উত্তরাধিকার (১০ম পর্ব)

0
1129

উত্তরাধিকার (১০ম পর্ব)
লেখাঃ-মোর্শেদা রুবি
***********************
বেলা হতভম্ব অবস্থায় ঘরে প্রবেশ করলেন।
রাফিজ মায়ের দিকে তাকিয়ে স্থির কন্ঠে বললো-“এই সন্তান আমার নয় মা !”
বেলার মাথাটা হঠাৎ ঘুরে উঠলো যেন।
তিনি দ্রুত পাশের সোফাটায় বসে পড়ে প্রিয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে বললেন-“এসব কি হচ্ছে……? প্রিয়ন্তী?”
প্রিয়ন্তী কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে এবার মাথা তুলে দৃঢ় কন্ঠে বললো-“হ্যাঁ,যা শুনছেন তা সত্যি.এ সন্তান আপনার ছেলের নয়।বরং সত্য তো এই, আমার এই ভুলের মাধ্যমে আপনার ছেলের আসল রূপটা সামনে এসে গেলো!”
বেলা মেজাজী স্বরে বললেন-“মানে? কি বলতে চাও তুমি?”
-“কি বলবো?আপনার ছেলে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম,বাঁজা পুরুষ…এটাই বলতে চাই!”
রাফিজ দুহাত পকেটে পুরে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলো ওদের।
এবার প্রিয়ন্তীর কথা শুনে মুচকি হেসে বললো-“আমার আসল রূপ উদঘাটনের পদ্ধতিটা মন্দ নয়!মুশকিল হলো আমার আসল রূপ বের করতে তোমাকে নিজের আসল রূপটা কাজে লাগাতে হয়েছে।আফসোস..!
যদি সত্যিই আমি সন্তান দানে অক্ষম হয়ে থাকি তবে সেটা সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছা যা মেনে নিতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই কিন্তু তুমি যেটা করেছো সেটা অত্যন্ত জঘন্যতম নোংরামীতে ভরা একটি ব্যাভিচার,অত্যন্ত নেক্কারজনক একটি কাজ!ইসলামের শাস্তির বিধান অনুযায়ী তোমার “রজম”‘এর দন্ড হয়ে যেতো কিন্তু তা না হওয়ায় আজ তোমার মতো কতশত মহিলা তার স্বামীর ছত্রছায়ায় এই গুনাহ করে বেড়াচ্ছে সেটা আল্লাহ্ মালুম।এর জাহান্নামের শাস্তি যদি তারা জানতো তাহলে ভুল করে হলেও এ পথে এগোতো না!কোন সাহসে তুমি পরের বোঝা আমার ঘাড়ে চাপাবার সাহস করেছো?এটা কত বড় পাপ সে সম্পর্কে তোমার কি বিন্দুমাত্র ধারনা নেই!ছিহ্…!”
বলে রাফিজ বেরিয়ে গেলো!
প্রিয়ন্তী হাতের ম্যাগাজিনটা ছুঁড়ে ফেলে বললো-“আমি বাড়ী যেতে চাই!এই পরিবেশে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে!”
বেলা ক্রোধে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালেন।তার চোখ দুটোতে যেন আগুন জ্বলছে।ধীরে এগিয়ে এসে পটকা ফাটার শব্দে প্রিয়ন্তীর গালে চড় কষালেন তিনি।প্রিয়ন্তী গালে হাত দিয়ে কেঁদে উঠলো-“আপনি,আমার গায়ে হাত তুললেন?আমার মা কখনো আমাকে মারেনি!”
-“তুলেছি,বেশ করেছি!তোমাকে তো স্যান্ডেল পেটা করা উচিত,নষ্টা মেয়েমানুষ।তোমার মা তোমাকে ঠিক সময় মতো মারলে আজকে এই রূপ দেখতে হতোনা!হায় হায়…তোমার জন্য আমি আমার পূতপবিত্র বউমাটাকে ঘর ছাড়া করেছি!হায় আল্লাহ্,এ আমি কি করলাম?”
বেলা সংযম হারিয়ে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলেন।
প্রিয়ন্তী ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।একটু পর বেলা শাজিয়াকে ফোন করে বললেন-“আপনার ভ্রষ্টা মেয়েকে এখান থেকে এসে নিয়ে যান!”
-“মুখ সামলে কথা বলবেন!”ওপাশ থেকে শাজিয়া চেঁচালো।বেলা ফোনের মধ্যেই কয়েকটা খিস্তি আউড়ে ফোন রেখে দিলেন।পনের বিশ মিনিটের মধ্যে শাজিয়া চলে এলেন থমথমে মুখে।
বেলা রাগে ক্ষোভে নিজের ঘর ছেড়েই বেরুলেন না।কারন তাহলে তিনি নিজেকে হয়তো সামলে রাখতে পারবেন না!
প্রিয়ন্তী সেই রাতেই মায়ের সাথে চলে গেলো।
প্রিয়ন্তী চলে যাবার পরপরই বেলা তার ল’ইয়ারকে ফোন করে তাকে আসতে বললেন!তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলেন-“আগামী কাল বিকেলে এই ল’ইয়ার নিয়ে যাবার হুমকি তিনি নাযিয়াতকে দিয়ে এসেছেন অথচ আজ কার জন্য তাকে ডাকতে হচ্ছে!মানুষ ভাবে এক হয় আরেক।
নাযিয়াতকে কত কটূ কথাই না শুনিয়েছেন তিনি।নাযিয়াতের সামনে কোন মুখে যাবেন!নাহ্,যত যাই হোক, লজ্জা সংকোচ ঝেড়ে ফেলে তাকে নাযিয়াতকে আনতে যেতে হবে!
নাযিয়াত কাল মাদ্রাসা যাবার আগেই ওদের বাড়ীতে যেতে চান তিনি!
রাতটুকু যেন কাঁটার মধ্যে কাটলো বেলার! সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারলেন না।নাযিয়াতের সৎ আচরন, উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার বেলার চোখে একের পর এক দৃশ্যপটের মতো ভেসে উঠতে লাগলো বেলার
উঠে এসে রাফিজের রুমের দরজায় মৃদু করাঘাত করলেন।
রাফিজ জানালো ‘তার ক্ষিধে নেই!’কেবল প্রশ্ন করলো-“মা,নাযিয়াতের কি হয়েছে তুমি জানো?তাকে অনবরত ফোন করেও পাচ্ছিনা।ফোন যাচ্ছেনা!”
বেলা চরম হতাশ কন্ঠে বললো-“নাযিয়াতকে আমি বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছি।ওকে অনেক কথা শুনিয়েছি আর তোর সাথে যেন যোগাযোগ না করে সে হুমকিও দিয়েছি।
আমি…আমি ভুল করেছি বাবা,আমি ভুল করেছি।কাল সকালেই গিয়ে ওর কাছে ক্ষমা চাইবো!তুই আমাকে ক্ষমা করে দে বাবা।আমিই তোর সংসার উজার করেছি।আমি নাযিয়াতকে নিয়ে আসবো!(বলে বেলা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।)সন্তান হোক না হোক,তুই একটা যোগ্য সঙ্গী পেয়েছিলি যে তোকে আগলে রাখতো,আমিই তোর সুখের সংসারে আগুন লাগিয়েছি!”
মায়ের আহাজারি দেখে অগত্যা রাফিজকে নরম হতে হলো-“থাক্,এতো কেঁদোনা।কাল সকালেই আমরা গিয়ে ওকে নিয়ে আসবো!এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে!”
বেলা চোখ মুছে ছেলেকে সামান্য কিছু মুখে দিতে বললেন।রাফিজ জানালো তার কিছুই খেতে ইচ্ছে করছেনা!
রাফিজ সে রাতে কিছুই খেলোনা!


পরদিন সকালে আটটার দিকেই মা ছেলে বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়লো!উদ্দেশ্য নাযিয়াতকে মাদ্রাসা যাবার আগেই ধরতে পারা।
কিন্তু নাযিয়াতদের বাড়ীর গেটে ইয়া বড় তালা দেখে বেলার বুক কেঁপে উঠলো।রাফিজ কেবল শান্ত চোখে তালাটা দেখলো যদিও ওর মনের খবর বাইরে থেকে বোঝা গেলোনা!
রাফিজ চারপাশে তাকালো।বেলা অপজিট ইউনিটের গেট নক করে জিজ্ঞেস করলেন-“সামনের ফ্ল্যাটের লোকজন কোথায় গেছে বলতে পারেন?”
সেই ফ্ল্যাটের মহিলা মাথা নেড়ে বললো-“জ্বী না।এসব কিছু জানিনা!”
হতাশ হয়ে বেলা আর রাফিজ বেরিয়ে এলো।গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকালো রাফিজ যেন খুঁজলেই পেয়ে যাবে এমন একটা ছেলে ভুলানো অর্থহীন আশা!
মলিন মুখে মা ছেলে বাড়ী ফিরে এলো।বেলা ক্লান্ত হয়ে ড্রইংরুমেই বসে পড়লেন।তখনি ময়না একটা চিঠি এনে বেলার হাতে দিলো।বেলা ক্লান্ত সুরে জিজ্ঞেস করলো-“এটা কি?”
ময়না বললো-“কইতাম ফারিনা!এট্টু আগে একজনে আইস্সা দিয়া গেলো!”
বেলা কৌতুহলী হলেন।চিঠিটা ছিঁড়ে পড়তে শুরু করলেন তিনি।
কিছুদুর পড়ার পরই তিনি আর্তনাদ করে উঠলেন-“রাফিজ” বলে!
রাফিজ মায়ের ডাক শুনে ড্রইংরুমে এসে জিজ্ঞেস করলো-“কি হয়েছে?”
বেলা উদগত কান্নাকে চাপা দেবার ব্যর্থ চেষ্টা করে হাতটা রাফিজের দিকে বাড়িয়ে দিলেন।রাফিজ সেটা হাত বাড়িয়ে নিতেই বেলা দুহাতে নিজের মাথা চেপে ধরলেন!
চলুন,রাফিজের পেছন দিয়ে আমরাও উঁকি দেই চিঠিটিতে….!
পরম শ্রদ্ধেয় আম্মা,
আস্সালামুআলাইকুম,আমি আপনার দরিদ্র বউমা বলছি।জানিনা,এই চিঠি আপনার হাতে পৌঁছুলেও আপনি এটা পুরোটা পড়বেন কিনা!আমি নিজেকে দরিদ্র বলছি এ কারনে, যে আপনার মনে নিজের জন্য এতটুকু জায়গা করে নিতে পারেনি সে তো দরিদ্রই !কিন্তু বিশ্বাস করুন,আমার চেষ্টায় এতটুকু ত্রুটি ছিলোনা।জানিনা কেন আমাকে আপনার লোভী মনে হয়েছিলো! তবে হ্যাঁ,আমি একটা ব্যপারে লোভী ছিলাম,আজো আছি আর তা হলো আপনার স্নেহ- ভালোবাসার প্রতি আমার লোভ সর্বদা !আমার ইচ্ছে ছিলো দুনিয়াকে দেখিয়ে দেই,আমাদের ঘর একটা সাহাবী ওয়ালা ঘর যেখানে হিংসা বিভেদ ভুলে আমরা দুই বোনের মতো সংসার করছি।ক্রমান্বয়ে নিজেদের কিছু স্বার্থত্যাগের মাধ্যমে নবীর আরেকটি সুন্নতকে জিন্দা করতে পারবো ভেবেছিলাম।কিন্তু তা আর হয়ে উঠলোনা।দোয়া করি,আপনি একজন চমৎকার সন্তানের দাদী হন।আপনার কাঙ্খিত উত্তরাধিকার আপনার জন্য বরকতময় হয়ে আসুক।শুনলে আপনার ভালো লাগবে কিনা জানিনা,আপনার আরেকটি উত্তরাধিকার আমি আমার শরীরে বহন করে চলছি।আপনাদের মতো বিলাসী জীবন হয়তো আমি তাকে দিতে পারবোনা তবে আমার সাধ্যমতো তাকে উত্তম তরবীয়ত দিয়ে আল্লাহর একজন খাঁটি বান্দা বানানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্।আমি আমার শরীরে এই ছোট্ট রাফিজকে নিয়ে আপনাদের জীবন থেকে বিদায় নিলাম।
পুনশ্চঃ এই অংশটুকু আপনার জন্যে রাফিজ।আপনাকে আলাদা করে লিখিনি কারন আমি জানিনা এই চিঠি আপনার হাতে পৌঁছুবে কিনা,তাই আম্মার চিঠিতেই আপনাকে শুভকামনা জানাই।আর আমাদের প্রথম সন্তানের নাম আপনার ইচ্ছেতেই হবে! রাফিজের ‘র’ আর নাযিয়াতের ‘ন’ দিয়ে !ইনশাআল্লাহ্,ছেলে হলে ওর নাম রাখবো “রণ” আর মেয়ে হলে ওর নাম রাখবো ‘রুণু’!
আপনি নিজের যত্ন নেবেন,ঠিকমতো খাবেন আর আমাকে ক্ষমা করে দেবেন যদি আপনার কোন হক ঠিকমতো আদায় না করতে পেরেছি তো!আমি আপনাকে দুনিয়াতে না পাই অন্তত জান্নাতে যেন পাই! মনে আছে আমাদের কত স্বপ্ন ছিলো জান্নাত নিয়ে!আমাদের জন্য দু’আ করবেন।ওহ্,আরেকট
া কথা লেখার লোভ সামলাতে পারছিনা সেটা হলো,আমি কোথায় আছি সেটার ক্লু এই চিঠিতেই আছে,যদি কোনোদিন প্রয়োজন মনে করেন তাহলে সময় করে ডাক দেবেন,নতুবা বিদায়….প্রিয়।
আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুন।
আস্সালামুআলাইকুম!”
ইতি
“আপনাদের নাযিয়াত”
—————–
চিঠিটা অন্তত দশবার পড়ে ফেললো রাফিজ।আঁতিপাতি করে খুঁজলো কিন্তু পুরো চিঠির কোথাও নাযিয়াতের ঠিকানা খুঁজে পেলোনা।ওর চোখের পানিতে সব ঝাপসা হয়ে যাওয়ায় লেখাগুলো এখন একদমই দেখা যাচ্ছেনা।
রাফিজ বাম হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছলো।তারপর চিঠিটা ভাঁজ করে পকেটে রেখে দুহাতে মুখ ঢাকলো।ওর শরীর মুদু কাঁপছে।বেলা এসে ছেলের পিঠে হাত রাখতে রাফিজ চোখ মুছে সোজা হয়ে বসলো!
ওর নাকের ডগা লাল দেখে বোঝা যাচ্ছে ও কান্না চেপে রেখেছে!
বেলার বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে!আহারে, তার কারনেই আজ তার সন্তান কষ্ট পাচ্ছে অথচ তিনি মা হয়ে কিছুই করতে পারছেন না!



প্রান্তিক ঘরে ঢুকে প্রিয়ন্তীকে দেখে কিছুটা চমকে গিয়ে বললো-“তুই কখন এলি?”
প্রিয়ন্তী কোনো জবাব দিলোনা।প্রান্তি
ক আবার বললো-“কি রে কথা বলছিস না যে?আম্মা কোথায়?”
-“জানিনা,যা তো এখান থেকে।আমাকে একটু একা থাকতে দে!”
প্রান্তিক আর কথা না বাড়িয়ে উঠে নিজের রুমে এসে পড়লো!
শাজিয়া ফোনে বড়মামার সাথে কথা শেষ করে প্রিয়ন্তীর কাছে এলো!শাজিয়ার মুখ থমথমে।প্রিয়ন্তী মা’কে দেখে ঔৎসুক্য নিয়ে তাকালো!
শাজিয়া বললো-“তোর বড়মামাকে কিছুটা আভাস দিয়েছি।সে তো রেগে কাঁই।
আমি বলেছি,ঝামেলার দরকার নেই,ওদের বিয়ের কথা ভাবতে বলেছি।বড়ভাই বললেন,তিনি ভেবে জানাবেন!
প্রিয়ন্তী ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।আকাশটা কি সুন্দর নীল হয়ে আছে।পশ্চিমাকাশে লালাভাটা এখনো পুরোপুরি মিশে যায়নি,অদ্ভুত সুন্দর লাগছে দেখতে।
আকাশের কত রঙ অথচ তার জীবন এখন স্বাদ বর্ণ সুগন্ধবিহীন।
ফ্রিক কি ওকে গ্রহন করতে রাজী হবে?যদি সবটা হেসে উড়িয়ে দেয়?অথবা যদি এবরশন করাতে বলে?না,প্রিয়ন্তী কোনোমতেই এবরশন করাবেনা।ফ্রিক তাকে গ্রহন করুক বা না করুক!
কিন্তু ভাগ্য তাকে সমর্থন করলোনা,সকালের দিকে প্রচন্ড পেটে ব্যথা নিয়ে চিৎকার করে উঠলো প্রিয়ন্তী।শাজিয়া ছুটে এলেন।দ্রুত ডাক্তারের কাছে নেয়া হলে জানা গেলো প্রিয়ন্তীর গর্ভপাত ঘটে গেছে।
সারাটা দিন ক্লিনিকে কাটিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরলো প্রিয়ন্তী! রিক্ত নিঃস্ব অবস্থায়!


তিনচার দিন পরের কথা!
শাজিয়া রান্নাঘরে কি যেন একটা কাজ করছিলেন তখন প্রান্তিক ঢুকলো-“কি করছো মা?”
-“এই তো!কিছু বলবি?”
-“প্রিয়ন্তীকে দেখলাম মন টন খারাপ করে বসে আছে, জিজ্ঞেস করলাম কোনো কথাও বলছেনা,সমস্যা কি??
-“না,সমস্যা আর কি?”শাজিয়া বিষয়টা চেপে গেলেন।প্রান্তিকের কানে এই বিদঘুটে সমস্যার কথা গেলে সে আবার কি রিএ্যাক্ট করে কে জানে!সে গত কয়েকদিন ঢাকার বাইরে থাকায় এদিকের কোনো খবরই জানেনা।
তাছাড়া সে এই মাসটাই দেশে আছে তারপর তো চলেই যাবে!ওকে এসব না জানানোই ভালো!
প্রান্তিক হঠাৎ শাজিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো-“আচ্ছা মা,সেদিন যে মেয়েটাকে দেখে এলাম,ওদেরকে কি তুমি বারন করে দিয়েছো?”
-“হ্যাঁ,সে তো ওর পরের দিনই বলে দিয়েছি।তুই ই না জানাতে বলেছিলি?কেন,হঠাৎ এ প্রশ্ন?”
-“না,ভাবছিলাম,পরিবারের সবার কারনে একটা নিরপরাধ মেয়েকে এভাবে রিজেক্ট করাটা বোধহয় ঠিক হচ্ছেনা তাছাড়া তুমি মেয়েটাকে পছন্দ করেছিলে এটাও তো কম গুরুত্বপূর্ণ না!”
এত ঝামেলার মাঝেও প্রান্তিকের এই কথাগুলো শাজিয়ার মনের মধ্যে একটা স্বস্তির জোয়ার তুললো।
প্রান্তিক যদি শোনে প্রিয়ন্তীর কথা কিংবা নাযিয়াতের চলে যাবার কথা, তাহলে পরিস্থিতি বিগড়ে কোনদিকে যায় কিছু বলা যায় না,তারচে রাজী যখন একবার হয়েছেই ওদেরকে বলে বিয়ের ব্যবস্থা পাকা করে ফেললেই বোধহয় ভালো হবে!
আজ বিকালেই ঘটককে ফোন করে ওদের খবর দিতে হবে!ভাবলেন শাজিয়া!


গত কয়েকটা সপ্তাহে রাফিজ একদম যান্ত্রিক হয়ে গেছে।রোবটের মতো অফিস যায়, বাড়ী আসে আর অফিসের কাজ নিয়ে ডুবে থাকে।প্রতি রাতে শোবার আগে নাযিয়াতের চিঠিটা পড়ে ও।তারপর সেটা বুকে চেপে ধরে।আর ওর চোখের কোল বেয়ে পানির একটা পাতলা ধারা নামে।
প্রতিদিনই চিঠিটা খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে রাফিজ কিন্তু কোনো ক্লু ওর মাথায় আসেনা।
আজও চিঠিটা সামনে বিছিয়ে এক হাত দুর থেকে সেটার দিকে অলস ভঙ্গিতে তাকিয়ে ছিল!কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ওর মুখটা হঠাৎ উজ্জল হয়ে উঠলো।দ্রুত চিঠিটা হাতে নিলো।ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো চিঠিটার ভেতরে কিছু হরফ মোটা করে লেখা যা হরফগুলোকে অন্য হরফ থেকে পৃথক করে রেখেছে!রাফিজ মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন লাইনে আঁকা সেই মোটা অক্ষরগুলোকে জোড়া দিয়ে একটা শব্দ তৈরী করতে চেষ্টা করলো।অনেকটা জাম্বল ওয়ার্ডের মতোতো করেরে!
মিনিট পাঁচেক পরেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো!
সে এখন জানে নাযিয়াত কোথায় আছে!
….
চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে