিক এখানে এসে কিভাবে যেন ‘ফ্রিক’ হয়ে গেছে।ওকে দেখতেও একদম অষ্ট্রেলিয়ান মনে হয়।লম্বা ফর্সা ইউরোপীয়ান লুক।
প্রিয়ন্তী ওর চালচলনে বেশ ইমপ্রেসভড।
বড়মামা চলে আসার পর এর মধ্যে মাত্র তিনবার বাংলাদেশে গিয়েছিলেন!তখন ফ্রিক সাথে যায়নি বলে ওর সাথে প্রিয়ন্তীর দেখা হয়নি!কিন্তু এবার প্রিয়ন্তী আসার পর ফ্রিকের উচ্ছাস ছিলো দেখার মতো!
ফ্রিকের ষ্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে প্রিয়ন্তীর জন্মই হয়েছে পুতুলের মতো শোকেসে সাজিয়ে রাখার জন্য!ঘরকন্নার কাজ ওকে একদম মানায় না!
প্রিয়ন্তী গোপনে দীর্ঘশ্বাস চেপে ভাবলো-“রাফিজ,তুমিই কেবল আমার কদর বুঝলে না!তুমি তো আমাকে বাঁধা বুয়াই বানিয়ে রাখতে চাও!”
প্রিয়ন্তীর একমাত্র ভাই প্রান্তিকও বছর তিনেক আগে স্টুডেন্ট ভিসায় এখানে এসেছিলো!
সেও মামার ছত্রছায়ায় এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি অড জব চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে সে মামির বাড়ীতে থাকেনা।
কারনটা ফ্রিকের সাথে মানসিক দুরত্ব ছাড়াও প্রান্তিকের ধর্মীয় মনস্কতা!
তাছাড়া,বড়মামার বাড়ীর দ্বন্দমুখর পরিবেশটাও প্রান্তিকের পক্ষে অনুকূলে ছিলোনা!
প্রান্তিক এদের সাথে ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলো না!
এদিকে প্রিয়ন্তী আবার বড়মামার বাড়ীতে বেশ মানিয়ে নিয়েছে।ফ্রিকের সাথে ওর বন্ধুত্বটাও বেশ জমে উঠেছে।এর আরেকটা বড় কারন হলো ফ্রিক যথেষ্ট উদারমনা।যেমনটি প্রিয়ন্তী চায়।মেয়েদের ব্যপারেও সে খুবই লিবারেল!ও’ই দৌড়ঝাঁপ করে প্রিয়ন্তীর এগজিবিশনটা একটা ফাইভ ষ্টার হোটেলের বলরুমে এরেঞ্জ করেছে!এগজিবিশন দেখতে আসা গেষ্টদের কাপাচিনো খাওয়াবার আইডিয়াটাও ওরই।
সব মিলিয়ে ইউনিক একটা প্রোগ্রাম হচ্ছে ।
প্রিয়ন্তী এজন্য ফ্রিকের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
এখানে আসার পর ও ফ্রিকের মতো বন্ধু পেয়েছে।ওরই উৎসাহে প্রিয়ন্তী তুলি হাতে তুলে নিয়েছে!গত একটি মাস টানা ছবি এঁকেছে প্রিয়ন্তী।
যার ফলশ্রুতিতে আজকের এই এগজিবিশন!
এগজিবিশনের শেষের দিকে ফ্রিক নাকি প্রিয়ন্তীকে একটা সারপ্রাইজ দেবে বলেছে।
প্রিয়ন্তী এখন সেটার প্রতীক্ষাতেই উন্মুখ।
*
লোকের আনাগোনা কমে এলে প্রিয়ন্তীকে নিয়ে ফ্রিক বত্রিশ তলার একটি সুসজ্জিত সুইটে এলো!
প্রিয়ন্তী তো পুরাই হতভম্ব।
কারন প্রিয়ন্তীকে চমৎকার ভাবে ওয়েলকাম করা হলো!ঢোকামাত্র ওর মাথার ওপর একরাশ ফুলের পাপড়ী ঝরে পড়ায় ও খুশিতে দুহাত চাপ দিয়ে উঠলো!
তারপর পুরো রুমটা একবার চক্কর দিয়ে খুশিতে বলে উঠলো-
–“ইউনিক..!রিয়েলি ফ্রিক ইউ আর অলওয়েজ আ ডার্লিং বয়!”
রুমটা খুব সুন্দর করে এমনভাবে সাজানো যেন এখানে এক্ষুণি ব্যালে ডান্স শুরু হবে!রুমের ঠিক মাঝখানে একটা গোল টেবিল দামী লাল টুকটুকে কভারে ঢাকা আর তার উপর লম্বা সুদৃশ্য ক্যান্ডেলপেয়ার !
প্রিয়ন্তী বোঁ করে এক পায়ের ওপর পাক খেলো!ও আজ পড়েছে একটা টাইট জিন্স আর ওপরে শর্ট টপস,যেটার কারনে ওর পেটের খানিকটা উন্মুক্ত হয়ে আছে।
প্রিয়ন্তীর কোমড় ছাড়ানো চুলগুলো সিল্কের মতো কোমড়ে ছড়িয়ে আছে!
ফ্রিক ওর সৌন্দর্য্যের ভূয়সী প্রশংসা করে রাফিজের নির্বুদ্ধিতাকে ধিক্কার জানালো!
ফ্রিক হলে তো ওকে সাজিয়ে বসে সারাদিন চেয়ে চেয়ে দেখতো!
প্রিয়ন্তীর মনের গভীর গোপন জায়গা ছুঁয়ে গেলো ফ্রিকের কথাগুলো।
ফ্রিক আজ ওর অনারে শ্যাম্পেন অর্ডার করেছে!
তবু প্রিয়ন্তী মৃদু আপত্তি করে বারন করতে চাইলে ফ্রিক বললো-“ও…প্লিজ !ডোন্ট বিহেভ লাইক আ ভিলেজ গার্ল।”
প্রিয়ন্তী আর আপত্তি করেনি কেবল মনে মনে বলেছে,দেখে যাও রাজিব,আমাকে খুশি করার জন্য একজনের চেষ্টার কোনো অন্ত নেই আর তুমি?তুমি তো…..!”
-“হ্যাভ আ নাইস টাইম!আ বিউটিফুল মুমেন্ট ফর দ্যা মোষ্ট বিউটিফুল গার্ল ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড!জাষ্ট ইউ এন মি…!”বলে ক্রিষ্টাল ক্লিয়ার পাণীয় ভর্তি গ্লাসটা প্রিয়ন্তীর দিকে এগিয়ে দিলো ফ্রিক !
প্রিয়ন্তী সব রকমের সংকোচ ঝেড়ে ফেলে বকের ঠোঁটের মতো লম্বা গ্লাসটিতে ছোট্ট একটা চুমুক দিলো!
তারপরের ঘটনাগুলো প্রিয়ন্তী মনে করতে পারছেনা!চারপাশ ঝাপসা হয়ে আসতে লাগলো।মাথার ভেতরে একটা মিষ্টি আবেশ।
চোখ মেলে দেখেছে ও একটা সুন্দর লাল টুকটুকে ওয়াটার বেডের উপর শায়িত।ডান হাত মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে বসতেই বাথরুমের দরোজা খোলার শব্দ হলো!
প্রিয়ন্তী তাকিয়ে দেখলো!সেখান থেকে ফ্রিক বেরিয়ে আসছে ভেজা শরীরে।
প্রিয়ন্তীকে দেখে হাসলো।সেই হাসিতে নেই কোনো অপরাধবোধ।
প্রিয়ন্তী কাঁপা স্বরে কেবল প্রশ্ন করলো-
-“আ..আমি এখানে কিভাবে!কি ঘটেছে এখানে!প্লিজ,টেল মি দ্যা ট্রুথ ফ্রিক!”
-“ও সুইট হার্ট!ইট ওয়াজ আ নাইস এক্সপিরিয়েন্স!আ’ম রিয়েলি গ্রেটফুল টু ইউ!”
-“হোয়াট ডাজ ইট মিন?”ঝাঁঝালো স্বরে বললো প্রিয়ন্তী!
-“আই থিঙ্ক ইউ নো!নাউ,প্লিজ বি অফ!জাষ্ট টেক ইট এজ আ গেম!ইউ এন্ড মি…বোথ আর গুড ফ্রেন্ড!সো…ইউ শুডন্ট বি সো মাচ্ ইমপেসেন্ট…!”
প্রিয়ন্তী কিছুক্ষণ কোন কথা বলতে পারলোনা।ওর মাথার ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে!কোনমতে কেবল বললো-“ইউ চিট মি!তুমি আমাকে বললেই পারতে যে তুমি আমাকে চাও….বাট উইদাউট মাই পারমিশান এমনটা না করলেও পারতে!”
ফ্রিক হো হো করে হেসে দুহাত স্যারেণ্ডারের ভঙ্গিতে বললো-“স্যরি,আই ওঅজ টোটালি আউট অব মাই হেড!ওকে…নাউ স্টপ অল দিস ননসেন্স এন্ড কামন লেটস গো টু আ লং ড্রাইভ।”
প্রিয়ন্তী বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো-“আই উওন্ট গো এনিহোয়্যার,প্লিজ টেইক মি হোম!”
ফ্রিক কাঁধ ঝাকালো-“ওকে!”

কক্সবাজার থেকে ফিরে গোসল সেরে রাফিজ একটা ঘুম দিয়েছে।নাযিয়াত কাপড় গুছিয়ে বেলা চৌধুরীর রুমে এলো!
বেলা ওকে জানালেন যে,’আগামীকাল প্রিয়ন্তীদের বাসায় সবার দাওয়াত!দাওয়াত সেরে ফেরার পথে ওরা প্রিয়ন্তীকে নিয়ে বাড়ী ফিরবে।নাযিয়াত চাইলে কিছুদিন মায়ের বাড়ী থেকে আসতে পারে!”
নাযিয়াত মৃদু স্বরে বললো-“আমি বাসায় গেলে তো উনার কষ্ট হবে!তাছাড়া উনি যদি বলেন যেতে তাহলে অবশ্যই যাবো!”
-“হুঁহ্..উনি বললে যাবে নইলে যাবেনা?”
(বেলার স্বরে স্পষ্ট ব্যঙ্গ)”কেন,প্রিয়ন্তী আসছে শোনোনি!ওর প্রয়োজন দেখার তো লোক আছে,নাকি?”
নাযিয়াত তার কথার মর্ম বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো!

প্রিয়ন্তীদের বাড়ীতে আজ মহোৎসব!
ছেলে মেয়ে দুজনই বাড়ী আসছে।প্রিয়ন্তীর মা শাজিয়া হামিদের মনে আজ আনন্দের জোয়ার!তিনি ওদের পছন্দের সব খাবার তৈরী করেছেন।বিশেষ করে তার একমাত্র ছেলে প্রান্তিক আজ তিন বছর পর বাড়ী ফিরছে।
এবার ওকে বিয়ে করিয়ে তারপর তিনি ছাড়বেন!মেয়েও দেখে রেখেছেন।প্রান্ত
িক এলেই ওকে দেখানো হবে!পছন্দ হলে আর দেরি না!একদম কবুল পড়িয়ে দেবেন!
প্রিয়ন্তীর আগমন উপলক্ষে ওর শ্বশুড়বাড়ীকেও দাওয়াত করা হয়েছে।প্রিয়ন্তীর মা বেলাকে খুব করে নাযিয়াতের কথা বলে দিয়েছেন।তিনি যেন নাযিয়াতকে অবশ্যই সঙ্গে করে নিয়ে আসেন!
গত তিনচারটে দিন ধরে তার মনটা এমনিতেই খারাপ হয়ে আছে।বেলা চৌধুরীর মুখে শুনেছেন রাফিজ নাকি নাযিয়াতকে নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছে।শুনে তার অন্তর্জ্বালা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিলো!
বেলা চৌধুরীর নাতির খায়েশ মিটতে মিটতে নাযিয়াত নিজের রাজত্ব বানিয়ে নিজে মহারাণী সেজে বসবে আর তার প্রিয়ন্তীর তখন কপাল পুড়বে।
নাহ্,মেয়েটা জেঁকে বসার আগেই ওর সাথে রাফিজের মাখামাখিটা একটু কমাতে হবে।প্রিয়ন্তী না থাকার সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে মেয়েটা।এমনিতে তো খুব প্রিয়ন্তীর সাথে খাতির মেরে কথা বলে!
আসলে এগুলো সবই চালাকি!রাফিজের কাছে ভালো সাজার ঢঙ!ভাবলেন শাজিয়া!
*
তিনি তার এক পরিচিত এক বান্ধবীর সাথে গতকালই দেখা করে সব বন্দোবস্ত করে এসেছেন!বান্ধবীটি আবার এসব কাজে খুব ওস্তাদ।টাকাপয়সা একটু বেশী নিলেও কাজ হয় খুব সুইফট।এই পদ্ধতিতে সে নাকি বহু সংসার ভেঙ্গেছে।গতকালই সে একপুরিয়া চিনি পড়া দিয়ে গেছে।এটা মিষ্টি জাতীয় খাবারে দিয়ে খাওয়ালেই নাকি কাজ হয়ে যাবে!
একারনেই নাযিয়াতকে এতো গুরুত্ব দিয়ে আনা!

★★

এদিকে প্রিয়ন্তী আর প্রান্তিককে আনতে শাজিয়া নিজেই গেলেন গাড়ী নিয়ে!ছেলেকে এতদিন পরে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তিনি।মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন!
ছেলের দাঁড়ীতে হাত দিয়ে বললেন-“এটা কি রে বাবা!এ বয়সেই একেবারে দাড়ী টাড়ি রেখে কি করেছিস?”
প্রান্তিক হেসে বললো-“মা,এটা সুন্নত! ”
বাড়ী ফেরার পর, শাজেদা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওদের সাথে গল্প করলেন।তার মুখে আজ যেন খই ফুটছে!তবে লক্ষ্য করলেন প্রিয়ন্তী যেন কিছুটা মনমরা!
বললেন-“আমার আম্মুটার মন খারাপ কেন?”
প্রিয়ন্তী হাসলে তিনি ওকে সান্তনা দিয়ে বললেন-“তোমার মন ভালোর ব্যবস্থা করছি,দাঁড়াও!এমন টাইট দেবো যে,নাযিয়াতকে দেখলে রাফিজ উল্টো পথে হাঁটা দেবে!”
শুনে প্রিয়ন্তী শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেললো!
শাজিদা প্রিয়ন্তীকে কথাগুলো বলার সময় অদূরে বসা প্রান্তিক কথাগুলো শুনে ফেললো! বললো-
-“সমস্যাটা কি মা?প্রিয়ন্তীর শ্বশুড়বাড়ীতে কোনো সমস্যা?”
শাজিয়া ছেলেকে বেলা চৌধুরীর নাতী পাগলামির নাতিদীর্ঘ বয়ান দিয়ে বললো-“উনি নাতি পেয়ে তারপর নাযিয়াতকে ঘর ছাড়া করবেন!ততদিনে আমার মেয়ের সংসার যাবে উল্টে।পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস কি!সে তো নাকি এরিমধ্যে ঐ ছলনাময়ীকে আপন করে নিয়েছে।”
প্রান্তিক অবাক হয়ে প্রিয়ন্তীকে বললো-“সেদিন না তুই বললি নাযিয়াত মেয়েটা খুব ধার্মিক প্রকৃতির।তোকে খুব অনার করে?তাহলে আম্মা এসব কি বলছে?”
শাজিয়া ছেলের নির্বুদ্ধিতা দেখে হতাশ হয়ে বললেন-“আরে বাবা,তোরা আজকালকার ছেলেরা মেয়েদের এসব চালাকি বুঝবি কি করে!এসব হচ্ছে সবাইকে হাতে রাখার মন্তর!আসুক না কাল,ওর সব ত্যাঁদড়ামী আমি বার করবো।আমার মেয়ের জায়গায় আসন গেড়ে বসেছে?বসাচ্ছি।র
াতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে!
প্রান্তিক প্রবল আপত্তি জানিয়ে জোর প্রতিবাদ করে বললো-“ছিঃ মা,তুমি না জেনেশুনে কেবল নিজের ধারনা অনুমানের ভিত্তিতে একজন দ্বীনদার মেয়েকে এভাবে বিপদে ফেলতে চাচ্ছো কেন?”
-“বিপদে ফেলছি কে বললো!সে তার মতো থাকুক!তাকে তো রাফিজের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর জন্য বিয়ে করানো হয়নি।এতো আদিখ্যেতা কিসের।রাফিজকে এমন বশ করবো যে সুরসুর করে নাযিয়াতকে তালাক দিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দিবে!খালি সময়ের অপেক্ষা!কাল থেকেই মিশন শুরু!”
-“মা তুমি জানো, তুমি কত ভয়ংকর একটা কাজ করতে যাচ্ছো!যাদুর সাহায্যে একটি দম্পতি ভাঙ্গতে চাচ্ছো?কিন্তু কেন?নাযিয়াত মেয়েটা কি ক্ষতি করেছে তোমার?কেন তুমি ওর পেছনে লেগেছো?এটাতো ক্ববীরা গুনাহ।এসব থেকে ফিরে তওবা করো।ওসব ফালতু স্টেপ নেবার কোনো প্রয়োজন নেই!নাযিয়াত আর প্রিয়ন্তী দুজনেই সমান হকদার।কেন নিজের মেয়ের জন্য অন্যের সংসার ভাঙ্গতে যাচ্ছো?”
-“আচ্ছা,তুই আমার ছেলে হয়ে ওদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছিস কেন বলতো ?তোর এসবের মধ্যে আসার কোনো দরকার নেই।তুই তোর বিয়ে নিয়ে ভাব।শুক্রবার আমরা মেয়ে দেখতে যাবো!”
প্রান্তিক থমথমে মুখে বসে আছে।
মায়ের ডাকে সে স্থির কন্ঠে বললো-“মা,যদি তোমার কারনে নাযিয়াতের ঘর ভাঙ্গে তাহলে
সেটার প্রায়শ্চিত্ত তোমাকেই করতে হবে!”
-“মানে? কি বলছিস এসব?”
-“ঠিকই বলছি মা,তোমার কারনে নাযিয়াতের তালাক হলে তোমার ছেলেই নাযিয়াতকে সসম্মানে ওকে নিজের ঘরে ঠাঁই দেবে।
এখন ভেবে দেখো,তুমি কি করবে?”
…..
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে